এই সিরিজটার নাম হইতে পারতো – পুরুষের প্রেম বা অন্য আরো অনেককিছুই। এই টানাগদ্যের ফর্মটাও অনেক কমন একটা ন্যারেটিভ ফর্ম আর সাবজেক্টটাও – না-পাওয়া প্রেম [প্রেম পাওয়া যায়, এই ব্যাপারটাই কি রকম না! এইখানে গরুর (ইদানিং অ্যাট একচুয়াল লিখতে গিয়া লিখে – গাভী’র) দুধের চা পাওয়া যায়’র মতোন]।
তো, আমি হয়তো ভাবছিলাম যে, একটাকিছু ইনসার্ট করতে পারবো, কিছু একটা কি হবে না? – আমি লিখলে? হয় নাই আসলে। এই রায় আমি-ই দিতে চাই। কমপ্লিটও হয় নাই পুরা সার্কেলটা, লেখার। সিরিয়ালটাও হয়তো ঠিক করা লাগবে। কিন্তু অনেক তো হইছে আসলে। ২০১৩-তে শুরু করছিলাম, ২০১৪-তেই লেখা মোস্টলি, তারপরে ২০১৫ আর ২০১৬-তেও লিখা হইছে কয়েকটা। তো, লিখছি যেহেতু থাকলো, একটা জায়গায়। এর বেশি কোনকিছু না।
————————-
————————-
রেলস্টেশনে
একটা রেলস্টেশনে আইসা দাঁড়াইছি। কতগুলা ফলের ঝুড়ি বইসা আছে প্ল্যাটফর্মে; কলা, কমলা আর আঙুর, ঝিমাইতেছে। কুত্তা একটা, কংক্রিটের মইধ্যেও কী কী জানি শুঁকে। মাল-গাড়ি’র একটা বগি থাইমা আছে আরেকটা লাইনে, একটু দূরে। ট্রেইনেও মানুষজন নাই কোন। খালি শি’রে নিতেই আসছে মনেহয়। পারলে ট্রেনটাও এই প্ল্যাটফর্মেরই থাইকা যাবে। শি আর যাবে না আসলে। আমরা চা খাইতে খাইতে খেয়ালই করতে পারবো না, কোন ট্রেন আছে কি নাই। পাশের গাবগাছের পাতলা ডালে পাতারা নড়বো বাতাসে। সময় একরকমের স্থবিরতাই আসলে। অথচ এই স্থবিরতাও দুললো, মৃদু ভূমিকম্পের ভিতর ট্রেনটা চলতে শুরু করলো হঠাৎ, হুইসেল ছাড়াই, সাদা-কালো নির্বাকযুগের সিনেমার মতো। খুবই ধীরে, যেন যাইতে চায় না সে, না-যাওয়ার মতো কইরাই চাকাগুলি ঘুরতেছে। প্রতিটা কণা ঘুরতেছে এতো ধীরে যে, সরতেছেই না সে, অথচ চলেই যাচ্ছে, যাবে… চলে-যাওয়া, এতো দীর্ঘ, এতো বিশাল, না-যাওয়ার মতোই, না-থাকার মতো সময়! ট্রেনের চাকার কাছে আমার পুরা জীবন, পুরা দৃশ্য আটকাইয়া আছে। একটা ছোট্ট রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। আর শি’রে নিয়া ট্রেনটা চলে যাইতেছে… এখনো, এই এতদিন পরে।
হাঁটতে হাঁটতে
হাঁটতে হাঁটতে উঁচা একটা টিলাতে গিয়া বসলাম। দুপুর থিকা একসাথে ঘুরতেছি আমরা। এইখানে যাই, ওইখানে যাই; আমাদের ভাল্রাগেনা। হাঁটতে হাঁটতে শহরের শেষে, শরতের দুইটা শাদা মেঘের মতো একসাথে ভাসতে ভাসতে এই দূরে চলে আসছি। বসার আগেই মনে হইলো, বাসায় ফিরতে হবে। আমাদের ঘর-সংসার আছে, সমাজ-সভ্যতা আছে; আর এইখানে শেয়াল-কুকুর-বিলাই-সাপ-পুলিশ-গার্ড কতকিছুই না থাকতে পারে। এইখানে থাকাটা ঠিক হইবো না। তারপরও বসলাম আমরা। একটু সময় বইসা থাকাই তো। টিলার উপরে সন্ধ্যা নেমে আসতেছে ধীরে; ধানখেতে বাতাস নুয়ে পড়ে। আমার কাঁধে মাথা রাইখা কানতেছে শে, আর বলতেছে, এমন জন্ম কেন হইলো আমাদের! ধরো, আমরা অন্য কোন দেশে চইলা গেলাম, অন্য কোন দুনিয়ায় আর তারপর আমরাই থাইকা গেলাম; হইতে পারে না, এইরকম!
এইরকম একটা দিন; তারপর এইদিনও শেষ হয়া যাবে। বাসার পাশের একলা জামগাছের ভূত শি’র লাইগা ঝুইলা আছে ডালে। সেও হয়তো কান্দে। আমি আমারে দেখি চুপচাপ বসে আছে। আমি আর থাকতেই চাই না এইখানে। এইরকম একটা দিনের শেষে; শি’র পাশে, অনুতাপের সন্ধ্যায়। কী ভুল করলাম আমরা সারাদিন। কী ভুল! কী ভুল! শি’র জামার ফুল, শি’র খোঁপার কাঁটা, বলতেছে; খরগোশের মতো লম্বা আমার কানে কানে।
প্রশ্নগুলি
নতুন প্রেমিক কেমন তোমার? হাসতে পারে ত ঠিকমতো? প্যাণ্টের জিপার খোলার সময় হাত কাঁপে না তো তার? ব্যর্থ ভঙ্গিমার মতো সেও ভালোবাসতে পারে ত? নাকি খালি দাঁড়াইয়াই থাকে, কোমরে হাত; চোখ দিয়া নিতে থাকে তোমার বুকের মাপ? কাঁপতে কি পারো তখন, তুমিও? তোমার আর ভাল্লাগেনা? এত এত প্রশ্ন, আমরা কেমনে করবো মোকাবিলা? তোমার ভাবনার ভিতরেও কি এমনই দম আটকাইয়া আসে? যেন আটকা পইড়া গেছি, একটা ধসে-যাওয়া গার্মেন্টেসের বিল্ডিংয়ের নিচে? আর কোন উদ্ধারকর্মী নাই; থাকলেও সে টর্চ দিয়া দেখবে খালি জ্যান্ত চোখ, রিফ্লেক্ট করে অথচ তার শরীরের ক্লান্তি আগাইয়া আসবে না আর? মারা যাই নাই এখনো, অথচ মারা যাইতেছি? ধীরে ধীরে পচে যাইতেছে আমাদের শরীর আর বাঁইচা আছি আমরা, তবু? জীবনবাবুর কবিতার মতো? শি, ক্যান ইউ হিয়ার মি?
ভাঙা-হাসি
ভাঙা-হাসি, ভালোবাসি, আসছো কি আসছো না তাই, সময়ের চামচ লম্বা হইতে হইতে টেবিল থিকা পড়ে যাইতেছে আর হাসতেছে কি, ভাঙা-হাসি? তরল হয়া বরফখানি যাইতেছে পড়ে, হাসি হাসি যাইতেছে গড়ায়া হিমসাগর আমের স্মৃতি; বর্ষা-শেষে জাগতেছে করুণ কিউট একটা ছোট-মেঘ, যাইতে যাইতে পড়লো গড়ায়ে, কোথায় যে! হারায়ে গেছো চাপা-স্বর, নাকি আসছো আবার – শ্বাসের খেলায় থাকলা পড়ে, আর সে উড়ে গেল, তোমারই গায়ে; কোন শরীর নাই আর অথবা তুমি মিশে যাইতেছো দুনিয়ার ভীড়ে। সিনেমার ঝাপসা সিনে রক্ত পড়তেছে টুপটুপ না-থাকার, গানে আর কবিতায়ও; এখন যখন বলা গেল, ছিলা তাইলে তুমি কোন না কোন সময়, তারপর তাড়াহুড়ায় আবার গান ভেসে উঠতে চাইলো, তখনই কণ্ঠ মলিন; এইরকম একটা থাকার ভিতর আসলেই নাই, আর নিভে যাইতেছিলো বালিতে করুণ সূর্য; ঢেউ আইসা ভিড়তেছে তীরে, স্বরের খেলা, ভাঙা-হাসি, কই যে, কই যে গেলো! গোসল শেষে ফিরার পথে, পানি পড়তেছে টুপটুপ ভিজা শাড়ি গামছা থিকা, গায়েব করে দিতেছে তারে মাটি, মুহূর্তেই; এখন দুপুর, বিরামপুরের পথে, কে আর থাকবে পড়ে মুহূর্তের পাড়ে, শব্দগুলা যাইতেছে সরে, গাবগাছের সাক্ষীও ভ্যালিড না, বাছুর একটা পায়ে দড়ি নাই কোন, ঘাস খায়, দেখে; তারে কে বাইন্ধা রাখবে, খুঁটি ছাইড়া গেলো সে মরতে, পাখি ডাকলো একটা বাঁশঝাড়ে আর তখন ভাঙা-হাসি, ওড়ে গেলো, বাতাসে…
তার ছায়ার নিচে কতো যে খেলা, আমতা আমতা করে আমি গিলে ফেলি। মৌনতায় চলে-যাওয়া দেইখা শি কনফিউজড, অবাক হয়া কয়, এতসবের প্যাঁচের ভিতর শ্বাস নাও তুমি, বাঁইচাও থাকো; কেমনে!
ফাক ইউর বাস্তবতা
ফাক ইউর বাস্তবতা! চিৎকার কইরা বলে শি। আমারে ছুঁইয়া দেখো, আমি পাথর না বাল, বাতাসে ভাইসা-যাওয়া তোমার পাতলা কল্পনা না; রক্ত ভাসে আমার শরীরে, আমি উদাসি কোন কারেক্টার না, একটা আনক্ল্যাসিফাইড নভেলের। আমি তোমার ভাবনারে ফলো কইরা আগাইয়া যাবো না। ফলো মি, ইউ বাস্টার্ড!
এইরকম চিৎকারে আমি দিক ভুইলা যাই। একটা শাদা ইঁদুর হঠাৎ কইরাই সামনে চইলা আসে। আবার চইলা যায়। আরেকটা গর্তের দিকে। শি খেপতেই থাকে, ওর রাগ আর কমে না। কয়, প্লিজ আর ফাইজলামি কইরো না; তোমার ডে-ড্রিমিং বন্ধ করো, কনসানট্রেট অন মি!
শি, আই কুড সি অনলি হোয়েন ইউ আর মি। দেয়ার ইজ নো আদার। এর বাইরে যদি কিছু থাইকাই থাকে, তারে ত আর দেখতে পারি না। বাস্তবতা বইলা অ্যাজিউম করতে থাকি খালি। এই যে খালি অ্যাজাম্পশনের একটা জীবন, এইটা একটা আজাইরা পেরেশানি।
যেইদিন তোমারে দেখি নাই
যেইদিন তোমারে দেখি নাই মনেহয় দুনিয়ার ধূলায় পড়ে আছি। ভাঙা-রাস্তায়। কতো যে বাস-ট্রাক চইলা যায়; ধূলা ওড়ায়, মৈমনসিংহ রোডে, গাজীপুর চৌরাস্তা থিকা আরো দূরে। বসে বসে সময় গুনি। কোথায় যে বইসা আছো তুমি! আমি ভাবি এই ধূলার ভিতর তুমিও কি নাই শি? একটা অস্পষ্টতার ভিতরই আমাদের এই হুড়াহুড়ি। এর ভিতরই আমি অবসেসড হয়া বইসা থাকি। এর বাইরে কোথাও শি বইসা আছে। হয়তো ভাবে, কেউ কি ভাবতেছে আমার কথা, দুনিয়ার ধূলার কণার কাছে, আরো মলিন করে?
দুনিয়ার ধূলার কণাগুলি, তারাও কত দামি! যেইদিন তুমি নাই, আমি তাদের কাছে নুয়ে আসি। বলি, জার্নাল ১৩৪৬-এ, আনার বাগানে, আমরাই তো ছিলাম না-থাকায়, আছি।
মটরদানা সুবাসে
বুকের বোঁটাটাতে আঙুল রাখি; মটরদানার সুবাসে বুঁজে আসে চোখ। ঠোঁট কাঁপে মৃদু ভূমিকম্পে। মাটির নিচ থিকা উঠে আসতে চাইতেছে তোমার খনিজ। ডাউনস্ট্রিমিং বিজনেসে নামি আমি বঙ্গোপসাগরে। নিঝুপ দ্বীপের কাছে চোরা ফাঁদে ডুবে যাই আমি। সুন্দরবনের ঘন জঙ্গলের পাশে ভাইসা উঠি আবার, জোয়ারের শেষে, ভাটার টানে। তোমার যোনিপথের পাশে আটকাইয়াই থাকি। নিঃশ্বাস বন্ধ কইরা বইসা আছি। কিরকম চুপচাপ এই দুনিয়া, আমাদের শ্বাসের ভিতর আটকাইয়া আছে। আরেকবার, বারবার কাঁইপা উঠার আগে আমাদের শরীর তার ভার ছাইড়া দিয়া বইসা আছে। শি হাইসা ওঠে হঠাৎ, এইসব নিয়াও ভাবতে থাকো তুমি! একটু উঠে, দুইহাত দিয়া জড়াইয়া ধরে আমারে শে; বলে, আসো; তোমার চিন্তাগুলি সব মুছে দিই আমি আমার শরীরে তোমার শরীর ঘঁষে ঘঁষে।
আমাদের শরীর
কোমরে চর্বি থাকলে আমার একটুও ভালোলাগে না। শি বলে। আমি কই, হায় হায় আমার ত পেটভর্তি চর্বি! আমার শরীর’রে কি ভালোবাসতে পারবা তুমি! আমি ত তোমার কথা বলি নাই। আমার শরীরের কথাই বলতেছিলাম আমি। শি কয়। আমি কইলাম, তোমার শরীর ত তোমার শরীর; এইটা নিয়া ভাবাভাবির কি আছে! আমিই ত তোমার শরীরের ফ্যাণ্টাসি করি! তাইলে তুমি আর কেন ভাবো; আমার ভাবনাই কি তোমারে সম্পূর্ণ কইরা রাখে না? তোমার ফ্যাণ্টাসিরেই ত আমি ফ্যাণ্টাসি করি! শি হাসে। ওর সামনে জামাকাপড় পইড়া আমি ন্যাংটা হয়া বইসা থাকি। কাঁই-কুঁই কইরা বলি, না, না স্কিনি-সৌন্দর্য্যের দিন ত শেষ; একটু-আধটু চর্বি ত থাকতেই পারে, শরীর যেহেতু! নিজের চামড়ার ভিতর শরীররে লুকাইতে লুকাইতে আমি বলি।
ইডেনের বাগানে
ইডেনের বাগানে আমি ঘুইরা বেড়াই। কলকাতায় তুমি কবে গেলা? শি’রে আমি জিগাই। ধ্যেত, ইডেন হইলো স্বর্গের বাগান; সেইখানে আমি হাঁটি; তুমি কি দেখো নাই! আর যদি বলো, ইন্ডিয়া থিকা মাইগ্রেট কইরা আসছি ত আমরা। বিহারেই মেইনলি ছিল আমাদের বাড়ি। আমাদের একটা দল পাকিস্তানে চইলা গেল পাঞ্চাব হয়া, সেইখান থিকা আম্রিকায়। আমার দাদায় আসছিলো খুলনায়, সেইখান থিকা ঢাকায়। ঢাকায় আর ভাল্লাগে না। এইজন্য ইডেনের বাগানে আমি মাঝে মাঝে হাঁটিয়া বেড়াই। তখন, কোলে কি তোমার যিশু ঘুমায়? এইকথা আমি আর জিগাইতে পারি না। ততক্ষণে তার প্রেমিক চইলা আসছে, তার কাছে। তার সাথে শে কথা কইতে থাকে। আমারো মনেহয়, এইসব বেকুব প্রশ্নগুলির জবাব ক্রূর কবিরা ত ডেইলিই দিয়া যাইতেছেন, তাদের হিংসা-কবিতায়।
Leave a Reply