এই সিরিজটার নাম হইতে পারতো – পুরুষের প্রেম বা অন্য আরো অনেককিছুই। এই টানাগদ্যের ফর্মটাও অনেক কমন একটা ন্যারেটিভ ফর্ম আর সাবজেক্টটাও – না-পাওয়া প্রেম [প্রেম পাওয়া যায়, এই ব্যাপারটাই কি রকম না! এইখানে গরুর (ইদানিং অ্যাট একচুয়াল লিখতে গিয়া লিখে – গাভী’র) দুধের চা পাওয়া যায়’র মতোন]।
তো, আমি হয়তো ভাবছিলাম যে, একটাকিছু ইনসার্ট করতে পারবো, কিছু একটা কি হবে না? – আমি লিখলে? হয় নাই আসলে। এই রায় আমি-ই দিতে চাই। কমপ্লিটও হয় নাই পুরা সার্কেলটা, লেখার। সিরিয়ালটাও হয়তো ঠিক করা লাগবে। কিন্তু অনেক তো হইছে আসলে। ২০১৩-তে শুরু করছিলাম, ২০১৪-তেই লেখা মোস্টলি, তারপরে ২০১৫ আর ২০১৬-তেও লিখা হইছে কয়েকটা। তো, লিখছি যেহেতু থাকলো, একটা জায়গায়। এর বেশি কোনকিছু না।
————————-
————————-
মরার আগে ও পরে
মরার আগে ভাপ-উঠা ভিজা গরম ভাত খাইতে চাই আমি শুকনা শরীরের মুর্গির মাংস ও ঝোল দিয়া। শি খুশি হয়া ওঠে। কয়, হায় হায় মারা যাইতেছো নাকি তুমি! কখোন? কেমনে? আমারে ত কান্দে হবে তাইলে। যদিও চোখের কাজল লেপ্টাইয়া যাবে। কিন্তু রিচুয়াল যেহেতু, মানুষ মরলে কান্দা ত লাগবোই একটু। আমি শি’র দিকে তাকাইয়া দেখি। কোন ফাইজলামি নাই তার চোখে। সিরিয়াস শে। শে বলতেই থাকে। তুমি চিটাগাংইয়া হইলে কী ভালোই না হইতো; কুলখানিতে মেজবানি গরুর মাংস খাইতে পারতাম আমরা! ওর সুডো সিরিয়াসনেস দেইখা আমার খুব খারাপ লাগে। আমি মিনমিন কইরা কই; হ, জন্ম নিয়া ত আমি কিছুই হইতে পারলাম না; মরার পরেও আমি কী কী হইতে পারলাম না, তোমার লাইগা।
লাইলী’র বাড়ির কুত্তা
কুত্তায় জানে তোমার নাম। তোমার কুত্তার সাথে দোস্তি পাতাইলাম। ওই শালা ত আমারে দেখলেই ঘেউ ঘেউ করে। কয়, বাইরে যান! আমি ত বাইরেই, সীমানার; আইসা আইসা ঘুইরা যাই। যদি জানালায় তোমারে দেখা যায়, যদি ছাদে উঠতে ইচ্ছা হয় (যদিও এখন উঠে না কেউ আর) আর উঁকি দিতে ইচ্ছা করে রাস্তায়; দেখতে চাও কে যায়, কেন যায়? আর চায়া থাকে বোবা দালানগুলির দিকে, খামাখাই। পাগলের মতো উল্টা পাল্টা ড্রেস আর কুত্তার গলায় হাত, লোকটার; কি কথা বলে? তোমার লাইগা দৃশ্য হয়া বইসা থাকি আমি রাস্তায়। লাইলী’র বাড়ির কুত্তারে আমি বলি, একহাজার এক রাতের গল্প। যেইখানে আমি শি’রে ইনসার্ট করি। আর বলতে বলতে ওরে আমি হারাইয়া ফেলি গল্পের ভিত্রে। তারপর খুঁজতে থাকি বাড়ির সামনে। তুমি আছো ত সহি সালামতে, ঘরের ভিতর, নিজের ভিতরে; কোন গল্প কাহিনিরে বিশ্বাস না কইরা? জীবনরে পার কইরা দিতে পারতেছো ত; ঠিকঠাক মতো?
ব্ল্যাংক লুক
ব্ল্যাংক লুক কি তোমারে ডিফাইন করতে পারে? আমারে ত পারে বেকুব দেখাইতে; দৃশ্যের ভিতর আটকা পইড়া গেছি আর জানি না কেমনে ক্যামেরার সামনে থিকা বাইর হইবো। মেইন সিন থিকা যতই সইরা আসতে চাই, ক্যামেরা ততই সইরা আসে আর ফোকাস করে আমার চোখে, দেখায়; দেখো, এইটা হইলো ব্ল্যাংক লুক। সে চায়া আছে আর জানে না সে কি দেখে বা যা সে দেখে সে আর দেখে না আসলে। দৃশ্যটা সে বুঝতে পারতেছে না। ক্যামেরা দেখতেছে। ক্যামেরা জানে। ক্যামেরা কি কখনো ব্ল্যাংক লুক দিতে পারে? সে আর চিনতেছে না, ব্রাউজ কইরা যাইতেছে আশ-পাশ দিয়া; জানে না কোনটা হইলো দৃশ্য বা কোনটা ক্যাপচার করবে সে। খালি খালি ঘুরতেছে আমার চোখ নিয়া। তোমার চোখে আমি দেখছিলাম ব্ল্যাংক লুক; আর আমি এইটা রিপিট করার চেষ্টা করি। এই রকম নাকি? শি বলে। তার বলার ভিতর যত না চাতুরি তারচাইতে বেশি ইচ্ছা, ডেডিকেশন; ব্ল্যাংক লুক আনার। শে কপি করতেছে আমারে। আমি আমারে দেখি শি’র চোখে। কি করুণ! ঝরে যেতে চাইতেছে, শীত আসার আগেই। বসন্তে নতুন করে জেগে উঠার অনেক আগেই।
আহ্, প্লাতেরো!
আহ্, প্লাতেরো! একটা সন্ধ্যায় তোমার পাশে বসছিলাম আমি। শি চলে গেছে তখন। আমি তোমার সাথে হাঁটতে হাঁটতে একটা ছোট্ট টিলার উপ্রে গিয়া দাঁড়াইলাম। চামারপট্টির বাচ্চা-শূকরগুলা কাদা নিয়া খেলতেছিল। একটু দূরে, উঁচাতে রেললাইন ছিল; কোন ট্রেন ছাড়া, মানুষজন ছাড়া, একা একা হা-হুতাশ করতেছিলো সে। বাতাস উড়ে যাচ্ছিলো আমাদের পাশ দিয়া, আমাদের শরীরের উপর দিয়া। আমরা নদীর দিকে মুখ কইরা দাঁড়াইয়া থাকলাম। তোমার কানগুলা নড়তেছিলো। আর বলতেছিলো আমারে, বাতাসরে ডিস্টার্ব কইরো না; একটু চুপচাপ থাকো। আমি চাইতেছিলাম একলা থাকতে আর তখন প্লাতেরো বাইর হয়া আসলো, কৈশোরের স্মৃতি থিকা। সময়রে তার পা’য়ের ইরেজার দিয়া ধীরে ধীরে মুছে দিতেছিলো। সবুজ ধানখেত, ময়লা পানি খেতের, পিছনের রাস্তা, সামনের আবছা রং, পাশে কুয়াশা, দূরের আগুন… মুছতে মুছতে প্লাতেরো পা তুললো আমার দিকে। আমি হাটুঁতে ভর দিয়া বসলাম। নামাইয়া নিয়া আসলাম আমার মুখ তার মুখের নিচে। পা দিয়া আদর করতে করতে আমারে মুছে দিতেছে, প্লাতেরো। ধীরে, ধীরে। আহ্, প্লাতেরো! আমরা মরে যাইতে পারবো ত এইরকম, আরো অনেকবার, অনেক জীবন ধইরা?
এই যে উদাস
এই যে উদাস, কই যান আপনি, শি আমারে বলে পিছন থিকা। আমি সামনে তাকাইয়া দেখি সেইখানেও শি। আমি কই, বিজয়া ত শেষ, তাইলে এখনো আপনি কেন মা দুর্গা? আমি আর কই; আমি না আপনের মনোহর কল্পনা! লবন-মরিচ মাখানো পেয়ারা খাইয়া ওড়নাতে হাত মুছতে মুছতে বলে শি। পাছায় লাত্থি দিয়া বাইর কইরা আবার এই রঙ্গ তুমি করো আমার সাথে? মিরর ইমেজের লিংক দিয়া হইলেও আমি লগ-ইন করার ট্রাই করি। আমি যতোই কাছ যাইতে চাই শি ততই আরো দূরে সরে। ওর দূর আর কোনসময়ই আমার কাছ হয় না। শে জিগায়, আচ্ছা আমি পেঁয়াজ খাইলেও কি আমার মুখে তুমি ফুলের গন্ধ পাও? আমি মরিয়া আরো; কই, কেনো? পিঁয়াজ কি ফুলের মতো না দেখতে? আর তোমার এই পিঁয়াজ-এর উদাহারণ হইলো এক ধরণের আরবাননেস নিয়া আসা। তুমি দূরে থাকবা ঝাঁঝ থিকা, থাকো; পেঁয়াজ-ফুল’রে কেন দোষী করো? আমার প্রেম আমি আর লুকাইতেই পারি না। এমনকি কোন কথা না কইলেও। আরো বেশি মনেহয় তখন। নিরবতার স্পেসে আমার না-বলাটাই ছড়াইয়া যাইতে থাকে। আমার করুণ মুখের স্মৃতি আবার মনেহয় মনে আসে শি’র। কয়, কথা বইলা এবং না-বইলা কি বোঝাইতে চাও তুমি? আমি বুঝতে পারি, আমি যে বুঝি-না বইলা তুমি ভাবো সেইটাই তোমারে উদাস করে। আমি জানি। আর যা-ই করো, আমার জানা’রে ইগনোর কইরো না তুমি। আমি বুঝতে পারি আর চুপ করে থাকি। বলি, চলো আমরা কথা বলি। আবার ভাবি, এই কথাটাই যদি বলতে পারতাম আমি।
হাইহিল
আমারে নিচা করে তোমার হাইহিল। শাড়ির সাথে হাইহিলই মানায় মনেহয়। শাড়ির পাড়টা মাটিতে পড়ে না, ধূলায় লাগে না। আর উঁচাও করে তোমারে। তুমি উঁচা হও বইলা একই জায়গায় থাইকা নিচা হইতে থাকে আমার হাইট। সরু একটা হিলের নিচে জুতার, হেরে যাচ্ছি আমি। শি বুঝতে পারে এইটা। বলে, এখন যখন বামন হইলা তুমি, চাইলে চাঁদের দিকে হাত বাড়াইতে পারো একটু: নাহয় না পাইলা, দেখতে ত পারোই, তাই না? আর হাসে। আমি বারবার তাকাই। দেখি; দিনের বেলায় একটা চাঁদ ঘুরাঘুরি করে, ডাইনে আর বামে। কি যে তার হাসি! কি যে গান! ভেসে ভেসে আসতেছে চন্দ্রমল্লিকার সুবাস। ভেসে যায় চাঁদ, রইদের ভিতরে।
আমারই মনের ভুল
মনে হইলো শি’র: আরে, আমি ত বলতে পারি, আমি যা বলি নাই এতোদিন; যে, তোমারে আমার মনে নাই। মনে হয় মাঝে মাঝে যখন আমি মনে করতে চাই না আর। আর আমার নামের ভিতর আমি ত আটকা নাই। ঘোলা, পাতলা কুয়াশা নামতেছে শি’র চোখে। চোখ, যা দেখে নাই, তা ত আর সত্যি না। তারে মাফ কইরা দেয়া যায়। আমাদের দেখার বাইরে আর ত কোন দুনিয়া নাই। যা আছে, তা না-থাকার মতোই। আমরা ইগনোর করতে পারি। যতই ইনসিস্ট করো তুমি; আমি আর ফিরে যাবো না! চুপচাপ দুপুরে এই দুনিয়াও থাইমা থাকে। নিরবতা। মনে-থাকা আর মনে-না-থাকা পা-দুইটা দলা কইরা পেটের কাছে নিয়া শুইয়া আছে, হাত দুইটা মাথার নিচে। ভাবতেছে। আর অনেক অনেক দূরের ঘুমের ভিতর থেকে ভেসে আসতেছে তার কথা। জেগে-উঠার পরে যা আমরা ভুলে যাই, সেই কথা ত আসলে বলা-ই হয় নাই। শি কি ভাবলো হঠাৎ, এইরকমকিছুই?
সকলবকুলফুল পড়ে আছে তার ঝরে-যাওয়ার বেদনা নিয়া। শুকাইয়া আসতেছে। একটাই শরীর আমাদের, ঝরে যাবে। হঠাৎ-ই মনে হওয়া আর লিখে রাখা, ভুলে গেছিলাম! ভুলে ত যাওয়া-ই যায়, আর তারপর এই মনে-করা, আমারে বাঁচাবে না। মরে যাওয়ার আগে মনেহয়, কেন লিখে রাখি নাই ছুরি দিয়া গাছের ছাল তুলে; কেন লিখে রাখি নাই, তোমার নাম। একটা সময়ে আইসা হয়তো ভুলে যেতে পারতাম; কারণ লিখে ত রাখছিলাম। আর এখন না-লিখায় মনে পড়ে থাকে নাম; ভুলে গেছিলাম।
পায়েদের বসে-থাকা
তোমার পায়ের কাছে আমার পা। পড়ে আছে। ভুলে যাই, এই পাগুলা আমাদেরই; পাশাপাশি বসে আছে। নিজেদের গুটাইয়া নেয়। তারা কি আর পাশাপাশি বসবে না কোনদিন? একটা জায়গা ছেড়ে আসার পরেই অতীত মনে হয়; মনেহয় যা কিছু ঘটছিলো তারা আর সত্যি না কখনোই। টেবিলের নিচে, যা আর কেউই দেখে না; ফিল করা যায় আমাদের দুই জোড়া পা, বসে আছে। কথায় ভেসে যাইতেছি আমরা। ব্লাশ করতেছে শি, একটু পরে পরেই। গালের লাল রং লুকানো যাইতেছে না আর। কি করে একটা জায়গায় রক্তের চলাচল বাইড়া যায়, আটকে থাকে আর নড়তেই পারে না? কথার পরে আটকে যায় আমাদের কথারা। আমাদের পাগুলা জড়োসড়ো। যে কোন সময়েই হয়তো নিজেদের ছুঁইয়া ফেলতে পারে। আমরা সাবধান থাকি যেন কোন ভুল করে না ফেলি। ভুল-কথার ভিতরে আমরা আমাদের পাগুলারে ধইরা রাখি। আমারে যে ছুঁইয়ো না গো সজনী! উজানধলে পানি হয়তো কমে আসতেছে। শুকনার মৌসুমে চলো ঘুইরা আসি। দিরাই বাজারে গিয়া গরম জিলাপি খাবো। জিহ্বা পুইড়া যাবে যেইরকম গরম রসে, এইরকম ভুল আমাদের পাগুলা পাশাপাশি বইসা কেন করতে পারে না? অথবা হয়তো আমার জুতা, যা আর আমার জুতাই না, অন্য কারো, বিট্রে করে। আটকাইয়া রাখে। অনেক দূর থেকে ভেসে আসে হাসি। হয়তো তারা প্রেফার করে ঝরে-পড়া। এই বিকাল আর সন্ধ্যা হইতে থাকা। টুপ করে ডুবে যাওয়া রাতের ভিতর। মাইকে ভেসে আসা আজানের আওয়াজের ভিতর তারা প্রেফার করে সরে-যাওয়াও।
দুই জোড়া পা আমাদের, জড়োসড়ো, বসে আছে, পাশাপাশি। গল্প করতেছে। বলতেছে, একজন আরেকজনরে; ভুলে যেয়ো না, আমরারে।
আন্ডার অ্যা বেনিয়ান ট্রি
মাথায় বুদ্ধি নিয়া বইসা আছি বটগাছ তলায়। বইসা থাকি আমি, খামাখাই। আর তোমার প্রেমিক আসে, টাইম পাস কইরা যায়। সে আসে ঘুরাপথে। তোমার ডালে চইড়া বসে। পাতায় হাত বুলায়। তোমারই ত ভাই খালাতো, মামাতো, অথবা ইয়ার-দোস্ত, এইরকম; তাই স্পেইস দেয়া যায়। আসলে একটা রিলেশনের আড়াল দরকার। এই কারণে যে বিয়া করা, সেইটা নিজেদের স্যাটিসফাই করার লাইগাই। যাতে আমরা নিজেদের বুঝাইতে পারি যে, দোষ ত করি নাই! যা করতেছি আমরা লিগ্যাল-ই। শি ঘুইরা বসে এই কথায়। কয়, আমরা ভাই বইন কথা কইতেছি, দোস্তরা আড্ডা দিতেছি, তোমার ক্যান এত খারাপ লাগে! খারাপ-মানুষ ত তুমি, তাই খারাপ-চিন্তা কইরা যাও। আমি কই, শালার ত চোখ জ্বলে; জগজিৎ সিং-এর গানের কথা মনে করে! তুমিও এনজয় করো আসলে, তোমার অলস বোরডমে এই পাবলিক অভিসার! আসলেই ছোটলোক তুমি। তোমার সাথে কথা-বলার কোন ইচ্ছাই আমার নাই! শি কয়।
আমি ভাবি, ছোটলোক প্রেমিক হওয়াই আমার ভালো, না-খাস্তা ভাই আর আইন-মানা জামাই হওয়ার চাইতে। আর এই পজিশনের লাইগাও আমারে কতো না ফাইট দিতে হয়। বুদ্ধি থাকার পরেও বইসা থাকি বটগাছ তলায়। ঝিমাই।
Leave a Reply