Rayhan Rhyne এর ‘বাংলার দর্শন’ (প্রাক্ উপনিবেশ পর্ব) বইয়ের ইন্ট্রু’টা পড়ছি, কয়দিন আগে। পড়ার পরে তিনটা জিনিস মনে হইছে। ভাবলাম, বইলা রাখা যাইতে পারে।
একটা ইর্ম্পটেন্ট জিনিসটা উনি ফিল করছেন, এই যে বাংলার দর্শন, তারে তো বাংলার কনটেক্সটে পড়া হইতেছে না, পড়ার চান্স আছে বরং ‘পশ্চিমা দর্শনের’ কনটেক্সটে, যার ফলে মিনিং একই রকম থাকতেছে না! উনি এইভাবে বলছেন, “বাংলার দর্শনের পরিভাষাগুলোর তাৎপর্য খুঁজতে হবে এগুলোর সঙ্গে যুক্ত সংস্কৃতির ভিতর।… সহজিয়া মতের ‘সহজ’কে কেউ যদি ফরাসি ‘সুজে’ (Subject)-এর সঙ্গে মিলিয়ে দেন কিংবা হেগেলের ‘স্পিরিট’-এর ধারণা দিয়ে লালন সাঁইয়ের ‘অরূপ রতন’কে বুঝতে চান, তাহলেও একই রকম অর্থবিপর্যয় ঘটে। পশ্চিমের দর্শনের পরিভাষার সঙ্গে বাংলার দর্শনের পরিভাষা বা উভয় দর্শনের তুলনামূলক পাঠ নিশ্চয় হতে পারে, কিন্তু পশ্চিমা দর্শনকে মানদন্ড ধরে তার আলোকে বাংলার দর্শন পাঠ করা হলে তাতে এ অঞ্চলের দর্শন সম্প্রদায়গুলোর অবস্থান যে সঠিকভাবে বোধগম্য হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায়।” উনার এই কথা খুবই ঠিক যে, রেফারেন্স সিস্টেমটা ইর্ম্পটেন্ট; কোনটার সাপেক্ষে আমরা রিড করতেছি; কিন্তু একটা টেক্সটরে তো কোন না কোন রেফারেন্সের বেসিসেই রিড করা লাগবে, সেইটা ‘বাংলা সংস্কৃতি’-ই হোক বা ‘পশ্চিমা দর্শন’। আমার ফেভারিট এক্সাম্পল দিয়া বলি, আল-কেমি তো একটা সময়ের ঘটনা, অইটা তো নাই এখন, বরং এর জায়গায় কেমেস্ট্রি চলে আসছে; তো এখন আল-কেমি’রে আলকেমি’র কনটেক্সটে পড়া কি পসিবল? হুবহু একইরকম না হইলেও, ঘটনাটা এই রকমেরই। “বাংলার দর্শনরে” আপনি বাংলার কনটেক্সটে কেমনে পড়বেন? বাংলার দর্শন বলতে যে বৌদ্ধ চিন্তা-পদ্ধতিরে লোকেট করতে চাইছেন রায়হান রাইন, সেইটা কোন না কোন ‘বর্তমান’ এর রেফারেন্স দিয়াই তো রিড করা লাগবে। এর ‘অরিজিনাল’ মিনিংটারে রিভিল করার লাইগা পুরা একটা সিস্টেমরে আন-ফোল্ড করার কথা হইতেছে, যেইটার প্রেজেন্স অ্যাজ সাচ নাই কোথাও। মানে, উনি রেফারেন্স সিস্টেম হিসাবে সাজেস্ট করতেছেন – “বাংলার সংস্কৃতি”রে। কিন্তু এই “বাংলার সংস্কৃতি” কি জিনিস?
এইটা তো কন্সটেন্ট কোন কিছু না। এইখানেই দুসরা পয়েন্টটা। যেহেতু বাংলা’র দর্শন, বাংলা কি জিনিস, এইটা উনি ডিফাইন করতে চাইছেন একভাবে; কিন্তু হিস্ট্রি যেহেতু লিনিয়ার কোন জিনিস না, নানান রেফারেন্স স্ট্রাকচার কাজ করে এইখানে, উনি এইভাবে কনক্লুড করছেন: “বাংলা ভাষা ও অখন্ড বাংলার উদ্ভব যখনই হোক, এ অঞ্চলের সমাজ ও ধর্মে এসব প্রাচীন সংস্কৃতি ও বিশ্বাসধারা সজীব থেকেছে সবসময়।” দেখেন, “বাংলা” বইলা একটা জিনিস হিস্ট্রিতে একটা সময় অ্যাপিয়ারড হইছে, সবসময় ছিল না; কিন্তু উনার কথা হইতেছে, নামে না থাকুক, সার্টেন জিনিস ফিক্সড ছিল। কিন্তু কি সেইগুলা? এইরকম কোন জায়গাতে উনি যান নাই। মনে হইছে, এইগুলা তো আমরা জানি-ই। 🙂 বলার কি আছে! কিন্তু আমার বিশ্বাস কম। এইরকম “প্রাচীন সংস্কৃতি ও বিশ্বাসধারা” বইলা কিছু নাই। কিছু জিনিস ইভবলভ হইছে একটা প্যাটার্নের ভিতর দিয়া, কিছু জিনিস হয় নাই, ফর্মটাই চেইঞ্জ হয়া গেছে। এইরকম।…
থার্ড জিনিসটা আরেকটু বেশি ঝামেলার; যেহেতু “প্রাচীন” একটা জিনিসে উনি সাবস্ক্রাইব করতেছেন, “মধ্যযুগ” ব্যাপারটা একটা ডিস্টরশন। এইভাবে বলছেন: “বাংলার ইতিহাসে মধ্যযুগ… ঐসলামিক আবহ সৃষ্টি হয় এবং স্থানীয় ধর্মধারাগুলোর সমন্বয়ে সুফিবাদের কিছু ধারা সৃষ্টি হয়… এ থেকে কোনো নতুন যুগের সূচনাকে চিহ্নিত করা যায় না।” তো, এইটা ‘দর্শন’ কি, ‘দর্শন’ না – এই তর্কটাতে আমি ঠিক এনগেইজ হইতে চাই না; কিন্তু আমার কাছে মনে হইছে, বাংলার বা এই অঞ্চলের মুসলমানরা যে বিশেষ রকমের মুসলমান – এইটা নিয়া আমার সন্দেহ কম। মানে, আইডেন্টিটির দিক দিয়া ইনারা মুসলমানই, প্রাচীন হিন্দু না আর কি! 🙁 আর এই যে, ‘আলাদা’ হয়া উঠা, এইটা কোন না কোন ‘কালচার’ না খালি, এর লগে এক রকমের ‘দর্শন’ও থাকার কথা মনেহয়।…
লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, একটা নোকতা যোগ করতে চাই। চিন্তার জিওগ্রাফিক্যাল প্রেজেন্স আছে অবশ্যই (জাপানের দর্শন, চীনের দর্শন, কোরিয়ান দর্শন – এইরকম); কিন্তু যে কোন স্পেইস একটা টাইমের ভিতরেই এগজিস্ট করতেছে বা টাইমটা একটা স্পেইসের ভিতর দিয়াই ট্রাভেল করতেছে। দুইটার যে কোন একটা কন্সটেন্ট ধরতে গেলে যে কোন আইডেন্টিফিকেশনের ব্যাপারটা সমস্যারই হওয়ার কথা। মানে, আমার কথা হইলো, রায়হান রাইন যেই তথ্য ও অনুমান আমাদেরকে জানাইতেছেন, সেইটা খালি একটা অঞ্চলের-ই না, একটা নির্দিষ্ট সময়েরও ‘দর্শন’ (যেইটা প্রাক-উপনিবেশ, কলোনিয়াল আর পোস্ট কলোনিয়াল জায়গাতেই আটকা না।) ‘চিরকালীন’ কোন ঘটনা না। বরং এইরকম ‘চিরকালীন’, ‘হাজার বছর’ টাইপ ক্লেইমগুলা কেন আর কিভাবে করা হয়, সেইটা লোকেট করতে পারাটা দরকার।
তো, আমি এইরকম একটা চেষ্টাই করতে চাইলাম।
Leave a Reply