১.
ব্যাপারটা এইরকম না যে, ঘটনাগুলা খুব আনপ্রেডিক্টেবল জায়গা থিকা ঘটে। বা উল্টাদিক দিয়া কইতে গেলে, খুব লজিক্যাল সিকোয়েন্স ফলো করে; কিন্তু কম-বেশি টের তো পাই আমরা, কি ঘটতেছে বা ঘটতে পারে। আমরা একদমই টের পাই না বা খুব হঠাৎ কইরা ঘটে – এইরকম কখনোই না, বরং আমরা ভাবি যে, এইরকম হয়তো ঘটতেই পারে, কিন্তু আমরা আশা করি যে, ঘটবে না মনেহয় এইরকম। (ক্লাইমেট চেইঞ্জের ঘটনাটাই ধরেন, আমরা তো জানি যে, সমস্যা একটা তৈরি হইছে আর এইটা ঘটতে যাইতেছে, কিন্তু যখন ঘটে, তখন ‘অবাক’ হইতে থাকি, আরে, কি হইলো এইটা!)
এইরকম মনে হওয়া’টা ইর্ম্পটেন্ট। আর এইরকম মনেহয় বইলা বা এক্সপেক্টশন থাকে বইলা আমরা ভাবতে পারি যে, এইরকম যেহেতু ঘটার কথা, ঘটবো না মনেহয়।
তো, আমরা যা ভাবি, তার ইমপ্যাক্ট তো আছেই কিছুটা; মানে, আমরা তো কিছু চাইতেই পারি, আর সেইটার বেসিসে ভাবতেই পারি, যত খারাপ বা ভালো ঘটার সম্ভাবনাই থাকুক, এতোটা খারাপ বা ভালো ঘটবে না মনেহয়। মানে, আশা (Hope) আর ভয় (Fear) স্ট্রং দুইটা ফিলিংস, কিন্তু ঘটনা আমাদের এক্সপেক্টশন বা ফিলিংসের উপ্রে এতোটা ডিপেন্ড করে না আর কি!
ঘটনাগুলার এফেক্ট আমাদের উপ্রে পড়ে ঠিকই, আর আমাদের চিন্তা-ভাবনাও ঘটনার উপ্রে ইমপ্যাক্ট ফেলে, কিন্তু যে কোন ঘটনা-ই আমাদের চিন্তা-ভাবনার উপ্রে এতোটা ডিপেন্ড করে না আসলে।
ঠিক নিয়তিবাদী জায়গা থিকা বলতেছি না, বরং আন্দাজ করার জায়গা থিকাই বলতে চাইতেছি।…
২.
প্রশ্নটা এইটা না যে, আপনি আস্তিক না নাস্তিক? বরং ঘটনাটা হইতেছে, যদি আপনার মনে নাস্তিকতার একটু ডাউট না থাকে আপনি আস্তিকই হইতে পারবেন না। (বা নাস্তিক বইলা কোন ধারণা যদি ব্যাকগ্রাউন্ডে না থাকে।) তার মানে এইটা না যে, আপনারে নাস্তিক হওয়া লাগবে, বা নাস্তিক না হয়া আস্তিক হইতে পারবেন না।
মানে, জিনিসটা আইদার/অর না; এইটা হইতে হবে বা অইটা; বরং একটার ভিতরে আরেকটা যে থাকে, কিছুটা – সেই জায়গাটার কথা বলতে চাইতেছি।
এইটা থাকে, আর এর ভিতর দিয়া খালি অপজিট জিনিসটা এমার্জ করতে পারার কথা-ই না, এইরকম একটা অপজিট বা অন্য কোন একটা জিনিসের ভিতর দিয়া ‘এই যে জিনিসটা’, তারে বুঝা লাগে।
যদি ইন্টারন্যাশনাল বইলা কোনকিছু না থাকে (যেইটা মোস্টলি ইউরোপিয়ান জিনিস এখন) তাইলে লোকাল বইলা কিছু আইডেন্টিফাই করা পসিবল না। কিন্তু দেখেন, যেই সময়ে যেই জিনিসই ইন্টারন্যাশনাল, সেইটা কোন না কোন ‘লোকাল’ জিনিসই তো! মানে, যে কোন একটা জায়গা থিকা তো এইটা আসছে, তাই না!
‘পশু’ বইলা যদি কিছু না থাকে আলাদা কইরা ‘মানুশ’ বলার তো কিছু নাই; আবার ‘পশু’ জিনিসটার কিছু ব্যাপার ‘মানুশের’ ভিতরেও থাকে তো; এবং ভাইস-ভার্সা।
এই যে ইউনিভার্সাল একটা জিনিসের কথা আমি বলতে চাইতেছি, এরও আছে কিছু একসেপশন। 🙂 বরং, কিছু একসেপশনের জায়গাই একটা সময় পরে পরে হয়া উঠতে থাকে, ইউনিভার্সাল নিয়ম।
৩.
ভণ্ড আর ঈমানদার চিনবার সিম্পল সূত্র
~
The hypocrite looks for faults; the believer looks for excuses.
ভন্ড দোষ খোঁজে, ঈমানদার খোঁজে ক্ষমা।
~ Imam ghazali
………………………..
Sarwar Chowdhury’র পোস্টে ইমাম গাজ্জালী’র একটা বাণী দেইখা, কয়দিন আগে আমি একটা ‘বাণী’র কথা বলতেছিলাম, সেইটা মনে হইলো।
বলতেছিলাম, অ্যাভারেজ আর গ্রেট মানুশ কেমনে চিনবেন? অ্যাভারেজ মানুশ হইতেছে যার হেইট্রেট বা ঘৃণা তার প্রেম বা মাফের চাইতে বেশি।
(বুকোউস্কির কবিতা’তে আছে এইরকম যে, অ্যাভারেজ মানুশদের সবচে বড় জিনিস হইতেছে ঘৃণা।) আর মানুশ তখনই একটা গ্রেটনেসের দিকে যাইতে পারে যখন সে তার এই অ্যাভারেজ ইনহেরিয়েট ঘৃণারে পার হইতে পারে, কোন না কোনভাবে (বা কোন না কোন সময়)।
মানুশ তো আসলে কন্সটেন্ট কিছু না। আপনি কোন ‘ধারণা’ দিয়া একটা মানুশ’রে বাইন্ধা ফেলতে পারেন না। একটা মানুশ অ্যাভারেজ বা গ্রেট, হিপোক্রেট বা সাচ্চা – এইরকম হয় না; খুব বেশি হইলে কিছু টেসডেন্সি’র কথা-ই বলা যায়।
যেমন ধরেন, আমি যে এখন বড় বড় কথা 🙂 লিখতেছি, আমি যে একটু পরেই রিকশাওলার লগে রিকশা ভাড়া নিয়া খ্যাঁচ খ্যাঁচ করবো না – তা তো না! বা এইরকম করি বইলা বড় বড় কথা 🙂 কইতে পারবো না, বা এইগুলার কোন রিলেশন নাই, এইরকমও না আর কি!…
কিন্তু তাই বইলা, টেসডেন্সিগুলা ইন-ভ্যালিড হয়া যায় না।
আরো একটা টেনডেন্সি’র কথা বলতেছিলাম যে, দেখবেন, আপনি কারো উপকার করলে, সেই মানুশ’টার (বা আপনারও) কৃতজ্ঞতা-বোধের চাইতে অস্বস্তিটা বেশি হওয়ার কথা। এই কারণে না যে, মানুশ ‘উপকার’ নিতে পারে না, বরং ‘উপকার’ জিনিসটাই এইরকমের।
এক তো হইল, যিনি উপকার’টা করতেছেন, তিনি একটা এক্সপেক্টশনের ভিতরে থাকেন যে, যিনি উপকার’টা নিতেছেন, তিনি সেইটা সবসময় না হইলেও মাঝে-মধ্যে মনে করবেন। আর যিনি ‘উপকার’টা নিলেন; তিনিও ভাবতে পারেন যে, এইটা তো থাকাটা দরকার। বা আরো কয়েকটা সিনারিও হইতে পারে: ১. যিনি উপকার’টা নিলেন তার ‘প্রতিদান’ দেয়ার একটা চাপ থাকতে পারে ২. ধরেন, কাউরে চাকরিই দিলেন, সে তো অই চাকরিটা পাইতেই পারতো, আপনি তো খালি কানেকশন’টা করায়া দিলেন, সেইটা দিয়া তার যোগ্যতা’রে তো ইনভ্যালিড কইরা দিতে পারেন না ৩. যিনি উপকার করলেন, তিনি ‘বড়’ ভাব নিতে পারেন… এইরকম আরো অনেককিছুই।
মানে, ‘উপকার’ বইলা জিনিস – সেইটারে কোন না কোন এক্সচেইঞ্জের ভিতর দিয়াই ভাবতে পারতে হয়। এর একটা কারণ হইতেছে, এই ‘ফিক্সড’ আইডেন্টিটি।
(এইটা নিয়া আরো কথা বলা যায়, কিন্তু আমার কথা’টা মেবি কিছুটা ক্লিয়ার করা গেছে।)
আরেকটা জিনিস মনে হইলো, ইমাম গাজ্জালী’র নামট আসাতে। এখন তো রেফারেন্স হিসাবে রুমি, ফরিদউদ্দিন আত্তার, আরো অনেকের কথা-ই আসে। এর দুইটা রেসপন্স আমি দেখছি। সেইটা নিয়াও বলি।
একটা মত হইতেছে, ‘নাম কেন নিতে হবে?’ বাহাদুরি দেখানোর লাইগা, যে ‘নাম’ আপনি জানেন? 🙂 এইটা ধরেন, অই গ্রুপ’টা যারা কিছুদিন আগে ‘ফুকো, দেরিদা, নিটশের নাম কেন নিছেন?’-টাইপ ডিবি’র অফিসার ছিলেন। মানে, নাম’গুলা তো আছে বা রিলিভেন্ট হয়া উঠে কিছু জিনিস, সময়ে সময়ে। সময়ের ট্রেন্ড বলেন বা যা কিছুই, বাংলাদেশে ‘৬০-এ মার্কস, এঙ্গেলস, ‘৭০-এ সার্ত্র-টার্ত্ররা মেবি ছিলেন… মানে এইটারে চিন্তার ফ্যাশন বা যা-ই বলেন, ছিল বা আছে। মানে, সিলসিলা একটা চালু আছে; কোনকিছু হুট কইরা নাযিল হয় না বা ট্রেন্ড মাইনাই সবসময় চলে – এইরকম না; কারো কারো চিন্তা জাইগা উঠে আর আমাদের টাইমে রেফারেন্স হিসাবে নিতে পারি, কোন না কোনভাবে। এইটারে বাদ দেয়া বা লুকায়া রাখাটা, কাজের কোন জিনিস বইলা মনেহয় না আমার কাছে।…
আর আরেকদল চিন্তার মিলিটারি’রা আছেন, যারা ইনকোয়ারি করতে থাকেন, কদ্দূর পড়ছেন আপনি গাজ্জালী (বা মার্কস, আগের দিনের মিলিটারি’রা জিগাইতেন)? 🙂 মানে, ‘পুরা’টা না পইড়া আপনি নাম নিতে পারবেন না, বা নিলেও আপনি তো ‘অরিজিনাল’ গাজ্জালি/রুমি/মার্কস/ফুকো’রে… জানেন না! তো, এইগুলা হইতেছে, আরেক রকমের বুলশিট! উনারা যা জানেন, সেই জানার ভিতরেই আটকায়া থাকেন, আর আপনারেও আটাইতে চান।
এইটা খুববেশি রিলিভেন্ট না হইলেও মনে হইলো, এই উছিলায় বইলা রাখা যায়।
এই খুঁতখুঁতানি’টা আমার আগেও ছিল, এখন আরো বেশি কইরা হইতেছে; এই যে সারওয়ার চৌধুরী’র স্ট্যাটাস আমার নিউজফিডে দেখানো হইল আজকে সকালবেলায়, এইরকম আমি যেইটা লিখতেছি, যেই দুই-একজনের লগে কথা কইছিলাম এইসব নিয়া, তাদেরকেও দেখাইবো এইটা, ফেসবুক।
এইটা এতোটা রেন্ডম জিনিস না, আবার খুব ‘সুচিন্তিত’ বাছাইও না; একটা এলগারিদম যেই যেই কম্পোনেন্টরে কন্সিডার করে, সেইটা পুরাটা আমরা না জানলেও, টের যে পাই না – তা মনেহয় না।
কিন্তু যেই প্যারামিটারগুলা দিয়া আমরা ভাবতে চাইতেছি বা বলতে চাইতেছি, এই জিনিসগুলা ঠিক কখনোই তো সাফিশিয়েন্ট না।
৪.
ব্যাপার’টা এইরকম না যে, কোন ‘কারণে’ আমরা কোন কাজ করি; বরং বেশিরভাগ সময়ই কোন কাজ করার পরে ‘কারণগুলা’ আমরা আবিষ্কার করতে থাকি।
তাই বইলা ঘটনা’টা এইটা না যে, এইখানে কার্য়-কারণের কোন সমন্ধ নাই, কিন্তু যেইভাবে আমরা ভাবি, অইরকম লিনিয়ার কিছু খুব কমই এগজিস্ট করতে পারে আসলে। মানে, এই দুনিয়াটা আমাদের যুক্তিগুলারে প্রাকটিস করার কোন ময়দান তো না!
এইখানে বরং কিছু ‘কারণ’-এর সেট আছে, যখন কিছু করি বা করতে চাই, আমরা মনে করতে পারি যে, এই এই কারণে আমরা করতেছি। এইখানে কনশাস, সাব-কনশাস, আন-কনশাস’রে কন্সিডার কইরাই বলতেছি। এমন না যে, ‘কারণ’ আছে, কিন্তু আমরা ঠিক ক্লিয়ার ছিলাম না – এইরকম না; বরং প্যাটার্ন বা বেইজটাই ডিফরেন্ট।
এইখানে একটা সেট আছে ‘কারণ’-এর আর একটা সেট আছে ‘অ্যাক্ট’ বা ‘কাজকাম’-এর। ‘কারণ’গুলা যেমন লিমিটেড, এইরকম কি কি করতে পারি আমরা, সেইটার অপশনও তো খুব বেশি না আসলে। তো, যখন একটা ‘অ্যাক্ট’ করতেছি, তখন আগের কাজকামের বেসিসেই করতেছি না খালি, একটা সেট অফ ‘কারণ’রেও কন্সিডার করতেছি বইলা মনে হইতে পারে। কিন্তু আসলে এইরকম হয় না 🙁 আমরা দেখি এইভাবে। তো, দেখার লগে মিলেও কিছুটা, এই কারণে মনে হইতে পারে, এইটাই ঘটনা।
যেমন ধরেন, লেখালেখির জায়গাটাতেই, আমরা আমাদের কাম-ক্রোধ-ঘৃণা-প্রেম-আইডিয়া নিয়া লেখি – এইরকম না; লেখা বা ফিলিংস জিনিসটা তৈরি হইতে থাকে আর এই ‘জানা’ জিনিসগুলারে রিফ্লেক্ট করে, তার ভিতরে। এইরকম’টা মেবি বেশি সত্যি। এই জানাজানি’র বাইরে যদি কিছুটা যাইতে পারে, ইন্টারেস্টিং মনে হইতে পারে তখন, আর্টের কাজগুলা।…
মানে, আমরা ‘লেখক’ হয়া উঠতে পারি না কখনোই, একটা সোশ্যাল সেন্সে, বরং একটা ‘লেখক’ – এই জিনিসটার ভিতর দিয়াই যিনি লেখালেখি করতেছেন তারে কিছুটা পারসিভ করতে পারি।…
Leave a Reply