Money Heist নিয়া কিছু কথা বলছিলাম আগে; তো, এর বাইরেও আরো ৩টা জিনিস মনে হইছিল, তখন আর বলা হয় নাই। এখনো যে খুব বলতে ইচ্ছা হইতেছে, তা না, যেহেতু মনে হইছিল, ভাবলাম বইলা রাখি।
(জানুয়ারি মাসে লেখা পয়েন্ট দুইটা আগে দিতেছি, আর কয়দিন আগে যেইটা ভাবছিলাম, সেইটা পরে রাখতেছি)
১. মানি হেইস্টের থার্ড পার্টে রেকোল (পুলিশের ইন্সপেক্টর, চিফ নেগোশিয়েটর) যখন জাইনা যায় যে, প্রফেসরের কোন সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার নাই, যখন ম্যানুয়াল থিকা ডিজিটাইজড করতেছিল ন্যাশনাল ডাটাবেইজ, তখন সে আর তার আইডি রিনিউ করে নাই, তখন শে এই ডায়ালগ’টা দেয় যে, তুমি তো বাঁইচা নাই, এগজিস্টই করো না, তাইলে তোমারে মাইরা ফেললে তো কিছু যায় আসে না, কারণ তুমি তো নাই!
খেয়াল করেন ব্যাপার’টা, ন্যাশনাল আইডি কার্ড করা হয় মানুশ গোণার লাইগা, আপনারে একটা আইডেন্টিটি দিয়া আরো আরো ‘নাগরিক সুবিধা’ ‘সিকিউরিটি’ দেয়ার লাইগা… মানে, এইরকমই তো বলা হয়, তাই না? কিন্তু দেখেন, এইটা তার উল্টাটা; আপনার আইডেন্টিটি’টারে, এগজিসটেন্সটারে এইটা দখল কইরা ফেলে। একটা ন্যাশনাল আইডি কার্ড দিয়া আপনারে ‘একটা পরিচয়’ দেয়া হয় না, বরং আপনার এগজিসটেন্সটারেই নিয়া নেয়া হয়, আপনি আছেন কি নাই – সেইটার ফয়সালা হয়!
এইটা আমরাও জানি। প্রফেসরও জানতেন, এই কারণে নিজের আইডেন্টিটি গোপন রাখার লাইগা এই কাজ করে সে।
মানে, ন্যাশনাল আইডি কার্ড দিয়া আমাদের আইডেন্টিটি যাচাই করা হয় না খালি; এইটা ছাড়া আমরা মানুশ হিসাবে নিজেদেরকে দাবি-ই করতে পারবো না!
ব্যাপারটা আমরা যে জানি না – তা না; কিন্তু এই এক্সটেন্ড তক আমরা মেবি ভাবতে রাজি না, এতোটা।
২. এই সিরিজে আরেকটা জিনিস আছে। মোরাল জায়গাটা। প্রফেসর যেমনে রেকোল’রে কনভিন্স করে ‘লিকুইডিটি ইনজেকশনের’ আইডিয়াটা দিয়া।… মানে, যে কোন ডাকাত’রেই মনে মনে রবিনহুড হইতে হয় আসলে। (বা পুলিশ হইলে মাসিহা। মানে, মোরাল একটা জায়গা রিকোয়ার্ড। পুলিশের জায়গাটা যে আজাইরা, এইটা আমরা জানি, কিন্তু ডাকাতদের জায়গাটাও কাছাকাছি রকমের জিনিসই আসলে।) আর এই জায়গাটা ফানি মনে হইতে পারে; কিন্তু দরকারি আসলে। যখন ধরেন, কাস্টমসে চাকরি কইরা ঘুষের টাকায় কেউ মসজিদ বানায়, এইরকম টাইপের জিনিস।
যে একটা ‘অন্যায়’ আমি করতেছি, কিন্তু সেইটা দিয়া একটা ‘ভালো’ কাজ তো আমি করছি! বা এইখানে প্রফেসর যেইটা বলে, লিকুইডিটি ইনজেকশন করে পলিটিশিয়ান, বুরোক্র্যাট, বিজনেসম্যান’রা, তো সেইটা আমরা করতেছি; ওই পাওয়ার’টা খালি আমরা নিতেছি! মানে, একটা মোরাল গ্রাউন্ড লাগে আসলে।
আর এইরকম মিনিমাম কোন মোরাল গ্রাউন্ড ছাড়া কোন ‘পাপ’ বা ‘অন্যায়’ বা ‘খারাপ কাজ’ যত বড় বা ইনসিগনিফিকেন্ট হোক, আসলে করা সম্ভব না। তো, এই জিনিসটা যতো সিরিয়াসলিই করা হোক, একটু ফানিও তো অবশ্যই।
……………….
৩. বেলাচাও গান’টা খেয়াল করেন। এইটা ছিল ইতালিতে ফ্যাসিস্ট বিরোধী গান। এখন ব্যাংক ডাকাতরা এইটা গাইতেছে। কিন্তু খালি ব্যাংক ডাকাত বইলা অরা গাইতে পারতেছে, ব্যাপারটা এইরকম না। বিপ্লবী বইলা পারতেছে আসলে। মানে, এই গানটা যারা গাইতে পারে, তারাই তো বিপ্লবী! এই ধারণা থিকাই মেবি দ্য লুক অফ সাইলেন্স ডকুমেন্টারিটাতে, যে একজন রিজিওনাল লিডার, খুন করার দলের, সে বিরহের একটা গান গাইতে পারে। এমন না যে, তার মধ্যে প্রেমিক পুরুষ ব্যাপারটা নাই, কিন্তু খুনের জায়গাটারে কিছুটা দূরে সরাইতে পারে তো! এইরকম বেলা চাও গানটা, এইটা যে একটা হেইস্ট না, একটা বিপ্লবী কাজ, সেইটার নিশানা। এইরকম কালচারাল কোন একটা নিশানা মাস্ট একটা ঘটনা। এই কারণে দেখবেন আমাদের বাম-বিপ্লবীরাও গান বান্ধে খালি, কবিতা লেখে! 🙂
৪. আরেকটা জিনিস হইলো; কারেক্টারের প্রটোটাইপ’টা। আরতরো’রে যে ফানি এবং ভিলেন লাগে, এর কারণ হইতেছে, সে প্রটোটাইপ, সমাজের সুডো যেই ধারণাগুলা, সেইগুলাতে সাবস্ক্রাইব করে, এইগুলার বেনিফিট নেয়ার লাইগা। এর তুলনায় প্রফেসর, একজন পটেনশিয়াল সোশিওপ্যাথ হইলেও, সেইটা সে না, কারণ সুডো মরালিটির জায়গাগুলারে সে বিলিভ করে না। একই কারণে দেখবেন, টোকিও’রে নেয়াটাও টাফ। কারণ মেয়ে হিসাবে তার যে সিডিউস করার পাওয়ারটা আছে, এইটা নিয়া শে খুবই কনশাস। খালি কনশাসই না, শে এইটারে অ্যাপ্লাই করতেও হেসিটেট করে না। ‘সমাজের নিয়ম’ মানেন না বইলাই উনারা বিপ্লবী – এইরকম না, সমাজে যেই জিনিসগুলারে ‘ভালো’ বইলা দাবি করা হয়, এইগুলাতে উনারা বিশ্বাস করেন না বইলা বিপ্লবী আসলে!
৬. তো, জিনিসটা এতোটাই স্ট্রেইট যে, এইটারে সত্য বা মিথ্যা মনে হইতে পারার আগেই বরং অনেকবেশি এসোসিয়েট করতে পারে আসলে অডিয়েন্সরে, এইরকমের স্ট্রেইট-কাট মিনিংগুলার ভিতর দিয়া। আর এইটাই আসল ঘটনাটা, মানি হেইস্ট সিরিজের। দুনিয়াতে কয়টা মানি হেইস্টের সিনেমা দেখছেন বা কাহিনি শুনছেন, যেইখানে টাকা নিয়া পালাইতে পারে, ডাকাতরা বা বিপ্লবীরা? একটা-ও না মেবি, বা থাকলেও অইগুলা হিট হয় হইতে পারে নাই মেবি, ‘সত্যি’ লাগে নাই, অডিয়েন্সের কাছে। এইটাও ‘সত্যি’ লাগছে – তা না; কিন্তু এক ধরণের ‘ইচ্ছাপূরণ’ টাইপের ফিলিংস মনেহয় দিতে পারে, যেই কারণে ‘মিথ্যা’ বা ‘বানানো’ হইলেও দেখতে ভালোই লাগে; হিন্দি-সিনেমার মতন।
Leave a Reply