কবিতা: এপ্রিল, ২০২০

জুতা কাহিনি

জুতাগুলা পইড়া আছে,
দরজার বাইরে, সিড়ির পাশে
জুতাগুলা আছে…

বাইরেটাও আছে, কয়েকজন মানুশ হাঁটতেছে…

বৃষ্টি আসতেছে, দৌড়াইতেছে এখন মানুশগুলা

জুতাগুলা হাসতেছে…

অদের ভিতর থিকা ভেসে আসতেছে
রাস্তার আওয়াজ, ধুলাবালির ঘ্রাণ
ফুটফেটিশের সিনড্রোম…pullquote] [/pullquote]

সকালবেলা

পাতার উপর আঁকা
ছোট্ট একটা বাতাস
এর মতন একা

দেখা যায় না তারে
পাখি ভাবে, হায়
আমি উড়তেছি
তাইলে কেমন
করে!

পাতার উপর আঁকা
একটা রইদের কণা
কাঁপতেছে
তির তির

বলতেছে,
জীবন আছে
দেখার ভিতর
একটা না-দেখা

ভাসতেছে বাতাসে
হাসতেছে রইদে

আঁকা বাঁকা
রাস্তাটার মতন
মিথ্যা সত্য
সত্য মিথ্যা

হেঁটে যাইতেছে
একা একা

অনেকগুলা চড়ুই
কিচিরমিচির
করতেছে

বলতেছে
মিথ্যা এইটা!
মিথ্যা এইটা!

বাতাসটা চুপ
রইদটা স্থির

চড়ুইগুলা
উইড়া
চলে গেলে
বুঝা যায়

সমস্ত কথাই
মিথ্যা,
সত্যের ইশারা।

বেগম আখতারের চাঁদ

এলুমিনিয়ামের প্লেটের মতন চাঁদ
দাঁড়াইছে ছাদগুলার উপর

তারে রুটি, ভাত ও অন্ন দাও
চিল্লায়া কইলো, পাশের ছাদের
একজন অ্যাক্টিভিস্ট।

তার পাশ থিকা বেগম আখতার কইলেন,
না, না, সে তো তোমার মতন পোতিবাদি না

এমনেই আসছে সে, গরিব না এতোটা
যতোটা রোমান্টিক

ডিপ্রেশন

তোমার ছাদে, চাঁদের আলো
আমার ছাদে মেঘের ছায়া,
কালো

চৈত্রের বাতাসের মতন
একটু পরে পরে আমি তোমারে
কই, থাকো!

আকাশে তারা’রা উঠে,
তুমি বললা, দেখো,
আমার তো লাগে না, ভালো…

তোমার প্রতিটা পায়ের ছাপ

তোমার প্রতিটা পায়ের ছাপ মনে রাখি,
বালুতে বাতাস উল্টা-পাল্টা
কইরা দেয়ার পরেও
মনে থাকে আমার, কোথায়
তোমার কোন আঙুল’টা
ছিল বাঁকা, কোন নখ
উপড়ায়া ফেলছিলা

কই কই হাসছিলা তুমি, কোথায়
মন খারাপ ছিল, আর
কোথায় গিয়া চাইছিলা হারায়া যাইতে
একবারে; যেন কেউ দেখতেছে না
যেন কেউ খুঁইজা বাইর করতেছে আবার
নতুন একটা তোমারে

সবকিছু মনে থাকে, আর
মন পিছলায়া যায়, ছাদের উপরে
সন্ধ্যাবেলার চান্দের আলোর মতন
দুইটা চায়ের কাপে লগে, চুপচাপ
বইসা থাকে, আবার মনেহয় চইলা
যাইতেছে, কই কই যে, আমাদের অস্তিত্বের
মেঘের লগে…

“হ্যাঁ, আমি জানি তো, জেলাসিই
এইগুলা”, তুমি বলবা।

আর
একটা ইন্দুর আন্ধারে,
আমার মাথার ভিতর কুট কুট করতেই থাকে,
দেখা যায় না, কিন্তু টের পাই আমি,
আছে

আমরা, মানুশেরা

আমরা, মানুশেরা
ভ্যাসেলস;

ভাসতেছি
সময়ের সাগরে

ঢেউগুলা
উপড়ায়া ফেলতেছে

ভাসতে ভাসতে
যাইতেছি

একটা ইনফিনিটি পার হয়া
আরেকটা ইনফিনিটি’তে…

 জিনিস কেমনে হারায়? 

পয়লা জিনিসটারে রাখবা একটা শব্দের ভিতরে,
নাম দিবা, নাম ধইরা ডাকবা;
সেই নাম’টারে, শব্দটারে
একটা মিনিং দিবা;

তারপরে ডাকতে ডাকতে
একটা সময় নামের ভিতরে
মিনিং’টারে হারায়া ফেলবা

থিঙ্কস উইল ডিসঅ্যাপেয়ার সামহাউ…

ভুইলা যাবা

তারপরে,
অনেকদিন পার হইলে পরে
একদিন মনে হবে তোমার,
আরে কি জানি, কে জানি…

মিনিংটা ভাসতে থাকবে মেমোরি’তে,
শব্দ’টাও আসি-আসি করবে;

হারায়া যাবো আমি
অন্ধকারে
তোমার

শেষের কবিতা
সে আমারে না দেখিবারে পায়,
অসীম ঘৃণায়…

ভূতগুলা
ভূতগুলা ক্যামেরা’র সামনে হাঁটতেছিল
ছায়ার মতন;
আর আমাদের চোখ তাদেরকে
মানুশ বানায়া তুলতেছিল

‘আমরা-ই মানুশ, ভূত নাকি!’
বইলা তারা, স্ক্রীণ থিকা বাইর হয়া
আইসা, আমাদের লগে বইসা
মুড়ি খাইতেছিল;

আমাদের ভূতগুলা তো সবসময় আমাদেরই লোক

হায়, হায়…
পথ হারায়া ফেলছে শে,
না-চিনা একটা রাস্তায়
হাঁটতে হাঁটতে অনেক
দূর চইলা গেছে আর
জানে না কিভাবে ফিরা
আসতে হয়; যখন মনে
হয়, ফিরা আসার কথা
শ্বাসগুলা গুণতে থাকে
চইলা আসার; যেন ডুব
দেয়ার পর দম আটকায়া
আসতেছে আবার, আর
পানির নিচে সুন্দর দুনিয়া
বুদ বুদ ভাসায়া দিতেছে
সবুজ লতা-গুল্মের ভিতর
তাকায়া থাকতে থাকতে
মনেহয়, তারা তো অন্য
দুনিয়া; আর কেন ফিরা
যাবো আমি? জল’রে পানি
বলার ভুল আমি তো করবো
না! তার ভেসে-যাওয়ার
ভিতর জন্মায় লাল শাপলা
ভোরবেলায় সূর্য উঠি উঠি
করে, পুকুরের দিকে তাকায়া
থাকতে থাকতে মনেহয়
আমার; একটা ছায়া দুলতেছে
আমার পাশে; কথা বলতেছিল
বইলা ভুল হয়; আমি ভাবি, হায়
হায়! মাথা-ভর্তি ডোপামিন নিয়া
আমি হয়তো ভুল কইরা লিখতেছি
আবার, কবিতা-ই, হায় হায়…

সাবজেক্ট
চিন্তার জালে
আটকা পড়া
একটা অবজেক্ট
চিক চিক করতেছে
সকালের রইদে

ব্যাখার বালিতে
পড়ার পরে
মারা যাবে
সে

তার আগে
এই যে তার
বোবা জনম
মিথ্যা মিথ্যা
কি লাগে না,
একটু?
তার নিজের কাছে?

হুট কইরা
বইলা বসবে
না তো, সে
আমারে; যে,
অবজারভেশনের
ভিতরে তুমি
যে বানাইতেছো
আমারে; এইভাবে
তুমি নিজে-ই
হইতে পারতেছো
কতোটা
সাবজেক্ট?

তার
এই প্রশ্নে
বাতাস উতলা,
বৃষ্টি নামতেছে
মেঘ ডাকতেছে
গুড়গুড় গুড়গুড়…

জালের ভিতরে
গুটায়া যাইতেছি
আমিও; যেন
একটা অবজেক্ট
একটা গাছ
একটা রাস্তা
একটা ফুল
বৃষ্টির দিনের সকাল

আটকা পইড়া
থাকতেছি
তোমার
চিন্তার ভিতর


োওও

Leave a Reply