পাবলিক স্পিকিং এবং পাবলিক স্পেইস নিয়া

১.
– বিশিষ্টজনদের বিবৃতির ব্যাপারটা নিয়া –

এইরকমের একটা ট্রাডিশন দেখছি বাংলাদেশের পত্রিকায়, অন্য দেশেও থাকার কথা, যে ইম্পর্টেন্ট কোন ঘটনা ঘটলো, তখন সমাজের বিশিষ্ট লোকজন বিবৃতি দেন। চিটাগাংয়ের সিআরবি’র ঘটনায় এইটা দেইখা মনে হইলো। সিআরবি আমার নিজেরও অনেক পছন্দের জায়গা। রেলওয়ের হাসপাতাল, পাহাড়ের উপরে মসজিদ আছে একটা।… এই জায়গাটারে বাংলাদেশের ‘ন্যাচারাল হেরিটজ’ বইলা মার্ক করা উচিত আসলে।…

তো, বলতেছিলাম, বিবৃতি’র জায়গাটা নিয়া। আমি এর বিপক্ষে না। আর বিবৃতি দেয়া মানুশরাই যে এর বিরোধিতা করতেছেন, তা তো না-ই, এবং বিরোধিতা করতে হইলে আপনারে ‘বিশিষ্ট’ কেউ হইতে হবে – এইটাও জরুরি না। ‘বিশিষ্টজনদের বিবৃতি’র মধ্যে এই জিনিস’টা আছে – এই দাবিও আমি করতে চাই না। কিন্তু এই প্রাকটিসের কারণে নর্মস হিসাবে একভাবে সামনে থাকে, একটা বিরোধিতা যেমন থাকে, একটা ‘বিশিষ্টজনের’ তালিকাও তৈরি হইতে থাকে; এই জিনিসটা বাজে না অবশ্যই, কিন্তু টু সাম এক্সটেন্ড অস্বস্তির জিনিস বইলা মনেহয় আমার কাছে।

অস্বত্বি’টা হইতেছে এর ভিতর দিয়া ‘বিরোধিতা’ জিনিসটা একটা ‘বিশিষ্ট’ ব্যাপার হয়া উঠে, একটা স্পেশাল ঘটনা হয়া উঠে। আমি বিরোধিতা করতেছি, এই কারণেও আমি ‘বিশিষ্ট – এইরকম পারসেপশনের জায়গাতে গিয়া ঠেকে, এর বাইরে সবাই যেন মাইনা নিতেছেন! অথচ ঘটনা তো এইরকম না, কখনোই। যে কোন জিনিস নিয়া সমাজের ‘সব’ (এইটা হইতেছে ক্যাচ’টা) মানুশ কখনোই কনসার্ন হবে না, আর যেহেতু হইতেছে না, ধইরা নেয়া যাবে না যে, এই ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিরা’ বাদ দিয়া ‘সবাই’ এইটা মাইনা নিতেছেন!

(এইটা ঘটে, নিরবতা জিনিসটারে সিঙ্গুলার হিসাবে ধইরা নেয়ার ভিতর দিয়া। অথচ নিরবতা ভাষার চাইতে, বলার চাইতে আরো বেশি মাল্টিপল।…)

এখন ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিরা’ বিবৃতি দেয়া বন্ধ কইরা দিলেই তো এইটা এস্টাবিলশ হয়া যাবে না, বরং আরো বাজে-ই হওয়ার কথা।

আমার কথা হইতেছে, যেই কয়জন মানুশ এর বিরোধিতা করতেছেন, তারা-ই ‘সমাজের সচেতন অংশ’ – এই টাইপের ব্র্যান্ডিং করা যাবে না। এই ধরণের বিবৃতির ভিতরে ইনটেনশনালি থাকে যে, যারা কথা বলতেছেন-না (না, যাদের কথা-বলাটারে সিগনিফিকেন্ট কইরা তোলা হইতেছে না আসলে) যেন তাদের রিপ্রেজেন্টেশন করতেছেন উনারা; এই রিপ্রেজেন্টেশনের জায়গা থিকা হাইলাইট করাটা ইস্যুটারে পাবলিক ঘটনা কইরা তুলতে পারে না, বরং পুরা ব্যাপারটাতে পাবলিক’রে যে এড়ানো হইতেছে – সেই কোর জায়গাটারে বাদ দিয়া একটা অবৈধ অথরিটিরেই মুখ্য কইরা তোলা হইতে থাকে।

এইভাবে ‘প্রতিবাদ’ যে হয় না – তা না, একটা সাবমিশনের ঘটনাও হাইলাইট হয়। যেইটা আমার অস্বস্তির জায়গা।

তো, বিশিষ্টজনেরা অবশ্যই বিবৃতি দিবেন, প্রতিবাদ করবেন। কিন্তু বিবৃতি ও প্রতিবাদ পাবলিকের দরবারে করেন আপনারা, যে, দেখেন ভাই, আপনার সম্পত্তি আপনারে না জানায়া দখল করা হইতেছে। চোর’রে বইলেন না চুরি করিস না! কারণ বইলা তেমন লাভ নাই, চোরের কাজই হইতেছে চুরি করা। গেরস্থরে বলেন, চোর’রে সামলা!

গর্ভমেন্ট দেশের মালিক না, দেশের মানুশের চাকর – এই সত্যি-কথা বিবৃতিগুলাতে থাকে-না না, বরং বেশিরভাগ সময়ই গোপন করা হয়। এইটা করাটা ঠিক না।

২.
কোনকিছু’রে ‘রক্ষা করা’ যাবে না – তা না, কিন্তু এইটা বেশিরভাগ সময়ই এইগুলা হয়া উঠে রিএকশনারি একটা কাজ (করা তো লাগেই); বরং তার চাইতে জরুরি হইতেছে ক্রিয়েট করতে পারা।

মানে, সিআরবি’র ব্যাপারে আমার প্রস্তাব হইতেছে তিনটা।

এক হইতেছে, শহরে পাবলিক প্লেইসের দাবি করেন। এইটারে সরোয়ার্দি’র “গাছ-বাঁচানো”র মতন নাটক বানায়া ফেইলেন না! (মানুশের অধিকার নিয়া নাটক-সিনেমা করা যাবে না – তা না, কিন্তু পলিটিক্যাল কাজ হিসাবে যে, এইগুলা থার্ড-ক্লাস ঘটনা, এইটা রিকগনাইজ করতে পারাটা দরকার।) বরং এই জায়গা থিকা দেখেন যে, পাবলিক প্লেইস জরুরি শহরে। এই অবৈধ সরকার, পাবলিকের ডরে পাবলিক প্লেইসগুলা সব ভ্যানিশ কইরা দিতেছে। ৫/৭ হাজার মানুশ একলগে একটা জায়গায় জড়ো হইতে পারে, এইরকম জায়গাগুলা রাখতে চায় না। প্রতিটা শহরে, প্রতিটা এলাকায় এইরকম পাবলিক প্লেইস ক্রিয়েট করেন।

দুই হইতেছে, পাবলিক প্লেইসের উপরে সরকারের দখলদারি মাইনা নিয়েন না। সিটি করপোরেশন, মিলিটারি, রেলওয়ে, এইসব হাবিজাবি, দখলদার বাহিনি এরা, পাবলিকের জমির। শিয়ালের কাছে মুর্গি বাগি দিয়েন না। দেখ-ভালের নাম কইরা পাবলিকরেই ঢুকতে দেয় না এরা, সাইনবোর্ড টানায়া রাখে ‘প্রবেশ নিষেধ’। বেড়া হয়া খেত’রে খাইতেছে। পাবলিক প্লেইসের মালিকানা লোকাল পিপলের হাতে ছাইড়া দিতে হবে। বাচ্চা-কাচ্চা, ইয়াং পিপল, বুড়াদের নিয়া কমিটি করতে হবে; চেয়ারম্যান-মেম্বারদের হাতে ছাইড়া দিলেও হবে না।… মানে, এখনকার পলিটিক্যাল সিস্টেমের বাইরে গিয়া সোশ্যাল অথরিটি, পিপল এজেন্সিগুলারে এনগেইজ করা লাগবে, এমপাওয়ার করা লাগবে। (এই কাজটা অনেক কঠিন। একটা লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক বানাইতে পারলে, আরো ভালো। )

তিন হইতেছে, পাবলিক প্লেইস দখলে রাখতে হবে সামাজিক কাজকাম আর পলিটিক্যাল কর্মসূচির ভিতর দিয়া। সকালবেলা হাঁটা, জগিং, ব্যায়ামের ব্যবস্থা করেন, দুপুরবেলা বাচ্চাদের ওপেন স্কুল বানান, গরিবদের খাওয়া-দাওয়া করান, বিকালবেলা খেলাধূলা, স্পোর্টস, সন্ধ্যাবেলা গান-নাটক-সিনেমা-যাত্রা-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এইসব করান, রাতে খাওয়ার পরে হাঁটতে যান। রাত ১০টা থিকা ভোর ৫টা পর্যন্ত নাইটগার্ড রাখেন।… মানে, আপনারা যা যা করতে চান, করতে পারেন, এলাকার মানুশজন একলগে মিইলা।

আপনাদের পাবলিক এক্টিভিটিগুলারে “পাবলিক করেন”! পাবলিক প্লেইস তৈরি করেন।

সিআরবি তো বাঁচাইবেনই, নতুন নতুন সিআরবি-ও তৈরি করেন, চিটাগাংয়ে, ঢাকায়, সিলেটে, যশোরে, রংপুরে… নতুন নতুন পাবলিক প্লেইস তৈরি করা ছাড়া ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ বানানো যাবে না।

Leave a Reply