কবিতা: ডিসেম্বর, ২০২১

দুনিয়ারে দেখার চোখ

আমার একটা চোখ বড়
আর একটা চোখ ছোট

বড় চোখটা দিয়া আমি
ছোট ছোট জিনিসগুলা দেখি

ছোট চোখটা দিয়া আমি
বড় বড় জিনিসগুলা দেখি

তাই বইলা দুনিয়াটা সমান সমান
দেখায় না, বরং সবসময় দেখি
এবড়ো-থেবড়ো, উঁচা-নিচা আর ছোট-বড়

 

শীতের সন্ধ্যা

সন্ধ্যায়
শীতের বাতাসের
গন্ধও সুন্দর,
যদি তোমার
থাকে
রাতে ঘুমানোর
মতন
একটা
ঘর।

 

রেললাইন

একটা অন্ধকার হেঁটে যাইতেছে
আরেকটা অন্ধকারের দিকে,
বলতেছে, আমরা অনেক সুন্দর, বুঝছো!

একটা ইগনোরেন্স হেঁটে যাইতেছে
আরেকটা ইগনোরেন্সের লগে,
বলতেছে, আমরা অনেক ইনোসেন্ট, বুঝছো!

একটা ভুল-বুঝাবুঝি সবসময় থাকতেছে
আরেকটা ভু্ল-বুঝাবুঝি’র লগেই,
বলতেছে, আমরা ছাড়া আমাদেরকে আর কে বুঝবে, বলো!

 

শীতের সন্ধ্যা ২

মানুশের কোন কাজ নাই
মানুশ খই ভাজতেছে

চুলায় খই রাইখা
বিছানায় আইসা
ঘুমায়া পড়তেছে, সন্ধ্যাবেলায়

খইগুলা ফুটতেছে
ফুটতে ফুটতে
কড়াইয়ের বাইরে চলে যাইতেছে

মানুশের কোন কাজ নাই
মানুশ হাঁটতেছে

হাঁটতে হাঁটতে
একটা রাস্তা পার হয়া
আরেকটা রাস্তাতে গিয়া
হারায়া যাইতেছে

 

শীতের সন্ধ্যা ৩

এমনই
বদনসিব
শীতের বৃষ্টিতে
ভিইজা যায়
আমাদের
লাস্ট সিগারেট;
লাইটার থাকে না লগে,
আর রিকশাঅলা গায়
ভাটিয়ালি সঙ্গীত

কবিতা-লেখা

একটা খালি জায়গারে নিয়া সেইখানে বাগান বানানোর মতন
একটা খালি সময়রে নিয়া সেইখানে সুন্দর মেমোরি বানানোর মতন

কিছু স্পেইস আর টাইমরে নাও, আর লেখো, তোমার কবিতাটা এখন

 

সন্ধ্যার বাজার

মুর্গিগুলা উঁকি-ঝুঁকি দিতেছে,
মাছগুলা ছড়ায়া দিতেছে তাদের গন্ধ,
সব্জিগুলা ভাবতেছে আজকে রাত পার হইলে
সকালে কি বাতিল হয়া যাইতে হবে আমার?

বৃষ্টিতে, বাজারের পানিতে আর কুয়াশায়
কাদা কাদা হয়া আছে রাস্তা-ঘাট
অফিস শেষে তাড়াতাড়ি, আরো তাড়াতাড়ি
নিজেদের বাসায় পৌঁছাইতে চাইতেছে লোকজন,
আর রিকশার রাস্তায় গাড়িগুলা আরো লাগাইতেছে জ্যাম

পিঠার দোকানের সামনে ভীড়,
পুরির দোকানে জ্বলতেছে কড়াইয়ের আগুন

‘এতো যে মানুশ, এতো যে মানুশ
তবু আমার কালা কই?”
বলতেছে রাধা হঠাৎ তাকায়া,
শে-ও অফিস-ফেরত, তবে বাসায় ফিরতে চায় না

সন্ধ্যার বাজারে, শীতের বাতাসের মতো
ঘুরতে ঘুরতে হারায়া যাইতেছে নিজের ঘোরের ভিতর

 

আমরা কথা বলতেছি

অ্যাম আই
নট
ইউ?
শে জিগাইলো
আমারে।

আমি কইলাম,
মেবি আমি-ই
হইতেছি তুমি।

শে থমকাইলো,
হয়তো ভাবতেছিল
ইংলিশে কইলে কি হবে?

অথবা ভাবতেছিলাম
আমি-ই

ভাষার ভিতরে
আমি
তোমারে বানাইতেছি না
আমি খুঁজতেছি
বলতেছি
অ্যাম আই
নট
ইউ?

ভাষা
পানির মতো
আছে বইলা
আমরা সাঁতরাইতেছি
অকুল পাথারে

তেষ্টা মিটতেছে না তবু…

 

চড়ুই

একটা তেলাপোকা
উড়তেছিল,
ঘরের ভিতর
বলতেছিল, আমি পাখি!

কিছু মশা ও মাছি
হাততালি
দিতেছিল
একটা চড়ুই
জানালায়
বইসা দেখতেছিল
এই সিনেমা

কইলো,
জীবন সুন্দর!

 

রইদ

জানালা দিয়া
ভাইসা আসা
শীতের দুপুরের
কড়া রইদ
বলতেছে
বিছনার লেপ’টারে
তুমিও তো
চইলা যাবা,
না?

 

মন তোতা-পাখি

মনের মুখ চাইপা ধইরা বইসা থাকি,
মনের কথা যাতে মুখে না চইলা আসে

মন বলে, শোনেন ভাই, আমি এমনিতেই বোবা হয়া আছি
পারলে কিছু কথা শিখান আমারে

 

দিন শেষে

দিন শেষে
এর ওর নাম বইলা
এইটা সেইটার নাম দিয়া
মানুশ আসলে
নিজ-এর কাছেই
ফিরতে চায়

কিন্তু
‘নিজ’ বইলা তো
কিছু নাই!

কিছু মেমোরি
আর এটাচমেন্ট
পইড়া আছে
কয়েকটা জায়গায়

মানুশের জীবনে দুক্খ হইতেছে নদীর মতো

মানুশের জীবনে দুক্খ হইতেছে নদীর মতো। এইরকম ভাবলাম আমি। যখন ঘটনা’টা ঘটে, তখন ভয়াবহ রকমের পেইনের ভিতর দিয়া এইটা ঘটে। পাথর ফাইট্টা ঝর্ণার পানি বাইর হওয়ার মতন। এর এক্সপ্লোরেশন যত বড় হয়, তত বিউটিফুলও মনেহয় দেখতে, অন্য কারো কাছে। অনেক সময় ভয়ের জিনিসও হয়া উঠে। আশে-পাশের অনেক কিছু ভাইঙ্গা-চুইরা ফেলে। কিন্তু একটা সময় পরে এর স্রোতটা সময়ের ভিতর দিয়া যাইতে যাইতে স্মুথ হয়া আসে। কিন্তু হারায়া যায় না। নানান রকমের ফিলিংসের ভিতর দিয়া যাইতে থাকে। একটা সময় পরে হয়তো অন্য কোন দুক্খের নদীতে গিয়া মিইশা যায়। এইভাবে আমাদের দুক্খের নদী যাইতে যাইতে যখন দরিয়াতে পৌঁছায়া যায় তখন কোন দুক্খ থাকে না আর। অইখানে কোন ফিলিংস থাকে-না না, ফিলিংগুলা আর আটকায়া থাকে না, আন-বাউন্ডেড একটা জিনিস, অনেকগুলা জিনিস হয়া উঠে তখন।

 

অডিয়েন্স-ট্রাপ

আমার আত্মা বন্ধক রাখছি আমি শয়তানের কাছে
শয়তানটা দাবা খেলতেছে খুব মনোযোগ দিয়া
আমারে বলতেছে, আসো, দাবা খেলো আমার সাথে!

আমি চুপচাপ দাঁড়ায়া আছি, শয়তান’টা আরেকটা আমি
বানায়া নিয়া দাবা খেলতেছে তার সাথে

আমার আত্মা বন্ধক রাখছি আমি অই শয়তানটার কাছে

 

মানুশ একটা ক্লাস

মানুশ একটা ক্লাস।
বেটা-মানুশ হওয়া একটা ক্লাস।
বেটি-মানুশ হওয়া একটা ক্লাস।
বাচ্চা-পোলাপাইনগুলা বেটা আর বেটি হওয়ার ট্রাই করতেছে।

বেটা আর বেটিগুলা মানুশ হওয়ার ট্রাই করতেছে।
বাছুরগুলা গরু হইতেছে।
বাচ্চা-মুর্গিগুলা দেখতে দেখতে বড়-মুর্গি হয়া উঠতেছে।
ছোট ছোট গাছগুলাও বটবৃক্ষ হবে একদিন (মেবি)।

সবকিছুই কিছু না কিছু হইতেছে।

আমিও অন্য কারো মতো হইতে চাইতেছি।
অন্য কেউ আমার ভুল ভাঙ্গায়া দিতেছে,
বলতেছে, শোন, আমি তোমার মতো কেউ হবো না তো!

অন্য কেউ নিজের মতো হইতে গিয়া
অন্য কেউ-ই হইতেছে আসলে।

নতুন আইডলগুলার মূর্তি বানানো হইতেছে
পুরান আইডলগুলার মূর্তি ভাঙ্গা হইতেছে
সামনে কোন মূর্তি নাই বইলা কেউ মন-খারাপ করতেছে

আমাদের ক্লাস-স্ট্রাগল থিকা নতুন ক্লাস তৈরি হইতেছে
আমাদের রেসিয়াল চিন্তা থিকা নতুন রেইস তৈরি হইতেছে
আমাদের মানব-শরীর হয়া উঠতেছে নতুন কোন স্পেসিস
আর অরা মঙ্গলগ্রহে চইলা যাওয়ার প্ল্যান করতেছে

অরা নতুন কোন স্পেসিস না,
অরা নতুন কোন রেইস না,
ক্লাস জিনিসটারে অরা অই লেভেলে নিয়া যাইতেছে

বলতেছে, মানুশ হইতে হইলে
মিনিমাম একটা ক্লাস তো থাকতে হবে, তাই না!

 

লিভিং অ্যা গুড-লাইফ

সকাল ভালো,
ভালো রাতও;
আমাদের রাত ভালো
দিন ভালো
ভালোই ভালোই পার হইতেছে
জীবনের সময়গুলা
আর ভাবতেছি
ভালোই ভালোই
এখন
মরতে পারলেই হয়
কোন একদিন

 

পৃথিবী একটা কমলালেবু’র মতো

অনেক কমলা রং’য়ের রইদ ছিল
টেবিলে একটা কমলা ছিল
কমলা রং’য়ের হাসি ছিল
হাসিগুলা হাসতেছিল
যা ছিল, তা তো ছিল-ই
যা ছিল না, তা-ও ছিল
হাসতে হাসতে চলে যাইতেছিল
বলতেছিল, শোনো,
অনেক কমলা রং’য়ের রইদ ছিল!

 

Leave a Reply