অগাস্ট ১২, ২০২১
খারাপ-কাজ, পাপ এবং অন্যায়
ধরেন কেউ একজন রিকশার ড্রাইভাররে, সিএনজি’র ড্রাইভাররে বা রাস্তার পাশের কোন দোকানদাররে গালি-গালাজ করলো, তার লোয়ার সোশ্যাল-ক্লাসের ফায়দা নিয়া নিজের রাগ তার উপরে ঝাড়লো। এইটা খারাপ কাজ। কিন্তু একস্ট্রিম পর্যায়ে না গেলে দুইজন মানুশের ঘটনাই। মাফ চাইলে বা সরি বললে অনেক সময় ঘটনার শেষও হয়া যায়।
আবার ধরেন, কেউ একটা ম্যারিটাল রিলেশন বা কমিটেড রিলেশনের মধ্যে থাইকা তারে না জানায়া অন্য মানুশদের সাথে সেক্সুয়াল রিলেশনে জড়াইলো এবং কন্টিনিউয়াসলি করতে থাকলো; এইটা খালি ‘খারাপ কাজ’ না, একটা ক্রাইম না হইলেও ‘পাপ’ বা ‘অনৈতিক’ ঘটনা। ইভেন, পরে জানাইলেও জিনিসটা একইরকম না। পলিগ্যামাস রিলেশনেও, আমার ধারণা, না-জানানোটা এথিক্সের বাইরের ঘটনাই, বা এইরকম আন-ইথিক্যাল কিছু জায়গা আছে নাস্তিকতাতেও, যারে ‘পাপ’ না কইলেও ‘অনৈতিক’ বলা যায়। মানে, নৈতিকতার কোডগুলা আলাদা হইতে পারে, কিন্তু নৈতিক বইলা কিছু নাই – এইটা ঠিক না। এইটা খালি ‘খারাপ কাজ’ না, কারণ এইটা দুইজন মানুশরেই ঘটনা না, এইখানে অন্য আরো মানুশ-জনও এফেক্টেড হয়। রাষ্ট্রীয় আইনে এর কোন শাস্তি না হইলেও, সমাজে মোটামুটি নিন্দার জিনিস।
কিন্তু ধরেন, সেই গোপন রিলেশনের মেজেস, অডিও, ভিডিও ফাঁস করার থ্রেট দিয়া কেউ হয়রানি করতে থাকলো, টাকা-পয়সা চাইতে থাকলো এবং নিতে থাকলো। এইটা আর ‘পাপ’ হিসাবে থাকে না তখন। এইটা হয়া উঠে ক্রাইম। কারণ, এইরকম কাজবাজ যদি বন্ধ করা না যায়, তখন অনেক মানুশই সাফার করবে। কিন্তু বাংলাদেশে যেইখানে সরকারিভাবে অর্গানাইজড ক্রাইম চলে, সেইখানে মনে হইতে পারে এইটা তো কিছুই না! একটা সমাজ, একটা রাষ্ট্র যখন অ্যাজ অ্যা হোল, ক্রিমিনালিটিরে গ্লোরিফাই করতে থাকে, ক্ষমতার একটা গর্ব হিসাবে শো করতে থাকে, তখন এইসব ছোট-খাট ক্রাইমরে জাস্টিফাইড মনে হওয়াটা নরমাল।
কিন্তু এই তিনটা জিনিসরে ব্লার কইরা ফেললে, মিশায়া ফেললে ‘বিচার’ এর জায়গাটা মুশকিল হবে। এইরকম আরো অনেক উদাহারণ অবশ্যই আছে। আমার ধারণা, যখন কেউ খারাপ-কাজগুলা করতে করতে অভ্যস্থ হয়া পড়েন, পাপের জায়গাতে পা দেয়া সহজ হয় তার জন্য; আর যখন কেউ পাপের জায়গাটাতে ডুইবা যান, ক্রাইমের সেন্সটারে গুলায়া ফেলেন, বা নিজের পজিশনরে অই পাপের জায়গা থিকা বুঝায়া ফেলতে পারেন, যার ফলে সহজ হয়, ক্রাইম করাটা।
সমাজে খারাপ-কাজ যেমন আছে, পাপের ঘটনা যেমন আছে, ক্রাইমও থাকবেই। বরং জায়গাগুলারে আমরা যতোটা স্পষ্ট এবং কনশাস করতে পারবো, তত বেটার; ব্যক্তির জায়গাটাতে।
২.
এখন আসেন, সমাজের জায়গাটাতে। যেইটা একটু বলতেছিলামও উপরে। একটা সমাজে এবং রাষ্ট্রে ক্রাইমগুলা যখন নরমালাইজ হইতে থাকে; ‘পাপ’ বা ‘অনৈতিক কাজ’ তখন প্রকাশ্য হইতে পারার একটা ভ্যালিডিটি পায় এবং খারাপ-কাজ করাটাই নর্মস হয়া উঠতে থাকে।
একটা উদাহারণ শেয়ার করতে পারি, কয়েকবছর আগে খেয়াল করছিলাম; ঢাকা শহরে অপরিচিত কারো সাথে একটু এগ্রেসিভ টোনে কথা-বলাটা হইতেছে নরমাল; তা নাইলে অপরপক্ষ ভাবতে পারে যে, আপনি মনেহয় কোন ফেভার চাইতেছেন বা সাবমিশন করতেছেন। লো-ভয়েস, কমপ্যাশনেট বিহেভ… এইগুলা মোটামুটি ‘ভীতিকর’ ব্যাপারই। এইরকম অভিযোগও শুনবেন, ভালো কইরা কথা বলতেছি বইলা কি দোষ করছি নাকি! মানে, এইরকমের একটা ব্যাপার খুব বেশি ভিজিবল না হইলেও একটা মেন্টাল স্ট্যাটাস হিসাবে আছে, বা থাকতে পারে।
তবে, সবচে বাজে যেই জিনিসটা হয় একটা বড় বড় ক্রাইম দিয়া ছোট ক্রাইমগুলারে জাস্টিফাই করার একটা স্পেইস তৈরি হয়। যে, রেইপেরই বিচার হয় না, উনি আসছে ম্যারিটাল রেইপ নিয়া কথা কইতে! এইরকম। 🙁
আর ‘পাপ’ বা ‘অনৈতিক’ বইলা যেই ব্যাপারগুলা, অইগুলাও চেইঞ্জ হয় তো! এমনকি অনেকসময় ভুলভাবেও আইডেন্টিফাইড হয়। স্পেশালি সমাজের মজুলম ক্লাস – গরিব এবং মেয়েদের ব্যাপারে। (মেয়েরা তো গরিব বইলাই অপ্রেসড আসলে। সমাজের কত % সম্পত্তির মালিক মেয়েরা? ৫% বেশি হওয়ার কথা না।…)
হিন্দু-সমাজে ‘অচ্ছুত’ যেইরকম, বাংলাদেশে গরিব’রা এইরকম সোশ্যালি আউটকাস্ট; দেখবেন, বাসার কাজের বুয়া এবং মালিক একই ধরণের প্লেট, কাপে খাবে না; বয়সে ছোট কেউও ইকনোমিক ক্লাসের কারণে তার চাইতে গরিব কারো সাথে খারাপ-বিহেভ করার ‘অধিকার’ রাখে। এইটা খুবই ডিপ-রুটেড একটা জিনিস। নারীদের বেলায় যেইরকম ভিজিবল যে, একটা সময় ‘নারী-শিক্ষা’ ছিল হারাম! গরিবদের জন্য হারাম না, কিন্তু কি দরকার অদের! এইরকম।
এইরকম ‘ট্রেডিশন’র জায়গা থিকা, এস্টাবলিশড ক্রাইমের জায়গা থিকা ‘পাপ’ ও ‘খারাপ কাজ’র জায়গাগুলা আইডেন্টিফাইড হয়, নরমালাইজ হয়।
আমি বলতে চাইতেছি, খারাপ-কাজ, পাপ আর অন্যায় একই জিনিস না এবং ব্যক্তির এই কাজগুলা সমাজের ভিজিবল বাস্তবতার সাথে রিলেটড ঘটনা, সবসময়।
৩.
এইটা পড়ার সময় পরীমনি’র কনটেক্সট’টারে মিলায়া ফেললে ভুল হবে। উনার সাথে যা করা হইছে, সেইটা উইথ-আউট এনি ডাউট একটা রাষ্ট্রীয় ক্রাইম। আপনি যত বড় সেলিব্রেটিই হন, যতই ‘আম্মা’ ডাকেন, এই জুলুমবাজ সরকারের ও তাদের সহযোগীদের কাছে মাথা নোয়াইয়া চলতে হবে – এইরকম ‘দৃষ্টান্ত’ তৈরি করার একটা ঘটনা। এর বাইরে অন্য কোনভাবে দেখতে চাওয়াটা হইতেছে মোস্টলি ইন্টেলেকচুয়াল বদমাইশি একটা।
অগাস্ট ১৩, ২০২১
বইপড়া
মানুশ যে কতো অদ্ভুত জায়গা থিকা সান্ত্বনা পাইতে পারে। আমি কয়দিন আগে সান্ত্বনা পাইলাম, টি. এস. এলিয়টের কথা পইড়া।
এইরকম ডিলেমা তো আছে, “বই পড়া দরকার” ভার্সেস “বই পইড়া কি সব জানা যাবে নাকি!” টাইপ। তো, অই জায়গাতে এলিয়ট শেক্সপিয়রের কথা কইতেছিলেন, শেক্সপিয়র এক প্লুটার্ক পইড়া যতটা জানতে পারসিলেন, অন্য কেউ পুরা ব্রিটিশ মিউজিয়াম পইড়াও সেইটা জানতে পারতো না। মানে, এই জায়গাটাতে আমিও বিশ্বাস করি, একটা জিনিস যদি আপনি ঠিকমতো পড়তে পারেন, সেইটা থিকা যা জানতে পারবেন, অই একটা লার্নিং দিয়াই অনেককিছু এক্সপ্লোর করা যায় আসলে।
“অনেক কিছু পড়তে হবে” – এইটা জরুরি জিনিস মনেহয় না আমার কাছে, বরং যেই জিনিসই পড়া হোক, সেইটারে নিতে পারার, (মানতে পারা বা না-পারার না, বা কাজে-পরিণত-করারও না, বরং বলা যায়) একরকম transcend করার একটা ব্যাপার থাকে, একজন ক্রিয়েটিভ/ইন্টেলেকচুয়াল পারসনের জন্য, অইটা ইম্পর্টেন্ট।
অগাস্ট ১৪, ২০২১
এইখানে ইন্টারেস্টিং একটা জিনিস আছে, খেয়াল করছেন কিনা। এই যে, চিন্তাগুলা একইরকম বা কাছাকাছি রকমের হয়। এইখানে তিনটা ঘটনা ঘটে বইলা আমার মনেহয়।
এক হইতেছে, প্লেজারিজম তো আছেই; একজন মানুশ আরেকজন মানুশের কথা কপি করে, রেফারেন্স ছাড়া চিন্তা চুরি করে। এইটা আমার ধারণা একভাবে টের পাওয়া যায়, যখন বুঝা যায় যে, এই চিন্তার লগে তার আগের পরের চিন্তার কোন কানেকশন নাই। বা প্যাটার্নের লগে মিলে না, এইরকম কিছু জায়গা থাকে।…
সেকেন্ড হইলো, একটা চিন্তা তো আরেকটা চিন্তারে ইন্সপায়ার করেই; শেক্সপিয়ারের নাটকের কাহিনিগুলা বেশিরভাগই অই সময়ের পপুলার কাহিনিগুলা থিকা নেয়া হইছে। কিন্তু এইখানেও চিন্তার এক্সটেনশন বা extract করার জায়গাগুলারে লোকেট করা যায় আসলে। কিন্তু এইখানে আরেকটা ফ্যালাসি কাজ করে যে, “দুনিয়াতে নতুন চিন্তা বইলা কিছু নাই!” 🙂 যেহেতু পুরান একটা চিন্তার লগে মিল আছে, এই কারণে এইটা যেন নতুন না!…
কিন্তু আমার ইন্টারেস্ট আসলে থার্ড জায়গাটাতে। একইরকমের চিন্তা যখন অনেক মানুশ করতে থাকে, তখন কাছাকাছি রকমের জায়গাতে রিচ করে। খুব কমন চিন্তার জায়গা থিকা একদম স্পেসিফিক জায়গাতেও এইরকম হইতে পারে।
ফেসবুকে একবার দেখাইছিলাম, যে আমার দুইজন ফ্রেন্ড যারা কেউ কাউরে চিনেন না, হুবহু একই কথা লেইখা পোস্ট দিছেন। বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলা চলতেছিল মনেহয়, তখন লেখছিলেন, স্পেন আজকে চাইর গোল খাবে, এইরকম। একজনের পোস্টে ৪টা লাইক, আরেকজনের পোস্টে ৪০০ লাইক। একই কথা, কিন্তু একজনের লাইক যেহেতু বেশি মনে হইতে পারে, আরেকজন সেইটা কপি করছেন। আবার ধরেন, মার্কুনি আর জগদশী বসু-ই তো মনেহয় একই সময়ে যে রেডিও আবিষ্কার করছিলেন, অইরকম আরো কিছু কাহিনি তো আছেই।…
তাই বইলা এককভাবে কেউ কোন নতুন চিন্তার শুরু করেন না – এইটাও ঠিক না, বরং একটা ক্রুশিয়াল চিন্তা একজন মানুশ-ই শুরু করেন, প্রস্তাব করেন; তখন দেখা যায়, ধীরে ধীরে আরো অনেক মানুশ অইটাতে কানেক্টেড হইতে পারে।…
কিন্তু আমার পয়েন্টটা হইতেছে, চিন্তার মালিকানার জায়গাটাতে। একটা খালি মাঠ পইড়া থাকলে আমরা যেমন ভাবি, এর কোন না কোন মালিক আছে, কেউ মালিক না থাকলে ‘সরকারি সম্পত্তি’; এইরকম চিন্তাতেও আমরা ভাবতে চাই, কারো না কারো মালিকানা আছে; কিন্তু আমি ভাবি যে, জিনিসটা হইতেছে আদার ওয়ে রাউন্ড, আগে মাঠ’টা আছে। একটা চিন্তা যখন অবভিয়াস উঠে, কেউ একজন দেখতে পায়, আর সেইটারে বলে; তখন অন্যরাও দেখতে পায়। কিন্তু সেন্টার হইতেছে, আইডিয়ার ফ্লো’টা বা নতুন এক্সপ্লোর করতে চাওয়ার জায়গাগুলা।…
আগের দিনের রূপকথাগুলা যে একইরকম; আর আমরা যে অবাক হই খুব, কেমনে মিললো! এইখানে ধইরা নেয়া হয় যে, মানবজাতি একসাথে ছিল আগে, বা তাদের মাইগ্রেশনের ভিতর দিয়া এই কাহিনিগুলা ছড়াইছে। যেইটা খুবই ট্রু। কিন্তু একইসাথে একেকটা আলাদা জায়গাগুলাতেও মানুশজন যখন একইরকমভাবে চিন্তা করতেছে, তখন মেবি চিন্তাগুলাও কানেক্ট করতেছে। একটু আলাদাভাবে হইলেও। অই একটা সম্ভাবনা মনেহয় আছে বা থাকতে পারে।
মানে, একটা সার্টেন চিন্তারে সেন্টার কইরা আমাদের দেখতে পারাটা বা এগজামিন করাটা দরকার, চিন্তাটা বিভিন্ন সময়, নানান জায়গাতে কেমনে ট্রাভেল করতেছে আর শেইপ-আপ হইতেছে। খুবই ইন্টারেস্টিং একটা জিনিস হইতে পারে সেইটা।…
#########
সাইন্সের পপুলারিটির লগে ফটোগ্রাফি এবং ভিজ্যুয়াল আর্টের ডেভোলাপমেন্টের কি কোন রিলেশন আছে বা থাকতে পারে? দুইটা কারণে এই জিনিসটা মনে হইলো। এক হইলো, বেশিরভাগ সাইন্টিফিক ডকুমেন্টারি’তে দেখবেন ভিজ্যুয়াল এফেক্টটাই হইতেছে মেইন। মানে, পুরা ন্যারেশন থিকা ভিজ্যুয়াল এফেক্টটারে বাদ দেন; খুবই হাস্যকর মনে না হইলেও, বা রূপকথা মনে না হইলেও, এরে বিলিভ করার যে মোটিভেশন, সেইটা কি কিছুটা কইমা যাইতে পারে না?
সেকেন্ড হইলো, সিনেমাগুলাতে ভিজ্যুয়াল এফেক্টের কদর যে বাড়তেছে, এই জিনিসটাও মনেহয় খেয়াল করার মতো। বাংলাদেশে যে ‘ভালো সিনেমা’ বানানো হইতে পারে না, এর একটা কারণ তো মনেহয়, সিনেমাতে ভিজ্যুয়াল এফেক্টগুলার টেকনিক্যাল আপগ্রেডশনটা নাই। মানে, এই কারণেই সিনেমা ভালো বা খারাপ না , কিন্তু এইটার একটা ভালো রকমের কন্ট্রিবিউশন থাকার কথা। একটা আপগ্রেডড ভিজ্যুয়াল রিয়ালিটিতে যখন আমরা অভ্যস্থ হয়া পড়তেছি, এর চাইতে লো-কোয়ালিটির ভিজ্যুয়ালরে আমাদের কাছে ‘সত্যি’ বইলা মনে হইতে পারে না মেবি, এতোটা।
#########
সাইন্সের পপুলারিটির লগে ফটোগ্রাফি এবং ভিজ্যুয়াল আর্টের ডেভোলাপমেন্টের কি কোন রিলেশন আছে বা থাকতে পারে? দুইটা কারণে এই জিনিসটা মনে হইলো। এক হইলো, বেশিরভাগ সাইন্টিফিক ডকুমেন্টারি’তে দেখবেন ভিজ্যুয়াল এফেক্টটাই হইতেছে মেইন। মানে, পুরা ন্যারেশন থিকা ভিজ্যুয়াল এফেক্টটারে বাদ দেন; খুবই হাস্যকর মনে না হইলেও, বা রূপকথা মনে না হইলেও, এরে বিলিভ করার যে মোটিভেশন, সেইটা কি কিছুটা কইমা যাইতে পারে না?
সেকেন্ড হইলো, সিনেমাগুলাতে ভিজ্যুয়াল এফেক্টের কদর যে বাড়তেছে, এই জিনিসটাও মনেহয় খেয়াল করার মতো। বাংলাদেশে যে ‘ভালো সিনেমা’ বানানো হইতে পারে না, এর একটা কারণ তো মনেহয়, সিনেমাতে ভিজ্যুয়াল এফেক্টগুলার টেকনিক্যাল আপগ্রেডশনটা নাই। মানে, এই কারণেই সিনেমা ভালো বা খারাপ না , কিন্তু এইটার একটা ভালো রকমের কন্ট্রিবিউশন থাকার কথা। একটা আপগ্রেডড ভিজ্যুয়াল রিয়ালিটিতে যখন আমরা অভ্যস্থ হয়া পড়তেছি, এর চাইতে লো-কোয়ালিটির ভিজ্যুয়ালরে আমাদের কাছে ‘সত্যি’ বইলা মনে হইতে পারে না মেবি, এতোটা।
অগাস্ট ১৫, ২০২১
পপুলার সিনেমা দেখতেই আমার ভাল্লাগে বেশি। এই ধরণের সিনেমাগুলা খালি ‘কমন অপনিয়ন’র বাইরে যাইতে চায়-না না, ‘কমন কিছু সাজেশন’ও রাখতে চায়।
Rurouni Kenshin the beginning সিনেমাটা যেমন। নায়ক হইতেছে কিলিংয়ের জন্য বিখ্যাত, তার প্রেমিকা (টুইস্ট আছে এইখানে) তারে বলে, তুমি কি খুন করা বাদ দিবা না? তখন সে কয়, যেইদিন যুদ্ধটা শেষ হবে, সেইদিন থিকা আমি আমার জান বাঁচানো ছাড়া কোন মানুশ খুন করবো না, ফাইটও করবো না। তো, সিনেমার লাস্টের দিকে যখন সে যুদ্ধ করতেছিল, তখন খবর আসে যে, তারা জিইতা গেছে, শত্রুরা সারেন্ডার করছে; তখন এক পুলিশ অফিসার তারে কয়, আমাদের ফাইট’টা তো শেষ হইলো না, আসো লড়াই করি! তখন নায়কটা তার তলোয়ারটা মাটিতে গাঁইথা ফেলে, সে আর ফাইট করে না। তো, নায়ক মানে সেই লোকটা আসলে, যে কথা রাখে, যুদ্ধ ছাড়া যে মানুশ খুন করে না। এইরকম।
তো, মনে হইতেছিল, একটা যুদ্ধ শেষ হওয়াটা সবদিক দিয়াই ভালো ব্যাপার। যুদ্ধ শেষ হওয়া মানে মানুশরে খুন করাটা আর নরমাল ঘটনা না তখন। আল্লাহ সবাইরে ভালো রাখুক।
#########
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হইলো, এরপরে পার্লামেন্ট ইলেকশন হইতে আরো দুই বছর লাগছিল; ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে ইলেকশন হইছিল। ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক সরকারের তো নতুন একটা দেশ চালানোর ম্যান্ডেট ছিল না। কিন্তু ১৯৭৩’র ইলেকশন নিয়া কোন ভালো কথা শোনা যায় না। এর চাইতে জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৯ সালের পার্লামেন্ট ইলেকশন ফেয়ার হইছিল মেবি (উইকিপিডিয়া দেইখা তো এইসব বুঝা যায় না আসলে, ফিউচারে আরো যাবে না…), আওয়ামী লীগ ৫৪টা সিট পাইছিল। (বাকশাল তো তখনো অফিসিয়ালি ডেড ঘোষণা করা হয় নাই; কিন্তু আওয়ামী লীগ বাকশাল ছাইড়া আওয়ামী লীগে ফেরত গেছিল।) ১৯৮৬’র ইলেকশনও আসলে হয় নাই, বিএনপি যেহেতু বয়কট করছিল, ১৯৮৮-তে তো আরো না। ১৯৯১ সালে, স্বাধীনতার ২০ বছর পরে, একদম নিশ্চিত কইরা বলা যায়, পাবলিকের ভোটে ইলেক্টেড একটা গর্ভমেন্ট পাইছিলাম আমরা, বাংলাদেশে।
একটা ফেয়ার ইলেকশন হইলে দেশের মানুশ বেশি ভাত খাইতে পাবে, দেশের ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ হবে – এইগুলা মোটামুটি ভুয়া-কথা না হইলেও, ইরিলিভেন্ট কথা আসলে। বরং এইটা হইতেছে ডেমোক্রেসির একটা মিনিমাম নিড। দেশের গর্ভমেন্ট মানুশের ভোটে ইলেক্টেড হইতে হবে – এইটা হইতেছে মিনিমাম ডেমোক্রেসি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের মানুশ এই মিনিমাম ডেমোক্রেসি পাওয়ার জায়গাটাতে স্ট্রাগল করছে; এখন আরো বেশি করতেছে।
আফগানিস্তান থিকা আম্রিকার সৈন্য এবং পুতুল সরকারের পতন অবশ্যই আফগানিস্তানের ফ্রিডম। কিন্তু আফিগানিস্তানের মানুশের ফ্রিডম তখনই এনশিওর হবে যখন তারা নিজেরা নিজেদের গর্ভমেন্ট বানাইতে পারবে।
বাংলাদেশের মানুশের এই ফ্রিডম কাইড়া নেয়া হইছে। আফগানিস্তানের মানুশ এই ফ্রিডম পাবে কিনা আমরা জানি না। যদি এই মিনিমাম ফ্রিডম না থাকে, এই স্বাধীনতা দেশের মানুশদের নিজেদের স্বাধীনতা বইলা ভাবতে পারার কোন কারণ আসলে নাই। বাকশালের ফ্রিডম যেমন বাংলাদেশের মানুশের ফ্রিডম হিসাবে দেখানো হয়, এইরকম তালেবানের ফ্রিডমই যেন আফগানিস্তানের মানুশের ফ্রিডম না হয়া উঠে। এই দোয়া-ই করতে পারি আমরা।
অগাস্ট ১৬, ২০২১
– খারাপ-মানুশ আর ভালো-মানুশ –
ধরেন, কেউ আপনারে কইলো, আপনি তো খুবই ভালো মানুশ! তখন আপনি কি রি-অ্যাকশন দেখাইবেন? যদি বলেন, হ, আমি তো ভালো-মানুশই, এই এই ভালো কাজ করছি, কারো কোন ক্ষতি করি নাই, এই-সেই; ফানি লাগবো না তখন? বা ধরেন বললেন, না, না, আমি তো এতো ভালো লোক না, খারাপ কাজও করছি, দুয়েক্টা আকাম-কুকামের কথা কইলেন, এই-সেই; অইটাও কি কনফেশনাল জিনিস মনে হবে না? মনে হবে না যে, আরো প্রশংসা চাইতেছেন? 🙂
আবার উল্টা’টা, ধরেন, কেউ কইলো, আপনারে তো ভালো লোক ভাবছিলাম, এখন দেখি, খুবই খারাপ মানুশ আপনি; তখন আপনি কি করবেন, নিজেরে ভালো-মানুশ বইলা প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন? আপনি খারাপ না হইলে ভালো হিসাবে নিজেরে প্রমাণ করতে চাইতেছেন কেন? – এই সন্দেহ করাটা কি ভুল হবে তখন? 🙂
মানে, ইন অ্যানি কেইস, কেউ যদি আপনারে ভালো-মানুশ বলে বা খারাপ-মানুশ বলে কি করার আছে আপনার? এমন না যে, ভালো-খারাপের বেসিসে কাউরে জাজ করা যায় না, বরং আমি মনে করি, পারসেপশনের জায়গাটাতে অ্যাজ অ্যা পারসন, আমার তেমন কিছু করার নাই আসলে। আমরা আমাদের কাজগুলাই কইরা যাইতে পারি; মানে, অইটাই ঘটনা আসলে। যেই কাজগুলা আমরা করি, যেইভাবে আমরা কাজগুলা করি, সেইটা আমাদেরকে ভালো যেমন কইরা তুলতে পারে, একইসাথে সেইম জিনিসটাই খারাপ হয়া উঠতে পারে; যেই জায়গা থিকা জাজ করা হইতেছে, তার বেসিসে।
কোন বিচার করা যাবে না – এইটা আমার পয়েন্ট না, বরং বিচারের সব গ্রাউন্ডরেই আমলে নেয়ার দরকার নাই। এমনকি নিজে যেইটা করতে চান, সেইটা করার সুবিধার জন্য একটা বিচারের মানদন্ডে সাবস্ক্রাইব করাটাও কোন কাজের জিনিস না। বরং একজন মানুশের কাজের মোরালিটি যত বেটার হবে, কাজটাও তত ভালো হইতে পারবে আসলে।
২.
এখন আসেন, ভালো কাজ কি? একশ বছর আগেও বাংলাদেশে অল্প-বয়সে মেয়েদের বিয়া দেয়াটা ভালো-বাপ হওয়ার ক্রাইটেরিয়া ছিল; এখন ধরেন, সামর্থ্য-অনুযায়ী পড়াশোনা করানোটা হইতেছে ভালো-বাপ হওয়ার ঘটনা। মানে, এইরকম সোশ্যাল কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে, যেইগুলা চেইঞ্জ হয়। বা অনেক সময় চেইঞ্জ না করতে পারলেও ভালো হওয়া যায় না।
এইরকম কন্ট্রোভার্সিয়াল বা কনফিউজড জায়গার বাইরেও স্পেইস আসলে অনেক আছে। একটা উদাহারণের কথা মনে হইলো, Boyhood সিনেমার (রিচার্ড লিনটেকার আমার পছন্দের); সিনেমায় মা’টা খুবই স্ট্রাগল করে নিজের পোলা-মাইয়ারে বড় করার লাইগা। যখন শে তার ছেলেরে নিয়া একটা রেস্টুরেন্টে যায় ছেলের কলেজে যাওয়ার আগে ডিনারে, তখন রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার তাঁরে কমপ্লিমেন্টারি কিছু পাঠায়, বলে যে, সে তাঁর স্টুডেন্ট ছিল, একদিন খুব ইন্সপারেশনাল কিছু শে কইছিল তারে, যেইটারে তারে খুবই মোটিভেট করছিল, লাইফরে পজিটিভলি নেয়ার ব্যাপারে; কিন্তু মা’টা আসলে ঠিকঠাক মনেই করতে পারতেছিল না ঘটনা’টা। তো, ভালো কাজের একটা ফিচার এইরকম, আপনি মনে করতে পারবেন না, আপনি যে ভালো কাজ করছিলেন! এইটা একটা লক্ষণ আর কি! সবসময় না হইলেও বেশিরভাগ সময়, এইরকম। একটা নরমালিটি, একসেপশনাল জিনিস না, এতোটা।
তার মানে আবার এইটা না যে, ভালো-কাজ না জাইনা, না বুইঝা হয়; বরং কেউ যখন ঠিক-কাজ’টা করতে থাকে তখনই সেইটা ভালো-কাজ হইতে পারে বরং। আর দেখবেন, যিনি ভালো-কাজ করেন, তারে ওয়াইজ পারসনও মনেহয়, বেশিরভাগ সময়। মানে, ঠিক-কাজই বেশিরভাগ সময় ভালো-কাজ আসলে। যার ফলে কিভাবে আমরা আমাদের ‘ঠিক-কাজ’টা কন্সট্রাক্ট করতেছি, সেইটা ইম্পর্টেন্ট একটা জিনিস সবসময়।
#########
আইডিয়া বা ধারণার জায়গা থিকা শব্দের মিনিং সবসময় চেইঞ্জ হয় না* এতোটা যতোটা হয় বা হইতে থাকে কাজকামের ভিতর দিয়া। কাজের পরে এবং ইউজের ভিতর দিয়াই সেইটা বলাবলি’র জায়গাটাতে আসে, অন্য শব্দের সাথে কনোটেশনের ভিতর দিয়া তার মিনিংটা একটা শেইপে আসতে থাকে, চেইঞ্জ হইতে থাকে।
যেমন ধরেন, ‘৬০-দশকে ‘এলিট’ শব্দটা দিয়া ‘অভিজাতদের’ বুঝাইতো, সমাজে যারা গণ্য-মান্য লোকজন; কিন্তু ১৯৯০’র আগে-পরে যখন বুঝা গেছে যে, এই এলিট লোকজন পিপলের ফর-এ তো কাজ করে না, বরং এরা হইতেছে ক্ষমতার ফেভারেই থাকে সবসময়, তখন থিকা ‘এলিট’ জিনিসটা একটা গালি হিসাবেই কম-বেশি চালু হইছে; যে এরা ইকনোমিক্যালি সলভেন্ট, জানে-বুঝেও বেশি, কিন্তু মানুশ ভালো না, ক্ষমতার দালালি করে, এইরকম মানুশজনরে বুঝাইতেই ‘এলিট’ শব্দটা ইউজ করা হয় এখন, বাংলা-ভাষায়। এইরকম আরো উদাহারণ পাওয়া যাবে। যেই শব্দগুলা আগে পজিটিভ ছিল, কিন্তু এখন নেগেটিভ মিনিংয়ে চইলা গেছে। (রাজাকার শব্দের ডিকশনারি-মানে তো ভালো কিছু, কিন্তু কি মিনিং দাঁড়াইছে দেখেন; তারপরে দেখেন সেক্যুলার, আইডিয়া হিসাবে যেমনই হোক, বাংলাদেশে নতুন গালি হইতে যাইতেছে এইটা।)
অনেক শব্দের ব্যাপারে এবং সব ভাষাতেই এইরকম হয়।
……..
* অনেক সময়ই নতুন শব্দ ক্রিয়েট হইতে পারে, চালু হইতে পারে; মানে, শব্দ কেমনে তৈরি হয়, সেইটারে আরেকটা আলাপ হিসাবেই এইখানে পার্ক করে রাখতেছি।
#########
একটা উত্তর বা answer’র সীমানা ততটুক পর্যন্তই, যতটুক পর্যন্ত প্রশ্নটারে আমরা কন্সট্রাক্ট বা তৈরি করতে পারি
অগাস্ট ১৭, ২০২১
ধারণার জীবন
মানুশ-ও তো একটা ধারণাই, এই ধারণা তৈরি হইছে ১৫০/২০০ বছর আগে; এর আগে মানুশ বা হিউম্যান এগজিসটেন্স ছিল না – ব্যাপারটা এইরকম না; কিন্তু ধারণা হিসাবে এইটা শেইপ-আপ হওয়াটা হিস্ট্রিতে একটা রিসেন্ট ঘটনাই। এইরকমও ভাবা যাইতে পারে যে, এর ভিতর দিয়াই ধারণা’র দুনিয়াতে আমরা ঢুকে গেছি। এর মানে হিউম্যান এগজিসটেন্সরে বাতিল কইরা দেয়া না, বরং এগজিসটেন্সটারে একটা ধারণার জায়গা থিকা প্রজেক্ট করতে পারার ঘটনা। অলমোস্ট যে কোনকিছুই এইভাবে ফ্লো করতেছে এখন। যার ফলে মনে হইতেছে, মানুশ সব মরা! আমার ধারণা, এইটা হইতেছে আইডিওলজি’রে সেন্টার করার একটা ঘটনা।
#########
শুনতে একটু উইয়ার্ড লাগতে পারে কথাটা, কিন্তু সমাজে একজন ‘অপরাধী’ বা ‘ক্রিমিনালের’ জন্য জাস্টিস বা ন্যায়বিচার এনশিওর করা লাগবে, সবচে আগে; তা নাইলে সমাজে ভালো-মানুশদের জন্য বিচার নিশ্চিত করা যাবে না।
সর্বহারা, জঙ্গি, জামাত-শিবির-রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধা-বিরোধী, ড্রাগ-ডিলার, ডাকাত বইলা হাজার হাজার মানুশরে বিনা-বিচারে ক্রসফায়ারে, পুলিশি নির্যাতনে, গুম-হওয়ার-ভিতর দিয়া খুন করা হইছে বাংলাদেশে। আমাদেরকে বলা হইছে যেহেতু উনারা ‘খারাপ মানুশ’, এই কারণে উনাদেরকে মাইরা ফেলা ঠিক হইছে! আমাদেরকে বলা হইতেছে, যেহেতু কেউ নৈতিক-ভাবে ‘খারাপ মানুশ’, দুই-বিয়া করছে; মদ খাওয়ার লাইসেন্স রিনিউ না কইরা মদ খায় এই কারণে রিমান্ডে নেয়া যাইতে পারে, জেলে আটকায়া রাখা যাইতে পারে। ইভেন ‘ক্রিমিনাল’ হিসাবে দোষী সাব্যস্তও হয় নাই, এর আগে ‘ক্রিমিনাল’ বানায়া দিয়া অত্যাচার-নির্যাতন করা যাইতেছে।
কেউ যদি খুনও করে, পুলিশ তারে কাস্টডিতে নিয়া মারতে পারে না, গালি-গালাজ করতে পারে না। আইনের রায়ে যারা ক্রিমিনাল, তাদেরকে আগে অই প্রটেকশন দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কেউ ক্রিমিনাল বইলাই তার সাথে যা খুশি তা করা যায় না। তাদেরকে জাস্টিস আমরা দিতে পারতেছি না। সমাজে-রাষ্ট্রে যদি আমরা আইনের শাসন চাই, এই মিনিমাম জায়গাটা থিকাই আসলে শুরু করতে হবে।
অগাস্ট ১৮, ২০২১
জিজেক তো ভালো কথাই কইছেন যে, ওয়েস্টার্ন মিডিয়া আসল কারণ’টা বলতেছে না, কেন তা লে বা ন রা এতো তাড়াতাড়ি আফগানিস্তানে ক্ষমতা নিয়া নিতে পারলো; এরা ‘আদমবোমা’ বইলা না, বা খুবই ব্রুটাল বইলা না, বরং অইখানের সরকারের এতো বেশি করাপশন আর বিচ্ছিন্ন ছিল যে, তা লে বা ন দের তেমন কিছুই করা লাগে নাই। এইটা হইতেছে যেই গর্ভমেন্ট ছিল ক্ষমতায়, তাদের ফল্ট, প্রায় পুরাটাই। বাংলাদেশেও নয়া বাকশাল গর্ভমেন্ট কাছাকাছি একটা অবস্থায় আছে। খুবই পাওয়ারফুল এবং খুবই ভারনারেবল। এই কারণে দেখবেন, একটা মিছিল-মিটিং হইলেই ডরায়। যে কোন পাবলিক গেদারিং করতে দিতে চায় না। পাবলিক সার্পোট যেহেতু নাই, পাবলিক অপনিয়নরেও ডরায়। সাবধান থাকে, যাতে কোন মিলিটারি ক্যু না হইতে পারে। কিন্তু মিলিটারি পাওয়ারের মাধ্যমে ক্ষমতার বদল আসলে সবচে ওরস্ট অপশন। এইটা মনে হইতে পারে যে, পিপল আপরাইজিং খুব ইম্পসিবল জিনিস; কিন্তু উই মাস্ট ডিমান্ড দ্য ইম্পসিবল। ১৯৭১ ছিল একটা ইম্পসিবল। অইরকম ইম্পসিবিলিটি যেন ঘটতে পারে, সেই রাস্তা আমাদেরকে তৈরি করার কাজ করতে হবে। মিন হোয়াইল, পিপলের লগে ডিসকানেক্টেড কোন গর্ভমেন্ট যে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না, আফগানিস্তানের এই ঘটনা, আমাদেরকে, বাংলাদেশের এই অবস্থাতে খুশি তো একটু করতে পারারই কথা।
#########
এই ফিলিংসটা আমার পয়লা হইছিল, ভি. এস. নাইপলের ব্যাপারে; আরে উনার গদ্যও তো ভালো, কিন্তু উনার কথা-বার্তা তো নেয়া যায় না। নীরদ সি. চৌধুরীও এইরকম, হুমায়ূন আজাদ, আরো কয়েকজনের নাম বলা যাবে। আল মাহমুদরেও যেমন অনেকে ‘মৌলবাদিতা’ বাদ দিয়া নিতে পারেন 🙂 মানে, এইখানে একটা ঘটনা আছে; যে, গদ্য ভালো-লাগে বা পড়তে ভাল্লাগে, কিন্তু কথা বা আর্গুমেন্ট নেয়া যায় না। কেন হয় এইটা?
আমার ধারণা, কয়েকটা ঘটনা আছে এইখানে। ফার্স্ট জিনিসটা হইতেছে ফর্ম বা প্যাটার্ন। একেকটা সময়ে একেকটা ফর্মে কথা বলাটা সহজে কানেক্ট করতে পারে। যেমন ধরেন, প্রমথ চৌধুরী’রা যখন ‘চলিত-ভাষা’ চালু করলেন ‘সাধু-ভাষা’র জায়গায়, তখন আমার ধারণা ‘চলিত-ভাষা’তে লেখলেই সেইটা ‘আধুনিক’ মনে হইতে পারার কথা। এখন যেমন ‘বাংলাদেশি বাংলা’য় কিছু লেখা হইলেই পড়তে আরাম লাগে, লাইভ বা জীবন্ত মনেহয়; কলকাতাইয়া-বাংলা তো ডেড আসলে। ভাষার প্যাটার্ন বা ফর্ম এইরকম চেইঞ্জ হয়, তখন নতুন ভাষায় লেখা বইলা, জিনিসটা ভাল্লাগে, কথা যেমনই হোক। হুমায়ূন আজাদ যেইরকম একটা ‘শহুরে ভাষায়’ লেখতেন, যেইটারে ‘আধুনিক’ মনে হইতে পারে এখনো। এইরকম ভাষার বা বলার ভঙ্গির একটা কন্ট্রিবিউশন আছে, থাকতে পারে।
কিন্তু এইটাই পুরাটা না। দেখবেন, উনাদের ইন্টেলেকচুয়াল হাইট আছে একটা। উনারা জানেন-বুঝেন বেশি। এটলিস্ট উনাদের সময়ের আশে-পাশের রাইটারদের চাইতে বেশি। অনেক নাম-ধাম নিতে পারেন, অনেক রেফারেন্স দিতে পারেন। এই জিনিসগুলা তো ভাল্লাগে। যে, অনেকগুলা ইনফো জানা যায়, পারসপেক্টিভও খেয়াল করা যায়। নীরদ সি. চৌধুরী এইরকম। উনার লেখা-পত্রে এইরকম ‘নলেজেবল’ ব্যাপারটা টের পাওয়া যায়। তো, এইটা খালি জানার ঘটনাও না, বলার স্কিলও। অনেকে দেখবেন জানেন অনেক, কিন্তু বলতে পারেন না; কিন্তু এমন অনেকেও আছেন, যতটুকই জানেন, গুছায়া বলতে পারেন। এইটা মেজর একটা জিনিস।
তাইলে খারাপ লাগে বা নেয়া যায় না আসলে কোন জায়গাটা থিকা?
বেশিরভাগ সময়ই আমার ধারণা, এইটা হইতেছে, এসথেটিক্যাল প্রেফারেন্স বা পলিটিক্যাল পজিশনের ঘটনা। যেমন ধরেন, কথা তো ভালোই, কিন্তু এতো ‘বানাম ভুল’ কেন! বা, ‘ইসলামি জঙ্গিদের সার্পোট করে’ বা ‘সাইন্স-মঙ্গার’, এইরকম ট্যাগ লাগানো যায়। মানে, এইগুলা যে নাই – তা তো না। কিন্তু ক্রিয়েটিভ রাইটিংসে, এমনকি ইন্টেলেকচুয়াল আলাপেও এই পজিশনগুলা একটা লিমিট পর্যন্ত বেরিয়ার হইলেও, এন্টারটেইনিং বা থট-প্রভোকিং হইতে পারে। মুশকিল হইলো, বেশিদূর পর্যন্ত পারে না আর কি!
কিন্তু এই বাছাইগুলা করতে পারাটাও জরুরি, একজন রাইটারের। একটা এসথেটিক্যাল এবং পলিটিক্যাল পজিশন তারে নিতে হয়; আর এর বেসিসে একটা সময়ে, একটা সমাজে একজন রাইটার একসেপ্টেড হন বা তারে নেয়া যায় না। এইটা ক্রুশিয়াল একটা পয়েন্ট। কারণ এই আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গাগুলা রাইটার’রে তৈরিও করে একভাবে, তার লেখাগুলারে একটা মিনিং দেয়।
অনেক সময় এই পজিশন নেয়াটা জরুরিও। কিন্তু এইরকম পজিশনিংয়ের কারণেই কোন লেখা ‘ভালো’ হয়া উঠে না, যদিও লেখাটাতে পজিটিভলি কন্ট্রিবিউট করতে পারে। কিন্তু এই পজিশনটাই যদি ‘কোর’ জিনিস হয়া উঠে, সেইটা আসলে লেখাটারে কোন না কোনভাবে ‘নষ্ট’-ই কইরা ফেলে।
মানে, সাহিত্য, আর্ট বা ইন্টেলেকচুয়ালিটির মেইন উদ্দেশ্য ‘সমাধান’ দেয়া না কখনোই; চিন্তার ভিতর দিয়া এইটা করাটা কখনো সম্ভবই না; এইটা হইতেছে অ্যাক্ট বা কাজটা, যা সবসময় মিনিং দিতেছে; যার ফলে কোন রাইটিংস মিনিংয়ের জায়গাটাতে ফোকাস দিতে থাকলে জিনিসটা তার উদ্দেশ্যের জায়গা থিকা সইরা যায় আসলে। আর এইটা রিডারের এক্সপেক্টশনের মধ্যেও থাকে না, বাড়তি বা আন-নেসেসারি জিনিস মনে হইতে থাকে তখন।…
তার মানে এইটা না যে, একজন রাইটার কোন পলিটিক্যাল বা আইডিওলজিক্যাল পজিশন নিত পারবে না, বরং উল্টা’টা, এইটা ছাড়া কোন বেইজই তৈরি হইতে পারবে না; কিন্তু লেখালেখির উদ্দেশ্য হিসাবে পলিটিক্যাল প্রপাগান্ডা সবসময়ই ইনফিরিয়র একটা জিনিস। আর এই জায়গাটাই মেবি নিতে পারা যায় না। এটলিস্ট ভি.এস.নাইপল, নীরদ সি. চৌধুরী আর হুমায়ূন আজাদের ব্যাপারে, এইটা তো বলতেই পারি আমি; যে, উনাদের পলিটিক্যাল পজিশন খালি ভুল-ই না, বরং ওভার-মেনিফেস্টেড বইলাই নিতে পারা যায় না আসলে। 🌻
#########
সলিমুল্লাহ খান
ক্রিটিক করা যে কতো খারাপ কাজ, সেইটা আমার মতো আর কতোজন টের পাইছেন আমার জানা নাই! আজাইরা ক্রিটিক করার কারণে ফ্যামিলির লোকদের থ্রেট আর বকা তো সবসময়ই খাই, খাইতেছি; বন্ধুদের ভালোবাসা, প্রেম তো হারাইছিই; কতো অপরিচিত মানুশের হেইট্রেট যে পাইছি, সেইটা হিসাবের বাইরে ঘটনাই।… কিন্তু পুরান ক্রিটিকগুলার দিকে তাকাইলে বুঝতে পারি, অতো ভালো ক্রিটিক আমি করতে পারি নাই আসলে। এতোটা হেভি রিটার্ন আমি আসলেই ডিজার্ভ করি না।
তো, আমার ২০০৮ সালের এই ক্রিটিক’টা হইতেছে এইরকম একটা ওভার-রেসপন্সের নমুনা। এইটা প্রথম আলোর সাহিত্য-পাতাতে ছাপা-হওয়ার পরে সলিমুল্লাহ খানের সর্ট অফ ‘জাত-শত্রু’তে আমি পরিণত হই।
উনার সাথে আমার পারসোনাল পরিচয় কখনোই ছিল না, বন্ধু তো আমি কখনোই ছিলাম না। আমারে উনি চিনবেন এই এক্সপেক্টশনও নাই আমার। উনার কয়েকজন ভক্ত কয়েকবার আমারে ‘লাইনে’ আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু উনার লগে সরাসরি বা অনলাইনেও তেমন কোন আলাপ আমার হয় নাই।
হঠাৎ কইরা ২০১৯ সালের এক মজমা’তে উনি আমার নাম না নিয়া, ভাষা নিয়া আমার কথাগুলা মেনশন কইরা চূড়ান্ত রকমের গালি-গালাজ করলেন আমারে, আমার পারসোনাল লাইফের কিছু জিনিসের প্রতি ইঙ্গিত কইরা। আমি জাস্ট অবাক হয়া গেছিলাম। কারণ উনার এতো ভালো কোন ক্রিটিক তো আমি করতে পারি নাই! এতোদিন পরেও সেইটা মনে রাখার তো কোন কারণ নাই!
ইন ফ্যাক্ট, প্রশংসা করা হোক বা ক্রিটিক করা, উনার বিষয়ে কোন আলাপেই আমি নাই তেমন। কিন্তু আমাদের দুইজনের আলাপের ধরণে আমার ধারণা যে কেউ বুঝতেই পারবেন যে, উনার লগে আমার মতের মিল হবে না। উনি যেই জায়গা থিকা একটা ‘অরিজিনালিটি’রে সার্চ করেন, সেইটা আমার কাছে আন-নেসেসারি একটা ঘটনা।…
উনার জাতীয়তাবাদী চিন্তা যে এই নয়া বাকশালরে একটা নৈতিক ভিত্তি দিয়া রাখছে, এইটা উনি নিজেও ইগনোর করতে পারবেন বইলা আমার মনেহয় না। মানে, আমরা তো হিটলারের আমলের একজন হাইডেগাররে চাই না; বরং মুসোলিনীর আমলের গ্রামশিরে দরকার আমাদের। (উনার চিন্তার হাইট না, বরং ইন্টেলেকচুয়াল হিসাবে উনার সোশ্যাল পজিশনের জায়গাটারে কন্সিডার কইরা বলতেছি এই কথা।) একজন ইন্টেলেকচুয়াল মারা যাওয়ার পরে তার চিন্তারে কোন পলিটিক্যাল উদ্দেশ্যে ইউজ করা হইতেছে, সেইটা নিয়া তার কিছু করার নাই; কিন্তু যখন উনি বাঁইচা আছেন, উনার চিন্তার পলিটিক্যাল অ্যাক্টেরও দায় তো উনারে নিতে হবে!
অন্য সবকিছুর বাইরে, আমি মনে করি, সলিমুল্লাহ খান যদি নয়া বাকশালরে পলিটিক্যালি ক্রিটিসাইজ-না-করার পজিশন থিকা সইরা আসতে পারেন, সেইটা উনার পারসোনাল বা বৈষয়িক ক্ষতির কারণ হইলেও [ আমার ধারণা, উনি খুব সরকারি বেনিফিট পাইছেন বা পান – তা না, সম্মানটাই তো মেইন…] উনার ইন্টেলেকচুয়াল পজিশনটারে রিচ করতে পারবে।
আর ক্রিটিক হিসাবে আমি যাদের সমালোচনা করছি, তাদেরকে হার্ট করার চাইতে, তাদের উইল-উইশারই হইতে চাইতেছি আসলে। কিন্তু কই দিয়া যে, কি বইলা ফেলি! আমার জিব্বা, কথার এক ফোঁটা বিষ কেমনে যে রিলেশনগুলারে মাইরা ফেলে, আমি আসলেই বুঝতে পারি না! 🙁
আল্লাহ মাফ করুক আমারে, আর সবাইরেও!
অগাস্ট ১৯, ২০২১
একটা আলাপে তিনটা জিনিস হইতেছে বেসিক –
১. কোন বেইজ’টা থিকা আলাপ করতেছেন (ক্যাটাগরিটা – ভালো/খারাপ, দরকারি/অ-দরকারি, সত্য/মিথ্যা, দোষ/গুণ, পাপ/পূণ্য…)
২. কোন রেফারেন্স ইউজ করতেছেন (ডেটা, ফ্যাক্টগুলা আপডেটেড কিনা, সবগুলা কাভার করতেছে কিনা…)
৩. আর কোন ন্যারেটিভ’টারে (এইটা দিয়া কি হইতেছে, এর ইমপ্লিকেশনগুলা কি…) তৈরি করতেছেন, কার জন্য করতেছেন
এই তিনটা জিনিস দিয়া একটা আলাপ তৈরি হয়।
এই তিনটা জিনিস অনেক বেশি ইন্ট্রিগ্রেটেড বা মিলানো-ঝুলানোও আসলে। মনে হইতে পারে, একই জিনিস। কারণ, যেই বেইজটা থিকা আপনি আলাপ করতেছেন, সেইটাই রেফারেন্সগুলারে রিলিভেন্ট কইরা তোলে; যে, এই এই ইনফরমেশন লাগবে। অনেক রেফারেন্সরে ইনভ্যালিডও কইরা ফেলে; যে দরকার নাই। আর ইনফরমেশনগুলা যদি ভুল হয়, আপনার বিচার/এনালাইসিসও ভুল হবে আসলে। বা রেফারেন্সগুলা যদি স্ট্রং হয়, আপনি বুঝতে পারবেন, এই বেইজটা থিকা দেখলে হবে না; মানে, ভালো/খারাপের বাইরেও দেখা যাবে ঠিক/ভুলের মামলাও আছে। এইরকম।
বা যেই কাহিনি’টা আপনি বলতে চাইতেছেন যদি দেখা যায় মিলতেছে না, তখন খালি নিজের ন্যারেটিভটারে না, রেফারেন্সগুলারেও কোশ্চেন করা লাগবে।
তিনটার যে কোন একটাতেই যদি ঝামেলা থাকে, আলাপ’টা ঠিকঠাক মতো হইতে পারে না আসলে।
(আমার ধারণা, একটা একাডেমিক প্রসেস যেইটা করে, মোস্টলি রেফারেন্সের একটা লিনিয়ারিটি প্রোভাইড করে। এইটা দরকারি অনেক সময়। কিন্তু এইটারেই ‘সহি’ বানায়া ফেলতে গেলে, অইটা আরেকটা সমস্যা হিসাবেই এমার্জ করতে পারে।)
অগাস্ট ২০, ২০২১
মানুশ যে কতোটা প্রি-অকুপাইড থাকে, এইটা সবচে ভালো টের পাওয়া যায়, লিফটে থাকার সময় কারো মোবাইল ফোনে কেউ কল করলে। এই পাশ থিকা লিফটে থাকা লোকটা যতই বলে, আমি লিফটে আছি, নেটওয়ার্কে ঝামেলা হইতে পারে, কল কাইটা যাইতে পারে; অইপাশ থিকা কল’টা কাটা হয় না। কথা বলতে থাকে আগে। অনেক সময় কথাটা আগে বইলা নেয়, তারপরে বলে, ও আচ্ছা। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই লাইনটা কাইটা যায়, কথা বলার সময়ে। অনেক সময়ে এই পাশের পারসান (মেইল/ফিমেইল) খেইপাও যায়, আরে, বলতেছি তো আমি লিফটে আছি, ফোন’টা রাখো! অই পাশ থিকা মেবি সবসময় বিশ্বাসও করে না। 🙂 কথা কন্টিনিউ করতেই থাকে। মানে, আমার কথাটা বলতে হবে – এই আর্জ যতোটা থাকে, কেউ শোনার মতো অবস্থায় আছে কিনা – এইটা ভাবার মতো অবস্থাটা মনেহয় তার চাইতে কমই থাকে।
আবার, রিলেশনের দাবি বা ক্ষমতার প্রকাশও থাকতে পারে মনেহয় যে, আমি কল করছি, ধরবে না! কথা বলবে না! কিন্তু এইসবকিছু মিলায়া ‘প্রি-অকুপাইড’ থাকার ব্যাপারটাই মনেহয় মেইন। এইটা প্রথমবার নোটিশ করার পরে অনেকবারই দেখছি, এইটা হইতে।
তাই বইলা অন্যরকম যে হয় না – তা না, হইতে তো পারেই; কিন্তু আমার অবজারভেশন বলে, রেশিওটা খুব কম। আপনারাও খেয়াল করতে পারেন, রেশিও’টা কি রকম? ধরেন, কেউ লিফটে আছে, তার মোবাইলে কল আসলো, সে/শে কইলো আমি লিফটে আছি, কল কাইটা যাইতে পারে… অন্য পাশের পারসন কি করেন তখন?
Leave a Reply