নোটস: অক্টোবর, ২০২২ [পার্ট ২]

অক্টোবর ১১, ২০২২

১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে যারা বিটিভি দেখতেন এবং দৈনিক-বাংলা পড়তেন, তাদের পক্ষে জানা সম্ভবই ছিল না যে, সারা দেশে কি হইতেছে! কোথায় গুলি চলতেছে, মানুশ মারতেছে এরশাদ-সরকারের পুলিশ।

বা দৈনিক পাকিস্তানের কথাই চিন্তা করেন, (১৯৭১ সালের) ১৭ ডিসেম্বরে হঠাৎ কইরা হয়া গেলো – দৈনিক বাংলা! এর আগে মুক্তিযুদ্ধ নামে কোনকিছুর কোন হদিসই পাওয়ার কথা না, অই পত্রিকায়। বা রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা-স্টেশনেও। কিছু ‘জঙ্গি’ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যাইতে পারে।

তো, বাংলাদেশের এখনকার বিটিভিগুলা, দৈনিক বাংলাগুলা, দৈনিক পাকিস্তানগুলা, রেডিও পাকিস্তানগুলার দিকে তাকায়া থাকলে কি বাংলাদেশের অবস্থা জানতে পারবো আমরা! এইটা কি সম্ভব কোনদিন!

১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষও দেখেন, দৈনিক-বাংলা, বাংলার বাণীতে কি কিছু আছে? হালকার উপ্রে ঝাপসা কিছু থাকতে পারে, বড়জোর। মানে, আমি বলতে চাইতেছি, ট্রুথ তো রেফারেন্স-বেইজড কোন ঘটনা না! যে, বইয়ে আছে বইলা আছে, বইয়ে নাই বইলা নাই!

সরকারি-প্রেসনোট এবং সরকারি-মিডিয়ার বাইরে গিয়াই ঘটনাগুলা ঘটছে, আর এখনো ঘটতেছে; সবসময়ই তা হয়া আসছে।

অক্টোবর ১২, ২০২২

বাংলাদেশে বাকশালি অবৈধ শাসন চাইপা বসলেই কেন দুর্ভিক্ষ শুরু হয়?

ইন্টারন্যাশনাল কন্সপিরেসিও দেখবেন বাইড়া যায়! 🙂 কই কই কি কি জানি হইতেছে! খুব কমপ্লেক্স গ্লোবাল পলিটিক্সের কারণে বাজারে চাইলের দাম, ডিমের দাম, তেলের দাম বাইড়া যাইতেছে; ইলেকট্রিসি থাকতেছে না… আর গ্লোবাল-ওয়ার্মিংও তো আসতেছে, তাই না!
এখন এইগুলা যে হইতেছে না – তা না, কিন্তু এইগুলারে দেশের দুর্ভিক্ষের কারণ বানায়া দিতে হইলে যেইরকমের বুদ্ধিজীবী-পণা করা দরকার, আমার রিকোয়েস্ট হইতেছে, অইগুলা কইরেন না!

রিসেন্ট টাইমে (গত ১০০-২০০ বছরে) দুনিয়ার কোন দেশেই ন্যাচারাল ডিজাস্টারের কারণে দুর্ভিক্ষ হওয়ার কথা না। যে কোন দেশের দুর্ভিক্ষ অই দেশের পলিটিক্যাল দুঃশাসন এবং জুলুমের একটা ডাইরেক্ট আউটকাম।

যেই দেশেই একটা টোটালিটেরিয়ান শাসন কায়েম হইছে, অনেক দিন ধইরা কন্টিনিউ হইছে, সেই দেশেই দুর্ভিক্ষ হওয়ার কথা। না হওয়াটাই বরং রেয়ার। কোনটা আমরা জানি, কোনটা আমরা জানতে পারি নাই। যখন সবকিছুই কন্ট্রোলের ভিতরে থাকে, তখন ইনফরমেশনই আমরা জানতে পারি না।

সবচে আগে, ইনফরমেশনের জায়গাটারেই করাপ্ট করা হয়, ম্যানিপুলেট করা হয়, গোপন করা হয়। কারণ, আমরা তো ডিসিশান নেই ডেটার বেসিসে! যদি ডেটাই না থাকে, আপনি তো বলতে পারবেন না, দেশে দুর্ভিক্ষ চলতেছে! উল্টা দেখবেন, পার কেপিটা ইনকাম তো অনেক বেশি!…

তো, বাংলাদেশে বাকশালি-শাসনের মতো টোটালিটেরিয়ান রিজিম যতবারই আসবে, ততবারই দুর্ভিক্ষ হবে। এইটা মোটামুটি আন-এভয়ডেবল ঘটনা। (অন্য আরো অনেক ফ্যাক্টরসহ, বা অইগুলা বাদেই।)

***

অনেকেই মাঝে-মধ্যে বলার ট্রাই করেন যে, বি এন পি র সমস্যা হইতেছে কোন বুদ্ধিজীবী নাই উনাদের! কোন নিউজপেপার, টিভি-চ্যানেল নাই! তো, আজকের চিটাগাংয়ের মিটিংয়ের পরে অই লোকগুলা বলতে পারেন, বি এন পি র কয়েকজন এস্থেটিক ফটোগ্রাফার দরকার! 🙂
এইসব ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সাজেশন যারা দেন, তাদের সারাদেশ ভর্তি পেইড-আনপেইড বুদ্ধিজীবী, দেশের সব নিউজপেপার, টিভি-চ্যানেল তাদের দখলে। তাদের এস্থেটিক ফটোগ্রাফার’রা খা লে দা জি য়া র নামটাও মুখে নিতে ডরান, সেক্যুলার-ধর্মের ওযু ভাইঙ্গা যাওয়ার ডরে।

সেই উনারাই কয়দিন পরে পরে একেকটা মিডিয়া-ইস্যু বানায়া দেশের মানুশরে ট্রল করার, মিম বানানোর আনন্দ-বিনোদনের আইটেম সাপ্লাই দিতে থাকেন! বারবার প্রমাণ করেন যে, এইরকম ফুলানো-ফাঁপানো গ্যাস দিয়া পাদের বাইরে কিছু হয় না। বায়ু-দূষণই হয়, তা-ও হালকা, অল্প একটু সময়ের!

উনারা পুরাপুরি বুদ্ধিজীবী-মিডিয়ার উপর ডিপেন্ড করেন, দেশের মানুশরে কেয়ার করা লাগে না! এই কারণে দেশের মানুশেরাও উনাদেরকে নিয়া হাসি-ঠাট্টাই করে, বড়জোর!

মুশকিল হইলো, বি এন পি র অনেকেও এই সাজেশনগুলারে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মনে করেন। কয়দিন আগেও মি লি টা রি, দূ তা বা সে ধর্না দিয়া বেড়ানোর কথা ভাবছেন, বা সার্পোট করছেন। পিপলের দরবারে হাজির হন নাই। অইটা যে ভুল ছিল – সেইটা উনারা এখন বুঝতে পারলে বেটার। তাইলে আগের মতো সুশীলদের ট্রাপে পড়ার চান্স কম।

আগুন জ্বলতে থাকলে, সেইটা বাতাসে এমনিতেই ছড়ায়…

***

আলী রিয়াজ সাহেবের একটা লেখায় চোখ পড়ছিল দুই-একদিন আগে। অইখানে দেখতেছিলাম উনি বাংলাদেশের ইলেকশনের কথা কইতে গিয়া ১৯৭১ থিকা ডাইরেক্ট ১৯৭৫-এ চইলা গেছেন, এর পরে এরশাদে, অইখান থিকা ১৯৯১-এ গিয়া ল্যান্ড করছেন।

কিন্তু ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ একটা ইলেকশন হইছিল তো! বাংলাদেশের ফার্স্ট পার্লামেন্ট ইলেকশন। তো, অইটার কথা উনি কন নাই।

আমাদের ‘রাজনীতি-বিশ্লেষকরা’ দেখবেন খুব একটা কয় না। কেন কয় না? 🙂 মানে, আ ও য়া মী লী গে র ভোট-ডাকাতির ইতিহাস তো নতুন না! বরং শুরু থিকাই এইরকম।

তারপরে ১৯৭৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি’তে সেকেন্ড পার্লামেন্ট ইলেকশন হইছিল। জি য়া উ র র হ মা ন ছিলেন তখন প্রেসিডেন্ট। (১৯৭৮ সালের ৩রা জুনের ইলেকশনে আতাউল গণি ওসমানীরে হারায়া উনি প্রেসিডেন্ট হইছিলেন।) আমার ধারণা, ১৯৭৯ সালের ইলেকশন হইতেছে বাংলাদেশের ফার্স্ট ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন। আর এই ইলেকশনে জিতা বি এন পি র সরকার ছিল মানুশের ভোটে ইলেক্টেড হওয়া বাংলাদেশের ফার্স্ট গর্ভমেন্ট। এই সত্যিটারে এড়ায়া না গিয়া আরো শক্তভাবে এস্টাবলিশ করার দরকার আছে। (বি এন পি র জন্য না, বাংলাদেশের মানুশের জন্যই দরকার।)

আমি বলতে চাইতেছি, ১৯৯১ সালের ইলেকশনরে গ্লোরিফাই করতে গিয়া আগের ইলেকশনগুলারে বাতিল কইরা দেয়াটা ঠিক না। ১৯৭৩ সালের ভোট-ডাকাতির কথা যেমন আমাদের মনে রাখা দরকার, ১৯৭৯ সালের ইলেকশনের কথাও বলা দরকার।

এইগুলা নিয়া কথা না বলা, এবং একই রকমের ঘটনা হিসাবে মিলায়া ফেলাটা কোন ভুল থিকা হয় না; বরং এক কইরা দেখার যেই বাম-বাটপারিটা সাটল-ভাবে এক্টিভ থাকতেছে, সেইটারে খেয়াল করাটা দরকার।

অক্টোবর ১৩, ২০২২

বাউল-গানে কোন ফিমেইল সং-রাইটার নাই কেন?

এই জিনিস’টা খেয়াল কইরা সারপ্রাইজডই হইছিলাম। এতো যে মহান বাউল-সং, মরমী-দরদী লোকাল-কালচার আমাদের, এইখানে কোন রিমার্কেবল ফিমেইল সং-রাইটার নাই কেনো? মানে, লালন, রাধারমণ, উকিল মুন্সি, আবদুল করিম… এই সিরিয়ালে আগে-পরে কোন ফিমেইল সং-রাইটার বা সাধক কি পাইছেন? (এক চন্দ্রাবতী তো ৫-৬শ বছর আগের ঘটনা, তারও ৫-৬শ বছর আগে আছেন খনা, মানে, এইগুলা তো একসেপশনাল কেইস-ই, নরমাল ঘটনা না…) আর এই তরিকাগুলাতে ‘সিদ্ধি’ তো দেখি পুরুষের, মহিলারা হইতেছেন ‘সাধন-সঙ্গী’; মানে, অইটা হইতে পারাটা হইতেছে উনাদের ‘মুক্তি’?

মানে, এইখানে দোষ দেয়া-দেয়ি’র কিছু নাই। কিন্তু এই গ্লোরিফিকেশনের জায়গাটাও যে কিছুটা প্রবলেমেটিক – এইটা রিকগানাইজ করাটা দরকার।

আমার ধারণা, ধর্ম বলেন, আইডিওলজি বা তত্ত্ব-চর্চা বলেন, সোশ্যাল কনটেক্সটে পাবলিক-লাইফ নিয়াই কনসার্নড হইছে বেশি। কিন্তু পাবলিক-লাইফ মানেই হইতেছে পুরুষের-জীবন। যার ফলে অই কনসার্নগুলা খুব বেশি তৈরিই হইতে পারে নাই। কবিতা-লেখাই খালি মর্দ-লোকের (এবং জোয়ান-লোকেরই) কাজ না, বাউল-গিরি, গান-বাজনা, এমনকি পাবলিক-ঘটনা মানেই এইরকম জেন্ডার-স্পেসিফিক ঘটনা ছিল। কিন্তু এখনো যে হয়া আছে – এইটা একটা মুশকিলেরই ব্যাপার!

***

– অ বৈ ধ নয়া বা ক শা লে র পরের সরকারের কাছে কি কি কমিটমেন্ট আমরা চাই? –

এখন এমন একটা সময়ে আমরা আইসা হাজির হইছি যে, নেকস্ট পলিটিক্যাল শাসন’টা আমরা কি রকম চাই, কিভাবে চাই – এই জায়গাগুলা নিয়া বেশি কইরা কথা বলা দরকার। (আমি আগেও কিছু কথা কইছি। এইগুলা খালি পলিটিক্যাল দলগুলাই বলবে – তা না, সবারই বলা দরকার। কিন্তু)

বা ক শা ল -বিরোধী পলিটিক্যাল দলগুলার ক্লিয়ার-কাট কিছু ঘোষণা দিতে পারতে হবে। শ্লোগানের পরে, মিছিলের পরে, মুভমেন্টের পরে কোন বাংলাদেশের দিকে আমরা আগাবো, যেইটা এই অ বৈ ধ বা ক শা লি রিজিমের চাইতে ফান্ডামেন্টালি ডিফরেন্ট হবে – এই জায়গাটা যত সাফ সাফ কইরা বলা যাবে, তত একটা পিপলস রিপাবলিক হয়া উঠার দিকে যাইতে পারবো আমরা।

পলিটিক্যাল সিস্টেমে কোন ফান্ডামেন্টাল চেইঞ্জ না আইনা ১৯৯১ সালে স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনের ফসল যেইভাবে সরকারি-কর্মচারী আর সিভিল-সোসাইটির লোকজনের হাতে তুলে দেয়া হইছিল, সেইটারই আউটকাম হইতেছে এই নয়া বা ক শা ল। এই কথাও আমাদের মনে রাখা দরকার।

আমি ৯টা পয়েন্টের কথা ভাবছি (ইনিশিয়ালি)।
.

১. “ডি জি টা ল নি রা প ত্তা আইন” বাতিল করা
বা ক শা লে র ইমিডিয়েট পর পর যেই গর্ভমেন্ট তৈরি করা হবে, তার ফার্স্ট কাজ হবে ডি জি টা ল নি রা প ত্তা আইন’রে “স্থগিত” করা, যা পরের পার্লামেন্টে, প্রেসিডেন্টের সাইনে আইন হিসাবে “বাতিল” করা হবে।

২. সব পলিটিক্যাল দলের কাছে একসেপ্টবল মানুশদের দিয়া ইলেকশন কমিশন তৈরি করা
খালি কে য়া র টে কা র গর্ভমেন্টই না, ইলেকশন কমিশনও রি-ফর্ম করা লাগবে। দালাল-বাটপারদের দিয়া কোনদিনও ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন হবে না।

৩. কে য়া র টে কা র গর্ভমেন্টের ব্যাপারে গণ-ভোট
পার্লামেন্ট ইলেকশনের লগে লগে কে য়া র টে কা র গর্ভমেন্টের ব্যাপারেও গণ-ভোট করা লাগবে। পরে কোন দলীয়-সরকার আইসা এইটা বাতিল করতে যাতে না পারে।

৪. ৫% ভোটারের সার্পোট ছাড়া এই আইন চেইঞ্জের ব্যাপারে গণ-ভোট না করতে পারা
খালি এমপি’রা চাইলেই এই আইন চেইঞ্জ করতে পারবে না, যদি এই আইন চেইঞ্জ করতে হয় তাইলে আবার গণ-ভোট করা লাগবে। মিনিমাম ৫% ভোটরের সেইটা সার্পোট করা লাগবে।
.

৫.প্রেসিডেন্ট আর পার্লামেন্ট
এই কথা অনেকেই বলতেছেন। প্রেসিডেন্ট দরকার আমাদের। পুতুল-প্রেসিডেন্টের দরকার নাই। সার্টেন অথরিটি প্রেসিডেন্টের কাছে থাকতে হবে, দেশের।

৬. প্রেসিডেন্ট, প্রাইম-মিনিস্টার, এমপি – কেউ-ই দুই টার্মের বেশি পদে থাকতে পারবেন না
এইটা নিয়া কথা হয়, কিন্তু কেউ আর আগায় না। প্রেসিডেন্ট, প্রাইম মিনিস্টারই না, এমপিরাও দুই টার্মের বেশি থাকতে পারবেন না। এমপি’র ব্যাপারে ছাড় দিলেও এটলিস্ট ৫% – ১০% ভোটারের পারমিশন দরকার, এইরকম হইতে পারে। মানে, কারো সারা-জীবন পলিটিক্স করার কিছু নাই। রিয়াটারমেন্টের প্রাকটিস শুরু করা দরকার। পলিটিক্স তো কোন চাকরি বা বিজনেস না, যে সারাজীবন ধইরা করা লাগবে!
.

৭.সব সরকারি-অফিসে, থানায়, আদালতে সিসি-টিভি বসানো, পাবলিক তদারকি করা
রাস্তা-ঘাটে সিসি-টিভি না বসায়া সরকারি-অফিসে, থানায়, আদালতে সিসি-টিভি বসায়া পাবলিক চাইলে ভিউ করতে পারে, সেই বন্দোবস্ত করা লাগবে। পাবলিকরে মনিটর না কইরা পাবলিকের চাকরদের মনিটর করা লাগবে।

৮.যে কোন সরকারি-চুক্তি হইতে হবে পাবলিক ডকুমেন্ট
যত ধরণের চুরি-চামারি হয়, তার সবকিছুই হয় “গোপন চুক্তির” ভিতর দিয়া। যেইগুলা কোনদিনই খোলাসা করা হয় নাই। সব ধরণের সরকারি চুক্তি – ইন্টারনাল হোক আর এক্সটার্নাল, কোম্পানির লগে হোক, আর অন্য কোন দেশের লগে, পাবলিক ডকুমেন্ট করা লাগবে। গর্ভমেন্টের কাজকাম ট্রান্সপারেন্ট করা লাগবে। তা নাইলে পলিটিক্যাল নেতাদেরকে, সরকারি চাকরদেরকে লায়াবল করতে পারবো না আমরা।…
.

৯.ট্যাক্স-রিফর্ম
রাষ্ট্রের আইন বদলাইলে আসলে কিছু হবে না, বরং রাষ্ট্রের কাজকামে সমাজের মানুশের পার্টিসিপেশন যদি না থাকে, যে কোন সিস্টেমই ইভিল হয়া উঠবে। ধীরে ধীরে এমন একটা সিস্টেমের দিকে যাইতে হবে, যেইখানে রিপ্রেজেন্টেশনের জায়গাগুলা কমপ্লেক্স এবং দূরবর্তী না হয়া লোকাল হইতে শুরু করবে। এর ফার্স্ট স্টেপটা হইতে পারে ট্যাক্স-রিফর্ম। মানুশের ভ্যাটের টাকার, ট্যাক্সের টাকার হিসাব মানুশের কাছে দিতে হবে। আগের বছরের হিসাব দেয়ার পরেই খালি পরের বছরের ভ্যাট-ট্যাক্স দাবি করতে পারবে রাষ্ট্র।… দান-খয়রাতরেও ভ্যাট-ট্যাক্স হিসাবে কাউন্ট করার সিস্টেম বানাইতে হবে।… মানে, একটা ইকনোমিক্যাল রিফর্ম বাদ দিয়া পলিটিক্যাল চেইঞ্জ বেশিদিন সাসটেইন করতে পারার কথা না, আরেকটা দানব-ই তৈরি করবে আবার। আর ট্যাক্স-রিফর্ম হইতে পারে এর ফার্স্ট-স্টেপ।

আবারো বলি, এইগুলাই করা লাগবে না – তা না, এইরকমের আলাপগুলা করা লাগবে আমাদের। অবৈধ নয়া বা ক শা লে র পরেই কোন প্রো-পিপল গর্ভমেন্ট আমরা পাইয়া যাবো – এই ড্রিম দেখার চাইতে কি কি কাজের ভিতর দিয়া একটা গর্ভমেন্ট প্রো-পিপল হইতে পারে, সেই জায়গাগুলা নিয়া সাজেশন মেইক করতে পারাটা দরকার। মানে, ক্রিটিক করাটা তো একটা কাজই, কিন্তু সাজেশন মেইক করতে পারাটাও ক্রিটিকেরই একটা পার্ট (ভুল হইলেও)। অই কাজের দিকেও আগাইতে হবে আমাদেরকে, এখন।

অক্টোবর ১৪, ২০২২

জাস্ট ভাবতেছিলাম, শেক্সপিয়ার যদি এখনকার বাংলাদেশে জন্মাইতেন, কি বিপদেই না পড়তেন! কারণ উনার মোটামুটি সবগুলার নাটকের কাহিনিই তো “নকল”! কোন না কোন জায়গা থিকা মাইরা দিছেন!

এখন নাটক পারফর্ম করার আগেই অরিজিনাল-মারানিরা হই হই কইরা উঠতো – “নকল”! মানে, এইগুলা নিয়া কোন কথা-ই বলা যাবে না!
মানে, সব “নকল” নিয়া যে এই অরিজিনাল-মারানিদের মাথা-ব্যথা আছে – তা না, বরং পছন্দের জিনিসগুলা হইতেছে “এডাপ্টশন”! আলম খান করলে “নকল”, আর আর. ডি. বমর্ণ, সুমন-অঞ্জন করলে “এডাপ্টশন” – এইরকমের ঘটনা!

এখন আলম খানের “নকল” গান যে অনেকের “অরিজিনাল” গানের চাইতে বেটার – এইটা তো প্রমাণ করার কিছু নাই!
কিন্তু এই “নকল”র ধারণাটা কোথায়, কেমনে কাজ করে – এইটা খেয়াল করাটা দরকার বরং।

***

এইরকম একটা কথা আছে যে, ভূমিকম্পের আগে ব্যাঙগুলা মাটির উপরে উইঠা আসতে শুরু করে। তো, এখন খেয়াল কইরা দেখবেন, যারা অ বৈ ধ বা ক শা লি স র কা রে র উন্নয়ন নিয়া মশগুল ছিল, অই লিবারাল-ব্যাঙগুলা এখন বি এন পি র আন্দোলনের “ভুল” ধরতে শুরু করছে!

এই লিবারাল-ব্যাঙগুলা নিজেরাও জানে বি এন পি ১০১টা “ভুল” করলেও এই অ বৈ ধ বা ক শা লি স র কা রে র গুম-খুন-জুলুমরে রেশনালাইজ করা যায় না। এই অ বৈ ধ স র কা রে র ক্ষমতায় থাকার মোরাল কোন গ্রাউন্ড আর নাই, এরে সার্পোট করার কোন ইন্টেলেকচুয়াল গ্রাউন্ডও আর নাই।

এই কারণে “উ ন্ন য় ন” নিয়া দেখবেন আর কোন আওয়াজ নাই! এই দুর্ভিক্ষের দিনে, বাজার গিয়া বা ক শা লি দে র গোয়া ফাটে, তারপরেও মুখ ফুটে না। বা ক শা ল রে ডিজঅউন করতে পারে না।

কোন মোরাল, ইন্টেলেকচুয়াল গ্রাউন্ড না-থাকার পরেও জুলুম কইরাই এই অ বৈ ধ স র কা র এতোদিন ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু “উ ন্ন য় ন”র পর্দা আড়ালে এইগুলা করতেছিল। সেই পর্দা খইসা পড়ছে। তারপরও ট্রাই কইরা যাইতেছে, ট্রাই কইরা যাবে এরা। ফয়সালা রা জ প থে ই হইতে হবে। কারণ নেগোশিয়েন করার মতো কিছু নাই এদের হাতে। ক্ষমতা ছাড়ার আগে আরো ফেরোশাস হয়া উঠবে, জুলুমের মাত্রাও আরো বাড়ার কথা। দেশের আরো অনেক কিছু ধ্বংস কইরা দিয়া যাবে এরা।

কিন্তু রেজিসট্যান্সও বাড়তে থাকবে আসলে। বি এন পি র আন্দোলনই করবে না মানুশ-জন, নিজেদের রাইটসের জন্য ভোকাল হইতে শুরু করবে। অইটা হবে সেকেন্ড ফেইজ।

ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিকের একটা ঘটনার কথা একবার বলছিলাম। এইখানের সিকিওরিটি খুবই বাজে বিহেভ করে, স্পেশালি স্টুডেন্টদের লগে। ছেলে-মেয়ে একলগে বইসা কোথাও আড্ডা দিতেছে দেখলেও উঠায়া দিতো! তো, একবার এক মারামারি লাগলো নর্থসাউথের স্টুডেন্ট আর বসুন্ধরার সিকিওরিটির লগে। স্টুডেন্টদের লগে রিশকাঅলারা যোগ দিল। কারণ অদেরকে সবচে বেশি হেনস্তা করে সিকিওরিটির লোকজন। আইন মানতে বাধ্য করার নামে মারতো, অপমান করতো আসলে।

তো, মিরপুরে দেখলাম আজকে রিশকাঅলারা দুইজন ট্রাফিক পুলিশরে পিটাইছে। কারণ ট্রাফিক পুলিশ তো এনাফ অত্যাচার করে, করতেছে। সেইম জিনিসটা অন্য অনেকে ফিল্ডেও আছে। বি এন পি র আ ন্দো ল ন যখন কন্টিনিউ হইতে থাকবে, তখন এইরকমের রেজিসট্যান্সগুলাও ভিজিবল হইতে শুরু করবে, একসাথে হইতে থাকবে।

এই দুইটা যত কাছাকাছি হইতে পারবে, অবৈধ সরকারের পতনের দিন তত আগায়া আসতে থাকবে। এই কারণেই দেখবেন লিবারালগুলার মেইন কাজ হইতেছে এখন বি এন পি র আ ন্দো ল নে র “ভুল” ধরা। যাতে কইরা এইটা একটা পিপলস মুভমেন্ট না হয়া উঠতে পারে!
হাউএভার, এইরকমের লিবারাল বদমাইশিগুলা আগেও ছিল, পরেও থাকবে; কিন্তু মুভমেন্ট এবং রেজিসট্যান্স যত ছড়ায়া পড়তে থাকবে, এদের “ভুল-ধরা”র ঘটনাগুলা দিন দিন তত ফানি হয়াই উঠতে থাকবে।

অক্টোবর ১৬, ২০২২

গত এক মাসে কয়েকবার পদ্মা-ব্রিজ পার হইতে হইছে। এমেজিং একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক হইছে চাইনিজদের। পদ্মা যে কি বিশাল নদী দুইদিকে তাকাইলে টের পাওয়া যায়। কিন্তু পদ্মা-ব্রিজের আগে-পরে পার হইতে গেলে ডর-ই লাগে একটু। কোন বাস-ট্রাক নাই রাস্তায়। মানে, একটা দুইটা বাস বা প্রাইভেট কার পার হইতেছে কিছুক্ষণ পরে পরে। এতো বড় রাস্তায় গাড়ি-টাড়ি এতো কম!

জাস্ট মনে হইতেছিল, মাসে কতো টাকা টোল কালেক্ট হয় এখন? আই গেইস, যমুনা ব্রিজের চাইতে অনেক কমই হওয়ার কথা। কিন্তু এইসব নিয়া তো কথা-বার্তা নাই তেমন।

কয়দিন পরে শিল্প-কারখানা হইলে ট্রাফিক বাড়বে – এইরকম কথা অনেকেই বলতে পারেন, বা বলছেনও মনেহয়। কিন্তু এতো টাকা টোল দিয়া কোন ইন্ড্রাষ্ট্রি কি প্রফিটেবল হইতে পারবে? টোলের রেট নাকি আরো বাড়াবে? এর চে ঢাকা, সিলেট বা চিটাগাংয়ের আশে-পাশের জায়গাই তো বেটার হওয়ার কথা তাইলে।…

মানে, পদ্মা-ব্রিজ তো ভালোই, সোশ্যাল ঘটনা হিসাবে। তিন ঘন্টায় খুলনা, বরিশাল চইলা যাওয়া যায়, অইসব জায়গা থিকা ঢাকা চইলা আসা যায়। কিন্তু মানুশ-জন ঢাকা আইসা কি করবে? ঈদে বাড়িতে যাইতে পারবে সহজে, অবশ্যই, যাদের নিজের গাড়ি আছে আর কি।
কিন্তু আমি ভাবতেছিলাম রাতের-বেলা অনেকের তো ভূতের ভয়ও লাগার কথা এইরকম সুনসান রাস্তায়…

***

তসলিমা নাসরিন যেইরকম নারী বইলাই কবি, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-ও অইরকম পুরুষ বইলাই কবি আসলে। মানে, উনারা নারী-কবি এবং পুরুষ-কবি – এইরকম আইডেন্টিফিকেশনের বাইরেও যে কবিতা লেখেন নাই, তা না; কিন্তু উনাদের কবিতার সিগনিফিকেন্ট ঘটনা, অই আইডেন্টিটির জায়গা নিয়াই মোস্টলি। তসলিমা নাসরিনের একটু বেশি, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর একটু কম। এমনিতে বাংলা-কবিতা কম-বেশি ম্যাসকুলিন ঘটনাই। যার ফলে রুদ্র’রে বেশি-কবি মনে হওয়ার ঘটনাটা ঘটতে পারে।

তো, এইটুকই কবিতা না, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র; কিন্তু এইটা যে না, তা-ও যে না, তা না, (নট ত না) মনেহয়।

/রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

অক্টোবর ১৭, ২০২২

– বাংলাদেশের ‘সর্বহারা’ ও রাজনীতি-চিন্তা –

Ibrakor Jhilli’র সাথে কথা হইতেছিল কয়েকদিন আগে। একটা ইম্পর্টেন্ট জায়গা রেইজ করছিল ও, যেইটার সাথে আমিও একমত। যে, বাংলাদেশে যে ডি-পলিটিসাইজেশনটা শুরু হইছিল আর্লি এইটিইজের দিকে, সেইটার লগে সর্বহারা’র রাজনীতির একটা যোগাযোগ আছে।
সেভেনটিইজের শেষদিকে বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে সর্বহারা’র রাজনীতি তো ছিল। তো, এইটা খুব মিছা-কথা না যে, তখন বিপ্লবের নামে ডাকাতি-ই করা হইতো গেরস্তের ঘরে, ইন রিয়ালিটি। আর আজকের যারা মিডল-ক্লাস সোসাইটি, উনারা সবাই না হইলেও বেশিরভাগই অই গেরস্ত ঘরেরই সন্তান! উনারা রাজনীতি বলতে দেখছেন, বিপ্লবের নামে ডাকাতি করা। এইটা ছাড়া “রাজনীতি করার” গ্রেটার ভিজিবল কোন মিনিং ছিল না। বা অইটাই ট্রমাটিক একটা এক্সপেরিয়েন্স ছিল “রাজনীতি”র লগে আমাদের।

আমার মনে হইছে, আবার অই জায়গা থিকাই রাজনীতি জিনিসটারেই একটা “বিপ্লবীপণা”তে কনভার্ট করার একটা ব্যাপার আছে। যে, যদি “বিপ্লব”-ই না করেন, কিসের “রাজনীতি” করতেছেন আপনি!

এই জায়গা থিকাও বিএনপি’র বা ডেমোক্রেসির রাজনীতি নিয়া হাসি-ঠাট্টা/সন্দেহ আছে যে, “ইলেকশন কইরা কি হবে! যারা ক্ষমতায় আসবে, তারাও তো ডাকাতি-ই করবে!” ইভেন, যারা রাজনীতি করেন, তারাও এইটা কম-বেশি বিশ্বাস করেন যে, ক্ষমতায় যাওয়ার মানেই তো হইতেছে “ডাকাতি” করতে পারা আসলে!

মানে, আমাদের এখনকার টোটাল যে রাজনীতি-ধারণা, সেইখানে সর্বহারা’র ট্রমাটিক এক্সপেরিয়েন্সটা এমবেডেড আছে, বা থাকার কথা।
কয়দিন আগেও, “বিপ্লবীদের” মনে হইতো ইলেকশন কইরা কি হবে! আমরা তো বিপ্লব করবো! তো, এই “বিপ্লব” সবসময় এন্টি-ইলেকশন না বরং এন্টি-পিপল একটা ঘটনাই ছিল, এখনো তা-ই হয়া আছে।

আরেকটা রিলিভেন্ট ঘটনা হইতেছে, এই সর্বহারা সবসময় হইতে চাইছে রাষ্ট্রের অল্টারনেটিভ একটা ফোর্স হয়া উঠতে। যে, পুলিশ প্রটেকশনের দরকার নাই, আমরাই পুলিশ (অল্টারনেটিভ)! এবং সবসময় সমাজ-বিরোধী হইতে পারাটারেই “বিপ্লব” হিসাবে দাঁড়া করাইছে। এখনো, কোন না কোনভাবে রাষ্ট্রের কোলে উইঠা সমাজ-বিরোধিতা না করতে পারলে এই ধরণের বিপ্লবী-পণা সাসটেইন করতে পারে না। শাহবাগ ও বাকশালি-ফেমিনিজমের জায়গাগুলা দিয়া এইটা টের পাইতে পারবেন একভাবে।

ইব্রাকর ঝিল্লী’র জায়গাটারে একজাজারেট কইরা আমি যেইটা বলতে চাইতেছি, বাকশাল ও বিপ্লবী-পণা কাছাকাছি ঘটনা না, বরং এক ধরণের সিউডো-বিরোধিতার ভিতর দিয়া একটা আরেকটারে ফুলফিল কইরা আসতেছে, হিস্ট্রিক্যালি।

একটা বড়সড় আলাপের/হাইপোথিসিসের জায়গারেই ছোট কইরা কইলাম এইখানে। কিন্তু এই আইডিয়াটা আমার কাছে মনে হইছে, এক্সপ্লোর করাটা অর্দি একটা ঘটনা হইতে পারে। তাইলে বাংলাদেশের এখনকার পলিটিক্যাল-প্রজেক্টগুলারে আরো ভালো-ভাবে দেখতে পাবো আমরা।

অক্টোবর ১৮, ২০২২

দুর্ভিক্ষ তো সবসময় “নিরব” ঘটনা-ই! যেই মানুশ খাইতে পায় না, সে কি মাইক নিয়া রাস্তায় বাইর হয়া বলবে নাকি, ভাই, আমি খাইতে পাইতেছি না!

আমরা যারা তিনবেলা ভালো-মন্দ খাইতে পাই, আমরাই তো টের পাইতেছি ইনকামের বড় একটা অংশ তিনবেলা খাওয়ার পিছনে চইলা যাইতেছে। আগের চাইতে এটলিস্ট ডাবল খরচ হইতেছে।

দুর্ভিক্ষে কখনো মিডল-ক্লাস মরে না, কষ্ট হয়। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের খবর নিলেও দেখবেন, আমাদের মা-বাপ, নানী-দাদী, তাদের কষ্ট হইছে, কিন্তু মারা যাওয়ার তেমন ঘটনা পাইবেন না। কিন্তু কিছু জায়গায় রেফারেন্স তো আছে যে, ১০ লাখ লোক মারা গেছিল। কারা তারা?
উনারা ফেইসবুক ইউজার না। আমাদের ফ্রেন্ডলিস্টে নাই উনারা। আমাদের কাছে দুর্ভিক্ষ নিরব। কারণ, উনাদের “ভাষা” নাই। উনারা আমাদের দুনিয়াতে নাই। উনাদেরকে দেখি না আমরা। উনারা ইনভিজিবল।

দেশে গত কয়েক মাস ধইরাই দুর্ভিক্ষ চলতেছে। আমরা জাস্ট ডরাইতেছি যে, এখন এই দুর্ভিক্ষে না মিডল-ক্লাসেরও না খায়া মরতে হয়!

Leave a Reply