নোটস: ডিসেম্বর, ২০২২ [পার্ট ১]

ডিসেম্বর ০৩, ২০২২

এইটা খুবই ভুল-ভাবনা যে, ফেইসবুকে ঢুকলে বা অনলাইনে থাকলে সারা-দুনিয়ার খবর আমরা পাই। বরং আমাদের চোখের সামনে যতটুক দেখি, ততটুকরেই সারা-দুনিয়া বইলা ভাবার ইল্যুশনটা আরো বড় হয়। (এমনকি আমার সন্দেহ ফেসবুকে ডাইবারসিটির জায়গাটাও রিডিউস করা হইতেছে অনেক।)

যেমন, আমার নিউজফিডের মোটামুটি ৭৫% মানুশই হইতেছে ঢাকা শহরের; যার ফলে রাজশাহীতে গত কয়দিন ধইরা “পরিবহন ধর্মঘট” নামে যেই আজাব চলতেছে, ধর-পাকড় হইতেছে, সরকারিভাবে ইন্টারনেট-সার্ভিস অফ কইরা দেয়া হইছে – সেইটা আমি টের পাইতেছি না। (অই নিউজগুলা মিডিয়াতে তো নাই-ই, ফেসবুকেও স্প্রেড হইতে দেয়া হইতেছে না বইলাও আমার মনেহয়।) কিন্তু নেকস্ট-উইকে ঢাকা-শহরে যখন এই কাজ করা হবে – মনে হইতে থাকবে, পুরা দুনিয়াই অন্ধকার হয়া আসতেছে!

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আমার সাথে ঘটতেছে না, বা আমার এলাকায় ঘটতেছে না বইলা এইটা মেবি “সত্যি” না – এইরকম একটা রিয়ালিটির পারসেপশন খুব স্ট্রংলি এগজিস্ট করতেছে। ফেইসবুকের ভিতর দিয়া বা অনলাইনের ভিতর দিয়া কম্পার্টমেন্টালাইজেশন ঘটতে পারতেছে, আরো বেশিই আসলে।

***

শাহ আলম সরকার

বাংলাদেশের আর্ট-কালচারের ব্যাপারে একটা জিনিস আমি খেয়াল করছি, সেইটা হইতেছে, অনেককিছু আমরা শুনছি, দেখছি, পড়ছি বা জানি, কিন্তু কার লেখা বা বানানো অই আর্ট-ওয়ার্কটা সেইটা আমরা ‘জানি না’!

যেমন ধরেন, ‘এতো যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিল না’ ‘আকাশটা কাঁপছিল ক্যান, জমিনটা নাচছিল ক্যান’ ‘বুকটা ফাইট্টা যায়’ ‘বান্ধিলাম পিরিতের ঘর’ ‘খাজা বাবা খাজা বাবা মারহাবা মারহাবা’… টুকটাক বাংলা-গান শুনেন এবং এই গানগুলা শুনেন নাই, এইরকম লোক কমই আছেন। কিন্তু এই গানগুলা যারা শুনছেন তাদের মধ্যে খুব কম (মানে, মিডল-ক্লাসের) লোকই জানেন যে, এইগুলা শাহ আলম সরকারের গান।

এমনিতে, একটা ক্লাসের কাছে উনি তো একজন ‘জীবন্ত কিংবদন্তি’ই। কিন্তু বাংলাদেশের গানের আলাপে উনার নাম তেমন একটা পাইবেন, অইটা সবসময় এক্সক্লুডেড থাকে। যারা পছন্দ করেন, জানেন, তারাও শাহ আলম সরকারের নাম নিতে শরম পাওয়ার কথা কিছুটা, কারণ ‘স্মার্ট’ হওয়ার বিপরীতে ব্যাপারটা তো ‘খ্যাত’-ই কিছুটা! 🙂

তো, শাহ আলম সরকার একবার বলতেছিলেন, গীতিকবি’র নাম তো কেউ মনে রাখে না। অনেক গান মমতাজ গাইছে বইলাই হিট হইছে, এবং এইজন্য উনি হ্যাপিও। কিন্তু ঘটনা এইটুক বইলাই আমার কাছে মনেহয় না। মানে, গীতিকবি’র চাইতে সিঙ্গারের কথা আমরা বেশি মনে রাখি, এর বাইরেও যেইসব জিনিসরে আমরা ‘কবিতা’ বইলা মর্যাদা দিতে রাজি আছি, সেইখানে এই জনরা’র এবসেন্স তো আছেই, লিরিকস হিসাবেও ‘ফোক’র মধ্যেই রাখি। যেন কেউ একজন এই গানগুলা লেখেন নাই! শাহ আলম সরকার লিখলেও এইটা ‘ফোক সং’, উনার গীতি-কবিতা না!

এইটা একটা সিগনিফিকেন্ট কালচারাল-বদমাইশি।

শাহ আলম সরকারের জন্ম ১৯৬৫ সালে, আর উনার ফার্স্ট গান রেকর্ড করেন ১৯৯১ সালে। সেই হিসাবে উনি কিন্তু ‘নব্বই দশকের কবি’! মানে, খুবই কনটেম্পরারি।

তো, এইটা খালি শাহ আলম সরকারের ব্যাপারেই ঘটে নাই, পুরা একটা কালচারাল হিস্ট্রিরে ‘অচ্ছুত’ কইরা রাখার ঘটনা এইটা। কারণ উনি তো একটা সিলসিলা থিকাই আসছেন, যেইখানে আবুল সরকার, রাজ্জাক দেওয়ান, গফুর হালী, আরো অনেক অনেক নাম পাইবেন।…

কলোনিয়াল-কালচাররে ‘উচ্চতর’ বানাইতে গিয়া কেমনে এই জায়গাটারে ‘ফোক’ কইরা রাখা হইছে, সেইটা খেয়াল করাটা এখন মাস্ট হয়া গেছে আসলে।

ডিসেম্বর ০৪, ২০২২

ফুটবল বিশ্বকাপে যেই দলই চ্যাম্পিয়ন হবে, সেই দলটা খুব কম সময়ই পারফেক্ট দল হওয়ার কথা, এমনকি বেস্ট দলও হওয়ার কথা না। মানে, পারফেক্ট বা বেস্ট হওয়াটা হইতেছে কাগজ-কলম বা ধারণার ব্যাপার, পটেনশিয়ালিটির ঘটনা। সবার সব পটেনশিয়ালিটি তো সবসময় কাজকামে ট্রান্সফর্মড হয় না, হইতে পারে না। যার ফলে, খেলার মাঠে কে কেমনে খেলতেছে, সেইটাই ঘটনা হয়া উঠে।

এইখানে বরং এক্সপেরিয়েন্সটা একটা ফ্যাক্টর হয়া উঠে, যেই কারণে পুরান দলগুলাই ভালো পারফর্ম করতে পারে। ছোটখাট ডিফরেন্সের জায়গাগুলারে তারা বেটার আইডেন্টফাই করতে পারে, কাজে লাগাইতে পারে।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, কেউ বেস্ট-টিম বইলা খেলাতে জিতে না, ভালো খেলে বইলা জিতে। দুইটা সবসময় একই ঘটনা না আর কি 🙂

***

১০ তারিখে বিএনপি’র যেমন ‘বিপ্লব’ করার দরকার নাই, একইসাথে এইটা ‘নরমাল’ কোন ঘটনা হয়া হইলে সেইটা বাজে-জিনিসই হবে। বিএনপি’র লোকজনই হতাশ হওয়ার কথা তখন।

মানে, আওমি লিগ যেমন ‘নাশকতা’ দেখাইতে চাইতেছে, এর বিপরীতে ‘অহিংসা’ দিয়া পুরাপুরি মোকাবেলা করা যাবে না আসলে। কোন একটা সময়ে সরাসরি কনফ্রন্ট করা তো লাগবেই! মানে, আপসে আপ কেউ ক্ষমতা ছাইড়া দিবে না। এই অবৈধ-শাসকরে জোর কইরাই ক্ষমতা থিকা নামাইতে হবে, ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করতে হবে। অই চাপটা তৈরি করতে পারতে হবে।

এইখানে তিনটা ঘটনা থাকতে পারে। এক হইতেছে এইরকম হইতে পারে যে, ইলেকশনের টাইমের তো দেরি আছে, এতো তাড়াহুড়ার কিছু নাই! 🙂 কিন্তু এই চিন্তাটা যা করে, একভাবে মাইনা নেয়ার একটা স্কোপ তৈরি করে, যেন এইটা অবৈধ-সরকার না! এক ধরণের বৈধতাও তৈরি করে, সাব-কনশাসলি।

আর পজিশনটাও এইরকম হওয়া উচিত যে, দলীয়-সরকারের আন্ডারে ইলেকশন করবো-না না, বরং দলীয় সরকারের আন্ডারে কোন ইলেকশন বাংলাদেশে হইতে দেয়া হবে না! প্যাসিভ থিকা এক্টিভ একটা জায়গাতে যাইতে হবে।

সেকেন্ড হইতেছে, এই অবৈধ-সরকার তো একটা গৃহযুদ্ধের দিকে দেশরে ঠেইলা দিতে চায়। বাকশালি-বুদ্দিজীবীরাও দেখবেন, দুই দলের সমস্যা হিসাবে দেখায়া বিএনপিরেই দোষ দিতে চায়, ভিক্টিম-ব্লেইমিংয়ের মতো। তো, এইটারে ডরাইলে হবে না আসলে। বিএনপিরে বুঝতে পারতে হবে যে, খালি বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের না, বরং আওমি লিগের নিজেদের লোকজনেরও এখন এই অবৈধ-সরকারের উপরে বিশ্বাস নাই। আগামী ছয় মাসে অবস্থা একই রকম থাকবে না। উনাদের কনফিডেন্স ফিরা আসবে না, কিন্তু নন-পলিটিক্যাল কোন ফোর্সের ভিতর দিয়া যদি এই সরকারের পতন ঘটে, সেইটা বিএনপি’র জন্যও খারাপই হবে আসলে।

থার্ড বা ক্রুশিয়াল ঘটনাটা হইতেছে, নানান ধরণের এলায়েন্স তো ক্রিয়েট করতেই হবে, কিন্তু পলিটিক্যাল দলের কাজ তাদের নেতা-কর্মিদেরই ঠিক করা লাগবে। অনেকে দেখবেন টিজ করেন, ইন্টেলেকচুয়ালদের কাজ কি? এইসব বইলা। মানে, পলিটিক্যাল মুভমেন্টের জায়গাটাতে একজন ইন্টেলেকচুয়ালের আলাদা কোন রোল আসলে নাই (এর আগে এবং পরে আছে)। পলিটিক্যাল পার্টি হিসাবে মুভমেন্টের ডিসিশানগুলা নিতে হবে। একটা পর্যায়ে আইসা ডিসাইসিভ (decisive) হওয়া লাগবে।

আমার পারসোনাল ভিউ হইতেছে, এটলিস্ট খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের রেকর্ড করা কোন কথা হইলেও মানুশরে শুনাইতে হবে। মানে, উনাদের কোন প্রেজেন্স ছাড়া ১০ই ডিসেম্বর একটা ফেইলওর হয়া উঠবে। আর খালি দাবি-দাওয়া দিয়া হবে না, ডেডলাইনও লাগবে। সমাবেশের পরে মুভমেন্টরে কেমনে আগানো হবে, সেই জায়গাটা ক্লিয়ার করা লাগবে। তা নাইলে এইটা এইখানে খালি আটকায়াই যাবে না, থাইমাও যাবে আসলে একভাবে। যেইটা বাকশালরে ব্রেদিং-স্পেইসই দিবে না, আরো ব্রুটালও কইরা তুলবে, একইসাথে।

যেইটা আরো বিপদের ঘটনা হয়া উঠতে পারে, ফিউচারে। মানে, যদি সেইটাই হয়, তাইলে বাংলাদেশের সামনে আরো ভয়াবহ দিনই ওয়েট করতেছে আসলে।

আই হোপ যে, এইরকম হবে না, কিন্তু আশা করার মতো লজিক তো আসলে কমই…

ডিসেম্বর ০৫, ২০২২

মিডল-ক্লাসের সার্পোটের কারণে বাংলাদেশে কখনো কোন মুভমেন্ট সফল হয় নাই, বরং যখনই কোন মুভমেন্ট মিডল-ক্লাসের আওতার বাইরে যাইতে পারছে তখনই সেইটা “গণ-অভ্যুত্থান” হয়া উঠতে পারছে।

কিন্তু ‘মিডল-ক্লাসের সার্পোট লাগবে’ – এই ভুল-চিন্তা অনেকগুলা হিস্ট্রিক্যাল লাই-এর যোগফল আসলে।

আল মাহমুদ উনার অটোবায়োগ্রাফিতে (বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ-এ) লেখছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের কয়দিন আগে শামসুর রাহমানের লগে উনার দেখা, শামসুর রাহমান খুব উত্তেজিত হয়া বলতেছেন, আমি আওমি লিগরে সার্পোট করি, শেখ মুজিবরে সার্পোট করি, কিন্তু… তো, পরের কথা আল মাহমুদ আর কন নাই, বলছেন, অনুমান কইরা নেন! তো, আমরা তো অনুমান করতে পারি আসলে, কি কথা উনি বলছিলেন। আবার, ২৫ শে মার্চের পরে ইত্তেফাক মোড়ে গেছেন আল মাহমুদ, উনারে দেইখা শহীদ কাদরী হো হো কইরা হাসতেছেন! এইরকম। মানে, শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী তাই বইলা রাজাকার ছিলেন না, উনারা ছিলেন মিডল-ক্লাস। বাংলাদেশ হওয়ার পরে স্বাধীনতার কবিতা লেখছেন, বা নিজের নামে ছাপানোর ‘সাহস’ করছেন। মিডল-ক্লাসরে গ্লোরিফাই করছেন।

তো, একটা মেজর ঘটনা হইতেছে, মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভ। এইখানে সব হিরো হইতেছে মিডল-ক্লাসের হিরো। গ্রামে গিয়া গ্রামের মানুশরে জাগায়া তুলছে! 🙂 অই হিস্ট্রিক্যাল লাই-এর লিগাসি থিকা মনেহয় মিডল-ক্লাস কি না জানি!

একই ঘটনা ঘটছে, এরশাদের পতনের সময়েও। এরশাদ মিডিয়ারে ম্যানেজ করতে পারে নাই। ঢাকা ভার্সিটিতে মুভমেন্ট হইছে, ট্রু, কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুশ এতে জয়েন না করছে, সেইটা “গণ-অভ্যুত্থান” হইতে পারে নাই। মিডল-ক্লাসের মিডিয়ার কারণে, টিএসসিতে খাড়ায়া দুইটা কবিতা আবৃত্তির ভিতর দিয়া এরশাদ-গর্ভমেন্ট ফল করে নাই। ভুল কথা এইগুলা। (এরশাদ-পতনের ভিতর দিয়া নিউজ-মিডিয়া বরং বাংলাদেশে ক্ষমতার স্ট্রাকচারে নিজেদের স্টেইক ক্লেইম করতে পারছে সরাসরি। মিডিয়ার বাহাদুরি এইটুকই।)

তো, এই কারণে মিডল-ক্লাস চেইতা গেলেই এই অবৈধ-বাকশালি সরকার ফল করবে – এই কথা ঠিক না। বরং যখন ম্যাস লেভেলে পিপলস মুভমেন্ট শুরু হবে মিডল-ক্লাস একটু একটু কইরা সুর পাল্টাইতে শুরু করবে। ‘তর্ক’ করতে আসবে। 🙂 এইটাই হইতেছে মিডল-ক্লাসের হিস্ট্রিক্যাল খাসলত। এইটারে ভুইলা গেলে ভুল হবে।

মিডল-ক্লাস হইতেছে গরুর লেজটা, তারে শিং ভাবলে হবে না।

ডিসেম্বর ০৬, ২০২২

ফিল্ম-সোসাইটি

এখন এইরকম কিছু কথা-বার্তা চালু আছে যে, ‘চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন’ বা ফিল্ম-সোসাইটি তৈরি করার ভিতর দিয়া এক ধরণের ‘বিপ্লব’ করার কাজ শুরু হইছিল। ১৯৬৩ সালে ঢাকায় “পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ” তৈরি করা হইছিল। সালাহউদ্দিন, আনোয়ারুল হক খান, মুহাম্মদ খসরুসহ আরো কয়েকজন এইখানে ছিলেন। ১৯৬৯ সালে আলমগীর কবির আর লায়লা সামাদ ‘ঢাকা সিনে ক্লাব’ চালু করছিলেন। দুইটাই এক্টিভ ছিল। উনাদের কাজ ছিল মেইনলি – ভালো-সিনেমার দর্শক তৈরি করা, ভার্সিটির ছেলে-মেয়েদেরকে সিনেমা দেখতে শেখানো। সিনেমা যে আর্টও – এই সত্য এস্টাবিলশ করা-ই না খালি, একটা এলিট-ক্লাসের রুচি’রে তৈরি করাও।

১৯৭১’র পরে আরো অনেক ফিল্ম-সোসাইটি তৈরি হইছিল। সবগুলা ফিল্ম-সোসাইটি নিয়া ১৯৭৩ সালে “বাংলাদেশ ফেডারেশন অফ ফিল্ম সোসাইটি” নামে একটা এসোসিয়েশন বানানো হইছিল, যার মেম্বার একটা সময়ে ৪০-৫০ টার মতো ছিল। আলমগীর কবির, মুহাম্মদ খসরুসহ আরো কয়েকজন এই সংগঠনগুলা তৈরি করার জন্য, সিনেমা এক্টিভিজিম হিসাবে এস্টাবলিশড করার জন্য অনেক এফোর্ড দিছেন।

এই সংসদগুলা মেইনলি ৩টা কাজ করছে। এক হইতেছে, আর্ট-ফিল্ম দেখার তো তেমন কোন সোর্স ছিল না তখন, এই সংসদগুলার মেম্বার হইলে সেইগুলা দেখা যাইতো। কিন্তু এখন যখন এই সোর্সগুলা ওপেন অনেক, ফিল্ম-সোসাইটির ইউটিলিটিও কমে আসতেছে আসলে। সেকেন্ড হইতেছে, বাংলাদেশে তো কোন ফিল্ম-ইন্সিটিটিউট নাই, যারা সিনেমা বানাইতে চান, সেইসব ইয়াং লোকজনরে এফডিসি-তে গিয়াই কাজকাম শেখা লাগতো, সেইটার একটা অল্টারনেটিভ সার্কেল হয়া উঠছিল এই ফিল্ম-সোসাইটিগুলা। সিনেমা-থিওরি, সিনেমা-লিটারেচার নিয়া নানান বিদেশি লেখা-পত্র ছাপা হইছে, আলাপ-আলোচনা হইছে। এই সার্কেলগুলা থিকা পরের কিছু ডিরেক্টর বাইর হয়া আসছেন। উনারা খালি ইউরোপিয়ান-আর্টের ধারণাই রপ্ত করেন নাই, একইসাথে পিপল-হেইট্রেটের লিগাসিও নিয়া আসছেন, যার ফলে যারা অই জায়গাগুলারে আন-লার্ন করতে পারেন নাই, তারা খুববেশি কিছু কন্ট্রিবিউট করতে পারেন নাই। থার্ড হইতেছে, কিছু ফিল্ম-ফেস্টিভলের ঘটনা উনারা শুরু করছিলেন। এখনো কন্টিনিউ হইতেছে, কিন্তু ঘটনাগুলার স্কেল বড় হয় নাই বা এফেক্টিভ হইতে পারে নাই আর।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, বাংলাদেশে ফিল্ম-সোসাইটিগুলা বাংলাদেশি-সিনেমার আলাপে মেইনস্ট্রিম কোন ঘটনা তো না-ই, বরং কোনভাবে মেইনস্ট্রিম হয়া পড়ার স্কোপের মধ্যে চইলা আসলে সেইটারে বাজে-ভাবেই দেখছে। এরা কোন সিনেমা-বিপ্লব করে নাই, ইউরোপিয়ান-আর্টের মার্সেনারি হিসাবেই মোস্টলি কাজ করছে, এবং করতেছে। এইটা যেই পজিটিভ-ফোর্স হইতে পারতো, সেইটা খালি মিস কইরাই যায় নাই, মিস করাটারেই মঞ্জিলে মাকসুদ বানায়া নিছে। যার ফলে, দিন দিন অরনামেন্টাল ঘটনাই হয়া উঠতেছে। বিভিন্ন সময়ে উনারা গর্ভমেন্ট পলিসির জায়গাতে কন্ট্রিবিউশন করছেন, কিন্তু সেই এফেক্টিভনেসও সময়ের সাথে সাথে কইমা আসতেছে বইলাই আমার ধারণা।

ডিসেম্বর ০৮, ২০২২

– কনফ্লিক্টটা বিএনপি ভার্সেস আওমি-লিগের না, ভোটের-শাসন ভার্সেস বাকশালি-শাসনের –

এরশাদ পয়লা স্বৈরাচার না; বাংলাদেশে অবৈধ, অগণতান্ত্রিক শাসনের শুরু হইতেছে বাকশাল। এই সত্য আমরা যতদিন না মানতে পারবো, বলতে না পারবো, ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে একটা ডেমোক্রেটিক শাসনের বেইজ তৈরি করা পসিবল না।

এই সত্যিটা আমরা এস্টাবলিশ করতে পারি নাই বইলাই নয়া বাকশালের অবৈধ-শাসন শুরু হইতে পারছে বাংলাদেশে। এবং নতুন নতুন ফরম্যাটে চালু হওয়ার সম্ভাবনা জারি আছে।

এখনকার পলিটিক্যাল ক্যাটাগরি বিএনপি ভার্সেস আওমি লিগ না, এমনকি ডেমোক্রেসি ভার্সেস (ধোঁয়াশা রকমের) ফ্যাসিবাদ না, বরং খুবই স্পেসিফিক্যালি ভোটের-শাসন ভার্সেস বাকশালি-শাসনের মধ্যে কোনটারে সার্পোট করেন আপনি – এই কোশ্চেনটা।

আনফরচুনেটলি, এই ন্যারেটিভটারে পলিটিক্যালি রিকগনাইজ করতে পারি নাই আমরা এখনো, পুরাপুরি। যখন এই বিরোধের জায়গাটা স্পষ্ট হইতে পারবে, বাংলাদেশে যে কোন ধরণের স্বৈরাচারি শাসনের রাস্তা বন্ধ হইতে পারবে।

এই কারণে, বিপ্লবের নামে যেই বাকশালি-শাসনের ন্যারেটিভটা এখনো চালু আছে তারে কবর দিতে পারাটা জরুরি, সবচে আগে।

***

ফেইসবুক দিয়া কি বাচ্চা পয়দা করতে পারবেন? 🙂 পারবেন না তো! কিন্তু ফ্লার্ট-টার্ট করার ভিতর দিয়া রোমান্টিক রিলেশন শুরু করতে পারবেন, এবং রিলেশনশিপ শুরু করার পরেও নানানরকমের পাবলিক ও প্রাইভেট যোগাযোগের ভিতর দিয়া ইনটেন্সিফাই হওয়ার পরে সেক্সুয়াল রিলেশনে যাইতে পারবেন, বাচ্চা পয়দা দিতে পারবেন। মানে, এইটা একটা মিডিয়াম, আল্টিমেট টুল না।

একইরকমভাবে ফেইসবুকে ইন্টেলেকচুয়াল কথা-বার্তা বইলা, অনলাইন এক্টিভিজম কইরা কোন গর্ভমেন্ট যেমন ফেলে দিতে পারবেন না, টিকায়াও রাখতে পারবেন না; কিন্তু প্রপাগান্ডা টুল হিসাবে এইটা এখন ইম্পর্টেন্ট। এর একটা ইমপ্যাক্ট আছে। সক্রেটিস বা গ্রিক-ফিলোসফার’রা বাজারে মধ্যেই বসতেন; সম্রাট অশোকের যেইসব পিলার, অইগুলা বাজারে ছিল; মানে, যেইখানে মানুশ আছে, কথা সেইখানেই বলতে হয়।

কথা বইলা কিছু হয়-না না, কথা-বলা দিয়াই মোটামুটি সবকিছুর শুরু হয়। কুন, ফায়া কুন!

***

যে কোন পলিটিক্যাল মুভমেন্ট আমাদেরকে ইন্টেলেকচুয়ালিও কনশাস কইরা তোলে; নতুন কইরা অনেক কিছু বিচার করার, যাচাই করার, কথা-বলার স্পেইস আমরা পাই।

খেয়াল করলে দেখবেন, গত এক মাসে বিএনপি’র মিটিং, সমাবেশের পরে (পুরাপুরি না কাটলেও) অনেকের ডর-ভয় একটু একটু কমতে শুরু করছে। আর অবৈধ বাকশালি-গর্ভমেন্ট এই জিনিসটারেই ডরাইতেছে।

খালি ফেইসবুকের কথা আমি বলতেছি না। টং-এর দোকানে, রাস্তা-ঘাটে, বাজারে যারা চাপা একটা ভয় নিয়া, মুখ বেজার কইরা চুপ থাকতো, তারা দুই-চাইরটা গাইল দিতে পারতেছে এখন। কেউ বাকশালের দালালি করতে আসলে উল্টা-কথা কইতেও কম ডরাইতেছে। এরা বিএনপি’র লোক না, কিন্তু বিএনপির মিটিংগুলা এই সাহসটা দিতে পারতেছে বাংলাদেশের মানুশদেরকে।

যারা উন্নয়নের গল্প দিতো, তারা বরং চুপ কইরা গেছে। বুক ফুলায়া দালালি করতে হেসিটেট করতেছে। গুম-খুন-জুলুম কইরা শুওরের বাচ্চাগুলা তারপরও কইতে চাইতেছে, বিএনপি খ্রাপ! অ্যাজ ইফ কেউ খারাপ হইলে তাদের জুলুম, নির্যাতনগুলা জাস্টিফাইড হয়া যায়!
এদের মোরাল গ্রাউন্ড আর নাই কোন! আগেও ছিল না, কিন্তু ক্ষমতার জোরে মানুশরে কথা বলতে না দিয়া এরা বাকোয়াজিগুলা করতো। পুলিশের ডর দেখায়া, গুম-খুন-মামলার ডর দেখায়া মানুশের মুখ বন্ধ কইরা রাখছিল।

মানুশ আগে চিন্তা করতে চাইতো না – তা না, অইখানে একটা ডর ছিল, যেইখানে একটা কনশাসনেস তৈরি হইতেছে এখন। এই জায়গাটাই মেইন। মানুশরে ডর দেখায়াই এই অবৈধ-সরকার টিইকা আছে। এই ডর যদি একবার ভাইঙ্গা যায় তাইলে তারা আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এই কারণে আরো হুমকি-ধমকি দিয়া ডর দেখাইতে চাইতেছে।

বিএনপি’র মুভমেন্টের কারণেই বাকশালিদের এই হুমকি হাস্যকর হয়া উঠতেছে। ভূতের সিনেমা দেইখা যদি না ডরান তাইলে যেইরকম হাস্যকর লাগে, অইরকম হয়া উঠতেছে দিন দিন। মানুশের ডর যত কমবে বাকশাল তত হাস্যকর হয়া উঠবে।

ডিসেম্বর ০৯, ২০২২

বালু মাটিতে কি ধান চাষ করতে পারবেন? পারবেন না তো!

একইরকম ভাবে আপনার চারপাশ, ফ্রেন্ড-সার্কেল ইম্পর্টেন্ট, কথা-বলার ক্ষেত্রে, চিন্তা-করার ক্ষেত্রে। আপনার চারপাশে যদি বাকশালি-ফ্রেন্ডরা থাকে, তারা আপনারে খালি ভয়-ই দেখাবে না, আপনার ‘ভালো’ চাইয়া মুখ বন্ধ রাখতেও বলবে তো! মনে হবে, আপনি ভুল-কাজ করতেছেন! চুপ কইরা থাকাটাই ভালো-কাজ। ভালোবাসার এই প্রেশার ইগনোর করা কঠিন। কারণ উনারা আপনার ফ্রেন্ড 🙂 তো, এইরকম ফ্রেন্ড যতদিন আছে আপনার, কোন দুশমনের দরকার নাই আর! আপনার চিন্তা-ভাবনা, কথা-বার্তা সেন্সর করার জন্য এনাফ। কারণ আপনি তো ডরাইতেছেন না, ভালোবাসার কারণে চুপ করে থাকতেছেন! 😛

তো, বালু-মাটিতে ধান চাষ হবে না। যদি সত্যি-কথা বলার নিয়ত করেন, তাইলে বাকশালি-ফ্রেন্ডদের ভালোবাসা কুরবানি দেন আগে। পায়ে পাত্থর বাইন্ধা বেশিদূর হাঁটতে পারবেন না।


ডিসেম্বর ১০, ২০২২

টিভি-পত্রিকার নিউজের হেডলাইন যেইরকম সবচে ইম্পর্টেন্ট খবরগুলারেই হাইলাইট করে না, বরং কিছু মানুশ সার্টেন উদ্দেশ্য নিয়া সেই খবরগুলারে পিক করে, প্রচার করে, একইরকমভাবে ফেইসবুকের নিউজফিডও অটো-জেনারেটেড কোন ঘটনা না। জটিল কোন এ.আই. দিয়া এইটা ঠিক করা হইতেছে – এইটাই পুরা কাহিনি না, বরং ম্যানুয়াল ইন্টারভেশন এবং টেম্পারিংয়ের ঘটনাগুলা খুব ফ্রিকোয়েন্টলিই এইখানে ঘটে।

যেমন, সকালবেলা উইঠা নিউজফিডের চেহারা দেইখা মনে হইতেছে, মানুশের মনে আর্জেন্টিনার জিতা ছাড়া আর কোন চিন্তা নাই! সারা বাংলাদেশের মানুশ এইটা নিয়াই সবচে বেশি চিন্তিত! এমনকি ব্রাজিলও হারে নাই। গোলাপবাগ বইলা ঢাকা শহরে কোন মাঠ নাই। সারা শহরে অঘোষিত কারফিউ ঘোষণা করা হয় নাই!

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আমাদের চোখের সামনে যা কিছু দেখানো হইতেছে, সেইটাই যদি রিয়ালিটি বইলা মাইনা নেই আমরা, তাইলে রিয়ালিটির দেখা আমরা কোনদিনও পাবো না। এখন এইটা টিভি, নিউজপেপার, ফেইসবুক যেইটাই হোক। বরং একটা কনশাসনেসের জায়গা থিকা না দেখতে পারলে এই চোখের সামনের রিয়ালিটিতেই হারায়া যাইতে হবে আমাদেরকে। যা কিছু সত্যি, তা সবসময় দেখা যায়-না না, না-দেখানোর চেষ্টাটাও এর লগে থাকে, নানান ফরম্যাটের ভিতর দিয়া। উই মাস্ট রিকগনাইজ দ্যাট।

***

The Waking Life নামের একটা এনিমেটেড মুভিতে নিটশের কোটেশন দিয়া এই কথা বলা হইতেছিল যে, বান্দরের ইন্টেলেকচুয়ালিটির লগে এভারেজ-চিন্তার মানুশের ইন্টেলেকচুয়ালিটির যেই ডিফরেন্স একজন হায়ার-থটের মানুশের সাথে একজন এভারেজ-চিন্তার মানুশের ইন্টেলেকচুয়ালিটির ডিফরেন্স তার চাইত বেশি! তো, নিটশের অন্য অনেক চিন্তার মতোই এইটা সুপার-হিউম্যানের আইডিয়ার জায়গা থিকাই আসছে। মানে, এইটারে একটা সত্যি-কথা হিসাবে ধইরা নেয়াটা ঠিক হবে না আর কি!

তো, আমি পরে ভাবতেছিলাম, এই কথাটা কই থিকা আসছে, বা আসতে পারে। অবশ্যই ঘটনা এইটা যে, বান্দরের সামনে আপনি যেইটা ঝুলায়া দিবেন, সে অইটা নিয়াই কনসার্নড হবে, অইটারেই দেখবে। মানে, মানুশ যেইভাবে বেশিরভাগ সময় অন্য প্রাণীদেরকে ‘শিকার’ করে 🙁 চোখের সামনে একটা ইল্যুশন তৈরি করে, ফাঁদে ফেলে। এবং বেশিরভাগ প্রাণি এই ফান্দে পড়ে। বারবার ধরা খাইতে খাইতে অবশ্য অনেক সময় শিইখা ফেলে। একই টেকনিক বেশিরভাগ সময়ে আর কাজ করে না। ‘শিকারের’ নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা লাগে এই কারণে। কিন্তু বেইজ-চিন্তাটা মোটামুটি এইরকমেরই। যে, তারে ফান্দে ফেলা লাগবে।

তো, প্রাণি হিসাবে মানুশের উপরেও একই জিনিস এপ্লাই করা যায় আসলে। ধরেন, আমারে যদি কেউ বলে, অই লোকটা খারাপ, আমি কোন চিন্তা করার বাইরেই আগে এইটারে একটা পসিবিলিটি হিসাবে ধইরা নিবো তো! বা পোশ্ন হিসাবে এইটারে নিবো, এনকাউন্টার করবো, আসলে কি খারাপ নাকি ভালো? 🙂 মানে, একটা লোক খারাপ নাকি ভালো – এইটা দিয়া আমি কি করবো? – এই পোশ্নটারে পয়লা নিবো না এতোটা। আমার সামনে যেইটারে প্লেইস করা হইতেছে, সেইটারে আগে নিবো। এই কারণে দেখবেন, আমি নিজের চোখে দেখছি, আমি নিজের কানে শুনছি – এইসব দাবি সত্যি হওয়ার চাইতেও খুব আবেগি জিনিস হয়। যেন, ধ্রুব সত্য!

তো, আমার ধারণা দ্য ওয়েকিং লাইফের কথাটা বা নিটশের বাণীটা এই জায়গাটা থিকাই আসছে যে, মানুশরেও তো অন্য প্রাণীদের মতোই বেকুব বানায়া রাখা যায়!

কিন্তু কতোদিন পর্যন্ত পারা যায় আসলে? বেশিদিন না, বেশিদিন পারা যায় না। এবং যখন মানুশ বুঝতে পারে, অই মানুশদেরকে (সো-কল্ড সুপার-হিউম্যানদের) আর বিলিভও করে না। এবং দে রিভোল্ট।

মানে, মানুশের বাঁইচা থাকা, চিন্তা-করা, এক্ট-করা এতোটা টেকনিক্যাল কোন ঘটনা না। যারা এইরকম টেকনিক্যালিটি ঘটনা বইলা ভাবেন, আন্ডারমাইন করেন, তারা হিউম্যান ইন্সটিংক্টের জায়গাগুলারে জাস্ট ইমাজিন করতে পারেন না। আর এইটা না-পারা না, বরং একটা ডেফিনেশনের ভিতরে আটকায়া ফেলতে চাওয়ার ঘটনা।

তো, কোন ডেফিনেশনের ভিতরে এক্ট করাটা, চিন্তা করাটাই বরং অ-মানবিক একটা ঘটনা।

ডিসেম্বর ১১, ২০২২

– ইয়াং ইন্টেলেকচুয়াল –

দুনিয়ার হিস্ট্রিতে কয়েকজন গ্রেট ইন্টেলেকচুয়ালদের নাম মনে করেন, যারা উনাদের সময়ে চিন্তার দুনিয়ায় খুবই ইনফ্লুয়েন্সিয়াল ছিলেন। কি কি নাম মনে আসে?

আমার কাছে এখন, নবী মুহাম্মদ (স:), গৌতম বুদ্ধ, কনফুসিয়াস, সক্রেটিস, কার্ল মার্কস, ইবন আরাবি’র কথা মনে হইলো। অন্য অনেক ক্যাটাগরিতে অন্য অনেকের নামই মনে করতে পারেন। কিন্তু যেই জিনিসটা মোটামুটি কমন, সেইটা হইতেছে, সবাই না হইলেও মোটামুটি বেশিরভাগ (কিছু একসেপশন তো সবক্ষেত্রেই থাকে) লোকজনই একটা সার্টেন বয়সের পরে গিয়া গ্রেট হয়া উঠছেন। এই কারণে দেখবেন, একটু বুড়া লোক দেখলেই আমাদের কাছে কিছুটা জ্ঞানী বা এলেমদার লোক বইলা মনেহয় 🙂

[মানে, যে কোন জিনিসেরই দেখনদারির জায়গাটাতে কিছু পাজল থাকেই। সোশ্যাল-পাওয়ারও একটা ঘটনা। অবশ্য বয়স হইলে, কিছু জিনিস আপনি এমনিতেই জানতে-বুঝতে পারবেন, এইরকম কিছু জায়গা তো আছেই, অইগুলার কথা আমি বলতেছি না এইখানে।]

তো, এর মানে এইটা না যে, জুয়ান বয়সে উনারা কোন কিছু চিন্তা-ভাবনা করতে পারেন নাই, বরং যখন উনারা একটু ম্যাচিউরড লেভেলে পৌঁছান তখন ইয়াং-বয়সের একসেপশনালিটি’টারে খেয়াল করা যায় আবার। মানে, আমি বলতে চাইতেছি জুয়ান বয়সে একসেপশনাল কিছু কইরা ফেলাটা অবশ্যই খারাপ কিছু না, স্পার্ক করতে পারাটা অবশ্যই ভালো-জিনিস একটা, কিন্তু সব স্পার্ক একটা আগুন হয়া উঠতে পারে না। আর আগুন হয়া উঠার পরে আমরা খেয়াল করতে পারি যে, এইটা কোন স্পার্কটা থিকা আসছিল।

এর কারণ আমার কাছে মনে হইছে, সবকিছুতেই একটা টাইম লাগে, অই সময়টা দিতে হয়।

এইরকম না যে, ইয়াং বয়সে কেউ কোনকিছু জানতে পারেন না, কিন্তু জানার পরেও কনফার্ম হওয়ার লাইগা নিজের সময় দিতে হয়, অনেককিছু ক্রসচেক কইরা দেখতে হয়, মিলাইতে হয়। যেই কারণে টাইম লাগে। বীজ থিকা একবারে বটগাছ হয়া যায় না, চারাগাছ থিকা বটবৃক্ষ হইতে যত টাইম লাগে, বীজ থিকা একটা চারাগাছ হয়া উঠতে তার চাইতে বেশি টাইম লাগে। হিউম্যান নলেজ বা আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গাগুলাও কম-বেশি একইরকম। যার ফলে, ২০-২২ বছরের জ্ঞানী-মানুশ আমরা খুবএকটা দেখি না। যদিও অই বয়স থিকাই জানার রাস্তাটার শুরু হয়।

ইয়াং ইন্টেলেকচুয়ালস বইলা কিছু হয়-না না, বরং ইয়াং বা তরুণ শব্দটাই মোটামুটি এক ধরণের ইম-ম্যাচিউরিটির ঘটনা হয়া আছে আমাদের ধারণায়; যাদেরকে হাততালি দিতে হবে, ‘জায়গা’ কইরা দিতে হবে বা ছাইড়া দিতে হবে, ‘এসেছে নতুন শিশু’-টাইপ। 🙁 তো, ব্যাপারগুলা এইরকম না আর কি! বয়সে জুয়ান বইলা কেউ নতুন-চিন্তা করে না। বা নতুন-চিন্তাগুলা এমনিতেই তার জায়গা কইরা নিতে থাকবে না, বরং নতুন-চিন্তাগুলারে কেউ না নিতে পারলে চিন্তার জায়গাতে ইনভ্যালিড হইতে থাকবে তার পজিশন, সে বুড়াই হোক বা জুয়ান।

তবে বয়স কম থাকলে নতুন-চিন্তা নিতে সুবিধা বেশি হয়, কারণ এর আগের যা আছে – অনেক দিনের পুরান জিনিস যেইরকম পুরান, ইমিডিয়েট আগের জিনিসও তা-ই। পারসোনাল এটাচমেন্ট, আলগা প্রেজুডিস কম থাকে, যেইটা বয়স বাড়তে থাকলে বাড়তে থাকে, দিন দিন। যেই আইডিয়াগুলা এতোদিন গেদার করা হইছে, অইগুলারেই আল্টিমেট মনে হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে।

আরেকটা জিনিস হইতেছে, কথার মানে খালি কথা না, একটা কোন কাজ বা কনটেক্সট দিয়া সেইটা পরমাণ দেয়ারও দরকার পড়ে। মানে, একজন মানুশের কথারে তার কাজের বা লাইফের বেসিসেই রিড করি আমরা, যখন কারো বয়স কম থাকে, সেই মিনিংটাও তৈরি হইতে পারে না আসলে পুরাপুরি। যার ফলে, কথাগুলা ইম্পর্টেন্ট হইলেও মিনিংফুল হয়া উঠতে টাইম লাগে। মানে, এইরকম কিছু জিনিস এইখানে আছে।…

ডিসেম্বর ১২, ২০২২

– পলিটিক্যাল মুভমেন্ট ও কালচারাল আইডেন্টিটির লেনদেনের জায়গাটা নিয়া –

১.
১৯৪২-৪৩ সালে যারা কলকাতা-তে থাইকা পাকিস্তান সার্পোট করছিলেন, তারা মুসলিম লিগ না করলেও আসলে মুসলিম লিগই হইছেন। এমনকি যদি সার্পোট না-ও কইরা থাকেন। (এ কে ফজলুল হক-রেও মুসলিম লিগেই জয়েন করা লাগছিল।) একইভাবে ১৯৭১-এ যারা বাংলাদেশ চাইছেন, মুক্তিযুদ্ধ করছেন, উনারা ন্যাপ, কমিউনিস্ট-পার্টি, এমনকি ভাসানীর লোক হইলেও উনারা আওমি লিগ হিসাবেই আইডেন্টিফাইড হইছেন। আওমি লিগ করা লাগে নাই।

আজকে, ২০২২ সালে, বাংলাদেশে আপনারে আলাদা কইরা বিএনপি করা লাগবে না। বাকশাল-বিরোধি কথা-বার্তা কইলেই আপনারে বিএনপি বানায়া দেয়া হবে। বিএনপি একটা দল না, এখনকার কনটেক্সটে একটা পলিটিক্যাল পজিশন আসলে।

২.
তো, এই পলিটিক্যাল পজিশনগুলা আর খালি পলিটিক্যাল পজিশন হিসাবে থাকে নাই, কালচারাল আইডেন্টিটি হিসাবেও এমার্জ করছিল।
১৯৪২-৪৩’র দিকেই নজরুল, জসীমউদ্দিন, ফররুখ আহমেদরা কলকাতা-বেইজড বাংলা-সাহিত্যে আর ইনক্লুড হইতে পারেন নাই। বুদ্ধদেব বসু’র বাংলা-কবিতার এন্থোলজিতে মুসলমান-কবি হিসাবে নজরুল (পরের এডিশনে সিলি একটা কারণ দেখায়া বাদ দিছেন) আর জসীমউদ্দিনরে খালি নিতে পারছেন, কারণ উনাদের কবি-পরিচয় তৈরি হইছিল কলকাতাতে। এরপরে পাকিস্তানে যেই বাংলা-লিটারেচার হইছে, সেইটা একটা “আলাদা ধারা”-ই 🙂 হয়া রইছে।

খেয়াল কইরা দেখবেন, অই সাহিত্য-ঘটনাগুলারে যেমন পাকিস্তানি-বাংলা বানানো যায় নাই, সেইটা ইন্ডিয়ান-বাংলার কাছে সারেন্ডারও করে নাই।

পলিটিক্যালি বাংলাদেশ আইডেন্টিটি হওয়ার ভিতর দিয়া অই কালচারাল আইডেন্টিটিটা আরো পোক্ত হইছে আসলে। যেইখানে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ ফিট-ইন করে না। (ইন ফ্যাক্ট ন্যাশনালিস্টিক ন্যারেটিভটাই তো কাজ করে না।) এই জিনিসটা ১৯৭১-এ স্পষ্ট হইলেও, এর ইন্টেলেকচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গাটা আমরা ক্লিয়ার করতে পারি নাই।

এইটা নেসেসারি না যে, যে কোন পলিটিক্যাল মুভমেন্টই নতুন একটা কালচারাল আইডেন্টিটিরে তৈরি করবে, কিন্তু পুরান কোন কালচারাল আইডেন্টিটিরে বেইজ ধইরা নতুন কোন পলিটিক্যাল মুভমেন্টের জায়গারে তৈরি করা যাইতে পারে বইলা আমার মনেহয় না।
১৯৯০-এর সালে পলিটিক্যাল মুভমেন্টের ভিতর দিয়া ডেমোক্রেটিক কালচারের আইডেন্টিটিটা তৈরি হয় নাই।

তো, এখনকার বাকশাল-বিরোধি পলিটিক্যাল মুভমেন্টের জন্য কালচারাল ম্যাটেরিয়াল দরকার – ব্যাপারটা এইরকম না, বরং বাকশালি-কালচারের, বাটপার-বিপ্লবি, নন-ডেমোক্রেটিক, লিনিয়ার ফর্মের ‘বাঙালি-জাতীয়তাবাদের’ ধারণা নিয়া ডেমোক্রেসির মুভমেন্টের কালচারাল বেইজটারে ধরা যাবে না। এই আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা একটা কালচারাল জিনিস না, পলিটিক্যাল মুভমেন্টের বেইজটারে ফিল করতে হইলেও দরকারি একটা ঘটনা।

ডিসেম্বর ১৩, ২০২২

ধরেন, আপনার বাসার চাকর আপনার কথা শুনে না, কোন কথা কইতে গেলেও আপনারে বাইন্ধা পিটায়! তো, বাসার পাশের লোকের সার্পোট আছে বইলা এইটা কি ঘটে, বা ঘটতে পারে কোনদিন? পুরা একটা বিল্ডিংয়ের সব ফ্যামিলির সার্পোট পাইলেও কি এইটা হইতে পারে?

মানে, সেইম জিনিসটাই একটা দেশের ব্যাপারে ভাবেন। ইনফ্লুয়েন্সের লেভেল হয়তো একটু বেশি হইতে পারে, কিন্তু খালি আরেকটা দেশ সার্পোট দিতেছে বইলা কি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে কোন গর্ভমেন্ট, যদি সে অবৈধ-সরকার না হয়? বা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল কইরা রাখলেও কতদিন করতে পারে আসলে?

ততদিনই পারে, যতদিন অই দেশের মানুশ এই জবর-দখলের এগেনেস্টে না দাঁড়াইতে পারে। এমনকি যদি মাইর খাইতে থাকে, তখন অন্য দেশ বড়জোর কইতে পারে যে, “মাইরেন না…” নরমাল সিচুয়েশনে এর চে বেশি আর কতদূর পর্যন্ত কি হইতে পারে! (এইটা অবৈধ-সরকাররের লোকজনও জানেই।)

তো, এই দেশ বিরুদ্ধে চইলা গেছে, অই দেশ লগে আছে, এই দেশ লোন দিতেছে না, অই দেশ দিবে – এইগুলা ফাও-আলাপ না, কিন্তু সেকেন্ডারি ঘটনা। বাকশালি-মিডিয়ার কাজ হইতেছে, এই সেকেন্ডারি আলাপগুলা দিয়া স্পেইসটারে ভরাট কইরা রাখা।

আপনার লাইফ যদি মিজারেবল হয়, আপনার চাকর যদি আপনারে মারে, তাইলে সেইটা সবচে আগে আপনার সমস্যা, আপনারে ঠেকাইতে হবে সেইটা। তারপরে সেইটা অন্যদের কনসার্ন।

এইটাও ট্রু যে, দুনিয়াতে কোথাও যদি কোন অন্যায়- অত্যাচার চলতে থাকে, সেইটা খালি একটা দেশের সমস্যা হিসাবে থাকে না, সবাই তখন এই নিয়া ওরিড হইতে থাকে, একটা লিমিটের পরে। বাংলাদেশের ব্যাপারে এই ঘটনা ঘটছে। অন্য দেশগুলা টের পাইতেছে এইখানে বড় কোন অন্যায় হইছে, হইতেছে।

কিন্তু তারা আইসা বাংলাদেশের মানুশরে বাঁচায় দিবে – এইটা খালি ভুল-চিন্তা না, ঘটনাগুলারে মিস-লিড করার ঘটনাও আসলে। বাংলাদেশের এখনকার পলিটিক্যাল কনটেক্সটে এইটা গ্রসলিই ঘটতেছে বইলা আমি মনে করি।

ডিসেম্বর ১৪, ২০২২

১৯৭১ সালের ১৪ ই ডিসেম্বরে যাদেরকে ধইরা নিয়া যায় নাই, খুন করা হয় নাই, তারা ‘বুদ্দিজিবি’ না – এই ধারণাটাও ঠিক না আর কি!

মানে, এইটা কেউ বলে না অবশ্যই। কিন্তু বলতে বলতে এইরকম একটা অবস্থাও মেবি তৈরি হইছে, বা হইতে পারে যে, উনারাই যেন ছিলেন ১৯৭১ সালের ইন্টেলেকচুয়াল, বাংলাদেশে, যারা অইদিন খুন হইছিলেন! (এইটা তো খুব মন-খারাপ করার মতো ঘটনাই।) মানে, লিস্ট’টা যে এর মধ্যে লিমিট করা যায় না – এইটাও মনে রাখাটা দরকার আমাদের।

যুদ্ধের সময় কোনভাবে বাঁইচা যাইতে পারছিলেন বইলা কেউ (যেমন ধরেন খান আতাউর রহমান, আরো অনেকে থাকতে পারেন) রাজাকার না, বা খারাপ-ইন্টেলেকচুয়াল না আসলে। এইটা কেউ ভাবেন – এইটা আমার ক্লেইম না, কিন্তু না-বলার ভিতর দিয়াও এই জিনিসটা কিছুটা আছে মনেহয়, আমাদের চিন্তা-ভাবনায়।

Leave a Reply