পাবলিক টয়লেটের সেক্যুলারিজম নিয়া

সেক্যুলার শিব্রামের একটা জিনিস ফেসবুকে নড়াচড়া করতে দেইখা জিনিসটা আবার মনে হইলো। এর আগে ঢাকায় সিটি কর্পোরেশন ইলেকশনের সময় জিনিসটা মনে হইছিল। (ইলেকশন একটা হইছিল কিন্তু কয়েকমাস আগে 🙂 )

তো, শিব্রাম কইছেন, মসজিদ-মন্দির না বানায়া টয়লেট বানাইতে। আর কোন এক মেয়র ক্যান্ডিডেট কইছিলেন, উনি ঢাকা শহরে আরো পাবলিক টয়লেট বানাইবেন। তখন আমার মনে হইছিল, ঢাকা শহরে তো অনেক পাবলিক টয়লেট অলরেডি আছে, অনেক মসজিদে, জাস্ট ফরমালাইজ করা হয় নাই। (ঢাকা শহরে মসজিদের নাম্বারটা কেউ জানলে বইলেন তো, এইরকম ছোটখাট জিনিসের ডেটাও দেখেন ভিজিবল না আমাদের কাছে।)

আর এইরকম কোন মসজিদ পাওয়া যাইবো না যেইখানে অযু করার পাশে পেশাব/পায়খানা করার কোন ব্যবস্থা নাই। টয়লেট অনেক সময় তালা মারা থাকে, কিন্তু পেশাব করার জায়গা খোলা-ই থাকে, সবসময়, বেশিরভাগ মসজিদে। আর কেউ ঢুকলে কখনো কাউরে জিগাইতে দেখি নাই, যে হিন্দু না মুসলমান। (কিছু কিছু মসজিদে মহিলারাও যাইতে পারেন, কিন্তু নাম্বারটা মেবি কম-ই অনেক।)

মানে, সেক্যুলার পাবলিক টয়লেট কিন্তু অলরেডি মসজিদে এগজিস্ট করতেছে, কম-বেশি। আমরা ইউজও করতেছি, কিন্তু সেক্যুলার আইডিয়ার ভিতর দিয়া আমরা অইভাবে দেখতে পাইতেছি না।

২.
তো, আমার কথা ছিল এইরকম যে, মেয়র ক্যান্ডিডেট নতুন আরো পাবলিক টয়লেট না বানানির কথা কইয়া কইতে পারতেন, উনি প্রতিটা মসজিদে টয়লেট সাফ করার লাইগা, ক্লিন রাখার লাইগা মাসে ৫ হাজার টাকা কইরা চান্দা দিবেন; মসজিদ কমিটির লোকজন যদি পাবলিকের জন্য সবসময় টয়লেট খোলা রাখেন। এমনিতে তো রাখেনই, ব্যাপারটা জাস্ট ফর্মাল হইলো, ডোনেশনও পাইলেন, এইরকম। Continue reading

বুকোউস্কি’র কবিতা নিয়া

বুকোউস্কি’র কবিতা পড়তে গিয়া তিনটা জিনিস মনে হইছে।

পয়লা ব্যাপারটা হইতেছে, উনার বলা’টা; যেইসব জিনিস নিয়া উনি কবিতা লিখছেন। আমাদের মনে যেই একরকম ইনায়া-বিনায়া, পাতলা পর্দা দিয়া, ফুলে ফুলে টক্কর খাওয়াইয়া চুমা বুঝানো বা মিলিটারি বুট দিয়া পুতুল পাড়া দিয়া (ফানি) ‘নৃশংসতা’ মিন করার মতো ‘কবিতা’র বা ‘কাব্যিকতা’র ধারণা আছে, সেইগুলা কম বা নাই-ই এক রকম উনার কবিতায়। উনার কবিতা অনেকবেশি ডাইরেক্ট, হার্শ আর ‘রিয়েল-লাইফ’ ফিলিংসের ঘটনা।

এইটা ভালো বা খারাপ – এইরকম না, এইটা ‘কবিতা’র ধারণা বা এক্সপেরিয়েন্সটারে এক্সটেন্ড করে একভাবে। এইরকমভাবেই কবিতা লিখতে হবে – তা না; এইরকমভাবেও কবিতা লেখা যাইতে পারে তো! এইরকম।

দুসরা ঘটনা’টা হইলো, যেইভাবে উনি বলছেন, গল্প-কাহিনি’র মতো কইরা। উনার বেশিরভাগ কবিতাতেই কাহিনি আছে কোন, ঘটনা ঘটতেছে সবসময়, লাইভ একটা জিনিস। যার ফলে এক রকমের ‘লাইভ’ ব্যাপার আছে বইলা মনে হয়, মনেহয় কারেক্টারগুলা জ্যান্ত, বাঁইচা আছে, চলাফেরা করতেছে। উনার বলার বিষয়গুলারে এইরকম বলার ফর্মটা আরো ভিজিবল কইরা তুলছে।

তেসরা বা সবচে প্রমিনেন্ট মেবি যে, একজন স্ট্রং ইন্ডিভিজ্যুয়ালের প্রেজেন্স। একজন মানুষ আছেন, যিনি এই কবিতার কাহিনি’র ভিতরে আছেন, থাকতেছেন। উনার কবিতাগুলাতে এই ইন্ডিভিজ্যুয়াল হইতেছেন একজন গরিব বুড়া বেটা মানুষ। (কবিতা ইয়াং বয়সের জিনিস – এই ব্যাপারটাতেও একটু ধাক্কা লাগার কথা।) সোশ্যাল আইডেন্টিটি হিসাবে খুব রেসপেক্টবল কিছু না; বাদাইম্মা টাইপের একটা জিনিস। এইরকম একটা আইডেন্টিটি’র কারণেও মনে হইতে পারে যে, সোসাইটি জিনিসটারে উনি দেইখা ফেলতে পারতেছেন একভাবে, যেইটা সোসাইটির ভিতরের একটা আইডেন্টিটি থিকা দেখতে পাওয়াটা মুশকিলের হওয়ার কথা।

কিন্তু আমি ঠিক বুকোউস্কি’র কবিতার আইডিওলজি’র ভক্ত বা সাবস্ক্রাইবার না। একটু দূর থিকা রিড করতে পারছি, উনার কবিতাগুলা। Continue reading

‘নিভৃতচারী’ ব্যাপার’টা নিয়া

এই জিনিসটা নিয়া ইনবক্সে একটু কথা হইতেছিল Milu Hasan‘র লগে। ভাবলাম, পাবলিকলিও বলা যাইতে পারে কিছু জিনিস।

টোনের একটা ব্যাপার তো আছেই, যে – লাউড না এতোটা; হয়তো আপনি অনেক কথা-ই বলতেছেন, কিন্তু কাউরে খুঁচাইতেছেন না, বা হেব্বি ইমোশন দিতেছেন না বইলা মনে হইতে পারে এতোটা ইমপ্যাক্ট তৈরি হইতেছে না; এইরকম কিছু থাকতে পারে। কিন্তু এই জায়গাটারে ঠিক আমলে নিতে চাইতেছি না, এই পারসোনাল অ্যাট্রিবিউট বা ঢং’টারে।

বরং একটা উদাহারণের কথা বলি, ঢাকা ইউনির্ভাসিটির বাংলা ডিপার্টমেন্টের টিচার আহমদ শরীফ ‘মধ্যযুগের বাংলা কবিতা’ নামে একটা বই লিখছিলেন (নাম’টা কিছুটা ভুল হইতে পারে), অই বইয়ে লালন ফকির, শাহ আবদুল করিমসহ অনেকের লেখা রাখছেন ‘মধ্যযুগ’র উদাহারণ হিসাবে। মানে, উনি ‘টাইম’রে সেন্টার ধরেন নাই, একটা ‘টোন’রে (এতোটা অ্যাবস্ট্রাক্ট জিনিস না এইটা) ধরছেন; যেইটা স্পেইস/স্থান হিসাবে কোন পেরিফিরি’র বা গ্রামের ঘটনা, আর ক্লাস হিসাবে লোয়ার ক্লাসের জিনিস।

তো, একইরকমের ঘটনা ‘নিভৃতচারী’র ব্যাপারেও কিছুটা ঘটে মনেহয়। যেমন ধরেন, এই যে লেখাটা আমি লিখতেছি – এইটা তো ‘নিভৃতচারী’ একটা জিনিস হইতেছে 🙂 , এখন এই লেখা যদি ফেসবুকে না ছাপায়া ‘দৈনিক আজাদী’তেও ছাপাই (অন্য সব অর্গানাইজড মিডিয়ার কথা বাদ-ই দিলাম) কিছুটা লাউড মনে হইতে পারবো তো তখন! স্পেইসের কারণেই। ধরেন, বাংলাবাজারের গলিতে চা খাইতে খাইতে কথা-বলাটা তো ‘নিভৃতচারী’ ঘটনা, বাংলা একাডেমির স্টেইজে গিয়া কথা বলার চাইতে। এইরকম।

ব্যাপারটা এইরকম না যে, অর্গানাইজড মিডিয়ার স্পেইসটা বাকি সবকিছুরে সাপ্রেস কইরা রাখতেছে, সেইটা তো একভাবে রাখতেছেই; তার বাইরে আমাদের পারসেপশনের প্যাটার্নটাও আছে এইখানে; কারণ যেইটা আপনার সামনে হাজির হইতেছে, সেইটাই ‘রিয়ালিটি’ হয়া উঠতে পারতেছে। আপনি চাইলেও সেইটারে বাদ দিতে পারবেন না, যখন আপনার চারপাশের মানুশ-জন এইটাতে সাবস্ক্রাইবড হয়া আছে।… মানে, আমরা যে অ্যাপিয়ারেন্সের ভিতর দিয়া রিয়ালিটি’রে কনজিউম করতেছি, সেইটা এই ‘নিভৃতচারী’ ধারণাটাতে কন্ট্রিবিউট করতেছে একভাবে।

Continue reading

যে কোন ভাষাতেই ভালো লেখক তো দুই-চাইরজনের বেশি নাই

আইজ্যাক বাশিভিস সিঙ্গার ইয়েডিশ ভাষাতে লেখেন, এই ভাষাতে কম-বেশি ১৫ লাখ লোক কথা কয়, দুনিয়ায়। মানে ধরেন, ঢাকা শহরের রামপুরা টু নদ্দা এলাকার লোকেরা এর চে বেশি বাংলা-ভাষায় কিচির-মিচির করেন মেবি, ডেইলি।

তো, এক ইন্টারভিউয়ার উনারে জিগাইতেছিলেন, ইয়েডিশ ভাষা’তে তো ভালো রাইটার খুববেশি নাই! উনি কইলেন, হ, দুই-চাইরজন আছে; কিন্তু যে কোন ভাষাতেই ভালো লেখক তো দুই-চাইরজনের বেশি নাই।

উনার কথা আমার কাছে সত্যি বইলা মনেহয়।

তো, অন্য ভাষাগুলাতে যেইটা আছে, অনেক অ্যাভারেজ রাইটার আছেন। এই অ্যাভারেজ রাইটার’রা সাহিত্য-ভাষা’রে বাঁচায়া রাখেন। এই অ্যাভারেজ রাইটার’রা জরুরি – এমন কথা উমবের্তো একোসহ আরো অনেকে কইছেন।

কিন্তু কেন জরুরি? আমার ধারণা, উনারা একটা ইকো তৈরি করতে পারেন, একটা এক্সটেনশন করতে পারেন – গ্রেট রাইটারদের; এই ইকো’র কারণে, এক্সটেনশনের কারণে ব্যাপারগুলা সোসাইটিতে ছড়ায়া পড়তে পারে, ধীরে ধীরে একসেপ্টেড হইতে পারে।

দুই-চাইরজন রাইটার দিয়া কনটেক্সট’টা তৈরি হয় না। অ্যাভারেজ রাইটার’রা এই কনটেক্সট বা ‘সাহিত্যের টেস্ট’টাতে কন্ট্রিবিউট করেন।… Continue reading

ফিকশন: মুজিবর্ষের গল্প

[ভাবতেছি, এই বছরে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে লোকমুখে চালু থাকা কিছু কাহিনি বা মিথ কম্পাইল করবো। মুশকিল হইলো, এইগুলারে ‘গুজব’ বইলা আইডেন্টিফাই করলে বিপদে পইড়া যাবো আর কি! 🙁

ফিকশন বলা’টা মেবি বেটার। 🙂

মানে, কোন অথেনটিসিটির ক্লেইম এইখানে নাই। শুনছি, বা লোকজন বলাবলি করে – এইরকম জিনিস, মোস্টলি।]

~ ২০ টাকা কেমনে ১০ টাকা হইলো? ~

স্বাধীনতার পরের ঘটনা, ১৯৭২ সালের দিকের কথা।

বাংলাদেশের অনেক মানুশের কাছে শেখ মুজিবুর রহমান খালি দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী না, খুবই আপন-জন, নিজের আত্মীয়-স্বজনের মতন। তখনকার দিনে, মানুশ তার আপনজন, আত্মীয়স্বজনদের জন্য ফিল করতো অনেক, ফিল করাটারে ভিজিবল করতে চাইতো, ভালো-মন্দ কিছু দিতে চাইতো। (এখনো আছে তো কিছু, এই অভ্যাস।)

তো, মৈমনসিংহের এক সব্জি-চাষি’র ক্ষেতে অনেক সব্জি হইলো আর সে শেখ মুজিবের খুব ভক্ত ছিল। তার মনে হইলো, শেখ মুজিব’রে এই ভালো সব্জিগুলা দেয়া দরকার, আর এই উছিলায় উনার লগে দেখাও করা হইলো! এই ভাইবা, একদিন ভোরবেলা, বউ-বাচ্চার কাছ থিকা বিদায় নিয়া, একটা খাঁচিতে অনেকগুলা টাটকা সব্জি মাথায় নিয়া, ট্রেনে সে ঢাকার দিকে রওনা দিলো। সবাইরে কইলো, “শেখ মুজিবের লগে দেখা করতে যাইতেছি! উনার লাইগা আমার খেতের সব্জি নিয়া যাইতেছি!”

সকালবেলা আইসা সে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে পৌঁছাইল। কিন্তু বাড়ির ভিতরে তো আর ঢুকতে পারে না, গার্ড আটকায়া দিছে। শেখ মুজিব তো আর খালি শেখ মুজিব না, দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রাইম মিনিস্টারও তো তখন।

কিন্তু দেশের সিকিউরিটি এখনকার মতন এতো কড়া ছিল না। বাড়ির সামনে খাঁচি-ভর্তি সব্জি নিয়া বইসা থাকতে দেইখা একজন তারে জিগাইলো, কি করতেছে সে এইখানে বইসা? তখন সে কইলো, মৈমনসিংহ থিকা শেখ মুজিবের লাইগা ভালোবাইসা খেতের সব্জি নিয়া আসছে সে; যদি শেখ মুজিব তার খেতের সব্জি একটু তরকারি রাইন্ধা খান, তাইলে তার জীবনে আর কোন চাওয়া-পাওয়া থাকবো না।

অই লোক, আওয়ামী লীগেরই কেউ, শেখ মুজিবের বাসায় নিয়মিত যাওয়া-আসা করেন, গার্ড’রে বইলা দিলেন, যাইতে দিতে। দেশের মানুশ যদি শেখ মুজিবের লগে দেখা করতে না পারে, তাইলে কে করবে!

মৈমনসিংহের সব্জি-চাষি তো খুশির চোটে দৌড়ায়া দুইতলায় উইঠা গেল। বসার রুমে গিয়া বসল, সব্জি’র খাঁচি নিয়া। Continue reading