জহির রায়হান

গতকালকে (৩০শে জানুয়ারি) ছিল জহির রায়হানের (১৯৩৫ – ১৯৭২) অফিসিয়াল মৃত্যু দিবস। উনারে আমার পছন্দ উনার এডাপ্টিবিলিটির কারণে; উনি উনার আর্টের জায়গাতে ফেক্সিবল হইতে পারছেন; প্রথমে আর্ট-ফিল্ম বানাইছেন, পরে বাণিজ্যিক উর্দু সিনেমা (সঙ্গম) বানাইছেন, রূপবানের পরে ফোক সিনেমা (বেহুলা) বানাইছেন, বাংলাদেশে ফিল্ম বিজনেসটারে অনেকটাই বুঝতে পারছিলেন, ইনভেস্ট করছেন; সামাজিক এবং পলিটিক্যাল সিনেমা বানাইছেন। মানে, ছড়াইতে পারছেন একভাবে।

উনারে নিয়া অনেকে অনেক কথা কইছেন, উনি অনেক বড় ফিল্ম-মেকার ছিলেন, রাইটার ছিলেন… কিন্তু উনার সিগনিফিকেন্স নিয়া আমার ধারণা কথা খুব কম হইছে; যে, কেন উনি গ্রেট ছিলেন? কোন জায়গাটারে উনি নতুনভাবে আবিষ্কার করছিলেন?… এইরকম আইডেন্টিফিকেশনগুলা কম, বা এখনো বলা’টারে ‘গুনাহ’ বইলা মনে করতে পারি মনেহয় আমরা।

তো, আমি এর বাইরেই মোটামুটি আরেকটা জিনিস নিয়া কথা বলতে চাইতেছি। কয়দিন আগে Ibrakor Jhilli একটা লেখা লেখছেন, ‘রিডিং বিয়ন্ড দ্যা লাইনস’ নামে। (লেখাটার লিংক কমেন্টে দিতেছি।) অই লেখাটার প্রপোজিশনটারে কেমনে এপ্লাই করা যাইতে পারে, তার একটা উদাহারণ হিসাবে দেখতে পারেন। যে, আর্ট জিনিসটা বাইরের কোন ঘটনা না; বরং লাইফের লগে বা অন্য সব আর্টের লগেও এইটা কেমনে কানেক্টেড বইলা রিড করি আমরা।

জিনিসটা ফার্স্ট মনে হইছিল, জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ (১৯৬৬) সিনেমাটা দেখতে গিয়া। অই সিনেমাতে উনার ফার্স্ট ওয়াইফ সুমিতা দেবী (১৯৩৬ – ২০০৪) অভিনয় করছিলেন দেবী মনসার রোলে। সুমিতা দেবী, হেনা ভট্টাচার্য, নিলুফার বেগম’রে (এই তিন নাম ছিল উনার) বিয়া করেন ১৯৬০ সালে, মগবাজার কাজী অফিসে, কিন্তু জানাজানি হয় মেবি ১৯৬২ সালে আর একলগে থাকতে শুরু করেন, ১৯৬৩/৬৪’র দিকে। আর উনার সেকেন্ড ওয়াইফ সুচন্দা (১৯৪৭) ছিলেন বেহুলার রোলে। শ্যুটিং চলার সময়ে বা তার আগেই মেবি সুচন্দার লগে উনার রিলেশন শুরু হইছিল। আর সিনেমা রিলিজ হওয়ার পরে সুমিতা দেবীর লগে থাকা ছাইড়া দেন। অফিসিয়ালি ডিভোর্স মনেহয় হয় নাই।…

তো, এই ইনফরমেশন যদি মাথায় রাখেন, দেখবেন ক্যামেরা কি সুন্দর কইরা সুচন্দা’রে দেখাইতে চাইতেছে। বেহুলা’র শুরু’র গানটাই সুচন্দার রূপ বর্ণনা এবং তা দেখানোর ভিতর দিয়া শুরু হয়। মানে, সুচন্দা আর জহির রায়হানের মধ্যে তখন প্রেম চলতেছে, এই ইনফরমেশন বেহুলা সিনেমাটারে দেখার ব্যাপারে এফেক্ট করার কথা, কিছুটা হইলেও।

এইখানে আবার আরো কিছু ইনফরমেশনের কথাও বলা হয় না। বেসিক্যালি ৩টা ইনফরমেশনের কথা আমি বলতে চাইতেছি। তিনটা ইনফরমেশনই আছে সুমিতা দেবী’র “জীবন নদীর তীরে” নামে লেখাটাতে; যেইটা উনার বর্ণনায় উনার ছোট ছেলে অনল রায়হান লেখছিলেন; সাপ্তাহিক বিচিত্রার ঈদ সংখ্যা ১৯৯১’তে ছাপা হইছিল। পরে অনুপম হায়াৎ উনার “চিত্রপরিচালক ও তারকাদের আত্মকথা” বইয়ে (৩৪- ৫৭) রাখছেন। ইনফরমেশনগুলা অইখান থিকা নেয়া।

এক নাম্বার ইনফরমেশন হইলো, বিয়ার পরে, মুসলমান হওয়ার পরে সুমিতা দেবী’রে অভিনয় ছাইড়া দিতে হইছিল। কারণ উনার শ্বশুর এবং জহির রায়হানের আব্বা “…ছিলেন একজন আলেম মানুষ”। সুমিতা দেবী’রে দুই বাচ্চাসহ জহির রায়হান বিয়া করছিলেন আর বিয়ার পরে তারে নিয়া বাপের বাড়িতে উঠছিলেন। ১৯৬৪ সালের “সঙ্গম” সিনেমার পরে সুমিতা দেবী আর কোন সিনেমাতে অভিনয় করেন নাই, এর পরে জহির রায়হানের বেহুলাতেই অভিনয় করছিলেন, ১৯৬৬ সালে।

তো, জহির রায়হান এই ব্যাপারে সুমিতা দেবীরে কোন হেল্প করেন নাই। বরং অই সময় আরো একটা বাজে কাজ উনি করছিলেন। “জহির একদিন আমাকে এ বাড়ি থেকে চলে গিয়ে অন্য কোথাও একটা বাড়ি করে থাকতে বলে।… আমি প্রথমে রাজী হচ্ছিলাম না দেখে সে বিরক্ত হয়ে জানায় যদি আমি অন্য কোথাও বাসা ভাড়া না করি তাহলে সে কবরীকে বিয়ে করে ফেলবে।… জহির আমাকে বারণ করেছিলো, বাড়ির লোকেরা যেন আমার চলে যাওয়ার মূল কারণটা জানতে না পারে। ফলে, শ্বশুর বাড়ির প্রত্যেকেই ধারণা করেছিল যে আমি স্ব-ইচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। ঐ সময়টাতে আমাকে নিদারুণ আর্থিক কষ্ট ভোগ করতে হয়। আমি জানতাম জহির আসবে না। সে আসেওনি।”

তো, কবরী’রে বিয়া করতে পারেন নাই জহির রায়হান, বরং কবরী’র হাজব্যান্ড উনার নামে মামলা করার কারণে বরং তারে ঝামেলায় পড়তে হইছিল। এইটা হইতেছে সেকেন্ড ইনফরমেশন। জহির রায়হান কবরীর প্রেমে পড়ছিলেন – এইটা না; উনি সুমিতা দেবীর ক্যারিয়ার শেষ কইরা দিছিলেন। দুইটা বাচ্চা নিয়া চলাফেরা করার মতো টাকা ছিল না বইলা “চরিত্রাভিনয়ে কাজ করতে” শুরু করলেন তখন। “নায়িকা জীবনের সমাপ্তি ঘটে আমার এভাবেই, অতি দ্রুত।”

জহির রায়হান আবার সুমিতা দেবী’র কাছে ফিরা আসেন। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই সুচন্দার লগে উনার প্রেম শুরু হয়। সুমিতা দেবী’র বান্ধবী রাণী সরকার জহির রায়হানের এই কাজের নিন্দা করেন বইলা জহির রায়হান রাণী সরকার’রে পরে আর কোন সিনেমাতে কোন কাজে নেন নাই। এইটা হইতেছে, থার্ড ইনফরমেশন।
যে, পারসোনাল লাইফে জহির রায়হান প্রতারণা করতেন এবং প্রতিশোধ-পরায়ণ আছিলেন। সুমিতা দেবী অর্থনৈতিকভাবে খুবই বাজে অবস্থায় ছিলেন। অথচ জহির রায়হানের তখন টাকা-পয়সার তেমন কোন অভাব থাকার কথা না, কিন্তু উনি তেমন কোন হেল্প আসলে করেন নাই সুমিতা দেবীরে। ১৯৬০-এ জহির রায়হানের আগ্রহে এবং একরকমের জোরাজুরিতেই বিয়া’টা হইছিল। সুমিতা দেবীও কোন কমপ্লেইন করেন নাই জহির রায়হানের পরের ঘটনাগুলা নিয়া, জাস্ট মেনশন করছেন। কিন্তু এই ইনফরমেশনগুলারে যদি মাথায় রাখেন, জহির রায়হানের যে কোন কাজরেই কিছুটা হইলেও একটু ‘প্রতারণা-মূলক’ ভাবতে পারার কথা মনেহয় 🙂 যেই সন্দেহ, আমার ধারণা, বাংলাদেশের আইডিয়ালিস্টরা করেনও মাঝে-মধ্যে, কিন্তু ভাবের মূর্তি ভাইঙ্গা যাবে বইলা মুখ ফুইটা বলতে পারেন না। স্যাড ঘটনাই এইটা। Continue reading

The People v. O. J. Simpson নিয়া কয়েকটা কথা

১. এলান বাদিউ কইছিলেন এই কথা যে, কোথাও কোন জাস্টিস হইলে সেইটার বুঝার উপায় না থাকলেও, কোথাও কোন ইনজাস্টিস বা অন্যায়-অবিচার হইলে সেইটা টের পাওয়া যায়; লোকজনের একটা অসম্মতি, একটা রেজিসট্যান্স থাকে। তো, ও.জে. সিম্পসন’রে যখন গ্রেফতার করতেছিল পুলিশ, তখন ব্ল্যাক লোকজন এর প্রতিবাদ করতেছিল। আবার সে যখন খালাস পাইলো মামলায় হোয়াইট লোকজন তার বাড়ির পাশে রাস্তায় দাঁড়ায়া এই রায়ের প্রতিবাদ করতেছিল।

২. ব্যাপারটা এইরকম লিনিয়ার না যে, আমাদের সামাজিক বাস্তবতা আমাদের পারসোনাল লাইফ’রে এফেক্ট করে, বা এর উল্টা’টা যে আমাদের পারসোনাল লাইফ-ই সামাজিক বাস্তবতাগুলা তৈরি করতেছে; মানে, এইগুলা সত্যি কথা-ই; কিন্তু সত্যি জিনিসটারে এর মধ্যে আটকায়া ফেললে মুশকিল হবে। বরং আমার প্রস্তাব’টা হইতেছে এইরকম: সমাজে যখন এক ধরণের অন্যায়-অবিচার লিমিট ছাড়া, ভয়াবহরকম ভাবে হইতে থাকে, তখন কোন না কোন পারসন ভিক্টিম সাইজা এর বেনিফিট নিতে পারে; একটা পর্যায়ে গিয়া সমাজের অন্যায়-অবিচার ব্যক্তির পর্যায়ে গিয়া জায়েজ হয়া যায়।

ও. জে.’র ব্যাপারটাতে ধরেন, বুঝা যায় যে, খুন দুইটা সে-ই করছে; কিন্তু আম্রিকান সমাজে ব্ল্যাক পিপলদের প্রতি হেইট্রেট এই জায়গাতে আছে, এই পরিমাণ হইছে যে, সোসাইটি অন্ধ হয়া গেছে এই জায়গাটাতে; ব্ল্যাক পিপল’রা খুন করতে পারে না – তা না, বরং একজন ব্ল্যাক লোকরে কন্সপিরেসি কইরা ফাঁসানো’টা খুবই কমন ব্যাপার। আমাদের, বাংলাদেশের সমাজেও দেখবেন, কোন ওয়াইফ, প্রেমিকা যদি বলেন উনার জামাই, প্রেমিক উনারে মাইর-ধর করছে, টর্চার করছে – সেইটারে কোন প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস না করার কোন কারণ নাই, কারণ এইটা ঘটে; তো, কোন পার্টিকুলার কেইসে কোন মেয়ের পক্ষে ‘ভিক্টিম রোল’ প্লে করাটা খুব সহজেই বিশ্বাস করার মতো একটা ঘটনা। সমাজে যদি ‘নারী-নির্যাতনের’ ঘটনা না থাকতো বা কম থাকতো, পাবলিক বিশ্বাসও কম করতো। এইরকম একটা কানেকশন আছে।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আমাদের বিচার সমাজ-বাস্তবতার উপ্রে নির্ভর করে। আইন-কানুন তো আছেই, কিন্তু বিচার বেশিরভাগ সময়ই সোশ্যাল পারসেপশনের, রিয়ালিটির ঘটনা।

৩. এই কারণে জুরি সিস্টেম’টা ভালো। আমি ভাবতেছিলাম, বাংলাদেশে যদি এই জুরি সিস্টেম থাকতো আদালতের বিচারে, তাইলে কি হইতো? জুরি’রা ঘুষ-টুষ খায়া বারোটা বাজায়া দিতো হয়তো, পারসোনাল রেষারেষিরেও কাজে লাগাইতো হয়তো; কিন্তু তাইলেও ভালো হইতো আসলে। পাবলিক’রে যতো বেশি সম্ভব আদালতের বিচারের লগে রিলেট করা দরকার। তাইলে সমাজের যেই বিচার সেইটার নমুনা আমরা পাইতে পারতাম, খারাপ হোক আর ভালো হোক। আমরা মেবি বুঝতে পারতাম, এই সমাজ কতোটা ভালো বিচার করতে পারে। এই অভ্যাস’টা দরকার আসলে। Continue reading

সংজ্ঞা দিয়া কোন জিনিস বুঝতে পারবেন না আপনি ঠিকঠাক, বরং উদাহারণ দিয়া বুঝতে পারবেন

Suits পছন্দ হওয়ার একটা কারণ হইতেছে ডায়ালগে একটু পরে পরে মুভি-কোটস ইউজ করে অরা। সিনেমাগুলা না দেখলে বা না জানা থাকলে সবসময় ‘ফান’টা টের পাওয়া যাবে না; কিন্তু খেয়াল করা যায়, মুভি বা আর্ট দিয়া যে লাইফ’রে ভালোভাবে বুঝি বা রিলেট করতে পারি আমরা।

যেমন সিজন ৭-এ অ্যালেক্স নামে হার্ভি’র এক ফ্রেন্ড জয়েন করে অর ল’ফার্মে; জয়েন করার পরেই বুঝে লুইসের কোন ঝামেলা আছে হার্ভির লগে। তো, একদিন বিয়ার বা কফি খাইতে খাইতে হার্ভি’রে জিগায়, ঘটনা’টা কি? হার্ভি হাসে, কয়, ব্যাপার’টা কমপ্লিকেটেড; লুইস লোক খারাপ না, হার্ভি’রে হেইট করে, আবার চায় হার্ভি তারে পছন্দ করুক, একটু উইয়ার্ড আছে সে কিন্তু ভালো ফ্রেন্ডই… মানে, বইলা বুঝাইতে পারে না; পরে কয়, আরে, অই সিনেমার অই কারেক্টার’টার মতো আর কি! তখন অ্যালেক্স সাথে সাথে বুঝতে পারে; আরে, আগে বলবা তো! এতো কথা বলার কি আছে, এইটা কইলেই বুঝা যাইতো! এখন তো ক্লিয়ার পুরা!…

মানে, সংজ্ঞা দিয়া কোন জিনিস বুঝতে পারবেন না আপনি ঠিকঠাক, বরং উদাহারণ দিয়া বুঝতে পারবেন। 🙂 আর্ট বা সিনেমা হইতেছে উদাহারণ’টা, লাইফের। বেটার ওয়ে, লাইফ’রে বুঝার, এক্সপ্লেইন করারও।
Continue reading

ইন্টেলেকচুয়াল ও এক্টিভিস্ট

ইন্টেলেকচুয়াল আর অ্যাক্টিভিস্টের কাজের একটা জায়গা খেয়াল করছি আমি, সেইটা হইতেছে, ইন্টেলেকচুয়াল হিসাবে আপনার কাজ হইতেছে চিন্তাগুলার মধ্যে যে ডিফরেন্স আছে, সেই জায়গাগুলারে নজরে আনা; কিন্তু এক্টিভিস্ট হিসাবে এই ডিফরেন্সের জায়গাগুলারে মাথায় রাইখাও কাজ করা দরকার মিল-এর জায়গাগুলা নিয়া।

যেমন ধরেন, উদাহারণ হিসাবে শাহবাগ-মতিঝিলের কথা মনে হইলো; যারা কম্পারেটিভলি ‘লিবারাল’ 🙂 ‘শাহবাগ’, তারা বলতেছিলেন, “ফাঁসি দিতে হবে”; আর যারা ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ 🙂 ‘মতিঝিল’, তারা বলতেছিলেন, “ফাঁসি দেয়া যাবে না”; কিন্তু কথা দুইটারে আক্ষরিক অর্থে নিলে খুবই ভুল হবে। দুই পক্ষই আসলে ‘ন্যায় বিচার’ চাইতেছেন। যেমন ধরেন, তারেক-মিশুক’রে মারলো যেই বাস ড্রাইভার (যদিও অই ড্রাইভার মারেন নাই আসলে), তারও ফাঁসি চাওয়া হইছিল তো… মানে, ‘ফাঁসি চাই’ এর মিনিং হইতেছে ‘বিচার চাই’; কিন্তু ‘বিচার চাই’ বললে ব্যাপারটা স্পষ্ট হইতে পারে না আসলে এতোটা। একইভাবে ‘ফাঁসি চাই না’ মানে এইটা না যে, ‘বিচার চাই না’; বরং বিচারের নামে প্রতিশোধ নেয়া হইতেছে, ‘ন্যায়বিচার’ হইতেছে না।…

তো, আমার ধারণা হইতেছে, বাংলাদেশে যদি কোন এফেক্টিভ এক্টিভিস্ট থাকতেন তাইলে এই ‘ন্যায়বিচার’ এর জায়গা’টাতে কাজ করতে পারতেন। (পলিটিক্যালি এই আওয়াজ যে উঠে নাই – তা না; কিন্তু ন্যায়বিচার যে কোন নিরপেক্ষতা না, বরং পলিটিক্যাল একটা ঘটনা, সেই আলাপ’টাই হইতে পারছে।) ‘ন্যায়বিচার’ এর তো ইউনিভার্সাল কোন সূত্র নাই, কিন্তু সবসময় কিছু প্রসেস ‘ন্যায়বিচার’ পাওয়াটারে সহজ করতে পারে। যেমন ধরেন, বাংলাদেশে এমন কোন আইন মনেহয় নাই যে ১০ হাজার বা ১ লাখ সাইন যদি নেয়া যায় কোন পিটিশনে, সেইটা পার্লামেন্টে বিল হিসাবে তোলা যাবে; অথচ এইরকম একটা আইন কিন্তু হইতে পারে!

যদি কোন আইন বদলাইতে চান, পার্লামেন্টের মেম্বার ছাড়া কেউ এইটা মনেহয় করতে পারবেন না বাংলাদেশে, এমনকি তারও বিল তুলতে হইলে তার দলের পারমিশন লাগবে মনেহয়; পাবলিক চাইলে নিজেরা নিজেদেরকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারবে, এইরকম কোন আইন নাই। তো, এইরকম একটা আইনের দাবি করাটা একটা স্টেপ হইতে পারে। জাস্ট উদাহারণ হিসাবেই বললাম।

Continue reading

আহমদ ছফা’র ইতিহাস বর্ণনা

আহমদ ছফা ১৯৬৭ সালে বিএ পাশ করার পরে দুই বছর সময় নিয়া ইতিহাসের একটা বই লিখছিলেন “সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস” নামে, যেইটা ১৯৭৯ সালে পয়লাবার ছাপা হয়। পরে ১৯৮৭ সালে বইটার সেকেন্ড এডিশন এবং ১৯৯৬ সালে প্রতিপক্ষ প্রকাশনা থিকা বইটার থার্ড এডিশন ছাপা হয়। তো, এই বইটার নাম খুব একটা শোনা যায় না, কারণ বই হিসাবে এইটার তেমন কোন সিগনিফেন্স নাই; মানে, বইটাতে আহমদ ছফা’র নিজের তেমন কোন বিচার-বিবেচনা নাই; যেইসব রেফারেন্স বই উনি ইউজ করছেন, সেইগুলার ন্যারেটিভটারেই উনি নিছেন। 
ফার্স্ট এডিশনের ফার্স্ট লাইনেই উনি বলছিলেন, “আমার যৌবন ধর্মের অপরাধের প্রমাণ এই গ্রন্থ।” তো, উনার এই লাইনরে ভুলভাবে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি, যেন উনি বইটারে বাতিল কইরা দিতে চাইতেছেন। কিন্তু আসলে, তা না; বরং দুইটা কারণে এই বইটা নিয়া উনি রিস্ক ফিল করতেছিলেন। পয়লা কারণ’টা বেশ ইন্টারেস্টিং, “এ রকম জমকালো বিষয়ে গম্ভীর একখানি কেতাবের লেখক জানলে লোকে আমার লেখা গল্প, উপন্যাস, কবিতা অন্যান্য রচনা পড়বে না। আমাদের দেশের পন্ডিতদের লেখার প্রতি সাধারণ মার্জিত রুচির পাঠকদের একটা ভীতি এবং একটা অনীহার কথা আমি জানতাম।” সাউন্ডস ফিমিলিয়ার? 🙂
মানে, আপনি ‘পন্ডিত’ বা ‘ইন্টেলেকচুয়াল’ হইলে ‘কবি-সাহিত্যিক’ হইতে পারবেন না। দুইটা দুই জিনিস। 🙂 এই ডরে উনি বইটা ছাপাইতে চাইতেছিলেন না। তো, দেখেন, এইটা কিন্তু আছেই; আহমদ ছফা যতোটা ইন্টেলেকচুয়াল হইতে পারছেন, ‘কবি-সাহিত্যিক’ কিন্তু হইতে পারেন নাই এতোটা! এই বইয়ের কারণে না, বরং আমরা আইডেন্টিটি হিসাবে “দুইটা দুই রকম” ভাবতে পারতেছি বইলাই। এই পারসেপশনের জায়গাটাতে আহমদ ছফা নিজেও সাবস্ক্রাইবই করতেন।… (বইলা রাখা ভালো, দুইটা একইরকম – এইটা আমার প্রপোজিশন না, বরং পারসেপশনগুলা কেমনে কাজ করে, সেইটার কথাই বলা।)
দুসরা জিনিস হইলো, থার্ড এডিশনের ভূমিকাতে, ১৯৯৬ সালে উনি বলতেছেন, এখন যদি বইটা লিখতেন তাইলে এইরকম ঘটনা-ওয়াইজ না লেইখা পারসন-ওয়াইজ লিখতেন। মানে, আরো টেরিবল ব্যাপার হইতো একটা! 🙁 উনি ইতিহাসরে দেখতেছেন ব্যক্তি’র ভুল আর সাহসের জায়গা থিকা, “সিপাহী যুদ্ধের আনুপূর্বিক ঘটনা বর্ণনা করার বদলে সিপাহী যুদ্ধের কতিপয় কুশীলবকে নিয়ে একটি ভিন্ন রকমের গ্রন্থ রচনা করতে চেষ্টা করতাম।…আজিমুল্লা, তাঁতিয়া টোপী, ঝাঁসির লক্ষীবাঈ, মাওলানা আহমদউল্লাহ… সামন্তবাদের জগদ্দল ঠেলে এ অসাধারণ মানুষ মানুষীরা যদি যথার্থ ভূমিকায় অভিনয় করতে পারতেন তাহলে এই যুদ্ধের ইতিহাস ভিন্নভাবে লিখিত হতো।” হয়তো সেইটা একটা ডকু-ফিকশন হইতো তখন। উনার ‘সাহিত্য করার’ জায়গা থিকা সেইটা ভালোও হইতো হয়তো। কিন্তু ইতিহাস হিসাবে আরো ট্রাশ একটা ব্যাপারই হওয়ার কথা; কারণ ব্যক্তির যে কোন ভূমিকা নাই – তা না, ইতিহাসের ঘটনাগুলা ব্যক্তির অ্যাক্ট দিয়া, চিন্তা দিয়া ইনফ্লুয়েন্সড হইছে বইলাই ব্যক্তির জীবনীই তো ইতিহাস না! বরং ইতিহাসরে কোন ধারণা’র জায়গা থিকা আমরা দেখতেছি, সেইটা জরুরি একটা জিনিস। আহমদ ছফা’র কাছে এই এক্সপেক্টশন করাটাও আসলে ঠিক না। কিন্তু উনার টেনডেন্সিটারে মার্ক কইরা রাখাটা দরকার, যাতে উনার ভুলগুলারে ‘সাহস’ বইলা রিপিট না করতে থাকি আমরা।

Continue reading