অন স্যাডনেস

ইন্ডিয়ার সদ্গুরু’র কিছু ভিডিও দেখছিলাম, কয়েক বছর আগে। অইখানে একটা ভিডিও’তে উনি বলতেছিলেন, কি হইছিল উনার সাথে, বা উনার কনশাসনেসের জায়গাটা কেমনে চেইঞ্জ হইছিল, একটা ঘটনাতে।

উনি ছিলেন একটা ছোট শহরের কন্টাক্টার। একদিন উনার কাজের জায়গা থিকা ফিরার পথে, মোটর সাইকেলে আসতে আসতেই ভয়াবহ রকমের খারাপ লাগতে শুরু করলো উনার। চোখ বাইয়া পানি নামলো। কানতেই থাকলেন। দুপুরের দিকের ঘটনা। তো, তখন বাড়িতে না গিয়া, লোকজন আড্ডা মারতে যায় বা স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা ডেটিং করতে যায়, এইরকম কোন পুরান দুর্গের পাশে গিয়া বইসা রইলেন। উনার কান্দা আর থামে না। সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে গেলেন। তখনো কানতেছেন। খাওয়ার টেবিলে বইসাও। খাইতেও পারতেছেন না। ফ্যামিলির সবাই তো অস্থির, কি হইছে! উনি নিজেও বলতে পারতেছেন না। কানতেই থাকলেন। ভিতরে কিছু একটা হইতেছিল, উনি নিজেও জানেন না। এইরকম অবস্থা মেবি তিন দিন চললো। পরে পরে ধীরে ধীরে শান্ত হইতে পারলেন। এইরকম।

মানে, একটা সাডেন স্যাডনেসের অ্যাটাক হইছিল উনার। উনার কথা-বার্তা খুব আধ্যাত্মিক – এইরকম কিছু মনেহয় নাই আমার, কয়দিন আগে দেখলাম বাংলাদেশ নিয়াও কথা বলছেন উনি; তো, কনশাসনেসের একটা লেভেল থিকা উনি কথা বলেন – যেইটারে ‘হায়ার গ্রাউন্ড’ বলা যায় মেবি।

তো, এইট ঘটনা না। আমি স্যাডনেসের জায়গা’টা নিয়া বলতে চাইতেছি। একটা ইউনিভার্সাল স্যাডনেসের একটা জায়গা আছে। যেমন ধরেন, ইশিগুরু’র ‘নেভার লেট মি গো’ – এইরকম একটা স্যাডনেসের জায়গা।

আরো দুয়েকটা ঘটনার কথা বলি। একবার টিভি’তে দেখছিলাম, একজন গায়ক আছেন নামকরা, সিলঅটি, সৈয়দ একরামুল ইসলাম (নাম’টা কিছুটা ভুল হইতে পারে, পরে কেউ মনে করায়া দিলে, ঠিক করে নিতেছি)। উনি হাছন রাজা’র গান গাইতে গাইতে এক কাহিনি বলতেছিলেন, কেউ একজন হাছন রাজার লগে দেখা করতে গেছুইন, আছরের ওয়াক্তে, গিয়া দেইখন যে, হাজন রাজা নামাজ পড়তেছেন, যখন উনি সিজদায় গেছুন, সিজদা থিকা তো আর ফিরেন না, সিজদায় পইড়াই কানতেই আছেন। কানতে কানতে মাগরিবের ওয়াক্ত চইলা আসলো… হাছন রাজা তখনো কানতেই আছেন। বইলা একরামুল ইসলাম তো কানতে লাগলেন টিভি ক্যামেরার সামনে।… Continue reading

কালচারাল মিডল-ক্লাস নিয়া ১

দেখতে দেখতে ঢাকার (বা বাংলাদেশের) কালচারাল মিডল-ক্লাস জিনিসটা নাই হয়া যাইতেছে। কোন কিছু তো একবারে নাই হয়া যায় না, তাদের ডমিনেন্সের জায়গাটা ইনভ্যালিড হয়া উঠছে অলরেডি। (ধানমন্ডি লেকের পারে, ঢাবি’র চারুকলার বাইরে আর ছায়ানটের ভিতরে, কয়েকটা সেমি-এলিট স্পেইসে কিছু ধ্বংসাবশেষ, ওয়ার্ল্ড লোকাল হেরিটেজের অংশ হিসাবে আরো কিছুদিন মনেহয় থাইকা যাবে।)

এই কালচারাল ক্লাসটা এমার্জ করছিল ১৯৬০’র দিকে। কলকাতার কালচারাল ময়দান থিকা মাইগ্রেট করা আর দেশের অন্য শহর থিকা জড়ো হওয়া কলেজ-ইউনিভার্সিটি পাশ করা, সরকারি চাকরি করা, আর্ট-কালচার করা বা বুঝদার লোকজনরাই ছিলেন এইখানে। এখন উনাদের মাতবরি নাই হয়া যায় নাই, তবে কইমা আসতেছে।

এই কারণে না যে, এইখানে একটা সাব-অল্টার্ন বিপ্লব হয়া গেছে 🙂 বরং উল্টাটা। একটা গ্লোবাল ক্লাস চইলা আসছে। যারা খালি লোকাল না, গ্লোবাল বইলাই লোকাল। ওরহান পামুক তার একটা লেখায় এই ক্লাসটার কথা কইতেছিলেন। সারা দুনিয়ার এলিটরা – চীন, জাপান, ইন্ডিয়া, ইউরোপ, মেক্সিকো, আম্রিকা, কানাড, অস্ট্রেলিয়া… সবদেশের এলিটদের একটা কমন জায়গা তৈরি হইতেছে। তো, আমার ধারণা, এরা খালি একটা ক্লাস না, তাদের কনজাম্পশন প্যাটার্নের ভিতর দিয়া তারা একটা স্পেসিস হিসাবে এমার্জ করতেছে। উদাহারণ হিসাবে ‘ওমেগা-থ্রি’ ডিমের কথা কইতেছিলাম একবার, বা অরগানিক ফুড, হাবিজাবি অনেক জিনিস আছে।

মানে, আমি এনভায়রনমেন্ট-সেন্সিসিটিভনেসটারে মকারি করতেছি না, কিন্তু এইটা একটা পার্ট। যেমন, কয়দিন আগেও ছিল এই জিনিসগুলা যে, আফ্রিকা’তে মানুশ না খায়া মরতেছে, সিরিয়াতে মানুশ মারা যাইতেছে… এইগুলা কনসার্ন হওয়ার মত জিনিস না – তা না; এইসব ইস্যুতে সাবস্ক্রাইবড হইতে পারাটা প্রাইমারি একটা ঘটনা; তারপরে ধরেন, আপনি আফ্রিকা ঘুইরা নিজের চোখে দেইখা আসছেন, সিচুয়েশন আসলে এতোটা খারাপ না, কিছু ডেভোলাপমেন্টও হইতেছে, এইরকম। 🙂 পূর্ব-ইউরোপের দেশগুলাতে কয়েকটা বছর থাইকা আসাটা বরং আরামের।… Continue reading

ভাসানী সিনড্রোম

এই জিনিসটা নিয়া কয়েকবারই বলছি, কিন্তু ঠিকঠাকমতো বলা হয় নাই। আর মওলানা ভাসানী’রে দিয়া জিনিসটা বুঝা গেলেও, ব্যাপারটা খালি ভাসানী’রই ছিল বা আছে – তা না; আমার মধ্যেও জিনিসটা ফিল করছি আমি অনেকসময়, আর অন্য অনেকের ভিতরই লোকেট করা যাইতে পারে মনেহয়।

তো, ভাসানীর ঘটনা’টা আগে বলি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলতেছিল, তখন তো উনি বাঁইচা ছিলেন, কিন্তু কই ছিলেন? বা কি করতেছিলেন? মানে, এইরকম খুবই বড় একটা ঘটনার সময় উনার মতন বড় একজন লিডার কি করতেছিলেন – এইটা মোটামুটি খোঁজ-খবর কইরা বাইর করতে হবে আমরা’র। (তার মানে, আবার এইটা না যে, উনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন; উনি তো শেখ মুজিবের আগেই “আসসালামুয়াইলকুম” কইছিলেন। বা উনারে সাইড-লাইনে ফালায়া রাখা হইছিল আসলে – এই জিনিসটাও খুব বেশি কনভিন্সিং মনেহয় না আমার কাছে।)

আর এইটাই একমাত্র ঘটনা না, শেখ মুজিবুর রহমানের নামে যেই বই ছাপা আছে – ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, সেইখানে এইরকম দুয়েকটা ঘটনার কথা আছে। ২৫৫ নাম্বার পেইজে আছে, “মওলানা ভাসানীর দরকারের সময় এই আত্মগোপনের মনোভাব কোনদিন পরিবর্তন হয় নাই। ভবিষ্যতের অনেক ঘটনায় তার প্রমাণ হয়েছে।” মানে, ক্রিটিক্যাল একটা মোমেন্ট, কোনকিছু করা লাগবে, কোন ডিসিশান নিতে হবে, ভাসানী তখন ‘অভিমান’ কইরা বসলেন। এইরকম।

শেখ মুজিবুর রহমান ধারণা করছেন, ভাসানী যেহেতু ইংলিশ ভালো জানতেন না বা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেন নাই, উনার মধ্যে একটা ইনফিরিয়টি কাজ করতো। তো, এই জিনিসটা আমার কাছে এতোটা ‘সত্যি’ মনেহয় না। সব মানুশের মধ্যেই কিছু ইনফিরিয়টি-সুপিরিয়টি, হাবিজাবি জিনিস থাকে। মানে, একজন মানুশ ‘নিখুঁত’ কোন জিনিস না, আর সেইটা হইলে তারে মানুশ বইলাই মনে হবে না; বরং এই জিনিসগুলারে সে কেমনে ডিল করতেছে বা এক্সপোজ করতেছে, সেইটাই ঘটনা’টা।

ক্রুশিয়াল মোমেন্টে ভাসানী পালায়া যাইতেন – এইরকম না। যখন আপনার পাবলিকলি অ্যাক্ট করার কথা, তখন ইনঅ্যাক্টিভ হয়া পড়ার ঘটনা ঘটতে পারে।

কেন ঘটে? – এই জিনিসটা মেবি এতোটা সার্টেন না। পারসোনাল ইনফিরিয়রিটির জায়গাগুলা যে কাজ করে না – তা না; ইংলিশ না-জানা না, মানুশজন যদি মনে করে ভাসানী বুইড়া, পাত্তা না দিতে চায়, দুয়েকটা ফাউল টক করে, তখন উনি সেইটারে স্পোর্টিংলি নিয়া কাউন্টার দেয়ার চাইতে চুপ থাইকা নিজেরে ‘প্রমাণ’ করার কথাও ভাবতে পারেন। বা ইভেন ধরেন, পাজামা না পিন্দা লুঙ্গি পিন্দেন বইলাই হয়তো আনইজি লাগতে পারে।… মানে, পারসোনাল ইস্যুগুলা পাবলিক ইভেন্টে ক্রিটিক্যাল হয়া উঠতেই পারে, পসিবল এইটা। কিন্তু কোন পারসোানল ঘটনা কেমনে কোন পাবলিক ইভেন্টে রিলিভেন্ট হয়া উঠে, সেইটা এতোটা স্পেসিফিক হওয়ার কথা না, সবসময়। Continue reading

অমর প্রেমের কাহিনি

আমি যেই ছবিটা দেখছিলাম সেইটা ছিল অনেকটা পেন্সিলস্কেচ; পোলাটা আরো ইয়াং, কলেজছাত্র টাইপ, জিন্স, টি-শার্ট, কেডস পরা আর মাইয়াটাও টিনএজার, সালোয়ার-কামিজ পরা। কোনো চুলকাটার দোকানে, বাঁধাই-করা গণেশ, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মাচারী আর অনেকের ছবির সাথে। ছবিটা মনে আছে মেইনলি ডায়ালগটার কারণেই, কিন্তু ইমোশনটার কারণেও মনেহয়। পোলাটা ফিরাও তাকাইতেছে না, কত দুঃখ না-জানি পাইছে! দেবদাসের চাইতেও বেশি। পারু তো ফিরা আসে নাই। আর এইখানে পায়ে ধইরা কানতেছে!

আমার ধারণা, যারা এই ছবিটা পছন্দ করেন, তাদের অরিজিনাল কাহিনিটা মেবি অন্যরকম। দেখা যাবে, মাইয়াটা পোলাটারে পাত্তাই দিত না, বা মজা করত … সে যে এইরকম প্রেমে পড়ছে তার কোনো রিকগ্নিশনই নাই। এই কারণে এই ছবির ভিতর দিয়া সে নিজেরে ইমাজিন করতেছে যে সে মদ খাইতেছে আর ভাবতেছে যে, মাইয়াটা এখন তার লাইগা আফসোস করব; বা করলেও সে আর ফিরা আসবে না। মাইয়াটা কি ভাবে সেইটা কোনো ঘটনাই না; ঘটনাটা হইল মাইয়াটা কি ভাবতে পারে সেইটারে ভাবতে পারাটা। সে যে এত মদ খাইতেছে কেউ কি আইসা তার পায়ে ধরব না? এইটুক আফসোস কি তার পাওনা হয় নাই? বেশ আনবিয়ারেবল একটা ইমোশন। মদ তো মদ, মানুষ মরতেও পারে এই ইমোশনের লাইগা। মরেও তো মনেহয়।

প্রেমে পইড়া মানুষ যে সুইসাইড করে, এইরকম একটা ‘অমর প্রেম’-এর ধারণা থিকাই তো!

২.
বিশু ধরের আঁকা এই ছবিটা রাজীব দত্তের কাছ থিকা পাইছিলাম। এইটা নিয়া একবার কিছু কথা বলছিলাম আমরা — রাজীব দত্ত আর আমি। Continue reading

আর্টের বিচার কেমনে করবেন?

আমাদের ‘আর্ট ধারণা’র মুশকিল’টা কই বা কোন জায়গায়? – সেইটা নিয়া আবারো বলি। আর্টের কাজ কোন ‘সমাজের চিত্র’রে ঠিকঠাক মতো তুইলা ধরা না; মানে, এইটা তো সোসাইটি’তে নাই! বা এইটা আমাদের সমাজের রিয়েল চেহারা! – এই টাইপের ক্রিটিক করা’টা। যে, সমাজের লগে ‘মিল’ থাকা লাগবো! এইটা আর্টরে বিচার করার কোন তরিকা হইতে পারে না। (আর্টের সাথে সোসাইটির বা সোসাইটির সাথে আর্টের একটা রিলেশন আছে বা থাকেই।)

বরং উল্টা ঘটনাটাই বেশি ঘটে। এক ধরণের আর্টের ধারণার ভিতর দিয়াই আমরা একটা সোসাইটি’রে বা রিয়ালিটি’রে দেখি বেশি। যার ফলে, একটা আর্ট সোসাইটিতে বা সোসাইটি’র এগজিসটিং আর্টের ধারণাটাতে কতোটা ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে – সেই জায়গা থিকা একটা বিচার হইতে পারে। (এইটাই যে একমাত্র ক্রাইটেরিয়া – তা না। কিন্তু সোসাইটি’র জায়গা থিকা দেখতে চাইলে এইভাবে দেখাটা এফেক্টিভ হইতে পারে।) যেমন ধরেন, শেক্সপীয়র নাটক লেখার পরে বা ভ্যান গঁগ ছবি আঁকার পরে নাটক বা ছবি-আঁকা ব্যাপারটারে একইভাবে দেখতে পারতেছি না আমরা আর। উনারা একটা ‘স্ট্যান্ডার্ড’ তৈরি করছেন – তা না; যে, এমনে এমনে লেখা লাগবো বা ছবি-আঁকা লাগবো। আর্টের ভিতর দিয়া সোসাইটিরে আমরা যেইভাবে দেখতাম বা সোসাইটি নাটক-লেখা বা ছবি-আঁকা’রে যেমনে দেখে, সেইটা আর ‘ঠিকঠাক’ থাকতে পারে নাই। আরো কাছাকাছি এক্সাম্পল দিলে, মিনিমাম অর্থেও, আজম খানের আগে-পরে বাংলাদেশের গান একই রকম থাকে নাই; এমন না যে সবাই আজম খানের মতোন গাইতে শুরু করছেন। এইরকম। ‘ট্রাডিশনাল’ গানও যে বন্ধ হয়া গেছে – তাও না। আরেকটা রকম ইমার্জ করতে পারছে, গান গাওয়ার; গ্রাম-বাংলা’র জায়গায় ‘শহর’ দেখা গেছে, বাংলাদেশে। এইরকম। Continue reading