‘ভালো’ কি জিনিস?

হুমায়ূন আহমেদের নভেল/নভেলাগুলারে ‘সমালোচকদের’ অপছন্দ করার একটা মেজর কারণ হইতেছে, উনার উপন্যাসগুলা’তে খেয়াল কইরা দেখবেন ‘বর্ণনা’র চাইতে ডায়লগ বেশি। আমাদের ‘সমালোচনায়’ উপন্যাসের স্ট্রেংথ হইতেছে বর্ণনায়; মানে ‘বর্ণনা-ই উপন্যাস’ না হইলেও, মেজর একটা জিনিস। তো, হুমায়ূন আহমেদে যে বর্ণনা নাই – তা না, বর্ণনা উনার স্ট্রেংথের জায়গা না; উনার স্ট্রেংথ হইতেছে, কনভারসেশন, ডায়লগ। কিন্তু এইটা তো নাটকের জিনিস! – এইটা মনেহয় ভাবতে পারি আমরা, যার ফলে ‘উপন্যাসের মানদন্ডে’ জিনিসটা বাজে হইতে পারে। (অন্য অনেক কারণেই উনার উপন্যাস ভালো বা খারাপ হইতে পারে, আমি জাস্ট এই পার্টিকুলার জিনিসটারে হাইলাইট করতে চাইতেছি এইখানে।) 

 

মানে, খেয়াল কইরা দেখেন, একটা বা কিছু ‘মানদন্ড’ আছে এইখানে, বিচার করার; খালি উপন্যাস না, নাটক-সিনেমা-গান-কবিতা, অনেক জিনিস নিয়াই। সিনেমার মানদন্ড যেমন, একটা ভালো স্টোরি থাকতে হবে, একটা ভিজ্যুয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ থাকতে হবে, এইরকম; তো, এইগুলা বাজে জিনিস না, কিন্তু আর্টের এই ‘মানদন্ড’গুলাই যে আর্ট না – এইটা মনে রাখাটাও দরকার। মানে, আর্টের বিচার তো আপনি করবেন-ই; কিন্তু যেই বাটখারা দিয়া বিচার করতেছেন, শুধু সেইটা দিয়া মাপতে গেলে ঝামেলা হবে, সবসময়ই।

 

তো, আলমগীর কবিরের সিনেমা মাপা’র বাটখারা ছিল – ‘সমাজ-বাস্তবতা’।১ সিনেমা হইতেছে ‘সমাজ-বাস্তবতা’রে তুইলা ধরবে, বিপ্লবের হাতিয়ার হবে, এইসব বাল-ছাল।২ স্পেশালি দেখবেন, এই তরিকার লোকজন সিনেমা’তে গান জিনিসটারে খুব একটা পছন্দ করতেন না বা করেন না। কারণ, বিদেশের যেইগুলা ‘ভালো ভালো’ সিনেমা, অইগানে তো গান নাই! আর তাছাড়াও, গান তো অ-বাস্তব একটা জিনিস; বাস্তব জীবনে আবেগের চোটে গান গাইয়া উঠি নাকি আমরা! অথচ গান একটা দরকারি জিনিস আমাদের বাংলা-সিনেমায়; রূপবান, বেদের মেয়ে জোসনা হিট হইছে, খালি গানের কারণে না, বরং এই দুইটা সিনেমা মিউজিক্যাল ফিল্ম বইলা। মানে, আবেগের চোটে কারেক্টার’রা গান গাইয়া উঠে না; বরং উল্টাটা, উনাদের আবেগের জায়গা গিয়া কথাগুলা আর কাজ করে না, গান ছাড়া এইটা বলা যায় না, কারণ এইটা ডিপ ইমোশনের একটা ঘটনা।

 

কিন্তু এইটা ফর্ম হিসাবে ‘ভালো সিনেমা’র ডেফিনেশনের লগে তো মিলে না! এই কারণে উনার ইউরোপিয়ান বুদ্ধি দিয়া আলমগীর কবির রূপবান’রে কইছেন ‘যাত্রাসিনেমা’; ‘ভালো সিনেমা’ তো দূর কি বাত, ‘সিনেমা’ হিসাবে আইডেন্টিফাই করতে ব্যর্থ হইছেন। (কারণ তখনো মিউজিক্যাল ফিল্মের ডেফিনেশন চালু হইতে পারে নাই।) উনার এই ব্যর্থতা যে সত্যিকার অর্থেই ব্যর্থতা – সেইটারে রিকগনাইজ না কইরা, এখন গ্লোরিফাই করার যে মজমা চলতেছে, সেইটারেই নোটিশ করতে চাইতেছি আমি। যে, উনাদের বিচার’রে দেখার আগে, বিচারের বাটখারাগুলারে দেখেন।

 

আর ‘সমাজ-বাস্তবতা’র ঘটনাটাই দেখেন; আর্টের কাজ তো ‘সমাজ-বাস্তবতা’রে ঠিকঠাক মতো ফুটায়া তোলা বা তুইলা ধরা না; বরং ‘সমাজ-বাস্তবতা’ যে কি জিনিস – সেইটারে এগজামিন করা আর্টের একটা কাজ হিসাবে ভাবা যাইতে পারে, অনেক সময়। আর সেইটার স্ট্রেইট-কাট কোন ওয়ে তো নাই!

 

তো, আমার ধারণা, আলমগীর কবির যখন সিনেমা বানাইতে গেছেন, তখন নিজের সমালোচনার জায়গাগুলারে কম-বেশি বুঝতে পারছেন, কোন না কোন অজুহাতে এড়ানোর ট্রাইও করছেন। যেমন, পপুলার বইলা টিটকারি মারলেও শরৎচন্দ্রের উপন্যাস নিয়া সিনেমা বানাইছেন, বুলবুল আহমেদ’রে বাদ দিয়া ইলিয়াস কাঞ্চন, অঞ্জনা’রেও ‘আর্টিস্ট’ হিসাবে ভাবতে পারছেন; ট্রাডিশন্যাল যাত্রাগানের বদলে ক্ল্যাসিকাল মেজাজের গান ঢুকাইতে পারছেন… এইরকম। মানে, উনার ‘সমাজ-বাস্তবতা’র বাটখারা উনি ফালায়া দিতে পারছেন – এইরকম না; কিন্তু এইগুলা যে খুববেশি কাজের জিনিস না, বা এইগুলার বেসিসে কাজ করতে গেলে বাংলা-সিনেমার জায়গাটারে যে ধরা যাইতেছে না, সেইটা উনার ফিল করতে পারার কথা মনেহয়।

Continue reading

এ-কার আর আ-কার

ছোট একটা টেকনিকের জিনিস এইটা, অনেকেই খেয়াল করার কথা, কিন্তু খোলাখুলিভাবে খুব কম কথা-ই হইছে মনেহয়, এই এ-কার আর আ-কার নিয়া।

বাংলায় কাজ-কাম বুঝাইতে যেই ওয়ার্ডগুলা আছে, সেইগুলা খেয়াল করলে দেখবেন এ-কার দিয়া লেখলে একরকম লাগে, আর আ-কার দিয়া লেখলে পুরা অন্যরকম লাগে; মনে হবে যেন আরেকটা দুনিয়াই ক্রিয়েট কইরা ফেলছেন! যেমন, বললে/বললা, দেখলে/দেখলা, বলবে/বলবা, শেখালে/শিখাইলা… এইরকম শ’য়ে শ’য়ে পাইবেন। লেখার টোন’টাই পুরা চেইঞ্জ হয়া যায়।

তো, ব্যাপার’টা মোর বাংলা হয়া উঠবো – তা না, কিন্তু আমরা বাংলাদেশে বলার সময় তো আ-কার’টাই বেশি ইউজ করি। কিন্তু বাংলা লেখা ব্যাপারটা যেহেতু কলকাতা-সেন্ট্রিক ছিল, এই কারণে অইখানের ডায়ালেক্টে যেহেতু ‘এ-কার’ এর চল’টা বেশি, অইটারে বেশি ‘কারেক্ট’ মনে করার মতো একটা ভুল ধারণা এখনো আছে। ভাষা থিকা ডায়ালেক্টগুলারে মুইছা ফেলতে হবে বা ‘আঞ্চলিক ভাষা’ হিসাবে বাঁচায়া রাখতে হবে – এইটা খুবই ভুল একটা প্রিমাইজ, আলাপ করার। মানে, ‘বললে’ লিখলেই জিনিসটা ‘শুদ্ধ’ – তা না, কিন্তু ‘বললা’ ইউজ করলে দেখবেন বাংলাদেশের অডিয়েন্সরে বেশি কানেক্ট করতে পারার কথা। Continue reading

আমার আওয়ামী লীগ বিচার

১.
ডিসেম্বর ২৬ ২০১৮

আহমদ ছফাদের আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ’রে ‘মুক্তিযুদ্ধের’ সার্টিফিকেট দিছেন আহমদ ছফা’র মতোন পলিটিক্যাল কমেন্টেটর’রাই। উনার এক আবেগি বাণী আছে, ‘আওয়ামী লীগ যখন হারে তাইলে বাংলাদেশ হাইরা যায় আর আওয়ামী লীগ যখন জিতে তখন খালি আওয়ামী লীগ-ই জিতে’ – এইরকম টাইপের। খুবই বাজে কথা এইটা।

বাজে কথা এই সেন্সে যে, এইখানে ফাঁপা আবেগ ছাড়া আর কিছু নাই। ইন্ডিয়াতে কংগ্রেসের জায়গায় বিজেপি বা রিজিওনাল দলগুলি জিতলে অথবা পাকিস্তানে মুসলিম লীগের জায়গায় পিপলস পার্টি বা তেহরিকে ইনসান জিতলে ইন্ডিয়া বা পাকিস্তান হাইরা যায় না, খালি বাংলাদেশে এইরকম ভাবা’র লাইগা কেন বলা হয়? একটা পলিটিক্যাল দল কেমনে একটা রাষ্ট্রের মালিকানা পাইতে পারে?

এইটা আহমদ ছফা’দের কোন পলিটিক্যাল ‘ভুল’ বইলা আমি মানতে রাজি না। বা কোন ‘অতীত অভিজ্ঞতা’র সিনথেসিস বইলা ভাবা’টাও কোন কাজের জিনিস না। বরং এর একটা উদ্দেশ্যটা আসলে এক ধরণের ‘বাংলাদেশ’রে ডিফাইন করা, যেইটা খুবই মিডল-ক্লাসের ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়া কালচারাল প্রডাকশগুলাও দেখবেন, ‘শহরের’ ‘শিক্ষিত’ ‘পোলা’রা’ হইতেছে মেইন ‘মুক্তিযোদ্ধা’; আর এই কারণে ‘গ্রাম্য’ ‘অশিক্ষিত’ ‘মাইয়া’দের’ প্রতি এই ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বা ‘বাংলাদেশ’ ধারণার এক ধরণের কালচারাল বিরোধিতা আছে। এই যে, ছফা’দের (প্লুরাল কারণ আরো আছেন উনার মতোন) ‘বাংলাদেশ’ ধারণা – সেইটার বেইজটারে কোশ্চেন করা, খোলাসা করাটা জরুরি একটা ইন্টেলেকচুয়াল কাজ যে, এইটার বেচা-বিক্রি কি কি ভাবে চালু থাকতে পারতেছে এখনো?

আওয়ামী লীগ হারলে যেমন বাংলাদেশ হারে না, ‘বাংলাদেশ’ বইলা এক ধরণের ‘শিক্ষিত’ মিডল-ক্লাস সেন্টিমেন্টে দাগা লাগে, একইভাবে জিতলেও খালি আওয়ামী লীগ-ই জিতে – তা না, বরং গ্রসলি বললে আহমদ ছফা’রা আরো বড় ভাগ চান, এই জিতা’র; সেইটা কখনোই সম্ভব হয় না, যার ফলে এক ধরণের ‘অভিমান’ বা ‘প্রবঞ্চণা’র ফিলিংসই হয়, এর বেশি কিছু না।

২.
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯

আওয়ামী লীগ পাবলিকের উপ্রে ভরসা রাখার দল না

একটা পলিটিক্যাল পার্টি’রে যতোটা না তার আইডিওলজি তার চাইতে তার প্রাকটিস বা কাজকামের ভিতর দিয়াই বুঝতে পারতে হবে।

আওয়ামী লীগ পলিটিক্যল পার্টি হিসাবে ক্রুশিয়াল মোমেন্টগুলাতে খুব কম সময়েই পাবলিকের উপ্রে ভরসা রাখতে পারছে। পাকিস্তান আমলেও পাবলিকরে নিয়া মুভমেন্ট করলেও, সময় সময় পাওয়ারের লগে নেগোশিয়েশন করে নাই, বরং যা যা করছে, তারে পাওয়ারের লগে এক রকমের আতাঁত করা বলা যাইতে পারে, যা খুব কম সময়েই পাবলিকের ফেভারে থাকছে। পরে, এরশাদ আমলে ৮৬’র ইলেকশনে যাওয়া বা ৯৬’এ সরকারি আমলাদের কারণেই বিএনপি’রে নামাইতে পারছিল। ১/১১’র পরের ইলেকশনও তো ধারণা করা হয়, মিলিটারি’র কন্ডিশন মাইনা নিয়াই আসছেন উনারা, পাওয়ারে। আর লাস্ট পার্লামেন্ট ইলেকশনে পাবলিকের ভোট তো পুলিশ-মিলিটারি-সরকারি আমলারাই দিয়া দিছে; কিন্তু যেহেতু ছাত্রলীগ-যুবলীগ ভোটগুলা ফেলছে, অরা মনে করতে পারে যে, অদেরও কন্ট্রিবিউশন আছে। তা তো আছেই, কিন্তু উনারা ডিটারমিন্টেট ফ্যাক্টর না। এইটা বুঝতে পারলে উনাদেরও ভালো। Continue reading

ইংরেজি শব্দ, বাংলা ওয়ার্ড…

তখন মনেহয় ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি, একটা গল্প বা রম্য-রচনা পইড়া পুরা বোকচোদ হয়া গেছিলাম, কারণ কিছুই বুঝতে পারতেছিলাম না; পারতেছিলাম না একটা শব্দের কারণে। লিখছিলেন মনেহয় আলী ইমাম, শাহরিয়ার কবির বা এইরকমের কেউ, যারা অই আমলে কিশোর, মানে টিনএইজদের জন্য লিখতেন। শব্দটা ছিল, ডিক্টেটর। একজন ডিক্টেটর কি করেন, কেমনে ঘুমান, কেমনে খাওয়া-দাওয়া করেন, এইসব নিয়া ফান করা। তো, ডিক্টেটর কি জিনিস সেইটাই তো জানি না আমি! আর ইংলিশে স্পেলিংটা লেখাও নাই যে ডিকশনারিতে খুঁজতে পারবো। তখন যেহেতু গোয়েন্দাদের বই পড়ি কিছু, ডিটেকটিভ শব্দটা জানি। কিন্তু ডিটেকটিভরে নিয়া এতো ফান করার কি আছে! পরে যখন জানতে পারলাম ডিক্টেটর মানে স্বৈরাচার তখন বুঝতে পারলাম যে, ও, আচ্ছা, এরশাদরে নিয়া লিখছে! তো, লেখাটা যতোটা না ফান, তার চাইতে জেলাসিই বেশি ছিল মনেহয়, এই কারণে ফানটা জমে নাই তেমন। আর আমার ধারণা, রাইটার ইচ্ছা কইরা স্বৈরাচার না লেইখা ডিক্টেটর লিখছিলেন, কারণ নিউজপেপারে সবসময় স্বৈরাচার লেখা হইতো (চিন্তা করেন, কি রকম ফ্রি একটা টাইম ছিল তখন!), শব্দটা পরিচিত ছিল, তো অইটা লিখলে সাথে সাথে কানেক্ট করা যাইতো যে, এরশাদরে নিয়া লেখছে, এই কারণে মেবি এই শব্দটা লিখছিলেন।…

এখন ব্যাপারটা যে খালি ইংরেজি শব্দ – তা তো না, যেই জিনিসটারে বুঝাইতে চাইতেছে, সেই ব্যাপারটাই তো ‘ইংলিশ’! মানে, ডিক্টেটর বা স্বৈরাচার টার্মটা বাংলা-ভাষার হিস্ট্রিক্যাল রেফারেন্সে তো নাই, কি থাকতে পারে… জালিম?… বা অন্য আরো কিছু… কিন্তু সেইটা কোনভাবেই স্বৈরাচার না। মানে, কাছাকাছি রকমের জিনিসই, কিন্তু একই জিনিস না। ব্যাপারটা এইরকম না যে, স্বৈরাচারের ইংলিশ হইতেছে ডিক্টেটর, বরং স্বৈরাচার হইতেছে ডিক্টেটরের বাংলা। দুইটা একই ঘটনা না। তো, আমার ধারণা হাজার হাজার না হইলেও শ’য়ে শ’য়ে এইরকম ইংরেজি শব্দ থাকার কথা, বাংলা ভাষায়; যেইটার রেফারেন্স (বা সূত্র) হইতেছে ইংরেজি ভাষায়। এক সময় হয়তো ফার্সি ভাষাতে ছিল এই রেফারেন্সগুলা।

মানে, আমি যেই পয়েন্টটা মেইক করতে চাইতেছি, সেইটা হইতেছে, যে কোন শব্দই একটা কালচারাল রেফারেন্সের ঘটনা। উইথইন দ্য কালচারও। যেমন ধরেন, খোয়াব কইলে দাদি-নানীদের কথা মনে হইতে পারে, বা ‘গ্রাম-বাংলা’র কথা 🙂 (যদিও গান আছে, “আমি স্বপ্ন দেখি, মধুমালার মুখ রে…”), স্বপ্ন রিলেটিভলি ‘আধুনিক বাংলা’, ‘বাংলা মিডিয়াম’-ও কিছুটা; এর পাশাপাশি ড্রিমও কিন্তু বাংলায় এখন অনেকটা, কারণ আমরা যারা ‘শিক্ষিত’ তারা সবাই ড্রিম বুঝি তো! কিন্তু তাই বইলা ইংরেজি ভাষায় ড্রিম যেইরকম অ্যাসপায়ার, উইশ, হোপ নানান রকমের আছে, বাংলার ড্রিম অইরকম জায়গাতে খুব কমই যাইতে পারে মনেহয়।

মানে, কথাটা খালি এইটা না যে, ইংরেজি শব্দগুলাও বাংলা-ই অনেক সময় – এইটা তো আছেই (বা বাংলা অনেক শব্দও ইংলিশে বাংলাতেই কইতে হবে আসলে, যেমন ধরেন, খিচুরিরে মাসালা রাইস কইলে খিচুরি বুঝানো যাবে না আসলে, বা ম্যাশ পটেটো দিয়া আলু-ভর্তা… মানে, একই জিনিস হবে না); বরং শব্দ জিনিসটারে ইংরেজি, ফার্সি, পর্তুগিজ, সংস্কৃত, হিন্দি, উর্দু… এইভাবে দেখার যে তরিকা সেইটাই ঝামেলার জিনিস মনেহয়। এমন না যে, এইভাবে আইডেন্টিফাই করা যায় না, কিন্তু এইরকম দাগানোটা বরং স্বৈরাচার ও ডিক্টেটর টাইপের ঝামেলা তৈরি করে, যেইরকম করে লেবার ও শ্রমিক; মানে, লেবার তো আসলে ‘বেশি বাংলা’; যেইরকম ‘সাইডে, সাইডে…’ বেশি বাংলা ‘সরে যান’ থিকা। তো, এইরকম ইংরেজি শব্দগুলা ‘বাংলা’ বইলা ‘ডিক্টেটর’ বাংলা না, বা এর এগেনেস্টে ‘স্বৈরাচার’-ও। এখন তাই বইলা ইংরেজি শব্দের বাংলা কি করা যাবে না? এইখানে আমার কথা হইতেছে, কি বাংলা বানাইতেছেন, সেইটা খেয়াল করাটা দরকার। এইখানে ডিক্টেটরের বাংলা স্বৈরাচারই করতেছেন না খালি, জালিম’রেও যে রিপ্লেইস করতেছেন, এই বুঝ থাকাটা দরকার মনেহয়।… Continue reading

১২ ই মে, ১৯৮৪ আর স্টিভ জবস: ফিউচার ইজ দ্য নিউ পাস্ট

১৯৮৪ নামে জর্জ অরওয়েলের একটা নভেল আছে; যেইখানে বলা হইছে, নতুন ধরণের সোসাইটি এমার্জ করবে; সবকিছু কন্ট্রোলড হবে, এই সেই। মানে, ১৯৮৪ একটা দাগ, নতুন রিয়ালিটির। নভেল’টা এখনো অনেক হিট।

কিন্তু ১৯৮৪ সালে আরেকটা ঘটনা ঘটছিল। স্টিভ জবস অ্যাপল কম্পিউটার লঞ্চ করছিলেন। উনি একটা টিভি অ্যাড বানাইছিলেন, যে ১৯৮৪ কেন স্পেশাল? সেইটা উনি রিভিল করার দাবি করছিলেন। 🙂 জর্জ অরওয়েল মেবি ১৯৮৪ সাল’রে জাস্ট একটা নিয়ার-ফিউচার হিসাবে দেখাইতে চাইতেছিলেন, অইরকম স্পেসিফিক কিছু হওয়ার কোন কারণ নাই। কিন্তু স্টিভ জবস এইটারে সিরিয়াসলি নিছিলেন; যে ১৯৮৪ সাল’রে যেহেতু সিগনিফিকেন্ট কিছু বলছিলেন জর্জ অরওয়েল, স্টিভ জবস তারে সিগনিফিকেন্ট কিছু বানানি’র দায়িত্ব’টা নিয়া নিলেন। বা যেইটা করলেন, নিজের কাজ’টারে অই বানানো-সিগনিফিকেন্ট’টার সাথে মিলায়া দিলেন!

যে একটা মিথ তো আছিল, ১৯৮৪ সাল নিয়া; তো, অ্যাপল হইতেছে অই মিথ’টা। মিথ’টা মিছা না, আমরা বরং বানাইতেছি মিথ’টারে। এইরকম।

তো, অঞ্জন দত্তের ১২ই মে’র মিথ’টা পুরাপুরি এইরকম না হয়তো অনেকের কাছে; কিন্তু কাছাকাছি রকমেরই। হইতে পারে তার একটা পারসোনাল কিছু, বা একটা ডেইটই। কিন্তু এই ১২ই মে’টারে যারা মনে করতে পারতেছেন, তারা এইরকমই বানাইতে চাইতেছেন মেবি, স্টিভ জবসের ১৯৮৪’রে মনে রাখার মতন একট্ জায়গা থিকাই। যে, ১২ই মে মালা যে চইলা গেছিল; এখন ১২ই মে’তে ‘ব্রেকাপ দিবস’ টাইপ বানাইলাম আমরা যেন কিছু। 🙂 তখন গান’টা যেমনই হোক, লাইনটা যা-ই হোক; আমাদের লাইফে আমরা ট্রু কইরা ফেলতে পারলাম!

[এইরকম আরো ছোট ছোট লোকাল মিথ আছে তো আমাদের লাইফে। আমরা যখন ক্লাস সিক্স-সেভেন পড়ি, রেলওয়ে স্কুলে; তখন এক প্রেমিক তার প্রেমিকার বিয়ার দিনে প্রেমিকার বাড়ি থিকা তার জামাইয়ের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার পাশে বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে ছোট ছোট কবিতা লিইখা রাখছিলেন আলকাতরা দিয়া; এইরকম একটা কবিতা ছিল –

ঘড়ি বলে টিক টিক
ভালোবাসা নয় ঠিক
ঘড়ি বলে টিক টিক
ভালোবাসি তা-ও ঠিক

তো, উনারও এইরকম কোন ডেইট ছিল যে, অক্টোবর সামথিং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস; কিন্তু সেইটা আর হইতে পারে নাই; নদী-ভাঙনে পুরা রেলওয়ে কলোনি-ই মেঘনা নদীতে ডুইবা গেছিল; তার আগে তার দেয়ালের কবিতা, ডায়ালগও মুইছা ফেলছিল মনেহয়, বাড়ির মালিকেরা। তো, অই সময়ে যদি ১৪ই ফেব্রুয়ারি’র ট্রাডিশন থাকলে বেটার হইতো মনেহয়। মানে, বড় কোন অকেশনের লগে মিলাইতে পারলে! ]

এই যে হইতে পারে তো! আর হয় যে, এইটার সবচে বড় প্রমাণ (আর এখন পর্যন্ত একজন-ই আমার কাছে, তবে খুঁজলে আরো অনেক পাওয়া যাবে হয়তো) হইতেছেন স্টিভ জবস। Continue reading