জীবনানন্দ’র ‘সমারূঢ়’ নিয়া

 

জীবনানন্দ’র এই কবিতা নিয়া কথা বলতে হইতেছে ফেইসবুকের একটা  আলাপের কারণে; কোনএকটা জায়গায় আমি কইছিলাম যে, বাংলা-কবিতার সমালোচনা নিয়া যে নেগেটিভ একটা ধারণা এগজিস্ট করে, সেইটাতে এই কবিতার কন্ট্রিবিউশন আছে। তখন অনেকে (যদ্দূর মনে পড়ে রায়হান রাইন, মুজিব মেহদী এবং আরো কয়েকজন) আমার কথার প্রতিবাদ করছিলেন, উনারা করতেই পারেন, সেই রাইট উনাদের আছে; কিন্তু আমার মনে হইছে যে, ডিটেইলসে আমার পয়েন্টটাও বইলা রাখা দরকার।

আসেন, আগে কবিতাটা পড়ি।

 

সমারূঢ়

‘বরং নিজেই তুমি লেখো নাকো একটি কবিতা –‘
বলিলাম ম্লান হেসে; ছায়াপিণ্ড দিলো না উত্তর;
বুঝিলাম সে তো কবি নয় – সে যে আরূঢ় ভণিতা:
পাণ্ডুলিপি, ভাষ্য, টীকা, কালি আর কলমের ‘পর
ব’সে আছে সিংহাসনে – কবি নয় – অজর, অক্ষর
অধ্যাপক, দাঁত নেই – চোখে তার অক্ষম পিচুঁটি;
বেতন হাজার টাকা মাসে – আর হাজার দেড়েক
পাওয়া যায় মৃত সব কবিদের মাংস কৃমি খুঁটি;
যদিও সে সব কবি ক্ষুধা প্রেম আগুনের সেঁক
চেয়েছিলো – হাঙরের ঢেউয়ে খেয়েছিলো লুটোপুটি।

Continue reading

‘দু-চার বসন্ত আমি ঘোরালাম সামান্য লেখাকে’: উৎপলকুমার বসু’র কবিতা নিয়া

উৎপল-এর কবিতা পড়ছি, ভাবছিও অনেক। একজন কবি আসলে কি নিয়া কবিতা লিখবো – এইটা ঠিক করার পর কবিতা লিখতে বসেন না, কিন্তু কবিতা লেখার পর থিকাই আসলে এই প্রশ্নটা আসতেই থাকে যে, কেন লেখা হইলো কবিতাটা? কেন লিখতেই হইলো?

আমরা এইভাবেই অভ্যস্থ আসলে, কবিতা পড়তে। কিন্তু একটা কবিতার মূল উদ্দেশ্য তো আসলে প্রথমে কবিতা হয়া উঠা। একটা কবিতা কিভাবে কবিতা হয়া উঠলো কিংবা হইতে পারলো না, সেইটাও হইতে পারে কবিতারই বিচার; কবিতার সামাজিকতা, রাজনৈতিকতা, দার্শনিকতা নিয়া কথা-বার্তা তো হইতেই পারে, কিন্তু কবিতা’টা কেমনে কবিতা হয়া উঠলো, সেইটাও দেখাটা দরকার।

অথচ ধইরা নেয়া হয় যে, কবিতা হইছে বইলাই ত কবিতা নিয়া কথা; কিন্তু কিভাবে এইটা কবিতা হইলো, সেইটা সবসময়ই বাদ থাকে। কবিতার আলোচনায় এইটারেই বরং মুখ্য কইরা তোলাটা বেশি জরুরি বইলা আমি মনে করি।     Continue reading

একজন অন্ধ বালক গান গাইছে: সুমন রহমানের ‘কানার হাটবাজার’ নিয়া আলাপ

কানার হাটবাজার ।। লেখক:  সুমন রহমান ।। প্রকাশক: দুয়েন্দে ।। বইমেলা, ২০১১ ।। পৃষ্টা: ৯১। দাম: ৫০০টাকা ।।

 

১.

আমার কোন প্রস্তুতিই ছিল না, কানার হাটবাজার’ বইটা নিয়া লিখবার; কারণ যে বিষয় নিয়া বইটা লেখা, সেইটা আমার খুববেশি আগ্রহের সাবজেক্ট না, তার চাইতে বড় বিষয় যেইভাবে বইয়ের ফর্মটারে সাজানো হইছে, সেইখানে আমার কিছু সংশয় আছে; তারপর, বইটা যাদের উদ্দেশ্যে লেখা হইছে, আমি সেই পাঠকদলের লোক না বইলাই মনে হইছে। 

এই যে জনপ্রিয় সংস্কৃতি অধ্যয়ন বা সাংস্কৃতিক-অধ্যয়ন – এইটা সুমন রহমান চালু করতে চাইতেছেন; এর আগে মানস চৌধুরী এবং ফাহমিদুল হক-এর মিডিয়া এবং সংস্কৃতি বিষয়ে কয়েকটা লেখা পড়ছি (আরো অনেকেই লিখছেন হয়তো), কিন্তু একটা বইয়ে বিষয় হিসাবে এই জিনিসটার টোটালিটিটারে ধরবার কোন চেষ্টা এইটাই পয়লা মনেহয়।

বইটা নিয়া বলার আগে, বরং অনুমান করতে চাই আমি, যারা বইটার চিন্তা থিকা নিতে পারছেন বা নিতেছেন, তারা বইটা নিয়া কেন বলেন নাই:

১. আসলে বলার সময় হয়তো পার হয়া যায় নাই; প্রথম আলো-ই ত এখনো লিস্ট ছাপে নাই… বাংলাদেশে যারা চিন্তার চর্চা করেন, তারা হয়তো সময়ই পাইতেছেন না, নিজেদের চিন্তাগুলি শেষ কইরা তারপর না হয় কথা বলবেন।

২. আরেকটা ব্যাপার হইতে পারে যে, প্রচলিত সমালোচনার ধারা মতে, একজন উঠতি লেখকেরই একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের বইয়ের সমালোচনা করার কথা অথবা প্রতিষ্ঠিত কোন লেখকের নতুন লেখকের বইয়ের সমালোচনা করা; যেহেতু এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠিত কোন ‘ইন্টেলেকচুয়াল/চিন্তাচর্চাকারী’ বাংলাদেশে নাই, তাই নিজের শরীরে কেউ ‘উঠতি’ হিসাবে সিল লাগাইতে চান নাই!

৩. সবচে’ বাজে যে অনুমানটার কথা মনে আসতেছে, সেইটা হইলো, এই পর্যন্ত আমাদের চিন্তার যে উত্তরাধিকার, সেইটারই এক্সটেনশন। ২/১টা ব্যতিক্রম বাদ দিলে আমাদের চিন্তার মূলধারা হইলো, ‘চৌথামারা’, অন্যের চিন্তারে নিজের বয়ানে হাজির করা, ঘটনার উপর অন্যের চিন্তার রিফ্লেক্ট দিয়া বিশ্লেষণ করা এবং এইভাবে মৌলিক চিন্তারে গাপ কইরা দেয়া… ত, সুমন রহমান যদি কোন নতুন চিন্তা কইরা থাকেন, তাইলে পূর্বসূত্র অনুযায়ী তারে প্রথমেই ‘নিরবতা’র ভিতর ঠেইলা দেয়াটা জরুরি, তা নাইলে তারে ভাইঙ্গা খাওয়াটা একটু মুশকিল হয়া যাইতে পারে! Continue reading

দাস্তাম্বু: ‘কবি’ কিভাবে আরো অপ্রয়োজনীয় হয়া উঠলেন সমাজ-ব্যবস্থার ভিতর – তার অসম্পূর্ণ কাহিনি

মির্জা গালিব আমার প্রিয় কবি। উনার লেখার বাংলা অনুবাদ পড়ছিলাম আগে, গানও শুনছি। আর জাফর আলম সাহেবের অনেক অনুবাদ দেখছি; মনে হইছে উর্দু-সাহিত্য সর্ম্পকে উনার খুব আগ্রহ আছে।

দিনলিপি আমার আগ্রহের জিনিস। প্রাত্যহিকতার যে পেইন এর ত কোন প্রতিকার নাই। তার উপর বইটাও আকারে ছোট; লেখা হিসাবেও মাইনর একটা টেক্সট, বইমেলায় কিনা বইগুলি থিকা তাই এইটাই প্রথম পড়তে শুরু করলাম।

প্রতিদিনকার রক্তাক্ত হওয়ার কাহিনি! [pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

কি রকম অসহায় একটা মানুষ, খালি বাঁইচা থাকার লাইগা তাঁর কাব্য-প্রতিভাও বন্ধক রাখতে চাইতেছে… কি রকম দিশেহারা!

যেই সমাজের ভিতর উনি ছিলেন, সেইখানে কবি’র যে ভূমিকা, সেইটা পাল্টাইয়া যাইতেছে। যেই সমাজে উনি ছিলেন, সেইখানেও ছিলেন উপেক্ষিত আর এই নতুন ব্যবস্থায় ‘কবি’ হিসাবে বাঁচাটা প্রায় অসম্ভব।

দিনলিপি কি, আসলে এইটা ত একটা মিনতি! (পেনশন দিবে ত ইংরেজরা!!)

Continue reading

নেলসন ম্যান্ডেলা: তাঁর সাম্প্রতিক জীবনী-গ্রন্থ

 

NELSON MANDELA Conversations with Myself. MACMILLAN. 2010.

 

গ্রন্থ এবং জীবনী-গ্রন্থ বিষয়ে

ম্যান্ডেলা যখন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখনকার সময়ে একটা জায়গাতে বলতেছেন যে, বই পড়ার ব্যাপারটা উনি খুব মিস করেন। বই-পড়া ব্যাপারটা যতোটা না ‘জ্ঞান’ এর সাথে জড়িত, তার চাইতে অনেকবেশি ‘আনন্দ’ বা এন্টারটেইনমইন্টের সাথেও সর্ম্পকিত। একটা নতুন বই-এর সাথে সময় কাটানোটা একজন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার মতোই ঘটনা। প্রতিদিন তো আর নতুন মানুষের সাথে, নতুন ধারণার সাথে যোগাযোগ হয় না। তাই বই পড়তে পারাটা ভালো!

অনেকদিন পর তাঁর এই বইটার সাথে একটা ভালো টাইম কাটলো।

বই এর ক্যাটাগরি করলে জীবন-গ্রন্থ আমার একটা পছন্দের ক্যাটাগরি। একজন মানুষ নিজের সর্ম্পকে কি প্রকাশ করতে চায়, কেমনে করতে চায় – এইটা খুবই ইন্টারেস্টিং ঘটনা। যেমন, আল মাহমুদ-এর বিচূর্ণ আয়নায় কবি’র মুখ -এ তিনি তাঁর জীবনের অনেক বিস্ফোরক ঘটনা এবং ‘মনে-হওয়া’র কথাগুলি বলছেন; আবার গোলাম রব্বানী সাহেব তাঁর ওকালতি ও জজয়তি জীবনের কাহিনি বলতে গিয়া, তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির কথা উল্লেখ করছেন, যেইটা তাঁর কাছে মনে হইছে, সিগনিফিকেন্ট কন্ট্রিবিউশন আছে, বাংলাদেশের আইন-ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে; অনেকটাই জীবন-বৃত্তান্ত এর ফরম্যাটে, কিন্তু এতোটাই কমপেক্ট যে, শ্রদ্ধা আসে, নিজের সর্ম্পকে এতো কম বইলা শেষ করার অভ্যাসটা, একটা রেয়ার ঘটনাও!

আবার কমন কিছু ফরম্যাটও আছে, ছোটদের জীবনী-গ্রন্থ সিরিজ পড়ছিলাম; ইসলামিক ফাউন্ডেশন-এর। ’৮০ এর দশকে বাইর হইছিল ২০/৩০ খন্ডে, প্রতিটাতে ৫/১০জন এর জীবনী। অথবা ইন্ডিয়া থিকা আসতো মহাত্মা গান্ধী, লেলিন, সুভাষচন্দ্র বোস এর জীবনী, চটি বইয়ের মতো। Continue reading