কবিতা: জানুয়ারি – ফেব্রুয়ারি, ২০২০

মন-খারাপ

মন-খারাপ’টারে পকেটে নিয়া ঘুরতে বাইর হইলাম;

বাইর হয়া দেখি, আরে, পকেট’টাই তো নাই!

মন-খারাপের মতন আরো কতোকিছুই যে আসলে নাই, এই দুনিয়ায়

 

আমরা হাঁটতেছি

শোনো মদ, মাতাল হইতে যাও!
আমরা হাঁটতেছি, তাউরাইতেছি একটু একটু

দুপুরবেলার রইদ শরমাইতেছে,
লেকের পাড়ে গাছগুলা
দুলতেছে একটু একটু

‘হেই, হেই!’ মাছেরা ডাকতেছে
‘আমাদের কাছেও একটু বসো!’

শীতের বাতাসের মতন আমরা আসছিলাম,
আর চলে যাইতেছি তো…

 

তোমার কথাগুলা আমি অনুবাদ করে দিতে চাই ২

যেই ভাষা মরে গেছে,
সেইখানে তুমি কই?
আমিও আছি নাকি? পারবো থাকতে, কোনদিন?

তুমি,
একটা ভাষা থিকা আরেকটা’তে যাও
একটা বাসা থিকা আরেকটা বাসায়
একটা পাড়া থিকা আরেকটা পাড়ায়
একটা শহর থিকা আরেকটা শহরে…

তোমার ডানার নিচে বাতাস হইতে চায়া আমি
একটা টাইম থিকা খালি যাইতে থাকি আরেকটা টাইমের দিকে

ফারাক অইটুক থাকেই আসলে, সবসময়…

তুমি বললা তখন, “ও, বুঝছি
ট্রান্সলেশন!”

প্রুফ রিডিং

আমি তোমার ছোট্ট একটা বানান-ভুল
তুমি বারবার দেখতেছো, অথচ
চোখে পড়তেছে না,
মনে মনে খচখচ করতেছে –
কি জানি ভুল, কি জানি ভুল…

আমি তোমার কথা-বলার ভিতর
একটা উচ্চারণের ভুল
তুমি ভাবতেছো, ঠিকই তো আছে! অথচ
আমি বইসা আছি তোমার ঠোঁটের আগায়,
আল-জিবের ভিতরে,আত্মার ভিতরে একটা দম

আমি তোমার সমস্ত জীবন, ছোট্ট একটা ভুল
তোমার সাথে সাথে আছি, থাকতেছি…

যেই দিন তুমি থাকবা না, হারায়া যাবো তো
আমিও, তোমার না-থাকার ভিতর
Continue reading

নোটস: ফেব্রুয়ারি – মার্চ ২০২০

 

ফেব্রুয়ারি, ২৩

দেখবেন এইটা হয়, যখন কোন খারাপ কথা বলে মানুশ বা খারাপ কাজ করে; আর তারপর বুঝতে পারে, তখন কয় যে, ‘ফাইজলামি করছিলাম’ বা ‘বুৃঝি নাই’ 🙂 – এইভাবে এড়ায়।”

এইটা একটা ওয়ে-আউট। ‘ভুল বলছিলাম’ বা ‘সরি’ না বলতে পারা’টা খালি ইগো’র ঘটনা না, একটা ফেইলওরের ঘটনা হিসাবেই দেখতে পারাটা দরকার।

২.
আমি দেখি, সমস্যাটা হইতেছে যে কোন ঘটনা’রে একটা ‘কমন ন্যারেটিভ’-এর ভিতরে আটকানো’টা। যে, এইটার মানে হইতেছে অইটা, অইটার মানে হইতেছে সেইটা – এইরকমের কমন ফেনোমেনাগুলা।

একটা প্রটোটাইপের এগেনেস্টে আরেকটা প্রটোটাইপ দাঁড়া করানোটা কোন কাজের জিনিস বইলা মনেহয় না আমার কাছে। মানে, এইখানে ব্যক্তি বাদ দিয়া অবজেক্টিভ কোন সিস্টেম কাজ করে – তা না; বরং ব্যক্তি অবস্থানগুলারে, অ্যাক্টগুলারে আমরা একটা অবজেক্টিভ সিস্টেমের আন্ডারে যখন নিয়া বন্দী করি, প্রসেস হিসাবে সেইটা একইরকমের হইতে থাকে।

তাই বইলা প্যার্টানগুলা বা জেনারেল ফর্মগুলা যে এগজিস্ট করে না – তা তো না; একটা ন্যারেটিভের জায়গায় আরেকটা ন্যারেটিভ-ই বরং বেস্ট-ফিট করে। কিন্তু মুশকিল হইলো, সব নিয়মগুলাই আবার তাদের একসেপশনগুলা দিয়া ভ্যালিডেড হইতে থাকে। আলাপ আবার, অবজেক্টিভ সিস্টেমের ফাঁক দিয়া ব্যক্তিতেই ফিরা আসে।

ব্যক্তিরে বা তার অ্যাক্টরে যেইরকম একটা জেনারালাইজড প্রসেসের বাইরে দিয়া দেখা সম্ভব না, আবার যখন একটা জেনারালাইজেশনরেই আমরা আল্টিমেট ধইরা নিবো তখন ব্যক্তির অ্যাক্ট করার জায়গাগুলাও ন্যারো হইতে থাকার কথা।…

কোন ব্যক্তিরে বা অ্যাক্টরে ডিফাইন করা যায় না বা যাবে না, এইরকম না; বরং যেই যেইভাবে লোকেট করি আমরা সেইটারে আল্টিমেট হিসাবে না নেয়াটা থিওরেটিক্যালি জরুরি একটা জিনিস, সবসময়ই।

 

ফেব্রুয়ারি, ২৩

‘অটোবায়োগ্রাফিক্যাল’ বা ‘বেইজড অন অ্যা ট্রু স্টোরি’ দেখতে আমার ভাল্লাগে; এই কারণে না যে, এইগুলা ‘সত্যি’ জিনিস বলে, বরং ‘সত্য’ জিনিসটারে কেমনে কন্সট্রাক্ট করে – সেইটা অনেকবেশি ক্লিয়ারলি দেখা যায়, এইরকম ‘পারসোনাল’ ইভেন্টগুলার ভিতরে।

যেমন গতকালকে @Pawn Sacrifice দেখার সময় মনে হইতেছিল; ববি ফিশারের দাবা’তে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ান হওয়ার ঘটনা’টা নিয়া বানানো; অইখানে ববি ফিশার’রে দেখানো হইতেছিল, খুবই প্যারানইয়া টাইপের। খেলার আগে ভাইগা যায়। ফার্স্ট খেলায় হাইরা যাওয়ার পরে কয়, পাবলিকের সামনে খেলবো না, ক্যামেরার আওয়াজে ডির্স্টাব হয়, এই সেই। তো, এইগুলারে প্যারানইয়া মনে হওয়ারই কথা, পাবলিকের, মানে আমাদের। কারণ সে যেইগুলারে তার সমস্যা বলতেছে, অন্যজনের বা আরো অনেকের তো এই সমস্যা নাই! তার কেনো হইতেছে! তার মানে এই সমস্যাগুলা নাই আসলে! 🙂

পরে, তার অপোনেন্ট যখন হারতে থাকে, সেই অপোনেন্টও চেয়ার থিকা উইঠা বসে, কয়, চেয়ারের পায়ার ভিতরে কিছু ঘুরতেছে, সে অই চেয়ারে বসবো না। মনে হইতে পারে, তারও প্যারানইয়া হইছে! 🙂 কিন্তু না, পরে তার’টা প্রমাণ পাওয়া যায়, দেখা যায়, স্টিলের পাত ঠিকাছে, পাতের ভিতরে দুইটা মৌমাছি ঘুরতেছিল আসলেই। 🙂 Continue reading

কবিতা: নভেম্বর – ডিসেম্বর, ২০১৯

 

সন্ধ্যায়

অনেক দূর থিকা আসছি,
অনেক দিন ধইরা আসতেছি আমি

কুয়াশার ভিতরে, রেললাইন পার হয়া
একটা ছোট্ট গলির রাস্তায় দাঁড়ায়া আছি, পথ ভুইলা, হঠাৎ

সন্ধ্যা হয়া আসছে, পাড়ার মসজিদ থিকা
মাইকে বাজতেছে আযান…

ধুপ জ্বালাইতেছে হিন্দু বাড়িতে একটা

কবুতরগুলা উইড়া যাইতেছে, তাদের কাঠের খোপগুলার দিকে, ছাদের…

আমি আসতেছি সবসময়, আর যাইতেছি না কোথাও

 

লাভ ইজ অ্যা ডগ ফ্রম হেল

ফ্যাসিস্ট – আই লাভ ইউ।
লিবারাল – আই লাভ ইউ।
অ্যানার্কিস্ট – আই লাভ ইউ।

আই লাভ ইউ – সব শালা বাইনচোত!

 

ওয়ান লাইনার

দৃশ্যগুলা মুছে যাবে, কথাগুলা কেরোসিনের কুপির মতন একটু একটু কইরা ফেড হইতে থাকবে…

Continue reading

কবিতা: অগাস্ট – অক্টোবর, ২০১৯

সুখী মানুষের জামা

একবার এক দর্জি তার বাচ্চার জন্য একটা জামা বানাইলো। বানানোর পরে দেখলো, জামা’টা বড় হয়া গেছে অনেক। তখন জামাটা সে রাইখা দিলো। যে, বড় হইলে পরতে পারবে। তারপরে সে আবার একটা জামা বানাইলো। ছোট হয়া গেলো সেই জামা। আবারো বানাইলো। আবারো ছোট হইলো। এইভাবে তার বানানো কোন জামা তার বাচ্চাটা পরতে পারলো না আর। বাজার থিকা অন্য জামা কিইনা দিলো তারে। আর বড় যে জামাটা বানাইছিলো সবচে আগে, সেইটার কথা সে ভুইলা গেলো ততদিনে, ছোট ছোট জামা বানাইতে বানাইতে।

 

কালা রংয়ের জ্যাকেট

স্টেডিয়ামের কনসার্ট শেষে বাইর হয়া আসছি সোহরাওয়ার্দি’র মাঠে। সেইখানে থিকা উঠার সময় কালা রংয়ের জ্যাকেট’টা ফালায়া গেলাম। তখন রাত হয়া আসছে, শীতের সন্ধ্যাবেলা পার হওয়ার পর। রাস্তায় গিয়া মনে হইলো। খারাপই লাগতেছিল। জ্যাকেট’টা ভালো ছিল। আর পাওয়া যাইবো না মনেহয়। সেই না-পাওয়া’টা থাইকা গেলো কোথাও না কোথাও।

মিউনিসিপ্যালিটি অথরিটি এক সুইমিংপুল বানাইছে নাগরিকদের গোসল করার লাইগা। সেইখানে গেলাম আমরা। সাঁতরাইলাম। দেখি আরো অনেকে আসতেছে। মানুষ বাড়তে বাড়তে হয়া উঠলো সেইটা নদীর পাড়, তারপর বিশাল সি-বিচ। একটা কবিতার লাইন আইসা হারায়া গেলো। পাড়’টা বাঁধাই করা। আঁকিবুঁকি কি জানি আঁকতেছে পোলাপাইন – ‘পুলিশ চুদি না!’ লিইখা আবার মুছে ফেলতেছে। পার্কিং জোনে গিয়া খারাপ লাগতেছিল আবার আমার। কে জানি আসছে, কার সাথে জানি আমি কথা কইতেছি। আমার কালা জ্যাকেট’টা যে নাই মনে পড়লো তখন।

আমার মনে হইলো, এই জিনিস তো আমি হারাই নাই। খালি স্বপ্ন বইলাই মিসিং লাগে মনেহয়। মনেহয় সারাক্ষণ, সবখানে, কি জানি নাই, কি জানি নাই… তারপর মনে হইলো, তোমার স্বপ্নে অন্য অনেক মানুষের লগে ঘুরে বেড়াইতেছি আমি, তোমারে ছাড়াই।

 

একটা ছবি

ছোট একটা বারান্দায়
মুখামুখি দুইটা চেয়ার বইসা আছে

বলতেছে, রাস্তা থিকা আমাদের একটা ছবি তোলেন!

 

আমার সোনার হাঁস

সোনার ডিম-পাড়া হাঁস আমার,
আমার ইচ্ছা হয় খুন করি তোমারে

তুমি হাঁস, ডিম পাড়তেই থাকো
আর তোমারে আমি থামাইতেই পারি না

তোমার সোনার ডিম, তোমারে বানায়া ফেলে
অন্য একটা হাঁস

ইচ্ছা হয়, তোমারে খুন করি আর দেখি
তুমি জাস্ট অন্য একটা হাঁস

ইমাজিনেশনের, আমার

Continue reading

কবিতা: জুলাই, ২০১৯

রেইনবো

ভণিতার লগে পথ হাঁটলাম,
বললাম, “বৃষ্টির পরে রাস্তায় হাঁটতে আরাম…”

ভণিতা হাসলো তখন,
অল্প একটু রইদের মতোন

যেন কোন অরিজিনালিটিরই আর কোন দরকার নাই
আমরা বুঝলাম,

একটু কথা বলার পরে আমরা ভাবলাম
অনেক অনেক নিরবতাই তো ভালো,
একটা সকালবেলার


মরা কুয়ার কাছে

একটা জিনিস মনে না রাখার লাইগা
অনেককিছু ভুইলা থাকতে চাইতেছি আমরা

মরা কুয়ার কাছে গিয়া বইলা আসতেছি,
“ভুইলা যাইও না!”


আমাদের আকাশের মেঘ

আমি তোমারে দেখবো না,
তোমার পাশে বইসা দেখবো, আকাশে মেঘ

কালো একটা স্লেটে শাদা চক দিয়া কিছু একটা লেখার পরে
মুইছা দিলে যেইরকম ঝাপসা, গ্রে একটা কালার
হয়া থাকে; আমরাও এইকরম
কথা কইতে থাকবো, আর
আমার পাশে বইসা তুমি দেখবা, আকাশে মেঘ…

তুমি আমারে দেখবা না, বলবা “মেঘ
একদম তোমার মতোন, এতো মিথ্যা কথা
কয়!”
Continue reading