কবিতা: মে, ২০২২

বাজার

শসা আর চালকুমড়া আলাপ করতেছে।

চালকুমড়া বলতেছে, তুমি আরেকটু মোটা হইলেই তো আমার মতো হইতে পারতা।
শসা বলতেছে, তুমিও কি আরেকটু চিকন হইতে পারতা না?

শসা আর চালকুমড়া তারপরে
শসা আর চালকুমড়া হয়া-ই থাকতেছে।

 

বিকালবেলায়, পূর্বাচল তিনশ ফিটে

বিকাল হইতেছে।
কোকাকোলার বোতলের ভিতরে সূর্য ডুবে যাইতেছে।
কয়েকটা ফটো-অপারচুনেটিও শেষ হয়া আসতেছে, তার সাথে।

শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সবুজ টিনের ভিতরে
কয়েকটা গাছ মারা যাবে বইলা দাঁড়ায়া আছে।
“আমরা কি কেবলই ছবি?”
মোবাইলফোনের ক্যামেরারে জিগাইতেছে।

বিকালবেলায় বাতাস নিরব।
যেন সবগুলা কথার শেষে একটা দাড়ি বসায়া দিতেছে।

 

‘আর আমারে মারিস নে মা’

আমি যেন ১দিনের একটা বাচ্চা
আমারে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়া
চলে যাইতেছে আমার মা

আমি দেখতেছি তাঁর চলে-যাওয়া
আবছা ছায়াটা

আমি বলতে পারতেছি না
“আর আমারে মারিস নে মা!”

 

বৈশাখের বিস্টি

ব্যারা
উঠার
পরে
ড্রাগ-এডিক্টের
কান্দার
মতো
বিস্টি
নামলো
বৈশাখের

 

সুখ-দুক্খের কথা

আমার কোন দুক্খ নাই।
মানে, দুক্খের কথা কইতে গেলে
যতোটা দুক্খ থাকতে হয় মনে,
সেইটা তো রেয়ার-ই, মাঝে-মধ্যে
বানায়া নিতে হয়, আর যেই দুক্খ
আছে মনে, তারে ভুইলা থাকতে হয়, তখন
মনে হয়, মনে তেমন কোন দুক্খ নাই! অথবা
যা আছে, তা তো সামান্য, না-থাকার মতোই…

এইরকম না-থাকার দুক্খগুলার কথা যখন মনেহয়
তখন বিস্টি-শেষে গাছের পাতাগুলা ঝলমল করে,
বিকালের রাস্তা চুপচাপ, যেন ফ্রেমের সাথে এডজাস্ট করে নিতেছে নিজেরে,
নিজ বইলা আর কিছু নাই!

এইরকম সুন্দর দুক্খগুলা আমাদের, আছে,
নাইও তো তেমন একটা আর…

Continue reading

কবিতা: এপ্রিল, ২০২২

সামার ওয়াইন (গরমের দিনের শরবত)

রাস্তায় রাস্তায় হেঁটে বেড়াইতেছি আমি
কয়েকটা কাঠাল-পাতার লোভে

একটা টুনটুনি আমার পিছন পিছন ঘুরতেছে
বলতেছে, এই ছাগল’টা আমার ক্রাশ!

চৈত্র-মাসের উল্টা-পাল্টা বাতাসে আমি
জৈষ্ঠ্য-মাসের স্বপ্ন দেখতেছি
লালমাটিয়ায়, মোহাম্মদপুরে…

বিকাল

দেয়ালে ঠেস দিয়া দাঁড়ায়া থাকা
তোমার আয়েসি ভঙ্গির মতো

রইদ আইসা বইসা আছে গাছের পাতাগুলাতে,
অনেকগুলা ধুলা-বালি ওড়তেছে, রাস্তার বাতাসে

কই যে যাবে তারা, কই যে যাবে…


শাহবাগের ছড়া ১

পুলিশ আমার ভাশুর লাগে
বাকশাল আমার বাপ
প্যার্টিয়ার্কির পুটকি চাটি
আমরা শাহবাগ!


কমদামি সবজি

বাজারে,
কম দামে
বেচা হইতেছে
কোন সবজি?

পুরুষ মানুশের
বিচি।

কইলো দোকানদারে,
আমার দুইটাও
ফ্রি’তেই দিতেছি
Continue reading

কবিতা: মার্চ ২০২২

দুঃখ নিয়া লেখা কবিতাগুলার কথা

মেকি দুঃখগুলা দিয়া এভারেজ কবিতাগুলা লেখা হয়
সত্যিকারের দুঃখ ভালো-কবিতার মতোই রেয়ার ঘটনা

যেই দুঃখ নিয়া কবিতা লেখতে পারো তুমি,
সেইটা আসলে অই দুঃখের ঘটনা হয়া-ই থাকে না

“অর ভি দুখ হে জামানা মে, মহব্বত কি সিভা
রাহাতে অর ভি হ্যায় উসুল কি রাহাত কি সিভা”*

যারা জানে তারা জানে, যারা জানে না তারা জানে না


*ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের কবিতা

সন্ধ্যার রাস্তায়

জ্যাম আইসা বসে আছে সন্ধ্যার রাস্তায়
অনেক অনেক হেডলাইট, শপ-সাইন, রাস্তার বাতি
দেখাইতেছে, কতো কতো আন্ধার, দেখো, আমাদেরই চারপাশে

মশার গান রবীন্দ্রসঙ্গীতের মতো ক্যাঁড়ক্যাঁড় করতেছে
একটানা সুরে, মিরপুরে, মেট্রোরেলের নিচে
শুদ্ধ বাংলা-বানানের মতো কামড়াইতেছে আমাদের শরীরে

আরো অনেক অনেক মানুশের লগে বইসা ভাবতেছি আমি,
দুনিয়াতে ঘর আছে বইলাই কি রাস্তাগুলা ভালো?

এতো এতো বাস, কার, সিএনজি, রিকশায়, আর হাঁটতে হাঁটতে
চলে যাইতেছি আমরা কোন না কোন বাসার দিকেই তো…

বাসা, একটা ধারণা
কোন ঘর, কোন জায়গা, কোন ফিলিংস, কোন মেমোরি
বা অন্য যে কোন কিছুই হয়তো

আর কোন না কোন বাসার দিকেই যাইতেছি আমরা
সবসময়, আর একটা সন্ধ্যাবেলায়
ট্রাফিক জ্যামে বইসা থাকার ভিতর দিয়া

সেলফ-পোর্টেট

অই তো!
একই তো!
বুঝছি, বুঝছি!

সবকিছু বুঝার পরে
বেকুব একটা ভাব
নিয়া
বইসা রইছি

বেকুবগুলা বুঝতেছে
আমি চালাকও আছি
কিছুটা

তা নাইলে
বেকুব হয়া
লোকটা
কেমনে থাকে!

মহা-ধুরন্ধরই
মেবি…

আমি
এইসবই
বুঝছি

বুঝা’র পরে,
বুঝছি তো!
এইরকম একটা
বেকুব-ভাব নিয়া
বইসা রইছি

Continue reading

কবিতা: ফেব্রুয়ারি ২০২২

জ্বর

সারা শরীরে আগুন নিয়া মরুভূমিতে দৌড়াইতেছি আমি
আম্মা গো, আপনার হাত, কুয়ার পানি আমার
আর কতো দূর!

 

বিচার

বিচারে আমার মৃত্যুদন্ড হইলো। আমারে নিয়া যাওয়া হইলো সকালবেলায় কুয়াশা-ঘেরা কোন একটা শীতের দেশের কান্ট্রি ফার্মে। অইখানে মোটা একটা গাছের গুড়ি রাখা, সাইডে কুড়াল নিয়া দাঁড়ায়া আছে একজন। চেহারা দেখা যায় না স্পষ্ট। আর সামনে একটা কাঠের গরু বানানো। গরু’টা কইলো, তুমি যে আমার মাংস খাইছো, ব্যাপারটা আমার পছন্দ হয় নাই।


জীবন আর মরণ

জীবন – তোমার দিকে তাকায়া থাকি আমি অনেক অবিশ্বাস নিয়া।
মরণ – তোমার দিকে তাকায়া আছি আমি একটা স্থির বিশ্বাস নিয়া।

বাঘ ও বিলাই

একটা বিলাই তো নিজেরে বাঘ মনে করতেই পারে। আয়নাতে নিজের মুখ দেইখা। দুইটা ভেংচি কাইটা। বা কয়েকটা মুর্গিরে বাড়ির উঠান থিকা খেদায়া দিয়া। নিজেরে নিজে ভাবতেই পারে, আমি তো একটা বাঘ!

কিন্তু একটা বাঘ যদি নিজেরে একবার বিলাই মনে করে, সেই জায়গা থিকা তারে বাইর করা মুশকিল। বাঘ যদি নিজে নিজেরে বাঘ না মনে করতে পারে, তারে অন্য কেউ সেইটা বিশ্বাস করাইতে পারবে – এই চান্স আসলে কম।

বাংলাদেশের মানুশ-জন বা পিপল-পাওয়ার জিনিসটা হইতেছে অই বাঘ’টা, যে নিজেরে বিলাই মনে করে।

ড্রিম

নিড়াইয়া ফেলা ধানের খেতে
ভোরের কুয়াশার মতন

শীত হইয়া
ঘুমায়া ছিল শে
শরীরে আমার

Continue reading

কবিতা: জানুয়ারি, ২০২২

কবিতা লেখার দিন

কবিতা লেখার দিন
শেষ হইছে আমার
কয়েক বছর আগেই

কিন্তু অনেক সময়
শব্দগুলা এইটা বুঝতে চায় না
অরা কবিতার মতো একটা কিছু হইতে চায়

আর পরে মন-খারাপ করে
কয়, হ, শব্দগুলাই তো আর কবিতা না!
কবিতা হইতেছে এক তিল অন্ধকার, মনের।

 

দুপুরবেলা

বিশতলা বিল্ডিংয়ের
ছাদের কোণায়
একটা চিল আইসা বসে,
বইসাই থাকে

যেন কোন বুড়া বাপ,
বাঁইচা থাকতে থাকতে
টায়ার্ড

শীতের দিনে,
রইদ পোহাইতেছে

 

কবিতা-টবিতা, এইসব আর কি…

পার্ট ১

১.
সে এক আবুল হাসান আছে, কেবলই স্যাড হয়া থাকে

২.
আমি পত্রিকায় পত্রিকায় নিউজ ছাপায়া দিবো, তুমি শামসুর রাহমান

৩.
হেলাল হাফিজ নিবে, হেলাল হাফিজ, নানান রকমের হেলাল হাফিজ আছে

পার্ট ২

১.
মানুশ বড় অসহায়, তুমি শক্তি চট্টোপাধ্যায় হয়ে তার পাশে দাঁড়াও

২.
আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হয়ে বসে থাকি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা পড়বো বলে

৩.
এই নবারুণ ভট্টাচার্য আমার দেশ না

 

বিকাল

এইখানে বিকাল
কুমড়া ফুলের মতো
ম্লান

Continue reading