কবিতা: মার্চ ২০২২

দুঃখ নিয়া লেখা কবিতাগুলার কথা

মেকি দুঃখগুলা দিয়া এভারেজ কবিতাগুলা লেখা হয়
সত্যিকারের দুঃখ ভালো-কবিতার মতোই রেয়ার ঘটনা

যেই দুঃখ নিয়া কবিতা লেখতে পারো তুমি,
সেইটা আসলে অই দুঃখের ঘটনা হয়া-ই থাকে না

“অর ভি দুখ হে জামানা মে, মহব্বত কি সিভা
রাহাতে অর ভি হ্যায় উসুল কি রাহাত কি সিভা”*

যারা জানে তারা জানে, যারা জানে না তারা জানে না


*ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের কবিতা

সন্ধ্যার রাস্তায়

জ্যাম আইসা বসে আছে সন্ধ্যার রাস্তায়
অনেক অনেক হেডলাইট, শপ-সাইন, রাস্তার বাতি
দেখাইতেছে, কতো কতো আন্ধার, দেখো, আমাদেরই চারপাশে

মশার গান রবীন্দ্রসঙ্গীতের মতো ক্যাঁড়ক্যাঁড় করতেছে
একটানা সুরে, মিরপুরে, মেট্রোরেলের নিচে
শুদ্ধ বাংলা-বানানের মতো কামড়াইতেছে আমাদের শরীরে

আরো অনেক অনেক মানুশের লগে বইসা ভাবতেছি আমি,
দুনিয়াতে ঘর আছে বইলাই কি রাস্তাগুলা ভালো?

এতো এতো বাস, কার, সিএনজি, রিকশায়, আর হাঁটতে হাঁটতে
চলে যাইতেছি আমরা কোন না কোন বাসার দিকেই তো…

বাসা, একটা ধারণা
কোন ঘর, কোন জায়গা, কোন ফিলিংস, কোন মেমোরি
বা অন্য যে কোন কিছুই হয়তো

আর কোন না কোন বাসার দিকেই যাইতেছি আমরা
সবসময়, আর একটা সন্ধ্যাবেলায়
ট্রাফিক জ্যামে বইসা থাকার ভিতর দিয়া

সেলফ-পোর্টেট

অই তো!
একই তো!
বুঝছি, বুঝছি!

সবকিছু বুঝার পরে
বেকুব একটা ভাব
নিয়া
বইসা রইছি

বেকুবগুলা বুঝতেছে
আমি চালাকও আছি
কিছুটা

তা নাইলে
বেকুব হয়া
লোকটা
কেমনে থাকে!

মহা-ধুরন্ধরই
মেবি…

আমি
এইসবই
বুঝছি

বুঝা’র পরে,
বুঝছি তো!
এইরকম একটা
বেকুব-ভাব নিয়া
বইসা রইছি

Continue reading

কবিতা: ফেব্রুয়ারি ২০২২

জ্বর

সারা শরীরে আগুন নিয়া মরুভূমিতে দৌড়াইতেছি আমি
আম্মা গো, আপনার হাত, কুয়ার পানি আমার
আর কতো দূর!

 

বিচার

বিচারে আমার মৃত্যুদন্ড হইলো। আমারে নিয়া যাওয়া হইলো সকালবেলায় কুয়াশা-ঘেরা কোন একটা শীতের দেশের কান্ট্রি ফার্মে। অইখানে মোটা একটা গাছের গুড়ি রাখা, সাইডে কুড়াল নিয়া দাঁড়ায়া আছে একজন। চেহারা দেখা যায় না স্পষ্ট। আর সামনে একটা কাঠের গরু বানানো। গরু’টা কইলো, তুমি যে আমার মাংস খাইছো, ব্যাপারটা আমার পছন্দ হয় নাই।


জীবন আর মরণ

জীবন – তোমার দিকে তাকায়া থাকি আমি অনেক অবিশ্বাস নিয়া।
মরণ – তোমার দিকে তাকায়া আছি আমি একটা স্থির বিশ্বাস নিয়া।

বাঘ ও বিলাই

একটা বিলাই তো নিজেরে বাঘ মনে করতেই পারে। আয়নাতে নিজের মুখ দেইখা। দুইটা ভেংচি কাইটা। বা কয়েকটা মুর্গিরে বাড়ির উঠান থিকা খেদায়া দিয়া। নিজেরে নিজে ভাবতেই পারে, আমি তো একটা বাঘ!

কিন্তু একটা বাঘ যদি নিজেরে একবার বিলাই মনে করে, সেই জায়গা থিকা তারে বাইর করা মুশকিল। বাঘ যদি নিজে নিজেরে বাঘ না মনে করতে পারে, তারে অন্য কেউ সেইটা বিশ্বাস করাইতে পারবে – এই চান্স আসলে কম।

বাংলাদেশের মানুশ-জন বা পিপল-পাওয়ার জিনিসটা হইতেছে অই বাঘ’টা, যে নিজেরে বিলাই মনে করে।

ড্রিম

নিড়াইয়া ফেলা ধানের খেতে
ভোরের কুয়াশার মতন

শীত হইয়া
ঘুমায়া ছিল শে
শরীরে আমার

Continue reading

কবিতা: জানুয়ারি, ২০২২

কবিতা লেখার দিন

কবিতা লেখার দিন
শেষ হইছে আমার
কয়েক বছর আগেই

কিন্তু অনেক সময়
শব্দগুলা এইটা বুঝতে চায় না
অরা কবিতার মতো একটা কিছু হইতে চায়

আর পরে মন-খারাপ করে
কয়, হ, শব্দগুলাই তো আর কবিতা না!
কবিতা হইতেছে এক তিল অন্ধকার, মনের।

 

দুপুরবেলা

বিশতলা বিল্ডিংয়ের
ছাদের কোণায়
একটা চিল আইসা বসে,
বইসাই থাকে

যেন কোন বুড়া বাপ,
বাঁইচা থাকতে থাকতে
টায়ার্ড

শীতের দিনে,
রইদ পোহাইতেছে

 

কবিতা-টবিতা, এইসব আর কি…

পার্ট ১

১.
সে এক আবুল হাসান আছে, কেবলই স্যাড হয়া থাকে

২.
আমি পত্রিকায় পত্রিকায় নিউজ ছাপায়া দিবো, তুমি শামসুর রাহমান

৩.
হেলাল হাফিজ নিবে, হেলাল হাফিজ, নানান রকমের হেলাল হাফিজ আছে

পার্ট ২

১.
মানুশ বড় অসহায়, তুমি শক্তি চট্টোপাধ্যায় হয়ে তার পাশে দাঁড়াও

২.
আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হয়ে বসে থাকি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা পড়বো বলে

৩.
এই নবারুণ ভট্টাচার্য আমার দেশ না

 

বিকাল

এইখানে বিকাল
কুমড়া ফুলের মতো
ম্লান

Continue reading

কবিতা: ডিসেম্বর, ২০২১

দুনিয়ারে দেখার চোখ

আমার একটা চোখ বড়
আর একটা চোখ ছোট

বড় চোখটা দিয়া আমি
ছোট ছোট জিনিসগুলা দেখি

ছোট চোখটা দিয়া আমি
বড় বড় জিনিসগুলা দেখি

তাই বইলা দুনিয়াটা সমান সমান
দেখায় না, বরং সবসময় দেখি
এবড়ো-থেবড়ো, উঁচা-নিচা আর ছোট-বড়

 

শীতের সন্ধ্যা

সন্ধ্যায়
শীতের বাতাসের
গন্ধও সুন্দর,
যদি তোমার
থাকে
রাতে ঘুমানোর
মতন
একটা
ঘর।

 

রেললাইন

একটা অন্ধকার হেঁটে যাইতেছে
আরেকটা অন্ধকারের দিকে,
বলতেছে, আমরা অনেক সুন্দর, বুঝছো!

একটা ইগনোরেন্স হেঁটে যাইতেছে
আরেকটা ইগনোরেন্সের লগে,
বলতেছে, আমরা অনেক ইনোসেন্ট, বুঝছো!

একটা ভুল-বুঝাবুঝি সবসময় থাকতেছে
আরেকটা ভু্ল-বুঝাবুঝি’র লগেই,
বলতেছে, আমরা ছাড়া আমাদেরকে আর কে বুঝবে, বলো!

 

শীতের সন্ধ্যা ২

মানুশের কোন কাজ নাই
মানুশ খই ভাজতেছে

চুলায় খই রাইখা
বিছানায় আইসা
ঘুমায়া পড়তেছে, সন্ধ্যাবেলায়

খইগুলা ফুটতেছে
ফুটতে ফুটতে
কড়াইয়ের বাইরে চলে যাইতেছে

মানুশের কোন কাজ নাই
মানুশ হাঁটতেছে

হাঁটতে হাঁটতে
একটা রাস্তা পার হয়া
আরেকটা রাস্তাতে গিয়া
হারায়া যাইতেছে

 

শীতের সন্ধ্যা ৩

এমনই
বদনসিব
শীতের বৃষ্টিতে
ভিইজা যায়
আমাদের
লাস্ট সিগারেট;
লাইটার থাকে না লগে,
আর রিকশাঅলা গায়
ভাটিয়ালি সঙ্গীত

Continue reading

কবিতা: নভেম্বর, ২০২১

‘আমার মায়ের সোনার নোলক’

আমি হইতেছি আমার মায়ের হারায়া যাওয়া বাছুর
সন্ধ্যা হয়া আসছে, সূর্য ডুবে গেছে
মাগরিবের আজান দিয়া দিছে
কিন্তু আমি আর ঘরে ফিরা আসতেছি না,
আমি হারায়া গেছি না-ফিরার অন্ধকারে
আমার আম্মা আমারে আর খুঁজে পাইতেছে না
আমরা দুইজন দুইটা অন্ধকারের ভিতর
আমাদেরকে খুঁজতেছি,
না-পাওয়ার।

 

লং লিভ রেভিউলেশন

আমাদের কনফ্লিক্টগুলা পুরান
কিন্তু আমাদের বাঁইচা থাকাগুলা সবসময় নতুন

শীতের বাতাসের গায়ে লাইগা থাকা বসন্তের মেমোরি’র মতন

 

মেটাফোর ১১

বাতাস
আজ

তোমার জামার
রঙের মতো

ফ্লোরাল

 

থাকো!

ভূতের মুখে
রাম নামের মতো
থাকো!

 

কপি-রাইটার

একটা গল্পের ভিতরে আমি তোমারে পাইছিলাম
একটা কবিতার ভিতরে আমি তোমারে হারায়া ফেলছিলাম

কিন্তু তুমি বললা, আমি তো রিয়ালিটি একটা!
আর একটা ফ্যান্টাসির ভিতরে গিয়া নিজেরে খুঁইজা পাইলা

বোতলের ভিতরে একটা জ্বীন তড়পাইতেছে, বলতেছে,
আমি খারাপ মানুশ! আমারে খারাপ মানুশ হিসাবে ট্রিট করেন!

কয়েকটা পিনাটের লাইগা তুমি একটা বান্দর হয়া রইলা,
ওয়েস্টবিনে, দুমড়ানো-মুচড়ানো
অ্যাড এজেন্সির বাতিল হওয়া কোন স্ক্রিপ্ট একটা

Continue reading