ইংলিশ-ওয়ার্ড নিয়া
মাদরাসা’তে পইড়াও আপনি ইংলিশ ওয়ার্ড কইতে পারেন কিন্তু! ইংলিশ মিডিয়ামে পইড়াও আরবী-ফার্সি লবজ ইউজ করতে পারেন! বাংলা-ভাষা ‘সংস্কৃত-শব্দের’ বাইরে এই দুইভাগে (এবং আরো কয়েকটা ভাগে) ভাগ করা না, ডিয়ার বইন ও ভাইয়েরা!
আমি বুঝি, আমার সো-কল্ড ইংলিশ ওয়ার্ডে কেন কিছু লোকজন চেইতা যায়, অরা ভাবে, আরে এই লোক তো আসলে বাংলা-মিডিয়াম, ইংলিশ ওয়ার্ড কেন ইউজ করবে! মানে, আমার লজ্জা-শরম নাই কেন, ইংলিশ-ল্যাঙ্গুয়েজ না জাইনাও কেন ইংলিশ ওয়ার্ড ইউজ করি আমি! আমি করতে পারি, কারণ আমি শব্দের পাছায় সিল মারতে শিখি নাই, এই ‘চালাকি’ আমি শিখবোও না।
আগেও বলছি, আবারো বলি, শব্দের কোন বাংলা-ইংলিশ-পর্তুগিজ নাই, যা আপনি বলতে পারেন, আপনার আশেপাশের লোকজনরে বুঝাইতে পারেন, অইগুলাই বাংলা-শব্দ, অইটাই বাংলা-ভাষা। কথা কইতে গেলে শব্দ লাগে, কিন্তু শব্দগুলাই ভাষা না; ভাষার ভিতরে নতুন শব্দেরা আসে, বাতিল হয়, মারাও যায়।
নদীর পানিতে যেমন মাছ থাকে অনেক। তাই বইলা মাছগুলাই নদী না। নদীতে পানি থাকলে অনেক মাছ থাকে, যায়, আসে; কিন্তু নদী না থাকলে কোন মাছ থাকে না, ভাষা না থাকলে কোন শব্দ থাকে না, অন্য নদীতে চইলা যায়। নতুন শব্দ বানানি মাছ-চাষের কোন ঘটনা না, বানানি তো যায়-ই, কিন্তু কোন আত্মা থাকে না। (উপমা’রে বাস্তবতা ধইরা নিলে হবে না।)
আমি বলতে চাইতেছি, আপনার ইংলিশ-ওয়ার্ডের চিন্তাটা ছাড়েন, নাক দিয়া পানি ঢুকাইলে শ্বাস নিতে পারবেন না। যখন ভাষার নদীতে সাঁতরাইবেন, শ্বাস নিতে পারাটা জরুরি ঘটনা। এই কারণে দেখবেন, অনেকে খালি হাত-পা নাড়াইতেছেন, কিন্তু সাঁতরাইতে পারতেছেন না। নিজেরে ভাষার ভিতরে ছাইড়া দেন। এইটা আমার রিকোয়েস্ট। তখন আর যা-ই হোক, ইংলিশ ওয়ার্ড আইসা আপনাদেরকে এতো প্যারা দিবে না।
নয়া বাকশাল কি ফ্যাসিস্ট?
নয়া বাকশাল অবশ্যই একটা totalitarian শাসনের অবস্থা, যেইখানে একজন মানুশ রাষ্ট্রের এবং তার ডমিনেন্ট আইডিওলজি’রে মাইনা নিতে বাধ্য, এর বাইরে যাইতে পারবে না। এইটার শুরু হইছে মানুশের ভোটের অধিকার’রে বাতিল করার ভিতর দিয়া, পার্লামেন্টরে একটা চিড়িয়াখানা বানানোর ভিতর দিয়া। কিন্তু এইটারে কি ফ্যাসিস্ট বলবো আমরা?
ফ্যাসিস্ট মানে খালি এইটা না যে, এইখানে কোন বিরুদ্ধ-মত থাকতে পারবে না। বরং একটা লেভেলের ‘ভিন্নমত’ না থাকলে সেইটা ‘ফ্যাসিস্ট’ হওয়াটাই সম্ভব না। এইখানে ‘ধর্মান্ধ মৌলিবাদীরা’ যেমন থাকবে ‘অতি বিপ্লবী বামপন্থী’রাও থাকবে এবং এইরকমের ‘ভিন্নমত’গুলা এমন একটা ঘোঁট পাকাবে যে, আর কোন অপশনই থাকবে না! মানে, ফ্যাসিস্ট হইতেছে এমন একটা অবস্থা যেইখানে কমিউনিস্ট বিপ্লব, ধর্মীয় বিপ্লব, জাতীয়তাবাদী বিপ্লবসহ যে কোন কিছু করার অধিকার খালি একটা গ্রুপের হাতে থাকে। ফ্যাসিজমের ফিক্সড কোন আইডিওলজি নাই। ফ্যাসিজম হইতেছে একটা ফ্যাশন। (ইন ইটস কোর।) রেটরিকটাই বাস্তব হয়া উঠে। বাস্তব বইলা কিছু থাকে না। কিন্তু ফ্যাসিস্ট বলতে এইটারে মিন করি না আমরা, বাংলাদেশে।
ফ্যাসিস্ট বলতে আমরা বুঝি হিটলারের জার্মানিরে। আর অই সংজ্ঞার ভিতরে যখন নয়া বাকশালরে আমরা ফেলতে যাই, তখন খেয়াল করতে পারার কথা যে, আরে, এইটা এইটা তো মিলে না! যেমন ধরেন, নাজী জার্মানির তো রেসিয়াল প্রাইড ছিল একটা, নয়া বাকশালের ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এ এই জিনিস তো নাই-ই, উল্টা ‘বাঙালি’ মানে হইতেছে ‘বাংলা-মদ’ টাইপের ইনফিরিয়র, মিডিওকার, অচ্ছুৎ টাইপের জিনিস। এইরকম আরো উদাহারণ দেয়া সম্ভব, যেইটা ‘ফ্যাসিজম’র প্রেস্কাইবড (“আসল” না) সংজ্ঞার লগে মিলাইতে পারবেন না।
তারপরেও দেখবেন নয়া বাকশাল’রে ফ্যাসিস্ট বলার প্রাকটিস চালু আছে। আমি মনে করি, এইটা এক ধরণের ইনডেমনিটি দেয়ার ঘটনা, নয়া বাকশালরে। যে যা না, তারে তা বইলা, সেইটা থিকা তারে বাঁচানোর ঘটনা। যে, নয়া বাকশাল তো খারাপ, কিন্তু ফ্যাসিস্ট তো না!
কিন্তু আলাপ কখনোই এইটা না যে, নয়া বাকশাল ফ্যাসিস্ট কিনা, বরং নয়া বাকশাল হইতেছে একটা totalitarian শাসন, ফ্যাসিজমের একটা বাংলাদেশি ভার্সন। যেইটা ১৯৭২-৭৫ সালে বাংলাদেশে শুরু হইছিল, স্ট্যানিলিজমের মতন, নাজীজমের মতন আর যার থ্রেট’টারে লোকেট করতে, থিওরাইজ করতে ব্যর্থ হইছি আমরা। ১৯৯০-এ এরশাদের পতনের পরে একটা ডেমোক্রেটিক বেইজ তৈরি করতে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে পিপলস এজেন্সি তৈরি করতেও ব্যর্থ হইছি আমরা বাংলাদেশে, যেই ফেইলওরগুলার ভিতর দিয়া, (২০০৭ সালের) ১/১১’র পরে এই নয়া বাকশালি শাসন পাইছি আমরা। পলিটিক্যালি, এইটা এখন একটা পিক মোমেন্টে আছে।…
যে কোন অবস্থার ভিতর দিয়াই, এই নয়া বাকশালি শাসনের শেষ হইলেও, এর অভ্যাসগুলারে, রীতি-নীতিগুলারে যদি আমরা আইডেন্টিফাই করতে রাজি না হই, এইটা ফিরা ফিরা আসতে থাকবে নতুন নতুন ফরম্যাটে। আর এই কারণে আমাদেরকে ফার্স্টে মানতে রাজি হইতে হবে যে, এইটা কমন কোন ফ্যাসিস্ট রিজিম না, এইটা নয়া বাকশালের আমল। একটা ইউরোপিয়ান লিবারালিজমের জায়গা থিকা এর মোকাবেলা সম্ভব হবে না, যদি এর স্পেশালিটিগুলারে আমরা নজরে নিতে রাজি না হই।
নয়া বাকশালরে যারা ফ্যাসিস্ট বলতে চান, তারা আসলে এর সিগনিফিকেন্সটারে মানতে রাজি না, এরে থিওরাইজ করার রিস্কটারেই এড়াইতে চান।
সামাজিক পিপাসা’র ঘটনাটা নিয়া
কেউ আমারে ‘ভালো’ বললেই আমি ভালো হইয়া যাই না। কেউ আমারে খারাপ বললেই আমি খারাপ হইয়া উঠি না। এমনকি কেউ আমারে নিয়া কথা বলতেছে না মানে আমি বাতিল – তা যেমন না, কেউ আমারে নিয়া হাউকাউ করলেই আমি ইম্পর্টেন্ট হয়া পড়ি না। এইগুলা হইতেছে সামাজিক ঘটনা।
এখন ‘সোশ্যাল’ বইলা কিছু নাই – এইটা যেমন ঠিক না, সবকিছু সোশ্যাল টার্মে বুঝতে চাওয়াটা এর চে কম ঝামেলার জিনিস না। এখন মুশকিল হইতেছে, এইটা যে কেউ বুঝেন না, তা না; বরং এই জিনিসগুলা বুইঝা ফেললে ‘সোশ্যাল’ জিনিসটার ফর্মেশনের দিকে যে তাকাইতে হয় – সেইখানে তাকাইতে অনেকে রাজি হইতে পারেন না। মানে, এইটুক মাফ আমি উনাদেরকে করতে রাজি আছি। কিন্তু ব্যাপারটা যতোটা না পারেন না, তার চাইতে বেশি হইতেছে, চান না।
এই না-চাওয়াটা খালি ইন্টেলেকচুয়াল ব্যর্থতা না, বেশিরভাগ সময় একটা নৈতিক (এবং একইভাবে এসথেটিক্যাল) বাউন্ডারি’র ঘটনা। গরু-গাধা-ঘোড়া’রে টাইনা পানির কাছে নিয়া যাইতে পারবেন আপনি, কিন্তু পানি খাওয়াইতে পারবেন না। কারণ পানি খাইলেই মাছ হয়া যাওয়ার ডরে থাকে অরা!