নোটস: জুলাই, ২০২১ [পার্ট ২]

ইংলিশ-ওয়ার্ড নিয়া

মাদরাসা’তে পইড়াও আপনি ইংলিশ ওয়ার্ড কইতে পারেন কিন্তু! ইংলিশ মিডিয়ামে পইড়াও আরবী-ফার্সি লবজ ইউজ করতে পারেন! বাংলা-ভাষা ‘সংস্কৃত-শব্দের’ বাইরে এই দুইভাগে (এবং আরো কয়েকটা ভাগে) ভাগ করা না, ডিয়ার বইন ও ভাইয়েরা!

আমি বুঝি, আমার সো-কল্ড ইংলিশ ওয়ার্ডে কেন কিছু লোকজন চেইতা যায়, অরা ভাবে, আরে এই লোক তো আসলে বাংলা-মিডিয়াম, ইংলিশ ওয়ার্ড কেন ইউজ করবে! মানে, আমার লজ্জা-শরম নাই কেন, ইংলিশ-ল্যাঙ্গুয়েজ না জাইনাও কেন ইংলিশ ওয়ার্ড ইউজ করি আমি! আমি করতে পারি, কারণ আমি শব্দের পাছায় সিল মারতে শিখি নাই, এই ‘চালাকি’ আমি শিখবোও না।

আগেও বলছি, আবারো বলি, শব্দের কোন বাংলা-ইংলিশ-পর্তুগিজ নাই, যা আপনি বলতে পারেন, আপনার আশেপাশের লোকজনরে বুঝাইতে পারেন, অইগুলাই বাংলা-শব্দ, অইটাই বাংলা-ভাষা। কথা কইতে গেলে শব্দ লাগে, কিন্তু শব্দগুলাই ভাষা না; ভাষার ভিতরে নতুন শব্দেরা আসে, বাতিল হয়, মারাও যায়।

নদীর পানিতে যেমন মাছ থাকে অনেক। তাই বইলা মাছগুলাই নদী না। নদীতে পানি থাকলে অনেক মাছ থাকে, যায়, আসে; কিন্তু নদী না থাকলে কোন মাছ থাকে না, ভাষা না থাকলে কোন শব্দ থাকে না, অন্য নদীতে চইলা যায়। নতুন শব্দ বানানি মাছ-চাষের কোন ঘটনা না, বানানি তো যায়-ই, কিন্তু কোন আত্মা থাকে না। (উপমা’রে বাস্তবতা ধইরা নিলে হবে না।)

আমি বলতে চাইতেছি, আপনার ইংলিশ-ওয়ার্ডের চিন্তাটা ছাড়েন, নাক দিয়া পানি ঢুকাইলে শ্বাস নিতে পারবেন না। যখন ভাষার নদীতে সাঁতরাইবেন, শ্বাস নিতে পারাটা জরুরি ঘটনা। এই কারণে দেখবেন, অনেকে খালি হাত-পা নাড়াইতেছেন, কিন্তু সাঁতরাইতে পারতেছেন না। নিজেরে ভাষার ভিতরে ছাইড়া দেন। এইটা আমার রিকোয়েস্ট। তখন আর যা-ই হোক, ইংলিশ ওয়ার্ড আইসা আপনাদেরকে এতো প্যারা দিবে না।

নয়া বাকশাল কি ফ্যাসিস্ট?

নয়া বাকশাল অবশ্যই একটা totalitarian শাসনের অবস্থা, যেইখানে একজন মানুশ রাষ্ট্রের এবং তার ডমিনেন্ট আইডিওলজি’রে মাইনা নিতে বাধ্য, এর বাইরে যাইতে পারবে না। এইটার শুরু হইছে মানুশের ভোটের অধিকার’রে বাতিল করার ভিতর দিয়া, পার্লামেন্টরে একটা চিড়িয়াখানা বানানোর ভিতর দিয়া। কিন্তু এইটারে কি ফ্যাসিস্ট বলবো আমরা?

ফ্যাসিস্ট মানে খালি এইটা না যে, এইখানে কোন বিরুদ্ধ-মত থাকতে পারবে না। বরং একটা লেভেলের ‘ভিন্নমত’ না থাকলে সেইটা ‘ফ্যাসিস্ট’ হওয়াটাই সম্ভব না। এইখানে ‘ধর্মান্ধ মৌলিবাদীরা’ যেমন থাকবে ‘অতি বিপ্লবী বামপন্থী’রাও থাকবে এবং এইরকমের ‘ভিন্নমত’গুলা এমন একটা ঘোঁট পাকাবে যে, আর কোন অপশনই থাকবে না! মানে, ফ্যাসিস্ট হইতেছে এমন একটা অবস্থা যেইখানে কমিউনিস্ট বিপ্লব, ধর্মীয় বিপ্লব, জাতীয়তাবাদী বিপ্লবসহ যে কোন কিছু করার অধিকার খালি একটা গ্রুপের হাতে থাকে। ফ্যাসিজমের ফিক্সড কোন আইডিওলজি নাই। ফ্যাসিজম হইতেছে একটা ফ্যাশন। (ইন ইটস কোর।) রেটরিকটাই বাস্তব হয়া উঠে। বাস্তব বইলা কিছু থাকে না। কিন্তু ফ্যাসিস্ট বলতে এইটারে মিন করি না আমরা, বাংলাদেশে।

ফ্যাসিস্ট বলতে আমরা বুঝি হিটলারের জার্মানিরে। আর অই সংজ্ঞার ভিতরে যখন নয়া বাকশালরে আমরা ফেলতে যাই, তখন খেয়াল করতে পারার কথা যে, আরে, এইটা এইটা তো মিলে না! যেমন ধরেন, নাজী জার্মানির তো রেসিয়াল প্রাইড ছিল একটা, নয়া বাকশালের ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এ এই জিনিস তো নাই-ই, উল্টা ‘বাঙালি’ মানে হইতেছে ‘বাংলা-মদ’ টাইপের ইনফিরিয়র, মিডিওকার, অচ্ছুৎ টাইপের জিনিস। এইরকম আরো উদাহারণ দেয়া সম্ভব, যেইটা ‘ফ্যাসিজম’র প্রেস্কাইবড (“আসল” না) সংজ্ঞার লগে মিলাইতে পারবেন না।

তারপরেও দেখবেন নয়া বাকশাল’রে ফ্যাসিস্ট বলার প্রাকটিস চালু আছে। আমি মনে করি, এইটা এক ধরণের ইনডেমনিটি দেয়ার ঘটনা, নয়া বাকশালরে। যে যা না, তারে তা বইলা, সেইটা থিকা তারে বাঁচানোর ঘটনা। যে, নয়া বাকশাল তো খারাপ, কিন্তু ফ্যাসিস্ট তো না!

কিন্তু আলাপ কখনোই এইটা না যে, নয়া বাকশাল ফ্যাসিস্ট কিনা, বরং নয়া বাকশাল হইতেছে একটা totalitarian শাসন, ফ্যাসিজমের একটা বাংলাদেশি ভার্সন। যেইটা ১৯৭২-৭৫ সালে বাংলাদেশে শুরু হইছিল, স্ট্যানিলিজমের মতন, নাজীজমের মতন আর যার থ্রেট’টারে লোকেট করতে, থিওরাইজ করতে ব্যর্থ হইছি আমরা। ১৯৯০-এ এরশাদের পতনের পরে একটা ডেমোক্রেটিক বেইজ তৈরি করতে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে পিপলস এজেন্সি তৈরি করতেও ব্যর্থ হইছি আমরা বাংলাদেশে, যেই ফেইলওরগুলার ভিতর দিয়া, (২০০৭ সালের) ১/১১’র পরে এই নয়া বাকশালি শাসন পাইছি আমরা। পলিটিক্যালি, এইটা এখন একটা পিক মোমেন্টে আছে।…

যে কোন অবস্থার ভিতর দিয়াই, এই নয়া বাকশালি শাসনের শেষ হইলেও, এর অভ্যাসগুলারে, রীতি-নীতিগুলারে যদি আমরা আইডেন্টিফাই করতে রাজি না হই, এইটা ফিরা ফিরা আসতে থাকবে নতুন নতুন ফরম্যাটে। আর এই কারণে আমাদেরকে ফার্স্টে মানতে রাজি হইতে হবে যে, এইটা কমন কোন ফ্যাসিস্ট রিজিম না, এইটা নয়া বাকশালের আমল। একটা ইউরোপিয়ান লিবারালিজমের জায়গা থিকা এর মোকাবেলা সম্ভব হবে না, যদি এর স্পেশালিটিগুলারে আমরা নজরে নিতে রাজি না হই।

নয়া বাকশালরে যারা ফ্যাসিস্ট বলতে চান, তারা আসলে এর সিগনিফিকেন্সটারে মানতে রাজি না, এরে থিওরাইজ করার রিস্কটারেই এড়াইতে চান।


সামাজিক পিপাসা’র ঘটনাটা নিয়া

কেউ আমারে ‘ভালো’ বললেই আমি ভালো হইয়া যাই না। কেউ আমারে খারাপ বললেই আমি খারাপ হইয়া উঠি না। এমনকি কেউ আমারে নিয়া কথা বলতেছে না মানে আমি বাতিল – তা যেমন না, কেউ আমারে নিয়া হাউকাউ করলেই আমি ইম্পর্টেন্ট হয়া পড়ি না। এইগুলা হইতেছে সামাজিক ঘটনা।

এখন ‘সোশ্যাল’ বইলা কিছু নাই – এইটা যেমন ঠিক না, সবকিছু সোশ্যাল টার্মে বুঝতে চাওয়াটা এর চে কম ঝামেলার জিনিস না। এখন মুশকিল হইতেছে, এইটা যে কেউ বুঝেন না, তা না; বরং এই জিনিসগুলা বুইঝা ফেললে ‘সোশ্যাল’ জিনিসটার ফর্মেশনের দিকে যে তাকাইতে হয় – সেইখানে তাকাইতে অনেকে রাজি হইতে পারেন না। মানে, এইটুক মাফ আমি উনাদেরকে করতে রাজি আছি। কিন্তু ব্যাপারটা যতোটা না পারেন না, তার চাইতে বেশি হইতেছে, চান না।

এই না-চাওয়াটা খালি ইন্টেলেকচুয়াল ব্যর্থতা না, বেশিরভাগ সময় একটা নৈতিক (এবং একইভাবে এসথেটিক্যাল) বাউন্ডারি’র ঘটনা। গরু-গাধা-ঘোড়া’রে টাইনা পানির কাছে নিয়া যাইতে পারবেন আপনি, কিন্তু পানি খাওয়াইতে পারবেন না। কারণ পানি খাইলেই মাছ হয়া যাওয়ার ডরে থাকে অরা!

Continue reading

নোটস: জুলাই, ২০২১ [পার্ট ১]

বাংলাদেশের কোন ভার্সিটিতে কি কার্ল মার্কসের কোন লেখা বা বই কোন কোর্সে পড়ানো হয়?

২০/২৫ বছর আগে আমরা যখন ঢাকা ভার্সিটিতে ইকনোমিকসে পড়তাম তখন মার্কসিস্ট ইকনোমিকস বইলা একটা কোর্স ছিল, অপশনাল। অই কোর্সেও মার্কসের কোন টেক্সট ছিল না মনেহয়। উনার ইকনোমিক থিওরিগুলা নিয়া অন্য বই পড়ানো হইতো, আবু মাহমুদের বইও ছিল। এখন মনেহয় অই কোর্স পড়ানো হয় না আর। এইরকম সোশিওলজি, পলিটিক্যাল সায়েন্স, মিডিয়া স্টাডিজ, বা অন্য কোন সাবজেক্টে কোন কোর্স কি আছে যেইখানে মার্কসের লেখা রেফারেন্স হিসাবে পড়ানো হয়? মার্কসিস্ট লিটারেচার তো থাকতেই পারে, কিন্তু আমি একটু ডাউটফুলও যে, উনার লেখা অইরকম ‘পাঠ্য’ হিসাবে নাই মনেহয়। ছিলো কি কখনো, সিক্সটিইজেও? (জানতেই চাইতেছি আসলে…)

আমাদের সময় যা দেখছি, মেইনস্ট্রিম একাডেমিয়া’তে, টেক্সটবুকগুলাতে মার্কসের চিন্তার কোন রেফারেন্স নাই, বা খুব কম। আমার ধারণা, প্যাটার্নের দিক দিয়া মার্কস্টিট চিন্তা একাডেমিয়াতে যেই ধরণের পড়াশোনা চালু আছে, তার লগে ফিট-ইন করে না, খুববেশি। উনার বই-পত্র, লেখালেখি মেবি সবসময়ই কম-বেশি আউটকাস্ট জিনিসই ছিল। যদিও বেশিরভাগ ভার্সিটির টিচারদেরই নিজেদেরকে মার্কসিস্ট দাবি করার একটা ব্যাপার আছে। ইভেন যারা শিল্প-সাহিত্য করেন ইন্টেলেকচুয়াল-এক্টিভিস্ট তাদের সবাইও কম-বেশি মার্কসিস্ট। কার্ল মার্কসের চিন্তারে অপোজ করা, সাবস্ক্রাইব করার বা মডিফাই করার একটা ঘটনা এখনো চালু আছে। মানে, উনার চিন্তা-ভাবনা তো এখনো একটা স্ট্রং রেফারেন্স পয়েন্ট।
তো, আমার একটা অনুমান হইতেছে যে, উনার লেখা-পত্র একাডেমিক প্রসেস মাইনা, ডিসিপ্লিন মাইনা তো লেখা হয় নাই এতোটা, যার ফলে অইভাবে শেইপ-আপ কইরা নেয়াটাও মুশকিলের, যার ফলে একাডেমিক জায়গাগুলাতে মোস্টলি মিসিং।… হাউএভার, ব্যাপারটা এইরকম না-ও হইতে পারে। আমি জাস্ট ভাবলাম, মেবি হইতে পারে…

রবার্ট ফ্রস্ট

একজন ক্রিটিক রবার্ট ফ্রস্টের প্রশংসা করতেছিলেন এই জায়গা থিকা যে, এলিয়ট, এজরা পাউন্ড উনাদের কবিতা ‘মর্ডান’ এবং এই কারণে ডিফিকাল্ট, কিন্তু ফ্রস্টের কবিতা এইরকম না। তো, রবার্ট ফ্রস্ট কইতেছিলেন, উনি কঠিন বা সহজ কবিতা লেখেন – ঘটনা’টা এইরকম না।

(আমার মনে হইতেছিল, এলিয়ট, এজরা পাউন্ডরা কি করতেছিলেন আসলে? উনারা খালি কবিতা-ই লেখেন নাই, কনটেক্সট’টারেও বানাইতেছিলেন যে, কবিতারে কই থিকা পড়তে হবে। শ’য়ে শ’য়ে রিভিউ, ক্রিটিক লেখতেছিলেন। অইগুলা একটা বেইজ তৈরি করতেছিল। এর বিপরীতে, রবার্ট ফ্রস্ট কবিতা নিয়া তেমন কোনকিছুই লেখেন নাই। উনি ধরে নিছেন, কবিতা নিজেই তার কনটেক্সট’টা তৈরি কইরা নিবে, বা কনটেক্সটরর লগে কানেকশনটা তৈরি কইরা নিবে। মেবি এইরকম।)

ফ্রস্ট বরং বলতেছিলেন যে, দুইটা জিনিস কবিতার ব্যাপারে ইর্ম্পটেন্ট। একটা হইতেছে, পারফর্মেন্সের ঘটনা থাকতে হবে, স্কোর’টা করতে পারতে হবে। আপনি যতো কিছুই করেন, যদি কানেকশন’টা ক্রিয়েট না করা যায়, পারফর্মেন্সটা না থাকে তাইলে জিনিস হবে না। (মানে, পারফর্মেন্স জিনিসটা ঠিক পারফর্ম অর্থে না, ভিজিবল হইতে পারার মতো একটা জিনিস।)

সেকেন্ড হইলো, উনি বলতেছিলেন, পোয়েটিক থট হোক বা যে কোন একটা থট যা করে তা হইতেছে, এদের “feat of association” থাকে, একটা জিনিস আরেকটা জিনিসরে জড়ায়া ধরতে পারে, কানেক্ট করতে পারে। আর এইভাবে নতুন কিছু ক্রিয়েট হয়।

তো, এইটা কবিতা নিয়া উনার ভাবনা, বা কবিতার কাছে উনার এক্সপেক্টশন, বা কবিতারে উনি এইভাবে দেখেন। এই জিনিসগুলারে কবিতা বইলা ধইরা নিলে আরেকটা ঝামেলাই হবে আসলে। 🙂

একজন কবি’র কবিরা গুনাহ হইতেছে মানুশ তারে ভালোবাসে

একটা জিনিস খেয়াল করছি, যেইসব ইন্টেলেকচুয়াল’রা কবিতা লেখতে পারেন না (বা লেখেন না), উনারা কবি’দেরকে (আমি বলবো) ভালো-রকমেরই হেইট করেন।* মানে, বাটে পাইলে ভালো রকমের মশকরাই করেন। যুগে যুগে কবি’রা এইরকম হেইট্রেটের শিকার হইছেন, হইতেছেন 🙂 (কবি’রাও তো আর “ধোয়া তুলসী পাতা” না….)

আবার যারা পাওয়ারফুল লোক (কুস্তরিকা’র “আন্ডারগ্রাউন্ড” সিনেমা দেখতে গিয়া খেয়াল করছিলাম, বা অন্য অনেক উদাহারণও পাইবেন) উনারাও দেখবেন অনেক সময় কবিতা লেখতে চান বা কবি হইতে চান। কেন?

কয়েক বছর আগে বলছিলাম, একজন কবি আর একজন ইন্টেলেকচুয়ালের ডিফরেন্সটা কোন জায়গাটায়? কবি হইতেছেন মানুশের কাছের লোক, আপনা মানুশ, ভালোবাসার ধন, এইসব কিছু। মানে, সে খারাপ, ফাউল, কোনকিছু বুঝে না, আজাইরা কথা কয়, কারেক্টার ভালো না… এইসবকিছু কইয়া বা বানায়া (মানে, মানুশ হিসাবে আমরা নিজেরাও তো কম-বেশি এইরকমই) খুব একটা লাভ হয় না। মানে, কবি হিসাবে আপনার যারে ভালোলাগে তারে আপনি ভালোইবাসেন, তার লগে অন্য কোন রিলেশন আসলে হইতে পারে না।

এখন একজন ইন্টেলেকচুয়ালরে যে আপনি ভালোবাসতে পারেন না – তা না, অনেক ক্ষমতাবান মানুশও আছেন বা থাকতে পারেন যারা ক্ষমতার কারণে ভচকায়া যান নাই, তাদেরকেও ভালোবাসতে পারেন আপনি। কিন্তু অইটা সমানে-সমানে হয় না সবসময়। বা অইটা বেইজটা না একজনরে ইন্টেলেকচুয়াল বা মহান ভাবার। কিন্তু একজন কবি’রে যদি আপনি ভালো না বাসেন, সে তো তখন কবি-ই না কোন আপনার কাছে!

তো, আমার ধারণা, কবি’রে যে মানুশ ভালোবাসে, আদর কইরা গাইল্লায়, কাছের লোক ভাবে, এই কারণে ‘কবি’ হওয়ার একটা তাগিদ থাকে, বা কেউ “কবি” বইলাই যে জরুরি কিছু না, অই জিনিসটাও প্রমাণ করা লাগে, অনেক সময় 😛

মানে, এইটা সুপিরিয়র কোন জিনিস না, কিন্তু অন্য সব সামাজিক পরিচয়ের চাইতে তো আলাদা জিনিসই, সবসময়।

…….
*আমার অবজারভেশন ভুলও হইতে পারে, কিন্তু আপনারা ভাইবা দেইখেন ব্যাপার’টা।
Continue reading

ছোট ছোট পাথর (আবদুল মান্নান সৈয়দের বাসায়)

এই ঘটনার কথা বলাটা ঠিক হবে কিনা… এইজন্য কোনদিনই ঠিক বলা হয় নাই। কিন্তু মনে যেহেতু আছে, বইলা রাখা যাইতে পারে। এই ঘটনারে কোন খারাপ-ভালোর জায়গা থিকা না দেখাটাই মনেহয় ভালো। আমার যেইভাবে মনে আছে, সেইভাবেই আমি বলতেছি।

১৯৯৮/৯৯ সালের কথা। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ি। বঙ্গবন্ধু হলে থাকি। ময়লা শার্ট-প্যান্ট, স্যান্ডেল পিন্দা ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটি। নতুন কবিতার বই ছাপানোর পরে রিফাত চৌধুরী’রে দেয়ার সাথে সাথে একটা কবিতা পইড়াই উনি ঘোষণা দিয়া দিলেন, ইমরুল তো কবি! উনার লগে আড্ডা দেয়ার ফুল একসেস দিয়া দিলেন। অইদিনই শাহবাগ থিকা নীলক্ষেতের বাবুপুড়া বস্তির ঘরটাতে নিয়া গেলেন উনার। কয়েকদিন যাওয়া-আসার পরেই আকরাম খানের (কবি, ফিল্ম-ডিরেক্টর) লগে পরিচয় করায়া দিলেন। বললেন, আপনারা নতুন কবি’রা আসছেন, “ছাঁট কাগজের মলাট”টা তো নতুন কইরা করা দরকার! আমরা একসাথে ২/৩টা সংখ্যা ছাপাইছিলাম। শশী হক ছিলেন। টাকা-পয়সার জোগাড় মনেহয় আকরামই করছিলেন অনেকটা। লেখাপত্র রিফাত ভাই-ই নিছিলেন রাইটারদের কাছ থিকা। মুস্তফা আনোয়ার তো আড্ডাতেই আসতেন। কাজল শাহনেওয়াজও মাঝে-মধ্যে আসছেন। উনাদের লেখা এইভাবে পাওয়া গেছিল। আবিদ আজাদের পুরান লেখা ছাপাবো আমরা। কিন্তু মান্নান ভাইয়ের (আবদুল মান্নান সৈয়দের) তো বাসায় যাইতে হবে। উনার বাসা গ্রীণরোডে। একদিন বিকালে রিফাত ভাই বললেন, চলেন যাই! Continue reading

পাবলিক স্পিকিং এবং পাবলিক স্পেইস নিয়া

১.
– বিশিষ্টজনদের বিবৃতির ব্যাপারটা নিয়া –

এইরকমের একটা ট্রাডিশন দেখছি বাংলাদেশের পত্রিকায়, অন্য দেশেও থাকার কথা, যে ইম্পর্টেন্ট কোন ঘটনা ঘটলো, তখন সমাজের বিশিষ্ট লোকজন বিবৃতি দেন। চিটাগাংয়ের সিআরবি’র ঘটনায় এইটা দেইখা মনে হইলো। সিআরবি আমার নিজেরও অনেক পছন্দের জায়গা। রেলওয়ের হাসপাতাল, পাহাড়ের উপরে মসজিদ আছে একটা।… এই জায়গাটারে বাংলাদেশের ‘ন্যাচারাল হেরিটজ’ বইলা মার্ক করা উচিত আসলে।…

তো, বলতেছিলাম, বিবৃতি’র জায়গাটা নিয়া। আমি এর বিপক্ষে না। আর বিবৃতি দেয়া মানুশরাই যে এর বিরোধিতা করতেছেন, তা তো না-ই, এবং বিরোধিতা করতে হইলে আপনারে ‘বিশিষ্ট’ কেউ হইতে হবে – এইটাও জরুরি না। ‘বিশিষ্টজনদের বিবৃতি’র মধ্যে এই জিনিস’টা আছে – এই দাবিও আমি করতে চাই না। কিন্তু এই প্রাকটিসের কারণে নর্মস হিসাবে একভাবে সামনে থাকে, একটা বিরোধিতা যেমন থাকে, একটা ‘বিশিষ্টজনের’ তালিকাও তৈরি হইতে থাকে; এই জিনিসটা বাজে না অবশ্যই, কিন্তু টু সাম এক্সটেন্ড অস্বস্তির জিনিস বইলা মনেহয় আমার কাছে।

অস্বত্বি’টা হইতেছে এর ভিতর দিয়া ‘বিরোধিতা’ জিনিসটা একটা ‘বিশিষ্ট’ ব্যাপার হয়া উঠে, একটা স্পেশাল ঘটনা হয়া উঠে। আমি বিরোধিতা করতেছি, এই কারণেও আমি ‘বিশিষ্ট – এইরকম পারসেপশনের জায়গাতে গিয়া ঠেকে, এর বাইরে সবাই যেন মাইনা নিতেছেন! অথচ ঘটনা তো এইরকম না, কখনোই। যে কোন জিনিস নিয়া সমাজের ‘সব’ (এইটা হইতেছে ক্যাচ’টা) মানুশ কখনোই কনসার্ন হবে না, আর যেহেতু হইতেছে না, ধইরা নেয়া যাবে না যে, এই ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিরা’ বাদ দিয়া ‘সবাই’ এইটা মাইনা নিতেছেন!

(এইটা ঘটে, নিরবতা জিনিসটারে সিঙ্গুলার হিসাবে ধইরা নেয়ার ভিতর দিয়া। অথচ নিরবতা ভাষার চাইতে, বলার চাইতে আরো বেশি মাল্টিপল।…)

এখন ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিরা’ বিবৃতি দেয়া বন্ধ কইরা দিলেই তো এইটা এস্টাবিলশ হয়া যাবে না, বরং আরো বাজে-ই হওয়ার কথা।

আমার কথা হইতেছে, যেই কয়জন মানুশ এর বিরোধিতা করতেছেন, তারা-ই ‘সমাজের সচেতন অংশ’ – এই টাইপের ব্র্যান্ডিং করা যাবে না। এই ধরণের বিবৃতির ভিতরে ইনটেনশনালি থাকে যে, যারা কথা বলতেছেন-না (না, যাদের কথা-বলাটারে সিগনিফিকেন্ট কইরা তোলা হইতেছে না আসলে) যেন তাদের রিপ্রেজেন্টেশন করতেছেন উনারা; এই রিপ্রেজেন্টেশনের জায়গা থিকা হাইলাইট করাটা ইস্যুটারে পাবলিক ঘটনা কইরা তুলতে পারে না, বরং পুরা ব্যাপারটাতে পাবলিক’রে যে এড়ানো হইতেছে – সেই কোর জায়গাটারে বাদ দিয়া একটা অবৈধ অথরিটিরেই মুখ্য কইরা তোলা হইতে থাকে।

এইভাবে ‘প্রতিবাদ’ যে হয় না – তা না, একটা সাবমিশনের ঘটনাও হাইলাইট হয়। যেইটা আমার অস্বস্তির জায়গা। Continue reading

কবিতা: ফেব্রুয়ারি, ২০২১

শীতকাল

“রোদ উঠে গেছে”
শীতকাল’টাও চইলা যাবে, কয়দিন পরে

যে কোনকিছু’র চইলা যাওয়া-ই আমারে বিষণ্ন করে

ভালোবাসার পরীক্ষা

আবার পরীক্ষা দিতে হবে ভালোবাসার,
আবার, আবার
প্রশ্নফাঁসের এই পরীক্ষাগুলা দিতে
আমার ভাল্লাগে না আর

নিজেরে কতো নকল
করতে পারে লোকজন আর অদের কি
টায়ার্ডও লাগে না!

হায় খোদা! আমারেই কেন
বারবার বলা লাগবে,
আবার, আবার ভুল উত্তরগুলা
লেখা লাগবে, আর
একটা ফেইল করার গ্লানি নিয়া
হাঁইটা বেড়াইতে হবে একলা একটা রেললাইন দিয়া
অথবা বইসা থাকা লাগবে চুপচাপ কোন নদীর পাড়?

কেন রে ভাই, চুতমারানি?
কেন, দ্য হোয়াই?

টু লি পো

কথাগুলারে আমি এক হাজার মাইল দূরে পাঠায়া দিবো
লি পো, অরা কি চিন্তা করাইতে পারবে কাউরে, এতো দূরে?
(তোমার মতন এমন বন্ধু আমি কি আর পাবো?)

আমি এক হাজার বছর আগে আমার কথাগুলারে পাঠায়া দিবো
লি পো, কেরু খায়া কানতেছে যেই কিশোর ছেলে’টা তার বাচ্চা প্রেমিকা’র লাইগা
বয়স হয়া গেলে সে-ও তো হাসবো, এই কথা মনে কইরা
তার চোখের পানির মতো মদ আমি জমায়া রাখতেছি তোমার জন্য

লি পো, আমাদের কথাগুলা আমরা ভাসায়া দিবো
সাগরে এক ফোঁটা পানির মতো, বাতাসে ভাসতে ভাসতে হারায়া যাবে
হৃদয়ে যেই কথাগুলা শেষ হয়া যাইতেছে, যেই কথাগুলা শেষ হয় না কোনদিনও

এইরকম কথাগুলারে আমরা এক হাজার মাইল দূরে, এক হাজার বছরের পরে
পাঠায়া দিবো; “আমি জানি, তুমি শুনতেছো;
তুমি শুনতেছো তো?”

একটা কবিতা

একটা কবিতা আমি পাইলাম নন্দায়, বারিধারায়
একটা কবিতা আমি পায়া যাবো কিছু দূর হাঁটলে মহাখালি, তেজগাঁয়
কবিতা ছড়ায়া আছে মতিঝিলে, চকবাজারে, পুরান ঢাকায়
ঢাকা শহর ভর্তি ছড়ানো কবিতা, ড্রেনে ড্রেনে, ফুটপাতে, ভাঙা রাস্তায়
ফকির-মিসকিনের মতন আমি কবিতা কুড়াই আর কবিতাগুলা আমারে চিইনা ফেলে
কয়, আপনি না গতকালকেই আসছিলেন! ‘পৃথিবীর গভীর, গভীরতর অসুখ’
নিয়া আপনি আর কদ্দিন নিজের চিকিৎসা’র খরচ তুলবেন?
Continue reading