কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ ও আল মাহমুদ

একটা তিতা কথা কই। আল মাহমুদরে কোনদিন কাজী নজরুল ইসলামের নাম মুখে নিতে দেখছেন? (কাজী নজরুল ইসলামরে নিয়া উনি সুন্দর একটা কবিতা লেখছেন, বিদ্রোহী কবিতার প্রশংসাও করছেন, কিন্তু বাংলা কবিতার ইতিহাসে কাজী নজরুল ইসলামরে ইম্পর্টেন্ট ভাবতে পারেন নাই। যেইখানে) ফররুখ আহমেদ’রে আল মাহমুদ উনার আগের কবি হিসাবে মনে রাখছেন, ফররুখের সিলাসিলারে একভাবে কন্টিনিউ করছেন বইলাও মনে করছেন।… ফররুখ আহমেদও কোনদিন কাজী নজরুল ইসলামের নাম নেন নাই। উনি ছিলেন ইকবালের ভক্ত। (একজনের ভক্ত হইলে আরেকজনের দুশমন হইতে হবে – এই জিনিস সাহিত্যে যেমন দরকার নাই, লাইফেও দরকার পড়ে না। অইটা ভক্তেরই সমস্যা সবসময়।) কিন্তু ফররুখ আহমেদ কাজী নজরুল ইসলাম’রে কবি হিসাবে ইম্পর্টেন্ট মনে করেন নাই।…(সেইটা আরেক আলাপ।)

আরো অনেকরে পাইবেন, যারা কাজী নজরুল ইসলামের নাম নেন নাই। আবুল মনসুর আহমেদের বইয়ের ভালো রিভিউ করছিলেন নজরুল, কিন্তু মনসুর আহমেদের “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর” পড়লে খেয়ালও করতে পারবেন না যদিও আবুল মনসুর আহমেদ কলকাতায় একই পত্রিকা অফিসে কাজী নজরুল ইসলামের আন্ডারে কাজ করছেন।…

তো, এইটা কি খালি “মনে নাই”? বা “এড়ায়া যাওয়ার” ঘটনা?

আল মাহমুদ নিজেও কইছিলেন, “বাংলাদেশে কবিতার ইতিহাস হলো ষড়যন্ত্র, হিংস্রতা ও প্রতিভাকে অস্বীকারের ইতিহাস।” (কমেন্টে লিংক দিতেছি, পুরা আলাপটার।) আমি আরেকটু অন্যরকমভাবে বলতে চাই, “বাংলাদেশে কবিতার ইতিহাস হইতেছে নিজেরে আপার-ক্লাস দাবি করার, বেটাগিরির আর নিরবতার ইতিহাস।”

ফররুখ আহমেদ বিনা চিকিৎসায় মারা গেছিলেন, উনি টাকা-পয়সাঅলা লোক কখনোই ছিলেন না, কিন্তু নিজেরে কখনোই “আতরাফদের” কাতারে নামান নাই। আল মাহমুদও ‘শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের’ কাছে এনাফ সম্মান পান নাই – এই আক্ষেপ নিয়াই মরছেন। এই অবস্থা উনারা ডিজার্ভ করেন না।

কিন্তু আমি যেইটার কথা বলতে চাইতেছি, সেইটা সোশ্যাল এচিভমেন্টের কোন ঘটনা না, বরং কবিতায় কোন বিশ্বাসের জায়গাটারে উনারা আপহোল্ড করছেন, সেইটার ঘটনা। ফররুখ আহমেদের “ইসলাম” যেইরকম একটা “আশরাফী” ঘটনা, আল মাহমুদের “গ্রাম-বাংলা”ও একটা “কলোনিয়াল কলকাতার”-ই এক্সটেনশন। এই জায়গাগুলারে “কাব্যিক জিনিস” বইলা এড়ায়া গেলে খালি কালচারাল না, পলিটিক্যাল ভুলও করবো আমরা। Continue reading

ক্যান ইসলামিস্ট থিংক?

২০০৯ সালে তালাল আসাদ, সাবা মাহমুদ আর জুডিথ বাটলারের বাহাস নিয়া একটা বই পাবলিশড হইছিল – “ইজ ক্রিটিক সেক্যুলার?” নামে, যেইটা একাডেমিক এরিনার বাইরেও কিছুটা পাবলিক ইন্টারেস্টের বিষয় হয়া উঠছিল। (বাংলাদেশে দুয়েকজন এইটা নিয়া টুকটাক কথা বলছেনও মনেহয়।) অইটা শুরু হইছিল তালাল আসাদের একটা সেমিনার পেপার “ফ্রি স্পিচ, ব্লাসফেমি অ্যান্ড সেক্যুলার ক্রিটিসিজম” থিকা।

তালাল আসাদ বলতেছিলেন, ক্রিটিক করা জিনিস’টা ইউরোপিয়ান ট্রাডিশনে একটা সেক্যুলার ব্যাপার হয়া আছে। কিন্তু যে কোন সমাজেই এই ক্রিটিক করা জিনিস একটা কন্ডিশনাল ঘটনা, খালি “মুসলিম সমাজের” সমস্যা না। উনার একটা আর্গুমেন্ট হইলো, সেক্যুলার ভোকাবুলারি আর ইসলামি ভোকাবুলারি এক জিনিস না; কালচারাল অরিয়েন্টেশনের কারণেই ব্যাপারগুলা আলাদা। তালাল আসাদের কথা হইতেছে, দুইটা দুইরকম; ইসলাম ধর্মেও ক্রিটিক করার স্পেইস আছে, যতক্ষণ না এইটা পাবলিক লাইফরে এফেক্ট না করতেছে; একইভাবে ক্রিটিকেও ব্লাসফেমির জায়গা ছিল, এখনো কিছু জায়গা আছে, যেইটা পাবলিকলি বলতে বা করতে পারেন না আপনি; সেই জায়গাগুলা বরং অথরিটির অপারেট করার জায়গা। (মানে, এইরকম কিছুর কথা আমার মনে আছে।)

ইসলামিস্ট-ফেমিনিস্ট (?) সাবা মাহমুদ এর সাথে আরো কিছু পারসপেক্টিভ অ্যাড কইরা বলতেছিলেন যে, ইসলাম’রে লিনিয়ার কইরা দেখলে হবে না; বরং এই যে “সেক্যুলার হইতে হবে” – এইটা মুসলিম সমাজে আরেকটা প্রব্লেম হিসাবেই কাজ করে, লিবারেটিং কোন টুল না। মানে, আলাপের বেইজ তো ছিল ড্যানিশ পত্রিকার কার্টুন’টা যেইখানে নবী মুহাম্মদ (দঃ)’রে একটা ইমেজে রিডিউস করার ঘটনা ঘটছিল।

তো, উনাদের কথার রেসপন্সে জুডিথ বাটলার পজিটিভলিই তালাল আসাদ আর সাবা মাহমুদের আলাপে এনগেইজ হইতে চাইছেন। উনার কথা হইতেছে, ‘ক্রিটিক’ জিনিসটা নিয়া অবশ্যই ক্রিটিক্যাল হওয়ার দরকার আছে, কিন্তু তালাল আসাদ যেমনে চাইতেছেন, সেইটাই রাস্তাটা কিনা? কালচারাল ডিফরেন্সের জায়গাটা তো এন্ডলেস, কে কারে, কট্টুক বুঝবে? আর বুঝলেই কি ‘ক্রিটিক’ করার ডিফরেন্সগুলা বাতিল হয়া যাবে? তা তো না। উনি বলতেছিলেন যে, ইউরোপিয়ান লিবার্টির ধারণাগুলারেই আমাদের আগায়া নিয়া যাইতে হবে। রাষ্ট্রের হাতে বা কোন অথরিটি’র হাতে আমরা আমাদের ফ্রিডমরে বন্ধক রাখতে পারি না। এইরকম।…

তালাল আসাদ এবং সাবা মাহমুদ জুডিথ বাটলারের কথার উপরে আলাদা আলাদা রি-জয়েন্ডার দিছিলেন। Continue reading

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আর সুফিয়া কামাল

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আর সুফিয়া কামাল – এই দুইজনরে বাংলাদেশে ফেমিনিজমের আইকন হিসাবে আমি নিতে চাই, একটা আলাপে।* উনারা দুইজনই কিছু জিনিস এচিভ করছিলেন, কিন্তু যেইভাবে করছিলেন, সেইটারে কোশ্চেনেবল ভাবা হয় এখনো।

রোকেয়া’র এচিভমেন্ট হইতেছে “নারী-শিক্ষা” ব্যাপারটারে সমাজে উনি ‘কমন’ ও ‘নরমাল’ কইরা তুলতে পারছিলেন। সুফিয়া কামালের এচিভমেন্ট হইতেছে ১৯৬১ সালে পাকিস্তানে “মুসলিম পারিবারিক আইন” এর পক্ষে খুবই ফার্ম একটা পজিশন নিছিলেন। এর বাইরেও উনাদের এচিভমেন্ট আছে, কিন্তু এই দুইটা জিনিসই খুব সিগনিফিকেন্ট। রোকেয়া খালি মেয়েদের পড়াশোনাই চালু করেন নাই, উনার এই ইনিশিয়েটিভের ফলে পাবলিক স্পেইসে মেয়েদের চলাফেরা, কাজ-কাম করাও নরমাল হয়া উঠতে পারছে। এখন জিনিসগুলা নরমাল হইয়া যাওয়ার পরে হয়তো এতোটা চোখে পড়ে না আর।** সুফিয়া কামালও যখন মুসলিম পারিবারিক আইনের পক্ষ নিছিলেন, মেয়েরাও যে লিগ্যালি সম্পত্তির মালিক হইতে পারে, এই জায়গাটারে “অ্যাবনরমাল” হওয়ার জায়গা থিকা কিছুটা সরাইতে পারছিলেন। যে, “বউ” খালি “জামাই”র সম্পত্তি না, “জামাই”-ও “বউ” পজিশনটার কাছে কিছুটা হইলেও বান্ধা। আর এইভাবে মহিলাদের সম্পত্তির মালিকানার ব্যাপারটা লিগ্যালি মাইনা নেয়ার ঘটনা’টা ঘটছিল।

কিন্তু রোকেয়া’র “নারী-শিক্ষার” মেইন পেট্রোনাইজার ছিলেন দখলদার ইংরেজরা, উপনিবেশিক শক্তি! কলকাতায় যখন “স্বদেশী আন্দোলন” চলে, তখন রোকেয়া ছিলেন ইংরেজদের “কোলাবরেটর”! 🙂 অই সময়ে উনারে গালি-গালাজই শুনতে হইতো, আর এখনো এই ‘দোষ’ উনার থাকারই কথা। কিন্তু উনি পলিটিক্যাল কোশ্চেনের বাইরেও সোশ্যাল ইস্যু হিসাবে “নারী-শিক্ষা” ব্যাপারটারে এস্টাবলিশ করতে পারছিলেন, যার ফলে ‘হিন্দু-স্বদেশী’রা নারী-শিক্ষা বিষয়টারে আমলে নিয়া মেয়েদের স্কুল শুরু করে, আর তখন মুসলমান মেয়েদের জন্য ব্যাপারটা আর ট্যাবু হিসাবে থাকতে পারে নাই।… (ফ্যাক্টস কিছু দিতে পারলে ভালো হইতো।)

আমি বলতে চাইতেছি, পলিটিক্যাল সুযোগ-সুবিধা’র বাইরে উনি সোশ্যাল কজ’র জায়গাটারে এস্টাবলিশ করতে পারছিলেন, যার ফলে “কলোনিয়াল” এবং “ন্যাশনালিস্ট” দুই গ্রুপই এর পক্ষে থাকার ট্রাই করছিল। সমাজে এর বিরোধিতা’টা “নিয়ম” হিসাবে আর থাকে নাই। (এইখানে কলোনিয়াল শিক্ষা বা নারী-অধিকার… এইগুলা অন্য একটা আলাপ।)

হাউএভার, সুফিয়া কামালের ঘটনা’টা একটু অন্যরকমই ছিল। আইয়ুব খান বিপদে পড়ছিল যখন পাকিস্তানের অনেক ইসলামি বুজুর্গ’রা ফাতেমা জিন্নাহ’র পক্ষে রায় দিছিলেন যে, নারী হইলেও উনারে নেতা মানা ঠিকাছে। তখন উনি মৌলানা-মৌলভীদের “টাইট” দেয়ার জন্য, নারীদের “পক্ষে” নেয়ার জন্য এই মুসলিম পারিবারিক আইন পাশ করাইছিলেন। (মানে, এইরকমের একটা নেরিটিভ আছে, যেইটা নিয়া আরো শিওর হওয়ার দরকার আসলে।) তখন এর এগেনেস্টে অনেক আলাপ উঠলে ঢাকা থিকা সুফিয়া কামাল এর প্রটেস্ট করছিলেন। যার ফলে আইন’টা বাতিল হইতে পারে নাই। পরে যারা ক্ষমতায় আসছেন, উনারা টের পাইছেন যে, এই আইন বাতিল করলে পাবলিকের, স্পেশালি মেয়েদর সার্পোট বা ভোট পাওয়া যাবে না। এখন তো অই আইন আপডেট হওয়ারই দরকার কিছু।… কিন্তু ঘটনা যেইটা হইলো, আইনে আছে বইলাই কিছু সমাজে মেয়েদের বাপের সম্পত্তি পাওয়ার জিনিসটা চালু হইতে পারে নাই পুরাপুরি, এখনো। জামাই আরেকটা বিয়া করলে, বিপদে পড়লে মামলা করা যায় – এইটুকই।… Continue reading

ফিকশন: ফিটাস

থার্ডটাইম এবরশন করাইতে আসছে শারমিন। ফার্স্ট টাইম আসছিল অনার্সে পড়ার সময়। আদনান সাথে ছিল। আদনানও তখন মাস্টার্সে পড়ে, চাকরি-বাকরি নাই। কি করবে অরা! অনেক কষ্টে, বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থিকা টাকা-পয়সা ধার কইরা আসতে হইছিলো। এতো টায়ার্ড লাগতেছিল তখন। বয়স কম ছিল, এই কারণে খারাপও লাগছিল অনেক। বাচ্চা-ই তো ছিল আসলে অরা তখন! হসপিটাল থিকা হলে ফেরত যায় নাই আর।

সোরওয়ার্দি’তে বইসা অনেকক্ষণ কান্দা-কাটি করছিল দুইজনেই। তারপরে আদনানের এক বড়-আপার বাসায় গিয়া রাতে ছিল। অই এবরশন অদের বন্ডেজ অনেক স্ট্রং করছিল। শারমিন আর আদনানের দুইজনই অনেক সরি ফিল করছিল। আদনানের চাকরি পাওয়ার পরই আর দেরি করে নাই অরা, বিয়া কইরা ফেলছিল। শারমিনেরও চাকরি পাইতে সমস্যা হয় নাই। আর বিয়ার এক বছরের মাথাতেই সুন্দর ফুটফুটা একটা বাচ্চা নিছিল অরা। শ্রাবস্তী’র মতো এতো লক্ষী বাচ্চা আর হয় না!

মুশকিল হইলো, শ্রাবস্তী হওয়ার পর থিকাই শারমিন আর আদনানের মাঝখানে ফিজিক্যাল ডিসটেন্স শুরু হয়। আদনানের অফিসের কাজের ব্যস্ততা বাড়তে থাকে, সন্ধ্যা সাতটা-আটটার জায়গায়, রাতে দশটা-এগারোটা নাগাদ বাসায় ফিরতে থাকে। প্রেগনেন্সি লিভের পরে অফিস, বাচ্চা সামলাইতে গিয়া শারমিনও হিমশিম খাইতে থাকে। কই দিয়া যে দুই-তিন বছর পার হয়া যায় টেরই পায় না শে।

একদিন টের পায় যখন আদনান ডিভোর্সের কথা বলে। অর আরেকটা রিলেশন হইছে, ভার্সিটিতে পরিচয় ছিল অই মেয়ের সাথে, একটা কনফারেন্সে গিয়া দেখা হইছে। তারপর থিকা যোগাযোগ। কঠিন প্রেমে পড়ছে সে মেয়েটার। বইলা আদনান কানতে থাকে। শারমিনের শুনতে খারাপ লাগে। চুপ কইরা থাকে। আবার ভাবে, ভুল মানুশরে শে ভালোবাসে নাই, এটলিস্ট সত্যি কথা বলার সৎ-সাহস তার আছে। দুই-তিন দিন চুপচাপ থাকার পরে ব্যাপারগুলার ফয়সালা হয়। আদনানের আব্বা-আম্মা তো ছেলের ত্যাজ্য কইরা দিবেন বইলা ঘোষণা দেন। শারমিনের আম্মা বাঁইচা থাকলে অনেক কষ্ট পাইতেন। অদের বিয়ার পরপরই মারা গেছিলেন। শারমিনের আব্বা সবসময়ই দায়িত্ব এড়ায়া চলা লোক, জিগান, কি করতে চাও তুমি এখন? চলে আসবা আমাদের বাসায়? ছোটভাইয়ের সংসারে গিয়া উঠতে চায় না শারমিন। বড়’পা আর দুলাভাই ডেইলি যোগাযোগ করতো কিছুদিন, বলতো কানাডা চইলা আয়! বয়স ৩০ হইলো না এখনো তোর, লাইফ কি এইখানেই শেষ নাকি! অই ছাগল’টারে দেখায়া দে, হোয়াট ইউ আর ক্যাপাবল অফ… এইরকম। কিন্তু শারমিন বুঝে, সবারই আলাদা আলাদা লাইফ আছে। কেউ কারো লাইফে জোর কইরা থাকতে পারে না। পারাটা উচিতও না।

অফিসের চাকরি’টা ভালো। কলিগরাই অনেক হেল্প করে শারমিনরে। অফিসের কাছেই একটা ছোট বাসা নেয়। একটা ফুল-টাইম বুয়াও পায়া যায় বাসার কাজের জন্য। অফিসের ডে-কেয়ারও আছে। আর স্টুডেন্ট লাইফেও পড়াশোনা নিয়া সবসময় সিরিয়াস ছিল শারমিন, চাকরিতে, প্রফেশনেও শে সিরিয়াস। যার ফলে সবাই অরে লাইক করে। শুরুতে কিছুদিন অনেক খারাপ লাগতো, হুদাই কান্দা আসতো, প্যানিক এটাকের মতো। অফিসের টয়লেটে গিয়া অনেকক্ষণ বইসা থাকতো। বাইর হয়া আইসা দেখতো সবাই অর ডেস্কের সামনে হৈ-হুল্লোড় করতেছে, আপনার জন্য পিৎজা অর্ডার করছি শারমিন, টাকা দেন! এই-সেই। এইভাবে ঘটনাগুলা ইজি হয়া যাইতেছিল। আদনানের জন্য কখনোই শারমিনের খারাপ লাগে নাই। লুজার ফিলিংসও হয় নাই কখনোই। শে জাস্ট একটা লাইফের ড্রিম নিয়া ছিল, যেইটা শে এখন বুঝতে পারে, একইরকম হইতে পারবে না আর। লাইফ গোছানোর চাইতেও লাইফের ড্রিমটারে নতুন কইরা সাজানো অনেক কঠিন। অনেক সময় সম্ভবই হয় না। শারমিন ফিল করে, অর ড্রিমটা ভচকায়া গেছে। লাইফের কথা শে আর সিরিয়াসলি ভাবতে চায় না।

শ্রাবস্তীর সাথে সময়টা ভালোই কাটে। স্কুলে যাওয়া শুরু করছে এখন। আদনান মাসে একবার কইরা আসে, দুই-তিন ঘন্টা থাকে। শ্রাবস্তীর সাত-আট বছর হওয়ার পরে একদিন কইরা নিয়া রাখতে পারবে। এইরকম একটা এগ্রিমেন্ট অরা নিজেরা নিজেরাই করে নিছে, এইসব নিয়া কোন ঝামেলা হয় নাই। আদনান সবকিছুই মাইনা নিছে। শ্রাবস্তীর দাদ-দাদী কয়েকবার আইসা থাইকা গেছে। যাওয়ার সময় শ্রাবস্তী দাদী জড়ায়া ধইরা ছেলের জন্য মাফ চাইছেন। বলছেন, মা রে, তুমি আরেকটা বিয়া করো এইবার! প্রায়ই শ্রাবস্তীর নাম কইরা টাকা-পয়সা পাঠান। এক ধরণের অপরাধবোধে ভুগেন মেবি উনারা।

Continue reading

লাইভ ফ্রম ঢাকা: কম্পাইলেশন অফ ডিজাস্টার

কয়েক বছর আগে যখন বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে সিনেমাটা রিলিজ হইছিল তখন অনেকের প্রশংসা শুইনা দেখবো ভাবছিলাম, কিন্তু কোন সিনেমা আমাদের পরিচিত ডিস্ট্রিবিউশনের জায়গাগুলাতে (আমার ক্ষেত্রে, যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাহল, নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, পাইরেট ই-বে) না পাওয়া গেলে, দেখা তো কঠিন। আর এই ডিরেক্টরের সিনেমা কান-এ সিলেক্ট হওয়ার পরে এই সিনেমা না দেখার কারণে ‘সিনেমা-ক্রিটিক’ হিসাবে নিজের পজিশন তো রিস্কে পড়ে যাইতেছিল! এই কারণে দেখাটা ফরজ হয়া গেছিল। থ্যাংকস Abir Hasan Eka, হেল্প করার জন্য।

তো, লোকজনের কথা শুইনা আমার মনে হইছিল যে, সিনেমা’টাতে একটা ‘কেওস’ বানানো গেছে, যেইটা ঢাকা শহরের একটা কোর সিগনেচার বইলা আমি মনে করি। কিন্তু সিনেমা’টা আসলে “কম্পাইলেশন অফ ডিজাজস্টার”, কেওস না। মানে, দুইটা দুই জিনিস। যেমন দেখেন, রাস্তার এতো সিন, অথচ জ্যামের কোন ঘটনা নাই তেমন! (একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস খেয়াল করলাম, ‘৭০ দশকের সিনেমাতে শাপলা’র মোড়, দোয়েল মোড় যেইরকম “ঢাকা শহর” ছিল, এখনকার ভিজ্যুয়ালগুলাতে কুড়িল-বিশ্বরোডের ফ্লাইওভার, হাতিরঝিল “ঢাকা শহর” হয়া উঠতেছে। “ডুব” সিনেমাতেও দেখলাম।)

আমি শুইনাই খুব খুশি হইছিলাম যে, শেয়ার-মার্কেটের ডাকাতির ঘটনা কাহিনির বেইজ হিসাবে কাজ করছে। কিন্তু এরপরে ড্রাগস, আদম-পাচার, ভার্সিটির মারামারি, শাহবাগ (মতিঝিল কিন্তু নাই )… এই ব্যাপারগুলা একরকমের ‘অ্যাড-অন’ হিসাবে আসছে, কিছু ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ যেন, একটা স্পেইসে, ঢাকা শহরে, একজন ব্যক্তি-মানুশের লাইফে ঘটতেছে। আর এই ঘটনাগুলাও রিয়ালিটি হয়া উঠতেছে টিভি-রেডিও’র নিউজের ভিতর দিয়া।

সাজ্জাদ আর রেহানার থাপড়া-থাপড়ি’র ঘটনাই দেখেন, যেন সোশ্যাল প্রেশারের কারণে অরা পারসোনাল লাইফে ব্রার্স্ট-আউট করতেছে, এইরকম একটা জায়গাতে ন্যারো করা হইছে। এইটা অই সেন্ট্রাল থিম’টার কারণে করতে হইছে। এইটা ইউরোপিয়ান আইডিওলজিক্যাল মাইন্ডরে সেটিসফাই করার কথা অনেক। Continue reading