ডিসেম্বর ০৩, ২০২২
এইটা খুবই ভুল-ভাবনা যে, ফেইসবুকে ঢুকলে বা অনলাইনে থাকলে সারা-দুনিয়ার খবর আমরা পাই। বরং আমাদের চোখের সামনে যতটুক দেখি, ততটুকরেই সারা-দুনিয়া বইলা ভাবার ইল্যুশনটা আরো বড় হয়। (এমনকি আমার সন্দেহ ফেসবুকে ডাইবারসিটির জায়গাটাও রিডিউস করা হইতেছে অনেক।)
যেমন, আমার নিউজফিডের মোটামুটি ৭৫% মানুশই হইতেছে ঢাকা শহরের; যার ফলে রাজশাহীতে গত কয়দিন ধইরা “পরিবহন ধর্মঘট” নামে যেই আজাব চলতেছে, ধর-পাকড় হইতেছে, সরকারিভাবে ইন্টারনেট-সার্ভিস অফ কইরা দেয়া হইছে – সেইটা আমি টের পাইতেছি না। (অই নিউজগুলা মিডিয়াতে তো নাই-ই, ফেসবুকেও স্প্রেড হইতে দেয়া হইতেছে না বইলাও আমার মনেহয়।) কিন্তু নেকস্ট-উইকে ঢাকা-শহরে যখন এই কাজ করা হবে – মনে হইতে থাকবে, পুরা দুনিয়াই অন্ধকার হয়া আসতেছে!
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আমার সাথে ঘটতেছে না, বা আমার এলাকায় ঘটতেছে না বইলা এইটা মেবি “সত্যি” না – এইরকম একটা রিয়ালিটির পারসেপশন খুব স্ট্রংলি এগজিস্ট করতেছে। ফেইসবুকের ভিতর দিয়া বা অনলাইনের ভিতর দিয়া কম্পার্টমেন্টালাইজেশন ঘটতে পারতেছে, আরো বেশিই আসলে।
***
শাহ আলম সরকার
বাংলাদেশের আর্ট-কালচারের ব্যাপারে একটা জিনিস আমি খেয়াল করছি, সেইটা হইতেছে, অনেককিছু আমরা শুনছি, দেখছি, পড়ছি বা জানি, কিন্তু কার লেখা বা বানানো অই আর্ট-ওয়ার্কটা সেইটা আমরা ‘জানি না’!
যেমন ধরেন, ‘এতো যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিল না’ ‘আকাশটা কাঁপছিল ক্যান, জমিনটা নাচছিল ক্যান’ ‘বুকটা ফাইট্টা যায়’ ‘বান্ধিলাম পিরিতের ঘর’ ‘খাজা বাবা খাজা বাবা মারহাবা মারহাবা’… টুকটাক বাংলা-গান শুনেন এবং এই গানগুলা শুনেন নাই, এইরকম লোক কমই আছেন। কিন্তু এই গানগুলা যারা শুনছেন তাদের মধ্যে খুব কম (মানে, মিডল-ক্লাসের) লোকই জানেন যে, এইগুলা শাহ আলম সরকারের গান।
এমনিতে, একটা ক্লাসের কাছে উনি তো একজন ‘জীবন্ত কিংবদন্তি’ই। কিন্তু বাংলাদেশের গানের আলাপে উনার নাম তেমন একটা পাইবেন, অইটা সবসময় এক্সক্লুডেড থাকে। যারা পছন্দ করেন, জানেন, তারাও শাহ আলম সরকারের নাম নিতে শরম পাওয়ার কথা কিছুটা, কারণ ‘স্মার্ট’ হওয়ার বিপরীতে ব্যাপারটা তো ‘খ্যাত’-ই কিছুটা! 🙂
তো, শাহ আলম সরকার একবার বলতেছিলেন, গীতিকবি’র নাম তো কেউ মনে রাখে না। অনেক গান মমতাজ গাইছে বইলাই হিট হইছে, এবং এইজন্য উনি হ্যাপিও। কিন্তু ঘটনা এইটুক বইলাই আমার কাছে মনেহয় না। মানে, গীতিকবি’র চাইতে সিঙ্গারের কথা আমরা বেশি মনে রাখি, এর বাইরেও যেইসব জিনিসরে আমরা ‘কবিতা’ বইলা মর্যাদা দিতে রাজি আছি, সেইখানে এই জনরা’র এবসেন্স তো আছেই, লিরিকস হিসাবেও ‘ফোক’র মধ্যেই রাখি। যেন কেউ একজন এই গানগুলা লেখেন নাই! শাহ আলম সরকার লিখলেও এইটা ‘ফোক সং’, উনার গীতি-কবিতা না!
এইটা একটা সিগনিফিকেন্ট কালচারাল-বদমাইশি।
শাহ আলম সরকারের জন্ম ১৯৬৫ সালে, আর উনার ফার্স্ট গান রেকর্ড করেন ১৯৯১ সালে। সেই হিসাবে উনি কিন্তু ‘নব্বই দশকের কবি’! মানে, খুবই কনটেম্পরারি।
তো, এইটা খালি শাহ আলম সরকারের ব্যাপারেই ঘটে নাই, পুরা একটা কালচারাল হিস্ট্রিরে ‘অচ্ছুত’ কইরা রাখার ঘটনা এইটা। কারণ উনি তো একটা সিলসিলা থিকাই আসছেন, যেইখানে আবুল সরকার, রাজ্জাক দেওয়ান, গফুর হালী, আরো অনেক অনেক নাম পাইবেন।…
কলোনিয়াল-কালচাররে ‘উচ্চতর’ বানাইতে গিয়া কেমনে এই জায়গাটারে ‘ফোক’ কইরা রাখা হইছে, সেইটা খেয়াল করাটা এখন মাস্ট হয়া গেছে আসলে।
Continue reading