গ্যাংস্টার

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্যাংস্টারে বিভক্ত পৃথিবী। ক্ষুদ্র মানে ঠিক ছোট না, পৃথিবীও আসলে দুনিয়া না। লিমিটেড অর্থসম্পন্ন তারা, লিমিটেড কোম্পানীর মতোন। সবই ত লোনলিনেসেরই ব্যবসা। আসে, যায়; খাবি খাইতে খাইতে পইড়া যায়; মাঝে মাঝে যেমন, তব দেখা পাই। রবীন্দ্রনাথের কথায় অর্ণবের সুরে, ফিউশন গানের মতোন। কোনটা হয়, কোনটা হয় না। টাকা-পয়সাও মাইর যায় অনেক সময়। তারপরও ব্যবসা ত; চলতেই থাকে। এইরকম একটা ছোটখাট গ্যাংস্টার গ্রুপ চালাই আমি।

চোলাই মদ খাই, কাওরান বাজারে কাঠের দোকানগুলাতে বইসা। মাঝে-মধ্যে রাস্তা পার হয়া সোনারগাঁ’তে যাই। তখন শার্টের উপ্রে জ্যাকেট’টা পড়ি। ফ্রেবিকটা ওলের; যার ফলে সামারেও পড়া যায়। এই ফর্মাল ড্রেস পড়ার পরে একটা স্ট্যাটিক বয়সে আটকাইয়া যাই, হইতে পারে ত্রিশ। আমার বয়স আর বাড়ে না। ইউনির্ভাসিটি পাশ কইরা খালি চাকরিতে ঢুকছি, মাল্টি-ন্যাশনাল। এইরকম একটা ফিলিংস হয়। জেমসের গানের মতো উরাধুরা লাগে, নিজেরে মনে হয়, আন-নোন। কোন পাস্ট নাই। বড় হইছি শহরেই; কোন গ্রামের বাড়ি নাই। প্রতিবছর ঈদে ঢাকা ছাড়া লাগে না। দূরের কোন মামুবাড়ি আছে খালি, নোয়াখালি বা কুমিল্লায়।

একটা রাস্তা পার হইলেই কী চেইঞ্জ! নদ্দা আর বারিধারা; বাড্ডা আর গুলশান এরিয়া। দুইপারে দুইটা দুনিয়া।   Continue reading

যুদ্ধ ও শান্তি

ফটো: খেয়া মেজবা।

 

ছিলাম অফিসের একটা উইকলি মিটিংয়ে। মিটিংরুমে আমার ঢুকতে একটু দেরিই হইছিল। অফিসে গেছি দেরিতে। তারপর ভাবলাম যে ডেস্ক থিকা ল্যাপটপটা নিয়াই যাই। কেউ না কইলেও, মিটিং মিনিটস লিখতে পারা একটা অ্যাডিশন্যাল সুবিধার ব্যাপার; যেহেতু লিখতে হয়, এই কারণে কথা-বার্তা একটু কম শুনলেও হয়। এমন না যে, কথা-বার্তা শোনাটা ইর্ম্পটেন্ট না; যা লিখতে হইবো, ওইটুক শুনলেই হয়, মানুষজনের ইন্ডিভিজ্যুয়াল পারসপেক্টিভগুলা এবং পারসেপক্টিভের ভিতরে উনারাদের মিনিংগুলা না শুনলেও হয় হয় আর কী; মানে, শোনাই যায় না তখন, টাইমই পাওয়া যায় না; একটা পরে একটা আসতেই থাকে। লিখবো না শুনবো এইরকম একটা ব্যাপার। মনোটোনাস লাগে এই রেট-রেস। একটা প্রমোশনই ত, এর লাইগা বুদ্ধির এতো এতো কসরত, বিপর্যয়। ভাবতেই ক্লান্ত লাগে। মিনিটস নিতে কিছু ভুলও হয়, পারসপেক্টিভগুলা ঠিকমতো আর্টিকুলেট না করতে পারলে। কিছু ভুল থাকাটা মনে হয় ভালো। আল্লার দুনিয়ায় পারফেক্ট আর কে হইতে চায়, সবাই ত চায় ডিজায়ারেবল হইতে, কনশাস কিছু ভুলসহ। কারণ যে ভুল ধরতে পারলো, সে ভালোও বাসতে পারে ত, একটু। এইরকম সম্ভাবনাগুলা না রাইখা দিতে পারলে, বাঁইচা থাকা কেন আর! এইরকম মনে হয়, মাঝে-মধ্যেই। আমাদের বাস্তবতা এইসব ঠেসগুলারে অ্যাকোমোডেড কইরাই চলে, কোন না কোন ভাবে; এইটা বেসিক পয়েণ্ট না অবশ্যই, কিন্তু একটা পয়েণ্ট ত![pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

আমি যাওয়ার পরে একটা পয়েণ্টই আলাপ হইলো। তারপরই শেষ-শেষ ভাব। স্পিকার ত বস একলাই। বাকি আট-দশজন মুড বুইঝা খালি হুঁ-হা করে। যেই ঈদ গিফটগুলা পাঠানো হইবো, সেই অ্যাড্রেসগুলা একটা এক্সেল ফাইলে রাইখা দিতে কইলেন। যে, কে কে কারে কারে কয়টা কইরা গিফট পাঠাইতেছে, এইটা ডকুমেন্টেট থাকাটা দরকার। যদিও মাইনর ইস্যু, কিন্তু এইরকম মাইনর ইস্যুতেও অডিট হইলে যাতে কোন ঝামেলা না হয় বা পরবর্তীতে নানান কাজে লাগতে পারে। কাজটা যে কারে করতে বললেন, আমারে নাকি শেরিল’রে ঠিক বুঝতে পারা গেলো না। শেরিল চোখের কোণা দিয়া আমার দিকে তাকাইয়া হাসলো, মানে, এইটা ত আপনারেই করা লাগবো! কাজকাম কইরা প্রমোশন যেহেতু চান আপনি। আর শেরিল জানে, প্রমোশন একটা ডিফরেন্ট গেইম। আমি সেইটা শিখতে পারি নাই। এখন মিড-এইজে আইসা নতুন কইরা শিখারও উপায় নাই। সিনসিয়ারিটি, ডেডিকেশন ইত্যাদি মানবিক গুণাবলী, যা ছিল সিক্সটিইজের ইনোভেশন; এইগুলা বেইচাই চাকরি টিকাইয়া রাখতে হবে। শেরিলের এইসব না করলেও চলে যেন। ও মনে হয়, স্যান্ডবার্গের লিন ইন বইটা পুরাটাই পইড়া ফেলছে, আমি ভাবি। ভাবি যে, কেন আমি আরো লিবারাল হইতে পারি না; নারী বিষয়ে।

প্রতিবার উইকলি মিটিং শেষে এইরকম পরাজয়ের একটা ফিলিংস হয়। কাফকার মতো লাগে নিজেরে, অফিসে। আছি, কিন্তু থাকাটার সবসময় ভিতর না-থাকাই থাইকা যাইতেছে। সিনসিয়ারিটি, ডেডিকেশন আছে, কিন্তু আমি ত নাই! এইরকম হযবরল থাকা নিয়া কি তরুণ-কবিদের ওপর আস্থা রাখাটা ঠিক হবে? বড়জোর আরেকটা অ্যাভারেজ গল্পই লেখা যাবে, ঈদসংখ্যার। বিশ হাজার মানুষ দেখছে বইলা ভাইবা আনন্দ পাওয়া যাবে, ফেইসবুকের নোটে শেয়ার করলে অন্তঃত শ’খানেক আইডি’র লাইক পাওয়া যাবে যাতে কইরা প্রমাণযোগ্য করা যাবে গল্পটা ভালোই হইছে। আর এর লাইগা আমি আমার জীবন পগার পার কইরা রসাতলে যাইতে থাকবো! কাভি নেহি! এইরকম একটা জিহাদি জোশ চইলা আসলো শরীরে। অফিসে বইসা জিহাদ করা সম্ভব না; সম্ভব, তবে অনলাইনে। এইগুলা দিয়া হবে না। পলিটিক্যালি অ্যাক্টিভ হইতে হইলে রাস্তায় নামতে হবে। Continue reading

মিডলাইফ ক্রাইসিস

[pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]
‘তোমার জামাই তোমারে ভাঁজ দিলো আর তুমি প্যাঁচ খায়া গেলা!’

‘তুমি জানো, ইটস নট ট্রু! তুমি একটা বাজে লোক আমি জানি, কিন্তু এই সময়ে আমারে ডিসট্রাক্ট করাটা অন্তঃত স্টপ করো!’

‘তোমারে যদি আমি ডিসট্রাক্টই না করতে পারি তাইলে তোমারে আমি কেমনে ভালোবাসবো? তোমারে ত আমি আমার ইলিউশনের মধ্যে নিয়া যাইতে চাই। সেইখানে তুমি বন্দী রাজকন্যা আর আমি রানা প্লাজার উদ্ধারকর্মী। দেখো, একটা রিলেশনের কাজই হইলো একটা ইলিউশনরে সম্ভব কইরা তোলা। যাতে কইরা এর ভিতরে আমরা নিজেদরেকে আটাইতে পারি। এখন সুমন পারতেছে। কারণ সে তোমারে কনভিন্স করার লাইগা টাইম পাইছে। তোমরা একই প্যানে হাগা-মুতা করো। আমি ত বাল তোমার চুলের গন্ধটাও ভুলে গেছি। বিশদিন পরে পরে একটা ঘণ্টা খালি; তোমার সাথে এইটুক সময়ের মধ্যেই আমি শেষ। সুমন রে সুমন!’

নিম আর হাসে না। শে তার কাপড় পড়তে শুরু করে।

একই ট্রিকস বারবার কাজ করে না আসলে। প্রথম প্রথম আমরা সুমনরে নিয়া হাসতাম। কুত্তা-বিলাই নিয়া যেমন আমি হাসতে পারি, মানুষ নিয়াও পারি যে সে আসলে মানুষ না তেমন একটা। কোনকিছুরে তার অ্যাকজেগ্ট অবস্থা থিকা রিডিউস না করা গেলে ত হাসা যায় না। এইটা একটা চালাকি ওরে ইগনোর করার, ইস্যুটারে হালকা কইরা ফেলা। কিন্তু চালাকিটা হইলো প্রেমের শত্রু। সুমন আমাদের কাছে বোকা থাকতে থাকতে জিইতা যাইতেছে। আই ক্যানট প্রুভ যে, আমি আরো বড় বেক্কল। আমার আত্মা বেইচা দিছি আমি খামাকা ফ্লার্ট করতে গিয়া। আমি রিয়েল প্রেমিক হইতে চাইতেছি আর ওরে বাইন্ধা ফেলতে চাইতেছি এইভাবে আমার ভাবনার ভিতরে; আর নিজেও আটকাইয়া যাইতেছি। রিয়ালিটির কি যে যন্ত্রণা, কারণ রিয়ালিটি কনসেপ্টটা কখনোই প্লুরাল হইতে পারে না, অথচ আমাদের কল্পনায় কতকিছুই না সাজাইতেছি আমরা।

এইটা খুবই ভয়ংকর একটা গেইম। আমি জানতাম। আমারে মাসুদ রানা হইতে হবে; টানে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না… কিন্তু আমি হইলাম জাস্ট রিভার্স; বাঁধনে জড়াইতে চায়, কিন্তু টানতে পারে না… ইন দ্যাট কেইস নিশিন্দা হইলো গিয়া বেক্কল’টা। শি নোটিসড যে, আমি পারি না এবং আমার বোকামি’র সাথে তার বোকামিটারে মিলাইয়া ভজঘট’টা পাকাইলো। যে, রিয়ালিটি এগজিস্ট! আরে, আমি ত প্রেমে পড়তেই পারি। কোনকিছু না জাইনা এবং না বুইঝা। বেক্কল হিসাবে এইটা আমার অভ্যাস, আমার কোয়ালিটি। ওরও যে কোন কুক্ষণে নিজেরে বেক্কল প্রুভ করার লাইগা উতলা হইতে হইলো, আল্লা জানে! Continue reading

ওল্ড ব্যান্ড রিইউনিয়ন

 

দিনগুলি এইরকম যে, ফিরা ফিরা আসে। আজকে সন্ধ্যাবেলায় যেমন আসছি ওল্ড স্কুল ব্যান্ডের রিইউনিয়নে। পুরান কলোনি’তে যেইখানে থাকতাম আমরা, কলেজে পড়ার সময়ে। লিড সিঙ্গারের পায়ে নীল জুতা। তারও প্রেমিকা আসছে, তার কাছে অনেক দিন পরে। সে কনফিউজড, সে কি আরো গান গাইবো নাকি প্রেমিকার সাথে ব্যাক স্টেইজে চইলা যাবে। ব্যাক স্টেইজ বলতে অর্ধেক পর্দা দেয়া ছোট একটা রুম। সে তার কাছে গেলো, জড়াইয়া ধরলো। বেস গিটারিস্ট সামনে চইলা আসলো। সে গান গাইবে কিনা শিওর না। লিড গিটারিস্ট এবং ভোকাল যে সে প্রেমিকারে কি কি জানি বলতেছে; তাদের পুরান প্রেম নতুন হয়া উঠতেছে। শে তারে বলতেছে যে, আমি তো তোমার গান শুনতে আসছি! তোমার গানই আমার প্রেম। তুমি গান গাও। তারা তাদের ঠোঁটে চুমা খাইলো। বেস গিটারিস্ট তাদের দিকেই তাকাইয়া ছিল। লিড সিঙ্গার যখন স্টেইজের মূল জায়গাটাতে আসতে শুরু করতে করলো, তখন সে হাসলো; সরে আসলো তার জায়গায়।

তারা উড়িয়া হিপের জুলাই মনিং’টা গাইতেছিল। রাতের বেলায়। বাংলায় শুনতেছিলাম আমি। Continue reading

দুর্গতিনাশিনী

ফটো: আনিকা শাহ
———————–

ব্যাপারটা স্ট্রাইক করলো এটিএম-এ টাকা তুলতে গিয়া; টাকা থাকার কথা ছিল, টাকা ত নাই; কিন্তু আগে থিকা কোনো আওয়াজ দেয় নাই; মেশিন ত কয় আগে, যে ভাই আপনের ত টাকা নাই, বাটন টিপেন কেন খালি, চাইলে হিসাবের কাগজ নিয়া যান। অথচ সে কিছু না কইয়া কাগজ বাইর কইরা দিলো। কাগজ পইড়াও কিছু বোঝা যায় না; কোনো হিসাব নাই, খালি একটা লাইন, তাও মিনিংলেস, কোনো অর্থ নাই। গাণিতিক কিছু একটা লেখা, নাম্বার সাইন ইত্যাদি দিয়া। তখনই মনে হইলো, কোনো একটা গণ্ডগোল আছে এইখানে; খালি এইখানেই না অন্যান্য জায়গাগুলাতেও; যার ভিতর দিয়া এইটা ইনিশিয়েটেড হইছে। এইটাই শেষ না, মাত্র শুরু হইলো দিন। তখনো সকাল। দশটা বাজে নাই। অফিস-টাইম শুরু হয় নাই। ওহ্, অফিসে ত যাইতে হবে তাইলে।

ফেইসবুকে যেইরকম একটা ইস্যু শেষ না হইতেই আরেকটা ইস্যু চইলা আসে; ছবির হাট বন্ধের লাইগা স্ট্যাটাস দিতে না দিতেই স্পেনের পাঁচ গোল খাওয়া, তারপরে কালশীতে বিহারী পুড়াইয়া মারা, ওগো মোর জাতীয়তাবাদ, ওরা কি মানুষ না! শেষ না হইতেই মানুষ সরদার ফজলুল করিম মরলেন, যিনি নিটশে’রে সুপার-হিউম্যান ধারণার লাইগা হিটলারের বাপ ভাবছিলেন; সেইটা পার হইতে না হইতেই ইন্ডিয়ার সেকেন্ড ক্লাস টিমের সাথে বাংলাদেশ ওয়ানডে ম্যাচ হারলো, সন্ধ্যা ও বৃষ্টি একসাথে এবং পহেলা আষাঢ়ের প্যান প্যান; আর্জেন্টিনা’র খেলা… এইরকম দুর্গতিগুলা আসতেই থাকবো একটার পরে একটা। এইরকম মনে হইলো, ঘটনাটা। Continue reading