কথা ও কাহিনি
এইরম গাদলা দিনে বসে আবার মনে পড়লো লিবা’র কথা। আসলে এই কাহিনির কোন মাথা-মুণ্ডু নাই। আমি যত ভাবি আর বলতে চাই, ততই অবাক হই। কিভাবে এই কাহিনি বলা যাইতে পারে, যেখানে সমস্তু কিছুই অনির্দিষ্টতা, মনে করে নেয়া অথবা যেখানে অস্তিত্ব এতোটাই বিহ্বল যে চেতনা আর সাড়া দেয় না, সবকিছু এতোটাই স্পষ্ট এবং ধোঁয়াটেও একইসাথে… ভালোবাসার আসলেই কি কোন বর্নণা সম্ভব আর? এই দ্বিধা কাহিনিটার পরতে পরতে আর মাঝে মাঝে ভাবি এইখানে শুধু পরির্পাশ্বই আছে, কোন ঘটনা আর নাই। তারপরও অব্যক্ততার আরো আছে, থাকে, কত যে কথা!
অথচ কথাগুলি কি আর বলতে পারে, যা বলতে চায়। অথবা যে দ্বৈততার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে সময়, শব্দ ও তার নিহিত অর্থগুলি তারা তো অসম্পূর্ণ, ব্যক্তির আড়াল খুঁজে। খুঁজে ভঙ্গিমার প্রশয়, যেন এই করে করেই পার পাওয়া গেলো!
কি বলতে বসেছি, আর বলছি কি! সবসময় এমনটাই ঘটে। কাহিনিটা আর বলা হয় না। বলার মতো কোন ঘটনাও আসলে নাই। আসলে কোন কাহিনি-ই না, এইটা। কারণ আবার মনেহয় এইটা এখনো ঘটতেছে, প্রতিদিন। কথার ভিতরে জমা কাহিনি কি বাইর হয়া আসতে পারবে আর, অথবা ধরো এই যে কাহিনি, সে কি আর কথার ধার ধারে নাকি! ফাঁপা গহ্বর একটা, জীবনের – তারেই প্রেম বলে নাম দিছে লোকে?
বাইনোকুলার
বৃষ্টিতে ঝিরিঝিরি শব্দ। একদম সকাল থিকাই। দুপুরে একটু কমলো কি আবার বিকাল না হইতেই শুরু। এই অবস্থা গত তিন-চাইর দিন। বৃষ্টির উছিলা আর কত! আজকে তো যাওয়াই লাগে। কি উপায়? শিমা’র মাথায় বুদ্ধির অভাব নাই। কইলো, বৃষ্টির দিন সবকিছুই ঝাপসা, একটু দূরের জিনিসই দেখা যায় না, তার উপর সন্ধ্যার আগে যাওয়া যাইবো না, তাই দুইটা জিনিস লাগবো, একটা ছাতি আর একটা বাইনোকুলার। বাইনোকুলার? দুপুর বারোটার সময় বইসা বইসা এই প্ল্যান করতেছি।
বাইনোকুলারটা শিমার দুলাভাই আনছে, এখন ওর হেফাজতে আছে, বিকালবেলা ওইটারে কামে লাগাইতে হইবো। আমার মাথা আর তখন কোন কাজ করে না। ঠিক আছে, এইটাই প্ল্যান। ছাতিও আমি নিতে পারবো না। যেহেতু বাইনোকুলার নিবে শিমা, ছাতি নেওয়ার দায়িত্বও ওর।
তিনটা না বাজতেই বৃষ্টি যেন তুফান ছুটাইলো। চারদিক অন্ধকার করা বৃষ্টি! যেন আর থামবেই না। হৃদয় এখন মূঢ়তার চূড়ান্ত। চারটা বাজতে, অন্ধকার কমলো; কিন্তু তেজ আছে একই। দুমদাম বৃষ্টি। পাঁচটার দিকে একটু ঢিমেতাল ধরে আসলো একটু। আর দেরি নাই, শুয়ে শুয়ে এর অপেক্ষায় ছিলাম…
অর্ধেক পথ যাইতে গিয়া দেখি ছাতি হাতে শিমাও আসতেছে… হাতে একটা গুটলি পাকানো প্যাকেট… কি এইটা?… বাইনোকুলার… দেখা যাইবো তো?… হ।
বৃষ্টি আবার শুরু হইছে। দাঁড়াইবারও কোন জায়গা নাই। কই গিয়া একটু দাঁড়াই বা বসি! খাঁড়ির ভিতর আইসা নোঙর করছে কয়েকটা লঞ্চ, যদিও একটু দূরে, কিন্তু তার ডেকের উপরই একটু দাঁড়ানো যাইবো তা না হইলে তো আর কোন উপায় নাই।
বৃষ্টির দিন একটা ছাতি লইয়া ঘুরাফিরা করতাছে দুইটা মানুষ, তাঁর বাসার পিছনে, এই দৃশ্য কি চোখে পড়বে না লিবা’র? শে কি আসবো না তাঁর ছাদের কোণায়? না-দেখার মতো কইরা একটুও কি দেখবো না?
আবার শুরু হইছে বৃষ্টি! এই কমে তো এই বাড়ে। ঘাপটি মাইরা বইসা আছি লঞ্চের কেবিনের বাইরের জায়গাটাতে। শালার বাইনোকুলার খুইলা চোখে দিয়া দেখি, খালি চোখে যা দেখা যায়, এইটা দিয়া তো তাও চোখে পড়ে না! বারবার কাঁচ মুইছা দেয় শিমা, একবার আমি দেখি, আরেকবার সে, কিন্তু কিছুই দেখি না, শাদা, ঝাপসা সবকিছু…
হঠাৎ আমার মনে হইলো যেন দুইটা ছায়ামূর্তি ঘুরাফিরা করতেছে ছাদের উপর, হেঁটে হেঁটে আবার ফিরে আসছে, দেখছে আমাদেরকেও, শিমাও দেখলো অস্পষ্ট, কিন্তু ওরা কি ডাকতেছে আমাদেরকে, হাত তুলে কি নাড়লো, বললো কি কিছু… একে তো বৃষ্টি, তার উপর সন্ধ্যা… দিনের শেষ ছায়ায় বামপাশের মূর্তির দিকে নির্নিমেষ তাকায়ে আছি, শে কি কিছু বলতেছে আমারে; বলতেছে কি, চলে আসো; দূরত্ব মহান না, যেখানে সমস্তই ঝাপসা, সেই দূরত্ব পার হয়া আসো! Continue reading →