পর জনমে হইও রাধা

শার্মিন যখন সেকেন্ড টাইম দৌড়টা দিলো তখন আমি বুঝতে পারলাম যে ও আসলে আমারে ছুঁইতে চায় না, জিতাইয়া দিতে চায়। প্রথমবার দৌড় দেওয়ার পরই টের পাইছিলাম যে এই স্পীডে কাভার দিতে পারমু না, কিন্তু রাস্তাটা যেহেতু একটু অপরিচিত, এর চে বেশি জোরে দৌড়ানোটাও সম্ভব না। অথচ এতগুলা মেয়ের সামনে আরকেটা মেয়ের সাথে কিভাবে হারতে পারি আমি! [pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

তাই যতটুকু পারা যায়, তারচেও বেশি জোরে দৌড় দিছিলাম; বাউলি কাটতে গিয়া, তাল সামলাইতে না পাইরা একদম ধপাস!

ডান হাঁটু ছিইলা গেলো, রক্ত পড়তেছে না যদিও। শার্মিনই আগাইয়া আসলো; হাত ধরলো, তারপর হাঁটুর দিকে দেইখা কইলো, “বেশি ব্যথা পেয়েছ?”; আমি কইলাম ‘না না তেমন কিছু না, খেলতে পারবো’। দূরে দাঁড়াইয়া থাকা অন্য ছেলেগুলা, যারা ‘ছেলে’ বইলা ‘মেয়ে’দের সাথে খেলে না; তাদের কষ্ট ও বিস্ময় দেখতে পাইতেছিলাম আমি। তারাও কি দৌড়াইতে গিয়া পইড়া যাইতে পারতো আর তারপর শার্মিন আইসা তাদের হাতে ধরতো? এইরকমটাই কি চাইতেছিল? নাকি তারা ‘ছেলে’ই হইতে চাইছে আর দূর থিকা দেখতে চাইছে ‘মেয়ে’দের ভালোবাসা? কতো কোমল আর কেয়ারিং!

Continue reading

ন্যাড়া ও নিউটন

 

ন্যাড়া ও নিউটন (সেলিম রেজা নিউটন না, আইজ্যাক নিউটন) এর কাহিনিটা আজকে আবার বলার ইচ্ছা হইলো। এমন কিছুই না আজ। পবিত্র আশুরা’র পরের দিন। মনের মধ্যে এখনো হায় হোসেন! হায় হোসেন! এমনও হইতে পারে যে, সেই বেদনার সঙ্গী হইতে চায় এই কাহিনি। যা-ই হোক, সেইটা ভিন্ন আলোচনা…

পৃথিবীর পাশাপাশি দুইটা গ্রামে তারা থাকতো, ন্যাড়া ও নিউটন। পৃথিবী ত তখনো গ্রাম, শহর-পর্যায়ে পৌঁছায় নাই। ন্যাড়ার গ্রামে ছিল বেলগাছ। আর নিউটনের গ্রামে ছিল আপেলগাছ। ফল হিসাবে বেল অনেক বড় এবং শক্ত; এইরকমের একটা জাগতিক ভাবনা ছিল ন্যাড়ার মনে। আর আপেল হইতাছে বেহেশতী ফল; এইরকমটা ভাবতো, নিউটনে।

দুইজনেই বেলগাছতলায় এবং আপেলগাছতলায় বসতো, সময় পাইলে। নানান জাগতিক এবং বেহেশতী ভাবনা ভাবতো। তাদের ভাবনা শুইনা বেল ভাবতো, আমারে আরো বড় হইতে হইবো, আরো শক্ত! আপেল ভাবতো, বেহেশতী-ফলে থাকে না কি আরো সুগন্ধ!

ভাবতে ভাবতে ঝিমানি আসতো, ন্যাড়া ও নিউটন, উভয়েরই। ঝিমানি কাটলে ন্যাড়া যাইতো ক্ষেত নিড়াইতে, নিউটন দলিল-দস্তাবেজ ঘাঁটতে। কিন্তু তাদের মন ও ভাবনা ছিল বেলগাছতলায় এবং আপেলগাছতলায়, যথাক্রমে।

তারপর একদিন সেই ঘটনাটা ঘটলো! Continue reading

অমর প্রেম অথবা আমার প্রেম

 

কথা ও কাহিনি

এইরম গাদলা দিনে বসে আবার মনে পড়লো লিবা’র কথা। আসলে এই কাহিনির কোন মাথা-মুণ্ডু নাই। আমি যত ভাবি আর বলতে চাই, ততই অবাক হই। কিভাবে এই কাহিনি বলা যাইতে পারে, যেখানে সমস্তু কিছুই অনির্দিষ্টতা, মনে করে নেয়া অথবা যেখানে অস্তিত্ব এতোটাই বিহ্বল যে চেতনা আর সাড়া দেয় না, সবকিছু এতোটাই স্পষ্ট এবং ধোঁয়াটেও একইসাথে… ভালোবাসার আসলেই কি কোন বর্নণা সম্ভব আর? এই দ্বিধা কাহিনিটার পরতে পরতে আর মাঝে মাঝে ভাবি এইখানে শুধু পরির্পাশ্বই আছে, কোন ঘটনা আর নাই। তারপরও অব্যক্ততার আরো আছে, থাকে, কত যে কথা!

অথচ কথাগুলি কি আর বলতে পারে, যা বলতে চায়। অথবা যে দ্বৈততার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে সময়, শব্দ ও তার নিহিত অর্থগুলি তারা তো অসম্পূর্ণ, ব্যক্তির আড়াল খুঁজে। খুঁজে ভঙ্গিমার প্রশয়, যেন এই করে করেই পার পাওয়া গেলো!

কি বলতে বসেছি, আর বলছি কি! সবসময় এমনটাই ঘটে। কাহিনিটা আর বলা হয় না। বলার মতো কোন ঘটনাও আসলে নাই। আসলে কোন কাহিনি-ই না, এইটা। কারণ আবার মনেহয় এইটা এখনো ঘটতেছে, প্রতিদিন। কথার ভিতরে জমা কাহিনি কি বাইর হয়া আসতে পারবে আর, অথবা ধরো এই যে কাহিনি, সে কি আর কথার ধার ধারে নাকি! ফাঁপা গহ্বর একটা, জীবনের – তারেই প্রেম বলে নাম দিছে লোকে?

 

বাইনোকুলার

বৃষ্টিতে ঝিরিঝিরি শব্দ। একদম সকাল থিকাই। দুপুরে একটু কমলো কি আবার বিকাল না হইতেই শুরু। এই অবস্থা গত তিন-চাইর দিন। বৃষ্টির উছিলা আর কত! আজকে তো যাওয়াই লাগে। কি উপায়? শিমা’র মাথায় বুদ্ধির অভাব নাই। কইলো, বৃষ্টির দিন সবকিছুই ঝাপসা, একটু দূরের জিনিসই দেখা যায় না, তার উপর সন্ধ্যার আগে যাওয়া যাইবো না, তাই দুইটা জিনিস লাগবো, একটা ছাতি আর একটা বাইনোকুলার। বাইনোকুলার? দুপুর বারোটার সময় বইসা বইসা এই প্ল্যান করতেছি।

বাইনোকুলারটা শিমার দুলাভাই আনছে, এখন ওর হেফাজতে আছে, বিকালবেলা ওইটারে কামে লাগাইতে হইবো। আমার মাথা আর তখন কোন কাজ করে না। ঠিক আছে, এইটাই প্ল্যান। ছাতিও আমি নিতে পারবো না। যেহেতু বাইনোকুলার নিবে শিমা, ছাতি নেওয়ার দায়িত্বও ওর।

তিনটা না বাজতেই বৃষ্টি যেন তুফান ছুটাইলো। চারদিক অন্ধকার করা বৃষ্টি! যেন আর থামবেই না। হৃদয় এখন মূঢ়তার চূড়ান্ত। চারটা বাজতে, অন্ধকার কমলো; কিন্তু তেজ আছে একই। দুমদাম বৃষ্টি। পাঁচটার দিকে একটু ঢিমেতাল ধরে আসলো একটু। আর দেরি নাই, শুয়ে শুয়ে এর অপেক্ষায় ছিলাম…

অর্ধেক পথ যাইতে গিয়া দেখি ছাতি হাতে শিমাও আসতেছে… হাতে একটা গুটলি পাকানো প্যাকেট… কি এইটা?… বাইনোকুলার… দেখা যাইবো তো?… হ।

বৃষ্টি আবার শুরু হইছে। দাঁড়াইবারও কোন জায়গা নাই। কই গিয়া একটু দাঁড়াই বা বসি! খাঁড়ির ভিতর আইসা নোঙর করছে কয়েকটা লঞ্চ, যদিও একটু দূরে, কিন্তু তার ডেকের উপরই একটু দাঁড়ানো যাইবো তা না হইলে তো আর কোন উপায় নাই।

বৃষ্টির দিন একটা ছাতি লইয়া ঘুরাফিরা করতাছে দুইটা মানুষ, তাঁর বাসার পিছনে, এই দৃশ্য কি চোখে পড়বে না লিবা’র? শে কি আসবো না তাঁর ছাদের কোণায়? না-দেখার মতো কইরা একটুও কি দেখবো না?

আবার শুরু হইছে বৃষ্টি! এই কমে তো এই বাড়ে। ঘাপটি মাইরা বইসা আছি লঞ্চের কেবিনের বাইরের জায়গাটাতে। শালার বাইনোকুলার খুইলা চোখে দিয়া দেখি, খালি চোখে যা দেখা যায়, এইটা দিয়া তো তাও চোখে পড়ে না! বারবার কাঁচ মুইছা দেয় শিমা, একবার আমি দেখি, আরেকবার সে, কিন্তু কিছুই দেখি না, শাদা, ঝাপসা সবকিছু…

হঠাৎ আমার মনে হইলো যেন দুইটা ছায়ামূর্তি ঘুরাফিরা করতেছে ছাদের উপর, হেঁটে হেঁটে আবার ফিরে আসছে, দেখছে আমাদেরকেও, শিমাও দেখলো অস্পষ্ট, কিন্তু ওরা কি ডাকতেছে আমাদেরকে, হাত তুলে কি নাড়লো, বললো কি কিছু… একে তো বৃষ্টি, তার উপর সন্ধ্যা… দিনের শেষ ছায়ায় বামপাশের মূর্তির দিকে নির্নিমেষ তাকায়ে আছি, শে কি কিছু বলতেছে আমারে; বলতেছে কি, চলে আসো; দূরত্ব মহান না, যেখানে সমস্তই ঝাপসা, সেই দূরত্ব পার হয়া আসো! Continue reading

পুরির গল্প

গল্পটা আসলে পুরির। চা-পুরি-সিঙ্গারা’র পুরি; সিলঅটি পুরি, উৎপলকুমারবসু’র পুরি-সিরিজের পুরি কিংবা অন্য আর কিছুই না। খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা এইটা। চূড়ান্ত অসাফল্যের একটা ইতিহাস, না-পারার একটা করুণ অধ্যায়।

তখন আমার বয়স দশ। শৈশব শেষ হচ্ছে প্রায়। একটু একটু কিশোর। পাড়ার মাঠ ছেড়ে রেলের মাঠে যাই মাঝে মাঝে। মাঝে মাঝে বাজারে যাই আব্বার সাথে। বাজার শেষে রিকশা করে দিলে একা একা বাসায় ফিরতে পারি। ইত্যাকার সব লক্ষণ। মানে আমি বোঝাতে চাইতেছি যে, আমি তখন আসলে আর শৈশবের ভিতর নাই। কিন্তু আমার সম্পর্কে তখনও নর-নারী ভেদ পুরাপুরি ঘটে নাই। নানুবাড়ি গেলে নানা-নানির সাথে এক বিছানাতেই থাকি। একটা বিহ্বল অবস্থার সূত্রপাতও হয় নাই। তখনও আমি কিশোর হওয়ার যোগ্যতাগুলির ভিতর দিয়ে যাওয়া শুরু করি নাই।  [pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

তখন আমি পড়ি ক্লাস ফাইভে। পৌরসভার মডেল প্রাইমারী স্কুলে। আমি বলছি, আশির দশকের মাঝামাঝির একটা সময়ের কথা। কিন্ডারগার্ডেন স্কুল তখনও চালু হয় নাই সেখানে। পৌরসভার মধ্যে নামকরা প্রাইমারী স্কুল। পৌরসভার তথা সমস্ত উপজেলার ট্যালেন্টপুল বৃত্তির একটা বড় অংশ এই স্কুল থেকে আসে। আমাদের আগের ব্যাচে উপজেলার সাতটা ট্যালেন্টপুল বৃত্তির পাঁচটাই এই স্কুলের ছিল। গল্পের এবং স্কুলের সাফল্যের সীমানাটুকু এই পর্যন্তই। এরপর থেকে আমার অধ্যায়, ব্যর্থতা আর অসাফল্যের গাঁথা। সেই ইতিহাসের বিবরণটা এবার পেশ করি।

Continue reading