(শিরক না,) শরিক বাড়ান
এইবারের কুরবানি’র হাটে এবং রাস্তা-ঘাটে অনেক ছোট ছোট গরু চোখে পড়লো। অনেকে বলাবলিও করতেছিল, লাখ টাকার নিচে গরু নাই।
কিন্তু যেই জিনিসটা কমছে মেবি, সেইটা হইতেছে, শরিকে কুরবানি দেয়া। (দেয়া যায় কি যায় না – অই আলাপে আমি নাই; যেহেতু চালু ছিল রীতি’টা, ধরে নিতেছি, যায়।) ১৯৮০’র দশকে ছোট শহরগুলাতে মধ্যবিত্ত (তখন মধ্যবিত্ত মানেই নিন্ম-মধ্যবিত্ত) ফ্যামিলিগুলাতে এই জিনিসটা চালু ছিল কিছুদিন। মাংস নিয়া মন-কষাকষি যে হইতো না – তা না, কিন্তু কুরবানি দিতে পারার আনন্দ’টা সেইখানে ছিল।
কয়দিন আগে দেখতেছিলাম, রাজহাঁস কুরবানি দেয়া যাবে কিনা – এই নিয়াও আলাপ হইতেছে; মানে, ইন্ডিভিজ্যুয়ালের জায়গা থিকা আমরা কেউ সরতে রাজি না।
অথচ আমার ধারণা, শরিকে কুরবানি দেয়া যদি সমস্যা না হয়, কোন এসোসিয়েশন/অথরিটি যদি ১০ হাজার টাকা দিয়া কুরবানি’র “শরিক” কেনার একটা বন্দোবস্ত করতে পারেন, সেইটা একটা ভালো ওয়ে-আউট হইতে পারে। (প্রাকটিস হিসাবে সাত শরিক পর্যন্ত মনেহয় পারা যায়। কমেন্টে একজন জানাইলেন।..) এইভাবে বাংলাদেশের ‘কুরবানি-অর্থনীতি’ সারভাইবই করতে পারবে না খালি, আরো এক্সপান্ড করতে পারবে আসলে।
লোকজন যতো যা-ই বলুক, লোক-দেখানি ব্যাপার কিছু থাকেই। যারা লোক-দেখানি’র লাইগা কুরবানি দিতেন, তারা এইবার শরমের কারণেই সেইটা করতে পারার কথা না। (কারণ, সমাজের মানুশ হিসাবে তারা জানেন, মানুশের দুর্দিনে উৎসব করা যায় না।) আবার যারা কিনছেন, নিজেদের প্রেফারেবল সাইজের গরু কিনতে স্ট্রাগল করার কথা। যারা কিনতে পারেন নাই, তাদের কথা আর বললাম না।…
মানে, কুরবানি’র ব্যাপারটা শরিকের ভিতর দিয়া ইনক্লুসিভ করতে পারলে ভালো। যাদের ‘সামর্থ্য’ আছে, তারাও এই ইনিশিয়েটিভে যোগ দিতে পারেন, বা শুরু করতে পারেন।
জাস্ট মনে হইলো ব্যাপার’টা…
সমাজ-ভাবনা
একটা সমাজের মানুশ-জন যদি সমাজের অন্যসব মানুশদেরকে নিয়া চিন্তা করে, কাজ করে সমাজের জন্য সেইটা ভালো না হওয়ার কোন কারণ নাই। মানে, ফিলোসফিক্যালি খুব ঠিকঠাকভাবে চিন্তাও করা লাগবে না আসলে, কারো ক্ষতি না হইলেই হইছে।
কিন্তু এই জিনিসটাই, আমার ধারণা, করতে দেয়া হয় না, একটা জুলুমের সমাজে। আমার এই চিন্তার পক্ষে একটা ‘প্রমাণ’ পাইলাম খুলনার একটা ঘটনায়। হসপিটালে অক্সিজেন শেষ হয়া গেছিল, ভলেন্টিয়ার’রা অক্সিজেন নিয়া গেলে হাসপাতালের লোকজন ঝামেলা করতেছিল। (কমেন্টে দিতেছি পোস্টের লিংক’টা।) তো, এইটাই ফার্স্ট ঘটনা না, রোজার সময় বরিশালে ইফতার দেয়ার সময়ও আওয়ামী লীগের কোন নেতা ধরছিল, তাদেরকে না-জানায়া, তাদের অনুমতি না নিয়া ইফতার দেয়া হইতেছে কেনো! মানে, আপনি চাইলেই সমাজের জন্য কাজ করতে পারবেন না। অবস্টেকলগুলা সবসময়ই কম-বেশি ছিল, কিন্তু এখন এইটা পলিটিক্যালি আরো কঠিন কাজ।
সেকেন্ড হইতেছে, আইনি বাধাও আছে। যে, এইগুলা করার জন্য তো সরকার আছে! কোন খালি মাঠ-ই খালি মাঠ না, সরকারের কোন না কোন অথরিটির সম্পত্তি – রেলওয়ের, সিটি করপোরেশনের, পৌরসভার। নিউইয়র্কের উপর ছোট একটা ভিডিও দেখতেছিলাম, অইখানে পইড়া থাকা জায়গাগুলাতে গ্রীন মুভমেন্টের লোকজন চাষ-বাস করতেছে, সিটি করপোরেশনের কাছ থিকা লিজ নিয়া। এক তেজগাঁ’তে যেই পরিমাণ জমি/প্লট খালি আছে, অই সবগুলাতে এই কাজ করলে রমনা, সরোয়ার্দি’র চাইতে কম কিছু হবে না। কিন্তু, কোনদিন কি সম্ভব হবে? (দখলদারির নতুন রাস্তা শিখায়া দিলাম না তো? 🙁 )
থার্ড, বা, আরো ক্রুশিয়াল জিনিস হইতেছে, এইগুলা নিয়া আমি কেন ভাববো? 🙂 চিন্তা-ভাবনা করার লোক আছে না! কাজ করার লোক আছে না! আমাদেরকে কেনো ভাবতে হবে!
এইখানে, আমার ফার্স্ট প্যারার কথাটারে রিভার্স কইরা বলি, যেই সমাজের লোকজন নিজের সমাজের অন্য লোকজনের কথা ভাবে না, অন্যদের কথা ভাইবা কাজ করে না, সেই সমাজের ভালো কিছু হওয়া কঠিন আসলে। গাছ যেমন বীজের ভিতর থিকা তৈরি হয়, সমাজও তার ভিতরের মানুশ-জনের কাজকাম, চিন্তা-ভাবনা দিয়াই তৈরি হয়। অবভিয়াসলি এনভায়রনমেন্ট’টা ক্রুশিয়াল – মাটি থাকতে হয়, রইদ-বৃষ্টি-আলো-বাতাসও জরুরি; কিন্তু গাছটারে নিজে নিজে বাড়তে হয়। এইটা তার ইচ্ছা ও কাজের মধ্যে থাকতে হয়।
ডাকাতিই যদি করতে পারেন আপনি, বিজনেস কেন করবেন?
একটা সময় যে কোন এলাকার সব ডিশ-ব্যবসায়ীরা ছিলেন এলাকার সব মাস্তানরা; মানে, এলাকায় পাওয়ারফুল মাস্তান না হইলে ডিশের ব্যবসা করা সম্ভব ছিল না। এর একটা অবভিয়াস কারণ তো অবশ্যই একটা মনোপলি এস্টাবিশ করা লাগতো, মনোপলি ক্রিয়েট না করতে পারলে ব্যবসা করা সম্ভব না। বড়জোর দুইটা পার্টি থাকতে পারে, একটা এলাকায়, এর বেশি হইলে ঝামেলা। কিছু কিলিং-ও হইতো ডিশ-ব্যবসার “আধিপত্য” এস্টাবলিশ করা নিয়া। যা-ই হোক, অইটা একটা যুগ ছিল।
আমার ধারণা, চামড়া ব্যবসার সিন্ডিকেটও এইরকম পলিটিক্যাল পাওয়ারের ঘটনা। এলাকায় যারা চামড়া নিয়া যাইতো, এদের মধ্যে মেইন ছিল মাদরাসাগুলা; অনেকে বেচতো, অনেকে দান কইরা দিতো। কিছুদিন পরে দেখলাম এলাকার পলিটিক্স করা ‘ছোট ভাই’রাও কালেক্ট করতো। কিন্তু সব গিয়া জমা হইতো, পলিটিক্যালি পাওয়ারফুল লোকজনের রাস্তার পাশের অস্থায়ী গুদামেই। পরে শুনলাম এই সিজনাল সিন্ডিকেট বিজনেসে নাকি শান্তি নাই, ফ্যাক্টরিগুলা চামড়া নেয় না, দাম কমায়া কয়, আগেরবারের টাকা বাকি, এইরকম…। মানে, কেউ যদি চামড়া না কিনে, কপালে পিস্তল ঠেকায়া চামড়া তো কিনাইতে পারেন না আপনি!
এখন ব্যবসা থাকুক বা না-থাকুক, চামড়া ঠিকমতো প্রসেস করা হোক বা না-হোক, অই পলিটিক্যাল সিন্ডিকেটের কাছেই চামড়া বেচতে হবে আপনার, কিনতেও হবে অদের কাছ থিকাই। গত কয়েক বছরে শুনছি, কাঁচা চামড়া ইন্ডিয়াতে পাচার করার লাইগা নাকি দেশে এই অবস্থা কইরা রাখা হয়। প্রতি বছর কতো কাঁচা পাট ইন্ডিয়াতে রফতানি/পাচার হইতেছে সেইটার ডেটা থাকলেও আমার ধারণা কাঁচা চামড়ার হিসাব পাওয়াটা কঠিনই হবে।…
বাংলাদেশের পলিটিক্যাল-ইকনোমি’তে এই সিন্ডিকেট বা মিডলম্যান’রা যতোটা না স্ট্রাকচারাল কারণে এগজিস্ট করেন, তার চাইতে অনেক বেশি এগজিস্ট করেন পলিটিক্যাল কারণে। এই গ্রুপ’টার আগে বিজনেসগুলা দখল করা লাগতো। সরকারি টেন্ডার, নানান রকমের লাইসেন্স, সিজনাল বিজনেস, এইরকমের এরিয়াগুলা। যেই কারণে বড় বড় সরকারি আসলে যতোটা না “অর্থনৈতিক উন্নয়ন” তার চাইতে অনেকবেশি পলিটিক্যাল ফিডিং’য়ের কাজ করে।
এরশাদ সরকারের আমলে যমুনা সেতু এই সার্পোট দিতে পারছিল; এই সরকারের পদ্মাসেতু মেইনলি এইরকম পলিটিক্যাল ফিডিংয়েরই ঘটনা, ইকনোমিক্যালি ভায়াবল কোন প্রজেক্ট হওয়াটা কঠিনই হওয়ার কথা (সোশিও-কালচারাল প্যারামিটারগুলা কন্সিডার কইরাও।) পদ্মা-সেতু করা যাবে না – তা না, বরং এর ইকনোমিক কস্ট মেইন কন্সিডারেশনের জায়গা না।
এখন এবসুলেট পলিটিক্যাল পাওয়ারের কারণে, বড় বড় অপারচুনেটির কারণে এইসব টুকিটাকি বিজনেসের গুরুত্ব কমে গেছে – ব্যাপারটা এইরকম না, বরং বিজনেসের জায়গাগুলা আরো পলিটিক্যাল হয়া উঠতে গিয়া বিজনেসগুলাই কল্পাস করতেছে। মানে, এইটা আমার একটা জেনারেল অনুমান। অনেক ডিটেইল দিয়া এই অনুমানরে আরো উইক বা স্ট্রং প্রমাণ করা যাইতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির আলাপে এইরকমের জায়গাটা কন্সিডার করা দরকার বইলা আমি মনে করি।
গত বছর কোন একটা অকেশনে এই কথাটা বলতেছিলাম, এখন আবার এই প্রসঙ্গে রিপিট করতে পারি, ডাকাতিই যদি করতে পারেন আপনি, বিজনেস কেন করবেন? 🙂