রঞ্জু রাত বারোটার সময় ঘরে ফিরলো। আব্বা-আম্মা ঘুমায়া গেছে। পরী এখনো জাইগা আছে। কিন্তু ঘুমে ঢইলা পড়তেছে। হাই তুলতে তুলতে ভাত-তরকারি বাইড়া দিতেছে টেবিলে। হাতমুখ ধুইয়া রঞ্জু মুখস্ত কথার মতো বলে, খাও নাই কেন? খাইয়া নিলেই পারতা… পরীও জানে, এইগুলা কথার কথা। আজকে দুই বছর ধইরা শুনতেছে। রঞ্জুর প্লেটে ভাত-তরকারি দিয়া নিজের প্লেট নিয়া বসে। খিদা তো লাগেই আসলে। কিন্তু এখন অভ্যাস হয়া গেছে। রাতে ৮টা/৯টার দিকে কিছু খায়া নেয়। দুই বছরে পরী বুঝছে রঞ্জুর সাথে কথা বইলা কোন লাভ নাই।
দোকান বন্ধ করবে ঠিকই ৮/৯টার সময়, কিন্তু কোনদিন ১১টার আগে বাড়িতে ঢুকবে না। বিয়ার পরদিন থিকাই এই নিয়ম। আজকে বারোটা বাজায়া আসছে। পরী একদিক দিয়া খুশিই ছিল, মদ-গাঞ্জা-ইয়াবা তো আর খায় না! অন্য মেয়েমানুশ নিয়া তো পইড়া থাকে না! দোষের মধ্যে অই একটাই, জুয়ার নেশা ছাড়তে পারে না। টাকা দিয়া যে খুব খেলে – তা-ও না, কিন্তু জুয়ার দানে গিয়া বসা লাগবে তার। পুরুষ মানুশের দোষ কিছু থাকেই। মেয়েমানুশের এইসবকিছু মাইনা নেয়া লাগে। না মানতে পারলে লাগালাগি লাইগাই থাকে। পরী জানে সেইটা। এই কারণে মাইনা নিছে। কিন্তু মেয়েমানুশের কিছু কিছু দোষ আছে, যেইটা কোন বেটামানুশই মানতে পারে না। সমাজও মানে না। এই দোষগুলা থাকলেও লুকায়া রাখতে হয়। যারা জানে, তারা বলে না। যারা জানে না, তারা না-জানার ভিতরই জীবন পার কইরা দিতে পারে, সবসময়।
রঞ্জু চুপচাপ বইসা খাইতেছে। এই মানুশটারে শে যা বলবে একটু পরে, তখন সে কি যে বলবে এর উত্তরে, বা কি যে করবে, সেইটা গত দশদিন ধইরা পরী ভাবতেছে; কিন্তু কোন কূল-কিনারা পাইতেছে না। এখন না বইলা কোন উপায় আসলে নাই। বমি-টমি আর লুকানো যাইতেছে না। হঠাৎ হঠাৎ শুরু হয়া যায়, যে কোনদিন কারো সামনে ধরা পইড়া যাইতে হবে। কিন্তু একটা মিছা কথা নিয়া তো শে জীবন পার করতে পারবে না। কিন্তু পরে কি হবে? – এই চিন্তা আর করতে পারে না। পরের চিন্তা পরে। আজকে চোখ বন্ধ কইরা হইলেও বইলা দিতে হবে পরীর, রঞ্জুরে। Continue reading