কবিতা: অক্টোবর, ২০২৩

জীবনানন্দ

যেন একটা কমলালেবু
কমলালেবু হইতে চাইতেছে শুধু
আর না পাইরা বলতেছে,
আমি তো একটা কমলালেবু তবু

বার্ড সং

যেই পাখির ভাষা নাই
করে নাকো ফুঁসফাঁস
মারে নাকো ডুঁসডাঁস

সেই পাখি বিষন্ন
ডানা দুইটা নিয়া টায়ার্ড
ও, না, ক্লান্ত

সেই পাখি এবং জ্যান্ত
গোটা দুই হইতে গিয়া
লোনলি লোনলি জাস্ট

হেই পাখি, তুমি আর
কাইন্দো না তো!
অবিরাম অবিরাম বৃস্টির মতো…

যদি পাখি জানতো
তাইলে কি আর ঘর বানতো?
আনিয়াছি তৃণলতা, বইলা উড়তো, উড়তো

তুমি বার্ড উড়ে উড়ে
হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাইতে
কি খালি ভালোবাসো?

আর রেফারেন্স-বেজড, হাসো?
হাসো না? হাসলে যে সুন্দর
সেইটা তো ক্লিশেও (নাকি ক্রিঞ্জ) কিছুটা…

যেই পাখির ভাষা নাই
সেই পাখির নিরবতা কেমন?
নরোম, কোমল সাপের মতো?

বৃস্টিতে সন্ধ্যায়
পিছলায়া যাইতেছে ছায়াগুলা
ছায়াগুলা পাখি, পাখি সাঁতরাইতেছে কাদায়, খুঁজতেছে ভালোবাসা…

বোবা দিনগুলার কথা

অনেক দিনের পরে বোবা দিনগুলার পাশে বসি,
আচ্ছা, বলো তাইলে এখন, কি বলতে চাইতেছো তুমি

কথা না বলতে বলতে দিনগুলা চুপ হয়া আছে
বাতাসে শীতের গন্ধ, বাতাস ভারী হয়া আসতেছে

তারচেয়েও বড় কোন ভার নিয়া চুপ হয়া আছে, দিনগুলি আমার

ভোরের আজান

আজান হইতেছে,
তার মানে সকাল হইতেছে

আমার যন্ত্রণার তবু কোন শেষ নাই

হেমন্তে আমি তোমার গান গাই ৩

কি যে বুক খালি করা এই দুপুরের বাতাস,
রাস্তার গর্তে পইড়া থেঁতলানোর আওয়াজ করতে করতে চলে যাইতেছে রিকশাটা

কি যে রইদ! আর তার চাইতে বড় একটা নিরবতা

বলতেছে আমারে, শীত আসার আগে হেমন্তে
তুমি কি আর আমার গান গাইবা না?

দুইটা বিড়াল

দুইটা বিড়ালের সাথে আমার দেখা হয় সকালের রাস্তায়
অরা কিউরিযাস চোখে আমার দিকে তাকায়,
আমারে কি চিনতে চায়?

না, অরা কিউরিয়াস, কিন্তু খালি আমার ব্যাপারে না,
অরা পুরা দুনিয়া নিয়াই উদাস, এবং কিউরিয়াস

অরা তখনই খালি আমার দিকে তাকায়
যখন তাদের চোখ আমারে দেখায়

গল্পের তরে

একটা গল্প অনেক দিন ধইরা থাকে মাথার ভিতরে
নিজের ঘর বানায়, দরজা-জানালা-কলকব্জা লাগায়
নিজের মতো কইরা নিজে নিজে নিজেরে সাজাইতে থাকে

তারপর থাকতে থাকতে তার থাকাটা
মলিন হয়া আসে, ঝাপসা হইতে থাকে সে, চুপ হয়া আসে
আর তারপরে একদিন হারায়া যায়

হয়া উঠে অন্য কারো গল্প,
আর আমারে বলে, তুমি তো লেখলা না আমারে!

আমি আমার গল্পটার দিকে তাকায়া থাকি,
ইচ্ছা হয় তারে সরি বলি,
কিন্তু সে তো আর আমার গল্প না তখন

আমার না-লেখা গল্পগুলা আমারই মতন
মারা যায়, নিরবে

অডি টু আ বিউটিফুল ফ্লাওয়ার অফ দা মর্নিং

সৌন্দর্য্য বা বিউটি এইরকম একটা সুবাস যে
তার আশেপাশে থাকলেই টের পাওয়া যায়
এইটা ভালো আত্মার জন্য – আমাদের, আর
অবশ্যই বিউটি চায় বাহবা, এইটা তো তার পাওনা;
কিন্তু আমরা অনেক সময় হেসিটেট করি, যেন
একটা বিউটি সবসময় থাকবে না বইলা, এইটা
মিনিংলেস, অর্থহীন; এই কথাগুলার মতন, আর
এইটা একটা লেভেলে সত্যি, জাগতিক সব বিউটি
একটা সময়ে গিয়া ফেড হয়া আসে, কিন্তু এর যে
রোশনাই, এর যে ট্রু-মোমেন্ট – এইটা কখনোই
মিছা-কথা না, কোন ভ্রম, বা ভুল না;
বিউটি ইজ দা টেরর অফ রিয়ালিটি,
আমাদের কল্পনা যারে ডরায়

হেমন্তে আমি তোমার গান গাই ৪

এলোমেলো হেমন্তে বাতাস ফুটেছে
বাতাসের অনেক তাড়াহুড়া, বাতাস এলায়ে পড়তেছে
গাছ থিকা গাছে, আর রাস্তায় ফেলে যাইতেছে
শুকনা পেইল-রঙয়ের পাতাগুলা

গাছগুলা নিরব হয়া আসতেছে
তারা তাদের আত্মা জমায়া রাখতেছে, শীতের অপেক্ষাতে
সবকিছু আরো ধীর, আরো স্থির, আরো চুপচাপ

একটা প্যাডেলের রিকশা যেন চলে যাইতেছে কোন প্যাসেঞ্জার ছাড়া
এইটুক আওয়াজ অনেক ভারী মনে হয়,
মনেহয়, এলোমেলো হেমন্তে
বাতাস নিজেই ফুল হয়া ফুটে আছে

হেমন্তের দুপুরে

আকাশের অইপারে আকাশ
বাতাসের অইপারে বাতাস
আমাদের হৃদয় তবু আজ জীবনানন্দ দাশ

জানা – তোমারে সত্যি কইরা কখনো পাবো না আমি

যে জানে শে সুন্দর,
শে তো আসলে একটু কমই সুন্দর

যেইরকম যেন জানে যে শে ভালো-কবিতা লেখে
তার কবিতা তো আসলে একটু কমই ভালো

জাইনা যাওয়াটা কখনোই সমস্যা না,
ঘটনা হইতেছে জাইনা-যাওয়াটাতে আটকায়া যাওয়াটা

জানা – একটু কম সুন্দর না, একটু কম-ভালো না
বরং যেই জানা আমাদেরকে আরেকটা না-জানার দিকে নিয়া যাইতে পারে না,
সেইটা তো ততো একটা জানা’র ঘটনা না আসলে…

Leave a Reply