কবিতা: অগাস্ট, ২০২৩

প্লাতেরো

দুখী গাধাটা তার দুঃখ আর না নিতে পাইরা
ফান করতে করতে ফানি হইতে থাকলো

তবে ফান করতে করতেও তো
টায়ার্ড লাগে একটা সময়,
তাই সে দুখী হইতে থাকলো আবার

কিন্তু লোকজন তখন হাইসা দিল
কইলো, “সুন্দর একটা ফান হইছে এইটা, বস!”

দৃশ্য

কড়ই গাছের ডাল’টা ভাইঙ্গা যাওয়ার আগে ম্যাড়ম্যাড় করতেছে
গাছটা তো টের পাইতেছে,
যেন একটা দুক্খ তারে ভাইঙ্গা ফেলতেছে

কড়ইয়ের ডালটা ভেঙ্গে পড়তেছে, কড় কড় শব্দ হইতেছে যেন
অথবা কোন শব্দ নাই আসলে, দেখতে দেখতে খামাখাই মনে হইতেছে আমার
কড়ইয়ের ডালটা ভাইঙ্গা যাওয়ার আগে একটা আওয়াজ তো হবে!

ডাল’টা ভেঙ্গে পড়ছে লেকের পানিতে
এমন ভাবে ভেসে যাইতেছে বৃষ্টি আর বাতাসে
যেন সে সাঁতরাইতেছে

আমাদের ভালোবাসা

আমাদের ভালোবাসা নাই হইতে হইতে গিয়া ঠেকছে তলানিতে
অইখানে পড়ে আছে কিছু গাঁদ;
ঘন কালো পিছলা ময়লা, থক থক কাদার মতো
আমাদের পা আটকায়া যাইতেছে, আমরা ফিরা আসতে চাইতেছি
কিন্তু ঠ্যাং নাড়াইতে পারতেছি না,
একটা চোরা-কাদার ভিতরে ডুবে যাইতেছি
আর ভাবতেছি, আমাদের ভালোবাসা এইসব প্যাক আর কাদা…

তোমার গান শুনি

তোমার গান শুনি
বাতাসে বিস্টির গন্ধ
তির তির কাঁপতেছে পাতাগুলি

তোমার গান শুনি
নদীতে ঢেউ উথাল হইতেছে
পাড়ের মাটি ডাকতেছে তারে, তুমি আসো!

তোমার গান শুনি
আরো দূরে ভেসে যাইতেছে সে
আরো দূর ভবিষ্যতে, যেইখানে নাই আমি

আমার চক্ষু নাই

আমি অন্ধ হয়া তাকায়া আছি;

তোমার আছে দেখার চোখ,
তুমি অন্ধকারের দিকে তাকায়া আছো
একটা আলোর দুনিয়ায়

আমি দেখতেছি তোমার না-দেখাটারে
যা নাই, না-থাকার ভিতরেই যেন তা থাকতেছে

আমি আর ইমরুল হাসান

আমি আমারে বললাম, দেখো আমি যা না,
তা তো আমি হইতে পারবো না!
আমি’টা কইলো, ওকে! হইও না তাইলে!
কে তোমারে জোরাজুরি করতেছে!

আমি আমারে বুঝাইতেই পারতেছি না যে,
যদি আমি আমি না হই
অন্য কেউ তো সেইটা হয়া যাবে!
তখন বিপদে পড়বে না সে!

আমি’টা উদাস!
যেন আমারে চিনে-ই না এইরকম ভাব করতেছে,
তার চুল বাতাসে উড়তেছে, সাপের ফনা তুলতেছে;
আর ধীরে ধীরে যেন আমার-ই মতো হয়া উঠতেছে

একটা গরু বিস্টিতে ভিজতেছে

বিস্টিতে গরুটা ভিজতেছে;
যেহেতু সে গরু, বিস্টিতে ভিজতে
তার কোন সমস্যা যেন হইতেছে না

যেন তার ফিলিংস নাই কোন
সে তো কষ্টে চিল্লাইতেছে না, খুশিতে নাচতেছে না!
সে তো একটা গরু!

একটা গরু বিস্টিতে ভিজতেছে একলা
আমার মনটা ভিজতেছে তার সাথে
কচুপাতাটার মতো, রিকশার পলিথিনটার মতো…

শশীদল

কি যে এই ভালো লাগা
আমি ভু্লে গেছি
ব্রিজের গোড়ায় বিস্টিতে ডাইবা গেছে মাটি
আর আটকায়া যাইতেছে প্রাইভেট কার,
ব্যাটারি রিকশা আর সিএনজি

সন্ধ্যা নামতেছে তড়িঘড়ি
রাস্তার পাশে ঘনাইতেছে রাত্রির বন-জঙ্গল
শশীদল ইস্টিশনে যাইতেছে ইয়াং কাপল
ব্যাটারি’র রিকশা চামে দেড়শ টাকা ভাড়া চাইতেছে,
তারপরে বলতেছে, কত দিবেন বলেন তাইলে?
জামাই’টা কোন দাম বলতে পারতেছে না,
বউ’টা বলতেছে, আশি টাকা!
শুইনা ড্রাইভার চুপ কইরা গাড়ি দিল স্টার্ট;
বুঝলো এলাকার মাইয়া, তাফালিং করা যাবে না!
আরো আরো লোকজন হাঁটতেছে,
আন্ধারে হোঁচট খাইতেছে, বলতেছে, সরেন! সরেন না!

আমি বালুর মতো, মাটির মতো থেবড়ায়া যাইতেছি
অল্প কিছু ইট-সুড়কির অভাবে জাইগা থাকতে পারতেছি না

কি যে ভালো লাগতেছে আমার,
আমি ভুলে গেছি
বিস্টি-দিনের বাতাসের মতো
কি করতে আসছি আমি, আর কোথায় চলে যাইতেছি

সুপারি গাছের ছায়া লম্বা হইতে হইতে হারায়া যাইতেছে
বিস্টি শুরু হইতেছে আবারো

আমি ভিজে যাইতেছি
ভিইজা চিড়া-চ্যাপ্টা হয়া যাইতেছি

কোন একটা গানের সুরের মতো আমার ভালো লাগতেছে
কিন্তু গানটা আমার মনে নাই, আমি ভুলে গেছি
আমি ভুলে গেছি তোমারে, আমি ভুলে যাইতেছি আমারেও

টিপ টিপ বিস্টির ভিতর, টিপ টিপ বিস্টির ভিতর

বর্ষাকাল

এখন দীর্ঘ ক্লান্ত বর্ষাকাল
হরিণটা চাটতেছে বাঘের গাল
বলতেছে, “জান, আমার জান!”

বারান্দা পর্যন্ত আইসা বিস্টির ফোঁটাগুলা
আছড়ায়া পড়তেছে, সময় ঝরে যাইতেছে
আঙুলের চিপা দিয়া আমাদের, ঝর ঝর ঝর

এখন দীর্ঘকাল, ক্লান্ত বর্ষাকাল
গাছগুলা নিরব আদর মেখে নিতেছে তাদের গায়
বাঘটা ঘুমাইতেছে, হরিণটা চেটে দিতেছে তার গাল

ট্রাভেলগ

অরা আইসা জটিল হয়া জন্মাইলো,
তারপরে হইলো ইনোসেন্ট, কইলো
এর যে কি মানে, আমরা তো জানি না!

অদেরকে বুঝাইলো যারা কিছু জানে না,
কিন্তু জানে যে তারা জানতে চায়,
বিজ্ঞানে বিশ্বাস করে, তন্ত্র-মন্ত্রও জানে কিছু

তারপরে অরা ইনোসেন্ট থিকা ম্যাচিউর হইলো
বনে-বাদাড়ে ঘুইরা বেড়াইলো,
পানিতে হাঁটলো, ডাঙ্গায় সাঁতরাইলো

ক্লান্ত হয়া বইসা পড়লো আবার,
কইলো, আমি ডানা-ভাঙা-পাখি
টিকটিকির লেজটা আমার কোথায় যে ঝরে গেলো!

ঝরোঝরো ঝরোঝরো বিস্টির দিনে
যেন আমার জন্ম হইলো, জটিলতর…

আমি জানি

কেন সবকিছু আমারেই জাইনা ফেলতে হবে!
আর জানার পরে বইসা থাকতে হবে চুপচাপ!
দেখতে হবে বান্দরের নাচ,
এমনকি হাততালিও দেয়া লাগবে!
বলা লাগবে, গ্রেট!

তারপরে চিমশায়া আসতে হবে,
যারা সবকিছু জাইনা বুইঝা ফেলছে
তাদের পাশেই বইসা থাকতে হবে চুপচাপ;
তারা তাদের কথা ও পরিমিত নিরবতা দিয়া,
প্রেম-ভালোবাসা ও ঘৃণা দিয়া
আমারে বুঝায়া ফেলবে, তুমি তো কিছুই বুঝো না, বাবু!

একটা বিলাইয়ের মতো কিউট
একটা কুত্তার মতো অবিডিয়েন্ট
একটা মানুশের মতো কন্সিডারেট
হইতেই থাকবো, আমি হইতেই থাকবো

তারপরে আমার সব জানা-বুঝা নিয়া আমি কবরে চইলা যাবো;
লোকজন বলবে, কি সুন্দর সবুজ ঘাস!
আমরা অইখানে গড়াগড়ি খাবো,
বিকালবেলার বাতাসে উইড়া যাবো!

আমার সব জানা-বোঝা একটা বাতাসের মতো
উইড়া যাবে,
ফুঁ!

আঙুরবালা

আমি
মধুর
বনে
যাই

মধু
হয়া উঠে আঙুর

আমি শেয়াল হয়া
তাকায়া থাকি আঙুরের দিকে
আঙুর ফল তো টক!

মধুর
বনে
তখন
বাতাস

মনে
মনে
আমি
কাঁপি

একটা পিঁপড়ার মতন
ডুবতে থাকি তাঁর রসে

“ও আমার রসিয়া বন্ধুরে,
তুমি কেন কোমরের বিছা হইলা না”
আঙুরফলটা গান গাইতে থাকে

পথে, পথে

যেই পথে আমি যাই নাই, সেই পথের দুঃখ আমার নাই
যেই পথে আমি গেছি, সেই পথের আনন্দ আমি পাইছি

ভালোবাসা এমন একটা জিনিস, অনেক দূর থিকাও টের পাওয়া যায়
বাতাসে ফুলের গন্ধের মতো, রাতের অন্ধকারে আমি জেগে থাকছি

যেই পথে আমি যাই নাই আর যেই পথে আমি গেছি
তারা হাত ধরাধরি করে হেঁটে যাইতেছে আর শিষ দিয়া গাইতেছে গান
“কোথায় যেন আমি দেখছি তোমারে, কোথায় যেন দেখছি…”

আর তারপরে ভুলে যাইতেছে, যেইরকম একটা গানের সুর
মনে করায় আর ভুলে যায় আরেকটা গানরে

প্রেমের কবিতা

চিন্তা-ই আমাদেরকে কাছে নিয়া আসে;
আর ভালোবাসা জড়ায়া ধরতে চায় আরো,
শরীরে মিশায়া নিতে চায়, কিন্তু পারে না
তাই দূরে-ই ঠেইলা দেয়, আর
অনেকগুলা বেদনার পাহাড় হয়া জাইগা উঠে,
তার দিকে তাকায়া চিন্তাগুলার কথা মনেহয় আবার, আমার

মনেহয়, তুমি তো আমারে ভালোবাসো না।

Leave a Reply