কবিতা: নভেম্বর-ডিসেম্বর, ২০২৩

উদাসি-কবি

জালিমের সকল জুলুম, অন্যায় আর অবিচার-রে
পারসোনাল দুঃখবোধ আর লোনলিনেসের চাদরে ঢাইকা ফেলার মতো
উদাসি-কবি তুমি আমারে কোনদিন বানাইও না, খোদা!

শীতের প্রেম ও বিরহ

বিরহ নাই, তাই তাড়াতাড়ি হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরা আসি

অবরোধের দিন বইলা রাস্তা-ঘাটে মানুশ-জন কম
বাজারে শীতের সব্জিগুলা একা, তাকায়া আছে
অসহায় মানুশদের দিকে

ভাই, আমার দাম তো আমি বাড়াই নাই
বলতেছে টসটসা টমেটো’টা
ফুলকপির সাইজ এখনো ছোট, অরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়
ইউটিউবের কিং কং চ্যানেলে পুরানা বাংলাদেশি সিনেমার মতো,
ঠোঁট নাড়ানোর লগে তার ডায়ালগ মিলে না

শীতের বাতাস চলে আসার পরে থতমত,
কিছু বুঝতে পারতেছে না,
কনসার্টের পোস্টার এইরকম অশ্লীল লাগতেছে কেন!

কেন গান-গাওয়া আর্টিস্টগুলারে মনে হইতেছে এ.আই. জেনারেটেট!
এরা কি খালি উন্নয়নের গান গায়? পাছা মোচড়ায়
প্যালেস্টাইনের কথা ভাইবা?

শীত বলে, ওগো প্রেম, তুমি আর এইরকম চুদায়া মুড়ি খাইও না!

যা একটু বিরহ ছিল, তা-ও আজ চলে যাইতেছে
সীমানার বাইরে, বাস্তবতার ধাক্কায়…

এন্টি-সিসিফাস

একটা পাথর ঠেলতেছি আমরা,
পাথরটারে নামাইতে পারতেছি না পাহাড় থিকা

পাথরটা উদাস, মনে মনে যেন বলতেছে
আমি পইড়া গেলে তোমরাই তো আবার
আমারে উপরে তোলার জন্য ঠেলতে থাকবা!
তার চাইতে আমি আর নিচে না নামি!
তোমাদের সিসিফাস-গিরি আমার আর ভাল্লাগে না!

পাথরটা উদাস, নিজের জায়গা থিকা নড়বে না
এই পাথরটারে ঠেলতেছি আমরা, পাথরটারে ফেলতে পারতেছি না

সুন্দর কয়েকটা পাথর

পথে পথে হাঁটি, দেখি সুন্দর কয়েকটা পাথর
পাথরগুলা তুইলা নিয়া পকেটে রাখি

পকেট হালকা, আর পাথরগুলা ভারী

তাই পকেট ছিঁড়া যায় পাথরের ভারে
পাথরগুলা আবার পথে পইড়া থাকে

আমি পথে পথে হাঁটি, দেখি সুন্দর কয়েকটা পাথর
ছোট ছোট পাথর, মনের পাথরগুলা পইড়া থাকে তার পাশে…

মাছেদের মন

আমার মাছ, তুমি থাকো দূর সাগরে
মেঘনার মোহনা পাড়ি দিয়া
তুমি যাও বঙ্গোপসাগরে
ফ্রম দা রিভার টু দা সি

আমি থাকি শুকনা ডাঙ্গায়
আমি তোমার কথা ভাবি

আমার মনে কত চিন্তা
ইউরোপ-আম্রিকা-আরব-ইন্ডিয়া
এইসব কিছু শেষ কইরা যখন আবার
নদীর পাড়ে বসি, বাতাসে
তোমার কথা মনে আসে

কানকো দিয়া শ্বাস নিতেছো তুমি
ফ্রম দা রিভার টু দা সি

আমার নাক লম্বা হইতে হইতে
গাছের ডাল হয়া যাইতেছে
পাখিরা গান গাইতেছে সেইখানে

অরা গাইতেছে মাছেদের গান
মাছগুলা রইদে শুটকি হয়া যাইতেছে,
সেই দুক্খে অরা কানতেছে আর গান গাইতেছে

আমার মাছ, তোমার কথা আমি ভাবি, অবসরে
আর বিলাইগুলা স্বপ্নে তোমার কাঁটা নিয়া খেলে

তুমি আরেকটু দূর থিকা আরো দূরে চলে যাইতেছো
নদীতে ও সাগরে

ইজরাইলের বোমা পড়ে গাযায়
ঢাকায় বইসা বইসা আমাদের মন-খারাপ হইতে থাকে…

মানুশের জিবন

কেঙারু’র মতো হাসো
জিরাফের মতো কানদো
কুমিরের মতো কাদায় শুইয়া রইদ পোহাইতে থাকো

কুততার মতো ঘেউ ঘেউ করো
বিলাইয়ের মতো মিউ মিউ করো
মুরগির মতে করো কু্ককুকরুকুউউউ

গরুর মতো ঘাস খাও
ভেড়ার মতো ঘুরো
হাঁসের মতো গা-ঝাড়া দিয়া পাখনা থিকা পানি ঝরায়া ফেলো

কাকের মতো কালো
কবুতরের মতো ভালো
চড়ুইয়ের মতো ছোটো

ডাইনোসারের মতো বড়ো
হাতির মতো স্লো
খরঘোশের মতো দৌড়াইতে পারো, কিন্তু ঘুমায়া পড়ো

বাঘের মতো হিংস্র
শিয়ালের মতো ধূর্ত
গাধার মতো চুপচাপ থাকো

দেখা

কলাপাতার আড়ালে থাকো,
থাকো বাঁকা ভুরু, ভয়-ভয় চোখে
খেতের আইল থিকা একটু দূরে

যতটুক দূর থিকা দেখা যায়
শীতের দিনের সনধ্যায়
কুয়াশা আসতেছে

সূর্য ডুবে গেছে, আর চানদের ছায়া
নদীর পানিতে যেমনে কাঁপে, এইরকম থাকো
বাড়ির বাইরে, কলাপাতার আড়ালে

দোকানের জিনিস

অন্য কোন নতুন দোকানে যাবো,
নতুন নতুন জিনিস দেখবো,
কিছু কিছু জিনিস কিনবোও,
যেইগুলা আমাদের খুব একটা দরকার নাই
কিনতু কিনে রাখলাম,
দোকানে যেহেতু আসছি, কিছু জিনিস তো কেনা দরকার;
বা কি কিনবো না, কেন কিনবো না
এই ভাবনা-চিনতাগুলাও তো ভালো,
অনেক চিনতা থিকা বাঁচায়া রাখে আমাদেরকে

অন্য কোন দোকানে যাবো
অন্য কোন চিনতা করবো
পরিচিত দোকানগুলার সব ডিসিশান তো নেয়া হয়ে গেছে
একই ডিসিশান বারবার বারবার ভাললাগে না তো আর

কিছু একটা কিনতে হবে আমারে,
আমি যে কিছু একটা কিনতে পারি
এই কনফার্মেশনটা জরুরি,
কোন কারন নাই, এমনিতেই

আমার কাছে কিছু টাকা আছে, আমি কিছু জিনিস কিনতে চাই
দোকানগুলা অনেক জিনিস নিয়া বইসা আছে, বলতেছে, আসেন, আসেন!

আমার কেনার মতো কিছু নাই
আমি বাজারের দোকানগুলাতে ঘুরতে ঘুরতে
কোন একটা শেলফে কোন একটা জিনিস হয়া ঘুমায়া পড়তে চাই

Leave a Reply