কবিতা: মে, ২০২৩

আরেকটা দুনিয়া

আরেকটা দুনিয়া থিকা তুমি হঠাৎ চলে আসলা,
যেইরকম ভিনগ্রহের লোকজন আসে দুনিয়াতে,
যেইরকম শহরের লোকজন যায় গ্রামে, ঈদের ছুটিতে

ইশারা-সংকেত পাঠায়, মাইপা মাইপা কথা কয়,
যেন আমাদের ইগো হার্ট না হয়, যেন আমরা মনে কষ্ট না পাই

এইরকম আরেকটা দুনিয়া আছে তাইলে, আমি ভাবি;
যেইখানে তুমি থাকো, থাকে তোমার সমস্ত কথা আর নিরবতা,
আর একদিন আইসা বলে, তুমি তো আমারে ভুলেই গেছো, তাই না?

দুপুর

সকাল থিকা দুপুর হইলো
দুপুর থিকা বিকাল হইতেছে
বিকালটা পরে সন্ধ্যা হবে;
আমি শুয়ে শুয়ে দেখতেছি
সময় চলে যাইতেছে

পানের দোকানে পান বানাইতেছে দোকানদার
কচু’র পাতাগুলা দুলতেছে বাতাসে
এক ফোঁটা বিস্টির পানিও বসবে না তাতে

আমি শুয়ে আছি, যেমন পাহাড় শুয়ে আছে পাহাড়ে

ফিশ-বৌল

তুমি চলে যাইতেছো একটা সিমুলেশন থিকা একটা না-থাকার দিকে।
আমি চলে যাইতেছি তোমার না-থাকা থিকা একটা সিমুলেশনের দিকে।

আমরা দুইজন একটা থাকা আর না-থাকা, বদ্রিয়ার চিন্তার দুনিয়াতে।

ঘুরা-ফিরা

মোটর সাইকেলে করে যাইতেছে উপজেলা চেয়ারম্যান,
একটু একটু বিস্টি পড়তেছে রাস্তায়
ট্রাভেল-ভ্লগার ট্রাই করতেছে পাহাড়ি আনারসের ঝাল
দিল্লী থিকা আসছি আমি, তারপরে যাবো মালয়েশিয়া
সব দেশ ঘুরবো আমি

মোখা ঝড় আসতেছে, সেন্ট-মার্টিন ডুইবা গেলে
কই আর ঘুরতে যাবো আমরা, ভাবতেছে কেউ

আমার নাই কোন বাড়ি-ঘর, নাই কোন ঘুরা-ফিরা
একটা ঝিরি বলতেছে নিজেই নিজেরে
দূরের রোয়াংছড়ির পাহাড়গুলার দিকে তাকায়া

বিকালবেলার রিকশায়

বিকালবেলার রিকশায়
প্রেমিকা হাসতেছে প্রেমিকের কথায়

গরমের দিনে বাতাস যেমন একটু ঘুইরা ঘুইরা বেড়ায়

আলবিদা

দুনিয়া এইরকম একটা মুসাফিরখানা
যেইখানে সবসময় ‘হ্যালো’ বলার জন্য
কাউরে না কাউরে খুঁজে পাওয়া যায়,
কিন্তু ‘গুডবাই’ বলার সময় কেউ থাকে না

আমরা অনেককিছুই শুরু করতে পারি
কিন্তু শেষ করাটা আমাদের হাতে থাকে না

গ্যাস ও কারেন্ট

ফিরিঙ্গি বাজারে, কবি নজরুল ইসলাম রোডে
দুপুরের রইদে বইসা কাঠের দোকানদার
সিএনজিঅলার দিকে তাকায়া হাসতেছে কাষ্ঠ-হাসি
গ্যাস নাই রে দুনিয়ায়, গ্যাস নাই

এক মাইল দূরের গ্যাসের পাম্পের লাইনে দাঁড়ায়া
ধীরে ধীরে বোবা হয়া উঠতেছে সিএনজিগুলা
হর্নও বাজাইতে পারতেছে না, যেন যক্ষার রোগি
একটু পরে পরে কাশতে কাশতে আগাইতেছে

দোকানের কাঠগুলা নিরব দর্শক, ঘামতেছে
আর ঘামতে ঘামতে কারেন্টের স্বপ্ন দেখতেছে
লোডশেডিংয়ের দিনে, গ্যাস না থাকার কষ্ট, অরাও যেন বুঝতেছে

গ্যাস ও কারেন্ট ভাই ভাই
নৌকা মার্কায় ভোট চাই
– এই শ্লোগান দিতেছে রইদের তেজে

যেন এই শ্লোগান না দিলে বেতের বাড়ি খাওয়ার চান্স আছে
এইরকম বাধ্যগত স্টুডেন্ট অরা, ক্লাস ফোরের

ফিরিঙ্গি বাজারে, কাজী নজরুল ইসলাম রোডে
উন্নয়নের কবিতা মুখস্ত করতেছে এইরকম গ্যাস ও কারেন্টে

রইদের গান

দুপুরের রইদ আইসা বসছে, ঝিমাইতেছে
শাটার বন্ধ করা মার্কেটের দোকানের বাইরে
প্রাইমারি স্কুলের বারান্দায়, নয়-এর নামতার সুরে,
ঘোত ঘোত কইরা ট্রাক চলে চলে যাইতেছে, হাইওয়েতে

একটা কাক ছোট ছোট পাথর ফেলতেছে
কলসির তলানিতে জইমা থাকা পানির জন্যে,
তেষ্টায় মারা যাইতেছে সে, কিন্তু পারসিসটেন্ট তার কাজে,
আর বলতেছে, বুঝছেন ভাই, কি যে গরম! কি যে গরম পড়ছে!

আমরাও দেখতেছি রইদের দিন, কি ক্লিয়ার, চকমক করতেছে
আর বার্ন করতেছে বিউটিফুলি,
বাতাসের হুইসপার কানেই নিতেছে না

আমরা ওয়েট করতেছি, ওয়েট করতেছি
গণতন্ত্র আসবে বলে। গণতন্ত্র আসবে বলে?

সময় আর নদীর ঢেউ

নদীর পাড়ে বসে আছি
নদীর পাড়ে আছে আমাদের বসে থাকা,
বইসা থাকা ছাড়া নদীর পাড়ে আমরা আর কি করতে পারি?

যেন কারো না কারো
যেন কোনকিছুর জন্য ওয়েট করতেছি আমরা
অথচ বইসা থাকা ছাড়া আমাদের আর কোন কাজ নাই

সময় আর নদীর ঢেউ চলে যাইতেছে,
বলতেছে, আমরা তো কারো জন্য বইসা থাকবো না!
আমরা বসে আছি, বইসা থাকা ছাড়া আমাদের আর কোন কাজ নাই

ডিয়ার রিডার: এই বাল তুমি ছিঁড়ে ফেলে দাও!

এইরকম বিভীষিকাময় দেশে আমি থাকি।

হ, এইরকম আজাইরা অহেতুক বিশাল বিশাল শব্দ দিয়া
চাবায়া চাবায়া কইয়া বুঝাইতে হয়,
যেইখানে দুই অক্ষরে ডর কইলেই হয়
কিন্তু এনাফ বিভীষিকা হইতে পারে না তো তখন!

যারা নিজেদের বুলি-তে
নিজেরা কথা কইতে পারে না, শরমায়
(অথচ নাকি চিন্তা দিয়া দুনিয়া বদলায়া দিতে চায়)
এইরকম আবালদের দেশে আমি থাকি

গোপনে, একটা বাল হয়া তবু গরমের দিনের বাতাসে নড়ি,
দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলি কারো কারো, আমি না চাইলেও

আর তারা এতে বিরক্ত হয়
কান-পড়া দিতে থাকে তোমারে
(ডিয়ার রিডার আপনারেই আসলে)
কয়, এই বাল তুমি ছিঁড়ে ফেলে দাও কেন!

নাইট ক্যাফে

যেই স্পেনিশ ছেলেটা টেবিল ক্লিন করতেছে
তার বাড়ি জীবননগরে, সে উঠে আসছে
তার সর্বহারা বাপের ড্রিমের ভিতর থিকা, সরাসরি

সল গুডম্যান আমারে সাজেস্ট করতেছে
আম্রিকান বিফ-স্টেইকই বেটার,
তবে ইন্ডিয়ান স্পাইসি-ডিসটাও ট্রাই করতে পারেন

জ্যাজ-মিউজিক বাজাইতেছে ক্যাফের মালিক – হারুকি মুরাকামি

জেসি পিংকম্যান তার বউ-বাচ্চারে নিয়া আসছিল,
জেসি সোবার, কিন্তু অর বউটা মনেহয় একটু হাই হয়া আছে;
বাচ্চাটা হাইজেনবার্গরে খুঁজতেছে আশে-পাশে,
ডিমান্ড করতেছে – হোয়ার ইজ মাই ড্রিম!

এলেনা হোমস আসছে তার হাবা-গোবা প্রেমিকরে নিয়া
চিজ-কেইক খাইতেছে আর সেলফি তুলতেছে

একটা রেবিট হোলের ভিতর বইসা
আইপিএল দেখতেছে পাবলো এস্কোবার

আমি হাঁটতে হাঁটতে ফিরে যাইতেছি হোটেল কেলিফোর্নিয়ায়
স্টেরি স্টেরি নাইটে আমার কান নিয়া হাতে
খুলনা শহর যখন ঝিমাইতে ঝিমাইতে ঘুমায়া যাইতেছে

এইসব দিনরাত্রি ২০২৩

বিএনপি’র লোকজন ভাবতেছে,
এই লোকটা ডিবি-পুলিশ না তো আবার!

আর ডিবি-পুলিশের লোকটা ভাবতেছে,
এরে চালান দিলে কি রকম ধান্দা হইতে পারে?
আবার ডিজিএফআই-এ কোন ফ্রেন্ড-টেন্ড নাই তো এর?

আর আমি বইসা আছি উদাস,
একটা কবিতা লেখার কথা ভাবতেছি, বিকালবেলায়

বেনাপোল মেইল

লোকাল ট্রেইন, বেনাপোল মেইল
তুমি ফেলে দাও তোমার বগি থিকা আরেকটা ডাইলের বস্তা
যেইরকম সুরুযের বলটা চলে যাইতেছে আন্ধারের দিকে, পশ্চিমে
এইরকম ডাইলের ঘন সিরাপ নিয়া যাক আমাদেরকে
কোন মিহি সন্ধ্যার দিকে
বটবৃক্ষের তলে

আমরা ফিরা যাবো নাইনটিইজে,
গাইবো কোরাস গান
“পাহাড়ে পাহাড়ে খুঁজিয়া তোমারে…”
বিপ্লব দাশের কথা মনে করবো

লোকাল ট্রেইন, বেনাপোল মেইল
তুমি ধীরে ধীরে ক্রস করে যাইতেছো বন্ধ হয়া যাওয়া পাটকলগুলা,
তারপরে থামতেছো দৌলতপুরে
গরমের দিনে ঘামতেছো তুমি,
আবার আগায়া যাইতেছো খুলনার দিকে,
বাতাসে কাঁপতেছে যেন বুক-খোলা ইয়াং গাঞ্জুটির শার্ট

মন, তুমি লোকাল ট্রেইন, বেনাপোল মেইল
ঝিকঝিক ঝিকঝিক ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের গান

Leave a Reply