নোটস: মে, ২০২৩ [পার্ট ১]

মে ০২, ২০২৩

বাক-স্বাধীনতা

বাংলাদেশের নিউজ-এজেন্সিগুলার যে কি পেথেটিক অবস্থা, সেইটা টের পাইবেন ডেইলি স্টারের এই নিউজটা দেইখা। (কমেন্টে লিংক দিতেছি। দেইখা নিতে পারেন আগে।)

নিউজে বলা আছে বসুন্ধরা আবাসিকের এক ফ্ল্যাটে ঢুইকা সিকিউরিটির লোকজন এক মেয়ের মাথার চুল কাইটা দিছে, পরে পুলিশ গিয়া তারে উদ্ধার করছে, এবং পুলিশের ‘ডরে’ সিকিউরিটি’র লোকজন ভাইগা গেছে।

অথচ এই ঘটনা’টার ব্যাপারে যারা দূর থিকাও কিছু শুনছেন, তারা জানেন যে, অই মেয়ে’র লগে বসুন্ধরার মালিকের ছেলের একটা ‘রিলেশন’ ছিল; অই ছেলের বউ সেইটা জানতে পাইরা মেয়েটারে ধইরা নিয়া আইসা পিটাইছে, মাথার চুল কাইটা দিছে। থানা-পুলিশ কোন মামলা নেয় নাই।

এখন মেয়েটারে জিগাইলেও শে হয়তো পুরা ব্যাপারটা এড়ায়া যাবে। মানে, বিচার তো শে কোনদিনও পাবে না বাংলাদেশে, বিচার চাইতে গেলেও যেই বিপদে পড়তে হবে – সেইটা এভয়েড করতে পারলে হয়তো এটলিস্ট জানে বাঁচা যাবে।

অনেক নিউজ-এজেন্সিই নিউজটা করে নাই; কারণ এর চাইতে আরো ইম্পর্টেন্ট নিউজ আছে তো – ব্রাউজের ফাঁক দিয়া পরিমণির ব্রা’র কালার দেখা গেল কিনা, অনন্ত জলিল নতুন কি ইংলিশ কইলেন, আরো অনেককিছুই তো আমাদের জানা দরকার!

কিন্তু ডেইলি স্টার (এবং আরো কয়েকটা এজেন্সি) এই নিউজ’টা ছাপানোর ‘সাহস’ করছে! তো, এই হইতেছে উনাদের সাহসের নমুনা!
খালি পলিটিকালি বাকশালের লোকজনই না, বরং সমাজের যারা পাওয়ারফুল তাদের নাম মুখে নেয়ার ক্ষমতাও তাদের নাই, কোন ইনটেশনও নাই। মানে, নিউজপেপারে, পোর্টালে আমরা যতটুক দেখি, সেইটা খালি ফার ফ্রম দ্য ট্রুথ না, মিছা-কথার চাইতেও আরো বড় মিছা-কথা। মিছা-কথাগুলারে ভেলিডিটি দেয়ার ঘটনা।

বসুন্ধরা নিয়াই যদি এই অবস্থা হয়, তাইলে বসুন্ধরার বাপ বাকশাল নিয়া কি চলতেছে, খালি ভাবেন একটু!

বাক-স্বাধীনতা, মাই ফুট!

মে ০৩, ২০২৩

নিউজ-মিডিয়ার কাজ সত্যি-কথা বলা না, বরং একটা পারসিভড রিয়ালিটিরে তৈরি করা। আর এই পারসিভড-রিয়ালিটি ক্ষমতার ফেভারেই কাজ করে সবসময়। মানে, এইখানে একটা এক্সপেক্টশন আছে, রিয়ালিটির ধারণা আছে, নিউজ-মিডিয়ার কাজ হইতেছে অই রিয়ালিটির জায়গাটারে কনফার্ম করা আসলে। কোনকিছু জানানো না তেমন।

নিউজের কাজ হইতেছে, একটা স্টোরিরে খুঁইজা বাইর করা, যেইটা চেনা-জানা রিয়ালিটি’টারে কনফার্ম করতে পারবে। ঘটনাগুলা ঘটতেছে না – তা না, কিন্তু অই ঘটনাগুলারেই আমরা নিউজ হিসাবে দেখতে পাইতেছি যারা অই রিয়ালিটির লগে এলাইনড থাকতেছে।

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, যখন একটা বড় আগুন লাগে কোথাও, তখন সারাদেশে একই সাথে আগুন লাগতে থাকে, বড়-ছোট। কোথাও একটা সেনসেশনাল মার্ডার হওয়ার পরে অনেক মার্ডারের নিউজ ছাপা হইতে থাকে। এখন যেমন রেইপের নিউজ নাই, তার মানে এইটা না যে, রেইপ কমে গেছে; বরং অই নিউজ কিছুটা বোরিং হয়া গেছে, খাইতেছে না পাবলিক তেমন! ঘটনা ঘটতেছে বইলাই খালি আমরা জানতেছি না, আমরা জানতে চাই, এইরকম একটা ভ্যাকুয়াম আছে; অই জায়গাগুলা ফুলফিল করাটাই নিউজ-মিডিয়ার সবচে বড় কাজ আসলে।

মে ০৫, ২০২৩

থট-প্রসেস

Alain Badiou‘র একটা ইন্টারেস্টিং লেখা আছে, দ্য এডভেঞ্চার অফ ফ্রেঞ্চ ফিলসফি নামে; অইখানে উনি বলতেছিলেন, হিস্ট্রিতে নানান সময়ে একেকটা ফিলসফিকাল-টাইম তৈরি হইছে, যেইরকম গ্রিকদের সময়ে ছিল, তারপরে জার্মান আইডিওলজিস্টরা ছিলেন, উনি প্রপোজ করতেছিলেন যে, ফ্রান্সে ১৯৫০’র পরে থিকা এইরকম একটা ফিলসফিকাল-টাইম তৈরি হইছে, যেইটা জা পল সাত্রের পর থিকা শুরু কইরা উনার লেখালেখি পর্যন্ত – এইরকম। [তারপরে উনি এই টাইমটার ফিলসফিকাল কন্ট্রিবিউশন ও সিগনিফিকেন্সগুলা নিয়াই আলাপ করছেন।]

তো, এই চিন্তাটা আমার ভালো-লাগছে। আমি মনে করি, এইরকম একটা ঘটনা আছে যে, একেকটা সময়ে একেকটা জায়গাতে চিন্তার ঘটনাগুলা ঘটতেছে। এবং যখন চিন্তাগুলা এপিয়ারড হইতেছে, দুনিয়ারে দেখার নজর আমাদের আর একইরকম থাকতেছে না। কিন্তু মুশকিল হইলো, এইটা খালি ইউরোপেই ঘটতেছে না। বরং আমি মনে করি, চিন্তাগুলাও ট্রাভেল করতেছে। এবং আগের চিন্তার ক্রিটিকের উপরেই পরের চিন্তার বেইজগুলা তৈরি হইতেছে।

এটলিস্ট তিনটা ঘটনা এইখানে ঘটছে, বা ঘটতেছে। এক, যেইটা বললাম, চিন্তাগুলা ট্রাভেল করতেছে। গ্রীক-চিন্তা রিভাইব করছে, নতুন একটা কনটেক্সটে দাঁড়াইছে গিয়া পারস্যে-আরবে (রাফলি বলা যাইতে পারে ৮ – ১৪ শতকে)। যেইটা স্পেন হয়া আবার ইউরোপিয়ান এনলাইটমেন্ট থটে নতুন কইরা আসছে। অই মর্ডানিস্ট চিন্তার একটা ক্রিটিকাল পয়েন্ট হইতেছে জার্মান ফিলসফিকাল থট। যেইটারে ক্রিটিক কইরা ফ্রেঞ্চ ফিলসফারদের জায়গা তৈরি হইছে। মানে, এইটা কন্টিনিউ হইতেছে।

সেকেন্ড হইতেছে, ব্যাপারটা এতোটা লিনিয়ার না। মানে, দেখা যাবে, অন্য সব চিন্তাগুলাও এইখানে আইসা জড়ো হইতেছে, মিলতেছে; কিন্তু হিউম্যান থট-প্রসেসের এক ধরণের কম্পাইলেশন হইতেছে একটা জায়গায়। একটা জায়গা সেন্টার হয়া উঠতেছে অন্য জায়গাগুলার লগে তার কানেকশনের ভিতর দিয়াই। এমন একটা কমন-স্পেইস হয়া পারতেছে যে, এর পর থিকা আমাদেরকে চিন্তা-করা শুরু করতে হবে।
আবার একটা সময়ের চিন্তা বইলাই ব্যাপারগুলা একই রকমের চিন্তা না। যেমন হেগেল আর কান্ট আর নিটশে’রে তো মিলানো যাবে না, বরং কাছাকাছি রকমের কন্ট্রাডিকশনগুলা নিয়া উনারা কনসার্নড ছিলেন। যেমন ধরেন, এলকেমিস্টরা যেই ধরণের এক্সপেরিমেন্টগুলা করতেন, এখনকার কেমিস্টদের এক্সপেরিমেন্টগুলার উদ্দেশ্য তো একইরকমের না। এইরকমের একটা ঘটনা।

থার্ড ঘটনাটা বা যেইটা থিকা এই কথাগুলা মনে হইছে যে, বাংলাদেশে মেবি এক ধরণের “ইসলামি-চিন্তার পুর্নজাগরণ”র চেষ্টা চলতেছে; কিন্তু এই ঘটনাগুলাতে সৎ একটা চেষ্টা থাকার পরেও বেশিরভাগ সময়ই প্রিটেনশাস এবং প্রেজুডিসে ভরা জিনিস মনে হইছে। মানে, ব্যাপারটা এইরকম না যে, ‘ইসলামি-চিন্তা’ করা যাবে না, কিন্তু চিন্তার হিস্ট্রির জায়গাটাতে পারস্য-আরবের জায়গাটা মিসিং বইলা অই জায়গাগুলারে হাইলাইট করার একটা পারফরমেন্সে পরিণত হইতে থাকে ঘটনাগুলা। এইটা করা যাবে-না না, কিন্তু অই জায়গাটারে চিন্তার গোড়া হিসাবে ধইরা নেয়ার চাইতে কিভাবে ইউরোপিয়ান থট-প্রসেসে জায়গাগুলারে একমোডেড করা হইছে, সেইটার ক্রিটিক করতে পারাটা বরং বেটার একটা কাজ হইতে পারে।

মানে, ইউরোপিয়ান এনলাইটমেন্ট গ্রীক-চিন্তা থিকা আসে নাই, পারস্য-আরবের চিন্তা থিকা ট্রাভেল কইরাই আসছে। ইমিডিয়েট পাস্টরে অস্বীকার করলেই আমরা অরিজিনাল-ট্রুথের কাছে যাইতে পারবো – এইটা আমার কাছে মনেহয় না, বরং এইটা ইউরোপিয়ান থট-প্রসেসেরই একটা উত্তরাধিকার হইতে পারে। যখনই নতুন একটা চিন্তা আমরা পাই, সেইটারে আগের চিন্তার চাইতে বেটার বইলা ক্লেইম করতে থাকি। কিন্তু আগের সময়ের এপারেন্টলি ভুল-চিন্তাগুলাই যে ইম্পর্টেন্ট – এইটা কন্সিডার করতে পারাটা মেবি দরকারি ঘটনা।

মে ০৬, ২০২৩

চিনি

আমি দুনিয়ার সেইসব ফরচুনেট মানুশদের একজন, যার নিয়মিত বাজারে যাওয়া লাগে না। কিন্তু মাঝে-মধ্যে তো যাই। গতকালকে বাজারে গিয়া অবাক হইলাম। চিনি নাই দোকানে! ঘটনা কি?

১২০-১২৫ টাকার চিনির দাম বাড়ায়া ১৪০ টাকা করা হইছে। (৮০-৮৫ টাকাও তো ছিল মনেহয় কয়দিন আগেই।) এই কারণে চিনি নাই হয়া গেছে বাজারে! মানে, চিপা-চাপায় আছে হয়তো, বাড়তি দামে বেচবে। আগের দামে বেচবে না।

অবশ্য আপনি বাকশালি হইলে তো বলবেন, চিনি কেন খাবেন? চিনি খাওয়া তো ভালো না। হোয়াইট পয়জন!

সিট-কাটা টমটম

ঢাকা বাইরে একটা জেলা শহরে আসছি। সন্ধ্যাবেলার দিকে একটা ব্যাটারি-রিকশা/টমটমে উঠছি। একজন ড্রাইভারের সাথে বসছেন। পিছনের উঁচা সিট’টাতে দুইজন বসছি। একটু পরে একটা মোড় থিকা পিছনের নিচা সিট’টাতে একজন উইঠা বসলো। এরপরে আরেকজন উঠলো। তখন আমার পাশেরজন (আমরা জেলা শহরে নতুন) নতুন প্যাসেঞ্জার’রে কইলো, ভাই, দেইখা বইসেন, আপনার পাশের সিট’টা কিন্তু কাইটা রাখছে! [যারা ‘বিদেশে’ বা ঢাকা-শহরে থাকেন, টমটম চিনেন না, উনাদের বুঝার জন্য একটা ছবি দিতেছি কমেন্টে, টমটমের।]

মানে, অই সিটে তিনজন বসা যাইতো, কিন্তু একটা সিট নাই, অই জায়গার রড’টা করাত দিয়া কাইটা রাখা, বুঝা যাইতেছে। অই প্যাসেঞ্জার বেশ রাগের চোটে কইলেন, জানি ভাই, জানি! তখন আসল ঘটনা বাইর হয়া আসলো। উনিই বললেন।

কয়দিন আগে, মন্ত্রীর পিএস এইরকম টমটম থিকা নামার সময় পইড়া গিয়া ব্যথা পাইছে। এরপর থিকা এই আইন চালু করছে শহরে যে, একটা সিট কাইটা ফেলতে হবে। মানে, মন্ত্রীও না, মন্ত্রীর পিএস! যেহেতু টমটম থিকা নামার সময় তার পা মচকাইছে, এই কারণে শহরের সব টমটমে পিছনের একটা সিট কাইটা ফেলতে হবে!

[এইটা ঠিক কি বেঠিক – সেইটা কথা না, কথা হইতেছে একজন মন্ত্রীর পিএস চাইলে কি করতে পারে!]

পরে খেয়াল কইরা দেখলাম, আসলেই তো, সব টমটমের একটা সিট কাটা!

অই প্যাসেঞ্জার কইতেছিলেন, এই নিয়া কতো কান্ড-কারখানা শহরে! আমাদের মতো কারো কিছু হইলেই কোন কিছু হইতো না, মন্ত্রীর পিএস হইয়াই এত পাওয়ার দেখাইলো সে! তারপরে ‘ভদ্র-ভাষায়’ কিছু গালি-গালাজ করলেন। যে, অই পিএস হইতেছে ইমপোটেন্ট! এখনো বিয়া করতে পারে নাই, এই-সেই!

টমটমের ড্রাইভার চুপচাপ সবকিছু শুনলেন। কিছু কইতে গিয়াও কইলেন না। অন্য প্যাসেঞ্জারও নিরবে সায় দিলেন। কিন্তু উনারা কিছু কওয়ার সাহস করলেন না। উনারা ‘সাধারণ জনগণ’। ডিএসএ-তে মামলা খাওয়ার ডর না থাকলেও কেউ যদি শোনে যে মন্ত্রীর পিএস নিয়া কোন বাজে কথা বলছেন, তাইলে তো ‘বিপদ’ হইতে পারে উনাদের! এই ডর তো আমাদের সবার-ই আছে আসলে।

মে ০৭, ২০২৩

হিন্দুজম কি ও কেন?

ইন্ডিয়ার সমস্যা আসলে হিন্দুজম না! অইটা জাস্ট একটা কাভার-আপ ঘটনাই। মানে, আমি এইরকমই মনে করি যে, সিউডো-সেকুলারিজম ফেইল মারার পরে হিন্দুজম একটা সেন্ট্রাল ফেনোমেনা হিসাবে এমার্জ করছে, ইন্ডিয়ার পলিটিক্সে। মানে, একটা সেন্ট্রাল ধারণা তো দরকার!
কিন্তু শুরু থিকাই ইন্ডিয়ার মেইন ক্রাইসিস ছিল সেন্ট্রাল ভার্সেস রিজিওনাল। সাউথ-ইন্ডিয়ান ব্রাহ্মণরা তো কোনদিনই নর্থ-ইন্ডিয়ান শুদ্রদেরকে মাইনা নিবে না! বাঙালি-হিন্দুরা তো ম্লেচ্ছ, সবগুলা বাংলাদেশ থিকা আইছে! তামিলরা মইরা গেলেও হিন্দিতে কথা বলবে না। পাঞ্চাব কি দিল্লীরে মাইনা নিবে নাকি! কিষান-মুভমেন্টের কি কোন রিজিওনাল রেইজ নাই, ছিল না!

মানে, অবশ্যই জিনিসগুলা এইরকম স্ট্রেইট আর লিনিয়ার ঘটনা না। কিন্তু রাষ্ট্র হিসাবে ইন্ডিয়ারে সারভাইব করার জন্য অবশ্যই একটা সেন্ট্রাল-ফেনোমেনা লাগবে। বলিউড ইজ ডেড! ক্রিকেট ওভার-রেটেড। আর অইগুলা জাস্ট ইমোশনাল ভ্যাসেল। অইগুলাতে সেকুলারিজম যেইরকম ভাসানো যায়, হিন্দুজমও ভাসতে পারে।

কিন্তু অই সেন্ট্রাল জায়গাতে ইন্ডিয়ারে আরো স্ট্রিক্ট, মানে, আরো ‘অজর’ ‘অনড়’ হইতে হবে! এইটা এমন একটা বেলুন, যেইটা এক্সপান্ড না করতে পারলে মারা যাবে! এমন একটা দৈত্য আশে-পাশের মানুশ-জনরে না-খাইতে পারলে বাঁইচা থাকতে পারবে। এর জন্য বিশাল একটা খিদা তার দরকার।

হিন্দুজম হইতেছে অই খিদা’টা, ইন্ডিয়ার।

..

মে ০৮, ২০২৩

সারকামটেন্সিয়াল এভিডেন্স

এইরকম একটা কথা শুনতেছিলাম কয়দিন আগে, আওমি-লিগ যে ভোট-চুরি করছে – এর কোন পরমাণ তো নাই! অনেক সিমটম দেইখা আমরা বুঝতে পারি যে, মানুশ-জন ভোট দিতে পারে নাই, বা ইলেকশনের রেজাল্ট নিয়া দুই-নাম্বারি হইছে! কিন্তু হার্ডকোর কোন পরমাণ তো নাই!

তো, এইটা কোন ‘অকাট্য যুক্তি’ না, এইটা হইতেছে পাওয়ার-মারানিদের হেডম! বেটাগিরির কথা।

কারণ, হিটলারের আমলে কি কেউ দলিল-দস্তাবেজ হাজির করতে পারতো নাকি, কি কি জুলম সে করছিল? ফেরাউনের আমলে, নমরুদের সময়ে কেউ কি পরমাণ বাইর করতে পারতো নাকি, অরা কি কি আকাম-কুকাম করছিল? যে যত বড় জালিম, তার গলা তত বড় আসলে।
কোন দালাল যদি কয় যে, পরমাণ দেন বাকশালি জুলুমের! তার আসল মিনিং হইতেছে যে, তোর কতো বড় সাহস, এইগুলা নিয়া কথা কইতে আসোস! ভোট-ডাকাতির কোন পরমাণ নাই না, পাবলিকলি এইসব দলিল-দস্তাবেজ কেউ হাজির করতে পারে – এইরকম মিনিমাম কোন সন্দেহ যদি কারো উপর থাকে, ধইরা নিতে পারেন, অই লোক ডেড!

কিন্তু এই রিজিম যখন শেষ হবে, এর হাজার হাজার পরমাণ আমরা পাইতে থাকবো তখন। এইটা পরমাণ থাকা বা না-থাকার ঘটনা না, জুলুম আছে কি নাই – এইটা নিয়া তর্ক করারও ঘটনা না, জাস্ট পাওয়ার শো-অফের ঘটনাই একটা।

অবিচুয়ারি: সমরেশ মজুমদার

মেবি আমি বাংলাদেশের ‘বই-পড়া’ ‘শিক্ষিত’ ‘মিডল-ক্লাস কালচারের’ মধ্যে রেয়ার একজন মানুশ, যে কিনা সমরেশ মজুমদারের কোন বই না পইড়াই ‘বড়’ [বয়সের সেন্সেই] হইতে পারছিলাম।

মানে, আমার রিডিং-লিস্ট এর চে বড় বড় ক্লাসিক রাইটার দিয়া সবসময় ফিলাপ করা ছিল – সেইটাও না! দস্যু বনহুর পড়ছি আমি (রোমেনা আফাজের), মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দা, সেবা রোমান্টিক, এইসবও। কিন্তু সমরেশ মজুমদার আমার পড়া লাগে নাই।

কয়দিন আগে বলতেছিলাম, সতজিৎ রায়ের খুববেশি সিনেমা আমি দেখি নাই; তখন একজন আইসা বলছিল, না দেইখাও এতো কথা কইতে পারেন! এই-সেই। তো, এইরকম অনেককিছু দেখা ও অনেককিছু পড়া লোকজনরে আমি এড়াইয়া চলি, অনেকদিন ধইরাই। মানে, উনারা ফিল্ম-মেকার বা সাহিত্যিকই না খালি, সোশাল ফেনোমেনা তো, একটা ক্লাসের।

আমি না দেখলে, না পড়লেও এইসব “ইনোসেন্ট বিস্ময়” তো আমারে নিতে হইছে যে, সমরেশ মজুমদার পড়ো নাই! যেন এইটা সত্যি-কথা হইতেই পারে না! যেন আমি মিছা-কথা বলতেছি, বা কোন একটা ভাব নেয়ার ট্রাই করতেছি! কিন্তু সমরেশ মজুমদার না পইড়া তো পশ-ও হইতে পারতেছি না আমি! [মানে, এখনকার মতো কলকাতা-বিরোধিতার ফ্যাশন তো তখন চালু হইতে পারে নাই।] তাইলে কেন না-পড়ার কথা বলতেছি আমি!

আমি বলতে চাইতেছি, সমরেশ মজুমদারে বই না পইড়া আমি তেমন কিছু মিস করছি বইলা ফিল করি নাই। দুনিয়ার অনেক লিটারেচারই আমি পড়ি নাই, বাংলা-সাহিত্যেরও অনেককিছু পড়ি নাই; কিন্তু ভাবছি বা লিস্টে রাখছি যে, সময় পাইলে এইটা এইটা তো পড়া দরকার! কিন্তু সমরেশ মজুমদারের ব্যাপারে এইটা আমার কখনো হয় নাই।

কিন্তু আমার না-পড়াতে বা তার লেখা পড়াটা জরুরি মনে-না-হওয়াতে উনি খারাপ-রাইটার হয়া যান নাই অবশ্যই। একইভাবে যারা তাদের ‘কৈশোর-প্রেমের নস্টালজিয়া’রে মহান কইরা তুলতে চান, তাদেরকে বইলা রাখাটাও দরকারি যে, বাংলাদেশের একজন রিডারের কাছে উনার বই মাস্ট-রিড হওয়ার স্কোপটাও কমই। আপনাদের এডমায়ার করাটা যেমন মিথ্যা না, আমার না-পড়াটাও একইরকম।

সমরেশ মজুমদারের লেখার একজন রিডার হইতে পারাটা কোন ফরচুনেট ঘটনা কিনা আমি শিওর না, কিন্তু তার লেখার রিডার না-হওয়াটা যে অনেক সময় বাংলাদেশে ‘বিস্ময়’ হিসাবে পারসিভড হইতো, সেইটার একজন ভিক্টিম হিসাবে, উনার মরণে আমি হ্যাপি বা স্যাড না; জাস্ট একটা নিউজ হিসাবেই আমি নিতে পারতেছি। তো, রাইটার হিসাবে এইরকম নিউজ হইতে পারাটা বা সার্টেন অডিয়েন্সের ইমোশনাল নিড’রে ফুলফিল করতে পারাটা খারাপ-জিনিস না কোনভাবেই।

আমি জাস্ট নিজের জন্য এইটাই এক্সপেক্ট করি যে, একজন রাইটার হওয়ার মানে যেন এইটুকই না হয়!

সমরেশ মজুমদারের রিডার’রা আমারে মাফ করবেন। উনি তো মাফ করা বা না-করার জায়গাতে আর নাই! আর মরণ তো আমাদের সবার জন্যই ওয়েট করতেছে! গুডবাই, সমরেশ মজুমদার!

মে ০৯, ২০২৩

এইরকম কিছু ঘটনা দেখবেন ঘটে যে, হঠাৎ কইরা কেউ আইসা আপনারে বলতেছে যে, “কি কইলেন? ঠিকমতো বুঝি নাই।” [আগে কইতো, “মাথার উপর দিয়া গেছে”, এই-সেই।] কিন্তু এই কথার মানে কোনভাবেই “বুঝি নাই”-না, মানে হইতেছে, “আপনার কথা তো বুঝাইতে পারেন নাই!” [বা, আরো হার্শ-মিনিং হইতেছে, আপনার কথা তো হয় নাই! লেভেল আরেকটু নিচে নামান বা উপরে তোলেন! বা “সহজ” কইরা বলেন!]

এইসব জায়গায় আমার পজিশন হইতেছে, আল্লার দোহাই লাগে, উনাদেরকে কিছু “বুঝাইতে” যাইয়েন না!

উনারা, যারা “বুঝি নাই” আছে, আরো বেশি কিছু বুইঝা বইসা আছেন আসলে। [বা উনারা এমন একটা পজিশনে আছেন, যেই পজিশন বা বুঝ-এর জায়গাটা উনারা ছাড়তে রাজি না আসলে। ]

তো, কি বুইঝা ফেলছে উনারা, এইটা নিয়াও কনসার্ন হইয়েন না প্লিজ। মানে, নিজের কথা, চিন্তারে তো রিভিউ করবেন অবশ্যই; কিন্তু কাউরে কিছু বুঝাইতে চাওয়াটা উদ্দেশ্য হিসাবে নিতে পারাটা, কি কথা আপনি বলতে চাইতেছেন তারে রিডিউস কইরা ফেলতে পারার কথা অনেক সময়।

একজন পলিটিকাল-লিডার বা মোটিভেশনাল-স্পিকার হইলে অবশ্যই ভাবার এবং বলার দরকার আছে; কিন্তু রাইটার হিসাবে অই দায় নিতে পারার কোন দরকার আসলে নাই।

তারেক রহমান যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়া পোস্ট দিছেন (পুরান পোস্ট নতুন কইরা শেয়ার দিলেও), পলিটিকালি দরকারি-কাজ হইছে এইটা।
রাইটার হিসাবে রবীন্দ্রনাথের ক্রিটিক করা যেমন আমার জন্য দরকারি-কাজ, পলিটিশিয়ান হিসাবে সোশাল ও কালচারাল ইস্যুগুলাতে কথা-বলাটা, এনগেইজড হইতে পারাটাও একজন পলিটিশিয়ানের জন্য দরকার।

মানে, বাংলাদেশের শিক্ষিত-মিডলক্লাস লোকজনও তো বাংলাদেশের মানুশ! (একমাত্র কালচারাল-ক্লাস না আর কি!) আর খেয়াল কইরা দেখবেন এই রবীন্দ্র-প্রেমি ফার্স্ট লাইটের মেনুফেকারচড ক্রাউডই কিন্তু তারেক রহমানের মেইন হেটার্স। এখন উনাদেরকে তেল দিতে হবে – তা না, কিন্তু উনাদের কালচারাল-সেলিব্রেশনের জায়গাগুলারে বাতিল কইরা দিতে চাওয়াটা পলিটিকালি পজিটিভ কোন কাজ না।

কিন্তু এই কাজে দুইটা ভুল উনি করছেন বইলা আমার মনে হইছে। এক হইতেছে, বাংলাদেশের বাংলা-তারিখ অনুযায়ী আজকে হইতেছে ২৫ শে বৈশাখ, গতকালকে ছিল ২৪ শে বৈশাখ। এমনকি খ্রিষ্টান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গেলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বার্থডে ছিল ৭ই মে। মানে, গত পরশু। গতকালকে (৮ই মে) উনারে উইশ করতেছেন মানে হইতেছে ইন্ডিয়ান বাংলা-ক্যালেন্ডার’রে বেইজ বা অথেনটিক ধইরা নিতেছেন আপনি। এইট ঠিক কোন ‘ভুল’-ও না আসলে, বরং বাংলাদেশি-বাংলারে বেইজ না করতে পারার বা না-চাওয়ার ঘটনা আসলে।

বাংলাদেশে এই ক্যালেন্ডার ফিক্সড করা হইছিল এরশাদের আমলে। অইটা ঠিক কি বেঠিক – সেইটা অন্য আলাপ; বরং বাংলা যে কোনকিছুর বেইজ যে ইন্ডিয়ান-বাংলা অই “সাব-কনশাসের” ঘটনা আসলে। ১৯৬৫ সালেও মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্’রা দেখবেন বাংলা-ভাষার “আঞ্চলিক অভিধান” বানাইতেছেন, বাংলা-ডিকশনারি বানাইতে পারতেছেন না, কারণ অইটা তো কলকাতার লোকজন করবে! বাংলা তো অইটা! অই ইনফিরিয়রিটির ঘটনা তখন শার্পলি ছিল, এখনো “স্বতঃস্ফূর্ত” ব্যাপার হিসাবে ক্যারি-ফরোয়ার্ড হইতেছে। পলিটিকালি এই জায়গাটা থিকা বাইর হইতে পারাটা জরুরি।

সেকেন্ড হইতেছে, আগের দিনের একজন পলিটিকাল-লিডারের যেইরকম স্পিচ-রাইটার থাকতো, এইরকম পাবলিক কথা-বার্তার জন্য একটা পিআর-টিম থাকলে ভালো। অই দুই-তিনজন লোকের কথা পলিটিকাল-লিডার শুনবেন – তা না, বরং উনার কথাগুলারে আর্টিকুলেট কইরা দিতে পারবেন অনেকটা; বা কিছু ইনসাইট দিতে পারবেন অই বিষয় নিয়া, যেইটা পলিটিকাল-লিডার কন্সিডারেশনে নিবেন।

তারেক রহমানেরও এইরকম একটা টিম ইনফরমালি হইলেও থাকার কথা। কিন্তু আমার ধারণা, উনাদের ইন্টেলেকচুয়াল হাইট খুববেশি সুবিধার না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’রে একটা সময়ের এবং একটা ক্লাসের ফেনোমেনা হিসাবেই হাইলাইট করতে পারাটা পলিটিকালি বেটার পজিশন। যেইটা বেটার-ওয়ে’তে আর্টিকুলেটেড হইতে পারতো আসলে। ইন ফিউচারে ইমপ্রুভ করবে হয়তো ব্যাপারগুলা।

কিন্তু পলিটিকালি রবীন্দ্র-লাভার মিডল-ক্লাসের কালচারাল ভেলিডেশনের দরকার নাই আসলে এখন, বাংলাদেশের কোন পলিটিকাল পার্টিরই। তাই বইলা কথা-বলাটা খারাপ-কাজ না, কিন্তু পলিটিকালি কোন জায়গাটাতে উনারে রাখতে চাই, সেইটা আরো ক্লিয়ার করতে পারাটা ভালো।
মানে, এইটা পজিটিভ ঘটনাই, রবীন্দ্রনাথ নিয়া তারেক রহমানের পোস্ট দেয়ার ঘটনা’টা, আমার পলিটিকাল বিচারে।

মে ১০, ২০২৩

আরো কিছু নিরপেক্ষ-বলদ আছেন, যারা মনে করেন চিনি খাওয়া কমায়া দিলেই চিনির দাম কমবে! তেল খাওয়া কমায়া দিলেই তেলের দাম কইমা যাবে!

এই বলদগুলা কি জানে না যে, এরা ঘাস খাওয়া শুরু করলে, ঘাসের দামও বাইড়া যাবে! মানে, মানুশ-জন কনজামশন বাড়ায়া দিছে বইলা তো জিনিস-পত্রের দাম বাড়তেছে না! বরং মার্কেটে যে কোন দরকারি জিনিসের সাপ্লাই কমায়া দিতে পারলে, ডিস্ট্রিবউশনের জায়গাটারে মেনিপুলেট করতে পারলেই দাম বাড়ায়া ফেলা যাবে।

কিন্তু এই কথা ভাবতে গেলে তো নিরপেক্ষ-বলদ থাকা যাবে না আর! বিএনপি হয়া যাইতে হবে! অইটা তো হওয়া যাবে না! মরি আর বাঁচি, আমরা নিরপেক্ষ-বলদ (মানে, প্রো-বাকশালি) হয়াই থাকবো!

বাংলাদেশে এটলিস্ট তিনটা দুনিয়া পাশাপাশি আছে।

এক, যাদের বাসা ও অফিসে এসি আছে, উইথ ২৪ ঘন্টা ইন্সটেন্ট জেনারেটর ব্যাক-আপ। উনারা আসলেই বেহেশতে আছেন।
সেকেন্ড হইতেছে, যাদের এটলিস্ট আইপিএস ব্যাক-আপ আছে। কারেন্ট গেলে ২-৪ ঘন্টার বেশি থাকে না, বা অই সময়টাতে আইপিএসের ব্যাক-আপ দিয়া চলা যায়। বা ধরেন, রইদের সময় ঘরের বাইরে খুবএকটা যাইতে হয় না। এইরকম। উনারা হইতেছেন দুনিয়ার ভালো-মন্দ মিলায়া আছেন।

আর যাদের বাসা ও অফিসে এসি নাই, আইপিএস ব্যাক-আপও নাই, কারেন্ট গেলেই টের পান উন্নয়ন কারে বলে। উনারা দোজখে নাই আসলে, তার চাইতেও মেবি বাজে জায়গা যেইটা, সেই বাংলাদেশে আছেন।

মানে, আপনি কোন দেশে আছেন, কোন জায়গাতে আছেন, সেইটা তো আছেই, কিন্তু তার চাইতে ক্রুশিয়াল জিনিস হইতেছে আপনি কোন ক্লাসে বিলং করতেছেন। অইটাই আপনার-আমার দুনিয়া আসলে।

Leave a Reply