নোটস: মে, ২০২৩ [পার্ট ২]

মে ১১, ২০২৩

আগে এইরকম মানুশ দেখছি, পড়াশোনা জানা শিক্ষিত কবি-আর্টিস্ট, কিন্তু নিউজ-পেপার পড়তেন না! মানে, এখনকার সময়ে নিউজপেপার না-পড়াটা নরমাল ঘটনা হইলেও, ১৯৬০-৭০, এমনকি ‘৮০ দশকেও কিছুটা ‘উন্নাসিকতা’ শো করার ঘটনা হইতে পারতো। আমি অনেক কিছু মিস করতেছি ঠিকাছে, কিন্তু আমি এইরকমই ‘উদাসিন’ যে, পত্রিকাও পড়ি না! এইরকম ছিল ঘটনা’টা। একটা পারসোনাল রিভোল্ট যেন!
এখন পত্রিকা পইড়া যে আমরা অনেককিছু জানতে পারি – তা না, অইগুলারে জানা’র ঘটনা হিসাবে পোর্টেট করা হইতো আসলে যে, দেশ-বিদেশের এখন কিছু আমি জানি! খোঁজ-খবর রাখি।

এখনকার অনলাইন প্লাটফর্মগুলাতে (ফেইসবুক, ইউটিউব, টুইটার, টিকটক, টেলিগ্রাম…) যা ঘটতেছে সেইটা খোঁজ-খবর রাখার মতো বোরিং জিনিস না, বরং ট্রেন্ডি হইতে পারার ঘটনা। নিউজপেপার না পইড়া আপনি অনেককিছু জানতেন-না না, বরং একটা লেফট-এলোন ফিলিং হইতো যে, অনেকে জিনিসটা জানে, কিন্তু আপনি জানেন না তেমন।

অই জিনিসটা এই নতুন জায়গাগুলাতে বাতিল হয়া যায় নাই, বরং ইনটেনসিফাই হইছে আরো। আগে দিনে একবার কানেক্ট করলেই হইতো, এখন ২৪/৭ কানেক্ট থাকার পরেও অনেককিছু মিস কইরা যাইতে পারেন আপনি।

আর আমরা নেশনাল থিকা গ্লোবাল মিডিয়াতে আপগ্রেটেড হই নাই, বরং ব্যাপারগুলা অনেক বেশি লিনিয়ার এবং একমুখী হইতেছে। যত বড় নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটির মধ্যে থাকতে পারতেছেন তত সেন্ট্রাল ফিলিংস পসিবল। এবং ছোটখাট নেটওয়ার্কগুলা এই ডিজায়ার ফুলফিল করতে পারে না আসলে।

মানে, এই নেটওয়ার্ক কেপাবিলিটিই মনোপলির মনস্টাররে তৈরি করতেছে আসলে, সবক্ষেত্রে।

যেমন ধরেন, মাঝে-মধ্যেই মেজাজ খারাপ হয় ফুড-পান্ডার বাজে সার্ভিসে; কিন্তু আপনি যদি হোম ফুড ডেলিভারিতকে একবার ইউজড-টু হয়া যান, ঢাকা শহরে এর বাইরে আর কোন অপশন তো পাইবেন না তেমন!

অনেকে যেমন ফেইসবুক ছাইড়া যাইতেছেন, কিছুদিন অফ থাকেন, বা রেস্ট্রিকশনও খাইতেছেন, কিন্তু যতদিন এইখানে মানুশের আনাগোনা আছে, নেটওয়ার্ক হিসাবে এক্টিভ থাকতেছেই এইটা, আপনি-আমি ইন্ডিভিজুয়াল হিসাবে এইখানে পার্টিসিপেট করি বা ইগনোর করি।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, কানেক্টিভিটিটা হইতেছে কী (key) ফিচার, আমাদের সময়ের, এই হিউম্যান সিভিলাইজেশনেরই মেবি। কিন্তু এইটা একইসাথে একটা অবস্টেকলও, যখন লিনিয়ার বা একচক্ষু (বা দাজ্জাল?) হয়া উঠতে থাকে পুরা প্রসেসটা।…

মে ১২, ২০২৩

এইরকম একটা কথা-বার্তা চালু আছে যে, যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাইলে দেশে হাজার হাজার খুন-খারাবি হবে, অরাজকতা তৈরি হবে। কারণ যেই পরিমাণ টর্চার করা হইতেছে, এর শোধ কি এরা নিবে না!

কোন সেন্ট্রাল বা জেলা-শহরের নেতার কথাও বাদ দেন, হাজার হাজার ওয়ার্ডের নেতার নামেও ২০-৩০টা গায়েবি মামলা দেয়া আছে। ইলেকশনের আগে এলাকায় থাকলে বা আসার ট্রাই করলেই জেলে ঢুুকায়া দিবে। এখনো পুলিশের মেইন কাজ হইতেছে, ভাল্লাতেছে না, যাই, দুইটা বিএনপি’র লোক ধইরা নিয়া আসি! মানে, জুলুম করা তো ফান-ই কিছুটা! [আবু-গরিব জেলেখানায় আম্রিকান সৈন্যরা করতো না! এইরকমই অনেকটা।]

তো, বিএনপি সেন্ট্রালি কিছু না করুক, যাদের সাথে এই অন্যায় হইতেছে, তারা কি ছাইড়া দিবে! এই অবৈধ-সরকার যদি ফল করে সবচে আগে দেশ থিকা পালাবে কিছু সরকারি আমলা, পুলিশ আর আদালতের লোকজন। এই কারণে নয়া বাকশাল চাইলেও ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন করতে পারবে না। অই অবস্থাটাই নাই বাংলাদেশে। এই সরকারি লোকজন জান দিয়া হইলেও ফেয়ার ইলেকশন করতে দিবে না।
কিন্তু ঘটনা খালি একটুকই না।

আমি মনে করি, এইবারও যদি পাতানো-ইলেকশন হয়, এই ফোর্সটাই ক্ষমতাতে থাকতে থাকে, তাইলে জুলুমের অবস্থাটা আরো ফেরোশাস তো হবেই, কিন্তু অনেক বেশি ‘নরমাল’ এবং ‘নিরব’ একটা ঘটনা হয়া উঠবে। যেইটা বিএনপি’র রিভেঞ্জের সম্ভাবনার চাইতেও হাজার গুণ বাজে ঘটনা হবে একটা।

এইরকম একটা কথা দেখতেছি যে, চাইলেই সবাই খারাপ-বিহেভ করতে পারে! কিন্তু সবাই করে না। তো, আমার এক্সপেরিয়েন্স থিকা এইটা সত্যি কথা মনেহয় না।

শুধুমাত্র পাওয়ারফুল লোকেরাই বাজে-বিহেভ করতে পারে, এবং সেইটা করতে পারে তার চাইতে ক্ষমতায় দুর্বল এবং গরিব লোকের সাথে। আমি অনেক লোকরে দেখছি যারা অফিসের বস’রে তেল মারতে মারতে শেষ, কিন্তু যখনই তার আন্ডারে কাজ করা লোকজনের লগে কথা কইতেছে তখন চেহারা পুরা অন্যরকম। সবাই খারাপ-বিহেভ করতে পারে কি পারে না অই অপশন শুধুমাত্র পাওয়ারফুল লোকেরই আছে আমাদের সমাজে। যে চাইলে আমি রিকশাঅলারে, হোটেলের বয়রে, অফিসের পিয়নরে দুইটা ঝাড়ি মারতে পারি।

এবং আমি যে তারপরও এইটা করি না, ক্ষমতা থাকার পরেও তারে দুই-চাইরটা চড়-থাপ্পড় মারি না, এইটারে আমাদের কনটেক্সটে ‘উদারতা’, ‘মহত্ব’ হিসাবে তো ভাবা যাইতে পারে-ই। কিন্তু ভালো কোন জিনিস না আর কি!

নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট

একবার আমি বলছিলাম যে, বড় হইয়া আমি Johnny Harris হইতে চাই। মানে, উনার ভিডিও-নিউজগুলা আমি সিরিয়াসলি ফলো করি। নিউক্লিয়ার এনার্জি নিয়া করা উনার রিসেন্ট ভিডিওটা দেইখা তিনটা জিনিস মনে হইলো।

এক, ফেয়ার-ফেক্টর বা ডর’টারে উনারা একটু আন্ডারমাইনই করছেন মনে হইছে। মানে, ডর একটা বড় ঘটনা তো। নর্থ-কোরিয়ার মানুশ-জন যেই আম্রিকান টেরর দেখছে, সেইটারে তারা এখনো ডরানোর কথা তো! মানে, আমি মনে করি, কোরিয়ান যুদ্ধের সময় আম্রিকান টেররের ঘটনাটা না ঘটলে নর্থ-কোরিয়ার মানুশ-জন এতোটা সাবমিসিভ হইতে পারতো না। মানে, পারসোনাল ট্রমা যত বড় জিনিস, সোশাল বা কালেক্টিভ ট্রমা তার চাইতে অনেক বড় ব্যাপার তো। তো, চেরোনেবিল এবং ফুকোশিমা’র একটা ক্রিটিকাল ফেক্টর নিউক্লিয়ার পাওয়ারের জায়গাটাতে।

মানে, এইটার টেকনোলজিকাল সমস্যার সমাধান হয়া গেছে – এইটা মেজর ঘটনা না বইলাই মনে হইছে আমার কাছে। ফসিল-ফুয়েলের [কয়লা, তেল, গ্যাসের] চাইতে যে এনভায়রনমেন্ট-ফ্রেন্ডলি এইটা তো মোটামুটি এগ্রিডই সব জায়গায়। বরং কতোটা ভয়ের ঘটনা আসলে – এর একটা ফুল পিকচার দরকার। যেইটা কিছুটা ওভারলুকডই হইছে, এই ডরের পারসপেক্টিভ থিকা।

সেকেন্ড ঘটনা হইতেছে, কোন দেশে কতগুলা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে, এইটা দেখতে গিয়া দেখলাম ফ্রান্সই এইটা সবচে বেশি ইউজ করতেছে; কিন্তু নাম্বার তো আম্রিকাতেই বেশি, চীন, জাপানও আগায়া আছে। অনেক দেশই বন্ধ কইরা দিতেছে, অনেকে টুকটাক শুরুও করতেছে। কিন্তু যারাই করতেছে, তাদের সবাই মোটামুটি ‘ডেভলাপ-কান্ট্রি’। গরিব-দেশে এই জিনিস নাই। কেন নাই? এই কোশ্চেনটারে এড্রেস করা হয় নাই মোটামুটি।

থার্ড জিনিসটা একটা কিউরিসিটিই আসলে। Celo Abram বলতেছিল, জাপান মোটামুটি কিছু জিনিস আবিষ্কার করতেছে নিউক্লিয়ার ওয়েস্ট মেনেজমেন্টের ব্যাপারে। এবং সম্ভবত ফুকোশিমা’র ঘটনার পরেও অরা নিউক্লিয়ার এনার্জি এক্সপ্লোর করার জায়গা থিকা সইরা আসে নাই। তো, বাংলাদেশের রূপপুর আবার জাপানি এক্সপেরিমেন্টের ল্যাব হয়া উঠতে পারে কিনা? মানে, একটা সময় আম্রিকান অষুধের হিউম্যান ল্যাব যেমন ছিল গরিব-দেশের মানুশেরা, এইরকম এখন রিস্কি টেকনোলজিকাল এক্সপেরিমেন্টের জন্যও কিছু গরিব-দেশ তো মেবি দরকার।… কিন্তু এইটা একটা পিওর ইমাজিনেশনই আমার দিক থিকা।

ভিডিও’র লিংক:
[ youtube.com/watch?v=QzTgZ6kOEM8]

মে ১৪, ২০২৩

নেচারাল ডিজাস্টারের প্রতি সাজেশন

ঢাকায় বিস্টি হয় নাই বইলা সেন্টমার্টিনে ক্ষতি কম হইছে – পাবলিক পারসেপশনের এই পেটার্ন নিয়া Zuba Rahman-এর অনুমানটা সত্যি বইলাই মনেহয় আমার কাছে।

যেইরকম ঢাকায় লোডশেডিং কম হয় বইলা মনে হইতে থাকে দেশে কারেন্টের অবস্থা এতোটা খারাপ না তো আসলে। সরকার-বিরোধী কিছু প্রপাগান্ডাও মনেহয় আছে! 🙂 মানে, আপনি নিজে যদি ভালো অবস্থায় থাকেন, অন্যায়টা যতক্ষণ না আপনার সাথে ঘটতেছে ততক্ষণ পর্যন্ত ‘নিরেপক্ষ’ থাকাটা খালি সহজ না, ‘যৌক্তিক’ একটা পজিশন বইলাও মনে হইতে থাকে তো!

আর আমাদের ফেসবুক নিউজফিডের রিয়ালিটি গ্রেটার এক্সটেন্ডে মিডিয়া-রিয়ালিটি + ঢাকা-কেন্দ্রিক স্নবারিটারেই ফলো করে। তো, সেই হিসাবে যে কোন নেচারাল ডিজাস্টারেরই ‘মান-সম্মান’ পাইতে হইলে উচিত হবে পরেরবার ঢাকা-বেইজড কোন কিছু করার টার্গেট করা। এটলিস্ট গাজীপুর, নারায়ারণগঞ্জ, নরসিংদী তো হওয়াই লাগবে! 😛

মে ১৫, ২০২৩

লাঠিয়াল ফারুক: ইন সিনেমা এন্ড ইন রিয়েল-লাইফ

একজন মানুশ মারা যাওয়ার পরে তার কোন কাজটা দিয়া তারে মনে রাখবো আমরা? এইটা ঠিক টাফ কোন ডিলেমা না, বরং এইরকম মনে-করার বা মনে-রাখার কিছু প্যাটার্ন আসলে আছে।

যেমন, আমার অজারভেশন হইতেছে, বেটা-মানুশের ব্যাপারে তার পাবলিক-লাইফরেই প্রায়োরিটি দেয়া হয় বেশি; যে সমাজে কি কি কাজ উনি করছেন, তার সিগনিফিকেন্স কি ছিল।… পারসোনাল লাইফ মেটার করে-না না, অইটা সেকেন্ডারি ঘটনাই বেশিরভাগ সময়, যদি না বড় কোন অন্যায় উনি কইরা থাকেন, পারসোনাল রিলেশনে, কারো সাথে।

কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে একইরকম না, পারসোনাল-লাইফটারেই প্রায়োরিটি দেয়া হয় বেশি, উনি কতো লক্ষী-মেয়ে, সার্পোটিভ-বইন, কেয়ারিং-ওয়াইফ, ভালো-মা এবং ইস্মার্ট দাদী-নানী ছিলেন। মানে, সোশাল কন্ট্রিবিউশনের জায়গাগুলারে যে খেয়াল করা হয় না – তা না, কিন্তু এইরকম উদাহারণ তো কমই। নায়িকা, লেখিকা, ইন্টেলেকচুয়াল, এক্টিভিস্ট হিসাবে যারা আছেন, উনাদেরকে বাতিল কইরা দেয়া হয় – ব্যাপারটা এইরকম না, কিন্তু রিকগনিশনের জায়গাগুলা কমই।

এইটা জাস্ট গ্রসলি বলা। একসপেশন তো আছেই।

২.
কিন্তু যারা পাবলিক-ফিগার, তারা ভালো-খারাপ অনেক কাজই তো করেন। তাদের খারাপ-কাজগুলাই কি মনে রাখবো আমরা, ভালো-কাজের কথা কি বলবো না? বা খালি ভালো-কাজের কথাই বলবো, খারাপ-কাজের কথা উঠলে চুপ কইরা থাকবো?

এইখানেও আমার অবজারভেশন হইতেছে সার্টেন ক্রাইটেরিয়া এফেক্টিভ থাকে। ধরেন, একজন ভালো-কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, আর্টিস্ট… তার আর্ট যতই ভালো হোক, তার ইমিডিয়েট পলিটিকাল পজিশনটারেই আমরা বিবেচনায় রাখি। যেমন ধরেন, হাইডেগার, উনার চিন্তার কন্ট্রিবিউশনের চাইতে উনার পলিটিকাল পজিশন ইম্পর্টেন্ট হয়া উঠছিল তো একটা সময়ে। বা এজরা পাউন্ড। বাঁইচা থাকতে খুবই বাজে-অবস্থায় তো ছিলেনই, মারা-যাওয়ার পরেও উনারে মাফ করাটা কঠিনই হয় অনেকের। মানে, আর্টের বিচারের চাইতে আর্টিস্টের পলিটিকাল-পজিশনই ইমিডিয়েট কন্সিডারেশনের ঘটনা।

কিন্তু একজন আর্টিস্টের বিচার এইখানেই শেষ না, তার আল্টিমেট বিচার আসলে কালচারাল বিচারটাই। মানে, যেই ফিল্ডে উনি ছিলেন, সেই ফিল্ডে উনার কি সিগনিফিকেন্স বা কি ভ্যালু উনি অ্যাড করছেন। কিন্তু এইটা বুঝার জন্য ওয়েট করতে হয়। অনেকের অই গুড-লাক থাকে না, রিলিভেন্ট হয়া থাকতে পারেন না। কিন্তু পারেন কি পারেন না – সেইটা আসলে কয়েকটা জেনারেশনের পরের ঘটনাই। [তবে তার আর্টিস্টিক কন্ট্রিবিউশন আর পলিটিকাল পজিশন এতোটা আলাদা আলাদা ঘটনা না, বরং সময়ের সাথে সাথে সেই লিংকগুলা স্পষ্টই হইতে থাকে কোন না কোনভাবে।]

৩.
তো, নায়ক ফারুক’রে কিভাবে মনে রাখবো আমরা?

কবরী মারা-যাওয়ার পরে উনারে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দিতে রাজি ছিলাম আমি। কিন্তু ফারুক এই ডাউট ডিজার্ভ করেন বইলা আমার মনেহয় না। উনি জাইনা-শুইনাই জালিমের দলে নাম লেখাইছিলেন। আমার ধারণা, শেষ বয়সে মানুশের একটা রিগকনিশনের ক্রেভিং তৈরি হয়। সবাই সেইটা এড়াইতে পারেন না।

খান আতাউর রহমান একবার এফডিসি-তে রিকশা নিয়া ঢুকতে নেয়ার সময় এফডিসির দারোয়ান তারে ঢুকতে দেয় নাই, কইছিল, এমডি’র আদেশ – রিকশা নিয়া কেউ ভিতরে ঢুকতে পারবে না; তখন উনি খেইপা গেছিলেন, চড়-থাপ্পড়ও মারছিলেন মনেহয়, বলছিলেন, তোর এমডি’র নাম কেউ মনে রাখবে না, কিন্তু বাংলাদেশের মানুশ খান আতা’রে মনে রাখবে। এই কনফিডেন্স মেবি ফারুকের কমই ছিল। 🙁 থাকলে, জালিমের দলে নাম লেখাইতে হয়তো একটু হেসিটেড করতে পারতেন। এই কারণে একজন আর্টিস্টের (সিউডো শো-অফ না, বরং) সেলফ-কনফিডেন্স এবং আর্টিস্টিক-সেন্স জরুরি একটা জিনিস। যেইটা তার পলিটিকাল-পজিশনের জায়গাটাতে কন্ট্রিবিউট করতে পারে অনেক বেশি।

নায়ক ফারুক খুব ক্রুশিয়াল মোমেন্টে বাংলাদেশি-সিনেমার নায়ক হওয়ার সুযোগ পাইছিলেন, তখন বাংলাদেশি-সিনেমা একটা হাই-টাইম পার করতেছে। কিন্তু আন-ফরচুনেটলি একজন পপুলার হিরো হিসাবে কোন রিমার্কেবল সিগনেচার ক্রিয়েট করতে পারেন নাই। একজন আলা-ভোলা গেরামের জুয়ান পোলা থিকা শহরের সৎ-মাস্তানের রোলেই উনারে লোকেট করা যাইতো বেশি। মেবি কবরী ও ববিতার নায়ক হিসাবেই উনারে বেশি মনে রাখবো আমরা। এর বাইরে উনার যদি কোন সিগনিফিকেন্স থাকে, সময় সেইটা বইলা দিবে। কিন্তু আপাতত, একটা সময়ের নস্টালজিয়া হিসাবেই উনারে মনে রাখার কথা আমাদের।

কিন্তু সেইটা উনার পলিটিকাল-পজিশনটারে কতটুক ছাপায়া উঠতে পারবে – সেইটা একটা কোশ্চেনই এখনো। যার বিচার মেবি আমাদের হাতে নাই এতোটা। কারণ জমিদারের লাঠিয়ালদেরকে লাঠিয়াল হিসাবেই মনে রাখতে হবে আমাদের। [এইখানে মনে রাখা দরকার ‘সারেং বউ’ কিংবা ‘সুজন সখী’র চাইতে ‘লাঠিয়াল’-ই অনেক বেশি ফারুকের সিনেমা আসলে। রিয়েল-লাইফে যেইখানে উনার রোল’টা রিভার্স একটা ঘটনাই, সিনেমার তুলনায়।]

এইখানে ভুল করার সুযোগ আসলে আমাদের নাই। যদি বাংলাদেশে কোনদিন বাকশালি-জুলুমের শেষ হয়, সেইদিন মেবি ফারুকের সিনেমাটিক এচিভমেন্ট নিয়া আরো কথা বলতে পারবো আমরা।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করুক!

মে ১৭, ২০২৩

আমার একটা ধারণা হইতেছে যে, চরমোনাই বা ইসলামি দলগুলারে দিয়া ‘গৃহপালিত বিরোধীদল’ তৈরি করতে পারবে না নয়া বাকশাল, গণ অধিকার পরিষদ-ই হইতেছে শেষ ভরসা আসলে।

এইটা মনে করার কারণ হইতেছে, গতবারের ইলেকশনে কামাল আহমেদের প্রেজেন্স; মানে, দেশে ডেমোক্রেসি আছে, ঠিকঠাক ইলেকশন হইতেছে এইটা দেখানোর জন্য একটা (হাবে-ভাবে হইলেও) সেকুলার-দল দরকার। ‘ইসলামি’ দলগুলা দিয়া এইটা পুরাপুরি শো করতে পারাটা, রিয়ালিটি হিসাবে ‘গ্রহণযোগ্য’ কইরা তোলাটা টাফ। জাতীয় পার্টি দিয়া এইটা হবে না আর। উনারা মারা গেছেন। বাম দলগুলা তো কখনো জীবিত ছিলই না। নুরুল হক নুরু ছাড়া আর কোন অপশন আসলে নাই আওমিলিগের সামনে। আর এইটা গণ অধিকার পরিষদের জন্যও পলিটিকালি ইমিডিয়েট গেইনের একটা জিনিস হইতে পারার কথা, এইরকমও ভাবতে পারেন উনারা।

কিন্তু দুইটা ঘটনা আছে এইখানে। এক হইতেছে, গতবারের মতো সুন্দর কইরা ম্যানেজ কইরাও লাভ নাই! নতুন টেকনিক দরকার! এইরকম একটা ভাইব পাওয়া যাইতেছে যে, ইউরোপ-আম্রিকা তো মানবেই না, দেশের মানুশের সামনেও দুই নাম্বারিটা ভালোভাবে প্রেজেন্টেবল কইরা তোলা যাইতেছে না এখন। বাকশালি-মিডিয়া যে একটা গোলেবয়লসের দুনিয়া (গু-এর দুনিয়া আসলে) তৈরি কইরা রাখছে – এইটারে না-বুঝা মতো নাদান হয়া আর থাকা যাইতেছে না, ফেসবুক-টেসবুকের নিউজফিড টেম্পারিং কইরাও।

যার ফলে, অই জায়গাটারে ‘মেরামত’ করতে পারাটা জরুরি, একটা ‘বিরোধদল’ বানানোর চাইতেও। অইটা না হইলে গণ অধিকার পরিষদরে ‘বিরোধীদল’ বানায়া তো লাভ নাই কোন! নুরুল হক নুরু’রও পলিটিকাল কেরিয়ার শেষ হয়া যাবে আসলে তখন। এই রিস্কও আছে।

সেকেন্ড হইতেছে, আওমিলিগ যে বাটপারদের দল সেইটা সবার সবসময় মনে রাখা উচিত। এরা বেঈমানি করবেই। যেইটাই এগ্রি করুক, পরে সেইটা ফুলফিল করবে না। যদি বলে ৫০টা সিট দিবে গণ অধিকার পরিষদরে, ২০-২৫টার বেশি ছাড় দিবে না আসলে। এমনকি শেষে গিয়া দেখা যাবে ১০-১৫টা সিট দিতেছে। মানে, আপনি যখন একবার চোরের লগে নাম লেখাইতেছেন, তারপরে চুরির ভাগ কেন কম দিতেছে – সেই কমপ্লেইন তো করতে পারবেন না! করলেও সেইটা কোনকিছু মিন করবে না।

ডোন্ট গেট মি রং, আমি বলতেছি না যে, গণ অধিকার পরিষদ এই কাজ করবে। কিন্তু এখনকার সিচুয়েশনে উনাদের চাইতে ভালো আর কোন অপশন যে নাই – এইটা চিন্তা না করতে রাজি না-হওয়াটাও কোন কাজের কাজ হবে না মনেহয়।

জাস্ট একটা কশাস (cautious) থাকার পয়েন্ট হিসাবে মনে হইলো আর কি।

মে ১৮, ২০২৩

সামনের ইলেকশনে নয়া বাকশাল যা করার তা তো করবেই; কিন্তু মেইন পারপাসটা সার্ভ করবে আসলে যারা “গৃহপালিত বিরোধীদল” হইতে রাজি হবে। আওমি লিগের কাছে, বামদল ও সেকুলারদের কাছে দেশের মানুশের কোন এক্সপেক্টশন নাই। কিন্তু যারা (আমার ধারণা, চরমোনাই, জামাতে ইসলামের একটা গ্রুপ এবং গন অধিকার পরিষদ) আপাত-বিরোধীতার মুখোশ পইড়া পিপলের লগে বেঈমানি’টা করবে, তাদেরকেই ইতিহাসে নতুন-মীরজাফর হিসাবে মনে রাখবো আমরা।

সামনের ইলেকশনেই মেবি বাংলাদেশের পলিটিকাল সিস্টেমের কবরটা পারমানেন্ট হবে। মানে, কবর’টা তো আগেই খোঁড়া হইছে, বাংলাদেশের লাশও অইখানে দাফন করা হইছে। (রেজারেকশনের আশা দেখি না আর।) এখন কবরটা বাঁধাই কইরা পারমানেন্ট করা হবে।

নয়া বাকশাল যা করার তা তো করবেই; কিন্তু মেইন পারপাসটা সার্ভ করবে আসলে যারা “গৃহপালিত বিরোধীদল” হইতে রাজি হবে। আওমি লিগের কাছে, বামদল ও সেকুলারদের কাছে দেশের মানুশের কোন এক্সপেক্টশন নাই। কিন্তু যারা (আমার ধারণা, চরমোনাই, জামাতে ইসলামের একটা গ্রুপ এবং গন অধিকার পরিষদ) আপাত-বিরোধীতার মুখোশ পইড়া পিপলের লগে বেঈমানি’টা করবে, তাদেরকেই ইতিহাসে নতুন-মীরজাফর হিসাবে মনে রাখবো আমরা।

সিস্টেমে ঢুইকা সিস্টেম চেইঞ্জ করতে চাওয়া বিপ্লবীদেরকে যেইরকম দালাল হিসাবে চিনতে পারি আমরা, যদিও একটু সময় লাগে আমাদের; একইরকমভাবে নয়া বাকশালের আন্ডারে যারা ইলেকশন-নাটকে পারফর্ম করবে, তাদের মোটিভও একই। এতে কইরা তারা পাওয়ারফুল হয়া উঠবে না, বরং গোলামির দাসখত দিয়া তারা পিপলের লগে বিট্রেই করবে আসলে।

আর এইভাবেই মেবি বাংলাদেশের পলিটিকাল সিস্টেমের কবর’টা ইট-সিমেন্ট দিয়া সুন্দর কইরা পাকা করার বন্দোবস্ত হবে।

আমি তো চাই আমার এই কথা ভুল হোক! কিন্তু স্যাডলি চান্স তো আসলে কমই।

মে ২০, ২০২৩

জিনিসটা আরো আগেই মনে হইছিল, দুয়েকজনরে বলছিও, কিন্তু সতজিৎ রায়ের বানানো “সুকুমার রায়” ডকুমেন্টারিটার ফার্স্ট লাইনটা শুইনা আরেকবার মনে হইলো। সুকুমার রায়ের কয়েকটা ড্রইং দেখানোর পরে পয়লা কথা হইতেছে, খুব কম বাঙালিই পাওয়া যাবে, যারা এই ছবিগুলা চিনেন না!

মানে, হোয়াট দ্য ফাক! বাংলা-ভাষায় কথা বলেন এইরকম ১% লোকও এই ড্রইংগুলা চিনার কথা না! এখনকার জেনারেশনের কথা কইতেছি না, ধরেন ১৯৬০-৭০ সালেই কতোজন ‘শিক্ষিত’ ছিলেন – ১০%, ২০%? আর তাদের সবাই কি সুকুমার রায় পড়ছেন? এখনকার জেনারেশনে তো ‘শিক্ষিত’ লোকজনেরও সুকুমার রায় পড়ার দরকার পড়ে না তেমন। কিন্তু ঘটনা এইটা না, ঘটনা হইতেছে অই ৫% বা ১০% মানুশেরই “সব মানুশ” মনে করার ব্যাপারটা।

বাংলাদেশে এখন অনেকেই দেখছি খুশি যে, আরে, সবকিছু অনলাইনে করা যায়, অনলাইনে পাওয়া যায় – এইরকম একটা ‘ডিজিটাল’ ‘ইস্মার্ট’ ভাইবের ভিতরে আছেন। ইভেন ইফ ‘সবকিছু’ [মানে, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এনআইডি…] যদি অনলাইনে পাওয়াও যায়, সেইটা এভেইল করতে পারে কতো পারসেন্ট মানুশ? ৫%-১০% লোকের বছরে দুয়েকবার বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার চাইতে যারা লেবার হিসাবে দেশের বাইরে যাইতে চান, তাদের নিডটাই তো বেশি হওয়ার কথা, পাসপোর্টের। উনাদের কি অনলাইন একসেস আছে? ল্যাপটপ, কম্পিউটার নিয়া কি বইসা থাকেন? নাকি উনাদের জন্য আরেকটা বেরিয়ার ক্রিয়েট করা হইলো আসলে?

আমার আন্দাজ হইতেছে, এই সতজিৎ রায়ের ডকুমেন্টারির পয়লা কথার মতো, উনাদেরকে তো মানুশ বইলা আমরা মনে করতেই রাজি না! যে সুকুমার রায়ের নাম জানে না সে তো সুকুমার রায়’রে নিয়া বানানো ডকুমেন্টারি দেখতেই বসবে না! কিন্তু যে কোন সরকারি-সার্ভিস তো আর্ট-কালচারের ঘটনা না যে চাইলে দেখবো, না চাইলে দেখবো না।

এখন যে কোন ধরণের অটোমাইজেশনের এগেনেস্টে আমি না, কিন্তু যেইখানে দেশের মানুশের একসেসই নাই, সেইখানে এইরকমের সার্ভিসগুলা সার্টেন প্রিভিলেজড গ্রুপরে টার্গেট কইরা করা না, বরং যাদের কম্পিউটার নাই তাদেরকে মানুশ বইলা স্বীকার করতে না চাওয়ারই ঘটনা। এইরকম একটা এজাম্পশন যদি শুরু থিকাই না নেয়া থাকে, এই কাজগুলা করা পসিবল না আসলে।

আর এর বাইরে, আইটি প্রজেক্টের নামে চুরি-দারির কথা না হয় না-ই কইলাম…

Working: What we do all day
Netflix Documentary

ডকুমেন্টারি হিসাবে তো এভারেজের চাইতেও একটু বাজে-ই হবে আমার রেটিং। বারাক ওবামা’রে বেচছে আসলে এইখানে। এই লিমিটেড সিরিজ’টার আরো দুইটা সিজন আসার কথা, কিন্তু এইটা দেইখা বোঝা গেছে আসলে বাকি দুইটাও লিবারাল নেরেটিভটারেই জাস্টিফাই করার মেক্সিমাম ট্রাইটা করতে থাকবে।

তারপরও তিনটা জিনিসের কথা এইখানে বইলা রাখা যাইতে পারে। পয়লা জিনিস যেইটা মনে হইছে, চাকরি জিনিসটা কবে থিকা শুরু হইছে আসলে? মানে, বাংলাদেশের কনটেক্সটে যদি দেখেন খুব বেশি হইলে তিন-চাইরটা জেনারেশন আগে ‘চাকরি-করা’ লোকজন পাইবেন। ১৫০-২০০ বছরের ঘটনা এইটা – চাকরি করা, কেরিয়ার করা… তার আগে তো ইকনোমিক স্ট্রাকচারটা ইনকামের এইরকম ছিল না। মিডল-ক্লাস হইতেছে মোস্টলি একটা আম্রিকান ইনোভেশনই। (এতোটা ইউরোপিয়ানও না মেবি।)

এইখানে ১% পিপলের হাতে ৯৯% সম্পত্তি আর ৯৯% পিপলের হাতে ১% সম্পত্তির বাইরে ফর্মেশনটা বরং এইরকমেরই হওয়ার কথা: ১% – ৯% – ৯০% (পিপল) আর ৯০% – ৯% – ১% (এসেট); যেইটা ডকুমেন্টারিটাতে বলা হইছে।

এখন এই মিডল-ক্লাসটা ভেনিশ হয়া যাইতেছে বইলা আওয়াজ উঠছে; তো, আমার ধারণা, ফর্মেশনটা চেইঞ্জ হইতেছে আসলে। যেইটা হইতেছে আমার সেকেন্ড পয়েন্ট’টা। একটা নেশনাল বুর্জোয়া এলিট-ক্লাসের জায়গায় একটা গ্লোবাল কালচারাল-ক্লাস আমরা পাইতেছি এখন। যেইটার বেইজ হিসাবে টাকা-পয়সা নাই না, বরং অন্য কালচারাল-ট্রেইটগুলা এইখানে ইম্পর্টেন্ট।

পুরান মিডল-ক্লাস এখন আসলে গরিব।

থার্ড ঘটনা হইতেছে, মিল্টন ফ্রিডম্যান। উনার দেখানো পথেই এখন চলতেছে কোম্পানিগুলা যে, বিজনেস করার মেইন পারপাস হইতেছে প্রফিট করা, এবং শেয়ারহোল্ডারদের ভ্যালু মেক্সিমাইজ করা। তবে আমি মোটামুটি শিওর, এই নিয়ম যারা মাইনা চলেন তারা অলরেডি হোগা-মারা খাইতেছেন। স্টার্ট-আপ’গুলার উদ্দেশ্য দেখবেন সার্টেন সোশাল-নিড ফুলফিল করা। মানে, প্রফিট করা লাগবে-না না, প্রফিট উইল ফলো। আর যেহেতু বিজনেস এনভায়রনমেন্ট চেইঞ্জ হইতেছে, এর সোশাল ইমপেক্টও পড়তেছে; ইকনোমিক ক্লাসটা রি-স্ট্রাকচারড হইতেছে।

তো, এই জিনিসগুলা ডকুমেন্টারিটাতে মেইন আরগুমেন্ট হিসাবে নাই, ইন্ডিভিজুয়ালরে সেন্টার কইরা ডেভোলাপ করতে চাইছে নেরেটিভটা, যেইটা মোর এনগেইজিং মনে নাই আমার কাছে, বরং সিউডো ব্যাপারই মনে হইছে আর কি!

Leave a Reply