নোটস: অক্টোবর, ২০২১ [পার্ট ৩]

অক্টোবর ২১, ২০২১

কয়দিন আগে বলছিলাম, নয়া বাকশাল টিইকা থাকে, অপারেট করে একটা ‘গৃহপালিত বিরোধীদল’, বি-টিম বা কিংস পার্টিগুলা দিয়া ‘প্রতিবাদ’ করানোর ভিতর দিয়া। (পোস্ট’টা পাইলে কমেন্টে লিংক দিতেছি, পরে।)

এই কারণে আমরা যারা ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ চাই, আমাদের কাজ কোনটা ‘অরিজিনাল’ বিরোধীদল সেই সার্টিফিকেট দেয়া না; বরং যে কোন পলিটিক্যাল ন্যারেটিভ, যেইটা বাকশালি জুলুমরে আন-কোশ্চেনড রাখে, ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি দেয়, তার একক ক্ষমতার জায়গাটারে শক্তিশালী কইরা তুলতে থাকে, সেইসব জায়গাগুলারে লোকেট করা।

আর আমি মনে করি, এই কাজ কাউরে পারসোনালি শয়তান বানায়া (যেইটা আসলে বাকশালি তরিকা), গালি-গালাজ কইরা, পুপলারিটির জায়গা থিকা করা যাবে না। (ব্যাপারটা নরম-কোমল সাপের মতন ‘অহিংস’ হওয়ার ঘটনা না।…)

নন-ইমোশনাল বা নন-এনগেইজিং কোন ঘটনা না, ফ্যাশনেবল একসাইটিং কোন বিপ্লব করা না, বরং খুবই ফোকাসড, একটানা (অনেকটা একজন রাইটারের লেখতে থাকার মতো), বোরিং পলিটিক্যাল একটা কাজ।

(আরেকটা জিনিস হইতেছে, কন্সপিরেসি থিওরি যদি সত্যিও হয় সেইটা কন্সপিরেসি থিওরি-ই, পলিটিক্স না – এই সত্যি কথাটাও আমাদেরকে বুঝতে পারতে হবে। যে কোন রাজনৈতিক চিন্তা পিপল’রে এর সেন্টার পয়েন্ট কইরা তুলতে পারে না, সেইটা পলিটিক্স হয়া উঠতে পারে না। দিনের পর দিন পলিটিক্সরে যে আমরা কন্সপিরেসি থিওরির ভিতরে রিডিউস কইরা আসতেছি, আজকের রাজনীতি-শূন্যতা অই ইন্টেলেকচুয়ালিটিরও রেজাল্ট একটা।…)

#########

এনজিও কি ভালো? এই নিয়া কিছু কনফিউশন আছে। উত্তরগুলাও আমার ধারণা মিডল-গ্রাউন্ডেই আসে বেশিরভাগ সময়। যে, গরিবের রক্ত শুইষা খায়, ঘরবাড়ির টিনের চাল খুইলা নিয়া যায় এর এগেনেস্টে না, ইকনোমিক কন্ট্রিবিউশন তো কিছু আছেই। বা এনজিও না থাকলে হিউম্যান ওয়েলফেয়ার, বেসিক হেলথকেয়ার এতদূর পর্যন্ত আগাইতে পারতো না। মেয়েদেরকে নিয়া বাড়াবাড়ি ভার্সেস উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট তর্ক থাকলেও ইস্যু হিসাবে আলাপের জিনিস হয়া উঠতে পারতো না এতোটা। এইরকমের একটা অবস্থা।

তো, এইরকমের জায়গা থিকা দেখাটা হইতেছে ইমপ্যাক্টের বেসিসে এক্ট’রে সার্পোট করা বা না-করা। (এইখানে চায়নার আফিমের কথা মনে হইলো ১৮’শ শতকের; যে ট্যাক্স তো আইতেছে, লিগালাইজ করতে কি সমস্যা!) তো, এইটা একটা বিচার অবশ্যই, কিন্তু এইটাই একমাত্র বিচার হইতে পারে না।

বাংলাদেশে এনজিও’র পলিটিক্যাল কন্ট্রিবিউশন হইতেছে, যে কোন সোশ্যাল কজ’রে তার পলিটিক্যাল রুট থিকা বিচ্ছিন্ন করতে পারা। ধরেন, লোকজন খাইতে পাইতেছেন না, এইটার প্রাইমারি সমস্যা হইতেছে কি খাইতে হবে লোকজন তো সেইটাই জানে না! বা লোকজন গরিব, আল্ট্রা-পুওর, তার মানে সমাজের ইকনোমিক্যাল এক্টিভিটিগুলার লগে তাদের তো কোস কানেকশন নাই! এইরকম।

মানে, জিনিসগুলা যে সত্যি না – তা না, বরং সমস্যার নন-পলিটিক্যাল আসপেক্টগুলা নিয়া উনারা কাজ করেন – এইটা বললেও আসলে জায়গাটারে ভুলভাবেই বলা হবে; উনারা পলিটিক্যাল কজ’গুলারে আন্ডারমাইন করেন, লুকায়া ফেলেন, সময়ে সময়ে টাকা-পয়সা দিয়া চাপায়া রাখেন, যেন কোন পলিটিক্যাল কনশাসনেস তৈরি হইতে না পারে। এইটারে এই কারণে ‘এনজিওপণা’ বলি আমরা।

মানে, সোশ্যাল স্পেইসটারে মোর অ্যান্ড মোর নন-পলিটিক্যাল কইরা তোলা এনজিও’দের মোস্ট সিগনিফিকেন্ট একটা কাজ। যেইটা উইথাউট এনি মিডল গ্রাউন্ড আমাদের বলতে পারা দরকার যে, এইটা খারাপ কাজ।

গর্ভমেন্টেরও ডর দেখবেন এই জায়গাটাতেই যে, এনজিওগুলা আবার পলিটিক্যাল কাজকাম না শুরু কইরা দেয়! এই কারণে সবসময় একটা চাপের উপ্রে রাখে। এনজিও’রা সাবধান থাকে। একটা মিচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গা থিকা জিনিসটা এফেক্টিভ থাকতে পারে।…

এখন এর যে ইমপ্যাক্ট হইছে, যেকোন সোশ্যাল-ওয়েলফেয়ার’রে নন-পলিটিক্যাল এবং এনজিও’র কাজ বইলা মনে হইতে থাকে আমাদের। মানে, কোন সামাজিক কাজকামে পার্টিসিপেট করা না, বরং ক্ষমতার জায়গাটা নিয়া কাড়াকাড়ি করাই যে পলিটিক্সের কাজ – এই জিনিসটারে সাকসেসফুললি এস্টাবলিশ করা গেছে, এনজিও-ওয়ার্কগুলার ভিতর দিয়া।

আওয়ামীলীগ-বিএনপি মিইলা, মানে, স্থানীয় পলিটিক্যাল লোকজনের ‘নেতৃত্বে এবং ঐকমত্যের’ বেসিসে পুকুরের কচুরিপণা সাফ করা হইতেছে, এইরকম জিনিস আমরা দেখছি। এখন এই পলিটিক্যাল-কালচার সমাজে নাই না, বরং ধ্বংস যে করা হইছে সেইখানে বাকশালি রাজনীতির বাইরে ‘এনজিও-গিরি’ করার একটা ধারণাও এফেক্টিভ আছে বইলা আমার মনেহয়।

অথচ পলিটিক্যালি সমাজ-সংগঠনগুলারে মোটামুটি কবর দেয়ার যেই ঘটনাটা বাংলাদেশে ঘটছে, সেইটাই হইতেছে: এনজিও-ওয়ার্ক। এই জিনিসটা নিয়া পলিটিক্যাল জায়গাগুলাতেও আলাপ-টালাপ মনেহয় কমই অনেক। ইনিশিয়াল ফেইজে কিছু কথাবার্তা হইলেও এখন মনেহয় আমরা মাইনা নিতে পারছি যে, ব্যাপারগুলা তো এইরকমই। 🙂

#########

আমার ছোট মেয়ে ক্লাস এইটে পড়ে। কোন জিনিস বুঝতে না পারলে মা’রে বলে। বড় বোনরে বলে। আমারে বলে না। তো, একটা অংক শে করতে পারতেছিল না। আমি কইলাম, আমি দেখায়া দেই, আমি পারবো তো! কিন্তু শে রাজি হইতেছিল না। পরে না পাইরা বললো, ঠিকাছে, অংকটা কেমনে হবে, বলো। বেশ ঝামেলা-টামেলা করার পরে শেষমেশ অংক’টা করতে পারলাম আমি।

আমি তো ব্যাপক খুশি। তারপরে বুঝাইতে লাগলাম নিয়ম-কানুন, কি করতে হবে, আরো উপদেশ দিতে থাকলাম; আর শেষে ডায়ালগ দিলাম, “লিখে রেখো, এক ফোঁটা…” তখনই মেয়ে আর না পাইরা বিরক্ত হয়া কইলো, এইজন্যই আমি কিছু দেখায়া দেয়ার কথা বলতে চাই না!
(মানে, খাজনার চে বাজনা বেশি। যতো না কাজ, তার চে বেশি বাহাদুরি।) তো, তখন আমিও বুঝতে পারলাম, “এইটা দিছি, সেইটা দিছি”; “এইটা করছি, সেইটা করছি” কওয়া লোকজনরে কেন চাইলেও কেউ পছন্দ করতে পারে না কোনদিন।

#########

গত ৩/৪ বছর ধইরাই আমি বলতেছি যে, ম্যানিফেস্টো বানানো দরকার একটা। পুরাপুরি ডিটেইল না হইলেও একটা রোডম্যাপ থাকা দরকার, সেই ম্যানিফেস্টোর বেসিসে।… কিন্তু এইটা কোন ইন্টেলেকচুয়ালের কাজ তো না-ই, এমনকি কলেজ-ভার্সিটির গ্রুপ এসাইনমেন্ট বানানোর মতন কোন জিনিসও না। এইটা একটা পলিটিক্যাল দলের কাজ, পিপল-এনগেইজমেন্টের ঘটনা।…
তো, বাংলাদেশের একজন নাগরিক দেখলাম উনার কয়েক দফা দাবি ফেসবুকে পেশ করছেন। তখন আমার মনে হইছে, আমার দাবিগুলাও পলিটিক্যাল এজেন্ডা হিসাবে না হোক, দেশের একজন ভোটার হিসাবে বইলা রাখতে পারি তো! অনেক পয়েন্ট হয়তো বাদ যাবে, অনেক পয়েন্টের লগে হয়তো অনেকে একমত হইবেন না, অনেক পয়েন্ট হয়তো পুরাপুরি ক্লিয়ারও করা যাবে না; কিন্তু বলতে তো দোষ নাই!
তো, পড়েন! আপনার/আপনাদের দাবিগুলাও লেখেন!

১. অবৈধ একদলীয় শাসন বাতিল করা;
২. রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় টোটাল চেইঞ্জ নিয়া আসা। স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের ইলেকশনরে ইন্ট্রিগ্রেট করা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সর্বদলীয় ভোটার কমিটি তৈরি করার ভিতর দিয়া ফ্রি ও ফেয়ার ইলেকশনের ব্যবস্থা করা। সরকার-কাঠামো’তে কোন ব্যক্তি বা পজিশনের একক ক্ষমতার জায়গা যেন তৈরি না হইতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। (সিলেকটেড না, ইলেকটেড) প্রেসিডেন্ট ও প্রাইম মিনিস্টারের ক্ষমতা সমান সমান করা। ওয়ার্ড মেম্বার হবেন সবচে ক্ষমতাধর লোক, তারপরে চেয়ারম্যান, তারপরে এমপি… এইভাবে যেই নির্বাচিত পজিশন পিপলের সবচে কাছে তারে এমপাওয়ার করা।
৩. রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনগুলারে একসাথে, একটা প্লাটফর্মে নিয়া আসা। সামাজিক কর্মসূচীর জন্য কাজ না করতে পারলে রাজনৈতিক পজিশন নিয়াও প্রশ্ন তোলা। প্রতিটা পলিটিক্যাল দলে জেন্ডার (এমপি হিসাবে এটলিস্ট ৩০% মহিলাদেরকে নমিনেশন দিতে হবে) এবং বয়সের (এটলিস্ট ২৫% নমিনেশন দিতে হবে ৪০ বছর বয়সের নিচে) বেসিসে রিপ্রেজেন্টেশনের ব্যবস্থা করা।
৪. পাবলিকের ট্যাক্সের টাকার হিসাব না দেয়া পর্যন্ত গর্ভমেন্টরে ট্যাক্স দেয়া বন্ধ করে দেয়া; অথবা কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যাতে ট্যাক্সের টাকারে কারো নিজের বাপের টাকা মনে না হয়;
৫. ১০০ কোটি টাকার উপরে যে কোন সরকারি প্রজেক্টের যে কোন ডকুমেন্ট পাবলিক মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়া আসা, সরকারি ও বিরোধীদলের এমপিদের জয়েন্ট এখতিয়ারে থাকা। যে কোন উন্নয়ন কাজ ও সরকারি খরচ অই এলাকায় মানুশের সরাসরি তদারকির মধ্যে নিয়া আসা।
৬. বিদেশি রাষ্ট্র ও কোম্পানির সাথে যে কোন অর্থনৈতিক চুক্তি করার আগে ও পরে পাবলিকলি শেয়ার করা।
৭. জেনারেল শিক্ষা হাইস্কুল পর্যন্ত এবং টেকনিক্যাল শিক্ষা কলেজ পর্যন্ত ফ্রি করা। স্কুলে টিচার ও স্টুডেন্টদের দুইবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা। শিক্ষাব্যবস্থা আরো বহুমুখী কইরা সোশ্যাল, ইকনোমিক্যাল ও কালচারাল ইস্যুগুলার লগে রিলেটেড করা। ২৫ – ৫৫ বছর বয়সী সুস্থ যে কোন মানুশের জন্য কাজকামের ব্যবস্থা করা। না করতে পারলে তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা।
৮. ৬০ বছর বয়সের উপরে যে কোন নাগরিকের জন্য মাসিক নূন্যতম ৫০০০ টাকার পেনশনের ব্যবস্থা করা।
৯. এক সপ্তাহ থিকা এক বছরের মধ্যে যে কোন বিচারের কাজ শেষ করা। গরিবের জন্য ফ্রি উকিল দিতে গর্ভমেন্টের বাধ্য থাকা। সমাজে আইনের শাসন ও জাস্টিস এস্টাবলিশ করা।

পি.এস.: এইগুলা যারা মানতে না পারবে তারাও যেন এই দেশে থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। 🙂

 

অক্টোবর ২৩, ২০২১

Rakibul Islam Rakib’র কথায় মনে হইতেছিল জিনিসটা; উনি বলতেছিলেন যে, ভার্সিটিগুলাতেও ঈদে মিলাদুন্নবী’র দিনে প্রোগ্রাম করা যাইতে পারে তো! আমার ধারণা, ২০/৩০ বছর আগেও মেবি এই প্রাকটিসটা ছিল, ঈদের পরের দিন (বা এক দুইদিন পরে) পাড়া-মহল্লায় ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ করার। (রোজার ঈদের পরেই মোস্টলি।) ফরম্যাট’টা ছিল এইরকম যে, ছোট বাচ্চা-কাচ্চারা কবিতা আবৃত্তি করবে, টিনএইজ’রা (তখনকার সময় ‘কিশোর-কিশোরী’ বলার নিয়ম ছিল অবশ্য 🙂 ) গান গাইবে, আর শেষে একটা ‘মঞ্চ নাটক’। ও, আগে অবশ্য স্থানীয় মুরুব্বিরা, স্পন্সররা ভাষণ-টাষণ দিবেন। এইরকম একটা জিনিস।

খালি ঈদের পরেই না, অনেক সময় একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসেও হইতো মাঝে-মধ্যে; কিন্তু যেহেতু অইগুলা স্কুল-কলেজে ‘পালন করা’ বাধ্যতামূলক, সরকারি ফাংশন-টাংশনও হইতো; এলাকায় ‘সামাজিক অনুষ্ঠান’ হিসাবে করার দরকার পড়তো না। কিন্তু একটা সময়, আমি বলতেছি ১৯৮৫/৮৬ সালের দিকের কথা, অনেক এলাকাতেই (গ্রাম ও ছোট শহর, কলেজ-ভার্সিটিতে পড়া লোকজনের নেতৃত্বে) ঈদের পরের দিনের এই অনুষ্ঠান একটা রিচুয়াল বা রীতি হিসাবে ছিল, কিছুদিন।

কবে শুরু হইছিল ব্যাপার’টা শিওর না। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলামের কিছু ভাষণ পাইবেন ঈদের প্রোগ্রামে দিছেন। মানে, ১৯২০/৩০’র দিকে ব্যাপারটা শুরু হয়া থাকার কথা। পলিটিক্যালি ‘খেলাফত আন্দোলন’ শেষ হয়া যাওয়ার পরে এবং শিক্ষিত-মুসলমানদের ‘পুরানা আমলের মুসলমানদের’ কাছ থিকা পাওয়ার সরায়া নেয়ার একটা ইন্সট্রুমেন্ট হিসাবেও এই প্রোগ্রাম কাজ করার কথা।

তো, প্রোগ্রামগুলার একেকটা সময়ে একেকটা পারপাসই সার্ভ করতে পারার কথা, অকেশন ঈদ হইলেও। ১৯২০/৩০’র দিকে ব্যাপারগুলা কম-বেশি পলিটিক্যাল হওয়ার কথা হইলেও ১৯৮০’র দিকে টিভি’তে ‘ঈদ আনন্দমেলা’র রেপ্লিকেট-ই হওয়ার কথা; মানে, আপনি যে বলেন ‘ঈদ মানে আনন্দ’, সেই আনন্দের একটা মেনিফেস্টশন থাকতে হবে না! এইরকম। (প্রোগ্রামগুলাই এই ব্যাপারটা পসিবল কইরা তোলার কথা যে, দেখেন, আমরা ‘আনন্দ’ করতেছি!)

মানে, ‘সামাজিক অনুষ্ঠান’ [ইনক্লুডিং বিয়া-শাদী, জন্মদিন, মুসলমানি (এখন আর হয় না মনেহয়)…] নিয়া আরো অনেক আলাপ তো আছেই।…

#########

বাংলাদেশের ইসলামি-সাহিত্য একটা একসাইটিং জিনিস মনে হইলেও পলিটিক্যালি কলকাতার হিন্দুত্ববাদী সাহিত্যেরই একটা কন্টিনিউশন।
মানে, সাম্প্রদায়িক-সাহিত্য বা ধর্ম-ভিত্তিক কোন লিটারেচার হইতে পারে না বা পারবে না – এইটা না, বরং ঘটনা উল্টাটাই; দুনিয়াতে যত গ্রেট লিটারেচার এখন পর্যন্ত আমরা পাইছি সেইখানে কোন না কোন ধর্মের এসেন্স পাইবেন। এমনকি যেইসব সায়েন্স-ফিকশন বা ডিসটোপিয়ান জিনিসগুলা আমরা দেখি, অইগুলাও কোন না কোন রিলিজিয়াস-এসেন্সরে* প্রমিনেন্ট কইরা তোলে। সাহিত্যে ধর্ম থাকতে পারবে না – এইটা আমার পয়েন্ট না। একইভাবে, ধর্ম ছাড়া সাহিত্য হয় না – এইটাও বাড়ায়া বলা একটা জিনিসই হবে। এইখানে একটা কানেকশন আছে, যতই কাছাকাছি বা দূরের জিনিস হোক।

কিন্তু ঘটনা হইতেছে, এই ধর্ম-চিন্তা বা ধর্মের এসেন্সটা কেমনে রিলিভেন্ট হয়া উঠতেছে সাহিত্যে। তলস্তয়ের রেজারেকশনরে পাপ, কনফেশন আর প্রায়শ্চিত্তের সব এলিমেন্টসহই আপনি ক্রিশ্চানিটির মধ্যে আটকাইতে পারবেন না। আবার রাধা-কৃষ্ণের গান আর হিন্দু-ধর্ম একই জিনিস না; যেইরকমভাবে ইসলামি কাওয়ালিগুলা পছন্দ করতে হইলেও আপনারে ইসলাম-ধর্ম মানা’টা জরুরি না। মানে, ধর্ম একটা সাবজেক্ট বা ফর্মের বেইজ হওয়ার পরেও সেইটা ধর্মের এক্সটেনশন না হয়া বরং আলাদা একটা জিনিসই হয়া উঠতেছে। এইভাবে জিনিসগুলা যেইরকমভাবে ধর্ম-বিরোধী কোন জিনিস না, আবার ধর্ম-পালনের একটা এলিমেন্টও না।

এখন এর বাইরেও তো সাহিত্য আছে। এবং সাহিত্য ও চিন্তারে এর সাহিত্যিক ও ইন্টেলেকচুয়াল বিচারের বাইরেও পলিটিক্যাল জায়গা থিকা তো রিড করতে পারি আমরা! এইরকম একটা জায়গা থিকা কলকাতার কলোনিয়াল বাংলা-সাহিত্য’রে যদি দেখেন, সেইটা হিন্দু-ধর্মের ঘটনা না, বরং হিন্দুত্ববাদী একটা জিনিস। এইটা জায়গাটারে খেয়াল করতে পারাটা দরকার। আর এর প্রতিক্রিয়াতে বাংলাদেশে ‘মুসলিম সাহিত্য’ জাইগা উঠার ঘটনাগুলা যে আমরা দেখতে পাই, সেইটা অই হিন্দুত্ববাদের একটা অপজিশন হিসাবে পলিটিক্যালি এফেক্টিভ থাকে। দুইটা জিনিসই সম্প্রদায়গত কোন ঘটনা না খালি, বরং সাহিত্য হিসাবে এর ভিতরে আটকায়া যাওয়ার ঘটনা।

হিন্দু-জীবন বা মুসলমান-রীতিগুলা নিয়া লেখা যাবে না – এইরকম না, কিন্তু যখন সাহিত্যের লক্ষ্য হয়া উঠে কোন আদর্শরে প্রচার করা, সেইটা সাহিত্যের জায়গাতে কম-বেশি সাফার করার কথা।… একটা কমন টেনডেন্সি (জেনারেল রুল না) হিসাবে বলা যাইতে পারে, যখনই কোন সাহিত্য ‘জীবন-ঘনিষ্ঠ সাহিত্য হইতে হবে’-টাইপ সিউডো দাবির মধ্যে বন্দি হয়া যায়, সেইটা একটা সম্প্রদায়ের জায়গারে অন্য সম্প্রদায়গুলার লগে কানেক্ট করার বদলে একটা অবস্টেকল হয়া উঠতে থাকে। তখন সেইটা সাহিত্য হওয়া বা না-হওয়ার বাইরে অন্য কিছু জিনিসরেও জাগায়া তোলে। ‘জাতীয়তাবাদী-সাহিত্যে’ও এইরকমের টেনডেন্সি পাবো আমরা।

এর মানে এইটা না যে, কলকাতার কলোনিয়াল বাংলা-সাহিত্যে কোন গ্রেট লিটারেচার তৈরি হয় নাই, বা বাংলাদেশের ইসলামি-সাহিত্য কিছু হয় না (এই টেনডেন্সিগুলা সাহিত্য হিসাবেও কিছু বাতিল-মাল তো তৈরি করেই, অই উদাহারণগুলারে বাদ দিয়াই বলতেছি) বরং এইগুলার পলিটিক্যাল সিগনিফিকেন্সগুলারে গোপন করার কিছু নাই। এবং এই জায়গাগুলারে নজরে না নিয়া বাংলা-সাহিত্যের আলাপটাও কোন সেক্যুলার ঘটনা না আসলে।

এখন এইরকমের ‘হিন্দুত্ববাদী’ ও ‘ইসলামি-সাহিত্য’** ‘প্রতিহত করতে হবে’ রুখে দাঁড়াতে হবে’ টাইপ অ-সাহিত্যিক জায়গার কথা আমি বলতেছি না। আমি বলতে চাইতেছি, এই জায়গাগুলা আছে। ক্যাটাগরি হিসাবে আমাদেরকে দেখতে পারতে হবে এবং অই জায়গাগুলাতে ডুইবা যাওয়া থিকা নিজেদেরকে বাঁচাইতে পারতে হবে। যারা এখনকার সময়ে সাহিত্য করতেছেন বাংলা-ভাষায়, উনারা যেন এজরা পাউন্ড, হাইডেগারের মতো পরে রিগ্রেট না করেন, নাৎসি’রা যে এতো দুষ্টু, এইটা তো আমরা বুঝতে পারি নাই!


*অন্য নতুন কোন টার্মের কথা তো ভাবা যাইতেই পারে। দরকারিও মনেহয়। কিন্তু জিনিসগুলা লোকাল-এমপ্যাথি, রীতি ও টোটালিটির বাইরের কোন ঘটনা না আর কি…

**জিনিসগুলারে আরো ডিটেইলে আইডেন্টিফাই করা তো যাইতেই পারে। যখন জিনিসগুলা সারফেইস লেভেলে আরো ভিজিবল হবে, আমার ধারণা সলিমুল্লাহ খান’রা জাতীয়তাবাদী বিজনেস বাদ দিয়া এইখানে শামিল হইতে পারবেন, তখন উনারা যেই থিওরেটিক্যাল পজিশন খাড়া করবেন, অইটার অপজিশন দিয়া জায়গাগুলারে সহজে লোকেট করতে পারবেন। 🙂 ততদিন ওয়েট করতে না চাইলে, নিজেরা এই চিন্তার জায়গা থিকা খোঁজ-খবর করলে কিছু উদাহারণ পাইতে পারবেন, এই আশা আমার আছে।…

#########

মানুশ হিসাবে আপনি-আমি যে আমাদের আশেপাশের মানুশ-জনের চাইতে খুব বেশি দূরের কেউ না; বরং নানান দিক দিয়াই খুব ক্লোজলি কানেক্টেড সেইটা বুঝার জন্য পুরান লোকজনের লগে দেখা হওয়াটা দরকারি একটা ঘটনা। এইটা মনে হইলো, আমার হাইস্কুলের টিচারের সাথে দেখা হওয়ার পর।

আমার লেখা ফার্স্ট কবিতার ছন্দ উনি ঠিক করে দিছিলেন। তখন উনিও ইয়াং ছিলেন অনেক। আমরাই ছিলাম উনার প্রথমদিকের স্টুডেন্ট। পরে হাইস্কুলের টিচার হিসাবে জাতীয় পুরষ্কারও পাইছেন। মানে, জাতীয় পুরষ্কার আমাদের এলাকায় এতো রেয়ার কোন জিনিস না; জাতীয় টিটি-চ্যাম্পিয়নশীপের লোকজন আমাদের সাথে ঘুরতো, জাতীয় পর্যায়ে গোল্ড-মেডেল পাওয়া নজরুলগীতি গায়িকা ছিল আমাদের বন্ধুর বড় বোন, জাতীয় বির্তক প্রতিযোগিতার সেরা বির্তাতিক ছিল আমাদের বড়ভাই, লাক্স ফটোসুন্দরীর প্রথমদিকের কম্পিটিটর ছিল আমাদের সিনিয়ার আপু, ‘যদি কিছু মনে না করেন’-এ পারফর্ম করতো আমাদেরই ছোটভাই, এইরকম। মানে, জাতীয় ব্যাপারটা এতো বড়সড় কিছু না, মোটামুটি স্থানীয় ব্যাপারই।…

তো, স্যারের খুব সুন্দর লোকাল একটা একসেন্ট আছে। উনি বলতেছিলেন আমারে, কি অ রাসেল, তোমার কি মনেহয়, মানুশের মইরা যাওয়ার ডিসিশানটা ক্ষেত্র-বিশেষে তার নিজের হাতে দিয়া দেয়া উচিত না? একটা বয়সের পরে, ধরো ৭০ বছরের পরে মানুশ চাইলে নিজের মরার সময়টা নিজে ঠিক করতে পারবো, এইরকম কি হইবো না? যে, একটা ইনজেকশন থাকবে, অইটা নিলে শান্তিতে মইরা যাইতে পারবে। এখন না হইলেও একশ বছর পরে এইটা কি নিয়ম হয়া উঠবে না দুনিয়াতে? আর ৭০ বছর হইলে পরে মানুশ আর বাঁইচা থাইকা কি করবে…

গাড়িতে যে আমার আব্বা বসা, যার বয়স ৭০’র উপরে এবং নানান অসুখ-বিসুখে সাফার করতেছেন, সেই খেয়াল উনার নাই তখন। কারণ উনি তো অবজেক্টিভ চিন্তার কথা বলতেছেন! আব্বাও মাইন্ড করার কথা না, কারণ আব্বা হইতেছেন উনার পলিটিক্যাল গুরু-টাইপ। মানে, উনি আসলেই ফিউচারিস্টিক চিন্তার জায়গা থিকাই কথাগুলা বলতেছিলেন।…

আমি খেয়াল কইরা দেখলাম, আমরা যে একটু উইয়ার্ড হইছি (বা হইয়া যায় মাঝে মধ্যে), আমাদের ফ্যামিলি, টিচার, বন্ধু-বান্ধবদের কন্ট্রিবিউশন এইখানে তো কম-বেশি আসলে আছেই। মানে, আমাদের দুনিয়াতে এইটা মোটামুটি নরমালই। 🙂

#########

বুড়া মানুশদের সাথে কথা বলতে গেলে আমার অস্বস্তিই লাগে; এই কারণে না যে, উনারা আরেকটা জেনারেশনের লোক বইলা, বা অনেক কিছু জানেন বা জানেন-না বইলা, বরং উনাদের ভারনারিবিলিটি দেখতে মন-খারাপ লাগে আসলে।

মানে, সোশ্যাল স্পেইসে যে সবাই ইয়াং থাকতে চান – বয়স হয়া গেলেও বা বয়স না-হইলেও (টিন-এজাররা), সেইটা থিকা একভাবে টের পাওয়া যায় যে, সমাজে ইয়াং বা তরুণ হিসাবে না থাকতে পারাটা ‘নরমাল’ কোন ঘটনা না। বুড়া হিসাবে আপনি কোন বিজনেস/চাকরি করতে পারবেন না, আইসক্রিম খাইতে পারবেন না, একলা একলা ঘুরতে পারবেন না, ব্লা ব্লা ব্লা, অনেককিছুই। যেই কারণে ‘সোশ্যাল-এক্টিভিটির’ জায়গা থিকা বাচ্চা পোলাপাইন বা বুড়াদেরকে নিয়া ইজিলি হাসি-ঠাট্টা করা যায়, গালি-গালাজও। (তবে পাশাপাশি এইটাও তো সত্যি যে, একটু বয়স না হইলে পাওয়ারফুল হওয়া যায় না, অইটা একসেপশনাল ঘটনাই না, কিছুটা।)

কিন্তু তারপরও এনকাউন্টার তো হয় উনাদের লগে। যখন কথা হয় তখন উনারা নিজেদেরকেই মনেহয় বুঝাইতে চান যে, খুব ইম্পর্টেন্ট কোন কাজ উনারা করতেছেন, খালি খালি বাঁইচা থাকার বাইরেও; বা করছিলেন কোন সময়। মানে, লাইফের একটা মিনিং দিতে চাইতেছেন।… মানে, বুড়া-মানুশজন বুড়া হিসাবে যে সমাজে আছেন, বা থাকতে পারেন; এইটার কোন স্পেইস সমাজে নাই, যে কোন সোশ্যাল এক্টিভিটিতে উনারা মোস্টলি এবসেন্ট। এমনকি আমার মনেহয়, থাকতেও দেয়া হয় না।

কিন্তু এইটা তো ঠিক না। একটা সমাজ তো একটা এইজ-গ্রুপের ঘটনা না! এইখানে বাচ্চা-কাচ্চারা একটা পুতুলখেলার জিনিস আর বুড়ারা সব রদ্দিমাল হয়া থাকতে পারে না, ইন জেনারেল। আর যখন এইটা হয়, সেইটা ‘ইয়াং’ আইডেন্টিটি’টারেও একভাবে ডিসকানেক্টেড কইরা ফেলার কথা, একটা সময়…

[আরো অনেক আসপেক্ট তো আছেই, আমি জাস্ট ফিলিংসের জায়গা থিকা ব্যাপারটারে লোকেট করতে চাইলাম একটু]

 

অক্টোবর ২৫, ২০২১

– নয়া বাকশাল আমলের ভোট –

একজন আরেকজনরে চাতুরির ঢংয়েই জিগাইতেছিল, ভাই, ভোট দিতে যাইবেন না, দেশে? অই লোক মোটামুটি তেলেবেগুনে জ্বইলা উঠলেন: কিসের ভোট? দেশে কোন ভোট আছে নাকি? সব তো রাতের বেলাতেই শেষ! তখন যে জিগাইছিল সে-ও সায় দিল, কইলো, হ ভাই, ইলেকশন আর কি, সব তো সিলেকশনই!*

তখন আরো যেই ৩/৪ জন ছিল, সবাই কথা কইতে লাগলো। একজন কইলো, জীবনে কোনদিন ভোট দিয়া দেখতে পারলাম না, কেমন লাগে! সাথের আরেকজন মিটিমিটি হাসতে লাগলো; সে কইলো, ভাই, একবার ইলেকশনে যত ভোট দিছি, সারাজীবন দেয়া লাগবো না আর! সে তার কাহিনি’টা বলতে লাগলো।

গতবার সাঈদ খোকন জিতার সময় যেই ইলেকশনটা হইলো, তখনকার কথা।… ঠিক হইলো যে, পুরুষদের কেন্দ্রে ভোট দিবে জগন্নাথের ছেলেরা আর মেয়েদের কেন্দ্রে ভোট দিবে ইডেনের মেয়েরা। সকালবেলা ৮টার দিকে একটা কমিউনিটি সেন্টারে গেলাম। অইখানে আমাদেরকে বুঝায়া দিলো কি করতে হবে, আর সবার শার্টে সাঈদ খোকনের ব্যাচ দিলো। কেন্দ্রের সামনে গিয়া দেখি মিলিটারি দাঁড়ায়া আছে। দেইখা তো ভয়ই পাইলাম একটু। কিন্তু মিলিটারির লোকজনই হাসি দিয়া আমাদের ডাক দিলো, আরে, এতোক্ষণে আসছেন! কেন্দ্রের ভিতরে নিয়া গেলো। বাইরে লাইনে শ’য়ে শ’য়ে লোক দাঁড়ায়া আছে। অদেরকেও মনেহয় টাকা দিয়া নিয়া আসছে। টিভি-ক্যামেরা আসলে হয়তো ভিতরে ঢুকতে দিবে। কেন্দ্রের ভিতরে ফাঁকা। আমাদের এক একজনরে ২/৩টা কইরা ব্যালেটের বই দিলো, একেকটা’তে একশ’র মতো ভোটের কাগজ। অইগুলাতে সিল-সাপ্পর মাইরা বাক্সে ঢুকায়া দিয়া বাইর হয়া আসলাম। অনেক সময় লাগছিল, ভাই!…

মানে, দেখেন, চুরি-ডাকাতি করা এতো সহজ জিনিস না! অনেক পরিশ্রম তো আছেই, অনেক কিছু ম্যানেজ কইরা তারপরে তাহাজ্জুদের নামাজে বসতে হয়। কারণ অনেক অনেক মানুশও লাগে এইখানে। টাকা দিয়া, লোভ দেখায়া, ডর দেখায়া, চেতনা-বেইচা অনেকভাবে অনেকজনরে একলগে করতে হয়, ঠেকায়া রাখতে হয়, খুশি করতে হয়।

একটা স্ট্রং বুরোক্রেসি, অবিডিয়েন্ট মিলিটারি-পুলিশের লগে মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী এবং চেতনাবাজ ও সুবিধাবাদী লোকজনও লাগে। আর এই লোকগুলা খালি ফান করার লাইগা বেশিদিন কন্টিনিউ করতে পারার কথা না, যদি না জাস্টিফিকশন বা কজ’র জায়গাটারে সবসময় কোর ইস্যু বানায়া না রাখা যায়।…

তো, আমার জাস্ট মনে হইতেছিল শাহবাগে, টিএসসি’তে ‘প্রতিবাদ’ করা লোকগুলা হইতেছে ভোটকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়ায়া থাকা লোকগুলার মতন, যারা টিভি, ফটোগ্রাফারের ক্যামেরা আসলেই ‘জ্বলে উঠেন’; নিজেরা নিজেদের ছবি, সেলফি তুলতে তুলতে ‘বাক স্বাধীনতার’ ও ‘ভোটাধিকার-এর ‘প্রমাণ’ দিতে থাকেন।

উনারাও জরুরি। নয়া বাকশালরে সার্ভ করার জায়গাতে মনে হইতে পারে উনাদের কন্ট্রিবিউশন খুবই কম; কিন্তু ক্রুশিয়াল। উনারা ডিজায়ারড রিয়ালিটি’টারে ক্রিয়েট করেন; যে, দেশে কোন ভোট’টা সময় মতো হয় নাই, বলেন! 🙂

… … …
*এই জায়গাতে আইসা আপনি ভাবতে পারেন, দেশের টিভি-পত্রিকাগুলার যদি এইরকম বলার সাহস’টা থাকতো! তো, আমি আপনারে বলতে চাই, এইটা ভুল একটা চিন্তা, উনাদের ‘সাহস’ নাই না; উনারা পার্ট অফ দ্য সিস্টেম। ইলেকশনের বদলে এই সিলেকশন প্রসেসটার। উনাদের আলগা কথাগুলাতে টের পাইবেন; যে ইলেকশন তো হওয়া দরকার, কিন্তু দেশের মানুশ তো সব মুর্খ, ভোট দিতে দিলে তো ইসলামী জঙ্গিদেরকে ভোট দিবে! দেশ তো আফগানিস্তান হয়া যাবে… এই সেই। মানে, ভোট হওয়া যে ঠিক না, বা হইলে কোন লাভ নাই – এইরকম জায়গাতে উনাদের খালি ‘নৈতিক সমর্থন’ আছে, ব্যাপারটা এইটুকও না; ১/১১’র পরে মিলিটারি-পুলিশ-সরকারিআমলাদের নিয়া এই ‘সুশীল-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক সমাজসহ’-ই শয়তানের এই চক্রটা তৈরি হইছে। যতদিন পর্যন্ত এই শয়তানিটারে আমরা মার্ক করতে রাজি না হবো, ততদিন পর্যন্ত এই এন্টি-পিপল সিস্টেমটা চালু থাকবে; ক্ষমতায় মিলিটারি/তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকুক, BAL অথবা BNP, তেমন কোন ডিফরেন্স হবে না, এইখানে। হইতে দেয়া হবে না আসলে।…

 

অক্টোবর ২৬, ২০২১

এই জিনিসটা টের পাইবেন নিউজপেপারের বা নিউজপোর্টালগুলার “নারীমঞ্চ” “জয়িতা” এইসব টাইপের পেইজগুলা দেইখা; অইখানে খালি ‘নারী অধিকারের’ পক্ষের কথাই বলা হয় না, বরং এইসব আলাপগুলার ভিতর দিয়া ‘নারী’ ধারণাটারেও একভাবে কন্সট্রাক্টই করা হয়। ‘নারী’ হিসাবে আপনারে কি রকম হইতে হবে – সেইটার সাজেশনই দেয়া হইতে থাকে আসলে সবসময়। (সেইটা পজিটিভ হোক বা নেগেটিভ, এর ভিতর দিয়া) একটা ‘সাবজেক্ট’ হিসাবে রিডিউস করার জায়গাটা তৈরি হয়। (‘পুরুষ’ আইডেন্টিটি নিয়া এইরকমের ভিজিবল কন্সট্রাকশন নাই, যা আছে সেইটা খুবই সাটল…)

একইরকমভাবে, বাংলাদেশে ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ ধারণার ভিতর দিয়া ‘মুসলমানদের’কেই ডিফাইন করা হয়, সাজেস্ট করা হয়, কি রকম হইতে হবে, কিভাবে ‘গুড মুসলিম’ হয়া থাকতে হবে। এইটা কম-বেশি ‘নারী’ ধারণার মতোই কন্সট্রাক্ট করার একটা ঘটনা।

মানে, এমন না যে, দুনিয়াতে নারী বা মুসলমান বইলা কোনকিছু এগজিস্ট করে না, কিন্তু এইভাবে ফোকাসড আইডেন্টিটি হিসাবে যে ‘খাঁটি’ ও ‘অরিজিনাল’ বইলা ডিফাইন করার একটা নিড – এইটা যতোটা না একটা ফেভারের ঘটনা তার চাইতে অনেকবেশি অথরিটি হিসাবে কন্ট্রোল পয়েন্ট তৈরি করতে পারার পারপাসই সার্ভ করার কথা।

এখন ব্যাপারটা এইরকম না যে, পত্রিকাতে ‘নারী-পাতা’ রাখা যাবে না! ‘অসাম্প্রদায়িকতা’র কথা বলা যাবে না! বরং এই বলাবলিগুলা পলিটিক্যালি কোন কাজটা করতেছে আসলে? – সেই জায়গাটারে খেয়াল করার কথা বলতে চাইতেছি আমি।

মানুশ হিসাবে অবশ্যই নারী’র সেই অধিকারগুলা নাই, যেইগুলা পুরুষ হিসাবে একজন মানুশের আছে; তাইলে যার নাই, তাঁর চেইঞ্জ হওয়ার চাইতে অই অধিকারগুলারে (যে না, বরং) যেই ন্যারেটিভ/ধারণাগুলা আটকায়া রাখতেছে, সেই জায়গাগুলার চেইঞ্জ হওয়াটা বা তারে চেইঞ্জ করাটা বেশি দরকারি না?

একইরকম ভিজিবল না হইলেও, মুসলমান আইডেন্টিটি বাংলাদেশে হিস্ট্রিক্যালি অপ্রেসড এবং কালচারালি ইনফিরিয়র একটা ঘটনাই এখনো, যার ফলে ‘সংখ্যায় বেশি’ হওয়ার কারণে দাবায়া রাখার ঘটনাগুলাও তীব্র হয়া উঠতেছে আরো। এই জিনিসটারে misogyny’র জায়গা থিকা টের পাইবেন অনেকটা। যে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারতে হবে! নারীর প্রতি যেইরকম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য জারি আছে, একইরকম না হইলেও কাছাকাছি রকমের জিনিস ‘শিক্ষিত সমাজে’ মুসলমান আইডেন্টিটির ব্যাপারে কম-বেশি চালু আছে।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, সমস্যাটা যতোটা না ‘নারী-সমস্যা’ বা ‘সাম্প্রদায়িক-সমস্যা’ তার চাইতে বেশি হইতেছে অই লিনিয়ার ন্যারেটিভগুলা যেইখানে ধইরা নিতে হয় – ‘নারীরা তো দুর্বল!’ বা ‘মুসলমানরা তো অশিক্ষিত’!

যখন ‘তর্কগুলা’ এইরকম একটা বেইজে আইসা হাজির হয়, তখন আমাদেরকে বুঝতে পারতে হবে এইগুলা কোন লজিক না, বরং প্রেজুডিসের ঘটনা। যেইটারে তর্ক দিয়া মোকাবেলা করতে পারবো না আমরা। বরং জায়গাগুলারে যতদিন আইডেন্টিফাই করতে রাজি না হবো, ততদিন পর্যন্ত এই ‘তর্কগুলা’ আগুনে ঘি ঢালার কাজই করতে থাকবে।

আমাদের কাজ কোন একটা তর্কের পক্ষ-বিপক্ষ নেয়া না, বরং কোনটা আসলে আজাইরা আলাপ, সেইটারে মার্ক করার ভিতর দিয়া জুলুমের নয়া নয়া ফন্দি-ফিকিরগুলারে আন-মাস্ক করতে পারা। যেইটা বন্ধুত্ব বা শত্রুতা দিয়া এতোটা ধরা যাবে না। আলাপের বেইজটাতে খেয়াল রাখলে বরং খোলাসা হইতে পারবে অনেকটা।

##########

অবিচুয়ারি: লাস্ট হিউম্যান কানেকশন

সুধীর কুমার ভক্ত মারা গেছেন অগাস্ট মাসের ১ তারিখে। উনি ছিলেন মেটলাইফ-এলিকো ইন্স্যুরেন্সের এজেন্ট। আমার চাকরির লাইফের শুরুতে কোম্পানির অন্য কলিগদের কাছ থিকা খোঁজ-খবর নিয়া মোটামুটি জোর-জবরদস্তি কইরাই একটা ইন্স্যুরেন্স পলিসি কইরা দিছিলেন। বয়সে অনেক সিনিয়র লোক। সেলসম্যান হিসাবে সবসময় কাস্টমার’রে ডমিনেন্ট করতে চাইতেন। আমি কয়েকবার চাকরি চেইঞ্জ করলেও কেমনে কেমনে জানি খুঁইজা বাইর কইরা নিতেন। টাকা পয়সার জন্য একটা পলিসি ভাঙায়া ফেললেও, পরে আরো দুইটা কইরা দিছিলেন। বলতেন, কইরা রাখেন, কাজে দিবে পরে!

উনারে বলতাম, আপনার তো আসার দরকার নাই। এখন তো সবকিছু অনলাইনেই পেমেন্ট করা যায়। কি দরকার আপনার কষ্ট কইরা আসার। কিন্তু উনি প্রিমিয়াম ডেইটের আগে একটা ফোন দিয়া চইলা আসতেন। বলতেন, ইমরুল ভাই, আমি যতদিন বাঁইচা আছি, আপনার কোনদিন চিন্তা করা লাগবে না এইসব নিয়া। অনলাইনে তো চার্জ-টার্জ কাটে, খামাখা বেশতি টাকা দিবেন কেন? এর চাইতে আরেকটা ইন্স্যুরেন্স করেন অই টাকা দিয়া…

উনার এক ছেলে মনেহয় ডেন্টিস্ট। আরেক ছেলে মাস্টার্স পাশ কইরা চাকরি করতেছে। এইরকম। কিন্তু উনি একটা ব্যাগে দুই-তিনটা ডাইরি নিয়া অফিসে অফিসে ঘুরবেন! বয়স হইলেও শরীর ঠিকঠাক ছিল উনার। কিন্তু দেখলে বুঝা যাইতো, ক্লান্ত অনেক।

তো, আমি প্রিপারেশন নিয়া রাখছিলাম, অনলাইনেই পেমেন্ট দেয়া শুরু করা লাগবে। পেমেন্ট করার আগে ভাবলাম উনার নাম্বারে একটা কল দেই, এইরকম তো হয় না কখনো; পেমেন্ট ডেইট চইলা আসতেছে, আর উনি কল দেন নাই।

ফোন’টা উনার ছেলে ধরলো, কইলো, বাবা তো মারা গেছেন অগাস্ট মাসের ১ তারিখে।

উনি ছিলেন লাস্ট হিউম্যান, যিনি মেশিনের এগেনেস্টে ফাইট করতেন। আমার লাইফে হিউম্যান টাচের একটা ঘটনা শেষ হইলো সুধীর কুমার ভক্তের মারা যাওয়ার ভিতর দিয়া।

হিউম্যান, ইটস অল টুউ হিউম্যান..

#########

কয়েক মাস আগে যখন সরোয়ার্দির গাছ-কাটা নিয়া প্রতিবাদী নাটক-টাটক হইতেছিল, তখন বলছিলাম, গাছ না, মেইন ইস্যু হইতেছে, পাবলিক প্লেইসগুলা নাই হয়া যাইতেছে ঢাকা শহরে। আজকে নয়া পল্টনে বিএনপি’র মিটিংয়ে পুলিশের হামলা দেইখা অই কথা মনে হইলো আবার।

ঢাকা শহরে মিছিল-মিটিং করার কোন জায়গা নাই, চাইলেও ১০/১৫ হাজার লোক একসাথে হয়া কোন মিটিং, সমাবেশ করতে পারবে না। ঢাকা শহরে বাচ্চাদের খেলার কোন মাঠ নাই, যেইখানে ৫০/৬০ জন বাচ্চা ৫/৬টা গ্রুপে ভাগ হয়া বিকালবেলা খেলতে পারবে। ৩০০ কিলোমিটার আয়তনের শহরে ২/৪ কিলোমিটারের কোন পার্ক নাই, যেইখানে কয়েক হাজার লোক সকালবেলায় হাঁটাহাঁটি করতে পারবে। (আছে ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে, ‘অভিজাত’ দুয়েক্টা জায়গায়, পাবলিক প্রপার্টি হিসাবে ফাংশন করে না।)

আর এই না-থাকাটা ‘জনসংখ্যার চাপ’ না, ‘ভূমিদস্যুদের দখল’ না, বরং পলিটিক্যালি পাবলিক প্লেইসগুলারে নাই কইরা দেয়ার ঘটনা।

ঢাকা শহরের ৪৬টা থানায় একটা কইরা (৫০০মিটার টু ১কিমি’র) পাবলিক মিটিং করার জায়গা থাকা দরকার।

সরকারি ষড়যন্ত্রের রাজনীতির জায়গায় পাবলিকের মিছিল-মিটিং করার রাজনীতি শুরু করতে হইলে এইরকম পাবলিক প্লেইসগুলা আমাদেরকে তৈরি করতে হবে আবার।

 

অক্টোবর ২৭, ২০২১

– ‘সাম্প্রদায়িকতার’ নিউজগুলা নিয়া –

বাংলাদেশে ‘সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা’ কেমনে ছড়ায়, এর কিছু প্যাটার্ন তো অবশ্যই আছে। কোথাও একটা ঘটনা ঘটে, এবং সেইটা ‘নিউজ’ হিসাবে ছড়ায়া পড়ে, তারপরে ইমোশনাল প্রতিক্রিয়া দেখা যাইতে থাকে লোকজনের মধ্যে। [এখন ধরেন, পরীমনি কাছা দিয়া লুঙ্গি পিন্দলেও তো লোকজন ‘প্রতিক্রিয়া’ দেখাবে। অডিয়েন্স হিসাবে এইটা না করলেও মুশকিল দেখবেন যে, পাবলিক চেতে না ক্যান! মানে, এইখানে আরেকটা আলাপ তো আছেই: মিডিয়াম, কনটেন্ট এবং অডিয়েন্স বিষয়ে।…]

আমার একটা দাবি হইতেছে যে, ‘সাম্প্রদায়িক হামলার’ ঘটনার বর্ণনাতে, যেইভাবে নিউজ করা হয় টিভিতে-পত্রিকাতে, সেইখানে একটা চালু ফরম্যাট আছে, যেইখানে এই উসকানি’টা থাকে যে, ‘উত্তেজিত’ হইতে হবে! যদিও এইবার সব দোষ ফেসবুকের কান্ধে চাপানোর চেষ্টা হইছে; কিন্তু সোশ্যাল-মিডিয়া’র আলাদা কোন কারেক্টার এখনো তৈরি হয় নাই এবং যে কোন ইস্যুতে অর্গানাইজড মিডিয়ার ফরম্যাটগুলাই কমবেশি ফলো হয় আসলে।…

মানে, কেমনে বলতে হবে – সেইটা একটা ঘটনা সবসময়। লোকজন যে বলে ‘ভাষায় প্রকাশ করার মতো না’; তার মানে হইতেছে শে ওভার-হুইলমডই না খালি, বরং ফরম্যাট’টা তার জানা নাই। কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের দামটা এই জায়গাটাতেই যে উনারা ‘কেমনে বলতে হবে’ – এই ফরম্যাটটারে বানাইতে পারেন, রিনিউ করতে পারেন, প্যাটার্ন হিসাবে এস্টাবলিশ করতে পারেন। এখন কবি-সাহিত্যিক’রা এই ফরম্যাটগুলা বানাইতে পারলেও নিজে নিজে তো আর ছড়াইতে পারেন না (ট্রেন্ড বা ফ্যাশন হিসাবে ছড়াইতেও পারে না সব ফর‌ম্যাট সবসময়), এখন পর্যন্ত অর্গানাইজড মিডিয়াই এইটা পারে, যেই কারণে এইসব মিডিয়া, পাবলিকেশনের পাছা ফুইলা থাকে বেশিরভাগ সময়। [যা-ই হোক এইটাও আরেকটা আলাপই…]

তো, অর্গানাইজড মিডিয়ার ফরম্যাট’টা কি রকম? এইটা দুইটা পার্টে ঘটে – ফ্যাক্টের জায়গাটারে ব্লার করা হয় এবং সেই জায়গাটারে একটা পারসপেক্টিভের নামে প্রেজুডিস দিয়া ভরাট করা হয়।

কিছু জিনিস ‘গোপন’ করা হয় বা ‘জানি না আমরা’ – এইরকম জায়গাতে পার্ক করা হয়। এইটা খুবই ক্রুশিয়াল পার্ট। এই ‘গোপন’টা না থাকলে ‘সাম্প্রদায়িকতার’ ভূতটা ঢুকতে পারবে না আমাদের রিয়ালিটিতে। এইটা হইতেছে চিপা রাস্তা’টা। যেমন ধরেন, আপনি যদি শুরুতেই বইলা দেন, এক ইয়াবাখোর মসজিদ থিকা কোরান শরীফ চুরি কইরা পূজার মন্ডপে রাইখা গেছে তাইলে কিন্তু এই ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নামের পলিটিক্যাল গেইমটা শুরুই হইতে পারবে না।

এখন এইটা খালি জানা বা না-জানার জায়গা থিকা ঘটে না, বরং আপনার জানা এবং না-জানারে আপনি কেমনে বলতেছেন, সেইটার একটা ঘটনা। আপনি যদি গুলশানে থাইকা, আপনার অফিসের বাইরের জানালা দিয়া বৃষ্টি দেইখা বলেন, ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে গুলশান এলাকায় সন্ধ্যার দিকে মনেহয় বৃষ্টি হইছে’; মানে ফ্যাক্ট’টারে জানাইলেন না, বরং ধোঁয়াশা কইরা দিলেন আসলে, দুইটা জায়গাতে – আপনি শিওর না, যিনি বলছেন তারও সন্দেহ আছে। মানে, জানার পরেও, ফ্যাক্ট’টারে আউলায়া দেয়ার ভঙ্গিমাটা আছে, সন্দেহটারে আরো বাড়ায়া দেয়া।

এমনকি ধরেন হেডিংয়ে দিলেন না, ভিতরে কইলেন। (এইরকম একটা নিউজ দিতেছি কমেন্টে।) হেডিংটা দেইখাই পাবলিকের বুকে ধক কইরা উঠবো, আরে, আবার কি হইলো! ট্যাবলয়েডের নিউজের মতন। [অবশ্য বাংলাদেশের সবগুলা নিউজ তো এইরকম ট্যাবলয়েড মার্কাই এখন।…] মানে, ফ্যাক্ট হিসাবে একটা না-জানা’রে এস্টাবলিশড করতে হয় – এইটা মাস্ট। জানা থাকলেও জিনিসটারে হাইড করতে হয়, কনফিউজিং করা লাগে।

আর যদি না-জানা থাকে তাইলে তো পুরা ঈদ! পারসপেক্টিভটারে এমনভাবে থ্রো করা লাগে যেইটাতে ফ্যাক্টের চাইতে প্রেজুডিসটা বড় হয়া উঠে। “পূজার মন্ডপ কে ভাঙ্গছে আমরা জানি না, কিন্তু মুসলিম মেজরিটির এই দেশে কে এই কাজ করতে পারে?” কখনোই বলা হবে না “বাকশালি জুলুমের এই দেশে কার এই সাহস আছে?” মানে, না-জানাটারে এমন একটা দিকে ডাইরেক্টেড করা হবে, যেইখানে অনুমান বইলা আর কিছু নাই, অনুমানটাই সত্য না খালি, এবসুলেট ট্রুথ হয়া উঠে।

তো, নিউজের যেমন আল্টিমেট উদ্দেশ্য হইতেছে ‘টক অফ দ্য টাউন’ হয়া উঠা, ফেসবুক বা সোশ্যাল-মিডিয়ারও একটা অবজেক্টিভ তো ‘ভাইরাল’ হইতে পারা। আর এইটা তখনই সম্ভব যখন সমাজের ডরের জায়গাগুলারে, প্রেজুডিসগুলারে আরো উসকায়া দেয়া যাবে। বাকশালি শাসনে এমনিতেই মানুশের বিশ্বাসের ভিতে ঘুণ ধইরা গেছে। এই জায়গাতে আগুনে ঘি ঢালার কাজটা করতেছে এই ‘সাম্প্রদায়িক’ ন্যারেটিভের ফরম্যাট’টা।

মানে, এইখানে একটা ভ্যাকুয়াম বা ডর আছে যে, দেশে ইসলামিস্ট জঙ্গি আছে, আর এই হামলাগুলা অই জঙ্গিরা করতেছে। অথচ যেইখানে ফ্যাক্ট হইতেছে দেশে একটা অবৈধ সরকার আছে এবং তাদের আকাম-কুকাম ঢাকার লাইগা সেন্সশনাল ইস্যু দরকার, যেইটা পাবলিকের চেতটারেও অন্যদিকে ভাইবার্ট করার রাস্তা কইরা দিতে পারবে।

বাংলাদেশে এইভাবে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ ক্ষমতায় লোকজনের পারপাস সার্ভ করে একটা পলিটিক্যাল ঘটনারে কালচারাল ইস্যুতে কনভার্ট করার ভিতর দিয়া। আর আমাদের আরো ক্লিয়ার হইতে পারা দরকার, এইটা কোন প্রসেসের ভিতর দিয়া ঘটে।

আমার দাবি হইতেছে, নিউজের বা বয়ানের ধরণটা একটা ক্রুশিয়াল জিনিস – ফ্যাক্ট না-থাকা বা গোপন করা এবং একটা প্রেজুডিস ঢুকায়া দেয়া। এই দুইটা জিনিস বাদ দিলে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ জিনিসটা বাতিল না হয়া গেলেও অনেক বেশি পাতলা হয়া যাওয়ার কথা।

জুলুমের শাসন শেষ করতে হইলে জুলুমের বয়ানগুলারে, যেইগুলা জুলুমের হাতিয়ার, সেইগুলারে ঠেকাইতে হবে আমাদেরকে।

 

অক্টোবর ২৮, ২০২১

খালেদা জিয়া

‘বিকল্প নাই’ দলের লোকজনের মুখে কোন সময় খালেদা জিয়ার নাম শুনবেন না। যেন উনি মারা গেছেন। অথচ ঘটনা হইতেছে উনার নাম মুখে না নেওয়ার ভিতর দিয়া এক ধরণের ‘নিরব রাজনৈতিক মৃত্যুর’ দিকে ঠেইলা দেয়া হইছে উনারে। যেন খালেদা জিয়ার নাম মুখে নেয়াটা একটা বেআইনি ঘটনা, অপরাধ! মানে, কেউ বলে নাই এইটা। কিন্তু না-বলার ভিতর দিয়াই কিছু সত্য টের পাইতে হয় আমাদেরকে। এইটা এইরকমের একটা ঘটনা।

অবশ্য একদিক দিয়া দেখতে গেলে, খালেদা জিয়া কখনোই শেখ হাসিনার বিকল্প না, বরং বেটার একটা রাজনৈতিক ঘটনা। ১৯৮৬ সালের ইলেকশনের ব্যাপারটা মাথায় রাইখা আমি বলতেছি এই কথা।

ইভেন বিপএনপি’র নেতারাও তখন এরশাদের লগে ‘সমঝোতা’ করতে রাজি ছিলেন। খালেদা জিয়ার ‘গোয়ার্তুমি’র কারণে পারেন নাই। এখনো ঘটনাটারে অই জায়গা থিকা দেখা হয় যে, খালেদা জিয়া ইগো দেখাইছিলেন, পারসোনাল হিংসার কারণে এরশাদরে মাইনা নেন নাই। অথচ আপনি যদি দেশের মানুশের কথা ভাবেন, এইটা তো মানুশের অধিকারের বিপক্ষে অবস্থা নেয়া। শেখ হাসিনা এই সুযোগ নিছিলেন, বিএনপি’র নেতারা এই এন্টি-পিপল পজিশনে যাইতে রাজি ছিলেন, খালেদা জিয়া ছিলেন না।

(যদিও মেবি এর আগে ও পরে খালেদা জিয়া বেশিরভাগ সময়ই উনার দলের এবং সার্পোটারদের এন্টি-পিপল এজেন্সিগুলার কাছে পরাজিত হইছেন, কিন্তু এইরকম পলিটিক্যাল মোমেন্টগুলাও হয়তো হাইলাইট করা যাবে যখন উনি সুবিধাবাদী সামাজিক-রাজনৈতিক-বুরোক্রেটিক গোষ্ঠীর ইন্টারেস্টের বিপরীতে দেশের মানুশের স্বার্থরে উনার পলিটিক্যাল ডিসিশানের সেন্টার কইরা তুলতে পারছেন।…)

উনার এই রাজি না-হওয়ার কারণে আমরা ১৯৯১’র ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন পাইছিলাম। এইটা মনে রাখাটা, এইরকম প্রো-পিপল পজিশনের জন্য খালেদা জিয়ারে রেসপেক্ট করতে পারাটা আমাদের দরকার। এইটা করা হয় না।

সেকেন্ড আরেকটা জিনিস হইতেছে, পাবলিক লিডার হিসাবে উনার একটা ইউনিক কোয়ালিটি আছে, যেইটা আমার মনে হইছে বাংলাদেশের অন্য কোন লিডারের মধ্যেই এইটা নাই। জিয়াউর রহমানের মধ্যেও এইটা ছিল না এতোটা, শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাওলানা ভাসানীও বরং এর উল্টা ধরণটাই ট্রাই করছেন সবসময়। উনারা সবসময় দেশের মানুশের ‘কাছের লোক’ হইতে চাইছেন। আর এই ‘জন মানুশের নেতা’ হইতে গিয়া একদিক দিয়া যেমন পপুলারিটির কাছে নিজের বিচার-বিবেচনারে সারেন্ডার করছেন (ভাসানী), আরেকদিক দিয়া জমিদারিসুলভ প্যার্টিয়ার্কির চর্চা করছেন (শেখ মুজিবুর রহমান)।

একজন পাবলিক লিডারের জন্য দেশের মানুশের সাথে যোগাযোগ রাখাটা সবসময় জরুরি। কিন্তু একটা সার্টেন ডিটাচমেন্টও দরকার, যাতে কইরা এজেন্সিগুলার কাছে জিম্মি না হয়া পিপলস রাইটস নিয়া স্ট্রং একটা পলিটিক্যাল পজিশন নিতে পারেন। খালেদা জিয়া যে অনেক সময় এই পজিশনটা নিতে পারছেন, সেইটা এই ডিটাচমেন্টের জায়গাটা থিকা পসিবল হইছে বইলা আমি মনে করি।

এইটারে দেমাগ বা প্রাইড হিসাবে দেখার ন্যারেটিভ চালু আছে এখন। কিন্তু ক্লোজনেসের নামে পিঠে ছুরি মারার চাইতে, কাছের লোক হিসাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার চাইতে একটা ডিসট্যান্স যে অনেক সময় বেটার একটা পলিটিক্যাল পজিশন – এইটা দেরিতে হইলেও আমরা কিছুটা টের পাইতে পারবো মনেহয়।

আরেকটা জিনিস, এই প্যারামিটারে খালেদা জিয়ারে শেখ মুজিবুর রহমানের চাইতে বেটার পলিটিক্যাল লিডার বলার কারণে যারা ‘হা হা’ রি-অ্যাক্ট দিবেন; উনাদেরকে ‘ব্লক’ করা ছাড়া আমার যে কোন ‘বিকল্প নাই’; আশা করি উনারা এইটা বুঝবেন!

 

অক্টোবর ২৯, ২০২১

এইরকম কথা তো এখন চালু আছে যে, যদি ইলেকশন ঠিকঠাকমতো হয় তাইলে আওয়ামী লীগের এগেনেস্টে কলাগাছ ক্যান্ডিডেট থাকলেও কলাগাছ পাশ করবো। এই কথা যে মিথ্যা না, এর একটা এক্সাম্পল হইতেছে ১৯৯১ সালের ইলেকশন। আমাদের এলাকার আসনে (এক্স-প্রেসিডেন্ট) জিল্লুর রহমান মোটামুটি বিপুল ভোটে ফেইল করছিলেন। উনার এগেনেস্টে বিএনপি’র যেই ক্যান্ডিডেট পাশ করছিলেন, উনার নাম আমার মনে নাই, আমার ধারণা, যারা ভোট দিছিলেন, তাদের অনেকেই মনে করতে পারবেন না এখন। উনার পরিচয় ছিল উনি চিটাগাং ভার্সিটির মেরিন সায়েন্সের টিচার, ভালো মানুশ, নামাজ পড়েন এবং একটা পাওয়ারফুল পরিবারের জামাই। এমনকি ইলেকশনের মিছিল-মিটিং’য়ে উনারে দুই মিনিটের বেশি কথা বলতে দেয়া হইতো না, তাইলেই উল্টা-পাল্টা কথা বইলা ফেলতেন। সংসদে পাঁচ বছর থাইকা একবারই নাকি খালি কথা কইতে গেছিলেন, ইসলামি কোন বিষয় নিয়া, খালেদা জিয়াই নাকি তারে ধমক দিয়া বসায়া দিছিলেন যে, বসেন আপনি, খালি আজাইরা কথা বলেন!

তো, ১৯৯১ সালের পার্লামেন্ট ইলেকশন ছিল আমার হাস্যকর রাজনৈতিক জীবনের শুরুয়াত। তখনো ভোটার হই নাই। মেট্রিক পরীক্ষা দিয়া বইসা রইছি, এইরকম একটা সিচুয়েশন। আমরা আমাদের বাপ-চাচাদের লগে কমান্ডার আবদুর রউফের ইলেকশন করতাম। উনার পরিচয় হইতেছে, উনি নেভি’র লোক, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩৬ নাম্বার আসামী। বাংলাদেশে তখন ১৫/১৬টা আসনে ‘বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা’ (এইরকম কিছু) নামে বামপন্থীরা আওয়ামী লীগের এগেনেস্টে গিয়া ইলেকশন করার ‘সাহস’ দেখাইছিল। পরে অবশ্য অনেক জায়গায় নমিনেশন উইড্র করে নিছিল, রউফ সাহেবরেও বলা হইছিল, কিন্তু উনি করেন নাই। আমরাও হাল ছাড়ি নাই, ব্যাপক মিছিল-মিটিং করার পরে ভোটে জামানত হারায়া ইলেকশন শেষ করছিলাম। মানে, ৫% ভোটও পাই নাই আমরা।

কিন্তু এইটা দিয়া পুরা ঘটনাটা বুঝা যাবে না। কারণ জিল্লুর রহমান সাহেব যে ফেইল করছিলেন, কমান্ডার রউফ সাহেবই ছিলেন এর কারণ। আমরা যেই ন্যারেটিভটা নিয়া কাজ করতেছিলাম, সেইটা হইতেছে, আওয়ামী লীগের নেতারা তো মুক্তিযুদ্ধ করে নাই, উনারা কলকাতাতে গিয়া নিরাপদ জীবন কাটাইছেন। দেশের মানুশের সাথে উনারা ছিলেন না। এইরকম ক্রুশিয়াল টাইমে যারা আস্তে কইরা কাইটা পড়ে তাদের উপর বিশ্বাস রাখা তো ঠিক না!

তো, এই ন্যারেটিভ আসলে বিএনপি’র লোকজনের খুবই পছন্দ হইছিল। মোটামুটি হাজার হাজার লোক হইছিল আমাদের লাস্ট শো-ডাউন মিটিংয়ে। অর্ধেকেরও বেশি লোক ছিল আসলে বিএনপি’র। উনারা আমাদের কথা শুনতে আসছিলেন। এইরকম কথাও শুনছি, বিএনপি’র যদি আজকে এইরকম একটা ক্যান্ডিডেট থাকতো! (কিন্তু রউফ সাব বিএনপি থিকা দাঁড়াইলে তো আর রউফ সাব থাকতে পারবেন না! বামেরাও তো আর উনার পক্ষে থাকবো না তখন। আওয়ামী লীগ থিকা নমিনেশন পাইলে অন্য হিসাব, এইরকম।)

কিন্তু ভোটের দিন আমাদের ন্যারেটিভরে সার্পোট কইরা লোকজন বিএনপি’র ক্যান্ডিডেটরে ভোট দিল। মন-খারাপই হইছিল, লোকজন সার্পোট করলো, কিন্তু ভোট দিলো না ক্যান? তো, এখন আরো ক্লিয়ারলি আমি বুঝতে পারি যে, পলিটিক্যাল আইডিওলজি আর পলিটিক্যাল এক্টিভিটি দুইটা রিলেটেড অবশ্যই, কিন্তু আলাদা জিনিস সবসময়। কথা আর কাজ যেমন আলাদা জিনিস, অইরকমই। ন্যারেটিভ দিয়া পলিটিক্সের ভিত তৈরি হইতে পারে, কিন্তু পলিটিক্স করার জিনিস, কথা-বলার জিনিস না।…

২.
তো, পরেরবার ১৯৯৬ সালের ইলেকশনে বাম-টাম কিছু ছিল না। রউফ সাহেব ইলেকশন করছিলেন কিনা মনেও নাই। আমরা ইলেকশনের ধারে-কাছেও যাই নাই। যেইসব বামপন্থীরা আগেরবার জিল্লুর রহমানের এগেনেস্টে ক্যাম্পেইন করছিলেন, তারা কানে ধইরা মাফ চাইয়া জিল্লুর রহমানের ইলেকশন ক্যাম্পেইন করলেন বা চুপ থাকলেন। ঢাকার সেন্ট্রাল পলিটিক্সের বাটপারি দেইখা ততদিনে আমিও রাজনীতি থিকা একশ হাত দূরে থাকার লোক তখন।

৩.
এইসব কথা মনে হইলো, কয়েকদিন আগে গণ অধিকার পরিষদের কমিটি দেইখা। উনারা পলিটিক্স করতেছেন না – তা না। বরং উনাদের পলিটিক্যাল ন্যারেটিভ বাকশালের ন্যারেটিভের চাইতে আলাদা কিছু না। বা ডিফরেন্সের জায়গাগুলা উনারা স্পষ্ট করতে পারেন নাই। কমান্ডার আবদুর রউফ সাহেব’রে এই কারণে লোকজন ভোট দেই নাই যে, ভোট দিলে তো উনি পাশ করবেন না! বরং বাম আর আওয়ামী লীগ তো একই জিনিস! এইটা খুব বাজে একটা প্রপাগান্ডা বাম-বাটপারদের যে, আওয়ামী লীগ আর বিএনপি একই জিনিস, দুইটাই বুর্জোয়াদের দল! অথচ ন্যাশনালিস্ট জায়গা থিকা আওয়ামীলীগ আর বামেরা একই বরং – বাঙালি জাতীয়তাবাদের দল। যেইখানে বিএনপি ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের’ জায়গাটারে পুরাপুরি একটা থিওরেটিক্যাল বেইজের উপর দাঁড়া করাইতে না পারলেও ন্যারেটিভ হিসাবে যে আলাদা – এইটা অন্তঃত ক্লিয়ার পাবলিকের কাছে, তাদের পলিটিক্যাল এক্টিভিটির ভিতর দিয়াই।

একটা রাজনৈতিক দল হিসাবে আপনি বাকশালের চাইতে কোন কোন জায়গাতে আলাদা, সেইটা স্পষ্ট করতে না পারলে, আরেকটা ‘ভালো আওয়ামী লীগ’ হইতে গেলে সেইটা একটা এন্টি-পিপল রাজনৈতিক অবস্থার বাইরে কোনদিনই যাইতে পারবে বইলা আমার মনেহয় না। আর যখন এই জায়গাগুলা স্পষ্ট হইতে পারে না, তখন এই ধরণের রাজনৈতিক ঘটনাগুলা দেশের সুবিধাবাদী সরকারি আমলা, পুলিশ, মিলিটারি, বিদেশি-শক্তি’র কাছেই এক ধরণের কনফিডেন্স শো করতে চাইতেছে বইলা সন্দেহ হয়, যে, না, আমরাও সার্ভিসটা দিতে পারবো আপনাদের! মানে, এইটা ফ্যাক্ট হিসাবে সত্যি না, সন্দেহ হিসাবে ভ্যালিড হইতে পারে কিনা, ভাবতে পারতে হবে আমাদের।

মানে, ব্যাপারটা খালি এক্সিকিউশন, ইমপ্লিমেন্টশনের বা পলিটিক্সের সমস্যা বইলা ভাবলে ভুল হবে; যে, বাকশালি লোকজন ‘খারাপ’, এই কারণে উনারা খারাপ কাজ করেন। যে কোন ‘খারাপ কাজ’ বেশিরভাগ সময়ই হইতেছে একটা ‘ভুল চিন্তার’ ঘটনা। বাংলাদেশে নতুন পলিটিক্স অবশ্যই জরুরি, কিন্তু সেইটা যদি বাম-বাকশালি বয়ানের বাইরে না যাইতে পারে, সেইটা আগে আর পরে একই ট্রাপে পড়ার, একই জায়গাতে গিয়া সারেন্ডার করার সম্ভাবনাটারে জাগায়া রাখবে সবসময়।

 

অক্টোবর ৩০, ২০২১

যে কোন ইমোশনই ফিরা ফিরা আসে, একটা ইমোশনাল লুপ তৈরি করে। প্রেম, ঘৃণা, হতাশা, রাগ, ডর, ভালো-লাগা… এইরকম জিনিসগুলা চারপাশের ঘটনার রেসপন্স হিসাবেই আসে; কিন্তু এইটাও মনেহয় যে, ইমোশনাল রেসপন্স হিসাবে বাইর হওয়ার জন্য বইসা থাকে, আমাদের মনের ভিতরে।

কয়দিন পরে পরেই দেখবেন, খামাখাই ভাল্লাগতেছে, সিজন চেইঞ্জের বাতাস আসছে, রাস্তায় একটা ছোট্ট বাচ্চা প্যাঁক প্যাঁক করতেছে। আবার একই ঘটনাতেই অন্য কোন সময় বা অন্য কারো মনে হবে – আবার বালের শীত আসতেছে, পানি গরম কইরা গোসল করা লাগবে; বাচ্চাগুলারে বাপ-মা খেয়াল করে না, একসিডেন্ট হইলে, কেয়ারলেস মানুশে দুনিয়া ভরা!

এইরকম দুনিয়াতে অনেক ঘটনা যেমন আছে, ঘটনার প্রতি আমাদের যে রেসপন্স সেইগুলাও কম-বেশি লিমিট করা-ই। (শুধু পারসপেক্টিভ বইলা ভাবলে মনেহয় ভুলই হবে।) মানে, নতুন রেসপন্স দেখাইতে হবে – এইটা জরুরি না হইলেও ঘুইরা-ফিরা একই রেসপন্স দিতে থাকাটা ঘটনাগুলারেও তো ক্লান্ত কইরা তোলার কথা একভাবে। 🙂

#########

এই জিনিসটা আমি খেয়াল করছিলাম ‘বাসা-বাড়িতে রান্না-বান্নার কাজ করেন’ এইরকম দুইজন মহিলার আলাপে। গুলশান এলাকায়, একদিন সকালবেলা রাস্তার পাশে চা খাইতেছি। (দুয়েক বছর আগে তখনো গুলশানে রাস্তার পাশে চা’য়ের দোকান ছিল।) তখন একজন মহিলা কাজ করতে যাওয়ার আগে চা খাইতেছিলেন, আরেকজন উনার সাথে দেখা করতে আসার পরে, উনারা আলাপটা করতেছিলেন।

একজন বলতেছিলেন, রান্নাঘরেও সিসি-ক্যামেরা লাগাইছে, কেমনটা লাগে বলেন! কাজকাম করার সময় কাপড়-চোপর কি ঠিক থাকে সবসময়! এখন মহিলা দেখলে এক কথা, মহিলার জামাই, পোলা আছে না! ওরাও এইগুলা দেখে না!* দুই পয়সার চিনি-লবণ চুরি ঠেকানোর লাইগা সিসি-ক্যামেরা লাগে! আরেকজন বলতেছিল, তাইলে তুই কি করোস? অন্যজন উত্তর দিলো, কি করবো! আমার কাজ আমি করি। দেখলে দেখুক, আমি কি করবো!…

তো, উনাদের কথা শুইনা মনে হইছিল আমার, এই যে আমাদের চারপাশে সিসি-ক্যামেরা, হ্যাক-ট্যাক, স্টকিং… এইসব চালু আছে, এরা আমাদেরকে অই ডর’টাই দেখাইতে চায় যে, ‘বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং!’ তো, দেখুক গা! কি হইছে! এইরকমের একটা এটিটুড নিয়া আমাদেরকে চলতে হবে।

বাইরে সিসি-ক্যামেরা লাগায়া আমাদের মনের ভিতরে সিসি-ক্যামেরা লাগায়া দিতে চাইতেছে আসলে অথরিটির লোকজন। আমাদেরকে অই সিসি-ক্যামেরা এড়ায়া চলতে হবে না, বরং মনের ভিতরে নিয়া নেয়া যাবে না। অস্বস্তি তো থাকেই, তারপরেও যতোটা কম অস্বস্তি রাখা যায় মনের ভিতর, তত বেটার।

যেইটা ঠিক মনে করি, সেই কথাগুলা পাবলিকলি বলতে পারতে হবে আমাদেরকে। কোন anguish ছাড়া বলার ট্রাই করতে হবে। সিসি-ক্যামেরা বা এইরকম টুলগুলা অই এংগুইশগুলারেই ইন্সটিগেট করে আসলে।

‘ভালো’ হইতে হবে না, বরং ‘ভালো হয়া থাকতে হবে’! এইরকম একটা প্রেশারের ভিতরে রাখতে চায় সবসময়। তো, আমার কথা হইতেছে এই জোর কইরা ‘ভালো’ হওয়ার টেনশনটা নেয়া যাবে না। ক্যামেরা না থাকলে যতটুক ‘ভালো’ ক্যামেরা থাকলে এর বেশি ‘ভালো’ হওয়ার চাপ নিতে গেলেই মুশকিল। ক্যামেরা বা নজরদারি’রে আমাদের কথা-বলার, কাজ-করার রিয়ালিটির সেন্টার করা যাবে না। (এইটা অবশ্যই সলিউশন না, কিন্তু এক্ট করার জায়গা থিকা বলতেছি আমি এই কথা।)

পায়ের মধ্যে কাঁটা নিয়া বেশিদূর পথ হাঁটা যায় না। আগে এই (চাপায়া দেয়া নজরদারি’র রিয়ালিটির) কাঁটা’টারে তুলে ফেলতে হবে। পায়ের কাঁটা’রে মনে তোলা যাবে না। ‘গোয়েন্দা নজরদারি’ জিনিসটারে একজন সাধারণ মানুশ হিসাবে এইভাবে ডিল করাটা বেটার অপশন আমার কাছে।


* স্নোডেন সিনেমাটাতে (ডকুমেন্টারিটা না) এইরকমের একটা কাহিনি আছে, যেইখানে সিআইএ’র লোকজন টাকা-পয়সাঅলা লোকজনরে ব্ল্যাকমেইল করে, তাদের পারসোনাল ইনফরমেশন দিয়া। এক বিলিওনিয়ারের টিনএইজ মেয়ের এফেয়ার লিক কইরা দেয়াতে মেয়েটা সুইসাইড এটেম্পড করে, তখন অই লোকের আরো সিক্রেট যে জানে, সেইটা জানায়া টাকা নেয়।

তো, অন্য যে কোন দেশেও এইরকম টেকনোলজিক্যাল এডভান্সমেন্ট 🙂 না থাকলে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের জায়গাগুলা কইমা আসতে থাকবে; যার ফলে এই ‘সিকিউরিটি উইপেনগুলা’ খালি পলিটিক্যালি না, বরং নিরাপত্তা বাহিনিগুলার পাওয়ার ও ইনকাম বাড়ানোর জন্য মাস্ট একটা জিনিস।

আমার মনে হইতেছিল, এইরকম পারসোনাল চুরি-চামারির কথা সিআইএ’র উপরের দিকের লোকজন জানে না – তা ন, বরং এইরকম ঘটনাগুলা আল্টিমেট থ্রেটের জায়গাটা ক্রিয়েট করতে হেল্পই করে সবসময়।

#########

বোধিচিত্ত

বোধিচিত্ত’র ইউটিউব ভিডিওগুলা তো ভালো। অনেকগুলা দেখছি আমি। কয়েক বছর আগে বোধিচিত্তের একজনের সাথে দেখাও হইছিল, তখন সামনাসামনিই বলছিলাম উনারে। কিন্তু উনি তখন বলতেছিলেন, এইটা আর কন্টিনিউ করবেন না উনারা, তখন হতাশই হইছিলাম, বলছিলাম, এমন না যে, উনাদের প্লাটফর্মে যারা লেকচার দেন তাদের সবার কথার লগে আমি ‘একমত’; কিন্ত এইরকম প্লাটফর্মগুলা তো দরকারি জিনিস। কন্টিনিউ করতে পারলে বেটার।

তো, উনাদের লগে কোন জায়গাতে আমি ‘একমত না’; সেইটা স্পষ্ট করা হয় নাই। গতকালকে Shawon Chisty’র শেয়ার করা রাজশাহী ভার্সিটির টিচার আবদুল্লাহ আল মামুনের (আ-আল মামুন না) আলাপ’টা শুনতে গিয়া অই জিনিসগুলা মনে হইলো আবার।

এক নাম্বার পয়েন্ট হইলো, আলাপগুলা ক্লাসরুম লেকচার না হইলেও একাডেমিক ঢং’টাই মেইন। একটা কারণ তো অবশ্যই যে, যারাই কথা বলেন, তাদের (সবাই না হইলেও) বেশিরভাগই ভার্সিটির টিচার, যার ফলে উনাদের চিন্তা-ভাবনা বা কাজকামের ফর্ম একই রকমের। এই ‘একাডেমি’ জিনিসটা ভালো বা খারাপের চাইতে সার্টেন ফর্মের ঘটনা; যেইটার ক্রিটিক, অল থ্রো মিসিংই মোটামুটি। এই আলাপটাতে যেমন, আবদুল্লাহ আল মামুন বলতেছিলেন, উনি ‘সাহিত্যের জায়গা’ থিকা ওয়াল্টার বেনজামিনরে দেখতেছেন, ফিলোসফির জায়গা থিকা না। মানে, একাডেমিক ক্যাটাগরিগুলা এগজিস্ট করে না – তা না; কিন্তু ব্যাপারগুলা যে ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি ঘটনাই খালি না, বরং এইরকম ক্যাটাগরির জায়গা থিকা দেখাটা যে কিছু অসুবিধাও তৈরি করতে পারে, সেই জায়গাগুলা নিয়া কনশাস হইতে পারে না।

সেকেন্ড হইতেছে, এই একাডেমিক হওয়ার কারণে উনারা যেই রেফারেন্স ইউজ করেন, সেইটা মোস্টলি লিনিয়ার। মানে, একটা ট্রাডিশনাল মাইনাই চলতেছে না, যেই একটা সিলসিলা মাইনা চলে, সেইটা ঘরানা হিসাবে লিনিয়ার। খেয়াল কইরা দেখবেন, অন্য অনেক কিছুর বাইরে, এইরকম লিনিয়ার রেফারেন্স ফলো করেন না বইলাই ফরহাদ মজহার’রে অনেক বড় দার্শনিক এবং অনেক রেফারেন্স ইউজ করতে পারেন বইলা সলিমুল্লাহ খানরে অনেক জানা-বোঝা লোক মনেহয়। ভার্সিটির টিচার’রা বা বোধিচিত্তের লেকচারে রেফারেন্সের এই লিনিয়ারিটি’র কারণে মনেহয় অনেক কিছু জানা গেলো, কিন্তু অলমোস্ট নতুন (সেইটা ভুল হোক বা ঠিক হোক) কোন চিন্তার দেখা আপনি পাইবেন না। মানে, দাবি করার মতো কিছু নাই যে, এই লেকচারে নতুন সিগনিফিকেন্ট একটা আর্গুমেন্ট বা চিন্তা হাজির করা হইছে। (হয়তো থাকতে পারে, আমার চোখে পড়ে নাই। বা যদি থাকতো তাইলে অইগুলা নিয়া আলাপ তো একভাবে শুরু হওয়ার কথা এতোদিনে।…)

থার্ড জিনিসটা একটু ট্রিকি, অইভাবে ভিজিবল না। আমার মনে হইছে, অডিয়েন্স হিসাবেও এক ধরণের ‘এনলাইটেন্ট অডিয়েন্স’ এক্সপেক্ট করা হয়। যে কলেজ পাশ কইরা আসতে হবে, বা দুই-চাইরটা নাম জাইনা আসতে হবে। মানে, ‘সাধারণ পাবলিক’র জন্য না এই আলাপ। সিরিয়াস, জানা-শোনা লোকেরা ডিপ-থটের কিছু আলাপ করতেছেন। তো, ব্যাপারটা যতোটা না ডিপ-থটের মামলা, তার চাইতে অনেক সময় এলিয়েনেশনের ঘটনাও মনে হইছে। মানে, লেকচারগুলা অবশ্যই পাবলিকের জন্য না, একটা সিলেক্টেড অডিয়েন্সের লাইগাই; কিন্তু পাবলিক বুইঝা ফেললে মান-ইজ্জত একটু ‘ক্ষুন্ন’ হইতে পারে, এইরকম একটা বেরিয়ার মনে হইছে থাকতে পারে, টার্ম-র্টুম দিয়া ব্যাপারগুলারে একটু খোলাসা করার বদলে আরেকটু মোর একাডেমিক করার একটা আর্জ আছে, এইটা ফিল করছি আমি। তবে এইটার দোষ আমি আমারেই দিতে চাই বেশি।

তো, টেক্সটের চাইতে অডিও-ভিডিও কনটেন্টের নিড/চাহিদা/দরকার যেইরকম বাড়তেছে অইভাবে বাংলা-ভাষায় ইন্টেলেকচুয়াল কনটেন্ট আমরা পাইতেছি না আসলে। আমার ধারণা, এই হায়-হুতাশ বেশিদিন করতে হবে না আমাদের। দেখা যাক…

২.
তো, আবদুল্লাহ আল মামুনের আলাপ’টা নিয়া বলা হইলো না কিছু। উনার লেকচারটা ভালো। একটা জিনিস তো খুবই পছন্দ হইছে, উনি যেইটা গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের রেফারেন্স দিয়া বলতেছিলেন যে, সেক্যুলারিজম বা অসাম্প্রদায়িক ধারণার কারণেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনাগুলা ঘটে। তবে আমার সন্দেহ হইতেছে, সেক্যুলারিজম যতোটা না ক্রিশ্চান, তার চাইতে অনেকবেশি প্যাগান; যার ফলে হিন্দুজমের লগে তেমন কনফ্লিক্টিং জায়গাতে যাইতে পারে না।… তারপরে উনি নলেজের যেই তিনটা স্তরের কথা বলতেছিলেন, যেইখানে রেশনালিজম দিয়া একটা সার্টেন এরিয়ারেই কাভার করতে পারি আমরা। এইরকম জিনিসগুলা ভাল্লাগছে।

কিন্তু মুশকিল হইতেছে, উনি এইগুলারে নিছেন বা দেখছেন স্পার্ক হিসাবে, আলাপের বেইজ কইরা তুলতে পারেন নাই। একটা একাডেমিক বা অরজিনাল জায়গা থিকা সরতে পারেন নাই। এইটা খুব শ্যালোভাবেই বাইর হয়া পড়ছে ‘বিজনেস’ শব্দটার অরিজিনাল মিনিং বাইর করতে গিয়া। আমি যেহেতু টুকটাক একো পড়ছি, এই কারণে বলতে পারতেছি জিনিসগুলা শ্যালো, কিন্তু অরিজিনাল-মনা অনেকের কাছেই এইটা স্পার্কিং লাগার কথা। যেইটা আসলে নলেজের ব্যাপারে একটা অবস্টেকল বইলা মনেহয় আমার কাছে। মানে, কেরামতি তো কিছু থাকেই, কিন্তু অইটা লক্ষ্য না হয়া উঠলে ভালো আর কি।

এমনিতে টিচার হিসাবে উনি খুবই পপুলার বইলা মনে হইছে আমার। কারণ উনি, ‘কাঠখোট্টা’ জ্ঞানের কথা বলেন না সবসময়, মাঝে-মধ্যেই পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্সগুলারে ইনসার্ট করেন এর লগে। যার ফলে কথাগুলা ‘যুক্তিপূর্ণ’ হয়া উঠে না অবশ্যই, কিন্তু মোর এন্টারটেইনিং হইতে পারে। এইটাও দরকারি জিনিস তো আসলে। যদিও ওয়াল্টার বেনজামিন এর উল্টা কাজটাই করছেন বইলা আমার মনে হইছে। উনি ইন্টেলেক্টচুয়ালিটি জিনিসটারে সাহিত্যের ইমপারসোনালিটির জায়গার লগে কানেক্ট কইরাই দেখতে চাইছেন মনেহয়, কিছুটা। মানে, এইরকম একটা পারসপেক্টিভ সাজেস্ট করা যাইতে পারে কিন, এই কথা ভাবা যাইতে পারে।…

 

অক্টোবর ৩১, ২০২১

গোপন প্রেম

শামসুর রাহমানের এই ঘটনা’টা ইন্টারেস্টিং। উনি মারা যাওয়ার পরে উনার ছেলের বউ লেখছিলেন মনেহয় কোথাও। যে, মারা যাওয়ার কয়েক বছর আগে মেবি, পিজি হসপিটালে ভর্তি হইছেন। আর অইখানে যেই নার্স ছিল উনারে দেখার দায়িত্বে, তাঁর প্রেমে পড়ছেন উনার শ্বশুর। তো, উনার ছেলের বউ বলতেছিলেন, একদিন দুপুরে নার্স আসতে দেরি করতেছিল; আর শামসুর রাহমান উতলা হয়া উঠছেন, বলতেছেন, এতো দেরি করতেছে কেনো! এখনো আসার সময় হয় নাই ওর! রীতিমতো রাগ করতেছেন। উনার এই অভিমানী অবস্থা দেইখা ছেলের বউ হাসতেছে তখন।

আমার ধারণা, শামসুর রাহমানের সবসময় এইরকম গোপন-প্রেম টাইপের ব্যাপার ছিল। যেইটারে মিউজ বলি আমরা। উনার নরোম-সরোম প্রেমের কবিতাগুলা পড়লে এইরকম মনেহয়।

#########

“Culture is… better understood not only by what became dominant, but also through what fell by wayside.” – Romila Thapar

খালি রমিলা থাপারই এই কথা বলছেন – তা না, টনি মরিসনও কইছেন, সাহিত্যে যা বলা হয় না, সেইটা বলা জিনিসের চাইতে কম ইম্পর্টেন্ট না; টারানটিনোও কইছেন, ক্যামেরার ফ্রেমের বাইরে কি থাকে, সেইটাও দরকারি একটা জিনিস; ওং কার ওয়াই বলতেছিলেন, ২০৪৬-এ যখন একজন ফিমেইল প্রটাগনিস্টের ঠ্যাং দেখাইতেছিলেন তখন তারে ন্যুড হইতে বলছিলেন, অইটা ফ্রেমে নাই, কিন্তু অইটা যদি না থাকে তাইলে ক্যামেরায় সেনসেশনটা ক্রিয়েট হবে না। এইরকম আরো শ’য়ে শ’য়ে এক্মাম্পল পাওয়া যাবে হয়তো। যেইখানে, আমাদের চোখের সামনে যা আছে, সেইটাতেই আটকায়া না থাকতে বলা হইতেছে। যেমন ধরেন, বাংলাদেশের এখনকার যা অবস্থা, খালি যদি টিভি-পত্রিকার নিউজের কম্পাইলেশন করেন, তাইলে যেইটা পাবো, সেইটা খালি ফার ফ্রম ট্রুথ না, বরং অন্য একটা রিয়ালিটি, যেইটা কমপ্লিট কোন জিনিস তো না-ই, একটা বানানো-ঘটনার কারখানা।

তো, এইরকম, পুরাণগুলা, রাজা-বাদশাদের কাহিনিগুলারে, কোটিল্যের অর্থশাস্ত্র, মনুসংহিতা, এইসব টেক্সটরে সেন্টার বা অথেনটিক ধইরা নিয়া হিস্ট্রির আলাপ করলে মুশকিল। অই সময়ে রাজ-দরবারের সাহিত্যের বাইরে বিশাল একটা পাবলিক লিটারেচার ছিল যেইগুলা ওরাল থিকা রিটেন ফর্মে তখনো আসতে পারে নাই। (খ্রিস্টিয় ৩০০ – ৭০০ শতকের কথা।) অইখানে ঘটনাগুলা একই রকমের না। এই কারণে, কোন রেফারেন্সের বেসিসে কোন ডিসিশানটা আমরা নিতেছি, সেইটা খেয়াল করতে পারাটা ডিসিশানের চাইতেও জরুরি একটা জিনিস সবসময়।

 

Leave a Reply