নোটস: নভেম্বর, ২০২১ [পার্ট ১]

নভেম্বর ১, ২০২১

এই জিনিসটা ফার্স্ট খেয়াল করছিলাম Dan Ariely’র একটা লেকচারে মনেহয়। উনি একটা এক্মাম্পল দিতেছিলেন কোন স্ক্যান্ডেনেভিয়ার কান্ট্রি’র যে, একটা ফর্মের প্যাটার্ন চেইঞ্জ কইরা কিভাবে হিউম্যান অর্গান ডোটেশন ২০% থিকা ৮০%-এ (মানে, এইরকম একটা জাম্পিং ফিগার) নিয়া যাওয়া গেছিল। ফার্স্টে কোশ্চেনের প্যাটার্নটা মনেহয় না-টাইপের ছিল যে, মরার পরে কোন অর্গান দিতে চান, কেমনে দিতে চান, ডিটেইল বলেন… এইরকম; আর পরের কোশ্চেনটাতে ধইরা নেয়া হইলো যে, আপনি সবকিছুই দিতে চান, কোনটা দিতে চান না – সেইটা বলেন। তো, টেকনিক হইলো, মানুশ এতো ডিটেইলে যাইতে চায় না। তো, এইখানে আমার রিডিং হইতেছে যে, যা আছে, মানুশ-জন সেইটারেই মাইনা নেয় না, বরং যেইটারে আপনি ‘গ্রাউন্ড রিয়ালিটি’ বানায়া দিতে পারেন, তাইলে সেইটা নিয়া কোশ্চেন কম হবে। এইখানে যেমন, ফার্স্টে ছিল ‘কেউ ডোনেট করতেছে না’, পরে সেইখানে গ্রাউন্ড রিয়ালিটি করা হইছে ‘সবাই তো অর্গান ডোনেট করতেছে’। যেমন ধরেন, কাউরে যদি আপনি ‘খারাপ লোক’ বানায়া দিতে পারেন, তাইলে ইর্ম্পটেন্ট কথা কইলেও ধইরা নিতে পারেন, ‘লোক তো খারাপ!’ একইরকম ভাবে, ‘ভালো লোক’ বানায়া দিতে পারলে দেখবেন, ভালো লোক যেহেতু ভালো-কবিতাই তো লেখবে মনেহয়! 🙂 মানে, এইরকম গ্রাউন্ড রিয়ালিটির জিনিসগুলা আছে।

তো, অই জিনিসটা গতকালকে মনে হইলো, আরো দুইটা জিনিস খেয়াল কইরা।

এক হইতেছে, ফেসবুকে যে অপশন আছে, ৫/৬টা রিঅ্যাকশন দেয়ার বা শ’খানেক ইমোজি আছে; অইগুলা দিয়াই আমাদেরকে ফেসবুকে রেসপন্স করতে হয় ব্যাপারটা খালি এইরকম না, বরং যখন আপনি পোস্ট দেয়ার কথা ভাববেন তখন অই ইমোশনগুলার কথাই মাথায় থাকে একভাবে। মানে, অবশ্যই কেউ ভাবেন না যে, একটা এংগ্রি পোস্ট দিবো, একটা লাভ-রিঅ্যাক্টের পোস্ট দিবো, একটা হাহা-রিঅ্যাক্টের পোস্ট দিবো; কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে এই ইমোশনগুলা থাকার কথা একভাবে। এমন জিনিসও পাইবেন যে, দুই-তিনটা রি-অ্যাক্ট দিয়াও জিনিসটারে কাভার করা যাইতেছে না! মানে, তাই বইলা অইটা খুব একসাইটিং জিনিস না (মানে, একসাইটিং তো অবশ্যই); বরং অই ইমোশনাল লুপগুলারে মিলায়া-ঝুলায়া ভাবতে পারার ঘটনাই, তার বাইরে না কখনোই। [এই পোস্ট কি তাইলে ওয়াও-রিঅ্যাক্টের জন্য লেখতেছি আমি 🙂 এইরকম না ভাবলেও, ভাবনাটা চইলা আসে না একভাবে, কিছুটা?]

এইটা খালি ফর্ম দিয়া ভাবতে পারার ঘটনা না, ফর্মের ভিতরে নিজের চিন্তাগুলারে আটায়া ফেলতে পারার একটা ঘটনা। এখন ফর্মগুলা তো আছে সবসময়, শব্দগুলা দিয়াই আমাদেরকে চিন্তা করতে পারতে হয়, কিন্তু এর ভিতরে আটায়া ফেলতে হবে – এইটা যে একটা অবস্টেকল বা বাধা, এইটারে রিকগনাইজ করতে পারাটা দরকার।

এই জায়গায় আসে থার্ড ঘটনা’টা। গতকালকে একটা কবিতা লেইখা নাম দিছি প্যাস্টোরাল (Pastoral) লাইফ। লেখছি কিছুদিন আগেই, কিন্তু ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার আগে ভাবতেছিলাম, ডিকশনারি মিনিং’টা কি দেখি একটু। এমনিতে একটা মিনিং তো জানি-ই, পেইন্টিং-টেইন্টিং দেখছি, বাংলায় যারে বলে, যাযাবর জীবন টাইপের জিনিস, পশু-পালনের দিন…। কিন্তু গুগুল ট্রান্সলেটরে দেখতে গিয়া মোটামুটি ভয় পায়া গেলাম। আমারে দেখাইতেছে, যাজক জীবন! আরে ভাই, না হয় গত কয়দিন থিওলজির কিছু জিনিস নিয়া নাড়াচাড়া করছি, তাই বইলা ধর্মতত্ত্বের জায়গা থিকা আমারে বাইর হইতে দিবে না! এবং আর কোন অপশনাল মিনিংও নাই, এইরকমের একুরেট!

এই জায়গাতে শব্দের মিনিং নিয়া পুরান কথাগুলা মনে হইলো আবার। ডিকশনারিতে যেইরকম প্রসেসে এন্ট্রি দেয়া হয়, যে এর একটা বা ৪/৫টা মিনিং আছে; অথচ ব্যাপারটা তো এইরকম না। শব্দেরও জন্ম-মৃত্যু আছে তো, এবং জায়গা অনুযায়ী ডিফরেন্ট মিনিং। যেমন ধরেন, কুয়া শব্দটা, একটা সময় খুবই ইউজ হওয়ার কথা, যখন গ্রামে-গঞ্চে, প্রতিটা পাড়াতেই একটা কুয়া থাকাই লাগতো; শব্দ হিসাবে আমার ধারণা, ১৯৫০ সালের পর থিকা মরতে শুরু করছে, চাপকল আসার পর থিকা (টাইমলাইন ভুল হইতে পারে); কিন্তু এখনো বাঁইচা আছে। একশ বছর পরে মারা যাবে কিনা বা নতুন কইরা বাঁইচা উঠবে কিনা ডিপেন্ড করে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উপর। কিন্তু ‘উদকুম্ভ’ জিনিসটা কখনো বাংলা-ভাষায় ছিল কিনা আমার সন্দেহ আছে, কলোনিয়াল আমলে সংস্কৃত পন্ডিতরা মেবি এই শব্দটা বাংলা ডিকশনারিতে ঢুকায়া দিছেন। [মানে, সন্দেহই, ফ্যাক্ট হিসাবে জানি না।] এইরকম ‘ডিকশনারি শব্দগুলারে’ আমাদের বাদ দিতে হবে।

আবার ইউজের কারণেই দেখবেন, মিনিং পাল্টায়া যাইতেছে। ইংরেজিতে নেট বলতে মাছ-ধরার জালই বুঝতাম আমরা, আলাদা কইরা ফিশ-নেট বলা লাগতো না, কিন্তু এখন নেট কইলে ইন্টারনেটই বুঝবো আমরা। ‘মেইল করছি তো’ কইলে ইমেইলই বুঝবো, কুরিয়ারে/ডাকে পাঠানো চিঠি না। বাল বলতে হিন্দি’তে চুল, বাংলাতে গাইল; এমনকি ‘বিশ্রী’ কিছু থিকা ‘বিরক্তিকর’ কিছুতেও কনভার্ট হওয়ার কথা এখন।…
এইরকম শব্দের ব্যাপারে আমি বলতে চাই, ফিক্সড কোন মিনিং নাই – এইটা তো আছেই; তাই বইলা কোন মিনিং নাই – এই এক্সটেন্ড পর্যন্ত যাওয়ারও দরকার পড়ে না। একটা শব্দের শুরু যদি ১৭০০ সালে হয়, ১৮০০ সালে আইসা সেইটা চেইঞ্জ হইছে কিনা, ১৯০০, ২০০০-এ এর ইউজ আছে কিনা – এইরকম টাইমের বেসিসে দেখতে পারা দরকার। নিশ্চিতভাবেই ১০/২০ হাজার শব্দ পাওয়া যাবে, যার মিনিংয়ে হয়তো তেমন কোন চেইঞ্জ হয় নাই। আবার, ২০/৩০ হাজার শব্দ হয়তো পাওয়া যাবে জন্মাইছে আর মারাও গেছে। গড়ে বছরে দেখা যাবে ৫/৭ হাজার শব্দ জড়োও হইতেছে। এইরকম ঘটনাগুলা এইখানে আছে।

অথচ ভাষা, শব্দ, মিনিংয়’রে আমরা বুঝতে চাইতেছি ডিকশনারি টাইপ কন্সটেন্ট একটা প্যারামিটার দিয়া! এইটা খালি সমস্যার ঘটনাই না, একটা অবস্টেকলও, গ্রাউন্ডগুলারে খেয়াল করাটা। এইটা খালি ভাষার লিমিটেশন না। অন্য চিন্তাগুলার জায়গাতেও এইটা কাজ করে। ইকনোমিকসে ধরেন, জিডিপি গ্রোথ, ফরেন-ডাইরেক্ট-ইনভেস্টমেন্ট, এইসব হাবিজাবি জিনিসগুলা যে আসলেই হাবিজাবি টাইপের জিনিস, এইটা যে আমরা মানতে পারি না, মোটামুটি এইরকম কন্সট্যান্ট চিন্তারই একটা রেজাল্ট। মানে, এই এক্সটেন্ড পর্যন্ত আমি ভাবতে চাই।…

#########

২০০৭ সালে মিলিটারির নামে চলা তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন রাজশাহী ভার্সিটির টিচার সেলিম রেজা নিউটন ও আ-আল মামুনদেরকে গ্রেফতার করছিল, তখন ইন্টেলেকচুয়াল মত-বিরোধ (নিউটনদের এনার্কির সমাজের বিপরীতে আমি মনে করি দরকার একটা কমপ্যাশনের/দরদের সমাজ) থাকার পরেও কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই আমরা এর বিপক্ষে কথা বলতে পারছিলাম। কিন্তু আজকে আমার আরেক বন্ধু (মানে, আমি এই দাবি করতে পারি বইলা মনে হইছে) শিবু কুমার শীলের বিরুদ্ধে যখন মামলা হইছে তখন উনার সাথে আর্টের জায়গাতে বিরোধী-অবস্থান (উনার প্রগতিশীলতা জুলুম-বিরোধী একটা পজিশন নিতে পারে না বইলাই আমি মনে করি) থাকার পরেও অবৈধ সরকার ও অবৈধ আইনের বিরুদ্ধে কথা কইলে মনে হইতে পারে যেন, আমি উনার রাইটসের পক্ষে কথা বলতেছি না!

এইরকম একটা ন্যারো পলিটিক্যাল সিচুয়েশন আজকে ১৪ বছর পরে বাংলাদেশে আমরা আমাদের জন্য তৈরি করতে পারছি। ধর্মরে আমরা শক্র বানাইছি। কালচারাল ডিফরেন্সগুলারে বানাইছি পলিটিক্যাল উইপেন। জুলুমের নতুন মুখোশগুলারে আমরা চিনতে রাজি হইতেছি না। নয়া বাকশালরে শত্রু ভাবতে পারতেছি না। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনরে শক্রু বলতে পারতেছি না। কিন্তু এতে কইরা জুলুম কমে নাই, বরং বাড়ছে।

হাজার হাজার লোকরে বিনা পরোয়ানায় জেল-হাজতে রাখা হইতেছে, রিমান্ডে নিয়া পিটানো হইতেছে। অইগুলা ‘সাম্প্রদায়িক’ ইস্যু না বইলা কোন সেনসেশন ক্রিয়েট করতে পারতেছে না। ‘ধর্ম-বিরোধিতা’ আর ‘নারী অধিকারের পক্ষে’ কথা বলাও হয়া উঠছে ইউরোপে এসাইলাম নেয়ার টিকিট একটা।

[আমারেই কয়দিন আগে একজন জিগাইতেছিলেন, ভাই কি জিয়া হাসানের মতন এসাইলাম নিবেন নাকি? এখন এর কি উত্তর দেয়া যায়! নিরব থাইকাই হাসলাম। কইলাম, এইটা নিয়া একটা গল্প লেখছিলাম আমি, ২০১৬ সালে। গল্প যেহেতু, সরাসরি বলা হয় নাই অইভাবে; কিন্তু একটা স্কেচ এইরকম ছিল যে, অনলাইনে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়া এসাইলাম নেয়া যায়। অনেকে যেমন ‘ধর্ম-বিরোধী’ হয়া এই ট্রাই করতেছেন, অনেকে ‘সরকার-বিরোধী’ হয়াও ট্রাই করতেছেন, শুনছি। আল্লা দুইদলের আশাই পূরণ করুক।]

এইগুলা করতে গিয়া দেশের মানুশরে শত্রু বানাইতেছি আমরা। বন্ধুত্বের জায়গায় বেড়া দিতেছি, সন্দেহ বাড়াইতেছি। ‘সমাজে কালচারাল ডিফরেন্স থাকতে পারবে না’ – এইটা যে রেসিস্ট একটা পজিশন, এইটা মানতেও রাজি হইতে পারতেছি না।

এর এগেনেস্টে একটা কমন গ্রাউন্ড তৈরি করতে হবে না, বরং যেই কমন গ্রাউন্ডটা আমাদের আছে, সেইটারে যে আমরা নষ্ট করতেছি, সেইটা থামাইতে হবে।

আর এইটা তখনই করা যাবে যখন সব কালচারাল ইস্যুরে পলিটিক্যাল এজেন্ডা বানানো বন্ধ করতে পারবো আমরা। আর সব পলিটিক্যাল ইস্যুরে কালচারালি সমাধান করার মতো মৌলবাদী ধারণা থিকা বাইর হইতে পারবো।

আর এইটা করতে হবে কোন লাভ বা হেইট্রেট না, বরং একজন আরেকজনরে রেসপেক্ট করার জায়গা থিকা। যেইটা একটা পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়েরও ঘটনা। সেইটা হইতেছে, একটা জুলুম মুক্তিযুদ্ধের নামে হোক, ধর্মের নামে হোক, অসাম্প্রদায়িকতার নামে হোক, সেইটা আমরা মাইনা নিবো না।

ব্যক্তি অধিকারের পক্ষে থাকা আর জুলুমের বিপক্ষে থাকা – দুইটা কোনদিনও আলাদা পলিটিক্যাল পজিশন ছিল না, এখনো নাই। যারা দুইটারে আলাদা করতে চায়, তারা জুলুমের রাজত্বরেই আরো দীর্ঘ কইরা তুলবে। এইখানে কোন সন্দেহ রাখা আমাদের উচিত হবে না।

 

নভেম্বর ৩, ২০২১

– আনএভেয়ডেবল প্লেজার অফ ‘ভুল-বলা’ –

কিছুদিন আগে একটা রেডিমেইড বিরিয়ানির মশলার ভিজ্যুয়াল বিজ্ঞাপণ মোটামুটি পপুলার হইছিল; কোন খেলার সময় অনেক বেশি দেখাইছিল বইলা চোখে পড়ছিল। (আমার ধারণা, প্রডাক্ট অইরকম বেচা হওয়ার কথা না, কোম্পানির মালিকের/ম্যানেজারেরও এই কমেডি পছন্দ হওয়ার কারণে বেশি দেখানোর কথা।) অইখানে শেষের দিকে, প্রেগন্যান্ট ওয়াইফ বিরিয়ানি খাওয়ার সময় যখন বাসার কলিংবেল বাজে তখন কয় যে, বিরিয়ানি’টা একটু খুলে দাও তো! বইলা হাইসা দেয়, আরে, ভুল বইলা ফেলছি তো! 🙂

তো, এইটা ট্রাডিশনাল সাইকোলজি’র অই জায়গাটারে ট্রিগার করে যে, তাঁর বিরিয়ানি খাইতে এতোটাই ভাল্লাগতেছে যে বলার সময় এইটা তাঁর মুখে চইলা আসছে। ‘ভুল’ করাটারে শে আটকাইতে পারতেছে না! হাউএভার, ঘটনা’টার আরেকটা ব্যাখ্যা করা যাইতে পারে বইলা আমার মনে হইছে।

এইটা ভুল/ঠিক বলার ঘটনাই না, এইটা হইতেছে একটা ‘হিউমার’ (একটা সেনসেশন) ক্রিয়েট করার ঘটনা। যেইটা আসলে আমরা সবাই বুঝতেও পারতেছি, কোন রেফারেন্স ছাড়াই। এইখানে যদি বলা হইতো, আরে বিরিয়ানি’টা হেব্বি মজা হইছে তো, দরজাটা পরে খুলো, আগে শেষ কইরা নেই। বা যদি দেখানো হইতো, দরজা খোলার পরে পাশের বাসার লোকজন গন্ধে চইলা আসছে, তাইলে এই সেনসেশনটা ক্রিয়েট হইতো না আসলে। আগের দিনের বিজ্ঞাপনে এইরকমের বাড়াবাড়িগুলা ছিল, যেইগুলা আমরা জানি সত্যি না, কিন্তু দেইখা মজা পাইতেছি। এখন এইরকমের এক্সাজারেশন বা বাড়াবাড়িগুলারে শ্যালোই (shallow) লাগে। এই কারণে ‘ভুলগুলা’ ইম্পর্টেন্ট, যেইগুলা অন্যরাও বুঝতে পারে ‘ভুল’ এবং এইরকমের ‘নির্দোষ ভু্লগুলা’ নিয়া মজা পাইতে পারি আমরা।

মানে, দুইটা ঘটনা, ‘ভুলগুলা’ বুঝতে পারা যাইতে হবে; সেকেন্ড, হুট-কইরা কইরা ফেলতে হবে। তাইলে হাসাহাসি’র ঘটনা’টা ক্রিয়েট করা যাবে।

আমি বলতে চাইতেছি, এইরকম অর্গানাইজড, প্রি-প্ল্যানড ভুলগুলা জরুরি, হিউমার করার লাইগা। আর এইখানে ক্যাটাগরি হিসাবে ভুল-বলা/ঠিক-বলার চাইতে একসাইটিং-কিছু-বলা/বোরিং-আলাপ বেশি রিলিভেন্ট হয়া উঠতেছে এখন। মানে, ঠিক-কথার ভাত নাই না; ঠিক-কথাও যদি একসাইটিং না হইতে পারে, তাইলে তো শুনতে এতোটা ভাল্লাগবে না আমাদের! যার ফলে, মানুশ-জন ভুল-কথা বেশি বলতেছে – ব্যাপারটা এইরকম না, কিন্তু যখন আপনার কথা-বলার পারপাস হয়া উঠতেছে একসাইটিং কিছু বলা, তখন ‘ভুল’ তো কিছু বলা লাগেই আর কি! তা নাইলে কেমনে!

#########

বাংলাদেশের বেটাদের ক্রিটিক টিম যখন ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচগুলা খেলতে শুরু করে তখন টেস্ট ক্রিটিকের জায়গায় ওয়ানডে’র ক্রেইজ শুরু হইছে। অই ফরম্যাটে তখন নিজেদেরকে এডাপ্ট করাটা সহজ হইছিল। আর আফগানিস্তানের বেটাদের ক্রিটিক টিম (মহিলা ক্রিকেট দল কি আছে?) যখন খেলতে শুরু করছে, সেইটা টি-টুয়েন্টর টাইম; যার ফলে এই ফরম্যাটতে উনারা অনেক-বেশি ইউজড-টু। মানে, অন্য অনেক কিছুর লগে এইটা একটা ঘটনা হইতে পারে, ফরম্যাট’টা।

কিন্তু আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের তুলনা তো অন্য জায়গা থিকা চোখে বেশি পড়ে। কয়দিন আগে ইন্ডিয়ার পশ্চিম-বাংলা প্রদেশের (এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং’টা জরুরি, অইটা যে একটা রাজ্য, দেশ না কোন; উনাদের হীনমন্ম্যতার/ইনফিরিয়রিটি/ছোট-মনের এইটা একটা বড় কারণ) একজন ঢাকা ভার্সিটির বাংলা ডিপার্টমেন্টের একটা ছবি দিয়া কমেন্টে আফগানিস্তানের কথা কইতেছিল। এইরকম বোরকা-হিজাব দেখলেই হিন্দুত্ববাদী হিন্দু, মুসলামন এবং সেক্যুলারদের ‘মা’র চে মাসির দরদ’ উথলায়া পড়তে দেখা যায়। (জোরাজুরি’র ঘটনা যে নাই বা থাকতে পারে না – তা না, কিন্তু) এই অনুমান যে রেসিস্টও হইতে পারে, সেইটা উনারা এক ধরণের ‘কালচারাল সুপরিয়রিটি’র জায়গা থিকা এড়ায়া যাইতে চান। এইরকমের কোন অপারচুনেটি দেখলেই ‘থলের বিলাইগুলা’ বাইর হয়া পড়ে, বেশিরভাগ সময়।

তো, এইটা আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের মিল না – যে, নারী-অধিকারের জায়গাগুলা নাই। বরং এই জায়গাটা এস্টাবলিশড করার চেষ্টা করা হইতেছে, হিন্দুত্ববাদী জায়গাগুলা থিকা। রাষ্ট্রীয় আইন এবং সামাজিক অভ্যাসগুলাতে এই জায়গাগুলা (ন্যারো তো অবশ্যই, কিন্তু) যতোটা না রিজিড তার চাইতে এইরকম হয়া উঠবে এই ডর’টারে সবসময় প্রজেক্ট করাটা একটা ‘নিয়ম’ হয়া উঠতেছে। কিন্তু এইটা আসলে মেয়েদেরকে আরো ডরের মধ্যে রাখারই টেকনিক একটা। কারণ বাংলাদেশে নারী-নির্যাতন এখনো যতোটা না ধর্ম, তার চাইতে ক্ষমতার প্যার্টিয়ার্কির জায়গা থিকা বেশি ঘটে। বাংলাদেশের যে কোন শহরে, রাত দশটার পরে মেয়েদের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করা যে রিস্কি – এইটা মসজিদের ইমাম বা মাদরাসার স্টুডেন্টদের কোন থ্রেটের কারণে না, বরং এলাকার মাস্তান, টহল-পুলিশ কিংবা যে কোন ৪/৫টা ছেলে একসাথে হয়া টিইজ করতে পারে, এই ডর আসলে। রাষ্ট্রীয় জুলুমের প্যার্টিয়ার্কি বড় এইখানে ধর্মের চাইতে। কিন্তু ধর্মের ডর-দেখানোটা এই ক্ষমতার প্যার্টিয়ার্কিরেই ‘উদ্ধারকর্তা’ হিসাবে দেখাইতে থাকে।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের মিল তো কিছু আছেই, এইরকম অনেক দেশের লগেই কম-বেশি আছে। কিন্তু এইটা মিলের জায়গা না এইটা হইতেছে, ডর দেখানোর কোর একটা জায়গা। কোন মানুশরে কুত্তার বাচ্চা বইলা গাইল দেয়ার ঘটনা আসলে। যেইটা মানুশরে অপমান করতে চাওয়া আর কুত্তারে একটা এনিমেল থিকা একটা এডজেক্টিভে রিডিউস করা।

এইরকম আফগানিস্তান হওয়ার ডর দেখানোর মানে হইতেছে আসলে বাংলাদেশরে ইন্ডিয়া কইরা তুলতে চাওয়ার আকাংখা। আমাদের পলিটিক্যাল ফ্রিডমের লাইগা এইরকম রেটরিকের জায়গাগুলারে দেখতে পারা এবং এর ভিতর থিকা বাইর হইতে পারাটা অনেকবেশি দরকারি ঘটনা।

 

নভেম্বর ৬, ২০২১

১. ব্যাপারটা এইরকম না যে, মার্কেট ফোর্স বইলা কিছু নাই; কিন্তু মার্কেট ফোর্স বা বাজার-অবস্থার কারণে খুব কম সময়েই জিনিসের দাম বাড়ে। এটলিস্ট ক্রাইসিস আকারে বাড়ে না। পলিটিক্যাল ইকনোমি’র বাইরেও এইরকম ‘বাজার-অর্থনীতি’র বেইজ থিকা যদি চিন্তা করতে চান, কোন পলিটিক্যালি পাওয়ারফুল শয়তানের কারণেই এইরকম দাম বাড়াবাড়ি’র ঘটনাগুলা ঘটে।* ইব্রাকর ঝিল্লী অবশ্য এক ধাপ আগায়া গিয়া বলছেন, ইলেকশনের ফান্ডের লাইগা বাজার থিকা এইভাবে টাকা কালেক্ট করা হয়।** উনার সাথে আমার দ্বিমত নাই তেমন। বরং ব্যাপারটারে আরেকটু ডিটেইল কইরা বলতে পারি যে, এইখানে যেই ফান্ড’টা কালেক্ট হয়, এর পুরাটা পলিটিক্যাল পার্টি’র তহবিলে জমা হয় না, ব্যক্তির ইনকাম হিসাবেই থাকে; যখন দরকার পড়ে, তখন উনারা পার্টির জন্য খরচ করেন, টাকা ঢালেন। উনাদেরকে বলতে পারেন, ‘পলিটিক্যাল পার্টির ফান্ড ম্যানেজার’ বা ট্যাক্স কালেক্টর। বাজার থিকা টাকা তোলার লাইসেন্স উনাদের আছে। বাজার-সিন্ডিকেট হইতেছে আসলে এইরকম পলিটিক্যালি এপয়েন্টেড ইজারাদার। এদের বাইরে কারো বিজনেস করার মতো অবস্থাই নাই, সিন্ডিকেটবাজি করা তো বহুত দূরের আলাপ।… অনেক ফান্ড ম্যানেজার টাকা তুইলা ভাইগা যায়, অনেকে বিপদের সময় টাকা দিতে চায় না। এইরকম কাহিনি আছে। দেশ চালানো কি সহজ কাজ নাকি ভাই! কোন বিকল্প আছে, বলেন!… মানে, এইখানে বড় একটা ‘অর্থনীতির’ আলাপ আছে। আনু মুহাম্মদ’রা বাকশালি অর্থনীতির বেইজটারে থিওরেটিক্যাল জায়গা থিকা লোকেট করতে রাজি না। (উনারা হয়তো বলবেন, পারেন না, কিন্তু আমি তো আসলে কিছুটা অবিশ্বাসী লোক।)…

২. সেকেন্ড আলাপ হইতেছে, এই জিনিসটা খেয়াল কইরেন, ট্রান্সকম মিডিয়া-গ্রুপ এবং অন্যসব সরকারি মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী’রা যে কোন আলাপরেই ‘অস্পষ্ট’ ও ‘অনির্দিষ্ট’ কইরা তোলে সবসময়।*** যেমন, মন্দিরে আগুন কে লাগাইছে – আমরা জানি না, কিন্তু অনুমান করতে পারি; বাজারে সিন্ডিকেট কারা – আমরা জানি না, এইটা তো মার্কেট ফোর্স করছে… এইরকমের জালিয়াতিগুলা করে। নয়া বাকশালের জগৎ শেঠ যে কয়জন, তাদের নাম মুখে আনতে দেখবেন না। উনাদেরকে আন-ডিফাইনড একটা আইডেন্টিটি কইরা রাখা হয়। নাম নিলে চাকরি থাকবে-না না, বরং এইটার নাম হইতেছে, মিডিয়া-সার্ভিস। ভাসুরের নাম মুখে নেয়া হারাম আসলে, এই সেক্যুলার জামানায়!

৩. তো, এইগুলা কোন ষড়যন্ত্রের ঘটনা না বা খারাপ-মানুশের কাজ না; এইটার একটা থিওরেটিক্যাল বেইজ আছে, যেইখান থিকা এই জুলুমের শাসনটা টিইকা আছে। এবং থাকবে। এইখানে হইতেছে থার্ড পয়েন্ট’টা, নয়া বাকশালের বদলে নতুন যেই রিজিম-ই আমরা পাই, সেইটা যদি থিওরেটিক্যালি এই জায়গাগুলা থিকা, প্রাকটিসগুলা থিকা সরতে না পারে, বাংলাদেশের সমাজ-ব্যবস্থা, রাষ্ট্র-ব্যবস্থার কারণে আমাদের আরো অনেক দুর্গতি পাওনা হবে। আর এইটা কোন ডর দেখানোর কথা না, বরং অই জায়গাগুলার দিকে তাকানোর রিকোয়েস্ট, যেইটা রিয়েলি ম্যাটার করে।


*একটু অপ্রাসঙ্গিক হইলেও বলি, অর্থনীতির এই মার্কেট ফোর্স হইতেছে পারসোনাল লাইফে ‘প্রেমের’ মতো ঘটনা; কোন আকাম-কুকাম করলে তারপরে চালায়া দেয়া যায় যে, আমি তো প্রেমে পড়ছিলাম! গায়ক-কবি কোহেন কইছিলেন, প্রেম হইতেছে আমাদের এই আগলি হওয়ার অজুহাত’টা। অনেক সময় এইটা সত্যি।
**বাকশাল চালাইতে এই রকম হরেক স্লাশ ফান্ড লাগে। এগুলি হইল বাকশালের স্লাশ ফান্ড। এগুলি সব ফান্ডে যায়। – ইব্রাকর ঝিল্লী।
***এইগুলা পোস্ট-মর্ডানিস্ট কোন আলাপ না, কমপ্লিট বাটপারি। পোস্ট-মর্ডানিস্ট ভঙ্গিটা হেল্প করে। প্রেমের ভঙ্গিমাগুলারে যেইরকম প্রেম বইলা মনেহয়। এইরকম আর কি 🙂

 

নভেম্বর ৭, ২০২১

একটা বয়সের পরে সবাই মোটামুটি সবকিছু বুইঝা ফেলতে পারে আসলে; ধরেন, ৩০-৩৫ বছর পার করলেই এক ধরণের একটা ‘বুঝতে পারার’ অবস্থা তৈরি হয়, লাইফ এক্সপেরিয়েন্সের বেসিসে। অনেকে হয়তো এর আগেও পারে, কিন্তু অই ‘আমি জানি’-কনফিডেন্সটা তৈরি হইতে একটু টাইম লাগে, দুই-চাইরটা সাকসেস বা ফেইলওর হেল্প করে তখন। যে, হ, জীবন তো এইরকম! তো, সমাজে চলতে-ফিরতে গেলে এইটা লাগে, আশ-পাশ’টারে বুইঝা ফেলতে পারাটা। মানে, একটা মিনিমাম লেভেলে, এইটা মোটামুটি দরকারি জিনিসই। কিন্তু অনেকেই এই জানা-বুঝা’র মধ্যে আটকায়া যান। জীবনে আমরা যা যা এক্সপেরিয়েন্স করছি, যা কিছু বুঝছি, যা কিছু ভালোবাসছি, যা কিছু ঘৃণা করছি, এর বাইরে যেন তেমন কিছু নাই! এইরকম জানা-বুঝাগুলা যখন নিজের মধ্যেও ফিল করি, তখন ফ্রাস্ট্রেটিং লাগে। মানে, লাইফ-এক্সপেরিয়েন্সটারে নিবো না – তা না, কিন্তু এইটারেই ‘সত্য’ বইলা ভাবার হাত থিকা মুক্তি পাওয়াটাও তো জরুরি আসলে।…

 

নভেম্বর ৮, ২০২১

বাংলাদেশে বাকশালি শাসন শেষ করতে হইলে বাম-বাটপারদের বিপক্ষে থাকতে হবে, সবসময়। জিয়াউর রহমানের এই রাজনৈতিক শিক্ষা আমরা এখনো শিখতে পারি নাই।

বামের বিরোধিতা করলে, বাকশালের বিরুদ্ধে কথা কইলে ইসলামিস্ট তকমা লাগায়া দেয়া হয়। এইগুলা যতো না রাজনৈতিক চাল তার চাইতে বেশি কালচারাল ট্যাবু, আইডিওলজিক্যাল শয়তানি। যেন, বাম হইতে হবে আপনারে তা নাইলে আপনি ‘বুর্জোয়া’-ও হইতে পারবেন না এখন আর, হইতে হবে ‘ইসলামি জঙ্গি’। (এদের লিগাসি ফলো কইরা বাংলাদেশে যেইসব ‘ইসলামিস্ট’রা তৈরি হইতেছেন, উনারা দেখবেন, এইরকম বাতিলের রাস্তায় হাঁটেন; ফতোয়া দিয়া দেন – শাহবাগী, নাস্তিক।…) মাঝখানে কোন রাস্তা নাই! আওয়ামীলীগের ফেভারে কথা কইলে আওয়ামীলীগ হইতে হয় না আপনারে, কিন্তু বিএনপি’র ফেভারে কথা কইলে বিএনপি হয়া যাইতে হয়!

পিপল-এজেন্সিগুলারে নাই কইরা দিয়া এই পলিটিক্যাল-বাটপারগুলা পিপলের অথরিটি হয়া বইসা আছে। এই অথরিটি’রে, ক্ষমতার মাউথ-পিসগুলারে আইডেন্টিফাই করতে হবে।

বাংলাদেশের বামেরা যদি আপনারে নিতে পারে, তাইলে বুঝতে পারবেন আপনার পলিটিক্স এখনো হইতেছে না আসলে।

জিয়াউর রহমান অই অথরিটি’র জায়গাটারে কোনঠাসা কইরা ফেলছিলেন। বাংলাদেশের সো-কল্ড বামেরা সুইসাইড করবে, কিন্তু জিয়াউর রহমানরে এই হিস্ট্রিক্যাল কারণেই নিতে পারবে না কোনদিন।

#########

এই উদাহারণটা নিয়া কথা-বলাটা একটু রিস্কিই, কিন্তু মনে যেহেতু হইছে, বলি। তবে উদাহারণটাই মেইন না, এইরকম একটা কথা বলতে চাইতেছি যে, একটা সার্টেন বয়সের পরে বা একটা অভ্যাসের মধ্যে আটকায়া থাকার পরে সেইটা থিকা বাইর হওয়াটা কঠিন।

এইটার লগে রিলিভেন্ট উদাহারণ হিসাবে মনে হইতেছিল, মক্কার মানুশের ইসলাম ধর্মে কনভার্ট হওয়ার কোন ডেটা আছে কিনা? থাকলে হয়তো কনফার্ম হয়া বলা যাইতো, বয়সের কোন এফেক্ট ছিল কিনা – যে, বয়স্ক লোকজনের চাইতে ইয়াং লোকজন বেশি কনভার্টেড হইছিলেন। এখন তো সেইটা বলা যাইতেছে না, জাস্ট প্রশ্ন হিসাবেই রাখতেছি।

তবে বয়সই একমাত্র প্যারামিটার না। একটা স্ট্রং প্যারামিটার অবশ্যই। যেমন ধরেন, পাকিস্তান হওয়ার ৩০/৪০ বছরের মধ্যে মুসলিম লীগ যে নাই হয়া গেলো বাংলাদেশে এবং পাকিস্তানে, সেইটা অন্য অনেক কিছুর লগে বয়সের ঘটনাই একটা; একটা জেনারেশনের পরে অই পলিটিক্যাল দলটা কোন ইয়াং লোকজনরে আর রিক্রুট করতে পারে নাই।

এই জায়গা থিকা শিক্ষা নিয়া বাংলাদেশের পলিটিক্যাল দলগুলা, খালি কমিউনিস্ট আর জামাতে ইসলামি-ই না, বিএনপি, আওয়ামীলীগ বা ইভেন জাতীয়পার্টিও ইয়াংদেরকে দলে ভিড়াইতে চাইছে সবসময়; এখনকার নতুন পলিটিক্যাল দলগুলারও টার্গেট ইয়াং পপুলেশনই।

এই কারণে না যে, ইয়াং পিপলদের বুদ্ধি কম; বরং বুড়া লোকজন তো চেইঞ্জ হওয়ার ডিসিশান নিতে পারে না আসলে। অনেক বুড়া কমিউনিস্টদেরও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাইঙ্গা যাওয়ার পরে এই আক্ষেপ করতে দেখছি যে, সারাজীবন যেই জিনিসে বিশ্বাস করলাম, সেইটা এখন কেমনে ছাড়ি! আবু তালেব হয়াই মারা গেছেন।

তো, এইটারে বুড়া হওয়ার ঘটনা চাইতে বেশি মনেহয় অভ্যাসরে না ছাড়তে পারার ঘটনা। একটা কাজ, সেইটা ভালো হোক আর খারাপ, ৮/১০ বার কইরা ফেললে, অই ভালো-খারাপ সেন্স আর এতোটা কাজ করে না, অভ্যাসের কারণেই করতে থাকে লোকজন।

এই কারনে চিন্তা ও অভ্যাসরে আলাদা করতে পারাটা দরকারি একটা জিনিস। যারা করতে পারেন না, উনারা ইয়াং হোক বা ওল্ড, পিয়ার-গ্রুপ বা ফ্যাশন মাইনাই আপডেটেড হইতে থাকেন, সফটওয়ারের মতন। কোন ক্রিয়েশনের লগে, নতুন আইডিয়া ও চিন্তার লগে এসোসিয়েট হওয়ার রাস্তাটা হারায়া ফেলেন। টিইকা থাকেন এবং মারা যান একটা ‘জেনারেশন’ হিসাবেই।

তো, এই জিনিসটা স্যাড তো অবশ্যই।

 

নভেম্বর ৯, ২০২১

লিবারালদের নিয়া ভালো রকম একটা ফান আছে Squid Game-এ। নায়কের ফ্রেন্ড Cho Sang-woo আর পাকিস্তানের* মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার আবদুল আলী’র কাহিনিটাতে।

সান-ও আলী’রে শুরু থিকাই কয় যে, আমারে স্যার ডাকব না! নাম ধইরা ডাকো। আলী হেসিটেড করে। এইরকম পড়াশোনা জানা, ভদ্র, ভালো (মানে, লিবারাল) একজন মানুশ, তারে সে নাম ধইরা কেমনে ডাকবে! একটা সময় পরে আলী ডাকতে পারে।

আর সান-ও শেষে গিয়া আলী’র যে লগে চিটারি’টা করে সেইটারে ‘শোষণ’ মনে হইতে পারে না খুবএকটা, বরং তার চাইতেও বাজে একটা জিনিস হয়া উঠে তখন; কারণ অরা দুইজনেই তো ইকুয়াল! একজন আরেকজনরে তো নাম ধইরা ডাকে। আর এই নাম ধইরা ডাকার ভিতর দিয়া আলী’র বিশ্বাসটারেই অর্জন করা হয়, যাতে সময়-সুযোগ মতো তারে এক্সপ্লয়েট করা যাইতে পারে। যখন পার্টনার চুজ করার টাইম আসে তখন লিবারাল সান-ও তার ফ্রেন্ডের জায়গায় স্লেভ-লাইক ‘ফ্রেন্ড’ আলীরেই চুজ করে।
এইটা ইকুয়ালিটি না, এইটা হইতেছে লিবারাল ট্রাপ, এক্সপ্লয়টেশনের। ফানি এবং ক্রুয়েল।


*আমার ধারণা, বাংলাদেশি হওয়ার কথা, কিন্তু সাউথ কোরিয়ান প্রাইড থিকা অরা পাকিস্তানরে বাইছা নিছে। হলিউডেও দেখবেন সাউথ এশিয়ান মুসলিম মানে হইতেছে, পাকিস্তান। বাংলাদেশিদেরকে অই আইডেন্টিটি’তে কালচারালি এখনো নিতে পারে না। বাংলাদেশের মুসলমানরা যেন ততটুকই মুসলমান যতটুক তারা পাকিস্তানি! ইউরোপিয়ান লিবারাল সমাজের (যারা সারা দুনিয়াতেই আছে, ইনক্লুডিং বাংলাদেশ) মনে এই ধারণা একটা ‘মৌলবাদী’ ধারণা হিসাবে পোক্ত একটা জিনিস।

#########

ইবন আল-আরাবী’র একটা বই আছে, আন্দালুসিয়ার ইন্টেলেকচুয়ালদের নিয়া, যাদের সাথে উনি দেখা করছেন, কথা বলছেন, যাদেরকে উনি পরহেজগার মানুশ হিসাবে রেসপেক্ট করছেন, তাদের কথা-বার্তা নিয়া। অইটা দেইখা মনে হইতেছিল, ফরিদউদ্দিন আত্তার উনার বেশিদিন আগের না, তাজকেরাতুল আউলিয়াতে উনিও যাদেরকে রেসপেক্ট করতেন, তাদের কথা বলছেন। মানে, দুইটা বই দেইখা একটা ট্রাডিশন হিসাবে দাবি করাটা হয়তো বেশিই হবে। কিন্তু ফর্ম হিসাবে ব্যাপারটা পছন্দ হইছে। এইরকম বলা যাইতে পারে, যাদের কাছ থিকা শিখছি আমি কিছু জিনিস।

তবে উনাদের দুইজনের বইয়েই, সিগনিফিকেন্স হিসাবে কিছু আন-ইজ্যুয়াল ঘটনার কথা সবসময় বলা হইছে। যেমন আরাবী একজন মহিলা স্কলারের কথা বলতেছিলেন, যখন উনার সাথে দেখা করতে গেছেন, তাঁর বয়স হয়া গেছিল অনেক; যখন উনারা একসাথে বসছেন তখন অই মহিলা কথার মাঝখানে হঠাৎ আরেকদিকে তাকায়া বলতেছেন, অই, তুমি তোমার পোটলা ফালায়া যাইতেছো তো! তারপরে আবার আরাবী’দের লগে কথা কইতে লাগলেন। তার দুইদিন পরে তাদের সাথের একজন অইখানে আসলো আর কইলো, খুবই আজব একটা ঘটনা ঘটলো, আমি তো নদীর পাড়ে জিরাইতে বসার পরে উইঠা আসতে নিছিলাম, তখন কে জানি আমারে ডাক দিয়া কইলো, তুমি তো পোটলা’টা ফালায়া চলে যাইতেছো!… এইরকম যে, যারা স্কলার, তারা একই সময়ে কয়েকটা টাইমে থাকেন।

এইগুলারে ‘কেরামতি’ হিসাবে দেখা হয় এখন। কিন্তু আমার ধারণা, উনাদের বোধ-বুদ্ধির সিগনিফিকেন্স হিসাবে এইসব ঘটনার কথা বলছেন উনারা; কারণ জ্ঞান জিনিসটা উনাদের কাছে খালি লজিক্যাল সিকোয়েন্সের কোন জিনিস ছিল না, বরং এক্সার্টানাল একটা কিছু, উনারা টের পাইছেন, জানছেন। তারপর এর কিছু কিছু অংশ বলছেন বা রিভিল করছেন। এই জায়গা থিকা দেখলে, ব্যাপারগুলারে একটা ইন্টেলেকচুয়ালিটির ঘটনা হিসাবেও ভাবতে পারবো আমরা মনেহয়। যেইখানে জ্ঞানের বেইজটা একইরকম ছিল না।

 

নভেম্বর ১০, ২০২১

নয়া বাকশালের পিলার ৪টা।

১. স্ট্রং বুরোক্রেসি। আমলা, পুলিশ, মিলিটারি, সিভিল সোসাইটির একটা ‘ফরএভার’ বন্ডেজ; যেইটা ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’র একটা ঘটনা। মানে, এরা সুইসাইড করবে, কিন্তু সারেন্ডার করবে না। যেই কারণে মনেহয় এই সিস্টেমের পতন কোনদিন হবে না! বাংলাদেশের যত জুলুম, টর্চার, লুটপাট, ডাকাতি, দুর্নীতি, টাকা-পাচার এই সার্কেলটারই সাকসেস। এই সার্কেলের ‘দূর সম্পর্কের আত্মীয়’ হইলেও আপনি কুইন/কিং। এর বাইরের বাকি সব লোকজন হইতেছে বাংলাদেশে সেকেন্ডক্লাস/থার্ডক্লাস সিটিজেন। সরকার এদেরকে টিকায়া রাখে নাই, এরাই অবৈধ সরকাররে টিকায়া রাখছে। এদেরকে ‘তুষ্ট’ না কইরা নতুন সরকার বাংলাদেশে আসতে পারবে না। নতুন পার্টিগুলার কথা-বার্তা খেয়াল কইরা দেইখেন, এরা কেমনে এদেরকে তোয়াজ কইরা কথা কয়। (বিএনপিও পলিটিক্যাল দল হিসাবে এই গ্রুপটার কাছেই জিম্মি থাকার কথা।)

২. ইমোশনাল ট্রিগার পয়েন্ট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এইটা ইন্ট্রিগ্রাল একটা পার্ট। পিপলরে মুভ-অন করাইতে এইটা লাগে। যদিও মানুশ-জন মোটামুটি সবাই বুঝে এখন, এর লগে মুক্তিযুদ্ধের তেমন কোন রিলেশন নাই। হাসপাতালে দুইটা বেড, চাকরিতে দুইটা সুবিধা যে নাই – তা না, কিন্তু অইগুলা পাইতে হইলেও নয়া বাকশালের প্রতি আন-কন্ডিশনাল সাবমিশন ছাড়া, কোন কানেকশন ছাড়া অইগুলা পাওয়া সম্ভব না। কিন্তু নয়া বাকশালরে টিকায়া রাখার লাইগা এইরকম থিওরেটিক্যাল পয়েন্ট না, বরং ইমোশনাল ট্রিগার পয়েন্ট ক্রুশিয়াল একটা জিনিস।

৩. মিডিয়া-রিয়ালিটি। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি। যেইটা হইতেছে, উন্নয়ন, মাথাপিছু আয়, মসলিন আবিষ্কার, পদ্মা-ব্রিজ, ইভেন পরীমণি, তাহাজ্জুদের নামাজ। শ্যাডো দিয়া এগজিসটেন্সরে মুইছা ফেলা, শাক দিয়া ভাত ঢাকা। মিডিয়ার (সো-কল্ড বামপন্থী) কুত্তাগুলারে মনে হইতে পারে ইনোসেন্ট, মুক্তিযুদ্ধের আফিম খাওয়া বলদ, কিন্তু এরা কালপ্রিট, এই নয়া বাকশালের পতনের সময় আসলে সবচে আগে দল-বদল কইরা আরেকটা বাকশাল তৈরি করবে অরা। এরা টক্সিক মাল, ‘তর্ক’ করার নাম দিয়া, ‘প্রেম’ করার নাম দিয়া, ‘ফ্রেন্ড’ নামের স্লেভারি দিয়া আপনারে ‘শুধরায়া’ ফেলতে চাইবে। কিন্তু এদের আত্মা বেচা হয়া গেছে।

৪. সিউডো-আইডিওলজি। এইটা মেইন না, কিন্তু এইটা লাগে। এইটারে বাহ্যিক ভাবাটা বোকামিই না খালি, বরং শয়তানের অই বেসিক ট্রিকসটাই যেইখানে, শয়তান বিশ্বাস করাইতে চায় বা পারে যে, শয়তান বইলা কিছু নাই। যে কোন শয়তানির শুরুটা এই জায়গাটা থিকা। একটা সিউডো আইডিওলজি অই জায়গাটা প্রোভাইড করে। নেসেসারি ঘটনা এইটা, ভাওতাবাজিটা। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, নারী-অধিকার হইতেছে এইসব জিনিস। [মানে, আইডিওলজির জায়গা থিকা না দেইখা, কোন জায়গা থিকা আইডিওলজিগুলা ইউজ হইতেছে, সেই ঘটনাটা ইম্পর্টেন্ট।]

নয়া বাকশালের পরে যেই সিস্টেমই আসুক তারা যদি এই চাইরটা জিনিসরে কোন না কোনভাবে ডিসপ্লেইস করতে না পারে, বাংলাদেশের পিপলের লাইফে কোন চেইঞ্জ আসলে আনতে পারবে না।

তো, এর লগে আরো অনেক কিছুই হয়তো অ্যাড করা যায়, এই পয়েন্টগুলারে আরো বিস্তারিতভাবেও বলা যায়। কিন্তু এই চাইরটা জিনিসরে ইগনোর করে যেইসব ন্যারেটিভ চালু আছে বাজারে, তাদের বয়ান ও এক্টিভিজমরে সন্দেহ করতে পারা দরকার আমাদের।

 

Leave a Reply