নোটস: নভেম্বর, ২০২১ [পার্ট ২]

নভেম্বর ১১, ২০২১

কয়েকজন তো আমারে বলেন পারসোনালি, কেয়ার করেন বইলাই যে, পলিটিক্যালি ডেয়ারিং কথা বেশি বইলেন না! তো, আমি তেমন কোন উত্তর আসলে দেই না, এইরকম ভালোবাসার। কিন্তু আমার ধারণা, আমি যেমন জানি, উনারাও জানেন এবং যেই ভূতদের আমরা ডরাই, উনারাও জানেন। যে, কথা বইলা কিছু হয় না।

একবারে যে কিছু হয় না – তা না, প্রপাগান্ডা বা উসকানিমূলক হইলে বা পপুলার/ভাইরাল হইলে যখন কোন একশনের দিকে ঠেইলা দেয়, তখন ‘বিপদজনক’। আমার কথা মোস্টলি থিওরেটিক্যাল, এক্টিভিজম আমার ধাঁতে নাই তেমন। যার ফলে এইসব জিনিস পলিটিক্যালি পাওয়ারফুল লোকজনের কাছে কখনোই ওরিড মতো ঘটনা না। বরং এই জুলুমের শাসনরে যারা মাইনা নিয়া ‘চিরসুখী’ হইতে চান বা থিওরেটিক্যাল জায়গা থিকা আপহোল্ড করতে চান, উনাদের একটু ‘অস্বস্তি’ হইতে পারে বড়জোর! এদের মধ্যে যদি কেউ আমার লগে ‘জাতশত্রুতা’ না করেন, আমার কথা-বলার কোন ‘রিস্ক’ আসলে নাই, থিওরেটিক্যালি। মানে, আমার কথা দিয়া কারো কোন বাল’ডাও ছিঁড়া যায় না। জাস্ট ইগনোর করতে পারলেই হয়।

ডর হইতেছে তখন, যখন আপনি কোন একশনে যাইতেছেন, কোন কাজ করতে যাইতেছেন, বা এইরকমের ইনিশিয়েটিভ নিতেছেন। এই কারণে দেখবেন, বিএনপি’র থানা-লেভেলের নেতা-কর্মীদের নামেও মামলার শেষ নাই। বা যারাই পলিটিক্যালি এক্টিভ হয়া উঠতে চান, তাদের নামে মামলা দিয়াই শায়েস্তা কইরা ফেলা যায়। (কিন্তু মেঘদলের নামে মামলা করলে খারিজ হয়া যাবে আবার! আর আওয়ামী লীগের কারো নামে মামলা করার চিন্তা মুখে তো দূরের কথা, মনেও আইনেন না। এমন কঠিন আইনের শাসনে আছি আমরা এখন বাংলাদেশে।) মানে, ২৪/৭ পলিটিক্যাল কথা-বার্তা বলেন, সমস্যা হওয়ার কথা না তেমন; অনলাইনে টুকটাক স্লেজিং, হ্যাকিংয়ের ঝামেলা হইতে পারে, খুববেশি হইলে। এর বাইরে, নজরদারিতে তো আমরা সবাই কম-বেশি আছিই।

কিন্তু সাবধান! কোন পলিটিক্যাল এক্টে জড়াইবেন না! মনে রাখবেন, “একটা দুর্ঘটনা, সারাজীবনের কান্না।”

যত খুশি পলিটিক্যাল এনালাইসিস করেন, কিন্তু পলিটিক্যাল এক্ট থিকা দূরে থাকেন! বি সেইফ! 🙂

#########

– আমার বাংলা লেখা (১) –

আমার লেখা বাংলা-ভাষা কেন ভালো? 🙂 মানে, যদি ‘ভালো’ (একইভাবে ‘খারাপ’ও যদি) হয়া থাকে আর কি! তাইলে, কেন?

অনেকে না হইলেও দুয়েকজন তো বলছেন আমারে যে, আমার কথার লগে ‘একমত’ না হইলেও পড়তে ভাল্লাগে আমার লেখা। অনেকের লেখাই অনেকের ভাল্লাগে। সব ভালো-লাগার ঘটনা এক না। একেক জিনিস একেক কারণে ভালো লাগে আমাদের। এমনকি একই জিনিস সব মানুশের বা একজন মানুশেরও সব সময়েই একই কারণে ভালো-লাগার কোন কারণ নাই। অই ভ্যারিয়েশনটা মাথায় রাইখাই বলতেছি।
আরেকটা জিনিস হইতেছে, এইটা কোন ‘অহংকার’ বা প্রাইড থিকা বলা না, বরং বলা যায় গত ১২/১৩ বছর ধইরা কিছু জিনিস কনশাসলি ট্রাই করছি আমি, সেইটারে খোলাসা করার জায়গা থিকাই এইটা বলতে চাওয়া।

এখনো বাংলা-ভাষার ব্যাকরণ বইয়ে এই জিনিসটা আছে মনেহয়, বাক্য-গঠন নিয়া যে, বাংলা ভাষায় লেখতে গেলে এই স্ট্রাকচারে লেখতে হবে: কর্তা > কর্ম > বিধেয়। আগে একটা সাবজেক্ট বা কর্তা থাকতে হবে, যিনি কোন কাজ করতেছেন, কোন উদ্দেশ্যে করতেছেন।

এই নিয়ম আমি সবসময় ফলো করি নাই। বেশিরভাগ সময় হয় কাজ > কথা > সাবজেক্ট, বা কথা > কাজ > সাবজেক্ট, বা কাজ > সাবজেক্ট > কথা… এইরকম ফরম্যাটগুলাতে গেছি। এতে কইরা অনেক সময় ‘সমালোচনা’ শুনতে হইছে যে, ব্যাকরণ-সম্মত হয় নাই, ছন্দ মিলে নাই। কিন্তু বাক্য তো পড়া যায়! যার ফলে লোকজনের বুঝতেও সমস্যা হয় নাই। এইরকম ভ্যারিয়েশনের কারণে এক ধরণের ‘রস’-ও তৈরি হয়। যার ফলে, আমার ধারণা, কমপ্লেইন আরো কইমা আসার কথা দিনে দিনে।

তো, এই জিনিস বাংলা-ভাষায় আমি শুরু করি নাই, অনেকেই এই স্ট্রাকচার মানেন না, বা সম্ভবও তো না আসলে। কিন্তু আমি সচেতনভাবেই অনেক সময় জিনিসটা করতে চাইছি।

আর ভাষার স্ট্রাকচার চেইঞ্জ কইরা ফেলবো – এইরকম ‘বিপ্লব’ করার কোন খায়েশ থিকাও করি নাই। বরং দেখবেন এই কর্তা > কর্ম > বিধেয় স্ট্রাকচারের কারণে ‘ব্যক্তি’ অনেক বড় ব্যাপার আমাদের চিন্তা-ভাবনায়। একজন ‘নেতা’ নাই বইলা যেন সরকার-বিরোধী আন্দোলন হইতে পারতেছে না দেশে! বা কোন ‘বিকল্প নাই’ চিন্তাটাও সাবজেক্টরে বেইজ কইরা করা। এইটা ভুল না অবশ্যই, কিন্তু ভাষার স্ট্রাকচার আমাদের চিন্তারে শেইপ-আপ করে বেশিরভাগ সময়।

তো, ভাষার প্যার্টান চেইঞ্জ করলেই চিন্তার ধরণ পাল্টায়া যাবে – এইটা জরুরি না, কিন্তু দুইটা জিনিসের একটা রিলেশন তো আছে। সেই জায়গাটাতে আমি কনশাস থাকতে চাইছি কিছুটা। তার চাইতে বড় ব্যাপার হইতেছে, ভাষার ফরম্যাটরে আমি আমার কথার চাইতে বড় বইলা ভাবি নাই। এইগুলা সবসময়ই চেইঞ্জ হইতে থাকবে।

আবার যেহেতু কর্তারে কথা বা কাজের আগে বসাই না আমি বেশিরভাগ সময়, ইংলিশ ভাষা পড়ার এক্সপেরিয়েন্স থিকা জিনিসটারে ‘সফিসটিকেটেড’ বইলা দেখেন বা দেখতে পারেন অনেকে; কিন্তু এইভাবে ভাবতে পারাটা ‘কলোনিয়াল হ্যাং-ওভার’রেই ঘটনা আসলে অনেকটা। ভাষার মিল-অমিল অনেক থাকে এইরকম।…

২.
তো, এইভাবে নিজের কথা আমার নিজেরে যে বলা লাগতেছে, এর কারণ এইটা না যে, বাংলাদেশ তেমন ‘ক্রিটিক’ নাই বা তেমন ফ্যান-ফলোয়ার নাই আমার (মানে, আছে – এই দাবি নাই আমার, কিন্তু ২০/২৫ বছর ধইরা চুল কাটার কাজ করলেও কিছু লোকজন তো চিনবেই আপনারে, অইরকম চিন-পরিচয় আছে মনেহয় আমার নামটার) 😛 বরং ‘ভাষা খুব স্বতঃস্ফূর্ত একটা জিনিস’ – এইরকমের ধারণা থিকা বাইর হওয়ার তকলিফটা নিতে আমরা রাজি নাই অনেকেই।

তবে এইরকম অবস্থাটা তো নাই আর এখন পুরাপুরি। অনেকেই ভাষা নিয়া কনশাস হইতে রাজি আছেন বইলা টের পাই আমি। আর এই ফেক্সিবিলিটি’টা জরুরি একটা জিনিস, সবসময়।

[ শব্দ ব্যবহার, ক্রিয়াপদ আর বানাম ভুলের কথা আজকে আর কইলাম না। অইগুলা আরেকদিন! 🙂 ]

ছরমিক আন্দোলনের এজেন্ডা

এইটা নিয়া কথা বলা’টা আমার এখতিয়ারের বাইরের ঘটনা। এই কারণে মনে হইলেও বলতে চাই নাই, কিন্তু মনে যেহেতু হইছে, বইলা রাখতেছি আর কি।…

আমার মনে হইছে, গার্মন্টেসের ছরমিকদের নিয়া যারা ভাবেন, আন্দোলন করেন; উনারা এই দুইটা পয়েন্ট কন্সিডার করতে পারেন।
এক নাম্বার পয়েন্ট হইতেছে, মাসিক বেতনের বদলে উইকলি বেতন দেয়ার নিয়ম চালু করা। সপ্তাহ শেষে বিষুদবারে (ওভার-টাইমসহ) ৭ দিনের বেতন দেয়া। (ছরমিক’রা টাকা খরচ কইরা ফেলবে, জমাইতে পারবে না, এইগুলা ভুয়া কথা। বাসার পারমানেন্ট বুয়াদেরকেও দেখবেন এইগুলা কইয়া ঝুলায়া রাখে, মাসের বেতনও মাস শেষে দেয় না, যাতে না যাইতে পারে।)

এইটা মনে হইছে কারণ বেশিরভাগ কেইসেই শুনছি, গার্মেন্টেসে ছরমিকদের বেতন দেয় পরের মাসের ১০/১৫ তারিখে। কেউ চাকরি ছাড়লেও তারে আগের মাসের বেতন ছাইড়া যাইতে হয়। মানে, সাপ্তাহিক বেতনের নিয়ম চালু করলে ছরমিকদের জন্য একটা ফেভারেবল সিচুয়েশন হয়তো তৈরি হইতে পারে। মালিকরা তখন চাপের মধ্যে থাকবে, ছরমিকরা না। (নিয়মিত বেতন দিলে তো সমস্যা নাই, কিন্তু না দিলে ছরমিকদের লসটা কম হইতে পারবে তখন, ফ্যাক্টরি বন্ধ হইলে।)

সেকেন্ড হইতেছে, ফ্যাক্টরিতে দুপুরবেলার খাওয়ার ব্যবস্থা করা। কিছু ফ্যাক্টরিতে ব্যবস্থা আছে মনেহয়, কিন্তু এইটা আইন কইরা মাস্ট করা দরকার। মিনিমাম একটা খাওয়ার মেনু এনশিওর করা, তা না করতে পারলে ডেইলি মিনিমাম ১০০ টাকা কইরা দেয়া। দিনের টাকা দিনে দেয়া। (এইটা দয়া করা না, ছরমিকদের পাওনা।)

এখন এইগুলা করলেই ‘ছরমিক বিপ্লব’ শুরু হয়া যাবে বা দেরি হয়া যাবে না। বা এনজিও প্যারামিটারে কারখানার রেটিং একটু বেটার করতে হবে, এইটাও আমার বলার উদ্দেশ্য না। কিন্তু এর ভিতর দিয়া ছরমিকদের দেন-দরবার/বার্গেইন করার পজিশনটা বেটার হইতে পারার কথা। আউটসাইডার হিসাবে আমার মনে হইছে এইটা।

যেমন, শিকাগো’তে ছরমিক আন্দোলনের পরে যে ৮ ঘন্টা ওয়ার্কিং আওয়ার হইছে, সেইটা উনাদেরকে পলিটিক্যাল ফোর্স হিসাবে রিকগনাইজ করতে পারার ঘটনা তো একটা।…

খালি গার্মেন্টস না, যে কোন কারখানার ছরমিকদের জন্যই এই দুইটা জিনিসের কথা ভাবা যাইতে পারে মনেহয়।

মানে, আমি ভাবলে তো লাভ নাই কোন। কিছু মিনও করে না। যারা গার্মেন্টেসে, ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন এবং যারা ছরমিকদেরকে পলিটিক্যাল ফোর্স বানাইতে চান, উনারা যদি ভাবতে রাজি থাকেন এইভাবে (হুবহু একই জিনিস হইতে হবে না, কিন্তু ডেইলি লাইফের লগে রিলিভেন্ট কিছু হইতে হবে), তাইলে কিছু কাজের জিনিস হইলেও হইতে পারে। তা নাইলে এইগুলা কথার কথা-ই। জাস্ট বইলা রাখাই।

 

নভেম্বর ১২, ২০২১

ইবন আরাবী’র এই জিনিসটা দেইখা মনে হইলো, যদিও দেরিতে শুরু করছেন লেখালেখির ব্যাপারটা, কিন্তু অনেক কিছু নিয়া লেখছেন উনি। খালি আরাবী-ই না তলস্তয়ের ওয়ার অ্যান্ড পিস, জেমস জয়েস, বুকোউস্কি, ইভেন রিসেন্ট এক্সাম্পল হিসাবে ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস, ‘হাজার হাজার’ পেইজ লেখছেন উনারা, হাজার হাজার শব্দ, হাজার হাজার কবিতা। তো, একটা সময়ে আমার মনে হইতো, এতো কিছু লেখার কি আছে! কিন্তু এখন জিনিসটা কিছুটা টের পাই, যে কোন কিছুর মতোই এই লেখালেখি জিনিসটাও একটা abyss’র মতো, একটা শব্দ, একটা কথা, একটা চিন্তা ‘হাজার হাজার’ জিনিসের লগে রিলিভেন্ট হয়া উঠতে থাকে। রাইটার হিসাবে জাস্ট ভাইসা যাইতে পারতে হয়। হাজার হাজার শব্দের হিসাব কিছুই না, মিনিংলেস তখন। ইনফিনিটিরে তো সময় দিয়া মাপতে পারবেন না আপনি। মেবি অনেকটা অইরকম।

#########

বাংলাদেশের এখনকার অবস্থায়, আমার পলিটিক্যাল পজিশন আসলে একটাই। আমি অন্যদেরকেও বলবো, যে কোন ইস্যুতে এই জায়গাটারে খেয়াল করার লাইগা।

যে, যেকোন মুভমেন্ট, সেইটা ইমোশনালি যতো ট্রিগারিং-ই হোক, যদি অবৈধ সরকারের ক্ষমতার জায়গাটারে প্রশ্নের বাইরে রাখে সেইটা একটা গ্রুপের ইগো-স্যাটিসফাই করার টুলের বাইরে আর কিছুই হইতে পারবে না। বরং এই ধরণের পুলিশ-প্রটেকশনে করা ডামি-পোতিবাদগুলা এই জুলুমের শাসনরে ভ্যালিডিটি দেয়ার ঘটনাই হয়া উঠবে, একটা সময় পরে। এই জায়গাগুলারে অপোজ করার কিছু নাই, কিন্তু বিশ্বাস করার জায়গাতে সবসময় সাবধান থাকা দরকার।

অন দ্য আদার হ্যান্ড, একটা ছোটখাট মাইনর ঘটনাও যদি জুলুমের এগেনেস্টে আওয়াজ তুলতে পারে, সেইটা যত ইনসিগনিফিকেন্টই হোক, এর পক্ষে থাকাটা সর্ট অফ ঈমানি-দায়িত্ব হওয়া দরকার এখন। যেমন ধরেন, কয়দিন আগে একটা ডান্ডিখোর রাস্তার পোলার যে ভিডিও বাইর হইছিল, অর পক্ষে থাকা। এইরকম।

এই দুইটা জিনিস যে আলাদা আলাদা ঘটনা, এই সেন্সটা হেল্পফুল হইতে পারে, অনেক সময়।

 

নভেম্বর ১৩, ২০২১

১৯৬১ সনে আইয়ুব খান ‘মুসলিম পারিবারিক আইন’-এ অল্প-বিস্তর হইলেও আইনি কাঠামোর মধ্যে নারী-অধিকারের কিছু জিনিস যে ইনক্লুড করছিলেন, অইগুলারে কি আমরা ভালো-জিনিস হিসাবে মানবো না? মানবো তো।

কিন্তু এই ঘটনার কারণে আইয়ুব খান’রে যদি ‘নারী অধিকার বাস্তবায়নের অগ্রনায়ক’ বইলা উপাধি দেন কেউ, আমরা হাসবো না? হাসি তো মনেহয় চইলাই আসবে একটু। 🙂 যারা অই আইনের পক্ষে ‘জনমত’ তৈরি করার কাজ করছিলেন, সুফিয়া কামাল’রা, উনারাও এই কথা কইলে খেইপা যাইতে পারেন।

মানে, পলিটিক্যাল জায়গাটারে আমাদের খেয়াল করা দরকার।

তো, এরশাদ আমল থিকা লোকাল পলিটিক্সে বিরোধীদলীয় নেতাদেরকে যখন ‘নারী-নিযার্তন’ মামলায় জামিন না দিয়া ইলেকশনে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করার ‘পলিটিক্যাল চাল’ চালু হইলো, এইটা নিয়া প্রকাশ্যে কেউ কোন বিরোধিতা করেন নাই; যে এইটা নারী-অধিকারের জন্যই খারাপ কাজ হইতেছে।

এখন ধীরে ধীরে জাতীয়-রাজনীতিতেও এই জিনিসটা ইউজ করা হইতেছে হরদম। হেফাজতের নেতাদের ব্যাপারে করা হইছে, নুরুল হকের ব্যাপারে ট্রাই করা হইছে, আরো অনেকের ব্যাপারে পলিটিক্যাল উইপেন হিসাবে ‘নারী-কেলেংকারি’ সরকারি-মিডিয়ার একটা পাওয়ারফুল টুল হিসাবে ইউজড হইতেছে।

বিএনপি’র হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের জামিন হয় না আদালতে। যে কোন বিচারের পলিটিক্যাল রায় হয়। এইগুলা নিয়া কোন কথা আমরা বলতে পারি নাই, এখনো পারি না।

এখন এই আদালত, বিচার-ব্যবস্থা ও পুলিশ-প্রশাসন গুম-খুন-জুলুমের মদদ দিবে আর একই সাথে ‘নারী অধিকার’-ও বাস্তবায়ন কইরা ফেলবে – এইটা কেমনে হইতে পারে? তারপরও এক্সপেক্টশন থাকতেই পারে কারো কারো; কিন্তু এইটারে উনাদের বোকামি হিসাবে না দেইখা, না-জানা হিসাবে না ভাইবা, ভাবতে-না-চাওয়া হিসাবে ধইরা নিতে না পারলে পলিটিক্যালি ভুল ডিসিশানই হওয়ার কথা সেইটা।

#########

এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেমিনিজমের আইকন দুইজন – রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এবং সুফিয়া কামাল। দুইজনের লেখালেখি এবং এক্টিভিজম আপনারা খেয়াল কইরেন, উনারা (ন্যাশনালিস্ট ভিউ-পয়েন্ট থিকাই) কেউ দেশের মানুশের প্রতি যে বিদেশি জুলুম চলতেছে, সেই জালিমের পক্ষে ছিলেন না। উনারা বরং বারবারই বলছেন, ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টে মেয়েদের দাবিগুলাও ইনক্লুড করা লাগবে। (হাউএভার, অই জায়গাগুলারে এড্রেস করা হয় নাই, কখনোই।)

এইখানে ট্রিকি একটা জিনিস হইতেছে, উনাদের দুইজনরে ঘরে এবং বাইরে, পক্ষের এবং বিপক্ষের, সব জায়গাতেই নেগোশিয়েট কইরা চলতে হইছে। এইটা তখনো ইজি ছিল না, এখনো কোন সহজ জিনিস না। এই কারণে দেখবেন, ব্রিটিশ শাসনের সময় রোকেয়ারে স্কুল চালাইতে হেল্প করছে করছে ব্রিটিশ এডমিনস্ট্রেশন; পশ্চিম পাকিস্তানের মাওলানারা যখন ফতোয়া দিছে যে ফাতেমা জিন্নারে লিডার হিসাবে মানা যাবে তখন তাদেরকে টাইট দেয়ার জন্য আইয়ুব খান যখন ‘মুসলিম পারিবারিক আইন’ বানাইছে তখন সেইটার পক্ষে দাঁড়াইতে হইছে সুফিয়া কামালদেরকে। তাই বইলা উনারা ব্রিটিশের পক্ষে বা মিলিটারি শাসনের পক্ষে এক্টিভিজম করেন নাই, তাদের কেনা গোলাম হয়া যান নাই।

যার ফলে উনাদের যেই এক্টিভিজম (নারী-শিক্ষা ও বিয়াতে নারীর কনসেন্ট), সেইটা সময় লাগলেও সোশ্যালি ‘নরমাল’ ঘটনা হিসাবে একসেপ্টেড হইতে পারছে। বরং যারা জুলুমের বিরোধিতা করছেন তারা এই ইস্যুগুলাতে অইভাবে শামিল হইতে পারেন নাই। এইগুলা যে জুলুমেরই বাই-প্রডাক্ট সেই জায়গাগুলারে লোকেট করতে পারেন নাই বইলা পরবর্তী সময়ে নিজেদের আইডিওলজিক্যাল পয়েন্ট থিকা জুলুমের জায়গাগুলারে তৈরি করার রাস্তা বানাইছেন। মানে, আপনি ব্রিটিশ-বিরোধী মুভমেন্টই করেন আর পশ্চিম পাকিস্তান-বিরোধী আন্দোলন, নারী-অধিকারের জায়গাগুলারে সেইখানে ইনক্লুড করতে ‘ভুলে গেছেন’। এখনো, আপনি বামপন্থী হন, বাকশালি বা ইসলামিস্ট এই জায়গাগুলারে একোমোডেড করতে পারেন না ঠিকমতো।

তো, এই প্রশ্নগুলা পলিটিক্যাল স্পেইসের বাইরের ঘটনা না। একইভাবে জালিমের জুলুমের কোলে বইসাও যে এই অধিকারগুলা আদায় করা যাবে না, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এবং সুফিয়া কামালের এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং স্পষ্টভাবেই ছিল বইলা আমার মনেহয়। যেই জায়গা থিকা ব্রিটিশদের সহযোগিতা নেয়া এবং আইয়ুব খানের এই আইনরে সার্পোট করার পরেও তাদের জুলুমের বিরোধিতা যে উনারা করতে পারছেন, সেইটাই উনাদের স্ট্রেংথের জায়গা।

এইটা কোর একটা জিনিস। সমাজে জুলুমের জায়গাটারে সার্পোট কইরা নিজের জন্য কোন অধিকার আদায় আপনি করতে পারবেন না আসলে। বরং এই জুলুমের বিরোধিতার লগে যতো এসোসিয়েট করতে পারবেন, সেইটা অধিকারের জায়গাগুলারে মজবুত করতে পারার কথা, সবসময়। মানে, (এনজিও প্রোপাগান্ডার কারণে) জিনিসগুলারে যতোটা আলাদা বইলা মনেহয়, এতোটা আলাদা আসলে না।

 

নভেম্বর ১৫, ২০২১

গত কয়েকদিন আগে, ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টের একজনের পোস্ট দেখতেছিলাম, ঢাকার বাইরে অন্য কোন শহরে থাকেন উনি; রাস্তায় বাইর হইছেন যখন, তখন অল্পবয়সী কিছু পোলাপাইন তাঁরে টিজ করতেছিল; শে খেইপা গিয়া দিলো ধমক। বাচ্চা পোলাপানগুলা ধমক খায়া একটু ডরায়া গেলো, তাঁরে জিগাইলো, আপনি কোন নেতার রিলেটিভ নাকি? এতো হেডম নিয়া ঝাড়ি দিলেন যে?

মানে, অন্যায় করাটা কোন সমস্যা না। কিন্তু যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা কইতেছেন, তাদের ‘জোর’টা কই – সেইটা হইতেছে মেইন কনসার্ন!

তো, বাংলাদেশে পুলিশের কোলে বইসা, অবৈধ সরকারের গুম-খুন-জুলুমরে সার্পোট কইরা যারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেন, উনারা এই ভ্যাকুয়াম’টা কখনোই ফিল করতে পারার কথা না; কারণ ক্ষমতার সাথে এক ধরণের আঁতাত ছাড়া এই ধরণের ‘আন্দোলন’ কখনো ইনিশিয়েটেডই হয় না। যেই কারণে এই ধরণের ডামি-আন্দোলনগুলা যেহেতু ক্ষমতার জায়গাটারে আন-কোশ্চেনড রাখতে চায়, পলিটিক্যালি যতো কারেক্টই হোক, লজিক্যাল ও দরকারি মনে হোক, এক ধরণের ‘লেজুড়বৃত্তি’র বাইরে আর কিছু হইতে পারে না।

তার মানে এইটা না যে, সব আন্দোলনই ‘সরকার-বিরোধী’ হইতে হবে, কিন্তু এই বেসিক পয়েন্ট’টারে ইগনোর করার তো কোন উপায় নাই যে, পাবলিকের ভোট চুরি করা সরকারের কোন সরকারি-আন্দোলন পিপল মুভমেন্ট হইতে পারার কথা না কোনভাবেই।

#########

একটা জিনিস খেয়াল কইরা দেইখেন, বাংলাদেশের পুলিশ, সরকারি লোকজন যদি আপনার লগে ভালো বিহেভ করে, তাইলে আমাদের কিন্তু খালি ভালোই লাগে না যে, আরে, পুলিশটা/অফিসারটা কতো ভালো! বরং অবাকও লাগে যে, এইরকম ‘ভালো’ পুলিশ/অফিসার বাংলাদেশে আছে! মানে, খুবই একসেপশনাল একটা ঘটনাই মনেহয় তো আমাদের কাছে!

একইভাবে, সরকারি প্রশাসনের লোকজন ‘নিরপেক্ষ’ কেমনে হয়! হইলে সেইটা ‘নিউজ’ হওয়ার মতো ঘটনা তো একটা! বা, আদালতে ন্যায়-বিচার হইলেও, খুশি হওয়ার চাইতে অবাকই আমরা বেশি হই! সেলিব্রেশনও হয় এইগুলা নিয়া, ফলাও কইরা প্রচারও করা হয়। কারণ এইগুলা ‘নরমাল’ জিনিস না, আমাদের সমাজে এবং রাষ্ট্রে।

তো, এইরকম যারা কয়েকজন ‘ভালো’; আমার ধারণা উনারা উনাদের প্রফেশনাল বা সোশ্যাল আইডেন্টিটির জায়গাগুলাতে বেশিরভাগ সময় মার্জিনাল বা সাফার করার কথা। যেইরকম দেখবেন, পোলা গ্যাং’য়ের কোন পোলা যদি মেয়েদেরক টিজ করতে বা ইভেন রেইপ করতে রাজি না হয়, তারে ‘বেইট্টা’ বইলা স্লেজিং করা হয়, বা ‘পুরুষ ক্যাটাগরি’ থিকা বাদ দিয়া দেয়া হয়, অনেকটা অইরকম। [ইভেন, অনেক মেয়ে-বন্ধুরাও দেখবেন অনেক সময় এইটা ইউজ করে, ‘এনাফ পুরুষ’ না বইলা…] মানে, পাওয়ার তো হইতেছে শো করার ব্যাপার। পাওয়ার যদি আপনি শো-ই না করতে পারেন, অন্যের উপরে ফলাইতে না পারেন, ক্ষমতায় থাইকা কি লাভ! 🙂

এইটা ব্যক্তির দোষ না – তা না, এক একজন ইন্ডিভিজ্যুয়াল ব্যক্তিই এই জিনিসগুলা প্রাকটিস করতেছে; বেটাগিরি [অবশ্য প্যাটিয়ার্কি কইলে বেশি সেক্সি লাগে মনেহয় এবং ‘একাডেমিক’ও 😛 ] দেখাইতেছে; কিন্তু এই সমাজে চলতে হইলে আপনারে (পুরুষ ও নারী এবং হিজড়াদেরও) পাওয়ারের গরম দেখাইয়াই চলতে হয়, বা হবে! এইটা কোর একটা ফিচার হয়া উঠছে গত ১০/১২ বছরে। সমাজের এই ‘নিয়ম’-এর বাইরে গিয়া কোন কাজই করতে পারবেন না আপনি।…

তোতা-পাখির মতন ‘পাবলিকের দোষ’ ‘পাবলিকের দোষ’ বইলা এর থিকা রেহাই পাওয়া যাবে না। যেই তোতা-পাখিরা ক্ষমতার ললিপপ চুইষা এই আওয়াজ দিতে থাকেন, উনাদের কাছ থিকা এর ‘সমাধান’ এক্সপেক্ট কইরেন না। কারণ উনারা ক্ষমতারই মাউথ-পিস।

মজলুম হিসাবে আমাদের একমাত্র ক্ষমতা হইতেছে ‘না’ বলতে-পারা। পাওয়ারের লোকজন মজলুমের আওয়াজরে এই কারণে নিরব কইরা দিতে চায়। দুই-একটা উদাহারণের দানা ছিটায়া দিয়া বলে, খা! যেন কতো দয়া উনাদের! আর উনাদের ন্যারেটিভ না মানলে আপনে ‘বেয়াদব’, ‘অশ্লীল’, ‘ষড়যন্ত্রকারী’, ব্লা ব্লা ব্লা…

কিন্তু এইটা বলতে পারতে হবে। এই চাপায়া দেয়া রিয়ালিটির নাটক মাইনা নেয়া যাবে না। মনে মনে হইলেও ‘না’ বলতে পারতে হবে। “ক্ষমতার গোলাম” হয়া যাওয়া যাবে না। চোর’রে যদি চোর না বলতে পারি আমরা, ডাকাতরে যদি ডাকাত না বলতে পারি, চোরের শাসন, ডাকাতদের শাসন শেষ হবে না কোনদিন।

 

নভেম্বর ১৬, ২০২১

আমাদের সমাজে একটা কালচার আছে, কেউ মারা গেলে, মৃত-ব্যক্তির নামে বদনাম আমরা করি না, পারলে তার ভালো-কথা, ভালো-কাজরে মনে করার চেষ্টা করি। তার খারাপ-কাজরে পারতপক্ষে পাবলিকলি বলতে চাই না। কেউ বলতে গেলেও তারে বলি, বাদ দেন!

নিজের একটা পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্সের কথা মনে হইলো।

আমার নানা পাকিস্তান আমলে আমাদের এলাকার পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু উনি কখনোই পলিটিক্যাল পারসন ছিলেন না। সৎ ও সাকসেসফুল ব্যবসায়ী ছিলেন, সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন এবং এক ধরণের ভালো-খারাপ বিবেচনা-বোধ উনার ছিল, যার ফলে উনার গ্রামের লোকজনই উনারে ভোট দিয়া চেয়ারম্যান বানাইছিল। এর আগে বা পরে উনার কোন রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ছিল না। উনার ইন্টারেস্টও দেখি নাই কখনোই। আমার বয়স যখন ৯/১০ বছর তখন উনি মারা যান।

আমার মনে আছে, নাতি-নাতনিদের সাথে আলাপে একবার হাসতে হাসতে উনি বলছিলেন আইয়ুব খানের হাত থিকা ছাতি উপহার পাইছিলেন উনি। তখন আমাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়’ আঘাত লাগছিল কিছুটা, আপনি আইয়ুব খানের লগে হ্যান্ডশেক করছিলেন! কিন্তু উনি যখন মারা গেলেন তখন উনার জানাজায় বিএনপি, আওয়ামীলীগ, কমিউনিস্ট, মৌলবীসহ হাজার হাজার মানুশের জমায়েত হইছিল। রাজনীতি উনার সামাজিক পরিচয় হয়া উঠতে পারে নাই।

কিন্তু বাংলাদেশে আজকে খুবই বাজে একটা সময় আমরা পার করতেছি। দেশের সমাজ-সংগঠন, সাহিত্য, এমনকি পারসোনাল রিলেশনের জায়গাততেও জুলুমের রাজনীতি কন্ট্রোল নিয়া নিছে। ক্ষমতা ও রাজনীতির বাইরে বিজনেস বলেন, ডাক্তারি বলেন, সাহিত্য বলেন, কোন সেক্টরেই মানুশের আর কোন পরিচয় নাই।

সমাজের জন্য, দেশের জন্য এইরকম দমবন্ধ অবস্থা যারা তৈরি করছেন হাসান আজিজুল হক তাদের একজন সার্পোটারই খালি ছিলেন না, ছিলেন মোরাল-কারিগরদের একজন। মরার পরেও একজন নাৎসিরে যেমন আমরা একজন নাৎসি হিসাবে মনে রাখি, হাসান আজিজুল হকরেও জুলুমের একজন সার্পোটার হিসাবেই মনে রাখবো আমরা। এই অবস্থা উনারাই তৈরি করে গেছেন, সাহিত্যিক হিসাবে এবং সমাজের বুদ্ধিজীবী হিসাবে।

বাংলাদেশের আজকের এই অবস্থায়, উনার লিগাসি কন্টিনিউ না করাটাই হইতে পারে উনারে ট্রিবিউট জানানোর বেস্ট উপায়।

 

নভেম্বর ১৭, ২০২১

একটা জিনিস কি খেয়াল কইরা দেখছেন, আমাদের চারপাশে কি হইতেছে, সেইটা মোটামুটি জানি না বা জানতে পারি না আমরা।

যেমন ধরেন, ফুডপান্ডাতে কোন একটা গন্ডগোল হইছে কিনা জানি না আমি; কিন্তু ডেলিভারিম্যানরা কোন একটা কিছু নিয়া আন্দোলন করতেছে মনেহয়। গতকালকে উনাদের রেস্টুরেন্টের লিস্ট দেখলাম অনেক কইমা গেছে এবং ডেলিভারি টাইম বাইড়া গেছে; মেসেজ দেখাইছে ‘চাপ বেশি’। আজকে দেখলাম, দুয়েকজন বলতেছেন, কই নাকি ডেলিভারিম্যান’রা মিছিল করছে।

স্টুডেন্টদের হাফ-পাশ নিয়াও কিছু হইতেছে। কোন মুভমেন্ট তো হইতে পারতেছে না (নব্য রাজাকার) হেলমেট বাহিনির কারণে; কিন্তু ঝুট-ঝামেলা হইছে মেবি কিছু। কিছু মিছিল হইছে, এবং এইরকম ‘উন্নয়নের দেশে’ মিছিল কেন হবে – এই অভিযোগে পিটানিও হইছে।
দ্যান, একলগে পরীক্ষা নেয়ার নাম কইরা কিছু সরকারি ভার্সিটিতে ভর্তি ফি ৫/৭ হাজার টাকা কইরা ফেলা হইছে। কি হইছে – এইটা নিয়া স্পষ্ট কোন আলাপ নাই। যে যেমনে পারতেছে, তার পাওয়ার দেখাইতেছে।

আর ‘শুওরের বাচ্চাদের’ মিডিয়াতে আছে খালি উন্নয়ন-মারানি!

তা নাইলে কয় বেটার কয় বউ, কয় সাপের কয় মাথা; কোন নায়িকার পাছা মোটা, এইসব আদি-ভৌতিক ‘নিউজ’ দিয়া টাইম-স্পেইস ভরাট কইরা রাখা।

আমাদের চারপাশে একটা না-জানার অন্ধকার তৈরি করা রাখা হইতেছে সবসময়, এইগুলা দিয়া। আমরা ‘জানি-না’ না খালি, বরং আমাদেরকে জানতে-না-দেয়ার দেয়ালটা ইসরাইল-প্যালেস্টাইন সীমান্তের চাইতেও উঁচা হয়া উঠতেছে দিনে দিনে।

কোনকিছুই দেখতে পাইতেছি না আমরা, কোনকিছু শুনতেও পাইতেছি না।

এই না-শুনতে-পাওয়া, এই না-দেখতে-পাওয়াটারে এটলিস্ট ফিল করা দরকার আমাদের।

 

নভেম্বর ১৮, ২০২১

এইটা মনেহয় আগেও কয়েকবার বলছি যে, বাংলাদেশের কমিউনিস্টরা হইতেছেন এসথেটিক্যালি ইউরোপিয়ান মর্ডানিস্ট। তো, রিলিজিয়নরে ঘৃণা করাটা যতোটা না মার্কসের ‘আফিম’-বাণী থিকা আসছে তার চাইতে অনেকবেশি মর্ডানিস্ট জায়গা থিকা সাবস্ক্রাইব করার ঘটনা আসলে।

এইটা আরেকবার মনে হইলো রমিলা থাপারের কথা থিকা, যেইখানে ব্রাহ্মণদের রোল’টা কি ছিল ইন্ডিয়ান সোসাইটিতে সেইটা নিয়া বলতেছিলেন। রোল’টা তো ফিক্সড থাকে নাই, কিন্তু একটা সময়ে (খ্রীস্টিয় ৫-৭ শতকে) ব্রাহ্মণদের কাজ ছিল যে কোন রাজা বা শাসনের লেজিটিমিসি প্রোভাইড করা, তাদেরকে ‘ক্ষত্রিয়’ পদবী দেয়ার মাধ্যমে। খালি এইটুকই না, বরং ইকনোমিক একটা রোল ছিল। অনেক জমি/সম্পত্তি মন্দিরের নামে দিয়া দেয়া হইতো, অনেক জায়গায় স্থানীয় ট্যাক্স মন্দিরে জমা হইতো, এমনকি ট্যাক্স-কালেক্টরের কাজও করতো ব্রাহ্মণরা ও মন্দিরের লোকজন।

ধারণা করি, চার্চের ব্যাপারগুলাও কম-বেশি এইরকম জায়গাগুলাতে ছিল, যেইটা পরে অন্য ইন্সিটিউশনগুলা দিয়া রিপ্লেস হইছে। গর্ভমেন্ট হয়া উঠছে সেকেন্ড গড।* খালি থিওরির জায়গাতে না, বরং স্ট্রং একটা ইকনোমিক কনফ্লিক্টই থাকার কথা রিলিজিয়াস এবং সরকারি ইন্সটিটিউশনগুলার মধ্যে। যার ফলে পলিটিক্যাল-মর্ডানিটির জন্মই হওয়ার কথা রিলিজিয়াস ইন্সিটিটিউশনগুলার ক্রিটিকের ভিতর দিয়া। এইটা বাদ দিলে মর্ডানিটির জায়গাটা থাকবে-না না, বরং ভিতটা মজবুত থাকার কথা না ততোটা।

মানে, অন্য আরো অনেককিছুর লগে এইটাও একটা পয়েন্ট। রিলিজিয়াস ইন্সিটিটিউশনগুলা ইকোনমিক জায়গা থিকা যদি পাওয়ারফুল হয়া উঠে, সেইটা মর্ডান সেক্যুলার-প্রতিষ্ঠানের অথরিটি’টারেই কমায়া ফেলে না খালি, একটা থ্রেট হিসাবেও চইলা আসতে পারে। আর ইকনোমিক পাওয়ারটাই যেমন সোশ্যাল অথরিটির জায়গাগুলারে তৈরি করে, একইভাবে সোশ্যাল-অথরিটিগুলা যারা কোনকিছুরে ‘শুদ্ধ’ ‘পবিত্র’, ‘আইনগতভাবে সঠিক’ বইলা রায় দেয়ার ক্ষমতা রাখেন, অই ক্ষমতার ভিতর দিয়া ইকনোমিক পাওয়ারটার কাছাকাছি থাকতে পারেন। (আগের দিনের মৌলভী, পুরোহিতদের রোল’টা একভাবে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের থাকার কথা এখন, আধুনিক রাষ্ট্রের ফরম্যাট’টাতে।…)

ব্যাপারটা এইরকম না যে, একটা স্ট্রাকচারের উপরে আরেকটা সুপার-স্ট্রাকচার আছে; বরং এরা (ইকোনমিক পাওয়ার ও কালচারাল অথরিটি) একটা আরেকটার লগে মিইলা-মিইশা আছে বা থাকতেছে সবসময়। আর এই জায়গাতে রোলগুলা কনফ্লিক্টিং-ই না খালি, বরং কম্পিটিটিভও। মানে, যেইভাবে পুলিশ আর সাংবাদিক, একটা পজিশন আরেকটা পজিশনরে মনিটরই করে না, অনেক সময় মিইলা-মিইশা কাজ করা লাগে, অইরকমভাবেও এফেক্টিভ থাকতে পারে।

মানে, হিস্ট্রিক্যালি একটা ইভেন্ট বা ঘটনা একটা লিনিয়ারিটিরে ফলো করে না, বরং কয়েয়কটা রেফারেন্সের বেসিসে এফেক্টিভ থাকে। তো, অই জায়গা থিকা, ধর্ম-ঘৃণা পলিটিক্যাল-মর্ডানিটির কোর একটা ফেনোমেনা (যেইখানে মার্কসিজম অইটুকই না)। আর বাংলাদেশের ‘কমিউনিস্টদের’ যে ‘ধর্ম-বিরোধিতা’ সেইটা পলিটিক্যাল-মর্ডানিটির একটা ঘটনা, মার্কসিজমের জায়গা থিকা এতোটা না।

… … …
*এই বাণীটা দিছিলেন ইব্রাকার ঝিল্লী; এইরকম একটা কথা হইতেছিল যেইখানে উনি বলতেছিলেন, বাংলাদেশের মানুশ-জন দেখবেন সরকারের সমালোচনা করবে, কিন্তু আবার মানবেও; করোনার টিকার ঘটনা’টাতে দেখেন, অবিশ্বাস কিন্তু অইভাবে নাই যে, এই টিকা কাজ করবে কিনা। গর্ভমেন্ট যেহেতু দিতেছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা কইরাই নিশ্চয় দিতেছে। এইরকম আল্লাহ, খোদা, ভগবান, ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাসের চাইতে গর্ভমেন্টের উপর বিশ্বাস কম না তেমন। সরকারি অফিসারদেরকে ‘স্যার’ ডাকার ঘটনাটাও এই জায়গা থিকা আসার কথা।

##########

খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া মারা যাওয়ার পরে এইটা খুবই সম্ভব যে বিএনপি একটা বি-টিমে পরিণত হইতে পারে, নয়া বাকশালের।

এইটা তো কম-বেশি সত্যি যে, খালেদা জিয়া বাঁইচা আছেন বইলাই বিএনপি’র পক্ষে নেগোশিয়েশন করা সম্ভব হইতেছে না, বা অই চেষ্টা করলেও যতদিন খালেদা জিয়া বাঁইচা আছেন, উনারা সেইটা করতে পারবেন না।
১৯৮৬ সালের ইলেকশন একটা স্ট্রং রেফারেন্স। তখনকার বিএনপি’র লিডার’রাও ইলেকশন করতে রাজি ছিলেন, আন্দোলনের পক্ষে ছিলেেন না। ১/১১’র পরে নয়া বাকশালের ফর্মেশনের সময়টাতে
পাওয়ারফুল ‘প্রেশার-গ্রুপগুলার’ লগে আতাঁত না করাটা বা পরের ইলেকশনগুলাতে না-যাওয়াটারে খালেদা জিয়ার ভুল হিসাবে মনে করেন বিএনপি’র লোকজনও।

বাংলাদেশে মিলিটারি-আমলা-মিডিয়ার আতাঁতের ভিতর দিয়াই একমাত্র ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব – নয়া বাকশালের এই আইডিওলজিতে বিএনপির অনেক নেতারাই বিশ্বাস করার কথা। মানে, বিএনপি কোন আন্দোলন করতে পারে না – এইটা বিএনপি’র নেতাদের দোষ না অবশ্যই, কিন্তু এই আইডিওলজি থিকা সরতে না পারাটা একটা সমস্যা।

পলিটিক্যাল এক্টের জায়গা থিকা মেবি মাইনর ঘটনাই, কিন্তু মাইন্ড-সেট’টা একটা ঘটনা তো। যেমন, উনাদের মুখে এই আক্ষেপ শুনবেন, মিডিয়া আমাদের খবর প্রচার করে না, মিলিটারি’রে ধ্বংস কইরা দেয়া হইছে, সরকারি অফিসার’রা সরকারিদলের পার্টি-লিডারদের মতো কাজ করে এখন। এইগুলার কোনটাই মিথ্যা না। কিন্তু এর একটা মিনিং এইটাও যে, এই ফোর্সগুলারেই মবিলাইজ করার কথাই উনারা ভাবেন।
এখন পিপল-এনগেইজমেন্ট কেমনে তৈরি করতে হবে, সেইটা একটা পলিটিক্যাল পার্টিরে শিখানোর কিছু নাই। কিন্তু এই জায়গাটারে মেইন ফোকাস পয়েন্ট করতে পারাটা যে দরকার – এইটা ভাবতে পারার কথা বলা যাইতে পারে।

বিএনপি’র লিডার’রা অইটা ভাবতে পারেন না – এইটা আমার দাবি না, বরং উনারা কম-বেশি অই মিলিটারি-আমলা-বিজনেস ক্লাসেরই লোক, যারা পিপল-ফোর্সের জায়গাটারে তেমনভাবে এক্সপেরিয়েন্সই করেন নাই হয়তো।

মানে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুশ খালেদা জিয়ারে যতোটা সার্পোট করতে পারতেছে, বিএনপি’রে ততোটা করতে পারতেছে না। কেন পারতেছে না? – এইটা বিএনপি’র লিডারদের নিজেদেরকে জিগাইতে পারাটা মনেহয় দরকার।

মানে, আমার প্রশ্নটা হইতেছে, খালেদা জিয়া একজন পিপলস লিডার, কিন্তু বিএনপি পলিটিক্যাল দল হিসাবে কেন পিপলস পার্টি হইতে পারে নাই? (পলিটিক্যাল এক্টের জায়গা থিকা অবস্টেকলগুলাসহ, যদি কোন থিওরেটিক্যাল জায়গা থাকে, সেইটা কোনগুলা আসলে?)

 

নভেম্বর ১৯, ২০২১

‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’য় আসলেই কি কোন এসেন্স ছিল না? শেখ মুজিবুর রহমান ইনভলব না থাকেন, কিন্তু পুব পাকিস্তানের মিলিটারি’র অন্য লোকজন কি পশ্চিম পাকিস্তানের এগেনেস্টে মিলিটারি ওয়ার শুরু করার কথা ভাবেন নাই?

মানে, এই ধরণের প্রশ্ন করাটারে ‘বোকামি’ বললেও কম বলা হবে, বরং পলিটিক্যালি শয়তানি-প্রশ্ন হিসাবেই দেখবো আমরা; কারণ এর এসেন্স যা-ই থাকুক, এর উদ্দেশ্য ছিল শেখ মুজিবুর রহমানরে পলিটিক্যালি ‘পাকিস্তানের দুশমন’ হিসাবে প্রমাণ করা। একটা পলিটিক্যাল মামলা ছিল অইটা, ফ্যাক্ট যা-ই থাক।
কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলা’টারে দেখেন কোনভাবেই ‘পলিটিক্যাল মামলা’ বলা যাইতেছে না। বলতে দেখছেন নাকি কাউরে? মানে, কোন মিডিয়ায়, কোন পলিটিক্যাল এনালিস্টরে?

যেন খুবই সিরিয়াস ইকনোমিক্যাল ইস্যু একটা। কই জানি দেখলাম লেখছিল, ‘২ শত লক্ষ টাকা দুর্নীতি’র মামলা! মানে, ২ কোটি শুনলে তো হাসতে পারে লোকজন। এইরকম।

তো, যেই জিনিস যা, তারে তো আগে তার বেসিসে আইডেন্টিফাই করা লাগবে, সেইটারে বলতে হবে তো আগে! কিন্তু কেউ না কইলেও সেইটা বাতিল হয়া যাবে না আসলে।

#########

– আহমদ শরীফের দুইটা স্ট্যাটাসটিক্যাল লাই –

কথা কইতে গেলে ডেটা দিয়া কথা কওয়া লাগবে – এইটা কখনোই আমার দাবি না; মানে, এই দাবি করতে গেলে তো আমি নিজেই কথা বলতে পারবো না। কিন্তু যে কোন আলাপেই ডেটা বা রেফারেন্স জিনিসটারে সবসময় খেয়াল করাটা দরকার। এইটা যে কোন ইন্টেলেকচুয়াল আলাপের ক্রুশিয়াল একটা জিনিস।
যেমন ধরেন, আমি কইলাম, চর্যাপদ না, বরং খনা’র বুলি হইতেছে বাংলা-ভাষায় সবচে আদি ঘটনা; কারণ চর্যাপদ ৮শ – ১২শ সালের যেমন ঘটনা, খনা’র টাইমটাও অইরকমই, আগে না হইলেও অলমোস্ট একই সময়ের ঘটনা তো! মানে, এই অনুমান আমি করতে পারি, কিন্তু প্রমাণ করার মতো কোন ডেটা বা রেফারেন্স না থাকলে দাবি আমি করতে পারি না তো আসলে! বড়জোর একটা অনুমান, তা-ও বেশ পাতলা-টাইপেরই অনুমান, ইন্সিটিটিউশনাল ও পাবলিক-লিটারেচারের একটা প্রভোকেটিং ডিবেটের জায়গা থাকার পরেও। [তো, এইটা অল টুগেদার আলাদা একটা আলাপ।]

এইরকম যে কোন ইন্টেলেকচুয়াল আলাপেই তিনটা স্টেইজ থাকে – একটা অনুমান বা আইডিয়া থাকা, যেইটা কোন না কোন রেফারেন্সের বেসিসেই শুরু হয়; সেকেন্ড হইতেছে এর লগে রিলিভেন্ট ডেটা বা রেফারেন্সগুলারে খোঁজা, ইন্ট্রিগ্রেট করা, যাচাই-বাছাই করা, অনুমানটা/আইডিয়াটার লগে মিলায়া দেখা; দ্যান হইতেছে একটা ডিসিশান মেইক করা বা দাবি’টা করা।

তো, ফার্স্টের জিনিসটা না থাকলে কোন ইন্টেলেকচুয়াল আলাপই আসলে হইতে পারে না; যত ডেটা-ফেটাই দেন, যেই জায়গাটারে ভ্যারিফাই করার ট্রাই করতেছেন, অই জায়গাটারে যদি কন্সট্রাক্ট না করতে পারা যায় পয়লা তাইলে ডেটাগুলা মিসলিডিং হইতে পারে; এমনকি ইনভেন্টও করা লাগতে পারে অনেকসময়! স্কুলে যেমনে উত্তর দেইখা অংক মিলাইতাম আমরা 🙂 যেইভাবে এখন ‘সরকারি ডেটা’ বানানো হয়, অইরকম। মানে, ‘প্রমাণিত’ বলার লাইগা লাগে এইসব।

এই কারণে ডেটা বা রেফারেন্স দরকারি জিনিস। ভুল কথা কইলেও ট্রেস’টা থাকে, কই থিকা ভুল, কেমনে ভুল।

২.
এই কথা ভাবতে গিয়া সামনে একটা বই পাইলাম। বাংলাদেশের হিন্দুত্ববাদী (মতান্তরে অসাম্প্রদায়িক) ইন্টেলেকচুয়াল আহমদ শরীফ-এর লেখা; নাম – “বাঙলা বাঙালী বাঙলাদেশ” (ফার্স্ট ছাপা হয় ২০১৩ সালে, ২০২১-এর এডিশন)। অই বইয়ে একটা লেখা আছে “বাঙালী সত্তার বিলোপ প্রয়াসে ১৯০৫ সনের ষড়যন্ত্র” (পেইজ ১৪৪ – ১৪৯)। অইটা ব্রাউজ করলাম। 🙂

দুইটা ডেটা পাইলাম লেখাটাতে, শেষের দিকে। (উনার আর্গুমেন্ট, রাজনীতি ও পলিটিক্যাল পজিশন নিয়া আরো ডিটেইলে কথা বলার ইচ্ছা আছে, এই কারণে এইখানে পজ রাখতেছি। খালি ডেটা দুইটা নিয়া বলতেছি।)
এক নাম্বার ডেটা হইতেছে ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশে মুসলমানের সংখ্যা মাত্র ‘কয়েক লাখ’ বেশি ছিল। উনার কথাটা এইরকম: “পাকিস্তানোত্তর যুগে পূর্ববাঙলা থেকে হিন্দুরা বাস্তুত্যাগ করে চলে যাওয়াতে এবং ভারত থেকে মুসলিম আগমনের ফলে ফলে মুসলিমরা এখানে যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, ব্রিটিশ শাসনকালে কয়েক লাখের সংখ্যাধিক্যে অশিক্ষিত মুসলিম সমাজ তা পেত না।” (পেইজ ১৪৯)

‘কয়েক লাখ’ মানে হইতেছে ‘খুব বেশি না’ ‘negligible’, উনিশ-আর-বিশ। টোনটাতেই টের পাইবেন। তো, এখন আদমশুমারি দেখলে তো এর একটা ধারণা যাওয়া যাবে। একটা রিসার্চ পেপারে একটা টেবিল পাইলাম (ছবিটা কমেন্টে দিতেছি), পারসেইন্টেইজের; অইখানে সবচে আগের, ১৯০১ সালের ডেটাতে পুব-বাংলায় ধর্ম-পরিচয়ে মুসলিম-পিপল হইতেছে ৬৫.৯৯% আর হিন্দু-পিপল ৩৩.১৮%; মানে লিটারালি অর্ধেক! যেইটা ১৯৪১ সালের দিকে ৭০% আর ২৯%-এ চইলা আসছে। ডিফরেন্স হয়তো কোটি পর্যন্ত যাইতে পারে নাই, কয়েক লাখেরই! 😛 তো, এইটারে কি মিছা কথা বলবো না আমরা? ৩০% – ৪০% ডিফরেন্সরে ‘কয়েক লাখে’ নামায়া নিয়া আসাটারে?

সেকেন্ড ডেটাটা একটু বেটার; নাম্বার আছে, যদিও সোর্স নাই কোন। “… সরকারি হিসেবেই ত্রিপুরা, মণিপুর ও গভীর পাবর্ত্যাঞ্চল বাদ দিয়ে নতুন প্রদেশের লোকসংখ্যা ছিল তিন কোটি দশ লক্ষ এবং মুসলমান ছিল মাত্র এক কোটি আশি লক্ষ।” (পেইজ ১৪৮) কিন্তু খেয়াল করেন ৫৮% পিপল হইতেছে ‘মাত্র’! মানে, যে কোন মূল্যে উনি ‘প্রমাণ’ করতে চাইতেছেন যে, পূব-বাংলায় মুসলমানদের সংখ্যা কখনোই খুববেশি ছিল না!
আরো কারিশমা হইতেছে, বাকিরা যেন ‘হিন্দু!’ এইখানে কোন গারো, সাঁওতাল, চাকমা, অন্য ধর্ম ও জাতি-গোষ্ঠীর কেউ নাই। বাংলাদেশে যারা মুসলমান না তারা সবাই যেন ‘হিন্দু’! এইটা এক্সপ্লিসটলি বলা না হইলেও, এই ‘চেতনা’ হিন্দুত্ববাদী-বয়ানের মোটামুটি সব জায়গাতেই পাইবেন।

এই ঘটনা’টা অলমোস্ট সব হিস্ট্রির আলাপেই মিসিং যে, কোন হিস্ট্রিক্যাল পিরিয়ডে হিন্দু-পরিচয় একটা ‘ধর্ম’ হয়া উঠলো! একটা কাস্ট-সিস্টেম অনেক দিন থিকাই চালু ছিল এবং অই কাস্ট-সিস্টেমের মধ্যে যারা থাকতো না তারা ‘অচ্ছুত’ হয়া থাকতো সমাজে, কিন্তু হিন্দু-কনটেক্সটে অরাও কিন্তু ‘হিন্দু’-ই, জাত নাই আর কি কোন! [মুসলমানরা অনেকদিন এইভাবে ‘অচ্ছুত-জাত’ ছিলে মনেহয়, পুরান লিটারেচার ঘাঁটলে কনফার্ম হয়া বলা যাবে।…] এইভাবে লোয়ার-ক্লাস হিসাবে আইডেন্টিফাই হওয়ার কথা; যারা আসলে তা না, বা আসলেই তা কিনা – এই সন্দেহ আমার থাকলো।

৩.
আর এর বাইরে পপুলেশন-পলিটিক্স নিয়া অনেক আলাপ তো আছেই। (মানুশ বাড়ার কারণে পুপলেশন বাড়ে নাই সবসময়, জিওগ্রাফিক্যাল কাভারেজের একটা ঘটনাও ছিল আগে, আর পদ্ধতি ও ডেফিনেশন তো আছেই।…) ইভেন এই মুসলিম-হিন্দু ক্যাটাগরিটা নিয়াও।…

##########

একটা জেনারেল সেন্সে, কোন মানুশ কখনোই গ্রেট হয় না, গ্রেট হয় তার কোন কাজ।* কিন্তু কেউ যখন কোন একটা কাজে গ্রেটনেস শো করতে পারেন, তার কাছে অন্য আরো সব ব্যাপারে গ্রেট এক্সপেক্টশন রাখতে থাকি আমরা।

যেমন একবার একজন বলতেছিলেন, মেসি ভালো ফুটবল খেললেও রোনালদো’রে আমি আগায়া রাখি, কারণ সে মানুশ হিসাবে ভালো, অনেক দান-খয়রাত করে। এখন দান-খয়রাত তো ভালো জিনিস, কিন্তু এর কারণে মেসি’রে যে ‘পছন্দ করা গেলো না খুব একটা’, তার কি হবে আসলে? 🙁
মানে, ‘মানবিক গুণাবলী’রে বাদ দিয়া দিতে হবে না, কিন্তু ‘সবকিছু ভালো হইতে হবে’ – এইটারে এক্সপেক্টশন বানানোর ব্যাপারে কিছুটা সাবধান থাকাটা দরকার মনেহয় আমাদের। এইগুলা খেয়াল করবো না – তা না, কিন্তু দান-খয়রাত না করতে পারলে ‘ভালো ফুটবল প্লেয়ার’ না ভাবতে পারার জায়গাটা নিয়াও ভাবতে পারাটা অ-দরকারি না আর কি!…

… … …
*মানে, কোন মানুশ গ্রেট হইতে পারবে না – এইটা কোন কথা না, সেইটা আরেকটা ঘটনাই মোটামুটি। বরং অই জায়গা থিকা যিনি গ্রেট, তার গ্রেটনেসের কিছু নমুনা তার লাইফে উনি রাইখা যান, এইরকম। অই ঘটনাটারে বাদ দিয়া বলতেছি এইখানে।

 

নভেম্বর ২০, ২০২১

– হাঁটাহাঁটি, দৌড়াদৌড়ি, জিমে যাওয়া, ইয়োগা-করা… –

এইগুলা ভালো জিনিস। সবাই (মানে, আরবান মিডল-ক্লাস, ৩০+ লোকজন) করে। আমিও করছি কিছুদিন (মোটামুটি সবগুলাই এবং এখনো হ্যাপিলি ওভারওয়েটই আছি)। এখন না-করতে করতে একটু দূর থিকা দেইখা মনেহয়, ব্যাপারগুলা উইয়ার্ড না একটু!

মানে, হাঁটাহাঁটি, দৌড়াদৌড়ি, জিমে যাওয়া, ইয়োগা করা… এইগুলা যে করা যাবে না – তা তো না-ই। এইগুলা তো কারো কোন ক্ষতি করতেছে না! বরং যিনি করেন, তার শরীরের ফিটনেস ধইরা রাখতে পারেন। তারপরে ডায়াবেটিস তো আছেই। শরীর সুস্থ থাকে, বডি ফিট থাকে। তারপরেও সকাল-সন্ধ্যায় যখন লোকজনরে দেখি জোরে জোরে হাঁটতেছেন, জগিং করতেছেন, দৌড়াইতেছেন, উইয়ার্ড লাগে তো একটু। নিজের আইলসামিরে জাস্টিফাই করি এইভাবে যে, হুদা-কামে, আজাইরা কেন হাঁটবো?

এমন না যে আমি হাঁটি নাই। পুরা জীবন বলতে গেলে হাঁইটাই পার করছি, দোস্তদের সাথে, একলা একলা; হাঁটতে থাকাটা ভালো একটা এক্টিভিটি, আমি এনজয়ও করি। কিন্তু এর চে ভালো তো যদি বাজার করতে যাই, তখন হাঁইটা যাওয়াটা। বাজার-টাজার কম থাকলে ব্যাগ নিয়া হাঁইটা আসাটাও। কিন্তু লোকজন দেখছি, তাকায়া থাকে; হাঁইটা বাজারে কেন যাইতেছে? টাকা নাই নাকি? নাকি লোকটা কিপটা? মানে, আপনার পকেটে রিকশায় যাওয়ার মতো টাকা থাকার পরেও আপনি হাঁইটা যাইতেছেন, এইটা মোটামুটি ‘অস্বাভাবিক’ একটা ঘটনাই 🙂 কারণ ‘হাঁটবেন’ তো সকালে বা সন্ধ্যাবেলায় হাঁটার লাইগা! এর বাইরে, কোন কাজের জন্য হাঁইটা যাইতেছেন মানে হইতেছে ‘টাকা বাঁচাইতেছেন’!

তো, আমি ভাবছি যে, এইরকম ‘টাকা বাঁচানোর জন্য’ হাঁটহাঁটি শুরু করা লাগবে আবার। মানে, হাঁটাহাঁটি শ্যুড বি দ্য পার্ট অফ ডেইলি এক্টিভিটি। কিন্তু মুশকিল হইলো, ঢাকা শহরে হাঁটাহাঁটি করার মতো রাস্তা নাই, ফুটপাত নাই। এই কারণে মুশকিলও। কিন্তু বাসা-বাড়ির আশেপাশের, ২/৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোন কাজকাম হাঁইটাই সারবো বইলা নিয়ত করছি। দেখা যাক!

#########

ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ

ডেমোক্রেসির ফ্রেজালিটি নিয়া কথা বলতে গিয়া হোমি কে. ভাবা গতকালকে একটা অনলাইন সেশনে বলতেছিলেন, নেগোশিয়েট করার স্পেইস যত কমতে থাকবে, ডেমোক্রেসি তত গায়েব হয়া যাবে। তো, এমনিতে আমার মনে হইতেছিল, বাংলাদেশের নয়া বাকশাল সবচে বাজে জিনিস কোনটা?

অনেকের মনে আছে কিনা, গত মার্চ মাসে নরেন্দ্র মোদী’র ঢাকায় আসার বিরোধিতার মুভমেন্টের সময় ১৪-১৫ জন মাদরাসার স্টুডেন্টদের যে খুন করা হইছিল, এরপরে কয়েকটা পুলিশ ফাঁড়ি/থানার ছবি ছাপানো হইছিল কিছু, একদম ট্রেঞ্চ বানায়া মেশিনগান নিয়া পুলিশ যুদ্ধ-প্রস্তুতির মতো নিয়া রাখছে। আর মিডিয়া হেফাজত-ঘৃণা ক্যাম্পেইন শুরু করছিল। তখন মনে হইছিল, এই অবৈধ গর্ভমেন্ট ডিসিশান নিয়া রাখছে যে, দরকার হইলে সিভিল-ওয়ার বা গৃহযুদ্ধ বাধায়া দিবে, মিলিটারি শাসন শুরু করবে; কিন্তু কোন নেগোশিয়েট করার, কথা-বলার, মুভমেন্ট করার কোন স্কোপ দিবে না!

এমনকি কাউরে কোন ডিগনিটি নিয়া কথা কইতেও দিবে না। কোনকিছু নিয়া বিরোধিতা আপনি করতেই পারবেন না; করলে আপনারে ইনফিরিয়র একটা পজিশনের দিকে ঠেইলা দেয়া হবে।

কোন পলিটিক্যাল নেগোশিয়েন খালি সম্ভবই-না না, বরং পলিটিক্যাল এনটিটি বইলা কোনকিছুরে একসেপ্টই করা হবে না। নেগোশিয়েনের তো প্রশ্নই আসে না। নয়া বাকশালের ডামি-মুভমেন্ট বাদে কেউ কোন মিছিল করতে পারবে না, মিটিং করতে পারবে না, করলে অইগুলা হবে ‘ষড়যন্ত্র’! (পলিটিক্যাল এক্টিভিটি না।)
তো, বাংলাদেশে ডেমোক্রেসি খুব ফ্রেজাইল অবস্থায় আছে – এইটা সত্যি কথা না; সত্যি কথা হইতেছে – বাংলাদেশে ডেমোক্রেসি বইলা কিছু নাই।

বিএনপি যখন লাস্ট টাইম ক্ষমতা ছিল, তখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেমোক্রেসি ছিল। কারণ তখন পর্যন্ত পাবলিকলি দেশের প্রাইম-মিনিস্টার’রে নাম ধইরা সমালোচনা এবং এমনকি গালি-গালাজও করা যাইতো। এখন ভুলে, বা স্বপ্নে কইরা ফেললেও মাফ চায়া নিতে হবে। তো, এইটারে একটা প্যারামিটার হিসাবে নিতে পারেন, ডেমোক্রেসি থাকার বা না-থাকার। এটলিস্ট বাংলাদেশে। এইটা ফার্স্ট জিনিস – একটা মোরাল পজিশন থিকা ডিগনিটির সাথে ক্রিটিক করতে পারা। এইটা কোন ডেমোক্রেটিক রাইটসই না, মানুশ হিসাবে পলিটিক্যালি এইটা না-করতে পারাটা হইতেছে ‘নন-হিউম্যান’ পজিশন একটা। সেকেন্ড হইতেছে, মিছিল, মিটিং করতে দেয়া, সোশ্যালি এক্ট করতে পারা। দ্যান আসে নেগোশিয়েশনের প্রশ্ন।

যেইখানে আপনি চাইলে গুম কইরা ফেলতে পারেন, মামলা দিয়া জেলে ভইরা রাখতে পারেন, মিডিয়া দিয়া ভিলেন বানায়া দিতে পারেন, নেগোশিয়েনের প্রশ্নই তো আসতে পারে না!

এই কারণে বাংলাদেশে ডেমোক্রেসি নাই। ‘উন্নয়ন’ (পড়েন, লুটপাট) আছে। এবং যেহেতু ‘উন্নয়ন’ আছে, ডেমোক্রেসি কি দরকার! 🙂

#########

ব্যাপারটা এইরকম না যে, আমাদের সমাজে অনেক ভালো-মানুশ দরকার, যেইটা নিয়া আহাজারি অনেক জায়গাতেই দেখবেন; যেন মানুশের ‘ভালো’ হইতে হবে, সবচে আগে! অথচ ব্যাপারটা উল্টা পুরাটা। যদি এই সমাজে কোন ভালো-মানুশ থাকেনও উনি ভালো থাকতে পারবেন না আসলে। কারণ সমাজের স্ট্রাকচার বলেন, নিয়ম-কানুন বলেন সেইগুলা এতোটাই খারাপ যে ভালো মানুশ হয়া এইখানে থাকতে পারাটা অনেক কঠিন কাজ।

মানুশ ভালো হওয়াটা জরুরি না, বরং যদি সমাজে ভালো নিয়ম-কানুন থাকে, সামাজিকভাবে সেইগুলা প্রাকটিস হয়, সামাজিক প্রতিষ্ঠান থাকে, তখন একজন মানুশের পক্ষে চাইলেও খারাপ হওয়া টাফ।
ঘটনা এইটা না: ভালো-মানুশ > ভালো সামাজিক প্রাকটিস > ন্যায়বিচারের সমাজ; মানে, এইভাবে হয় না, বেশিরভাগ সময়। একজন ব্যক্তির ভালো-হওয়ার চাইতে যদি খারাপ-হওয়াটা বেশি রিওয়ার্ডিং হয়, বা ভালো-হওয়াটা যদি ঝামেলার জিনিস হয়, ভালো শে কেন হবে? বা সেইটা না হইলে তারে তো দোষ দিতে পারেন না আপনি।

বরং ঘটনাটা যদি এইরকম হয়: ন্যায়বিচারের সমাজ > ভালো সামাজিক প্রাকটিস > ভালো-মানুশ; এইটা সম্ভাবনা হিসাবে বেশি পসিবল হওয়ার কথা।

যে কোন সমাজেই ভালো-মানুশ, খারাপ-মানুশ থাকবেই, মোরাল সেন্সে; অইটা নিয়া কথা বলার তেমন কিছু নাই, কিন্তু সমাজের টেনডেন্সিটা একটা ঘটনা।

কিছুদিন আগে একটা আলাপ হইতেছিল, লোকজনের সিভিক সেন্স নাই, রাস্তা-ঘাটে চিপসের প্যাকেট ফালায়া রাখে! তখন কয়েকজন বলতেছিল, এক কি.মি. পরে পরে রাস্তায় ডাস্টবিন রাইখা দেখেন, লোকজন এই কাজ করে কিনা! তখন অন্যরা কইলো, না, না, ডাস্টবিন রাখলেও এই কাজ করবো অরা! মানে, এই জিনিসটা পরীক্ষামূলকভাবে কেউ কইরা দেখতেও রাজি না।

তো, দোষ যখন মানুশের ঘাড়ে দেয়া হয়, তখন মানুশের মধ্যে একটা জিনিস কাজ করার কথা যে, যা শালা! খারাপ হয়াই দেখামু তাইলে! এবং তখন খারাপ-হওয়াটাও রিওয়ার্ডিং হইতে থাকে একভাবে।…

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, একজন ব্যক্তি-মানুশ খারাপ-ভালো হওয়ার চাইতে সমাজের খারাপ বা ভালো হওয়াটা মোর ইম্পর্টেন্ট জিনিস, সবসময়। মানুশের ভালো হইতে হবে না – ব্যাপারটা এইরকম না; কিন্তু গুড সোশ্যাল প্রাকটিস এস্টাবলিশ করা গেলে সমাজের ভালো-মানুশের দেখা বরং বেশি পাইতে পারবো আমরা।

#########

ইন্ডিয়ায় নরেন্দ্র মোদী কিষাণদের কিছু দাবি মাইনা নিছেন। কেন? একটা জায়গায় দেখলাম একজন বলতেছেন, কারণ সামনে কোন একটা লোকাল ইলেকশন; দাবি মাইনা কিছু ভোট বাড়ানোর, ধইরা রাখার ট্রাই করতেছেন।

তার মানে, ইন্ডিয়াতে সরকারি দলের লোকজনের ভোটের কথা চিন্তা করা লাগে। অরা বাংলাদেশের মতো শক্ত ডেমোক্রেসি এস্টাবলিশ করতে পারে নাই! শেইম! 🙂

 

 

Leave a Reply