নোটস: জুন, ২০২৩

অবিচুয়ারি: সিরাজুল আলম খান

আমাদের চোখের সামনে আমরা যা যা কিছু দেখি তা তো সত্যি না পুরাপুরি; বরং আমাদের দেখাদেখির ঘটনাটাই অনেক বেশি বায়াসড হয়া থাকে; কিন্তু তাই বইলা যা কিছু আমরা দেখি না, বা যা কিছু গোপনে ঘটে, সেইসব কিছু গোপন বইলাই সেইগুলা বেশি সত্যি না আর কি!

মানে, ফ্রন্টলাইনে, নিউজপেপারের হেডলাইনে যা ঘটছে এবং এর বাইরে ‘ব্যাক সাইডে’ যারা আছেন বা ছিলেন – এই গ্রুপ মিইলাই হিস্ট্রির ঘটনাগুলা ঘটান নাই; হিস্ট্রিরে একটা লিনিয়ার লাইন হিসাবে দেখতে গেলেই বরং এই ধরণের ইলুশন/বিভ্রমের তৈরি হয়। যেন কতগুলা মানুশ গোপনে শলা-পরামর্শ কইরা হিস্ট্রি তৈরি কইরা ফেলতেছেন! বা মানুশের করার কিছু নাই, ইতিহাস তার ‘নিজের গতিপথে’ চলতেছে! দুইটাই এইরকম লিনিয়ারিটির কথা।

আমরা যে কোন সময়েই একটা হিস্ট্রিকাল রিয়ালিটির ভিতরে আছি, আর এর ভিতরেই ইন্টারএক্ট করতেছি। হিস্ট্রিরে আমরা কিভাবে দেখতেছি, সেইটাই আবার হিস্ট্রিতে আমরা কি কন্ট্রিবিউট করতে পারতেছি, সেইটারে পসিবল কইরা তুলে। হিস্ট্রিকাল রিয়ালিটিরে বদলানোর জন্য হিস্ট্রির আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা জরুরি একটা জিনিস।

সিরাজুল আলম খান ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওমিলিগের স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন ছাত্রলিগের সাধারণ সম্পাদক (১৯৬৩-৬৪ এবং ১৯৬৪-৬৫), দুই বছর। কিন্তু অই দুই বছরই ডাকসু ইলেকশনে ছাত্রলিগ জিততে পারে নাই, ছাত্র ইউনিয়নই মেবি জিতছিল। মানে, ছাত্রলিগ বড় স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন না হইলেও এক ধরণের ‘সাংগঠনিক বিস্তার’ হইতেছিল; যার ক্রেডিট সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সিরাজুল আলম খান পাইছেন, উনার কন্ট্রিবিউশনও মেবি ছিল কিছু। তখনকার দিনে তো ‘বিপ্লব’ অনেকবেশি বেচা হইতো; তো, ছাত্রলিগ কইরাও আপনি ‘বিপ্লবী’ হইতে পারেন – এইটাই ছিল সিরাজুল আলম খানের সবচে বড় পলিটাকাল কন্ট্রিবিউশন। পরেও এইরকমের ‘বিপ্লবী-জোশ’ যারা ধইরা রাখতে চাইছেন, তারা তাদের সামনে আইকন হিসাবে সিরাজুল আলম খানরে দেখতে পাইছেন।

কিন্তু ছাত্রলিগ শুরু থিকাই ছিল আওমিলিগের স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন। ছাত্র ইউনিয়ন সৌললি সিপিবি’র জিনিস ছিল না, কিছুটা ইন্ডিপিন্ডেডই ছিল শুরুতে, যেইটারে নানান ধরণের ‘ভাঙন’ বলা হয়, সেইটা আসলে সিপিবি’র কব্জাতে যাওয়ার একটা ঘটনাই।

[তারপরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সিরাজুল আলম খান কি করছেন – এই নিয়া তেমন কোন আলাপ কোথাও দেখা যায় না। যদিও শোনা যায়, উনি ইন্ডিয়ান এম্বেসি’র লগে যোগাযোগ রাখতেন। থিওরেটিকালি আমার আন্দাজ হইতেছে, ইন্ডিয়ান আর্মি নামানোর কাজকামের লগে উনার যোগাযোগ থাকতে পারে, এক রকমের। মুজিব-বাহিনি’র লগে উনি এসোসিয়েটেড ছিলেন, কিন্তু পারসোনাল কোন খোঁজ-খবর আলাপে মিসিংই অনেকটা।]

তো, আওমিলিগ কইরা আপনি তো ‘বিপ্লব’ করতে পারবেন না! যার ফলে, সিরাজুল আলম খানের পক্ষে আওমিলিগ করা পসিবল হয় নাই। উনার ভিজিবল পলিটিকাল ক্যারিয়ার ছাত্রলিগেই শুরু, ছাত্রলিগেই শেষ। জাসদ বানানোর পরেও এর স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের নাম দিছিলেন – ছাত্রলিগ (জাসদ)।

সিরাজুল আলম খান যেই বিপ্লব করতে চাইছেন, মজলুমের একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে চাইছেন, সেইটা ততদিনে একটা জুলুমবাজ একটা আইডিওলজিই হয়া উঠছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড। নিজেরাও নিজেদের গদি বাঁচাইতেই হিমশিম খাইতেছিল। যার ফলে, ইন্টারন্যাশনাল হেল্প উনি পান নাই। ইন্ডিয়ার ব্যাক-আপ নিয়াই ‘জাসদ-বিপ্লব’ করতে চাইছেন। অই ব্যর্থ-ক্যু’র পরে উনার পলিটিকাল কোন ইনলভবমেন্ট বা এচিভমেন্টের কথা জানা যায় না। তবে গুরু হিসাবে উনারে নিয়া উনার শিষ্যদের উচ্ছ্বাস এখনো জারি আছে। কিছুটা প্রকাশ্যে, কিন্তু অনেক বেশি গোপনেই।

সিরাজুল আলম খান যতদিন না রাজনীতি করছেন, তার চাইতে বেশিদিন রাজনৈতিক গুরু হিসাবেই তার দিন পার করছেন। উনার একটা মেজর আইডেন্টিটি হইতেছে যে, উনি ‘গোপনে’ রাজনীতি করছেন। এইটারেই প্রায়োরিটি দেয়া হয় উনার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনাতে। কিন্তু রাজনীতি তো আসলে ঠিক গোপনে করার মতো জিনিস না! বরং অনেকবেশি পাবলিক এক্টের ঘটনা। যেইরকম ধরেন – প্রেম; গোপন জিনিস, প্রাইভেট-স্ফিয়ারে করা লাগে; কিন্তু কিছু পাবলিক শো-অফ না থাকলেও কিন্তু ভাল্লাগে না; মাঝে-মধ্যে দেখাইতে পারতে হয়। তা নাইলে সেইটা ‘জ্বালা’ হয়া উঠে অনেক সময়, একটা সোশাল রিকগনিশনের ছোটখাট একটা স্পেইস হইলেও থাকতে হয়। কিন্তু রাজনীতি এর অনেকটা উল্টা, রাজনীতি পাবলিকলিই হয়, প্রাইভেট-লেভেলে নানান ধরণের নেগোশিয়েন করতে পারতে হয়; কিন্তু অইটা রাজনীতি না কখনোই; যা গোপনে করা হয়, বরং বেশিরভাগ সময়ে কন্সপিরেসির ঘটনাই। গোপনে রাজনৈতিক দল বানাইতে পারেন আপনি, কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত সেইটা পাবলিকলি ভিজিবল হইতে পারতেছে সেইটা রাজনীতি হিসাবে এপিয়ারডই হইতে পারে না। আমার ধারণা, সিরাজুল আলম খানের রাজনীতি-প্রেম ছিল, যেইটা গোপন থিকা প্রকাশ্য কোনদিন হইতে পারে নাই। কোন পথ খুঁইজা পায় নাই। অই গোপন প্রেমের জ্বালা নিয়াই উনি রাজনীতি-ভাবনা কইরা গেছেন।

আর উনার মুরিদদের আক্ষেপটাও ঠিক এই জায়গাটাতেই যে, উনি অনেক কিছু করছেন, কিন্তু করছেন ‘গোপনে’। উনার ‘প্রাপ্য মর্যাদা’ উনি পান নাই। আর যেহেতু গোপনে করছেন, উনার রাজনীতি ছিল ‘নিঃস্বার্থ’! কিন্তু আমি যতদূর দেখি, উনি ছিলেন ‘৬০ দশকের একজন রিয়াটার্ড বিপ্লবী, যিনি তার রাজনৈতিক গুয়ার্তুমি থিকা খুব বেশি দূর পর্যন্ত সরতে পারেন নাই। ভিজিবিলিটির বাইরে ছিলেন বইলাই উনি ‘কারেক্ট’ ছিলেন না, বরং উনার রাজনৈতিক-আইডিয়ায় পিপলের ভিজিবল রাজনীতিরে আন্ডারমাইন করাটা একটা মেজর উদ্দেশ্য হিসাবে থাকার কথা।

জুন ১০, ২০২৩

 

জামাত হইতেছে বড়শি’র আগায় ছোট-মাছটা; ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’রে ডাকা হইতেছে আসলে জামাত-রে দিয়া।

মানে, ইসলামি-জঙ্গিরা মাথা-চাড়া দিতেছে না; বরং তুমরা, সেকুলার’রা যদি এই নয়া বাকশালি রিজিমরে সার্পোট না দেও, টিকায়া না রাখো, তাইলে তো ইসলামিস্টদের দুয়ারে দাঁড়ানো ছাড়া আমাদের কোন পথ খোলা নাই!

‘শাহবাগ’রে, সেকুলার-বলদদেরকে আরো ‘শক্ত’ভাবে দাঁড়াইতে হবে! গোয়েবলসরে (বাকশালি-মিডিয়ারে) আরো ‘তৎপর’ হইতে হবে! তা নাইলে ইসলামিস্ট-ষাঁড়রাই আইসা এই বাকশালি-রিজিমরে কব্জা কইরা ফেলবে! এই ডর-দেখানোর কাজে জামাতের ইউজ করতে পারাটাই এর পলিটিকাল সিগনিফিকেন্স, আপাতত।

যেন সো-কল্ড সেকুলার’রা নিজেদেরকে মবিলাইজ করতে কোনরকম হেসিটেট না করে। যেইরকম দোনা-মোনা দেখা যাইতেছিল, বিএনপি’রে শলা-পরামর্শ দিতেছিল; এইটা যেন তারা ‘পরিহার’ করে।

মানে, এইরকমই ভাবতে পারাটা লজিকাল মনে হইতেছে আমার কাছে।

জুন ১১, ২০২৩

 

অন্য অনেকেরই মতোই, আমারও মাঝে-মধ্যে মনে হইছে যে, একটা ইকনোমিক কল্পাস ছাড়া নয়া বাকশালের শাসনের পতন হবে না। কিন্তু এইটা ভুল চিন্তা বইলাই আমি মনে করি।

বাংলাদেশের ইকনোমিকর যেই বাজে অবস্থা হইছে, এর চাইতে আর বাজে কিছু হইতে পারে-না না, দিনে দিনে আরো বাজে কিছুই হবে। কিন্তু এই ইকনোমিক ডিজাস্টারের কারণেই নয়া বাকশালের পতন হবে না। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পরেও মুজিবের একনায়কতন্ত্র আরো পোক্ত করা হইছিল বরং। এইটা অবভিয়াসলি ট্রু যে, তখনকার ওয়ার্ল্ড-অর্ডার আর এখনকার ওয়ার্ল্ড-অর্ডারের অবস্থা একই না। কিন্তু আমি অই জায়গাটার কথাই বলতে চাইতেছি যে, একটা ইকনোমিক গ্রোথ যেইরকম কোন পলিটিকাল দুঃশাসনরে জাস্টিফাই করতে পারে না, একইভাবে কোন ইকনোমিক ডিজাস্টারও এর শেষ করতে পারে না যদি না পলিটিকাল কনশাসনেসের জায়গাটা চেইঞ্জ হইতে পারে।

বাংলাদেশে নয়া বাকশালের অবৈধ শাসনের হাত থিকা রেহাই পাইতে হইলে পলিটিকাল চিন্তার জায়গাটাতে বড় ধরণের শিফটিং করা লাগবে। আর এইটা কখনোই পসিবল হবে না যতদিন পর্যন্ত গোয়েবলসদের কথা, বাকশালি-মিডিয়ার কথাগুলারে, নেরেটিভটারে আমরা অবিশ্বাস করতে পারবো।

হিটলারের কাছে গোয়েবলস যা, একাত্তর-টিভি, সময়-টিভি এমনকি ফার্স্ট-লাইট এবং প্রতিদিনের-তারা নয়া বাকশালের কাছে তার চাইতেও জরুরি ঘটনা। হিটলারের মিলিটারি-পাওয়ার ছিল, নয়া বাকশালের কোর জিনিসই হইতেছে মিডিয়া-পাওয়ার। মিডিয়ার গিমিকবাজি থিকা চোখ না সরাইলে নয়া বাকশালের চেহারা দেখতে পাইবেন না আপনি।

শয়তানরে যতক্ষণ না পর্যন্ত শয়তান হিসাবে ভাবতে পারতেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তারে মোকাবেলার কথাই তো আপনি ভাবতে পারবেন না। বাংলাদেশের এখনকার কনটেক্সটে নয়া বাকশাল হইতেছে ইভিল, আর বাকশালি-মিডিয়া হইতেছে তার ভেইল/পর্দা। এই পর্দা না সরাইলে শয়তানরে দেখতে পাবো না আমরা। একটা ইকনোমিক ডিজাস্টারের মধ্যে থাইকাও সেইটা টের পাইতেছি না আমরা।

#

অবৈধ বাকশালি শাসনে যে কোন ইলেকশনে পার্টিসিপেট করা কেন্ডিডেটের, পাতানো-বিরোধীদলের কাজ হইতেছে সার্কাসের জোকারের রোল প্লে করা।

রিং-মাস্টার একটু পরে পরে আইসা তারে থাপ্পড় মারবে; আর আমরা, অডিয়েন্সরা, সেইটা দেইখা হাসবো। বা একটু জোরে থাপ্পড় মারলে মনে হবে যে, নাহ, এতো জোরে থাপ্পড়-মারাটা উচিত হয় নাই! আর এই ফাঁকে আমাদের প্রতিবাদ করার ডিজায়ার-রেও ফুলফিল করতে পারবো কিছুটা। ‘তর্ক’-ও করতে পারবো যে, কিন্তু রিং-মাস্টারের তো সেই ‘অধিকার’ আছে, তাই না! তারপরে ধরেন, পরীমনি’র মতো প্রিন্সেস আইসা দৃষ্টি সরায়া নিবে আমাদের, আবার! 🙂

তো, সার্কাসের জোকার হিসাবে হিরো আলম চরমোনাইয়ের পীর থিকা বেটার। উনি যতটা সিরিয়াস, ততটা এন্টারটেইনিং না। অথবা আমাদের সার্কাসের রিং-মাস্টারের হাতে জোকারের অপশন খুববেশি নাই।

 

#

কোন একটা অতীতে ফিরা যাওয়াটা কোন ফিউচারের কাজ না আর কি!

মানে, জিও-পলিটিকালি ভাবতে গেলে, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার বা উড়িশার চাইতে মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড অনেক বেশি ক্লোজ এলাই হইতে পারার কথা বাংলাদেশের। এই ছয়টা স্টেইট মিইলা বাংলাদেশের সাথে একটা কনফেডারেশন তৈরি করার কথা ভাবলে, সেইটা বেটার হবে; অই কনফেডারেশর অনেক বেশি ডাইবারসিফাইড বা মাল্টিপ্লিসিটির দেশ হইতে পারার কথা।

অরুণাচল ভূটানের সাথে মিলতে পারে, সিকিমও। অই তিনটা মিইলা আরেকটা কনফেডারেশন হইতে পারে। একটা বড় দেশ হওয়ার চাইতে রাষ্ট্রগুলার ট্রাই করা উচিত নানান ধরণের কনফেডারেশন তৈরি করা। এই ফিউচারের জায়গা থিকা বলতেছি।

পশ্চিমবঙ্গ যদি বাংলাদেশের সাথে আসতেও চায়, সেইটাতে এগ্রি করাটা রিস্কিই হবে। কারণ ‘বাঙালি’ আরো এগ্রেসিভ এবং রেসিয়াল আইডেন্টিটি হয়া উঠার চান্স বাড়ে তখন। বরং অইদিকে আরাকানের লোকজন যদি আসতে চায়, সেইটাও একসেপ্ট করা যাইতে পারে।

রাষ্ট্র বা রাজ্য বা দেশ কখনোই ফিক্সড আইডেন্টিটি ছিল না, চেইঞ্জ হইতেই থাকবে; আর সিঙ্গুলার হইলেই ভালো না, বরং মাল্টিপ্লিসিট হইতে পারলে সেইখানে সাইনারজি ও লেন-দেনটাও ভালো হওয়ার কথা।

এমনিতে ক্লাইমেটের কারণে, যোগাযোগ-ব্যবস্থা, টেকনোলজি নানান কারণেও জিওগ্রাফিতে চেইঞ্জ হয়, প্রায়োরিটি বদলায়। কিন্তু কনশাসলি একটা প্রায়োরিটিরে ড্রাইভ করতে পারাটাও মনেহয় দরকারি কাজ।

সেই বিচারে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও আরাকানরে নিয়া একটা কনফেডারেশন করার কথা ভাবতে পারাটা ভালো বাংলাদেশের মানুশের, পলিটিকাল চিন্তাবিদদের। পশ্চিমবঙ্গও থাকতে পারে, কিন্তু নেসেসারি না। ম্যাপ দেখলে ব্যাপারটা বেটার খেয়াল করতে পারার কথা।

জুন ১২, ২০২৩

 

এখনকার দুনিয়ার এই যে নিও-ফ্যাসিস্ট সেন্টিমেন্টের আপ-রাইজিং এইটা তো লিবারাল-সেক্যুলার পলিটিক্যাল সাপ্রেশনেরই একটা আউটকাম।

ইন্ডিয়ার আজকের বিজেপিরে তৈরি করছে ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেসের ইর্মাজেন্সি’র শাসন! মিলিটারি, সরকারি-আমলা এবং সো-কল্ড সিভিল-সোসাইটির কন্টিনিউয়াস কন্সপিরেসির রেজাল্ট হইতেছে বাংলাদেশের আজকের বাকশাল।…

অথচ লিবারালদের হায়-হুতাশ দেখলে মনে হবে, এই নিও-ফ্যাসিস্ট আইডিওলজি যেন হঠাৎ কইরা গজাইতেছে হিস্ট্রিতে! এদের লগে যেন লিবারাল-সাপ্রেশনের কোন কানেকশনই নাই!

যেইটা লিবারালরা গোপনে করতো, সেই জুলুমগুলারে রাখ-ঢাক ছাড়া করার ভিতর দিয়া নিও-ফ্যাসিস্ট আইডিওলজি যেন এক ধরণের “ফ্রিডম” অফার করতেছে! এইরকমের একটা ইল্যুশনটারে তৈরি করতেছে ভিজ্যুয়াল-রিয়ালিটির ভিতর দিয়া।

যেই কারণে ভিজিবিলিটির কন্ট্রোল এস্টাবলিশ করাটা হয়া উঠতেছে ক্রুশিয়াল একটা ঘটনা। যেইখানে জুলুমের ঘটনাগুলা এবসেন্ট এবং ব্লার হয়া থাকতে পারে সবসময়।

কিন্তু এই জুলুমের মোকাবেলা কখনোই লিবারাল বদমাইশিগুলা দিয়া করা পসিবল না। নয়া বাকশালের শাসন চাই না বইলা আমরা কখনোই লিবারাল সাপ্রেশনের জায়গাগুলাতে ফিরা যাইতে পারি না। এইটা পসিবলও না।

মানে, নতুন কি চাই? এই কোশ্চেনের জবাব দেয়ার আগে, এই আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা একটা জরুরি ঘটনা আসলে।…

জুন ১৪, ২০২৩

 

াংলাদেশের আর্ট-কালচার-জার্নালিজমের ডমিনেন্ট এস্থেটিক্সের জার্নিটা হইতেছে অনেকটা প্রভার্টি-পর্ন টু উন্নয়ন-পর্ন।

মানে, জার্নালিজমে এইটা অনেক বেশি ভিজিবল। ১৯৮০-৯০ এর নিউজ-হেডলাইন বা নিউজক্লিপগুলা যদি দেখেন মোস্টলি দুঃখ-দুর্দশা-দারিদ্র নিয়া নাকি-কান্না। মানুশ খাইতে পাইতেছে না, মানুষ অসহায়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস পাকৃতিক দুর্যোগ, এই-সেই। আর এখন কার দালান কত বড়, কোন রাস্তা কত চওড়া। রাস্তার নামই হইতেছে তিনশ ফিট, একশ ফিট, ষাইট ফিট। তারপরে কোন শহরে কয়টা ফ্লাই-ওভার। এইরকম উন্নয়ন-পর্নগুলা হইতেছে নিউজ। বা ‘দুঃস্থ’ মুক্তিযোদ্ধা থিকা মুক্তিযোদ্ধা-কোটা’তে ট্রান্সফার হইছে ইস্যুগুলা।

আর্ট-কালচারেও এই জিনিসগুলা আছে। এইগুলা একটু সাটল ঘটনা বইলা এতো তাড়াতাড়ি চোখে পড়ে না, কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন। যেমন, কোন সিনেমাটা সবচে বেশি আর্টিস্টিক, বাংলাদেশে? ‘সবাই’ (মানে, আর্ট-কালচার করা লোকজন) “সূর্য দীঘল বাড়ি”র কথা মানতে পারবেন বইলা আমি ধারণা। খারাপ বা ভালো’র বাইরেই এর সাবজেক্ট হইতেছে, গরিবি। গরিবি একটা মাস্ট ঘটনা; তা নাইলে সেইটা ‘বাস্তব-সম্মত’ বা “জীবন-ঘনিষ্ঠ’ হইতে পারতো না। এখন যেমন ধরেন, ঢাকা শহরের ডিপ্টিকশন হিসাবে আরবান-ক্লাশের প্রেজেন্স না দেখাইলে হয় না। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী (ডুব) বা অমিতাভ রেজা’র (রিকশা-গার্ল) দেখলে এইগুলার প্রেজেন্স টের পাইবেন।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, শো-অফ বা যে কোন ধরণের দেখনদারি হইতেছে বাংলাদেশি এস্থেটিক্সের একটা কোর ঘটনা হয়া ছিল বা এখনো সেইটা আছে; আগে ছিল গরিবি, এখন হইতেছে উন্নয়ন।

তো, এইটা কখন হইছে, কেমনে হইছে, কি কারণে হইছে এবং এই কালচারাল-প্রডাকশন কিভাবে পলিটিকাল-পারভাশনের লগে এলাইনড হয়া আছে সেইটা নিয়া তো সেকেন্ড, থার্ড চেপ্টার, এমনকি একটা বই-ই লেখা লাগবে। সেইটা না করতে পারলেও এই জায়গাটারে আরেকটু এলাবরেট তো করা-ই লাগবে। করার ইচ্ছাটা থাকলো। বইলা রাখলাম এইখানে।

#

াকশালি-মিডিয়া কেন নয়া বাকশালরে ডিজঅউন করতেছে না – এই আক্ষেপ থিকা বিএনপি-বুদ্ধিজীবীরা* যত তাড়াতাড়ি বাইর হইতে পারবেন তত বেটার

মানে, বাকশালি-মিডিয়াই তো হইতেছে এই নয়া বাকশালের কারিগর, কোর পার্টনার। লাভারদের মতোই অভিমান করতে পারে, ‘তর্ক’ করতে পারে, কিন্তু যদি ব্রেকাপ হয় তাইলে তো প্রেমটাই (নয়া বাকশালই) থাকবে না! ইটস লাইক, গোয়েবলস কেন *হি*টলা*রে*র ‘সমালোচনা’ করতেছে না! বা তার এগেনেস্টে যারা কথা বলতেছে, তাদেরকে স্পেইস দিতেছে না! মানে, যদি দেয়, তাইলে তো সে আর গোয়েবলস থাকতে পারে না!

এখন এইটা কখনো ঘটবে-না না – তা না; যখন ঘটবে তখন বাকশালি-মিডিয়া তার সেইম আইডেন্টিটি নিয়া তো থাকতে পারবে না! তখন তারা বাতিল হয়া যাবে বা অন্যরকম ‘ফার্স্ট লাইট’ হবে, অন্যরকমের ‘পোতিদিনের তারা’ হবে।

বাতিল করাটা সহজ হবে না বা এখনো যে আমরা ইগনোর করতে পারতেছি না তার একটা মেজর কারণ হইতেছে বাকশালি-মিডিয়ার নেরেটিভটা থিকা আমরা বাইর হইতে নিজেদেরকে রাজি করাইতে পারতেছি না। কালচারাল-ওয়ার একটা লং-টার্ম স্ট্রাগলের ঘটনা; অবশ্যই পলিটিকাল লড়াইয়ের সাথে রিলেটেড জিনিস, কিন্তু এই অভ্যাসগুলারে কনশাসলি মোকাবেলা করাটা পলিটিকাল লড়াইয়ের চাইতেও টাফ ঘটনা।

মানে, এইগুলা খেয়াল করতে রাজি হওয়াটাও জরুরি কাজ আর কি একটা।


দেখেন, বুদ্ধিজীবী জিনিসটাই একটা বাতিল মাল এখন। এইরকম রোল যারা প্লে করতে চান, এনাফ ডাম্ব না হইলে সেই কাজটা করা মোটামুটি পসিবল না আসলে। ব্যাপারটা এইরকম না যে, বিএনপি-বুদ্ধিজীবী হওয়া যাবে না, কিন্তু সেইটা তেমন কিছুু মিন করে না, বা অইটা মিডিয়াবাজির পেরিফেরির মধ্যেই ঘটতে থাকা একটা ঘটনা, তারে মোকাবেলা করার কোন রাস্তা তো তৈরি করতে পারে না-ই, বরং অই জায়গাটারেই রি-ফুয়েলিং করতে থাকে বারবার। একজন ‘বুদ্ধিজীবী’ এগজিসটিং (বা ডমিনেটিং) মিডিয়ার কাছে সারেন্ডার না কইরা নিজেরে যে লাইভ রাখতে পারে না, অইটারর বুদ্ধিজীবিদার ডেথ বইলাই খেয়াল করতে পারাটা বেটার। যা-ই হোক, সেইটা তো আরেকটা আলাপ-ই অনেকটা…

জুন ১৫, ২০২৩

নয়া বাকশালের ইকনোমি একটা পঞ্জি স্কিমের মতোই রান করতেছে। যেই কারণে এই ইকনোমি’র জন্য নতুন নতুন লোন পাওয়া বা সো-কল্ড ‘জিও-পলিটিক্সের’ নেটওয়ার্কিং হইতেছে কি-ফেক্টর।

পঞ্জি-স্কিমে কি হয়? বড় কিছু করা হইতেছে বইলা অনেক লোকজনের কাছ থিকা টাকা নেয়া হয়; কিছুদিন কিছু শো-অফ হয়, একজনের টাকা দিয়া আরেকজনের টাকা শোধ করা হয়, কিন্তু আসল টাকা গায়েব কইরা দেয়া হয়, অন্য কোথাও পাচার কইরা দেয়া হয়।

একটা পঞ্জি-স্কিম একটা সার্টেন টাইম পর্যন্ত চলতে পারে – ৫/৭ বছর থিকা শুরু কইরা ২০-২৫ বছর পর্যন্তও। কিন্তু ফেইলওরটা মাস্ট। কারণ টাকা মাইরা দেয়া ছাড়া এইখানে তেমন কিছুই ঘটে না। যত বেশি দিন ধইরা একটা পঞ্জি-স্কিম রান করবে, এর সাইজ তত বড় হইতে থাকবে, আর এর ফেইলওরও বিশাল হবে।

বিদ্যুত-খাতের কথাই ধরেন, কতো কোটি কোটি টাকা নেয়া হইছে পিপলের কাছ থিকা? এখনো নেয়া হইতেছে। কিন্তু এর বেশিরভাগ টাকাই ইউজ করা হয় নাই এই খাতে, বরং মাইরা দেয়া হইতেছে কেপাসিটি-চার্জের নামে। তারপরে ধরেন পদ্মা-ব্রিজ, ৩০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকাই মাইরা দেয়া হইছে। এখন যেই টোল বা ইনকাম আসে, সেইটা দিয়া ৫০ বছরেও খরচের টাকা উঠবে না। মেট্রো-রেলেরও একই অবস্থা। প্রতিটা গর্ভমেন্ট প্রজেক্ট করা হয় হইতেছে টাকা মাইরা দেয়ার জন্য, মোটেই কোন প্রডাক্টিভ কাজে না। এর ফলে পিপলের কোন সিগনিফিকেন্ট সুবিধা যেমন হইতেছে না, এইগুলা থিকা কোন ইনকামও আসতেছে না। কারণ এই দুইটার কোনটাই এইগুলার উদ্দেশ্য না।

এখন এই পঞ্জি স্কিমটারে বাঁচায়া রাখতে হইলে আরো বড় বড় প্রজেক্ট করা লাগবে। আরো বেশি বেশি টাকা লোন করা লাগবে। যে কোন পঞ্জি-স্কিম চালু রাখতে হইলে নেটওয়ার্কিং একটা জরুরি জিনিস। নেটওয়ার্ক যতক্ষণ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে, বেশি বেশি লোকের কাছ থিকা বেশি বেশি কইরা টাকা নেয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পঞ্জি-স্কিম চালু থাকবে। যেই কারণে এডিবি থিকা লোন, আইএমএফ থিকা লোন, এইসব জিনিসরে অনেক বড় কইরা হাইলাইট করা হইতে থাকে। কিন্তু আল্টিমেটলি এইটা আরো বড় ধরণের কল্পাসের দিকেই নিয়া যাবে।

এখন যেহেতু এইটা একটা রাষ্ট্রিয়-লেভেলের পঞ্জি-স্কিম, সবচে বেশি টাকা নেয়া হবে পিপলের কাছ থিকাই। টাকা না দিতে চাইলে জোর কইরা নেয়া হবে। কোন কম্পারেটিভ এনালাইসিস করলে হয়তো ক্লিয়ারলি দেখা যাবে যে, একজন মানুশরে চলতে-ফিরতে গেলে যত টাকা গর্ভমেন্টরে দিতে হয়, সেইটা অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে বেশি, এবং অন্য যে কোন দেশের চাইতেও বেশি হওয়ার কথা, ইন টার্মস অফ রিটার্ন এন্ড বেনিফিট। এইটা আরো বাড়বে।

মানে, এই নয়া বাকশালের গর্ভমেন্ট চালাইতে হইলে, পঞ্জি-স্কিমটারে কন্টিনিউ করতে হইলে মানি-ফ্লো বাড়াইতে হবে। টাকা লোন নিতে হবে, পিপলের কাছ থিকা টাকা নিতে হবে, টাকা ছাপাইতে হবে। এই তিনটা কাজই হইতেছে কোর জিনিস। যদি বলেন, গর্ভমেন্ট কোন লোন নিতে পারবে না, নতুন ভ্যাট-ট্যাক্স বসাইতে পারবে না, নতুন টাকা ছাপাইতে পারবে না, এই ইকনোমি, এই পঞ্জি-স্কিম কল্পাস করবে। আর এর বোঝা বাংলাদেশের মানুশরে অনেকদিন পর্যন্ত টানতে হবে।

জুন ১৭, ২০২৩

 

যেইদিন নয়া বাকশালের পতন হবে, সেইদিন দালাল-বাটপারদেরকে পিটানি দিবে মানুশ-জন – এইরকম এক্সপেক্টশন অনেকের মনেই আছে; কিন্তু এইরকম ঘটার চান্স আসল কমই; মানে, শুরুতে কোন মিরাকলের মাধ্যমে পতন হবে, তারপরে মানুশ-জন জাইগা উঠবে – এইটা হবে না কখনোই।

বরং যেইদিন পিপল এই দালাল-বাটপারদেরকে পিটানি দেয়া শুরু করতে পারবে, সেইদিনই নয়া বাকশালের পতন শুরু হইতে পারবে আসলে। এর উল্টাটা ঘটার চান্স কম না, নাই-ই আসলে একরকম। যারা বা যেই ফোর্স এর পতন ঘটাবে, তারা-ই “নিউ কিং” হবে। এখন যেমন পুলিশ-মিলিটারি-আমলা-মিডিয়া হইতেছে কিং। কারণ এরাই ইলেক্টেড গর্ভমেন্টরে সরায়া এই হাইব্রিজ-মডেল এস্টাবলিশ করছে। এই গ্রুপটা নেশনাল-বুর্জোয়া শ্রেণি না, বরং এরা গ্লোবাল কালচারাল এলিট হইতে চায়।…

মানে, এই গ্রুপটা নিজে নিজে ক্ষমতা ছাইড়া দিবে না, সিচুয়েশন যতই ভারনারেবল হোক। বরং এরা যত চাপের মুখে পড়তে থাকবে, জুলুম আরো বাড়তে থাকবে, আরো সাটলভাবে একটা ‘নরমালিটি’র ভিতর দিয়া অপারেট করতে থাকবে।

এর এগেনেস্টে পিপল-পাওয়ার’রে মবিলাইজ করতে পারাটা কোন সহজ কাজ না। দেশে গৃহযুদ্ধ বাধায়া দিবে শেখ হাসিনা, কিন্তু ক্ষমতা ছাড়বে না। (দুই দিন পরে পরে দেখবেন ‘জঙ্গি’ ধরে, বা পাহাড়ের মানুশ মারে – এই থ্রেট উসকায়া দেয়ার লাইগা।) গোয়েবলস মিডিয়া কখনোই পিপল-পাওয়ারের পক্ষে দাঁড়াবে না। পুলিশ-মিলিটারি-আমলারা জানে যে কোন ইলেক্টেড গর্ভমেন্ট আসলেই তাদের এবসুলেট পাওয়ার থাকবে না। তো, যার ফলে, এইখানে পিপলস-পাওয়ার বা পিপলের রিপ্রেজেন্টেটিভ সিস্টেম রি-স্টোর হওয়ার চান্স কম।

চান্স আমি দেখি একটাই – মানুশের বোধ-বুদ্ধি বা কনশাসনেস। মানুশ যদি মনে করে যা হইতেছে তা আটকানো উচিত, এবং সবাই মিইলা ট্রাই করলে এই শয়তানের চক্রটারে ভাঙ্গা পসিবল, তাইলে মানুশ-জন একশনে যাবে, যাইতে রাজি হবে। তার আগে অই মিনিমাম পলিটিকাল স্পেইসটা তৈরি করাটা হইতেছে সবচে ক্রুশিয়াল কাজ। আমি যতটুক বুঝি, এইটার ভিজিবল সাইন এখনো বেশ ঝাপসাই। তবে আই হোপ যে, আমার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল।

জুন ২০, ২০২৩

রাস্তা-ঘাটে এইরকম অনেক জায়গা দেখতে পাইবেন, যেইখানে লেখা “ময়লা ফেলা নিষেধ”, অথচ দেখবেন সব ময়লা অই জায়গাটাতেই ডাম্প কইরা রাখা। (এই ছবিটা জাস্ট সেম্পল হিসাবে গুগুল সার্চ থিকা পিক করছি।) তো, দেইখা মনে হবে, আরে, যেইখানে মানা করা হইছে, সেইখানেই সব ময়লা আইনা ফেলতেছে! আমাদের দেশের মানুশ কি ফানি, এই-সেই বইলা হাসাহাসি করার ঘটনা আছে।
কিন্তু ঘটনা হইতেছে, সাইনবোর্ড বা দেয়ালের-লেখার পরে অইখানে ময়লা ফালানো শুরু হয় নাই; বরং যেইখানেই ময়লা ফেলা হয় নিয়মিত, সেইখানেই এইরকম সাইনবোর্ড লাগানো হয় বা লেখা হয়। আসল ঘটনা হইতেছে, আমাদের দেশের রাস্তা-ঘাটে, বাসা-বাড়ির আশেপাশে ডাস্টবিন পাইবেন না কোন! ওয়েস্ট-মেনেজমেন্ট কোন সিস্টেম নাই। একটা সাইনবোর্ড লাগায়া “দায়িত্ব-পালন” করা হয়।
“এইখানে পেশাব করা নিষেধ”-ও একই ঘটনা। কোন পাবলিক টয়লেট নাই। তো, এই যে ফান-বলদগুলা আছে, এরা যে এইগুলা জানে না – তা না; কিন্তু এইগুলা দেখলে বা বললে ফান-করা যায়-না না, বরং অইটুক পলিটিকাল-কনশাসনেস দেখানোটাও “রিস্কি” জিনিস বইলা আইডেন্টিফাই করতে পারে আসলে।

###

সোশাল-মিডিয়া পাজল

আমাদের এই সোশাল-মিডিয়ার টাইমে নরমালিটি হইতেছে এক ধরণের পারভাসন।

এই কথা মনে হইলো, একটা পোস্টার-বাণী দেইখা। পোস্টার’টা ভুয়াও হইতে পারে, কিন্তু অই কথাটা দেইখা মনে হইলো, যেইখানে টিকটকের ফাউন্ডার বলতেছেন, “অস্থির আর বেকার” লোকজনরে টার্গেট কইরা উনি টিকটক বানানোর কথা ভাবছিলেন। মানে, টিকটকের ফাউন্ডার হয়তো ফান কইরাই বলছেন কথাটা; যে আপনার আজাইরা টাইম আছে, চাকরি-বাকরি, বিজনেস-টিজনেস, পড়াশোনা কিছু নাই, বা ভাল্লাগতেছে না তখন বইসা বইসা ‘ফানি-ভিডিও’ দেখলেন।

এখন বিজি থাকলেও মাঝে-মধ্যে এইরকম মোমেন্টগুলা তো আসে, রিফ্রেশ লাগতে পারে তখন। এইরকম পারপাসও সার্ভ করে। কিন্তু মুশকিল হইতেছে, এইরকম (সোশাল-মিডিয়া) এপগুলার যা উদ্দেশ্য সেইটা সেন্ট্রালাইজড হইতে হইতে লেবু চিপায়া তিতা বানাইতে বানাইতে জিনিসটারে বিষ বানায়া ফেলে, শেষে।

যেমন, ফেইসবুকের উদ্দেশ্য কানেক্ট করা; কিন্তু এইটা কানেক্ট করতে করতে বেশি লাইক-শেয়ার পাইতে পারাটারেই গোল (goal) বানায়া ফেলে। ইউটিউবে যেমন বেশি ভিউ পাওয়াটারে। মানে, এইটা অ-দরকারি জিনিস না, সার্টেন ভিজিবিলিটি তো আপনারে এচিভ করা লাগবে। কিন্তু উদ্দেশ্য যখন হয় সার্টেন কানেক্টিভিটি এচিভ করা, ভিউ পাওয়া বা ফানি-হওয়া তখন কোনকিছুর ‘ক্রিয়েশন’ হইতে পারে না, বরং কি করলে লাইক-শেয়ার ও ভিউ পাওয়া যাবে, ভাইরাল হওয়া যাবে – সেই কন্সিডারেশনটা মেইন ঘটনা হয়া উঠে।

আর এই জিনিসটা খালি সোশাল-মিডিয়াতে আটকায়া নাই, যে কোন এক্টের ভিতরে এইটা রিয়ালিটি হিসাবে এপিয়ারড হইতেছে এখন। যেমন, বাংলাদেশের কোক-স্টুডিও একটা ভালো উদাহারণ। উনারা নতুন বা ভালো গান বানাইতে চাইতেছেন না – তা না, তার চাইতে পপুলার-ভাইরাল হইতে পারাটা বেশি ইম্পর্টেন্ট জিনিস তো এখন! এই ডিলেমা থিকা আউল-ফাউল সব কাজকাম করতেছেন।

এবং কিছু অডিয়েন্স তারা পাইতেছেন, যারা কোনকিছুর ভাইরাল হওয়াটারে আগে থিকা প্রেডিক্ট করতে পারেন বইলা নিজেদেরকে “রুচিশীল দর্শক” কেটাগরিতে এখনো রাখার ভিতর দিয়া এগজিসটেন্সনাল ক্রাইসিসটারে সলভ করতে পারেন 🙂

তো, এইরকম একটা অবস্থায়, যারা “ক্রিয়েটর” না বা অডিয়েন্স হইতেও রাজি নাই, তারা কি ‘ক্যান সাব-অল্টার্ন স্পিক?’র মতো মুক ও বধির হয়া যাবেন? – তা তো না! বরং এই যে ভিজিবিলিটর দেয়াল, এইটা নিয়া তারা কনসার্নড হইবেন; এইটারে “নরমাল” বা “সিনিকাল” হিসাবে পোর্টেট করার বদলে।

আর যারা এইগুলার ভিতরে নাই, ওল্ড-ফ্যাশনড “নরমাল” বইলা দাবি করতে চান, উনারা কোন না কোন পারভারশনের ভিতর দিয়াই নিজেদের নরমালিটি ক্লেইম করতে চান আসলে। কারণ, নরমালি একটা সুস্থতা না, বরং স্থির-অবস্থারে সাবস্ক্রাইব করতে চাওয়ার ঘটনা; যেইটা একটা মর্ডানিস্ট মেন্টাল-স্টেটের আকাংখা।

যেইটা আর ঘটে-না না, বরং যে কোন ঘটনারেই সার্টেন ফ্রেমের ভিতরে আটকায়া ফেলতে চাওয়ার ইচ্ছা। এইভাবে ‘নরমাল’ থাকাটাই এক ধরণের পারভার্ট অবস্থা, যা লোকেট করতে পারা দরকার আমাদের।

জুন ২৭, ২০২৩
রেলের টিকিট
এই জিনিসটা খুবই ইন্টারেস্টিং, যখন রেলওয়ের টিকেটে অনলাইন সিস্টেম চালু হইল, তখনই একজনরে বলতেছিলাম যে, ব্যাপারটা আসলে ছোট-চোরদের হাত থিকা বড়-ডাকাতদের কাছে হেন্ড-ওভার করা হইলো।
আগে রেলের লোকজনের লগে খাতির-টাতির করতে পারলেই টিকেট কিইনা জমায়া ফেলা যাইতো; কিন্তু এখন এই কাজ করতে গেলে কম্পিউটার লাগবে, ইন্টারনেট কালেকশন লাগবে, এমনকি সার্ভার যে চালায় তারেও টাকার ভাগ দেয়া লাগবে!
এক হইলো, যাদের স্মার্ট-ফোন, ইন্টারনেট কানেকশন এবং ইংলিশ জানা নাই, সেই ৮০% লোক তো অনলাইনে টিকেট কাটতেই পারবে না! অরা তো বাংলাদেশের মানুশই না!
আর যেই মিডল-ক্লাস পাছা ফুলায়া বড় করছিল, সে-ও চান্স পাবে না আসলে, ২-৪টা টিকেটই পাবে সবসময়; আর এইটা নিয়া হ্যাপি থাকবে, লাকি ফিল করবে। কিন্তু বড় একটা অংশ দুই নাম্বারিই হবে। মোটের উপরে, “স্মার্ট বাংলাদেশ” মানে হইতেছে ছোট-চোরদের বিজনেসরে বড়-ডাকাতদের কাছে শিফট কইরা দেয়ার ঘটনা।
এইটা ঠিক ডিসটোপিয়ান কোন ঘটনা না, এখনকার পলিটিকাল রিজিমের মাফিয়া-নেসটারে দেখতে বা বুঝতে না চাওয়ার জায়গা থিকা এইরকম মনে হইতে পারে, বড়জোর। মানে, ঘটনা এতো কমপ্লেক্স কিছু না আসলে 🙁
জুন ২৮, ২০২৩

Leave a Reply