ফিকশন: রিদয় আর্ট

আমরা যখন সাহিত্য-পত্রিকার নামের লেটারিং কইরা দিতে বললাম, রিদয় একটু অবাক হইলো। কইলো আমি তো রিকশা, ব্যানারের ডিজাইন করি, তোমাদের পত্রিকার নামের ডিজাইন কি পছন্দ হবে? আমি তখন একটু পেম্পার করলাম, কইলাম, না, না, তোমার আর্টও তো ভালো! দোকানের পিছন দিকে অর কয়েকটা আর্ট রাখা ছিল, অইগুলার দিকে তাকায়া বললাম।

রিদয় আসলে আর্টিস্টই হইতে চাইছিল। ক্লাস ফাইভের পরে আর পড়াশোনা করে নাই। ক্লাস টু-তে পড়ার সময় তার মা মারা গেছিল। পরে বাপ আরেকটা বিয়া করছিল। অই সৎ-মা’রও একটা বাচ্চা ছিল। রিদয় অই সংসারে থাকতে চাইতো না। বাপের ইনকামও খুব বেশি ছিল না। এই কারণে প্রাইমারি স্কুল পাশ করার পরে হাইস্কুলে আর ভর্তি হয় নাই। স্টুডেন্ট হিসাবে ভালো না হইলেও খারাপ ছিল না। কিন্তু স্কুলের আর্ট পরীক্ষায় ফুল মার্কস পাইতো সবসময়। টিচার’রাও অবাক হয়া অর ছবি আঁকা দেখতো। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পরে ফাংশনের ব্যানার-টানারও অরে দিয়া লেখানো হইতো।

রিদয় ছিল খুবই চুপচাপ স্বভাবের। খুব নরম কইরা কথা বলতো। গলার আওয়াজ কখনোই উঁচা পারতো না। আমাদের চে এক ক্লাস উপরেই পড়তো। কিন্তু যেহেতু আর স্কুলে পড়ে না এখন অরে তুমি কইরাই বলতে পারতাম আমরা। স্কুলে জুনিয়র-সিনিয়র ঘটনা, স্কুলের বাইরে আমাদের বয়স তো একই আসলে। খুব একটা বাড়ে না, বা বছর বছর বয়স বাড়ে না।

এইভাবে ৫-৬ বছর পার হয়া গেছে। আমরা ছোট ক্লাস থিকা বড় ক্লাসে উঠতে উঠতে আমরা বড় হয়া যাইতেছি। রিদয়ও দোকানের সাইনবোর্ড, সিনেমার ব্যানার, বিয়া-বাড়ির ডিজাইন করতে করতে মোটামুটি বিজনেস-এরিয়ার ঢুকে পড়ছে। আমাদের চাইতে বড় হয়া গেছে। আলাদা একটা ঘর নিয়া থাকে। সুন্দর একটা বাই-সাইকেল চালায়। চুল বড় রাখছে। অর গায়ের রং কালা, কিন্তু মিষ্টি রকমের। তেমন কোন ফ্রেন্ড নাই। থাকে একলা একলাই।

তখন আমরা মেট্রিক-পরীক্ষা দিছি। সাহিত্য-টাহিত্য করি। ধর্ম মানি না। বিপ্লব করতে চাই। বাপ-চাচাদের বয়সী লোকজনের লগে চা-সিগ্রেট খাই। সারাদিন আড্ডা দেই। বাজারে, নদীর পাড়ে, রাস্তার পাশের দোকানে। যেহেতু স্কুলের পড়াশোনা নাই, কলেজ এখনো শুরু হয় নাই, আমরা ডিসিশান নিলাম ত্রৈমাসিক সাহিত্য-পত্রিকা ছাপাবো। বিজ্ঞাপণের টাকা এলাকার বিজনেস-ম্যানদের কাছ থিকা নিব। আর ঢাকায় পত্রিকায় কাজ করেন এইরকম বড় ভাইরা প্রেসের কাজ কইরা দিবেন। কলেজের বাংলা-বিভাগের অধ্যাপকদের, সিনিয়র কবি-সাহিত্যিকদের লেখা নিবো, লগে ঢাকার সাহিত্যিকদের লেখাও আমরা ছাপাবো – একইসাথে লোকাল এবং ন্যাশনাল। এবং সেইটা হবে লিটলম্যাগও।

কবি-সাহিত্যিকদের লগে আমাদের যোগাযোগ আছে, কিন্তু কোন আর্টিস্ট তো নাই আমাদের! এই কারণে কথায় কথায় রিদয়ের নাম আসলো। ও এখন দোকান নিছে আইস কোম্পানির মোড়ে। একটা সাইকেলের দোকানের পাশে। দোকান বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। কাজ সে তার বাসাতেই করে। বিকালের দিকে ও আসে, এক-দুইঘন্টা বসে। নতুন কোন ক্লায়েন্ট পায় কিনা, এই জন্য।

এইরকম একটা বিকালবেলায় রিদয়রে পাইয়া গেলাম আমরা অর দোকানে। সবাইরে বসার জন্য মোড়া-টোড়া আগায়া দিতে লাগলো। তারপরে গিয়া অর চেয়ারে বসলো। আমরা জিনিসটারে অরে বুঝায়া বললাম। পত্রিকার নাম লেইখা দিতে হবে। নাম হইতেছে – অরিন্দম। নামের ব্যাখাও দিলাম, অরি-কে বা শত্রুকে দমন করে যে; মধুসুদন এর কবিতা আছে, “-এতক্ষণে অরিন্দম, কহিলা বিষাদে”। বইলা আমরা নিজেরা নিজেরা প্রাউড ফিল করলাম। কতো কিছু যে জানি আমরা!

কিন্তু রিদয়ের ইন্টারেস্ট টেকনিকাল জায়গাগুলাতে। কইলো, বানানটা লেইখা দাও। একটা কাগজ বাড়ায়া দিল। আর মাপ’টা কি হবে? জিগাইলো। কিন্তু আমরা তো মাপ’টা জানি না! প্রেসের কাজ যিনি কইরা দিবেন, সেই বড়ভাইরে জিগাইতে হবে। তখন রিদয় কইলো, সমস্যা নাই, আমি আমার মতো একটা মাপে বানাই, পরে ছোট-বড় কইরা দেয়া যাবে। কয়দিনের মধ্যে লাগবে জিগাইলো। এক সপ্তাহ! এক সপ্তাহের মধ্যে দিলেই হবে!

আমরা তো মোটামুটি খুশি। লাস্ট পাজল’টাও সলভ করা হয়া গেলো। এখন আমরা সমাজ বদলাইয়া দিতে পারবো। বিপ্লবের কাছাকাছি পৌঁছাইয়া যাইতে পারবো!

রিদয়ও কোন একটা আনন্দে মিটিমিটি হাসতেছিল। সেইটা কিসের হাসি আমরা বুঝতে পারি নাই তখন।

কয়দিন পরে শুনলাম, রিদয় প্রেমে পড়ছে!

অর প্রেমিকা আবার আমাদের এক ফ্রেন্ডের বইন! পিঠাপিঠি দুই বইন। সোমা আর শান্তা। আমাদের লগেই মেট্রিক পরীক্ষা দিছে। বয়সে একটু বড়ই হবে আমাদের। ফেইল করতে করতে আমাদের সাথে চইলা আসছে। স্টুডেন্ট হিসাবে মোটামুটি ভালোই খারাপ। এই কারণে আমরা অদেরকে অইরকম পাত্তা দেই নাই। অরাও আমাদেরকে। যে, আমরা তো ভালো-ছাত্র। এখনো এডাল্ট হই নাই। আর অরা তো কলেজে উঠার পরেই বিয়া কইরা ফেলবে।

সোমা আর শান্তার মধ্যে সোমা একটু বেশি ফর্সা। এই কারণে দেমাগও একটু বেশি সোমার। চোখও নাচাইতে পারতো ভালো। সোমার চোখ গিয়া আটকাইলো রিদয়ের চোখে। রিদয়ও আটকাইলো। কয়দিন পরে দেখলাম, সোমা নিউমার্কেটে যায় বাসা থিকা বাইর হয়া, আর রিদয় সাইকেল নিয়া পিছন পিছন। দোকান একটা চেইঞ্জ কইরা সোমাদের বাড়ির অপজিটে রাস্তার উল্টা-পাশের দোকানটা নিল রিদয়। বড় একটা ডেক-সেট বসাইলো। সোমা বাড়ি থিকা বাইর হইলেই গান বাজায়, “শোনো সোমা, একটু দাঁড়াও! কথা শুনে যাও!…” সোমা তো দাঁড়ায় না-ই, উল্টা তাড়াতাড়ি হাঁইটা চইলা যায়। যাওয়ার সময় জোরে চিল্লায়া বলে, কুত্তা!

রিদয় হাসে। প্রেমের হাসি।

https://www.youtube.com/watch?v=F7aWMCnWNGE

কয়েকদিনের মধ্যেই পুরা এলাকায় জানাজানি হয়া যায় ঘটনা। একদিন বাজারে যাওয়ার পথে দেখি সব ইলেকট্রিকের খাম্বায় লেখা – “এস + আর” – রিদয় আর্ট। সোমার ফ্যামিলির লোকজন তো চেইতা যায়! এইটা কি ঘটনা! কিন্তু বিচার দিবে কারে! রিদয়ের তো বাপ-মা কেউ নাই। সে তো কারো খায়ও না, পরেও না। রিদয়রে কে শাসন করবে!

তখন সোমা-শান্তার আম্মা একদিন রিদয়-রে বাড়িতে ডাকাইলো। রিদয়ও সাহসী ছেলে। একলা একলাই সোমাদের বাড়িতে গেল। সোমার আম্মারে তারে বুঝাইলো, রিদয়ের যে বয়স এখনো কম। জীবনে আরো উন্নতি করতে হবে। তারপরে প্রেম-ট্রেমের কথা ভাবা যাবে। প্রেম দিয়া তো জীবন চলে না। সোমাও দরজায় চিপায় দাঁড়ায়া দাঁড়ায়া শুনলো। রিদয় তো ভদ্র-ছেলে, পড়াশোনা না হয় করে নাই। সে কোন বেয়াদবি করলো না। বললো, আমার ইনকাম তো খারাপ না। সংসার চালাইতে পারবো আমি।

সোমার আম্মা তখন চেইতা গেলেন। আরে, ভালো কইরা বুঝাইলে তো দেখি বুঝে না। তখন, ফাইভ-পাশের খোটা দিলেন। বংশের কোন ঠিক নাই। বাদাইম্মা বইলা গাইলও দিলেন। সোমা আর এইটা নিতে পারলো না। দরজার ঠেইলা ড্রইংরুমে আইসা ঢুকলো, কইলো, আম্মা তুমি চুপ করবা!

কিন্তু সোমার আম্মা ততক্ষণে খেইপা গেছেন। সোমা দিলেন একটা থাপ্পড়। তুই আমার পেটে হইছস, না আমি তোর পেটে হইছি! আমারে কথা শুনাইতে আসোস!

প্রেমিকার এই অপমান রিদয় নিতে পারলো না। উইঠা দাঁড়াইলো। কইলো, সোমা’রে মাইরেন না! অর তো কোন দোষ নাই। আমি-ই চলে যাইতেছি।

কিন্তু সোমার আম্মা জিদ্দে ফুলতেছিলেন। রিদয় চইলা যাওয়ার পরেও চেঁচাইতেছিলেন, আমার মেয়ে আমি পিটাবো না কি করবো – সেইটা আমি জানি! তুই কেডা হারামজাদা, কথা কওয়ার! আর যদি কোনদিন আমার মেয়ের আশে-পাশে তোরে দেখি! এই-সেই… পরে শান্তা আইসা মা’রে থামাইলো।

পরে এলাকার লোকজন মিইলা রিদয়ের দোকান তুইলা দিল। মানে, এইখানে দোকান রাখতে পারবে না সে, এই ডিসিশান হইলো। রিদয় তারপরে বাসায়ই থাকে।

এরমধ্যে আমাদের পত্রিকা ছাপা হইলো। একটা ‘সৌজন্য কপি’ রিদয়ের বাসায় গিয়া দিয়া আসলাম। টাকা নিতে চাইতেছিল না ডিজাইনের, তারপরও তার হাতে ৫০ টাকা গুইজা দিলাম আমরা। যে, না, না, এইটা তো তোমার বিজনেস! রাখো!

যেহেতু ও বেশি কথা কইতো না, ওর সাথে বেশিক্ষণ বইসা থাকাও টাফ। একবার মনে হইতেছিল, ও কি জানি বলতে চাইতেছে, আবার মনে হইলো যে, না, আমাদেরই ভুল মনেহয়। ও তো এইরকমই।

আমাদের লিটল-ম্যাগ বা ত্রৈমাসিক পত্রিকা কোন বিপ্লব না করতে পারলেও সাকসেসফুল হইলো অনেক। গণমান্য ব্যক্তিদের প্রশংসা পাইলো। উপজেলা শহরেও জেলা-শহরের মতো সাহিত্য-পত্রিকা ছাপাইতে পারি আমরা। বিজ্ঞাপণের টাকা দিয়া পত্রিকা ছাপা হয়ে গেছিল। আর পত্রিকা বেচার টাকা দিয়া পরেরবার ছাপানো টাকা উইঠা গেল।

ঢাকা শহরের শাহবাগে গিয়া জানা গেল, আমাদের পত্রিকা অই জায়গাতেও পৌঁছাইছে! তবে মৃদু-সমালোচনা আছে। লিটল-ম্যাগ কবিদের লেখা আরো বেশি নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু উপজেলা শহর থিকাও যে এইরকম সাহিত্য-পত্রিকা ছাপা হইছে, সেইটা বিবেচনা কইরা অনেকে বাহাবা দিলেন।

কিন্তু মুশকিল হইলো, নামের লেটারিং’টা কেউ পছন্দ করলো না। কইলো, অনেকবেশি ট্রেডিশনাল হয়া গেছে। তখন আর্টিস্ট উত্তম আকাশ ৫০০ টাকা দিয়া একটা লেটারিং কইরা দিলেন, পত্রিকার নামের। মানে, হাতেই লেইখা দিলেন, একটা স্ট্রোক মাইরা। অনেকবেশি আর্টিস্টিক লাগলো সেইটা আমাদের কাছে। সেকেন্ড সংখ্যাতে না পারলেও থার্ড সংখ্যা-তে সেইটা ইউজ করা শুরু করলাম আমরা।

এর মধ্যে আমাদের কলেজ-লাইফ শুরু হয়া গেলো। কেউ কেউ ঢাকায় হিজরত করলো। প্রেম করা শুরু করলো কেউ। কেউ পর্ণোগ্রাফি-তে এডিক্ট হইলো, কেউ ফেনসিডিলে, গাঞ্জায়। কেউ আমরা ডিপ্রেশনেও পড়া শুরু করলাম।

এর মধ্যে রিদয়ের আর কোন খোঁজ-খবর নেয়া হয় নাই। এমনিতেও তো অর সাথে আমাদের তেমন কোন খাতির ছিল না। একদিন চা-য়ের দোকানে দেখা রিদয়ের সাথে। অর চেহারা ভাইঙ্গা গেছে। দেখলে চেনা যায় না। আরো চুপচাপ হয়া গেছে। সোমা নাকি একটা হোন্ডা-অলা ছেলের সাথে টাংকি মারে এখন। রিদয়ের কাজও কমে গেছে অনেক। ডিজিটাল প্রিন্ট চলে আসছে তখন বাজারে। এখন আর কেউ ব্যানার হাতে লেখায় না। এটলিস্ট ব্লক প্রিন্ট মারে। রিদয় কিছু ছবি আঁকছিল, সোমার। কিন্তু অইগুলা তো পারসোনাল, বেচাও যাবে না।
রিদয় আমাদের দিকে তাকাইতেছিল না। কিন্তু আমরা যেহেতু অরে চিনি। জিগাইলাম, কেমন আছো? ও জিগাইলো, তোমাদের পত্রিকা ছাপাইতেছো? আমরা পত্রিকার রিসেন্ট সংখ্যাটা দেখাইলাম। কিন্তু অইখানে তো অর ডিজাইনটা নাই। কষ্ট পাইলো মনেহয় এইটা দেইখা। কিন্তু কইলো, সুন্দর হইছে তো ডিজাইন’টা। ঢাকার কেউ করে দিছে? আমরা বললাম, উত্তম আকাশ করে দিছে। এখন উত্তম আকাশ-রে তো রিদয় চিনে না। কিন্তু আমাদের নাম উচ্চারণের ভঙ্গি দেইখা বুঝলো, বিখ্যাত কেউ।

তারপরে আমরা চা খাইতে লাগলাম। রিদয় হঠাৎ কইরা পকেট থিকা একটা কাগজ বাইর করলো। কইলো, তোমরা তো কবিতা ছাপাও, এই কবিতাটা ছাপাবা নাকি আমার? কবিতাটা এইরকম:

সোমা-কে

সোমা, তুমি আমার ভালোবাসা
তোমাকে দেখলে আমার মনে জাগে আশা।

কিন্তু যখন তুমি চলে যাও না তাকিয়ে
মনে জাগে হতাশা, আসে কান্না।

সোমা, তুমি চলে যেও না
দিয়ে আমার মনে ব্যথা।

তুমি থাকবে রিদয়ের বুকে
যেমন থাকে ঝিনুকের বুকে মুক্তা।

সোমা, তুমি আমার ভালোবাসা।

কবিতা’টা পইড়াই বুঝলাম, কবিতাটা তো হয় নাই! এখন কেমনে বলি অরে এইটা। যে, আমরা সিরিয়াস-সাহিত্য করি। এইগুলা ছাপাইলে ঢাকার কবি-সাহিত্যিকরা তো হাসাহাসি করবে আমাদেরকে নিয়া। তার উপরে সোমা তো আমাদের ফ্রেন্ডের বইন। ফ্রেন্ডও তো মাইন্ড করবে। আমরা দুই-তিনজন একজন আরেকজনের হাত থিকা কাগজটা নিয়া কবিতাটা পড়লাম। রিদয় আরো কুঁকুড়ায়া যাইতে লাগলো। কিন্তু আমরা কেউ কিছু বলতে পারতেছিলাম। একজন তো হাইসাই দিল একটু।

একটু পরে রিদয়-ই কইলো, যাই গা তাইলে! মানে, ডিসিশান তো একটা হয়া-ই গেছে যেন। আমাদের একজন কইলো, কাগজটা নিয়া যাও। রিদয় কইলো, না থাক, এইটা দিয়া আর কি করবো! বইলা তাড়াতাড়ি হাঁইটা চইলা গেল। যেন পিছন থিকা ডাক দিলে সেইটা আর তার শুনতে না হয়।

তো, বেশিদিন আর পত্রিকাটা ছাপাইতে পারি নাই। জীবন-সংগ্রামে ঢুকে গেছিলাম আমরা।

রিদয়ও কাউরে বেশিদিন বিরক্ত করে নাই। সোমাদের বাড়ির সামনে নাকি সন্ধ্যার পরে দাঁড়ায়া থাকতো। সোমার কলেজের সামনেও। সোমা আর কথা কইতো না অর লগে। প্রেমিকের মোটর-সাইকেলে কইরা ক্লাস ফাঁকি দিয়া এইখানে সেইখানে চইলা যাইতো।

একদিন শুনি রিদয় সুইসাইড করছে। নিজের হাত কাইটা।

মরার আগে রক্ত দিয়া শেষ চিঠি লেখছে – “সোমা, তুমি আমার ভালোবাসা”।

রিদয়ের বাপ তখনো বাঁইচা ছিল। ছেলের দাফন-কাফন করাইলো, মাটি দিলো।

সোমার অবস্থা নাকি অনেক খারাপ হয়া গেছিল। কান্দা-কাটি কইরা বাড়ি থিকা বাইর হয়া গেছিল। ধইরা বাইন্ধা তারে ঘরে নিয়া আসছে। তারপরে বিষ খায়া মরতে নিছিল। হসপিটালে নিয়া ওয়াশ-টোয়াশ করায়া ঠিক করা লাগছে।

কিন্তু বাজে যেইটা হইছে, এলাকায় তো সোমার নামে দুনার্ম ছড়ায়া গেছে। যে, সোমার কারণে রিদয় সুইসাইড করছে। ডাইনি মেয়ে একটা! কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়া গেলো অর। কয়েক মাস পরে বড় খালার বাড়িতে পাঠাইয়া দেয়া হইলো। তারপর সোমার আর কোন খবর পাই নাই।

অনেক অনেক দিন পরে পুরান কাগজ-পত্র ঘাঁটতে গিয়া রিদয়ের ডিজাইন করা পত্রিকার সংখ্যাটা পাইলাম। তখন মনে হইলো এইসব কথা।

কয়দিন আগে ফেইসবুকে, এলাকার একটা গ্রুপে দেখলাম, সোমারে। তারপরে ফ্রেন্ড হইলাম। প্রোফাইলে গিয়া দেখলাম সোমা এখন থাকে কানাডায়। দুইটা বাচ্চা অর। বড় ছেলেটার নাম রাখছে রিদয়। সুন্দর ছবি আঁকে ছেলেটা।

Leave a Reply