ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
– বাংলাদেশের বইয়ের বাজার –
যে কোন আলাপে প্রিমাইজটা ইম্পর্টেন্ট, যে কোন বেইজগুলার উপরে দাঁড়ায়া আপনি কথাগুলা বলতেছেন। অই প্রিমাইজগুলা বদলাইলে আলাপের ধরণও বদলায়া যাবে। প্রিমাইজগুলা স্ট্যাটিক না, বদলাইতেই পারে, কিন্তু অইগুলা ঠিক না কইরা নিলে কোন আলাপ করাটাও মুশকিল। তো, মোটাদাগে, আমার আলাপের প্রিমাইজগুলা হইতেছে এই ৫টা:
১. বাংলাদেশে বই পড়ে স্টুডেন্টরাই। এই গ্রুপটাই সবচে বড় কাস্টমার। বইয়ের বাজারের একটা বড় অংশও হইতেছে টেক্সট বুক। ভার্সিটির না, বরং স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার বই।
২. বাংলাদেশে এই টেক্সট-বইয়ের বিজনেসটা করে গর্ভমেন্ট। এখন যে কোন বিজনেস যদি গর্ভমেন্ট করে, সেইটা খারাপ-বিজনেস হইতে বাধ্য। খালি প্রফিটেবিলিটির জায়গা থিকাই না, প্রডাক্টিভিটি, বিজনেস অপারেশনসের জায়গা থিকাও এইটা বাজে এবং দুর্নীতিরও বড় একটা ঘটনা। আর এইটা পলিটকাল কন্ট্রোলের টুল তো অবশ্যই। এই টেক্সট-বুক বিজনেসের ভিতর দিয়াই গর্ভমেন্ট বাংলাদেশের বইয়ের মার্কেটরে কন্ট্রোলের মধ্যে রাখে।
৩. এর বাইরে গল্প-কবিতা-উপন্যাস-ননফিকশনের বই চলে না – ব্যাপারটা এইরকম না। কিন্তু এই ধরণের বইগুলা দরকারি-জিনিস হয়া উঠতে পারে নাই। এমনকি ফ্যাশন হিসাবেও বাংলা-কবিতা বা ফিকশন পড়াটা স্মার্ট কোন ঘটনা না। ইংলিশ-বই ব্যাপারটাই স্মার্ট এবং কম-বেশি দরকারি ঘটনাও। মানে, এমন কোন বাংলাদেশি রাইটারের বই নাই, যেইটা না পড়লে অনেককিছু আপনি মিস কইরা যাবেন। বা কোন বাংলাদেশি রাইটারের বই নাই যেইটা বাংল-ভাষার কমিউনিটির বাইরে ইন্টারন্যাশনাল কোন ইন্টারেস্টের ঘটনা হয়া উঠতে পারতেছে। বাংলাদেশে গল্প-উপন্যাস-কবিতার যেই নিশ-মার্কেটটা আছে, অইখানেও ইন্ডিয়ান-বইই ডমিনেন্ট। নন-ফিকশন ক্যাটাগরিতেও ইন্ডিয়ান-বাংলা বই যেহেতু প্রাচ্যবিদ্যা বা ইন্ডিয়ান-কালচারের লগে কানেক্টেড, প্রডাক্ট ক্যাটাগরি এবং রিচনেসের জায়গা থিকা বাংলাদেশের বাংলা-বই খালি কমই না, মোটামুটি নাই-ই আসলে।
৪. আর এইটা খালি সাহিত্য-ধারণার এবং কনটেন্টের রিচনেসের ঘটনাই না, ভাষার প্রাকটিসের লগে রিলেটেড একটা ফেনোমেনা-ই। বাংলা-ভাষা লিখিত হওয়া শুরু করছে কলোনিয়াল পিরিয়ড থিকা, অই সময়ে কলকাতায় যেই সাহিত্য-ভাষা তৈরি হইছে অইটাই এখনো পর্যন্ত “বাংলা-ভাষা”। অইটা কম-বেশি চেইঞ্জ হইলেও এর বাইরে গিয়া নতুন সাহিত্য-ভাষা তৈরি হইতে পারে নাই এখনো। অই প্রাকটিস ও ধারণাটা খালি একটা অভ্যাসের জিনিস না, কনশাস বোঝা-পড়ারও ঘটনা, যেইটা সরতে টাইম লাগার কথা। মানে, বাংলা-ভাষা এবং বাংলাদেশের রিডার – এই জায়গাটাতে একটা ডিসকানেকশন আছে। যেইটার কারণে কনটেন্টের জায়গাটাও সাফার করার কথা।
৫. আরেকটা ঘটনা হইতেছে বাংলা-বইয়ের বাজার বাংলাদেশের বাইরে নাই-না, অইটা প্রডাক্ট হিসাবে অই লেভেলে এক্সিলারেটেড হইতে পারে না, যেইখানে ইন্টারন্যাশনাল কোলাবরেশন পসিবল হইতে পারে। কনটেন্টের বাইরেও ফিনান্সিয়াল লেনদেনের প্রবলেম এইখানে আছে, যার জন্য ই-বুক এবং অডিও-বুক বিজনেস মিনিমাম কোন জায়গাতে রিচ করতে পারে নাই।
যদিও এই প্রিমাইজগুলা আরো ব্যাখ্যা করা যায় এবং নতুন কিছু অ্যাড করা যায়, কিন্তু আপাতত, এইটুক রিলিভেন্ট পয়েন্ট হিসাবে থাকতে পারে। আর চিন্তার জায়গাতে চাইলে এন্ডলেসলি যেমন সামনের দিকে যাইতে পারি আমরা, পিছনের দিকেও যাইতে পারি তো। এই কারণে মিনিমাম এই কয়েকটা পয়েন্টরে ধরে নিতেছি।
এই প্রিমাইজগুলার লগে কয়েকটা প্রেজেন্ট কন্ডিশন বা অবজারভেশনও অ্যাড করতে চাই আমি। যেই অবজারভেশনের বেসিসে কয়েকটা ডিসিশানের কথা আমি বলতে চাই। বাংলাদেশের বইয়ের বাজার নিয়া আমার অবজারভেশন মোটাদাগে ছয়টা –
১. বুক পাবলিকেশন এবং বই-ছাপায়া দেয়ার বিজনেস যে একই ঘটনা না – এই আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা এখনো ক্লিয়ার না। এখনো পর্যন্ত বই ছাপানোটারেই “পুস্তক প্রকাশনা” বিজনেস বইলা ধইরা নেয়া হয়। কেউ একজন একটা বই লিখলো আপনি সেইটা ছাপায়া দিলেন – এইটাই হইতেছে পাবলিশারের কাজ। এইটা সরকারি-বই ছাপানো জায়গা থিকা আসছে বইলাই আমার ধারণা। বাংলাদেশে “সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশনা” অইটারই একটা বাই-প্রডাক্ট, যার ভিতর দিয়া পাবলিশার হিসাবে নিজেদেরকে ক্লেইম করা যায়, সরকারি অফিসে বই সাপ্লাই দেয়া যায় এবং সরকারি-ছাপার কাজ পাইতে সুবিধা হয়। এমনকি বই ডিস্ট্রিবিউশন করাও পাবলিশারের কাজ না!
২. বাংলাদেশে বুক ডিস্ট্রিবিউশন কোন সিস্টেম নাই। হাইস্কুল, মাদরাসা এবং কলেজ লেভেলের নোটবই এবং বিসিএস পরীক্ষার জন্য কারেন্ট এফেয়ারস বই-ই মোটামুটি জেলা-উপজেলা শহরগুলাতে পাওয়া যায়। এর বাইরে বই বেচাকেনার মেইন জায়গা হইতেছে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় বাংলা একাডেমির বইমেলা। তা নাইলে ঢাকায় দুই-চাইরটা বইয়ের দোকান এবং অনলাইনে রকমারি-তে বই বেচা।
৩. বাংলাদেশে নানান পদের বইয়ের কোন ডিমান্ড নাই বা রিডার নাই, নাকি বই-ই নাই – এই নিয়া কিছু তর্ক থাকলেও, এইটা ‘ডিম আগে না মুর্গি আগে’র ঘটনা না এতোটা। বরং বই জিনিসটারে বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিডের লগে রিলিভেন্ট কইরা তোলা যায় নাই।
৪. আর এরজন্য রাইটারদের রয়ালিটির বেবস্তা করলেই সমস্যার সমাধান হয়া যাবে না আর কি! 🙂 বা রাইটারদেরকে বাজারি-বই লেইখা “স্বাবলম্বী” হইতে হবে – এইরকমও না। একজন রাইটার একইসাথে ভালো-রাইটার এবং পপুলার-রাইটার হইতে পারেন, কিন্তু ক্যাটাগরি হিসাবে দুইটা আলাদা ঘটনাই। একজন ভালো-রাইটার বা ভালো-বই অবশ্যই একটা ঘটনা। সৈয়দ মুজতবা আলী বা বিষাদ-সিন্ধু এখনো বাংলাদেশের বেশি-বেচা বইগুলার লিস্টে থাকার কথা।
৫. কিন্তু এইটা একজন সেলিব্রেটি রাইটার আবিষ্কার করতে না-পারার রেজাল্ট না, বরং একটা একো-সিস্টেম তৈরি না-করতে পারার ফেইলওর। খালি ইকনোমিকালি না, পলিটিকাল জায়গা থিকাও। যেইটা বাংলাদেশে তৈরি করার কোন ইনিশিয়েটিভও নেয়া হয় নাই। এবং অই জায়গাগুলাতেও কথা-বলার ও নজর দেয়ার নজিরও নাই তেমন।
৬. তো, ঘটনা এইটুকই না যে, সমস্যাগুলারে আইডেন্টিফাই করা হইতেছে না এবং সমাধানের কোন চেষ্টা করা হইতেছে না; বরং এইটা এগজিস্টিং পলিটিকাল জুলুম, কালচারাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং ইকোনমিক প্রসেসের লগে ক্লোজলি ইন্ট্রিগ্রেটেড ঘটনা। টেক্সট-বই মানে বাচ্চাদেরকে “শিক্ষিত” কইরা তোলা-ই না, পলিটিকাল কন্ট্রোলের সবচে সিগনিফিকেন্ট টুলও। “শিক্ষিত” হওয়াটাও খালি সার্টেন নলেজের ঘটনা না, একটা কালচারাল এলাইনমেন্ট এবং এটিটিউট গেইন করার জিনিসও। আর এর ইকনোমিক প্রসেসটা এক্টিভ থাকতেছে পলিটিকাল ও কালচারাল ডমিনেন্সটারে সার্ভ করার ভিতর দিয়া। মানে, বই জিনিটারে আলাদা একটা আইটেম হিসাবে দেখা যাবে-না না, বরং এইভাবে দেইখা খুব বেশি দূর পর্যন্ত আগানো যাবে না, বাকি জিনিসগুলারে বাদ দিয়া।
তো, এই প্রিমাইজগুলা এবং অবজারভেশনগুলার বেসিসে আমার সাজেশন হইতেছে চাইরটা –
১. টেক্সটবুক তৈরি করা, ছাপানো এবং ডিস্ট্রিবিউট করার বিজনেস গর্ভমেন্টের কাছ থিকা সরাইতে হবে। এইটা মোস্টলি পলিটিকাল ডিসশানের একটা ঘটনা।
গর্ভমেন্টের শিক্ষা-অফিস একটা গাইড-লাইন তৈরি কইরা দিতে পারে বড়জোর, যে এই এই সাবজেক্ট পড়াইতে হবে, এই এই এরিয়া কাভার করতে হবে। বই তৈরি করবেন প্রাইমারি-স্কুলের, হাই-স্কুলের, কলেজ এবং মাদরাসার টিচার’রা, এক্সপার্ট এডিটর, রাইটারদেরকে নিয়া। পাবলিশারের কাজ হবে অই বইগুলা তৈরি করা এবং ছাপানো। ন্যাশনাল কারিকুলাম এন্ড টেক্সটবুক বোর্ড (এনসিটিবি) বড়জোর রিকমেন্ড করতে পারে, সাজেস্ট করতে পারে, কোন বইগুলা বেটার। এর বাইরেও রেফারেন্স বই থাকতে পারে। এর ফলে বইয়ের মার্কেট’টা এটলিস্ট ওপেন হইতে পারবে। কনটেন্টের ডাইবারসিটি বাড়বে, কম্পিটিশন তৈরি হইতে পারবে।
লিনিয়ারিটি থাকবে না – এই ডর দেখায়া কন্ট্রোলের জায়গাটারে এটলিস্ট “প্রশ্নহীন” রাখা যাবে না। টোটাল প্রসেসটা তৈরি করতে গেলে অবশ্যই আরো ডিটেইল কাজ করতে হবে, কিন্তু এই রাস্তা ধইরা হাঁটতে পারাটাই বেটার মনেহয়।
আর এইখানে গর্ভমেন্ট অবশ্যই সাবসিডি দিবে। কনটেন্ট ও কোয়ালিটি অনুযায়ী প্রাইস রেইঞ্জ সাজেস্ট করতে পারে। স্কুল-কলেজগুলাতে বই কেনার বাজেট দিবে। চুরি-চামারি এতে কমবে না, কিন্তু ডিসেন্ট্রালাইজড হইতে পারবে। এনসিটিবি, স্কুল-কমিটি, টিচার – সবাইরেই এই টাকার ভাগ দিতে হবে। মানে, যত বেশি মানুশ একটা ডিসিশান-মেকিং প্রসেসে অ্যাড হবে, চুরি করাটা তত বেশি কম-লাভের জিনিস হইতে পারার কথা।
ফাঁকে একটা কথা বলি, ইসলামি-বইয়ের যে বিশাল একটা বাজার আছে বাংলাদেশে, অইটা সরকারি-নজরদারি নাই বা কম আছে বইলাই আছে, কিছুটা ফ্লারিশড হইতে পারতেছে। এখন এই বুদ্ধি আমি গর্ভমেন্টরে দিতেছি না যে, অইখানে কন্ট্রোল করা লাগবে, বরং এই চেষ্টা তো অন-গোয়িং আছেই নানানভাবে। এখনো পুরাপুরি কব্জা করতে পারে নাই আর কি! যেইভাবে বাংলা-মিডিয়ামে আছে। আর এই কারণে বাংলা-মিডিয়ামের টেক্সট-বুক বাতিল জিনিস হইতে পারতেছে। কনটেন্টের কারণে না, বরং কন্ট্রোলের কারণে। এইখানে পুরা একটা আলাপ তো আছেই।
২. আরেকটা জিনিস ভাবতে পারার দরকার আছে যে, বই অ্যাজ অ্যা প্রডাক্ট কোনদিনই ধ্বংস হয়া যাবে না, বা বাতিলও হবে না। টেকনোলজিকাল চেইঞ্জের কারণে রি-শেইপডই হওয়ার কথা।
অন্য যে কোন মিডিয়ামের মতোই বইও চেইঞ্জ হইতে থাকবে। ইবুক অলরেডি আসছে, অডিও-বুক তো পপুলার হওয়ার পসিবিলিটির মধ্যে আছে। মানে, খালি বই-ছাপানোটা আর “বই” হয়া থাকবে না, বরং কোন বিষয়ে চিন্তা-ভাবনাগুলারে গুছায়া একটা জায়গাতে রাখার ঘটনাটা আরো এক্সক্লুসিভ, জরুরি এবং রিলিভেন্ট হয়া উঠতে থাকবে। বইরে রিলিভেন্ট রাখার জন্য টেকনিকাল ইনোভেশনগুলা বরং দরকারি।
বইয়ের ক্যাটাগরি যেমন খালি টেক্সট-বুক না, গল্প-উপন্যাস-কবিতাও বই না, নানান ক্যাটগরির বইয়ের নিড আছে, দরকার আছে।
সঠিক উপায়ে হাঁস-মুর্গি পালন থিকা শুরু কইরা কোডিংয়ের বই পর্যন্ত, এবং এর বাইরেও বইয়ের স্পেইস আছে। গুগুল সার্চ, ইউটিউব ভিডিও, উইকিপিডিয়া, চ্যাটজিপিটি অবশ্যই এই জায়গাগুলার শেয়ার নিবে। কিন্তু ওয়েল-রিটেন বইয়ের বিকল্প হয়া উঠবে – এই নিশানা এখনো পর্যন্ত দেখি না আমি। সো, খালি অথেনটিক সোর্স হিসাবে বই-ই খুঁজবে মানুশ – তা না, বরং বইয়ের অই ইউলিটি’টা এখনো আছে। কিন্তু অই জায়গাগুলাতে বই দিয়া কানেক্ট করার উপায় বাইর করতে না পারলে নিডটারে রিকগনাইজই করতে পারার কথা না আমাদের।
৩. বই ছাপানো হয় বইলা বই কিনতে হবে বা পড়তে হবে না, বরং বই যে সার্টেন নিডগুলা ফুলফিল করতে পারে তার জন্য বইয়ের ভিজিবিলিটি, বই-রিলেটেড ইন্সিটিটিউশন বাড়াইতে হবে। একটা ডিস্ট্রিবিউশন-স্ট্রাকচার ডেভোলাপ করতে হবে যেইটা পলিটিকাল সার্পোট, কালচারাল প্রাকটিসের ভিতর দিয়া ইকনোমিকালি ভায়াবল হইতে পারবে।
যেমন, প্রতিটা শপিংমলে একটা বইয়ের দোকান থাকতে হবে, প্রতিটা সুপার স্টোরে একটা বুক কর্নার – এইরকম কন্ডিশন থাকতে পারে, প্রতিটা রেলস্টেশনে যেমন ছিল (বা আছে)। নতুন রেসিডেনশিয়াল এরিয়ার প্ল্যান বুকস্টোর, পাঠাগার থাকতে পারে। কিন্তু তাই বইলা সেইটা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের (বিসাকের) মতো একটা বুক-ফেটিশ অবসেশন তৈরি করার ঘটনা হইলে কোন কাজের জিনিস হবে না আসলে, হবে কন্ডিশন-ফুলফিল করা, জোর কইরা জায়গা-দখলের ঘটনা। কিন্তু এইটা ন্যাচারাল প্রসেসের ভিতর দিয়া হওয়ার চাইতে একটা সেন্সেটিভ ও দরকারি ক্যাটাগরি হিসাবে এক ধরণের সার্পোট-সিস্টেমের ভিতর দিয়াই হইতে হবে।
এইগুলা বইয়ের বিজনেসের টেকনিকাল আসপেক্টই। কালচারাল প্রডাক্ট হিসাবে মার্কেটে এস্টাবলিশড হইতে হইলে বইরে তার যেই সিগনিফিকেন্স সেইটা ডেলিভার করতে হবে সবচে আগে।
৪. বই যতটা না এন্টারটেইনমেন্ট ম্যাটেরিয়াল তার চাইতে বেশি হইতেছে চিন্তা ও ক্রিয়েটিভিটির কনটেন্ট। এই বেসিক নিডের জায়গাটা যদি বই ফুলফিল না করতে পারে, তাইলে সেইটা বাজার-দখল করতে পারবে-না না, অইটা ক্যাটাগরিকালি বই-ই হয়া উঠতে পারবে না। কোন বই কোন রিডার-গ্রুপের কোন নিডটারে কিভাবে ফুলফিল করতেছে – সেইটাই হইতেছে বইয়ের বাজারের জন্য ক্রুশিয়াল ঘটনা।
বাংলা-ভাষায় এইরকম দরকারি বইয়ের সংখ্যা খালি কম-ই না, বরং এইরকম জায়গাগুলা থিকা দেখার, বিচার করার বা আইন্ডেটিফাই করার কোশিশগুলাি মিসিং। অন্য ভাষার অন্য চিন্তাগুলারে বাংলা-ভাষার রিডারদের জন্য মেইড-ইজি হিসাবে পেশ করাটা বইরে ইন্টেলেকচুয়াল প্রডাক্ট হিসাবে টিইকা থাকতে হেল্প করবে না, বরং যারা বই পড়তে শিখবে, বুঝতে পারবে যে, শুধুমাত্র বাংলা-ভাষার বই পইড়া কিছু শেখা যাবে না! 🙁 এমনকি বাংলাদেশি-নলেজের জায়গাগুলাও ইংরেজি বই পইড়াই শেখা লাগবে!
বাংলাদেশের বই যদি এই নিডের জায়গাগুলারে টাচ না করতে পারে, তাইলে টেকনিকাল ইম্প্রুভমেন্ট এবং মার্কেট স্ট্রাডেজি কোন কাজে লাগবে না। বরং এই জায়গাগুলাও অন্য সব বই ও প্রডাক্ট দিয়া রিপ্লেইসড হইতে থাকবে।
অই ক্রিয়েটিভ ও ইন্টেলেকচুয়াল জায়গাতে রিচ করতে হইলে বাংলা-ভাষারে দেখার কালচারাল পজিশনটারে রিভিউ করা লাগবে। কলোনিয়াল বাংলা-ভাষারে ‘শুদ্দ’ বইলা ভাবার এবং ‘মহান’ ও ‘পবিত্র’ করার পোজেক্টগুলারে থামাইতে হবে।
চাইলে কি বাংলাদেশের একজন মানুশ ফ্রেঞ্চদের মতো ফরাসি কইতে পারবে? বা একজন স্প্যানিশ কি পারবে ঠিকঠাক মতো বাংলা কইতে? আপনি যদি ব্রিটিশ-স্ট্যান্ডার্ড দিয়া আম্রিকান ইংলিশরে মাপতে থাকেন তাইলে তো আম্রিকান-ইংলিশরে “অপ্রমিত”, এমনকি “আঞ্চলিক” ভাষা-ই মনে হইতে থাকবে! আর এইটা খালি ‘ভুল’ না, বরং পলিটিকাল প্রজেক্ট হিসাবে রিকগনাইজ না করতে পারার (বা আসলে চাওয়ার) সমস্যাও।
তো, এই ভাষার পজিশনটা খুবই গোড়ার একটা জায়গা। এই জায়গাটারে রিভিউ করতে, রি-কন্সিডার করতে রাজি না হইলে বাকি সবকিছুই আলগা আলগা ঘটনা হয়াই থাকার কথা।
…
হাউএভার, বাংলাদেশে বইয়ের আলাপ এইটুক না। এমনকি এইগুলা কোন টুটকাও না যা দিয়া বইয়ের মার্কেটের সমস্যাগুলার সমাধান করা যাবে। বরং এইটা একটা আলাপের শুরু যেইখানে বুক-বিজনেস লগে যারা ইনভলব আছেন: রাইটার – এডিটর – পাবলিশার – প্রেসমালিক – টেকনিশিয়ান – ডিস্ট্রিবিউটর – বুকশপগুলা তাদের ইন্ট্রিগ্রেশনের প্রসেসটা নিয়া চিন্তা-ভাবনা শুরু করতে পারেন।
ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩
স্যার
হিরো আলমের মতো এই কথা এতো ক্লিয়ারলি কেউ বলতে পারে নাই যে, বাংলাদেশের মেইন সমস্যা হইতেছে “শিক্ষিত” লোকজন।
নয়া বাকশাল হইতেছে এই “শিক্ষিত” লোকদের (সরকারি-আমলা, মিডিয়া, মিলিটারি ও পুলিশের) অবৈধ-শাসন।
এইটা যতোটা না আওমি-লিগ ভার্সেস বিএনপি’র ক্রাইসিস, তার চাইতে বেশি হইতেছে “শিক্ষিত” লোকজন ভার্সেস “অশিক্ষিত ও মুর্খ” জনগন! বাংলাদেশের জাত-প্রথা কলোনিয়াল শাসনের ভিতর দিয়া নতুন একটা স্ট্রাকচারে টান্সফর্মড হইছে।
১৯৭৫-এ বাকশাল কায়েম করার ভিতর দিয়া এই “শিক্ষিত” গ্রুপটা (ভার্সিটি-স্টুডেন্ট ও সরকারি-আমলারা) রাষ্ট্রের দখল নিছিল, পাবলিক কনসেন্টরে অ-দরকারি কইরা। এর সেকেন্ড ফেইজ শুরু হইছে ১৯৯৬-এ “জনতার মঞ্চ”র ভিতর দিয়া এবং পারমানেন্টলি ক্ষমতা দখল করছে ২০০৭ সালের ১/১১-তে। আওমি লিগ পলিটিকাল দল হিসাবে এই “শিক্ষিত” লোকদের, মেইনলি সরকারি আমলাদেরই ফেইসটা। কোন ইলেকশন এরা হইতে দিবে না, কারণ পাবলিক কনসেন্টরে অরা ডরায়।
কোন শব্দরে তার ডিকশনারি মিনিংয়ের ভিতরে রিডিউস করলে হবে না, “স্যার” মানে “জনাব” না! “স্যার” হইতেছে একটা ক্লাস! “আমারে স্যার ডাকবা!” খালি মেজিস্ট্রেটরেই স্যার ডাকলে হবে না, হসপিটালের ডাক্তাররেও স্যার ডাকা লাগবে, থানার ওসিরেও। এই “স্যার”রাই গুয়া মারতেছে দেশটার।
এরা হিরো আলমরে “স্যার” ডাকবে-না না, এরা পিপলের রায় মানবে না, এমনকি পিপলরে রায় দিতেই দিবে না! কেন দিবে! এরা “অশিক্ষিত” “মুর্খ” না!
ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
অবিচুয়ারি: শাহেদ শাফায়েত
শাহেদ শাফায়েত অই সময়ের কবি যখন কবিতা-লেখার বাইরে কবি-হওয়াটাও ইম্পর্টেন্ট ঘটনা ছিল বাংলাদেশে।
ইন ফ্যাক্ট, এখনো এই ব্যাপারটা আছে। সিনেমার নায়িকার যেমন ‘সুন্দর’ হইতে হয় (কোন না কোনভাবে), ‘অভিনয়’ জানার বাইরে, এমনকি অইটা না হইলে হয়-ই না, ‘অভিনয়’-টা বরং সেকেন্ডারি ঘটনাই কিছুটা, সবাই তো কম-বেশি জানেই, বা শিখায়া নেয়া যায়; এইরকম কবি-হওয়া ব্যাপারটা খালি কবিতা-লেখার (নায়িকাদের ব্যাপারে যেইরকম ‘অভিনয়’ করার) ঘটনা না, কবি-হওয়ার (‘সুন্দর’ হওয়ার) একটা ঘটনাও। মানে, “কবি” আইডেন্টিটি’টা একটা কবিতা-লেখার এক্ট না খালি, একটা লাইফ-স্টাইল, এবং একটা পজিশন। একটু শো-অফের ঘটনাই না, এমন কিছু কাজ-কাম করতে পারা যেইটা কিছুটা ‘মিথিকাল’। কবিতা-লেখার বাইরেও এইটা রিকোয়ার্ড। একটা কবি-পজিশন ক্লেইম করতে পারাটা, কোন না কোন সোশাল-এবনরমালিটির ভিতর দিয়া।
সুইসাইড করা, পাগল হওয়া, নেশা করা, প্যারনয়েড থাকা – এইরকম জিনিসগুলা যে কবিদের (বা ক্রিয়েটিভ মানুশদের) থাকে না, তা না; কিন্তু এর বাইরেও মানুশ-জন সুইসাইড করেন, পাগল হয়া যান, নেশা করেন এবং প্যারানয়েড থাকেন। এইগুলা কবিতা-লেখাতে বা ক্রিয়েটিভ কাজ-কামে হেল্প করে না, বরং অনেক সময় সাইড-এফেক্ট হিসাবে দেখা যায়। কিন্তু থাকতেই হবে – এই এক্সপেক্টশনটা এখনো আছে।
এইটিইসের ঢাকা শহরের সাহিত্য-সমাজে এইটা আরো বেশি ছিল। লাইফ-স্টাইলের ভিতর দিয়া আলাদা হইতে পারাটা, কিছুটা ‘বোহেমিয়ান’ থাকতে পারাটা। তো, শাহেদ শাফায়েত ঢাকা শহরে মোটামুটি উদ্বাস্তুই ছিলেন। (যতদূর আমি জানি।) ছিলেন একজন “মফস্বলের কবি”, যার ঢাকায় কিছু কবি-বন্ধু আছেন। (এখন তো, ঢাকার বাইরে থাইকা কবি হওয়া আরো টাফ 🙁 ) কিন্তু শাহেদ শাফায়েত ছিলেন চুপচাপ, নিরবতা ছিল উনার ট্রেডমার্ক। যেইটা রেয়ার ছিল তখনো, কবি-সমাজে। দুই-তিন ঘন্টায় হয়তো একটা কথা বলতেছেন, এইরকমের রেয়ার। আর কথা বলতেছেন কবিতা-পড়ার জন্যই।
আমি পরে ভাবছি, কেন আর কিভাবে এই লাইফ-স্টাইলের ব্যাপারটাই মেইন সিগনিফিকেন্সের ঘটনা হয়া উঠছিল ঢাকার এইটিইসের কবিদের মধ্যে? এর একটা মেজর কারণ মেবি উনারা গ্রসলি কবিতা-ধারণার জায়গাটা থিকা তেমন কিছু রি-ক্রিয়েট করতে পারতেছিলেন না, কিন্তু টের পাইতেছিলেন যে, এইটা দিয়া হইতেছে না! লিটল-ম্যাগাজিনের নামে কলোনিয়াল-কলকাতার ঘানিই টাইনতেছেন, বরং আরো বড় বিপ্লবী হওয়া লাগতেছে! আর এইক্ষেত্রে পলিটিকালি “সমাজবিচ্ছিন্নতা”-ই ছিল উনাদের মেইন হাতিয়ার। এইটিইসের ধারা, উপরাধা (মানে, ট্রেন্ডের) মধ্যেই এইটা ছিল কমন।
ফর্মের জায়গাতে যেই নড়াচড়াগুলা ছিল সেইটা নতুন কোন দিকে টার্ন করতে পারতেছিল না। যার ফলে অই সময়ের কবিতার রিয়ালিটিগুলাতে কোথাও গ্রাউন্ডেড হইতে না-পারার একটা ঘটনা ছিল। যেইটা শাহেদ শাফায়েতের কবিতাতেও ছিল। একটা ঘোর-লাগা ফিলিংস তৈরি করা, অনেকগুলা ইমেজ ও রেফারেন্সের মধ্যে ঘুরতে থাকা এবং কোন মিনিংয়ের ব্যাপারে আন-সেটেলিং থাকা – এইরকম কয়েকটা ফিচার ছিল। যেইগুলা পরে নানান দিকে ট্রাভেল কইরা গেছে। কিন্তু কেউ কেউ “খাঁটি কবিতা”র জায়গা থিকা সরতে রাজি হন নাই। শাহেদ শাফায়েত কম-বেশি অই জায়গাগুলাতে থেকে গেছিলেন। যার কবিতা পরে আমরা আর পাই নাই বা পড়তে পারি নাই। কিন্তু কবি হিসাবে আমাদের মেমোরিতে থেকে গেছেন। এখনকার সময়ের স্মার্ট-কবিদের ভীড়ে শাহেদ শাফায়েতের মতো কবি-চেহারা রেয়ার।
উনার সাথে দেখা-সাক্ষাত আমার কম-ই হইছে। কিন্তু কবিতা-লেখা শুরু করার সময়ে যাদের লেখা আমি পড়ছি, উনার কবিতাগুলা তার মধ্যে ছিল। উনারা বাজার-চলতি কবিতার বাইরে গিয়া কবিতা লেখতে চাইতেছেন – এইটা তো ইন্সপায়ার করছিলই, কিন্তু ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে এইটাও ফিল করতে পারছি যে, ট্রাডিশনরে এড়ায়া চলতে গিয়া উনারা ইন্ডিভিজুয়াল টেলেন্টই হয়া উঠতে চাইছেন, যেইটা ইচ্ছার জায়গা থিকা সুন্দর; কবিতার জায়গা থিকা খুব বেশি দূর পর্যন্ত নেয়ার স্কোপটা কমই।
শাহেদ শাফায়েতের কবিতা আমার কাছে একটা সময়ের মেমোরি। উনার কবি-বন্ধুদের কাছে মেবি এর চাইতে বেশি কিছু। আর বাংলাদেশের এখনকার কবিতা-রিডারদের কাছে একটা ভুলে-যাওয়া-নামই মনেহয়। তবে একটা জিনিস নিয়া আমরা যা বলতে পারি, সেইটা সবসময় তার চাইতে একটু বেশি কিছুই।
আর যে কোন জিনিস নিয়া যখন আমরা কথা বলি তখন আমরা খালি অই বিষয়টা (বা মানুশটারে) নিয়াই কথা বলি না, নিজেদেরকেও এনকাউন্টার করি, বা এর আশপাশের ঘটনাগুলা নিয়াও বলি। তো, শাহেদ শাফায়েতের মারা যাওয়ার ঘটনাটা নিয়া কথা বলতে গিয়া এই ব্যাপারটাই ঘটছে এইখানে। একজন মানুশ যেইরকম তার চারপাশটা নিয়া মানুশ, একইভাবে একজন মানুশরে আমরা যে যেইভাবে চিনি, সেই মানুশটা যে ততটুকই না, এই কন্সিডারেশনটা যেন আমাদের সবসময় থাকা দরকার।
আমি আশা করি, আমি খুব বেশি দূরে চইলা যাই নাই। যদি গিয়া থিকা, সরি! শাহেদ শাফায়েতের আত্মা শান্তিতে থাকুক!
০৯/০২/২০২৩
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩
রূপক বা উপমা এবং সত্যি-কথা
এইখানে তো ফারাক আছে একটা। ধরেন, আপনি কুত্তার বাচ্চা বলতেছেন কাউরে, সেইটা তো রূপক একটা, যে খারাপ-কিছু; রিয়েল কুত্তা ভালো কি খারাপ, সেইটা ঘটনা না।
কিন্তু এইটা এতোটা আলাদা থাকে না, মিইলা-ঝুইলা যায় আসলে। এবং অনেক সময় অনেক ব্যাডলি ঘটে এই ঘটনা। যেমন ধরেন, বঙ্কিমচন্দ্র উনার আনন্দ-মঠ উপন্যাসে মুসলমান তাড়ানোর কথা বলছেন তো রূপক হিসাবে, উনি ইংরেজের চাকরি কইরা তো ইংরেজ-তাড়ানোর কথা কইতে পারেন না, কিন্তু এইটা পারসিভ হইছে “সত্যি-কথা” হিসাবেই, রূপকের পর্দাটা আর থাকে নাই। পরবর্তী সময়ের পলিটিকাল রিয়ালিটির কারণে।
তো, ফারাজ সিনেমাতেও দেখানো হইছে, বাংলাদেশের সবাই হিন্দি-তে কথা কয়। এমনকি এটিএন-বাংলার নিউজেও হিন্দিতে নিউজ পড়া হইতেছে! যেহেতু হিন্দি-সিনেমা সবাই তো হিন্দিতেই কথা বলবে, নরমাল সেইটা। কিন্তু এইটা খালি রূপকের ঘটনা না, একটা ভিজুয়াল রেফারেন্সও, আনন্দ-মঠের সাহিত্যিক-রিয়ালিটির মতো।
যেই কারণে ফারাজের কাহিনি কি, সিনেমা ভালো কি খারাপ – এইগুলা মোটামুটি অ-দরকারি আলাপই; ফারাজের একমাত্র সিগনিফিকেন্স হইতেছে বাংলাদেশের লোকজনও হিন্দিতে কথা বলে – এই ফিলটারে তৈরি করা।
এমনিতে সিনেমা হিসাবে ভুয়া-ই।
শনিবারের চিঠি, ও বিকাল, না বিকেল; “শনিবার বিকেল”-ও গুড-মুসলিম ব্যাড-মুসলিমের মতো আগলি জিনিসই হওয়ার কথা। মানে, লালসালু, মাটির ময়না… এই ট্রাডিশনটা তো এইরকমই। তবে না হইলে তো ভালোই।
তো, এখন রিলিজের চিঠি দিয়া দিবে মনেহয়।
ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩
– আল্লার গজব –
এইরকম কথা তো আছেই যে, জালিমের বিচার আল্লা করে! বা কোন জুলুমের শাসন শেষ হয় একটা ন্যাচারাল ডিজাস্টারের ভিতর দিয়া। যুগে যুগে এইটা হয়া আসছে। তো, জিনিসটারে অনেক সময় ‘লজিকাল-সেন্সে’ও দেখা যাইতে পারে।
যেমন ধরেন, জুলুমের শাসন মানেই হইতেছে ইনফরমেশন গোপন করা, অনেককিছু ইগনোর করা বা খেয়াল না করা, যার ফলে বড় বড় ‘দুর্ঘটনা’ ঘটতে পারে।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের একটা বড় কারণ ছিল কোন জেলায় কত খাদ্য-ঘাটতি আছে, সেইটার কোন ডেটা ছিল না; মানে, যতোটা না ছিল-না, রেশন-চোর, চোরা-কারবারিরা সেইটা হাইড কইরা রাখতেছিল সরকারি-লোকজনের হেল্প নিয়া।
‘দুর্ভিক্ষ’ কোন ন্যাচারাল ডিজাস্টার না, একটা ডিস্ট্রিবউশন ফেইলওর এবং একটা অপ্রেসিভ-পলিটিকাল সিস্টেমের আউটকাম। কিন্তু এইটারে ‘ন্যাচারাল ডিজাস্টার’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ হিসাবে দেখানোর অভ্যাস এখনো চালু আছে।
তো, আমার ধারণা, ঢাকা ও চিটাগাংয়ের এয়ার পলিউশনের একটা মেজর কারণ হইতেছে “উন্নয়ন”। এমনকি ফিউচার-ডিজাস্টারের দিকে আগায়া যাওয়ার ঘটনাও হইতে পারে।
পরে এইগুলারে “আল্লার গজব” মনে হইলেও, এই গজব আমরা ডাইকাও আনতেছি, সার্পোট করার এবং চুপ কইরা থাকার ভিতর দিয়া।
মানে, আমি বলতেছি না “আল্লার গজব” একটা ম্যান-মেইড ঘটনা, বরং এইগুলা বেশিরভাগ সময় ডাইকা নিয়া আসি আমরা। যে কোন জুলুমের শাসনে এইরকম গজব-গুলা আরো সহজ এবং তাড়াড়াড়ি হইতে পারে, হয়।
…
“অহিংসা” নিয়া অনেকেরই চুলকানি আছে। থাকাটা যে ইন-ভ্যালিড – তা না, যে কোন পলিটিকাল স্ট্রাটেজি এক-মুখী ঘটনা হইলেই বরং সেইটা একটা সমস্যা। সমাজের নানান-ধরণের ফোর্সরে মবিলাইজ করতে পারাটাই পলিটিকাল স্ট্রাটেজির ঘটনা।
তো, ১৯৭৫’র বাকশালের ফর্মেশনের ঘটনাটা যদি খেয়াল করেন, তখনকার জাসদ এবং আন্ডার-গ্রাউন্ড কমিউনিস্ট পার্টিগুলার ‘বিপ্লবী’ বা হিংসার রাজনীতি এরে এক ধরণের পলিটিকাল ‘বৈধতা’-ই দিছে; যে, এদেরকে ঠেকাইতে হইলে আরো ‘কঠোর’ হওয়া লাগবে! এইটা (বাকশাল-গঠন) অবশ্যই জাসদের বা আন্ডার-গ্রাউন্ড দলগুলার কন্ট্রিবিউশন না, কিন্তু ডেমোক্রেটিক প্রসেসটারে অ-দরকারি কইরা তোলার ঘটনাই। অই পলিটিকাল হেইট্রেট এখনো জারি আছে, এবং ‘অহিংসা’রে টিটকারি করার ভিতর দিয়াও রিফ্লেক্ট হয় সেইটা, কিছুটা।
তো, এই জিনিসগুলা মনে হইলো, জামাতে ইসলামি-র নেতা-কর্মিদের গুম-খুন-গ্রেফতারের ঘটনা দেইখা। আগের দিনের জাসদ ও আন্ডারগ্রাউন্ড দলগুলার মতো আজকের নয়া বাকশালেরও একটা মিলিট্যান্ট ফোর্সরে খাড়া করানো দরকার। এই কারণে “জঙ্গি ধরা” খুবই ইম্পর্টেন্ট একটা কাজ। বা একটা পলিটিকাল ফোর্সরে ‘মিলিট্যান্ট’ হয়া উঠতে উসকানি দিতে থাকা। তাইলে পলিটিকাল-জুলুমটারে জাস্টিফাই করাটা ইজি হয়। কন্টিনিউ করার “বৈধতা” পাওয়া যায়।
মানে, অন্য অনেক কিছুর পাশাপাশি সমাজের এবং পলিটিকাল ফোর্সের একটা অংশরে “মিলিট্যান্ট” কইরা তোলার একটা চেষ্টা চালু আছে। এর এগেনেস্ট যে কোন ডেমোক্রেটিক এক্টিভিটি – মিছিল, মিটিং, সভা, সেমিনার বরং ঝামেলার জিনিস কিছুটা!
এই কারণে পলিটিকাল এক্টিভিটি কন্টিনিউ করা এবং বেশি বেশি কইরা করতে থাকাটা জরুরি একটা কাজ। এইখানেও ডামি-বিরোধীদল এবং টাকা-দিয়া ভাড়া-করা লোকজন নামানো হবে। কিন্তু এইটা ব্লিড করবে বেশি। রেব-পুলিশ দিয়া ‘জঙ্গি দমন’ করার চাইতে রিয়েল পলিটিকাল ফিল্ডেই মোকাবেলা করার জায়গাটাতে নিয়া আসতে পারার কথা।
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
Rahul Talukder-এর তোলা ছবি দেখছেন? আমার নিউজফিডে আসে, এইজন্য দেখা হয়। ঢাকা অপেরা নামে একটা সিরিজ ছিল উনার, ভালোই লাগছিল। পরে দেখলাম এই চালাকিটা আছে উনার, উনি গরিবি-রে টিজ করেন আসলে।
যেইরকম জিএমবি আকাশ ফিনানসিয়াল গরিবি-রে মহান কইরা তোলেন। রাহুল তালুকদার হইতেছে কালচারাল-প্রভার্টিরে হাইলাইট করেন। স্টুডিও-তে রং-টং মাইখা যারা ছবি তুলতো, তারা সরোয়ার্দিতেও চইলা আসছেন। কোট-পরা লোকও ‘গ্রাম্য’ লোকজনের মতো ফুটপাতের রেলিংয়ের চিপা দিয়া ঢোকার ট্রাই করতেছেন। এইরকম।
মানে, গল্প-কবিতা-সিনামা নিয়া যেইরকম কোন ‘রায়’ দেয়া যায় না, ছবি-টবিও অইরকমই, কিন্তু টেনডেন্সিগুলারে ওভারলুক করতে পারাটাও কোন কাজের কথা না। রাহুল তালুকদারের ছবি-তে ঢাকা গরিব-হাইস্যকর-নিন্মবর্গ (মানে, সাব-অল্টার্ন) কালচারের লোকজনেরও না খালি, ‘অরিজিনাল’ ঢাকার কালচার তো এইরকমই (যেন), কিছুটা বিষন্ন, এবং মোস্টলি ফানি একটা বিষয়! 🙂
ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
[ যারা-ই আমার লেখালেখি নিয়া টুকটাক কথা কইছেন কোন সময়, তারা সবাই খালি আমার ‘সমালোচনা’ করছেন, কেউ কোন ভালো-কথা কন নাই – এইটা পুরাপুরি ঠিক না। এই কমেন্টরে তো আমার প্রশংসা হিসাবেই নেয়া উচিত মনেহয়, নাকি না? 🙂 ]
…
কবি ফ্রস্ট সম্পর্কে এক আলোচকের মন্তব্য পড়ছিলাম বহুত আগে-“Robert Frost philosophies a trivial subject matter into a serious human context” আর আপনি হইলেন ফ্রস্ট’র পুরাই উল্টা। আপনার ব্যাপারে বলা যায়- Imrul can turn a serious human context into a trivial subject matter. এই যে ‘গাংঙের ঢেউয়ের’ জায়গাতে ডিপজল রে বসাইলেন, ‘কবুল কবুল’ রে রিপ্লেস করলেন আহো আহো দিয়া, সোনালী কাবিন এক ঝটকায় হয়ে গেল বাংলাদেশি সিনেমার ট্রেইলার। চালাইয়া যান ভাই।
/Tofazzal Hossen, ২০২২
…
ডিপজলের ভরাট গলার মতো
বলো কন্যা, “আহো ভাতিজা, আহো!”
/আল মাহমুদ, ২০২০
…
Leave a Reply