নোটস: মার্চ, ২০২৩ [পার্ট ২]

মার্চ ১৬, ২০২৩

১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ-রে যে এখনো ভয়াবহ বইলা ভাবতে পারি আমরা, এর একটা কারণ হইতেছে জয়নুল আবেদীনের স্কেচগুলা। এই ছবি বাদ দিলে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের “অশনি সংকেত” নভেলে কিছুটা আছে। এর বাইরে এই ঘটনার তেমন কোন ডকুমেন্টশন নাই সাহিত্যে, আর্টে।

আব্বাসউদ্দিন আহমদ উনার অটোবায়োগ্রাফিতে বলতেছেন কলকাতা ধীরে ধীরে কালো হয়া যাইতেছিল, গেরামের ময়লা-রংয়ের মানুশ দিয়া ভইরা যাইতেছিল। কিছুদিন ছিল। তারপরে পুলিশ একদিন তাদেরকে ধইরা নিয়া শহরের বাইরে ফেলে দিয়া আসলো। মানে, এই অবস্থাটা বেশিদিন ছিল না। (আর যাদের কথা-ই পাইবেন, দেখবেন যে, একটু দূর থিকাই উনারা দেখতেছেন। মানে, উনারা, মধ্যবিত্ত শিল্পী-সাহিত্যিকরা অই ক্লাসের লোকজন ছিলেন না, যাদেরকে দুর্ভিক্ষের কারণে না-খায়া থাকতে হইছিল।…) জয়নুল আবেদীন মেবি তখনই ছবিগুলা আঁকছিলেন।

সেই তুলনায় ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা যে আমরা মনে করতে পারি না, এর একটা কারণ হইতেছে, এইটা নিয়া তেমন একটা আর্ট বা লিটারেচার নাই। এক আছে আজম খানের “বাংলাদেশ” গানটা। উনি বলতেছিলেন, কমলাপুর রেলস্টেশন থিকা নটরডেম কলেজ পর্যন্ত কালা কালা কাদা হয়া গেছিল। তবে দুর্ভিক্ষের কিছু নিউজ এখনো খুঁজলে পাওয়া যাবে, বিবিসি-র একটা নিউজ ছিল মেবি, ডিটেইল। যার ফলে, দুর্ভিক্ষ হয় নাই – এই ক্লেইম করাটা মুশকিলের হয়। স্বীকার করা লাগে।

এখন গত এক বছর ধইরা বাংলাদেশে যে “নিরব” দুর্ভিক্ষ চলতেছে, সেইটা দুর্ভিক্ষ মনে হয় না, এরও একটা বড় কারণ হইতেছে আর্ট-কালচারে ব্যাপারটা তো নাই-ই, নিউজও নাই তেমন। “আমি না খায়া আছি” – এই কথা মানুশ-জন তো পত্রিকা-অফিসে গিয়া, সাংবাদিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়া বইলা আসবে না। কিন্তু আশেপাশের “লো-ক্লাসের” 🙁 লোকজনের দিকে তাকাইলে কিছুটা হইলেও খেয়াল করতে পারার কথা আমাদের।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আর্ট-কালচার দিয়া, নিউজ-টিউজ বেইজ কইরা “সমাজের সত্য” আবিষ্কার করতে চাওয়ার যেই রেফারেন্স-সিস্টেমটা সেইটা ভুয়া না হইলেও এইটারে রিয়ালিটি কনজামশনের একমাত্র রাস্তা হিসাবে ধইরা নিলে অনেক কিছু দেখতে পাবো না আসলে আমরা।

কোন কিছু জানতে হইলে, শুরুতেই রেফারেন্স সিস্টেমটা নিয়া ক্রিটিকাল হওয়া দরকার আমাদের।

যেমন ধরেন, বাংলাদেশের এখনকার বেসরকারি বিটিভিগুলার নিউজগুলারে রেফারেন্স হিসাবে যদি অথেনটিক ধইরা নেন, তাইলে জিনিসগুলা ফেইক না রিয়েল – এই সিউডো-তর্কে না গিয়াও, মানে ১০০% অথেনটিক নিউজ নিলেও, ভুল এবং ভয়াবহ একটা রিয়ালিটিতে গিয়া ল্যান্ড করবেন আপনি, যার লগে আমাদের দেশের, চারপাশের তেমন কোন রিলিভেন্সই নাই।

একইভাবে আপনি গুগুল-সার্চে বা অনলাইনে যদি বাংলাদেশি কোন মেটেরিয়াল – ছবি, সিনেমা, গান খুঁজেন, তেমন একটা পাইবেন না। আপনারে যাইতে হবে মিডল-ইস্টের “প্রবাসীদের” জায়গাগুলাতেও, অইগুলাতে কিছু জিনিস পাইতে পারেন। তা নাইলে ইন্ডিয়ান-বাংলার লগে খালি মিক্স-আপ করা-ই না, বরং অইগুলাই বেশি, অইগুলারেই মনে হবে “অরিজিনাল বাংলা”!

তার কারণ হইতেছে, এই যে অনলাইনের দুনিয়া – এইটা আসছে বইয়ের ভিতর থিকা। বই ছাপানো শুরু হইছে কলিকাতারে সেন্টার কইরা। বাংলা-ভাষার বইগুলা ছাপা হইছে অইখানের প্রেসগুলাতে। কলেজ, পত্রিকা, সরকারি-অফিসগুলাও ছিল অইখানে। কিন্তু প্রেসে বই ছাপা-হওয়ার আগে দুনিয়াতে কি কোন জ্ঞান-বিজ্ঞান, আর্ট-কালচার ছিল না? 🙂 ছিল, কিন্তু সেইটার ফর্মটা, ফরম্যাট’টা ছিল আলাদা।

যেই কারণে হিস্ট্রিতে বইয়ের আগের ফেইজটাতে যদি যান (পুঁথি, পালাগান, গীতি-কবিতা…) দেখবেন বাংলা-ভাষাটা অন্যরকম। এমনকি অইসব জায়গায় কলিকাতা বইলা কোন জিনিসও পাইবেন না, কারণ ব্যাপারটা শুরু হইছে কলোনিয়াল আমল থিকাই।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, কোন রেফারেন্সরে ফলো করবেন না – তা না, রেফারেন্সের ব্যাপারে ক্রিটিকাল থাকতে হবে আমাদেরকে। তা নাইলে ব্যাপারটা নেরো একটা পাইপের ভিতর দিয়া দেখার ঘটনাই হবে। আমাদের আই-সাইটের অবশ্যই একটা লিমিটেশন আছে, কোন না কোন রেফারেন্স-সিস্টেমের ভিতর দিয়াই আমাদেরকে দেখতে হবে, কিন্তু একইসাথে কোন জায়গাটার ভিতর দিয়া আমরা দেখতেছি, অই জায়গাটা নিয়াও ক্রিটিকাল থাকতে পারাটা জরুরি।

যারা বইয়ের বাংলা পড়েন, তারা দেখবেন এই কারণে ‘ফেইসবুকের বাংলা’ 🙂 নিতে পারেন না। ইউটিউবে মিডল-ক্লাস ক্রাউডে জমা হওয়া গান শুইনা মনে করেন, বাংলাদেশে তো গানের কোন ‘ঐহিত্য’ নাই! তো, এইগুলা যতটা না একটা সত্য বা মিথ্যা কথা, তার চাইতে একটা এগজিস্টিং রেফারেন্স সিস্টেমের বাইরে না যাইতে চাওয়ার ঘটনাই, মোস্টলি।

শহর ভর্তি খাওয়ার দোকান আর অষুধের দোকান। অই দোকানগুলার সামনে মানুশ ভিক্ষাও করতেছে খাওয়ার কথা বইলা আর অষুধ কিনার কথা বইলা। মানে, যা বললে মানুশ ভিক্ষা দিতে পারে আর কি! তার জন্যই চাইতেছে। তারপরও সবাই তো ভিক্ষা দেয় না। কারো কাছে টাকা আছে বইলাই সে ভিক্ষা দেয় না, মন-নরম হইলে পরে ভিক্ষা দেয়। এই কারণে কাকুতি-মিনতি করা লাগে। অনেকে বেশি আওয়াজ পছন্দ করে না। তখন করুণ চোখে তাকায়া থাকতে হয়। এরা সারাক্ষণই করুণ চোখে তাকায়া থাকে। এই কারণে ভিক্ষা-চাওয়া মানুশগুলার দিকে আমরা তাকাই না। এরা শহরের ময়লা। এই ময়লাগুলা সিটি-করপোরেশনের লোকজন কেনো সাফ করে না!

মার্চ ১৮, ২০২৩

গুলাগ-বাংলাদেশ

গুলাগে (gulag) খালি মানুশদেরকে টর্চার-ই করা হইতো না, স্ট্যালিনের জন্মদিনে তারে ‘শ্রদ্ধা ও সম্মান’ জানায়া গান গাওয়া লাগতো, চিঠি লেখা লাগতো। (জিজেকের লেকচারে শুনছিলাম।)

তো, যুগে যুগে অত্যাচারের টেকনিকগুলা কিছু বদলাইলেও প্যাটার্নগুলা মোটামুটি কাছাকাছি ধরণেরই থাকে।
গতকালকে বাদ্দ হয়া একটা পাবলিক প্লেইসে (ডমিস্টিক এয়ারপোর্টে) ১ ঘন্টা বেসরকারি বিটিভিগুলার স্ক্রিন দেখা লাগছে।

মানে চারদিকে ৫-৬টা টিভি ফিট করা আছে, আলাদা আলাদা চ্যানেল অন করা, কিন্তু সব চ্যানেলে একই ঘটনা চলতেছে। না-দেখতে চাইলেও আপনারে এই জিনিস দেখতে হবে, না শুনতে চাইলেও আপনারে শুনতে হবে! বাংলাদেশের এইরকম পাবলিক প্লেইসগুলা হয়া উঠছে এক একটা গুলাগ।

ওয়েলকাম টু দ্য গুলাগ-বাংলাদেশ।

– ‘শুদ্দ-বাংলা’ হইতেছে মোস্টলি একটা ক্রিঞ্জ (cringe) ঘটনা –

মেয়েদেরকে বুঝাইতেছিলাম, আজাইরা কথা এক কান দিয়া শুনবা, আরেক কান দিয়া বাইর কইরা দিবা! বড় মেয়ে কইলো, ও, তোমার কথা যেইভাবে শুনি আমরা! ছোট মেয়ে আরেকটু বেশি ক্রুয়েল; কইলো, তোমার কথা তো আমরা কানে-ই নেই না!

তখন আমি বুঝলাম যে, না, নেগেটিভ কথা দিয়া হবে না, পজিটিভ জিনিস শিখাইতে হবে! বললাম যে, কিন্তু দরকারি কথা মনে হইলে, সেইটা কি জানি বলে, হৃদয়ে ধারণ করবা!

দুইজনেই মোটামুটি হা হয়া গেলো! এইটা কি ঘটনা! “হৃদয়ে ধারণ করবা!” বুঝলাম যে, থ্রি-ইডিয়টসের চতুরের হিন্দির মতন বাংলা হইছে এইটা! 🙁

কিন্তু শুদ্দ বাংলা-ভাষারে তো বাঁচাইতে হবে! এই কারণে ইংলিশে কইলাম, “টেইক ইট বাই হার্ট” আর কি! টেইক মাই ওয়ার্ডস বাই ইউর হার্ট, নট অনলি বাই ইউর ইয়ারস!

তারপরও ব্যাপারটা ক্রিঞ্জ-ই থাকলো আসলে! যেন, বলার জন্য বলা। কোন আত্মার কানেকশন নাই এতে। ঘুরায়া-প্যাঁচায়া, উপমা-উৎপ্রেক্ষা দিয়া বলার মানে শুদ্দ কইরা বলা না আসলে।

মানে, শুদ্দ-বাংলা’র ঘটনাটা ভাষা হিসাবেই ফেব্রিকেটেড না, কথা হিসাবেও আজাইরা ধরণের কথা। মানে, কোন কথা শুদ্দ কইরা বলার মানে হইতেছে একটু ক্রিঞ্জি কইরাই বলা আসলে!

তো, পরে মোটামুটি আম-খাই, জাম-খাই কইয়া কইলাম, কোন কথা দরকারি মনে হইলে, মনে রাখবা!

মার্চ ১৯, ২০২৩

Gracefully old বা সুন্দর-মতো বুড়া হইতে পারার উদাহারণ আমাদের আর্ট-কালচারে মনেহয় খুব একটা নাই।

আমাদের লিটারেচারে, বুড়া-মানুশ দুই কেটাগরির আছে – করুণ ও অসহায়, আর তা নাইলে পাওয়ারফুল ও পাজি (বদমাইশ)। ইয়াং মানুশ মানেই যেইরকম ড্রিমে ভরা, উদ্দাম, উচ্ছল – এইরকমের এডজেক্টিভ, বুড়া-মানুশের ব্যাপারে এই নরমালিটি’টা হইতেছে ভঙ্গুর, দুর্বল। কিন্তু ফিজিকালি ফিট থাকতে পারলে ৫০ টু ৭০ বয়সটা এইরকম না এতোটা। তবে এই যে ডিপ্টিকশনটা, করুণ ও অসহায়ের – এইটা যে মিথ্যা, তা না। অনেক কারণেই এইটা সত্যি। সরকারি চাকরি ছাড়া তো পেনশন নাই, বুড়া বয়সে ইনকামও থাকে না, পোলা-মাইয়াদের সংসারে তো থাকা যায় না, বন্ধু-বান্ধবও থাকে না, পার্টনার মইরা গেলে তো আরো বেকায়দায়… মানে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে সিনিয়র সিটিজেন হিসাবে সারভাইব করাটা কঠিন কাজই।

কিন্তু আমি এই রিয়ালিটি নিয়া বলতেছি না। আমি বলতেছি আসলে একটা ইমাজিনেশনের কথা; যে, একজন বুড়া-মানুশ তার সোশাল-লাইফ’টারে কেমনে কোন প্রেজুডিস ছাড়া, গিল্ট ছাড়া, নরমালি পার করতে পারেন – এর কোন উদাহারণ আমাদের আর্ট-কালচারে আছে কিনা? থাকতেই হবে – এইটা তো জরুরি না, কিন্তু না-থাকার কারণে একজন বুড়া মানুশের লাইফরে কেমনে আমরা পারসিভ করবো – অই ব্যাপারে একটা এম্পটিনেস থাকার কথা।

অবশ্য থাকলেই যে ভালো – তা না, যেমন ধরেন, ইয়াং বয়সের একটা প্রটো-টাইপ আছে যে, আপনারে প্রেম করা লাগবে বা একটা রোমান্টিক-রিলেশনের ভিতর দিয়া যাইতে হবে; এইটা যতটা না ‘নরমাল’, তার চাইতে অই প্রটো-টাইপের ঘটনাই বেশি। যেইটা অনেক সময় একটা ডিপ্রেশনের দিকেও নিয়া যায়। মানে, এইটা তো ভালোই মেবি, কিন্তু আপনি যদি কোন রোমান্টিক-রিলেশনের ভিতর দিয়া না যান, সেইটা কোন সমস্যা না আসলে। কিন্তু প্রটো-টাইপের প্রেশারের কারণে ব্যাপারটা জরুরি মনে হইতে পারে।

তো, আমি এইরকম প্রটো-টাইপ এক্সপেক্ট করতেছি না। কিন্তু উদাহারণ হিসাবে কিছু জিনিস তো মেবি থাকতে পারতো। কারণ সমাজে বুড়া-মানুশ নাই – তা তো না, কিন্তু লিটারেচারে নাই! এই না-থাকাটাই সমাজ-বাস্তবতার ঘটনা না আর কি!

মার্চ ২১, ২০২৩

গুরু দত্ত ও জহির রায়হান

এই কথাটা কেউ বলছেন কিনা শিওর না, কিন্তু আমার বেশ কয়েকবারই মনে হইছে। জহির রায়হান মেবি গুরু দত্ত’রে খেয়াল করতেন। মানে, গুরু দত্ত’র সিনেমা এবং জহির রায়হানের সিনেমাগুলা যদি দেখেন, স্পেশালি কখনো আসেনি, কাচের দেয়াল, এমনকি বেহুলা পর্যন্ত গুরু দত্তের একটা ছাপ দেখতে পাওয়াটা মেবি পসিবল।

গুরু দত্ত ভালো ফিল্ম-মেকার। হিন্দি-সিনেমা এবং কর্মাশিয়াল মুভি বানাইছেন বইলা খারাপ না। বা জহির রায়হান গুরু দত্তরে এডমায়ার করলেও জিনিসটা খারাপ না। বরং কি বানাইছেন, সেইটাই তো ঘটনা।

কিন্তু বাংলাদেশে ঘটনা হইতেছে যে, যারে গ্রেট বানানো লাগে, তার অন্যসব ইন্সফ্লুয়েন্স ও রেফারেন্সরে মুইছা ফেলার একটা টেনডেন্সি তৈরি হয়, যেন তার চিন্তা বা আর্ট নাজিল হইছে! আগে আর পরে তার কোন নজির নাই! এইরকম ডিফরেন্ট না বানাইতে পারলে তারে ভক্তি করা যায় না তেমন!

তো, এইগুলা ঝামেলাই আরেকটা। এমনকি এই যে মিলের কথা কইতে চাইলাম, এইটারেও রিড করা হবে যে, জহির রায়হানরে “ছোট” করতে চাইতেছে!

অথচ আমি একটা পসিবিলিটি হিসাবেই বলতে চাইতেছি। (যদিও বেশ আগেই দেখছি, তারপরেও রি-কল করে বলতেছি) আপনি যদি গুরু দত্তের পিয়াসা (১৯৫৭) আর কাগজ কি ফুল (১৯৫৯) এর লগে জহির রায়হানের কখনো আসেনি (১৯৬১) আর কাচের দেয়াল (১৯৬৩) দেখেন, আর্টিস্টিক মেলানকলিয়ার একটা মিল মেবি পাওয়ার কথা।

আর যেহেতু গুরু দত্ত সিনেমাগুলা আগে বানাইছেন জহির রায়হানের ইন্সফ্লুয়েন্স নেয়াটা উনার দিক থিকা টাইম-মেশিন আবিষ্কার করা ছাড়া পসিবল হওয়ার কথা না আর কি!

মার্চ ২২, ২০২৩

শামীম সিকদার

শামীম শিকদার’রে নিয়া একটা কথা উঠছে যে, উনি কোনকিছু (আইডিওলজি ও পলিটিকাল সেন্সে) অউন করতেন না। আমি বরং ব্যাপারটারে এইভাবে ডিল করতে চাই যে, অউন করার মতো কিছু ছিল কিনা উনার সামনে?

পলিটিকালি বুর্জোয়া ভার্সেস সর্বহারা রাজনীতি, দুইটার কোনটাই বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য স্পেশাল কি অফার করতে পারছিল আসলে? বা ধরেন তখনকার সময়ের সাহিত্যিক-এসথেটিকগুলাতে কি ঘটনা ছিল, যেইটাতে সাবস্ক্রাইব কইরা একজন মেয়ে ফিলোসফিকালি কোনকিছু ক্লেইম করতে পারতো?

বরং তারে “পুরুষ” হওয়া লাগতো। আর শামীম শিকদার আমার ধারণা, অই জিনিসটা টের পাইয়াই হয়তো “পুরুষালি” হইছিলেন। এবং এমনকি আর্ট-কালচার করতে গেলে যে সোশাল-পজিশনের ইম্পর্টেন্স আছে, সেইটাও মেবি টের পাইছিলেন। যেই কারণে আর্ট-কলেজের চাকরি ছাড়েন নাই। ভালো কাজ করছেন।

কিন্তু আর্টিস্ট হিসাবে উনারে গ্রেট লাগে নাই আমার কাছে। টিএসসি’র “স্বোপার্জিত স্বাধীনতা”রে কিছু গ্রেস-মার্ক দিয়া পাশ করানো গেলেও, ফুলার রোডে জগন্নাথ হলের পিছনের জিনিসগুলা বাজে-ঘটনাই। এর বাইরে উনার খুব-বেশি আর্ট-ওয়ার্ক দেখি নাই। তো, উনি যতটা না আর্টিস্ট ছিলেন, ঢাকা শহরে একটা আর্টিস্ট-পজিশন নিয়া থাকার ঘটনাই বেশি ছিল বইলা আমার ধারণা। এমন একটা এসোসিয়েশনের ভিতরে উনি ঢুকে গেছিলেন যারা উনারে নিতে রাজি ছিল না, কিন্তু না নিয়া পারে নাই।

মানে, ব্যাপারটা এইরকম না যে, উনার ভাই ও উনার ফ্রেন্ড-এডমায়ার’রা উনারে স্পেইস দিছিলেন, বা যতটুকই দিছিলেন অইরকম “দেয়ার” ব্যাপারটা রোকেয়া সাখওয়াত হোসেনের টাইম থিকাই কম-বেশি চালু ছিল; ঠিক নারী-অধিকারের জায়গা থিকা না বরং প্যাট্রিয়ার্কি একটা ফর্ম হিসাবে খালি নারীদেরকেই দাবায়া রাখে না, অপ্রেশনেন টুল হিসাবে পুরুষদেরকেও তো নাদান-বাচ্চা বানায়া রাখে। (“জাতির আব্বা”র ইমেজ থিকাও এইটা খেয়াল করতে পারবেন।) তো, যার ফলে বাপ-ভাই-ফ্রেন্ড-প্রেমিকদের অই “দায়িত্ববোধ”‘র স্পেইসটা ইন-বিল্ডই এক রকমের। তবে শামীম শিকদার অই স্পেইসের বেনিফিট পাইছেন বা নিতে রাজি হইছেন কিনা আমি শিওর না।

উনি প্যাট্রিয়ার্কির ফর্মটারে তার ইনহেরিয়েন্ট টুলগুলার ভিতর দিয়াই মোকাবেলা করছেন। কিন্তু এইটা করতে গিয়া উনি যেই সোশাল পজিশনটা এচিভ করছেন, সেইটা উনারে একটা কাল্ট-ফিগার কইরা তুলছে।

মেবি উনিও একজন গ্রেট আর্টিস্ট হওয়ার চাইতে, নারীমুক্তির আইকন হওয়ার চাইতে একটা কাল্ট-ফিগার হওয়াটাই প্রেফার করছেন। মানে, আমি উনারে এইরকম একটা জায়গা থিকাই বেটার লোকেট করতে পারতেছি।

আমার বড় মামা মারা গেছেন আজকে ভোরবেলায়। উনার সাথে শেষ যে কবে আমার দেখা হইছে ঠিক মনে নাই। সোশাল-টার্মে অনেকটা বিচ্ছিন্ন ইন্ডিভিজুয়াল হিসাবেই বড় হইছি আমি। মানে, অইভাবে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশিদের লগে রিলেশনের ভিতরে কখনো থাকা হয় নাই আমার, খুব বেশি।

আমার নানা সাকসেসফুল একজন মানুশ ছিলেন। বড় মামা’রে লাইফে তেমন কিছু করতে হয় নাই। উনার নামাজের জানাজা-তেও সবাই বলাবলি করতেছিল, ওসমান চেয়ারম্যানের ছেলে ফরিদ মিয়া। নানা মারা যাওয়ার পরে কিছুদিন উনার গদি-তে (মহাজনী-ব্যবসা বা স্টক-বিজনেসে) বসছেন বড় মামা, যাওয়া-আসা করছেন।

পাবলিক লাইফে চুপচাপ, কম-কথা বলা, ঝামেলা-এড়ায়া-চলা মানুশ ছিলেন। কিন্তু আমি ফিল করি উনার একটা ট্রাবলড সৌল ছিল। উনার সাথে একটা স্ট্রেইঞ্জ এনকাউন্টার হইছিল আমার ছোটবেলায়। আমরা ক্লোজ ছিলাম না, বয়সের ব্যবধানের কারণেই; কিন্তু ক্লোজনেস তো ছিলই সম্পর্কের, দেখা-সাক্ষাত না হইলেও।

তো, আমাদের রিলেশনগুলা এতো বেশি ভাবনা-চিন্তা বা এনালাইসিসের ঘটনা না, বরং রক্তের সম্পর্ক বইলা একটা জিনিসই। যেইটারে এক রকম নিয়তির মতোই মনেহয় আমার কাছে। একই ধরণের অভিশাপের সুতায় যেন আমরা গাঁথা আছি। আজকে অই সুতাটা থিকা একটা পুঁতি খইসা পড়লো যেন।

জীবনে যা কিছু ভুল করছেন, তার মাফ যেন উনি পান; আর যা কিছু ভালো কাজ উনি করছেন, তার বরকতও যেন পান! উনার আত্মা যেন শান্তি পায়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

মার্চ ২৩, ২০২৩

এই জিনিসটা আওমি লিগের লোকজন যেমন জানেন, বিএনপি’র লোকজন আরো ভালো কইরা জানেন যে, খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান ময়দানে না আসা পর্যন্ত এই পলিটিকাল ডেড-লকের কোন সলিউশন হবে না।

এই কারণেই বিএনপি’র এক নাম্বার এজেন্ডা সবসময় থাকা দরকার খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের রাজনীতি করার জায়গাটা ফিরায়া দেয়া। এর জন্য বিএনপিরে এই সত্যি কথাটারে পলিটিকালি এস্টাবলিশ করা লাগবে যে, বাংলাদেশের আইন-আদালত যে কোন ফ্রি-এনটিটি না, বরং এই জুুলুমের রিজিমেরই গোলাম, কাঠের পুতুল। আদালতের রায় পলিটিকাল-ক্ষমতার জায়গা থিকা ঠিক কইরা দেয়া হয়। এই আর্গুমেন্টটারে ফ্যাক্টস-ফিগার দিয়া এস্টাবলিশড করতে পারাটা জরুরি।

তারও আগে এইখানে বড় দুইটা বেরিয়ার হইতেছে – বাকশালি-নিউজমিডিয়া ও সোশালমিডিয়া-বটদের ভিলেনিকরণ প্রপাগান্ডা (স্পেশালি তারেক রহমানের ব্যাপারে) এবং ডার্টি-হিউমার (স্পেশালি খালেদা জিয়ার ব্যাপারে)। খালেদা জিয়ারে নিয়া করা “নির্দোষ” মশকরাগুলা কমলেও তারেক রহমানরে “অবিসংবাদিতভাবে” ভিলেন হিসাবে পোর্টেট করার ব্যাপারটা খুব স্ট্রংগলিই চালু আছে।

বাকশালি-নিউজমিডিয়াতে মোস্ট হেইট্রেট পারসন হইতেছে তারেক রহমান। গত ৮-১০ বছরে উনার নাম কোন নিউজপেপার বা নিউজ-পোর্টালে দেখছি বইলা মনে পড়ে না। এখন উনি ফেরেশতা – এই ক্লেইম আমার নাই, কিন্তু কিভাবে উনি এই মোস্ট হেইট্রেট পারসনের তকমা’টা এচিভ করলেন ভালো-বাকশালি মিডিয়া-বুদ্ধিজীবীদের কাছে? এই কোশ্চেনটারে আমলে নেয়া দরকার আমাদের।

২.
উদাহারণটা একটু দূরের হইলেও রিলিভেন্ট একভাবে; যে, দেখেন সিরাজদ্দৌলারে কেন ভিলেন বানানো লাগছিল ইংরেজদের? এখন ন্যাশনালিস্টিক জায়গা থিকা যেইভাবে সিরাজদ্দৌলারে যেইভাবে গ্লোরিফাই করা হয়, উনার পজিশন এইরকম কিছু ছিল বইলা মনেহয় না, উনি দিল্লীর এপয়েন্টেড রাজা-ই ছিলেন। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার খাজনা কালেক্ট কইরা দিল্লীরে দিতেন; আর যেহেতু খাজনা নিতেন, এর বিনিময়ে সিকিউরিটি দিতেন প্রজাদের; এখনকার রাষ্ট্র যেইটা করে।

কিন্তু রাজা হিসাবে সিরাজদ্দৌলা একটু কম-বয়েসিই আছিলেন, মন্ত্রি-মিনিস্টারদেরকে কন্ট্রোল করতে পারতেন না। ইংরেজরা অই মন্ত্রি-মিনিস্টারদেরকে বেশি বেনিফিট দিবে বইলা প্রমিজ করছিল। দিছিলও তো কিছুদিন। আর এই কারণে অরা সিরাজদ্দৌলারে ‘ভিলেন’ বানায়া তুলছিল – বাঈজীরে বিয়া করছে, বেয়াদব, বদমেজাজি, এই-সেই। এবং এতে পিপলের সার্পোটও থাকার কথা কিছু। [১৯৬৭ সালের খান আতাউর রহমানের বানানো সিরাজদ্দৌলা সিনেমাতে দেখবেন আনোয়ার হোসেন পালায়া যাওয়ার সময় ধরা পড়ার পরে লোকজন তারে নিয়া হাসি-ঠাট্টা করতেছে, রাজ-দরবারে। মানে, এইটা ফিকশন হইলেও অসম্ভব মনে হয় নাই আমার কাছে।] এখন এইগুলার কিছু কিছু মেবি সত্যিই। কিন্তু মানুশ হিসাবে সিরাজদ্দৌলা পীর-আউলিয়া নাকি খারাপ-বদমাইশ – এইটা তো কোশ্চেন না আসলে এইখানে!

বরং সিরাজদ্দৌলারে যদি ভিলেন না বানানো যায়, তাইলে তারে কন্সপিরেসি কইরা ক্ষমতা থিকা নামানোটা তো ‘নৈতিকভাবে’ ঠিক-কাজ হইতে পারে না! এই কারণে তারে যুদ্ধে হারানো বা ফাঁসি দেয়ার চাইতেও তারে ‘খারাপ-মানুশ’ বানানোটা বেশি জরুরি।

যেমন ধরেন, মালয়েশিয়াতেও তো কয়দিন আগে আনোয়ার ইব্রাহিমরে গে বানায়া জেলে ভরা হইছিল! ব্রাজিলের এখনকার প্রেসিডেন্ট তারেও দুর্নীতি-মামলায় সাজা খাটা লাগছিল, মোস্টলি এই কারণেই যাতে প্রেসিডেন্ট ইলেকশন না করতে পারেন। মানে, এই ধরণের ঘটনাগুলা নতুন না, বরং বাকশালি-মিডিয়ার ওয়ান অফ দ্য মেজর ফাংশন বা কাজ হইতেছে, তারেক রহমানরে মনস্টার এবং খালেদা জিয়ারে বাজে-মহিলা হিসাবে পোর্টেট করা। এইটা খুব কন্টিনিউয়াসলি করা হইছে একটা সময়ে। এখন তো মিডিয়াতে “নিষিদ্ধ”-ই তারেক রহমানের নাম। তো, উনি ভালো-মানুশ কি খারাপ-মানুশ – এইটা ঘটনা না, ঘটনা হইতেছে উনি পলিটিকালি একজন পাওয়ারফুল মানুশ, যারে ভিলেন বানাইতে হবে। এইটা যতোটা না একটা ন্যায়বিচারের ঘটনা তার চাইতে বেশি একটা পলিটিকাল এক্ট। এই জায়গাটারে রিয়ালাইজ করতে পারলে প্রশ্নটারে ঠিকমতো মোকাবেলা করতে রাজি হইতে পারবো বইলা আমি মনে করি।

৩.
তো, আমার কথা হইতেছে, বাংলাদেশে এখনকার অবস্থায় যদি কেউ ইলেকশনের ডেমোক্রেসি চান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের পলিটিক্স করার জায়গাটারে কোনভাবে লিগালি তৈরি হইতে দিতে হবে। তা নাইলে পলিটিকাল নেগোশিয়েশনের রাস্তাটা ওপেন হওয়া পসিবল না। কথার কথা-ই চলতে থাকবে।

মার্চ ২৪, ২০২৩

কয়েক মাস আগে আম্মারে নিয়া এক হসপিটালে গেছি। ইর্মাজেন্সিতে এক ইয়াং ডাক্তার খুবই হেল্পফুল, ইনিশিয়াল চেক-আপ করার পরে আমারে ব্রিফিং করতেছে হার্ট-স্পেশালিস্টের লগে কেমনে কথা কইতে হবে।

বলতেছে, স্যার আসলে বলবেন, স্যার, এই এই জিনিস করা হইছে, স্যার, উনার এই সমস্যা, স্যার… তখন আমি কথার মাঝখানে হাইসা দিলাম। কইলাম, মানে, একটু পরে পরে স্যার বলতে হবে 🙂

ইয়াং ডাক্তারও হাইসা দিল, বললো, বুঝেন তো, বাংলাদেশ তো, এইগুলা বলা লাগে।

মার্চ ২৬, ২০২৩

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বইলা যে আওমি-বাম-বাকশালি ন্যারেটিভ চালু আছে মুক্তিযুদ্ধের, অইখানে দেখবেন গণহত্যা নিয়া যত আহাজারি আছে, রিভোল্টের, লড়াইয়ের কথা তেমন হাইলাইট করা হয় না।

করা হয় না কারণ অইখানে (মুক্তিযুদ্ধের ময়দানে) কোন আওমি লিগ বা বাম-নেতারে খুঁইজা পাইবেন না! অইখানে পলিটিকাল নেতাদের কন্ট্রিবিউশন কমই। যুদ্ধ শুরু করছেন মিলিটারি, পুলিশের লোকজন, এবং এর লগে দেশের মানুশ – কৃষক, ছরমিক, ইয়াং-লোকজন, স্টুডেন্টরা যোগ দিছেন। পলিটিকাল নেতারা খুব কমই আছিলেন যুদ্ধের ময়দানে।

যুদ্ধ যখন শেষ হইছে তখন পলিটিকাল লিডার’রা আইসা ক্ষমতায় বসছেন। যেই কারণে মুক্তিযুদ্ধের পরে মিলিটারি-এলিট এবং পলিটিকাল-এলিটদের মধ্যে ক্ষমতার একটা টেনশন ছিল। যেই কারণে আওমি-লিগ সবসময় মিলিটারিরে সন্দেহের চোখে দেখছে, এবং এখনো ডরায়। কারণ জানে, যুদ্ধ অরা করে নাই, করছে মিলিটারি এবং দেশের মোস্টলি নন-পলিটিকাল জনগণ। সো-কল্ড ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’-তে এই জায়গাটা আলাদা কইরা পাইবেন না।

আমাদের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের সাতজনই মিলিটারি-পুলিশের লোক। অথচ এমন কোন নাটক-সিনেমা-গল্প-উপন্যাস পাইবেন না যেইখানে মিলিটারি-পুলিশের লোকেরা মুক্তিযুদ্ধের নায়ক। এইটা খুব ভুল কইরা হয় নাই। আওমি-বাম ন্যারেটিভ’টা বরং এই জায়গাটারে ডরায় এবং পলিটিকালি স্বীকার করতে চায় না বইলাই এইটা ঘটছে, ঘটতেছে।

যার ফলে, স্বাধীনতার ১৫ মাস পরে এমন একটা ইলেকশন করছে আওমি-লিগ ১৯৭৩ সালে, যেইখানে দলের বাইরে অন্য কোন কেন্ডিডেটরে ইলেকশনই করতে দেয় নাই। তারপরে তো একদলীয় শাসনই শুরু করে। রক্ষীবাহিনিরেও খালি পলিটিকাল মিলিশিয়া বাহিনি না, বরং মিলিটারি’র ক্ষমতারে কমানোর একটা ইনিশিয়েটিভ হিসাবে দেখতে পারা দরকার।

আওমি-বাম-বাকশালিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায় নাই না, অরা সবসময় এর ক্রেডিটরা নিতে চাইছে এবং বাংলাদেশের পলিটিকাল ক্ষমতারে দখল কইরা রাখতে চাইছে, অবৈধভাবে। এই জায়গাটারে সেন্টার কইরা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলারে আমাদেরকে দেখতে পারতে হবে। তাইলে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার’ পলিটিকাল ন্যারেটিভটারে অনেক ক্লিয়ারলি দেখতে পাবো আমরা।

মানে, এইখানে অনেক আলাপ আছে; ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার’ মতো প্রো-ইন্ডিয়ান একটা ন্যারেটিভ কিভাবে তৈরি হইছে, এস্টাবলিশ করা হইছে, এবং এখন একটা জুলুমের টুল হিসাবে ফাংশন করতেছে। আর এই আলাপ করতে আমাদেরকে রাজি হইতে হবে।

কাঁঠাল আর কাঁঠাল পাতা

২০০৭-৮ সালের দিকে বাংলাদেশের কমিউনিটি ব্লগে যারা হাজির ছিলেন, স্পেশালি সামহোয়ারইনব্লগে, অইখানে একটা উপমা/ইঙ্গিত খুব চালু ছিল, সেইটা হইতেছে – কাঁঠাল পাতা। নরমালি যারা “সেকুলার” এবং “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার” ফলোয়ার না, তাদেরকে “ছাগল” না ডাইকা বলা হইতো “যান, কাঁঠাল পাতা খান গিয়া!” এইরকম। যে, আলাপ শেষ! এইভাবে হিউমিলিয়েট করা হইতো।

তো, আজকে যখন তাদেরকে কাঁঠাল খাওয়ার কথা বলতেছে তাদের লোকজন, কেমন ফিল হইতেছে উনাদের! মানে, আফটার অল, কাঁঠাল পাতা তো আর খাইতে বলে নাই! কিন্তু তারপরও মনে হইতেছে, যেন সেইসব “সেকুলার” আর “চেতনাজীবীরা” কাঁঠাল পাতা চিবাইতেছে এখন।

মানে, উপমা/উপ্রেক্ষা/মনে-হওয়া তো আর যুক্তি-তর্কের ঘটনা না এতোটা!

মার্চ ২৮, ২০২৩

– মানুশের ইনকাম বাড়ে নাই, টাকার দাম কমছে –

বছর খানেক ধইরাই এই আলাপ চালু আছে যে, ঢাকা শহরে যে রিকশা চালায় সেও মাসে ১০ হাজার টাকা ইনকাম করে, সিএনজি চালায়া তো মাসে ৩০ হাজার টাকা ইনকাম করে। এই সেই। মানে, মানুশের ইনকাম অনেক বাড়ছে!

অনেক ফ্রাস্টেট্রেড চাকুরিজীবীরাও বেতনের কথা মেনশন কইরা আলাপ করতেন, মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা বেতন পাই, তা-ও সংসার চালাইতে হিমশিম খাই! মানে, টাকার পরিমাণটা একটা ঘটনা হিসাবে বেশিরভাগ স্টেটমেন্টে থাকতো।

কিন্তু টাকার দাম যে কইমা গেছে, এই কথা মোটামুটি কোথাও নাই! মানে, ঢাকা শহরের বস্তিতে থাইকাও ১০ হাজার টাকায় মাস চালানো মুশকিল – এই কথা নাই, ইদানিং কিছু শোনা যাইতেছে। ৫০ টাকায় সকালের নাশতা করতে পারলেও ১০০ টাকায় দুপুরের ভাত খাওয়ার দোকান খুঁইজা পাওয়া টাফ। এই অবস্থা বছর খানেক ধইরাই চলতেছে। এবং অবস্থা আরো খারাপ হইতেছে।

টাকার দাম কতোটা কমছে – সেই হিসাব সরকারি ডেটা-তে পাইবেন না, কারণ অইগুলা ফেব্রিকেটেড। যার ফলে, টিভি-পত্রিকার রিয়ালিটির লগে আমাদের লাইফের রিয়ালিটি মিলতেছে-না না, টিভ-পত্রিকা-(সরকারি)ডেটা দিয়া এমন একটা রিয়ালিটি তৈরি কইরা রাখা হইতেছে যেইটা ভুয়া, ফার ফ্রম দ্য ট্রুথ।

আমি বলতে চাইতেছি, মানুশের ইনকাম বাড়ে নাই, পাচার করা টাকার ঘাটতি ফিল-আপ করার জন্য নতুন যেই টাকা ছাপানো হইছে সেইটা টাকার ভ্যালু আরো কমায়া দিছে।

বাজারে ২টাকার, ৫টাকার নোট/কয়েন পাইবেন না, কারণ এই টাকা দিয়া তেমন কিছু কিনা যায় না। বাজারে মিনিমাম নোট হইতেছে ১০ টাকা। আগে যেইটা ছিল ১টাকা/২টাকা, এখন এইগুলা কোন টাকাই না।

মানে, আপনার-আমার ইনকাম বাড়ে নাই, খরচ বাড়ছে, টাকার দাম কইমা গেছে। নতুন নতুন টাকা ছাপানো হইতেছে, কিন্তু সেই টাকার কোন ভ্যালু নাই। এইরকম একটা অবস্থার মধ্যে আমরা আছি।

ভাইস নিউজ-রে (VICE News) যে কেন আমার কাছে খুব একটা যুইতের লাগতো না – এইটা ভালো কইরা টের পাইলাম ইমরান খানের ইন্টারভিউ’টা দেইখা। (কমেন্টে ইউটিউবের লিংকটা দিতেছি।)

মানে, উত্তর দিয়া একজন মানুশরে যতটা না চিনবেন, তার চাইতে বেশি চিনতে পারবেন তার প্রশ্নগুলার ভিতর দিয়া।

ভাইস নিউজ তো মোটামুটি পশ্চিমা নিরপেক্ষ একটা চ্যানেল, কিন্তু আইডিওলজিকালি আরো গোঁড়া বা ফান্ডামেন্ডালিস্ট আসলে; এইভাবে যে, অরা অদের লিনিয়ার ওয়েস্টার্ন ন্যারেটিভ থিকা এক চুলও সরতে রাজি না। ইমরান খান যেই উত্তর-ই দিক, ভাইস-এর কাজ হইতেছে এজেন্ডাগুলার ব্যাপারে এক ধরণের স্বীকারোক্তি আদায় করা যে, এইগুলাই হইতেছে! পাকিস্তানে দুর্নীতি, সাংবাদিক-নিপীড়ন, টেররিজমের লগে খাতির এইসবকিছু চলতেছে, এবং ইমরান খানও এর লগে তাল মিলায়া চলতেছেন!

হাউএভার, ইমরান খানের কথা বরং স্ট্রেইট হইছে। উনার একটা কথার লগে আমি খুবই একমত যে, এইটা খালি পাকিস্তানের না, (ইমরান খান যদিও বলতেছেন, ডেভোলাপমেন্ট কান্ট্রির কথা, কিন্তু আমি মনে করি) মোটামুটি সব ডেমোক্রেটিক স্টেইটের ব্যাপারেই ট্রু যে, রাষ্ট্র-ব্যবস্থাটা একটা “এলিট কেপচার”-এর কাছে জিম্মি হয়া আছে। একটা পিপল এওয়ারনেস ছাড়া এই জায়গাটারে চেইঞ্জ করা পসিবল না।
ইমরান ইন-ডাইরেক্টলিই বলতেছিলেন, ক্ষমতা তো মিলিটারির কাছে! আমি প্রাইম-মিনিস্টার কিন্তু দুর্নীতি দমনের হেড হইতেছে আর্মি-চিফ, এখন আমি কি করবো এইখানে! সাংবাদিক মারছে কারণ মিলিটারির এগেনেস্টে নিউজ করছিল। (বাংলাদেশের সাগর-রুনিও কাছাকাছি রকমের ঘটনা। তনু হত্যাও।… এইখানে আমার কথা হইতেছে, এই ‘এলিট কেপচারের’ লগে এখন মিডিয়া-পিপলরাও এসোসিয়েটেড। উনারা অই স্টেইকটা চাইতেছেন, ক্ষমতার।)

আফগানিস্তানের ব্যাপারেও উনি ঠিক-কথা বলছেন বইলাই আমার মনে হইছে। আপনি কাউরে বাদ দেয়ার ভিতর দিয়া, ডর দেখানোর ভিতর দিয়া তো তারে চেইঞ্জ করতে পারবেন না! আর অরা তো পাকিস্তানের নেইবার, অদেরকে নিয়া তো চলতে হবে তার!

মানে, মনে হইতেছিল, ওয়েস্টার্ন পলিটিশিয়ানদের তরফে দরবার করতে গেছেন ইসোবেল য়েউং, ইমরানরে খালি বলতেছেন, স্বীকার করেন! স্বীকার করেন! ইমরান খান বলতেছেন, এইখানে স্বীকার করার বা অস্বীকার করার কিছু নাই!

[ও, হেডলাইনেও একটা ব্লাফ আছে, ক্রিকেট নিয়া কোন কথাই কইতে রাজি না উনি, যদিও বহুত ফ্লার্ট করার ট্রাই করছেন, কিন্তু চিড়া ভিজে নাই। ইমরান খুব ক্লিয়ারলি বলে দিছেন, ক্রিকেট কোন সাবজেক্ট না, তার জন্য।]

মার্চ ২৯, ২০২৩

– ভ্যাট, ট্যাক্স –

ভার্সিটিতে সেকেন্ড ইয়ারে একটা কোর্স ছিল – বাংলাদেশ ইকোনমি। টিচার ছিলেন আবু আহমেদ স্যার। কোর্সের কোন বই-টই ছিল না, স্যার ক্লাসে আইসা আলাপ শুরু করতেন – আচ্ছা, শেয়ার মার্কেট নিয়া বলেন, ব্যাংক নিয়া বলেন, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট নিয়া বলেন। এইরকম একেকটা সাবজেক্ট নিয়া কথা বলতেন, এবং মোটামুটি সবকিছু নিয়াই বিরক্ত থাকতেন যে, কিছুই হইতেছে না! একটু পাগলা কিসিমের মানুশই আছিলেন।

উনার কথা আজকে মনে হইলো আরেকটা কারণে। উনি ক্লাস-টাস খুব একটা নিতেন না, ক্লাস-টেস্টও নিতে পারেন নাই। এইদিকে ফাইনালও চলে আসতেছে। তখন উনি বললেন, এসাইনমেন্ট দিয়া দিও একটা, আর একটা ভাইবা নিবো। তো, অই ভাইবা ছিল আমার লাইফের রিমার্কেবল একটা ভাইবা।

ফার্স্ট ডেইট মেবি মিস করছিলাম, পরে সেকেন্ড আরেকটা ডেইট নিয়া গেছি। মানে, ভাইবা হইতেছে স্যারের সাথে দেখা করা। নাম-টাম জিগাইলেন। কোন প্রশ্নও মনেহয় জিগাইতে চাইতেছিলেন না, কিন্তু যেহেতু ভাইবা, কিছু তো জিগাইতে হয়… আলাপের ভঙ্গিতেই জিগাইলেন, ট্যাক্স কয় ধরণের হয় বলেন তো? বললাম, দুই ধরণের – ডাইরেক্ট আর ইন-ডাইরেক্ট ট্যাক্স। তো, কোনটা থিকা গর্ভমেন্টের ইনকাম বেশি হয়? জিগাইলেন। আমি তো জানি না! ডেটা-টেটা খুঁজতেছিলাম মনে মনে। কিন্তু পত্রিকা-টত্রিকাতে তো খালি ইনকাম-ট্যাক্সের কথাই কয়; অইটা মনে কইরা কইলাম, ডাইরেক্ট ট্যাক্স-ই মনেহয়, একটু আমতা আমতা করলাম।

তখন আবু আহমেদ স্যার মনের মতো একটা টপিক পাইলেন। বললেন, আরে কি বলো, মানুশ কয় টাকা ট্যাক্স দেয়! বিজনেসম্যান ট্যাক্স দেয় নাকি, ট্যাক্স দিলে কি বিজনেস করতে পারবে! (২৪-২৫ বছর আগের কথা। এখন বড়লোকরা ট্যাক্স না দিলেও মিডল-ইনকাম গ্রুপের লোকদের ট্যাক্স দেয়া লাগে। কয়দিন পরে ভিক্ষা করলেও গর্ভমেন্টরে ট্যাক্স দেয়া লাগবে, খালি এলাকার নেতারে চান্দা দিলেই হবে না।) সব ইনকাম তো আসে ইন-ডাইরেক্ট ট্যাক্স থিকা। পানি কিনতে গেলেও গর্ভমেন্টরে টাকা দেয়া লাগে। মোটামুটি ৫-৭ মিনিটের একটা লেকচার দিলেন গর্ভমেন্টের ইনকাম নিয়া।

তো, অইটা ছিল আমার ভার্সিটি লাইফে পাওয়া ভালো লেকচারগুলার একটা। আর মার্কসও দিলেন ১০-এ ৬! মানে, আমি অবাক হইছিলাম, মার্কস দেয়া বা না-দেয়াটা তো টিচারের উপরই ডিপেন্ড করে তাইলে পুরাপুরি! আমি অনেক অবজেক্টিভ ব্যাপার-স্যাপার বইলা মনে করতাম। মানে, অইগুলা তো কিছু আছেই।

ভ্যাট-ট্যাক্সের কথাটাও মনে গাঁইথা গেছিল। আসলেই তো যদি সবকিছুতে ভ্যাট-ট্যাক্স দেয়া না লাগতো জিনিসপত্রের দাম তো অই পরিমাণ কইমা যাইতো! আর এই টাকাগুলা গর্ভমেন্ট কেন নিতেছে? একটা জিনিসের প্রডাকশন, ট্রেডিং থিকা শুরু কইরা বাজারের কিনা পর্যন্ত কত পারসেন্ট টাকা দিতে হয় গর্ভমেন্টরে? এই লিগাল চাঁদাবাজির লগে ইলিগাল চাঁদাবাজি তো আছেই! মানে, বাংলাদেশে বিজনেস করতে গেলে, এমনকি চান্দাবাজি করতে গেলেও পলিটিকাল কানেকশন না বরং একটা গর্ভমেন্ট কানেকশনও জরুরি। গর্ভমেন্ট হইতেছে আরেকটা টাকা-খাওয়া মহাজন, যারে স্যারও ডাকা লাগে, টাকাও দেয়া লাগে।

কিন্তু সবকিছুতে গর্ভমেন্টরে ভ্যাট-ট্যাক্স কেন দেয়া লাগে? কি বেনিফিট আমরা পাই? আমাদের ভ্যাট-ট্যাক্সের টাকা কই যায়? এই যে ইন্টারনেট ইউজ করতে গিয়াও (১০০ টাকায় ২৫ টাকা নাকি ৩৫ টাকা?) গর্ভমেন্টরে দিতেছি, এইগুলা কার পেটে যাইতেছে? এটলিস্ট ৫০% টাকা খরচ হয় সরকারি কর্মচারিদের বেতন-ভাতা-আরাম-আয়েশে। মানে, সরকার চালাইতেই লাগে, পিপলরে বেনিফিট কি দিবে! তারপরেও হয় না।
বছর বছর বেতন বাড়ানো হইতেছে, সুবিধা বাড়ানো হইতেছে, সরকারি চাকরি দামি জিনিস হয়া উঠতেছে কারণ ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ায়া জনগণরে চুইষা খাওয়া হইতেছে। হিসাব করলে দেখা যাবে, ব্রিটিশ আমলে বা পাকিস্তান আমলে গরিবরে এতো টাকা দেয়া লাগতো না গর্ভমেন্টের কোষাগারে। একটা দেশের গর্ভমেন্ট পাবলিকের কাছে পেট্রোল বেইচা, ডিজেল বেইচাও প্রফিট করে! কতোটা এন্টি-পিপল গর্ভমেন্ট হইলে এইটা পসিবল আসলে!

আমার ধারণা, এমন একটা দিন আসবে যখন আমরা খুব ক্লিয়ারলি দেখতে পাবো যে, বাংলাদেশের আজকের দুর্ভিক্ষ এবং ইকনোমিক দুরাবস্থার সবচে বড় কারণ হইতেছে গর্ভমেন্টের লাগামবিহীন খরচ এবং লুটপাট। এই রাক্ষস এতো বড় হইছে যে, হাজার হাজার মানুশের লাশ না খাইয়া এই জুলুমের সিস্টেম নিজেরে বাঁচায়া রাখতে পারবে না। আর তারপরে ফান করবে এইটা নিয়া! এই দেশের মানুশই ভালো না! বাঙালি জাতটাই খারাপ!

সামনের দিনে নয়া বাকশালের জুলুম আরো বাড়বে।

কারণ, এই অবৈধ শাসনের বেইজ হইতেছে – ভয়। মানুশরে ভয়ের ভিতরে রাখতে হবে সারাক্ষণ! যাতে ভয়ের চোটে কেউ কথা না কইতে পারে! কিন্তু মানুশ যদি না ডরায়, মানুশ যদি কথা বলতে থাকে, তাইলে তো বিপদ! এই কারণে মানুশের ডর-ভয় যত কমতে থাকবে, জুলুমের মাত্রা তত বাড়বে।

আর এই জুলুমের শাসনের তখনই শেষ হবে, যখন বাংলাদেশের মানুশ ডরানো বন্ধ কইরা দিবে। তার আগ পর্যন্ত এর শেষ নাই।

– মুক্তিযুদ্ধের শুরু –

মুক্তিযুদ্ধের সময় কতোজন পাকিস্তানি সৈন্য মারা গেছিল? এর কোন লিস্ট কি কোথাও আছে? একটা জায়গায় পাইলাম, জেনারেল ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের পরে বলছেন যে, ১৫-২০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য মারছে মুক্তিবাহিনি। কিন্তু পাকিস্তানের দিক থিকা কোন লিস্ট পাইলাম না। ৫ জনরে মিলিটারি এওয়ার্ড দেয়া হইছে পাকিস্তানে, এর বাইরে কোন লিস্ট নাই। বাংলাদেশের দিক থিকাও কিছু থাকার কথা না! যে, কয়জন কর্ণেল, মেজর, ক্যাপ্টেন মারা হইলো, থাকার কথা না কোথাও?

মানে, মার্চ মাস শেষ হওয়ার আগেই এই জায়গাটা মনেহয় মার্ক কইরা রাখাটা দরকার যে, মুক্তিযুদ্ধের শুরুটা কেমন হইছিল।

যেই আলাপগুলা আছে, সেইখানে খুব স্পষ্টভাবেই দেখা যায়, জিয়াউর রহমান খালি “স্বাধীনতার ঘোষণা”-ই করেন নাই, বরং “যুদ্ধ” বইলা যেই জিনিস সেইটা শুরু হইছিল তার রিভোল্টের ভিতর দিয়া, চিটাগাংয়ে। উনি যুদ্ধ কইরা ক্যান্টমেন্ট থিকা বাইর হয়া গেছিলেন। তার আগে পাকিস্তানি মিলিটারি অফিসারদেরকে বন্দি করতেছেন। যুদ্ধ শুরু কইরা দিয়া তারপরে যুদ্ধের ঘোষণা দিছেন। মানে, “স্বাধীনতার ঘোষণা” দিছেন, এইটুক আংশিক একটা ঘটনা। এর আগে যুদ্ধ যে শুরু কইরা দিলেন – এই সিগনিফিকেন্সের কথাটা হাইলাইট করা হয় না কোথাও।

হিস্ট্রির বনর্ণায় দেখবেন, ঢাকা ভার্সিটিতে কুচকাওয়াজ হইতেছে, মিছিল-মিটিং হইতেছে। এর পরে পাকিস্তানি মিলিটারি এটাক করতেছে। কিন্তু “যুদ্ধ”টা কই? সেইটা গিয়া শুরু হইতেছে চিটাগাংয়ে। তারও ১৫-২০ দিন পরে গিয়া পলিটিকাল লোকজন গর্ভমেন্ট ফর্ম করতেছে ইন্ডিয়া থিকা আইসা। মুক্তিবাহিনি অফিসিয়ালি ফর্মড হয় জুলাই মাসে।

মানে, অফিসিয়ালি পাকিস্তানি মিলিটারি তো “পূর্ব পাকিস্তানে ল এন্ড অর্ডার রক্ষা করার কাজ” করতেছিল! কিন্তু এইটারে খালি যুদ্ধ হিসাবে ডিক্লেয়ারই করেন নাই জিয়াউর রহমান, বরং অফিসিয়ালি যুদ্ধটা শুরুও করছিলেন উনি একটা মিলিটারি রিভোল্টের ভিতর দিয়া। যেইটা থিকা পলিটিকাল লিডারদের সইরা আসার কোন উপায় আর ছিল না।

দেশে অবশ্যই একটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করতেছিল, কিন্তু সেইটা পলিটিকাল নেগোশিয়েশনের মধ্যেই ছিল। নেগোশিয়েশনটা যখন আর কাজ করে নাই, তখন মিলিটারি অপারেশন শুরু হইছে। কিন্তু সেইটা “যুদ্ধ”-তে কনভার্ট হইছে তখনই যখন মিলিটারির একজন অফিসার হিসাবে জিয়াউর রহমান রিভোল্ট করছেন।

এখন এই ঘটনাগুলারে অবশ্যই ফ্যাক্ট ধইরা টাইমলাইন আকারে সাজাইতে হবে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থিকা শুরু কইরা ১৭ই এপ্রিল পর্যন্ত। তাইলে দেখা যাবে অফিসিয়ালি “যুদ্ধ” কই কই হইতেছে, কিভাবে হইতেছে। অই রিভোল্টগুলার লিস্টিং করা গেলে মুক্তিযুদ্ধের শুরু হওয়ার ডাইনামিক্স অনেক দূর পর্যন্ত ক্লিয়ার হইতে পারবে বইলা আমার মনেহয়। যেইখানে দেখা যাবে, জিয়াউর রহমানের অফিসিয়াল ডিক্লারেশন এবং তার আগে তার মিলিটারি রিভোল্ট মোস্ট সিগনিফিকেন্ট ঘটনা, মুক্তিযুদ্ধের শুরুর।

মার্চ ৩০, ২০২৩

স্ট্রিট ফটোগ্রাফি

গুলশান ২ নাম্বারের মোড় পার হয়া নতুন বাজারের দিকে যাওয়ার সময় দেখি ১৫-২০ জন বাচ্চা ও মহিলা ভিখারি দৌড়াইতেছে। একটু সামনে গিয়া জ্যামে থামার পরে সবাই মিইলা একটা শাদা গাড়ির জানালার পাশে দাঁড়ায়া বলতেছে, আমারেও একটা দেন স্যার! আমারেও একটা দেন! ৫-৭ জন আইসা পৌঁছাইছিল। অন্যরা যখন আসতে লাগলো তখন একটা কিশোর ছেলে চেইতা গেলো, “একজনরেই দেয় না, আবার তোমরাও আসছো!”

একটু পরে জানালার কাঁচ নামলো। ২-৩টা খাবারের প্যাকেট দেয়া হইলো। বাকিরা সবাই হতাশ হয়া রইলো। বুঝা গেলো, গাড়ির ভিতরে আর প্যাকেট নাই, বা আর দেয়া হবে না। গুলশান মোড়েই কিছু ইফতার বিতরণ কইরা আসছিলেন মেবি এই দয়াবান লোক। কিন্তু বুঝতে পারেন নাই যে, বাঙালির তো স্বভাব খারাপ, খালি খাই খাই রোগ! মাগনা পাইলে আলকাতরাও খায়! 🙂

আর বাচ্চা এবং মহিলাগুলা কিন্তু ভিখারিও না, সবার হাতে কলম, নাইলে রুমাল, নাইলে শিশু-শিক্ষার বই, কিছু একটা বেচতেছে! কারণ পাশেই সাইনবোর্ড লাগানো – “ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা”!

ফেসবুক বাজারের (মানে, নিউজফিডের) অবস্থাটা কি কেউ খেয়াল করছেন? মানে, আপনার নিউজফিডের কতো % কার দখলে?

আমার ধারণা এটলিস্ট ৩০% হইতেছে স্পন্সরড পোস্ট, ৩০% গ্রুপ বা পেইজের পোস্ট, বাকি ৪০% হইতেছে ফ্রেন্ডদের পোস্ট, তা-ও এর অর্ধেক হইতেছে সোশাল-মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, বা যারা বেশি হাউকাউ করে। এদের অনেকরে আমি আনফলো করছি, খালি বেশি পোস্টের কারণে। তারপরেও হাউকাউ কমে নাই। মানে, বাজারে তো হাউকাউ না থাকলে হবে না। বা যেইদিকে হাউকাউ নাই, মানুশ তো অইদিকে যাইবো না! যার ফলে ফেইসবুকের নিউজফিডে থাকা মানে কোন না কোন হাউকাউয়ের মধ্যেই থাকা। এইটা এক্সপেক্টেড।

আমি বলতে চাইতেছি, ফেইসবুক বাজারে বেচা-কেনা বাড়ছে। বা এর একটা উদ্দেশ্য হয়া উঠছে বেশি বেচা-কেনা করানো। এই কারণে স্পন্সরড পোস্টের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ছে। বিজ্ঞাপণ তো ডিসট্রাক্ট করে। কিন্তু তার চাইতে বেশি ঝামেলার হইতেছে সেলিব্রেটেদের ঘটনাগুলা। এইগুলা যে কারোরই মেজাজ খারাপ কইরা দেয়ার কথা। কিন্তু যেহেতু হাউকাউয়ের ঘটনা, নিজেরেও দেখবেন অইখানে পক্ষে-বিপক্ষে প্লেইস করা লাগে। ব্যাপারগুলা খালি মনোটোনাসই না, একটা সময়ে টের পাওয়ার কথা যে, হুদাই! এইগুলা আমি করতেছি কেনো!

মাঝে-মধ্যে কোন মনি-মুক্তা পাওয়া যায় না – তা না, কিন্তু এর লাইগা এখন যেই পরিমাণ সাগর সেচা লাগে, অর্দি মনে করা টাফ আসলে।

মার্চ ৩১, ২০২৩

সোশালি বাংলাদেশের কবি, সাহিত্যিক, ইন্টেলেকচুয়ালদের ক্লাসে আমি বিলং করি না। মানে, উনাদের লগে আমার উঠা-বসা নাই। কারো কারো লগে কিছুদিন যোগাযোগ ছিল। কিন্তু আমি কনশাসলি এড়াইয়াই চলি, অই সমাজ।

প্রফেশনাল সমাজেও আমি নাই। চাকরিজীবী সমাজ যেইরকম থাকে টিচারদের, ব্যাংকারদের, সেলস এন্ড মার্কেটিংয়ের, টেলিকমের, আইটি’র – অইখানেও আমি আসলে নাই। চাকরির দরকারে যতটুক উঠা-বসা, কিন্তু প্রফেশনাল দরকারের বাইরে সামাজিক খায়-খাতির আসলে নাই।
স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির এলামনাই বা জেলা-সমিতি, উপজেলা-সমিতি যেইরকম আছে, অই স্পেইসগুলাতে আমি কখনোই ইজি ফিল করি নাই। স্কুলের দুয়েকজন ফ্রেন্ডের লগে একটু যোগাযোগ ছিল, অইটাও পাতলা পাতলা হইতে হইতে নাই-ই বলা যায় এখন।

মানে, মরলে পরে মাটি দিতে দেয়ার সময় খাটিয়া ধরার লাইগা চাইরজন লোক খুঁইজা পাওয়াই টাফ হবে মনেহয় 🙂

তার মানে এইটা না যে, আমার খুব মন-খারাপ, বা আমি এই ধরণের এনগেইজমেন্ট চাইতেছি; বরং আমার নিজের টাইম না থাকলে যেইভাবে আমি চলতে চাই, যেই কাজকামগুলা আমি করতে চাই, অইগুলা কন্টিনিউ করাটা টাফই হবে। কোন এনগেইজমেন্টের ভিতরে থাইকা করা যাবে যে তা না, সব রকমের এসোসিয়েশনেরই তো ভালো, মন্দ এবং বিশ্রি দিক আছে। এইগুলা কোন ঘটনা না।

ঘটনা হইতেছে যে, আপনার-আমার সামাজিক এসোসিয়েশনের ভিতর দিয়াই আমাদের আইডেন্টিগুলা তৈরি হইতে থাকে। কি চাকরি করে, কাদের লগে উঠা-বসা করে এইসব দিয়াই আমাদের সোশাল আইডেন্টিটি তৈরি হয় আসলে।

মানে, কোন সামাজিক ‘পরিচয়’ নাই এইরকম কোন মানুশ পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই সামাজিক-পরিচয়টাই যে মানুশ’টা হয়া উঠে, সেইটা নিয়া সব মানুশেরই কম-বেশি অস্বস্তি থাকার কথা মনেহয় যে, আমি তো অতটুকই না! এই লেনদেনগুলাই না!

কিন্তু এর বাইরে মানুশরে দেখার অন্য কোন টুলও মেবি নাই, আমাদের কাছে। একজন মানুশ অন্য মানুশজনের সাথে যা করে, যা বলে অতটুকই আসলে তার আইডেন্টিটি।

হায়, এতটুকই!

ডামি-জনগণ

২০১৩ সাল বা শাহবাগের সময় থিকাই বাকশালি-মিডিয়া একটা মেজর কাজ ছিল ডামি-জনগণ তৈরি করা এবং সেইটার ডিসপ্লে করা। অই সময়ের এপ্রিল-মে’র দিকে শাহবাগ দিয়া যাইতেছিলাম একবার, তখন দেখলাম ৫-৭ জন লোক “প্রতিবাদ” করতেছে আর ১৫-২০ টা ক্যামেরা তাক কইরা আছে তাদের দিকে, লাইভ টেলিকাস্ট করতেছে, রিয়ালিটি পয়দা করতেছে থ্রু দেয়ার লেন্স।

এখনকার শিক্ষক সমিতি, সচেতন ছাত্র সমাজ, বাকশালি-বুদ্ধিজীবী, সেলিব্রেটি এবং ফেইসবুকের বট-বাহিনি হইতেছে অই ডামি-জনগণ। যারা খালি নিজেদের কথাই বলতেছে না, নিজেদেরকে “জনগণ” হিসাবে ক্লেইম করতে চাইতেছে আসলে। এইটাই এদের মেইন পারপাস। “প্রতিবাদ” করা না, নিজেদেরকে “জনগণ” বইলা দাবি করাটা।

আমরা জানি যে, এরা শিক্ষক লিগ, হলের চামচা লিগ, পুলিশ লিগ, সাংবাদিক লিগ…। কিন্তু একটা নন-পলিটিকাল ভাব ধরার ভিতর দিয়া এরা “জনগণ” হইতে চাইতেছে আসলে। এই মুখোশটা ইম্পর্টেন্ট।

যতক্ষণ না পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ তাদের নিজের কথাগুলা বলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ডামি-জনগণরেই “জনগণ” হিসাবে কুমিরের বাচ্চা মতন দেখাইতে থাকবে শিয়াল-মিডিয়া।

এই কারণে জনগণ যখন কথা বলতে শুরু করে, এই “ডামি-জনগণ” খাড়া করানোটা জরুরি হয়া উঠে। আর তাদেরকে “জনগণ” বানানোর ভিতর দিয়া বাকশালি-মিডিয়া বাংলাদেশের মানুশের কথারে চুপ করায়া রাখে, রাখতেছে।

Leave a Reply