নভেম্বর ২১, ২০২১
এক্ট অ্যাজ অ্যান মোরাল ক্যাটাগরি
একজন মানুশ কি অন্য আরেকজন মানুশের জন্য ভালো করতে পারে না? এই পোশ্ন আসছিল আমার মনে। আমার মনে হইছে, টাফ এইটা; নিজের ভালো’র কথা না ভাইবা অন্যের ভালো করাটা, সম্ভব এইটা, কিন্তু রেয়ারই হওয়ার কথা। এইটা গ্রেটনেসের একটা কাজ। এখন আমরা সেলফ-ইন্টারেস্ট বাদ দিয়া গ্রেট হইতে পারি না – তা না; কিন্তু এইটা এক্সপেক্ট করাটা ঠিক হবে না, এমনকি নিজের ব্যাপারেও ক্রিটিক্যাল থাকাটা বেটার। আমরা বেস্ট যেইটা করতে পারি সেইটা হইতেছে, অন্যের ক্ষতি না করা।
মানে, কোন কাজ করতে গেলে যদি অন্যের ক্ষতি হয়, নিজেরও ক্ষতি হয় – সেই কাজ যে করি না আমরা – তা না; একদম ডেসপারেট হইলে করি, পরে যদিও আফসোস করা লাগে, আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি, না করলেই ভালো। (এক ধরণের মানুশ আছেন, অন্যের ক্ষতি কইরা আনন্দ পান, উনাদের কথা বাদ দিয়াই বলতেছি। অইটা এক ধরণের রোগ বা অসুখ হিসাবে ভাবতে পারাটা বেটার।) সেকেন্ড জিনিস হইলো, যেই কাজ করলে অন্যের ক্ষতি হয়, কিন্তু নিজের লাভ হয় – সেই কাজ না-করতে নিজেরে রাজি করানোটা দরকার বেশি। আর অই কাজই বেশি বেশি বেশি করতে থাকা যেইটা নিজের এবং অন্যদের জন্য ভালো। এইটা হইতেছে থার্ড এক্ট। এই সেকেন্ড এবং থার্ড এক্ট যিনি করতে পারেন, তারেই আমি ভালো-মানুশ বলতে চাই। এর পরে হইতেছে আসলে, (নিজের ভালো-খারাপ না ভাইবাও) অন্যের জন্য ভালো করা। আগের তিনটা কাজ না খেয়াল করতে পারলে এই ৪ নাম্বার কাজটা খুব একটা করতে পারার কথা না আমাদের। (জেনারেল রুল হিসাবেই বলতেছি।)
তবে আমাদের যে কোন কাজই রিলেটিভ একটা জিনিস, absolute কিছু না। আমি কারো কথা না ভাইবা করলেও যে কোন কাজ একটা কনটেক্সটে, টাইম ও স্পেইসের ভিতরেই এক্ট হয়া উঠতেছে, সবসময়। এই রিলেশনটারে খেয়াল করতে রাজি হইতে হবে আসলে সবচে আগে।
#########
বাংলাদেশের এখনকার রাজনৈতিক ঘটনাগুলার অবজারভার হিসাবে আমার পলিটিক্যাল পরস্তাব তিনটা। দুইটা কাজ করতে হবে, আর একটা কাজ করা যাবে না।
বেশ কয়েকবারই বলছি, নয়া বাকশাল কোন পলিটিক্যাল ফোর্সের লগেই নেগোশিয়েশন করতে রাজি না; সিভিল ওয়ার বাঁধায়া দিবে, মিলিটারি বা নন-পলিটিক্যাল ফোর্সগুলার কাছে পাওয়ার হ্যান্ড-ওভার করবে, কিন্তু কোন পলিটিক্যাল পার্টি (পড়েন, বিএনপি’র) লগে আলাপ করবে না।
উনাদের সবচে বেশি ডর হইতেছে যে কোন পলিটিক্যাল এন্টিটি’রে, এমনকি যে কোন পারসনরেও, যে (পলিটিক্যাল এনালাইসিস না, বরং) পলিটিক্যালি এক্ট করতে চায়। এই কারণে, এক নাম্বার কাজ হইতেছে, পলিটিক্যাল কাজকাম করতে পারা। ইজি না এইটা অবশ্যই। 🙁 (বাম-বাটপারদের মতো বিপ্লব না চুদানো। এর বাকশালের ডামি-বিরোধিতার ভিতর দিয়া এরে আসলে টিকায় রাখার রাস্তা-ই তৈরি করে।)
সোশ্যাল ইস্যুগুলাতে পলিটিক্যাল কনশাসনেস জারি রাখা। নিরাপদ সড়ক মুভমেন্ট বা কোটা-মুভমেন্টের সময় ডরানির ব্যাপারগুলা ভাইবেন। কোনটাই গর্ভমেন্ট ফালায়া দেয়ার মুভমেন্ট ছিল না, তারপরও ব্যাপক ডরাইছিল বাকশালি-লোকজন; কারণ এরা পলিটিক্যালি নেগোশিয়েট করতে রাজি না। নেগোশিয়েশন করলে ক্ষমতার দেমাগ থাকে না। অই দেমাগটা হইতেছে কোর।
আমি মনে করি যে কোন সোশ্যাল ও ইকনোমিক ইস্যুতে (স্টুডেন্টদের হাফ-পাস, ডিজেলের দাম, পুলিশি রিমান্ড…) পলিটিক্যাল মুভমেন্ট করা দরকার। যে কোন ইনসাফের কথা শুনতে যে এরা রাজি না, একটা অবৈধ সরকারের পক্ষে যে পিপলের ডিমান্ড নজরে নেয়ারই দরকার পড়ে না, এইটা বারবার স্পষ্ট করা দরকার।
যে বটগাছ (পড়েন, পাবলিকের গর্ভমেন্ট হইলে), সে নুইতে ডরায় না; কারণ সে জানে তার শেকড় মাটির অনেক ভিতরে (পড়েন, পাবলিক সার্পোট আছে তার)। কিন্তু যেই গাছের গোড়া নরোম, সেইটা একটু নুইলেই উপড়ায়া পড়ার ডরে থাকে সবসময়।
সেকেন্ড হইতেছে, নয়া বাকশালের ন্যারেটিভ বা বানানো ক্যাটাগরিগুলার ট্রাপে না-পড়া।
যেমন অন্যতম একটা ক্যাটাগরি হইতেছে: নারীবাদ ভার্সেস ইসলাম। এখন এই দুইটার মধ্যে যে বিরোধ নাই তা তো না, কিন্তু ‘ইসলামের’ মূল শত্রু যেমন ‘নারী-অধিকার’ না, একইভাবে ‘নারী-অধিকার’র মেইন অবস্টেকল ‘ইসলাম’ না; বরং দুইটা জায়গাতে জুলুমের মেইন কারিগর হইতেছে নয়া বাকশাল।
গত মার্চ মাসে মাদরাসার স্টুডেন্টদেরকে ‘নারীবাদী’রা (চুপ কইরা থাকলেও, বিরোধিতা না করলেও) খুন করে নাই। বাংলাদেশে ক্ষমতার দাপট দেখায়া যত রেইপ হয় সেইটা মাদরাসায় পড়াশোনা করার কারণে কেউ করে নাই, বরং ছাত্রলীগের নাম দিয়াই করা হইছে, হইতেছে বেশি।
আমি বলতে চাইতেছি নয়া বাকশাল ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ ‘নারী-অধিকার’ ও ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ নাম দিয়া যেইসব আকাম-কুকাম করে তারে স্পষ্ট করা দরকার পলিটিক্যাল ও সোশ্যাল এক্টিভিটিসের ভিতর দিয়া।
যেমন ধরেন, মসজিদে মেয়েরা নামাজ পড়া শুরু করছিলেন মাঝখানে, এইটা একটা ভালো ইনিশিয়েটিভ ছিল। মানে, এতে কইরা ‘নারী-অধিকার’ প্রতিষ্ঠা হয়া যাবে না, কিন্তু সোশ্যালি একটা ইনক্লুসিভনেসের শুরুয়াত পসিবল। একইভাবে, ইসলাম’রে ১০টা গাইল দেয়ার সময় যদি যদি ‘মূক ও বধির’ না থাইকা ‘সেক্যুলার নারীবাদীরা’ অবৈধ সরকারের ২টা ক্রিটিকও করতে পারেন; তখন এই সিউডো ক্যাটাগরিটার বেনিফিট জুলুমের ফেভারে যাওয়ার কথা না। একটা জুলুমের শাসন যে সবারই দুশমন – এই বুঝ’টা সবসময় সবারই থাকা দরকার। (আরো ক্যাটাগরি আছে এইরকম, ফাঁপা এবং বানানো; যেমন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বিরোধীরা, মানে হাস্যকর, এইগুলা, এখন বুঝতে পারেন তো মোটামুটি সবাই। তো, এইরকম ক্যাটাগরিগুলার মেইন কাজই হইতেছে জুলুমের জায়গাটারে সরায়া ফেলা।) এইরকম সিউডো ‘দ্বান্দ্বিকতা’গুলারে (বালের বাংলা আমার) ভোঁতা কইরা দিতে হবে, আমাদের কাজকামের ভিতর দিয়া। এইটা সেকেন্ড কাজ।
থার্ড এবং মোস্ট ইম্পর্টেন্ট জিনিস হইতেছে, দুনিয়াতে কোন জালিম-ই শোধরায় নাই, নিজে নিজে জুলুম করা বন্ধ করে নাই। ইতিহাসে কখনো এই ঘটনা ঘটে নাই। সো, জালিমের ও জুলুমের পাপেটদের মুখের কথা বিশ্বাস কইরেন না। অইটা হবে একটা ক্রাইম।
জুলুম কোনদিন নিজে থিকা শেষ হয় না। এর শেষ করতে হয়। একটা রিভেঞ্জের রাজনীতির শেষ আরেকটা রিভেঞ্জ দিয়া করলে একই গর্তেই পড়বো আমরা। বরং আর কোন রিভেঞ্জের রাজনীতি যেন বাংলাদেশে শুরু না হইতে পারে, সেইটা এনশিওর করা লাগবে। খালি কথা দিয়া না, পলিটিক্যাল এক্টিভিটির ভিতর দিয়া সেই রাস্তাটা বানাইতে হবে আমাদেরকে। যেন বাংলাদেশে বাকশাল নতুন চেহারা নিয়া আর কোনদিন ফিরা না আসতে পারে।
নভেম্বর ২৩, ২০২১
যে কোন মানুশরেই মরার পরে ৩০-৪০ বা ৫০ বছর পর্যন্ত (মানে একটা বা দুইটা জেনারেশন) এমনিতেই মনে রাখে মানুশ, পারসোনাল মেমোরি’র কারণে। আমার দাদী’র কথা মনে হইতেছিল, উনি মারা গেছেন ৩০ বছরের মতো হইছে। উনার কথা মনে আছে আমার। আমি বা উনার নাতি-নাতনিরা মারা যাওয়ার পরে উনার মেমোরি আর কন্টিনিউ হইতে পারার কথা না তেমন।
এইরকমভাবে, আমাদের লিটারেচার, হাজার হাজার কবিতা-কাহিনি-গানও দেখবেন ৫০/৬০ বছরের বেশি রিলিভেন্ট থাকতে পারে না। পারসোনাল মেমোরি’র মতন। এক-দুইটা জেনারেশন পর্যন্ত টিইকা থাকে। কিছু একসপেশন তো আছেই, বঙ্কিম-লালন-রবীন্দ্র-নজরুল, ১০০ বছর পার করতে পারছেন উনারা। ফেড হইতেও শুরু করছেন কিছুটা এখন। আবার অনেককিছু রিভাইবও হয়।
এইসব কিছু মনে হইতেছিল কনফুসিয়াসের কথা ভাইবা। আড়াই হাজার বছর পার করছেন উনি। ৭০/৮০টা জেনারেশন ধইরা রিলিভেন্ট আছেন। যে কোন চিন্তা, সাহিত্য অন্য মানুশজনের লগে এসোসিয়েশনের বা কানেক্ট করার ভিতর দিয়া বা মিল-মহব্বতের ভিতর দিয়াই তৈরি হইতে হয়; কিন্তু অনেকদিন ধইরা অনেক মানুশের লগে থাকতে পারা – এই জিনিসটা খালি পারসোনাল মেমোরি ক্রিয়েট করতে পারার ঘটনাই না আর কি, এতোটা!
#########
স্টুডেন্টদের হাফ-পাশ (বানাম-ভুল লেখতে থাকেন!) এই কারণে মানা হবে না যে, এইটা অযৌক্তিক; বরং এইটা দরকারি নাকি অদরকারি এইটা নিয়া কোন আলাপই হবে না। নাইও কোন আলাপ।
বরং মিছিল কেন করা হইতেছে, শ্লোগান কেন দেয়া হইতেছে? – এই ‘দোষ’ ধরা হবে। দুয়েক্টা বাস ভাঙার ছবি দরকার এখন! সেই ছবিগুলা টিভি’তে সারাদিন দেখানো হবে, নিউজপেপারে ফ্রন্ট পেইজে ছাপা হবে। আমার ধারণা, এইরকম পরামর্শও দেয়া হবে (যদি এখনো না দেয়া হয়া থাকে) যে, আবেদন করেন, ভিক্ষা চান (অবৈধ সরকারের কাছে)!
তো, যেইটা আপনার হক, সেইটা ভিক্ষার দান হইতে পারে না। দেয়াটা দয়া দেখানোটা না, না-দেয়াটা হইতেছে জুলুম।
কোটা মুভমেন্টের সময় সব কোটা বাতিল কইরা ক্ষমতার দেখানো দেমাগ হইছে। এখনো বাস মালিক, শরমিকদের দিয়া বাস-সার্ভিস বন্ধ করানো হইতে পারে, ‘নাগরিক দুর্ভোগ’ দেখানোর লাইগা। যে প্রটেস্ট করবে এই অবৈধ সরকারের এগেনেস্টে, তারেই ভিক্টিম বানানো হবে। আন্দোলনকারীদের পিটানোর পরে তাদের নামেই মামলা দেয়া হবে। (নিরাপদ সড়ক মুভমেন্টে টিসি যেমনে দেয়া হইছিল।) আর মিডিয়া দিয়া এইগুলার বিউগল বাজানো হবে, জাস্টিফাই করানো হবে।
মানে, এইগুলা হয়া আসছে। আমরা দেখছি। ভয়েস রেইজ করতেই দেয়া হয় নাই। তো, ভয়েসগুলা চুপ করায়া দেয়া হইলেই ইস্যুগুলা শেষ হয়া যাবে না।
ডর দেখায়া, গুন্ডা, পুলিশ, মিডিয়া লেলায়া দিয়া চুপ করায়া দেয়াটা জালিমের সফলতা না, বরং জুলুমেরই আরেকটা নমুনা। আর একেকটা জুলুমের সময় এই অবৈধ সরকারের গোলামদের চেহারা আরো স্পষ্টভাবে দেখতে পাবো আমরা।
বুঝতে পারবো, এরা হাফ-ইন্টেলেকচুয়াল না, বরং ফুল-দালাল।
#########
এই জিনিসটা মনেহয় শুরু হইছিল, সো-কল্ড কমিউনিস্টদের ‘রবীন্দ্র-সমালোচনার’ ভিতর দিয়া যে, উনি যেহেতু জমিদার ছিলেন, খাজনা আদায় করতেন, এই কারণে উনার সাহিত্য খারাপ! মানে, উনার সামাজিক পজিশন খারাপ বইলা উনার সাহিত্য খারাপ! কমিউনিস্ট হইলেই, ‘বিপ্লব, বিপ্লব…’ কইয়া দুইটা পাদ দিলেই তো তার সাহিত্য ভালো হয়া যাইতে পারতো! এইরকম একটা অভিমান।
অথচ উনার কবিতা তো কবিতার হিসাবেই খারাপ, মানে এভারেজ। গ্রেট কোন পোয়েটিক্যাল ভিশন বা ট্রুথের আবিষ্কার উনার কবিতাতে নাই। মানে, কবিতার জায়গা থিকাই এর ক্রিটিক করা যাইতে পারে। কিন্তু তা না কইরা যখন জমিদারির আলাপ তুলেন, সেইটা যতোটা না ‘সমালোচনা’ তার চাইতে অনেক বেশি হইতেছে কবিতার বিচারের জায়গা থিকা তারে ‘সেইভ’ করার চেষ্টা করা।
তো, এইরকম ‘কমিউনিস্ট-সমালোচনা’, উপরে উপরে ‘ক্রিটিক করতেছি’-টাইপ বাটপারিগুলার প্যাটার্ন এখনো চালু আছে। যেই সরকার আসছেই পিপলের হক মাইরা, ভোট না দিতে দিয়া, তার ‘ক্রিটিক’ করা যে, ‘যৌক্তিক দাবি’ কেন মানতেছেন না! গুম-খুন করবেন, কিন্তু ‘জামাত’ ‘হেফাজত’ ছাড়া অন্যদেরকে কেন গুম-খুন করেন! বিএনপি’র লোকজনরে জামিন দিবেন না, কিন্তু আদালতে ‘নারীদের’কে তো ন্যায়বিচার দিবেন!
মানে, এইরকমের হকের জিনিসগুলা যে সবার, সিলেক্টিভ কোন ঘটনা হইতে পারে না – এই চিন্তাটা নাই, বরং সিরিয়াসলি ‘ক্রিটিক’ করতেছেন যেন। এইটা, আমার ধারণা, অইরকম লিগাসির জায়গা থিকাই ইনহেরিয়েট করছেন উনারা। যেইটা কোর ইস্যুটারে কখনোই ডিল করতে রাজি না। জালিমরে ‘আরো মানবিক’ কইরা তুলতে চান উনারা, জুলুমের বিরোধিতা না কইরা।
এরা জুলুমের ‘সহযোগী প্রতিষ্ঠান’।
নভেম্বর ২৪, ২০২১
অনেক সময় হিস্ট্রিক্যাল ঘটনাগুলা যখন ঘটতে থাকে, ঘটার সময়টাতে আমরা সেইটা টের পাই না, বা টের পাইলেও চোখ-কান বন্ধ কইরা রাখি যেন দেখতেছি না, শুনতেছি না, বুঝতে পারতেছি না। যারা জার্মানিতে নাজি রিজিম’রে সার্পোট করছিলেন, এর বেনিফিশিয়ারি ছিলেন, তারা বুঝতেন না – এইটা আমার মনেহয় না, উনারাও ইগনোরই করতে পারছিলেন হিস্ট্রিক্যাল ট্রুথের জায়গাগুলা।
তো, এইরকম একটা ক্রুশিয়াল হিস্ট্রিক্যাল টাইম পার করতেছি আমরা এখন বাংলাদেশে। খালেদা জিয়ারে প্রপার মেডিকেল সার্ভিস নিতে না দিয়া ধীরে ধীরে খুন করার অবস্থা তৈরি করা হইছে। শকুনের মতন ওয়েট করা হইতেছে, কবে মারা যাবেন উনি। উনার কোন অবস্থাই পিপল জানে না। সব খবরও গোপন রাখা হইতেছে। এরশাদ মারা যাওয়ার পরেও ৩/৪ দিন খবর গোপন রাখা হইছিল, জাতীয় পার্টি ‘দখল’-এর কাজ কমপ্লিট করার লাইগা। এখন রেড এলার্ট জারি করার একটা মানে হইতেছে পাবলিকলি জানাজাও পড়তে দেয়া হবে না।… এইটা একটা হিস্ট্রিক্যাল মোমেন্ট বাংলাদেশের পলিটিক্সে।
একটা টোটাল ব্লাইন্ডনেস তৈরি করা হইছে আমাদের চারপাশে। আমরা দেখতে পাইতেছি না – এইটা আমরা ফিল করতে পারতেছি। একটা ‘অন্ধকার যুগ’ আরো অন্ধকার হয়া আমাদের দিকে আগায়া আসতেছে।
#########
নেটফ্লিক্সের লাইক/ডিসলাইক বাটনের নিচের টিপস’টা পইড়া মনে হইলো জিনিসটা, অইখানে লেখা যে, আমি লাইক-টাইক দিলে অরা বেটার সাজেস্ট করতে পারবে আমারে। কিন্তু আমার তো আসলে প্রবলেম অই জায়গাটা নিয়াই। মানুশের ভালো-লাগা খারাপ-লাগা কন্সটেন্ট কোন জিনিস তো না-ই, সবসময় স্পেসিফিকও না। রোমান্টিক-কমেডি সিনেমা জনরা হিসাবে পছন্দ আমার, আবার সবচে ট্রাশ জিনিস অইগুলাই। হুদাই আজাইরা জিনিস। খালি জনরা না, এক্টর, ডিরেক্টর, পপুলার, আর্টি সব জায়গাতেই কম-বেশি এই ঝামেলা আছে তো।
আর সবচে ইন্টারেস্টিং জিনিস হইতেছে, ফেসবুকের ফ্রেন্ড-সার্কেল; খেয়াল করছেন কিনা ৮/১০ বছর বা ৫/৭ বছর আগে যাদের লগে বাত-চিত করতেন, তারা কিন্তু একই নাই। কম-বেশি সবারই চেইঞ্জ হওয়ার কথা। কারণ আমাদের লোকেশন চেইঞ্জ হইতেছে, প্রফেশন, প্রেফারেন্স, প্রায়োরিটি, আন্ডারস্ট্যান্ডিং… অনেককিছুই। আর এই চেইঞ্জগুলা অনেক দিন পরে পরে গিয়া টের পাওয়া যায়। অনেকে সমান তালে, একইসাথে চেইঞ্জ হইতেছে, বা অনেকের কাছে এই চেইঞ্জগুলা কোন ঘটনাই না, যার ফলে থাইকা যাইতেছে।
আমি বলতে চাইতেছি, মানুশ একই ধরণের থাকে না, বা একই ধরণের জিনিস পছন্দ করে না – তা না, ব্যাপারগুলা কোন লজিক্যাল সিকোয়েন্স বা রেফারেন্স পয়েন্ট দিয়া যে একভাবে লোকেট করা যায় না – তা-ও না; কিন্তু কোন ভ্যারিয়েবলের ওয়েট বা ওজন চাপানোটা মুশকিলই। মানে, ছোট্ট একটা কথায় দেখবেন মনে লাইগা যাইতেছে (ফেসবুকে আজকে দেখতেছিলাম একজন দুই বছর আগের পোস্টও শেয়ার কইরা যাইতেছেন, কারে লগে জানি ছোট একটা হিউমার করতে গিয়া ব্লক খাইছেন, এইরকম…), মারামারি’র পরের দিনই আবার নরমাল হয়া যাওয়া যাইতেছে!
মানে, সব লাইক তো সমান না! সব ভালো-লাগা আর খারাপ-লাগাও একইরকম না! এইটা কারে যে বুঝাই, কেমনে যে বুঝাই – এই জিনিসটা, এই না-পারাটা কম-বেশি সবারই তো আছে, বা থাকারই কথা… কিন্তু মানুশজনরে এইটা কথা দিয়া না, বরং একটা ফিজিক্যাল কানেকশনের ভিতর দিয়া বুঝানো যায়, অনেক সময়। অইটা অনেক এ.আই.-ও বুঝতে পারবে হয়তো বেটার, ধীরে ধীরে। কিন্তু একটা না-বোঝার স্পেইস সবসময়ই থাইকা যাবে মনেহয়।
নভেম্বর ২৫, ২০২১
এইটা কখনোই এতোটা ইন্টেলেকচুয়ালিটি’র সমস্যা বইলা মনেহয় নাই আমার কাছে, যতটা হইতেছে ইন্টেলেকচুয়াল বা বুদ্ধিজীবী বইলা বাতিল, অ-দরকারি ও ইরিলিভেন্ট লোকজনরে আইডেন্টিফাই করাটা। এখন আর না হইলেও, কয়দিন আগেই আমরা এক্সপেক্ট করতাম যে, জাফর ইকবাল’রা নয়া বাকশালের ক্রিটিক করবেন!
কিন্তু এখনো এই এক্সপেক্টশন আছে যে, সো-কল্ড প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী’রা জুলুমের বিরোধিতা করবেন! ডেইলি স্টার, পরথম আলো এবং অন্যসব টিভি-চ্যানেল ও নিউজ-পোর্টালগুলা ‘ভুল’ কইরা বা ‘চাপে পইড়া’ নয়া বাকশালের ‘সমালোচনা’ করতে পারতেছে না!
তো, যাদেরকে আমরা আমাদের ইন্টেলেকচুয়াল বইলা ভাইবা বইসা আছি, তাদের মুখের দিকেই তাকায়া থাকি। তাদেরকে আমাদের চিন্তার অথরিটি দিয়া বইসা রইছি। এইটা হইতেছে সমস্যাটা। এইরকম স্টাক বা আটকায়া থাকার কারণ এইটা না যে, নতুন ইন্টেলেকচুয়ালদেরকে আমরা চিনি না বা অথরিটি প্রমোট করতেছে না; বরং একটা বড় কারণ হইতেছে নতুন চিন্তা-পদ্ধতিগুলারে, প্যাটার্নগুলারে রিকগনাইজ করার জন্যও আমরা প্রিপায়রড না, মাইনা নিতে রাজি হইতে পারতেছি না।
নভেম্বর ২৬, ২০২১
যে কোনকিছু জানতে হইলে, বুঝতে হইলে একজন টিচার খুব দরকারি একটা জিনিস। নিজে নিজে জানা যায় না – তা না, কিন্তু কোন টিচার ছাড়া জানা-বুঝা’টা কমপ্লিট হয় না; জানতে অনেক সময় তো লাগেই, এমনকি জানার পরেও নিজের উপ্রে কনফিডেন্সটা অইরকম আসতে পারে না। যে কোন জানা-বুঝারে ভ্যারিফাই করার একটা জায়গাও থাকে।
এখনকার সময়ে, এই জিনিসটারে সুফিজমের ভিতরে একভাবে রিডিউস করা হইছে বইলা আমার মনেহয়। মানে, সুফিজমে এই জিনিসটারে বেশি দরকারি মনে করা হয়, বা মেবি এইটাই একমাত্র তরিকা বইলা একসেপ্ট করা হয়; কিন্তু তাই বইলা আপনারে অই লাইনেই যাইতে হবে – এইটা একটা অবস্টেকলও অনেকসময়। একমাত্র রাস্তা বইলা ভাবা অথবা রিজেক্ট করা – দুইটাই ঝামেলার। মানে, টিচার এমন একজন না, যার সবকিছু ‘ভালো’ বা ‘সঠিক’; বরং উনার কিছু ভালো এবং সঠিক জিনিস আছে, যেইগুলা আপনি শিখতে পারেন।
আমার ধারণা, এইরকম টিচার/আইডল/সিনিয়র মানুশ থাকেন আমাদের লাইফে; যাদের কাছ থিকা জীবনের নানান সময়ে নানান কিছু শিখতে পারি আমরা, সহজে। তবে আপনি যারে আইডল হিসাবে নিবেন, জানা-বোঝার বাইরেও তার এফেক্ট আপনার লাইফে চইলা আসবে কম-বেশি। এই কারণে কারে আপনি আইডল বানাইতেছেন, মানতেছেন – এইটা ক্রুশিয়াল জিনিস; কারণ জানা’র ব্যাপারটা অবজেক্টিভ হইলেও অই সাবজেক্ট বা মানুশটার ভিতর দিয়া আপনার জানা-বোঝা হিসাবে ট্রানসেন্ডেড হইতে থাকে। যেমন, হেলাল হাফিজ যদি আপনার কবিতার আইডল হয় (উনি খারাপ-কবি না অবশ্যই, মানে এইটারে একটা এক্সাম্পল হিসাবে নেয়ার রিকোয়েস্টই করবো আমি, এইখানে অন্য যে কারোর নামই নেয়া যাইতে পারে, ধরেন, মোহাম্মদ রফিক…), বাংলা-কবিতাতে খুববেশি কিছু এক্সপ্লোর করাটা আসলে টাফই হওয়ার কথা, বা তসলিমা নাসরিন যদি আপনার নারীবাদের আইকন হন, আপনি মোটামুটি অটোমেটিক্যালি পাওয়ারের গোলামি’তে পইড়া যাবেন। এইখানে খুববেশি এস্কেইপ পয়েন্ট নাই, যদি না আপনি একটা সময়ে গিয়া উনাদেরকে আইডল ভাবা থিকা সরতে না পারেন।…
আমার মুশকিল হইছে আরেকটা। আমি খুব বেশি মানুশরে আমার লাইফের আইডল হিসাবে নিতে পারি নাই। আমার মনে সবসময়ই বিশ্বাসের চাইতে সন্দেহ বেশি। যার ফলে কোনকিছুই ঠিকঠাকমতো জানা হয় নাই আমার। এই জায়গাটা থিকা এখন আমি যেইটা করি, একটু সিস্টেমেটিক হওয়ার ট্রাই করি। যেমন কনফুসিয়াসরে পড়তে গিয়া Annping Chin’রে টিচার মানছি। এমন না যে উনার সব কথারে মানতে হবে, বা উনার জানা-বোঝার জায়গাগুলারে কোশ্চেন করা যাবে না, কিন্তু উনার রিডিংয়ের উপ্রে আমি বিশ্বাস রাখছি। উনি যেমন Liu Baonan’র উপরে বিশ্বাস রাখছেন।
তো, এইরকম কিছু জানতে হইলে বিশ্বাস করতে পারার জায়গাটা জরুরি (কিছু কোশ্চেন এবং সন্দেহসহই)। তা নাইলে কিছু জানতে পারাটা কঠিন কাজই মনেহয়।
নভেম্বর ২৭, ২০২১
– খাওয়া-দাওয়া (১) –
খাওয়া-দাওয়া তো পছন্দের জিনিস আমার। মানে, আমি অনেক খাইতে পছন্দ করি – ব্যাপারটা এইরকম না, বরং নতুন কোন খাওয়ার জিনিস দেখলে ট্রাই করতে ইচ্ছা করে, দেখি তো জিনিসটা কি রকম! এইটা মোটামুটি কন্ট্রোল-ই করতে পারি না আমি। 🙂 (ইংলিশে একটা টার্ম আছে মনেহয় এইটার।)
তো, ঢাকা শহরে ফুড-পান্ডা, হাংরিনাকি’র সার্ভিস একটা লেভেলে চালু হওয়ার পরে অনেকদিন আমি মেনু-সারফিং কইরাই টাইম পাস করছি। তো, দেখতে দেখতে ৪/৫টা জিনিস মনে হইছে।
১. খাওয়া-দাওয়া’র আইটেমের খুব বেশি ভ্যারিয়েশন আসলে নাই! 🙁 সবগুলা রেস্টুরেন্টেই নরমাল লাঞ্চ, ডিনার মেনু কম, রেগুলার খাবারের জায়গা হিসাবে উনারা আইডেন্টিফাইড হইতে চান না। সবাই যেন স্পেশাল অকেশনে রেস্টুরেন্টে খাইতে যাইতেছে, মানে, ভারী ভারী সব জিনিস। বার্গার, পিজা, ফ্রাইড চিকেন, বিরিয়ানি, তেহারি, রোল, কাবাব, এইগুলাই মেইন। ভাত-মাছ-সব্জি, রুটি… যে নাই – তা না, কিন্তু অইরকম সুবিধার না দামের তুলনায়।
২. এই না-থাকার কারণ মেবি দুইটা। এক হইতেছে এইগুলার দাম তো কম, মানে, ১০০-১৫০টাকার বেশি হওয়ার কোন কারণ নাই, হইলে সেইটা রেগুলার আইটেম থাকে না; কিন্তু একটা মিনিমাম অর্ডার প্রাইস যদি ২০০-২৫০ টাকা না হয় রেস্টুরেন্ট বা মিডিয়াগুলার পোষাইতে পারার কথা না।
আরেকটা জিনিস হইতেছে, এই যে পাতলা-ডাল, ঝোলের মাছ-মাংস আনা-নেয়া করাও ঝামেলার।
৩. যার ফলে, যেই মেনুগুলা তৈরি করতে সময় কম লাগে, আগে থিকাও হাফ-রেডি কইরা রাখা যায়, পরে নষ্ট হয় না এবং ক্যারি করতে সুবিধা হয়, সেই আইটেমগুলাই বেশি বেচা-বিক্রি হওয়ার কথা। হইতেছেও মেবি সেইটাই। মানে, আপনার সামনে ভাত খাওয়ার অপশন যদি না থাকে, আপনারে তো অন্য জিনিসই খাইতে হবে! এমনিতেও, খেয়াল করবেন ঢাকা শহরের রেস্টুরেন্টগুলাতে বিরিয়ানি, তেহারি, খিচুরিই শস্তা খাবার, ভাত-মাছ বরং দামি জিনিসই!
৪. তো, এইখানে ফুড-হ্যাবিটের জায়গাতে অটোমেটিক্যালি একটা চেইঞ্জ আসার কথা, যদি এখনো সেইটা স্পষ্ট না হইতে পারে, আর একটা জেনারেশন পরে আরো ভিজিবল হবে মেবি।… কিন্তু যেইটা খেয়াল করার জিনিস সেইটা হইতেছে, এই চেইঞ্জ আমরা নিজেরা চাইছি বইলা হইতেছে না, বরং চেইঞ্জ না হয়া উপায় নাই! ধরেন, আপনি সকালবেলা ছাতু (অনেকেই চিনবেন না, গুগুল সার্চ মারতে পারেন) খাইতে পছন্দ করেন, কিন্তু যদি ঢাকা শহরে এই জিনিস আপনি না পান; সব দোকানে যদি কর্নফ্লেক্স পাওয়া যায়, আপনারে তো ধীরে ধীরে সেইটা খাওয়ারই অভ্যাস করতে হবে, বা অভ্যাস হয়া যাবে।…
৫. এর বাইরে, আমার ধারণা, রেস্টুরেন্টগুলা এখনো অনলাইন ফুড-সার্ভিসে খাবার ডেলিভারি’র জন্য ডিজাইনড না, এমনকি যারা হোম-কিচেন শুরু করছেন, উনারাও মেনু বানাইতে পারতেছেন না, প্রাইসিং করতে পারতেছেন না, সামলাইতে পারতেছেন না ঠিকঠাকমতো। যার ফলে, আমার ধারণা, নেকস্ট স্টেপ হিসাবে যেইসব এলাকায় কাস্টমার-বেইজ তৈরি হইতেছে, সেইখানে ফুডপান্ডা/হাংরিনাকি/এইরকমের ডেলিভারি চ্যানেলগুলার ‘ক্লাউড-কিচেন’ মডেল তৈরি হবে, যেইখানে সবচে চালু ৫/৭টা আইটমেই বানানো হবে না, বরং যদি সহজে, কম-দামে খাইতে চান তাইলে এই ৫/৭টা আইটেমের বাইরে খাওয়ার কিছু পাইবেন না। যদি এক্সক্লুসিভ (ধরেন, বাইল্লা মাছের ঘাঁটা, মাষকলাইয়ের ডাল…) কিছু খাওয়ার চিন্তা থাকে কষ্ট কইরা বাসায় রাইন্ধা খান বা ফাইন-ডাইন কোন রেস্টুরেস্টে যান! মানে, দুই-চাইর’টা ডাইল-ভাত খাওয়াটা দিন দিন আরো দামি হয়া উঠার কথা।…
তো, খাওয়া-দাওয়া নিয়া আরো অনেক কথা তো আছে। পুরা একটা বই-ই লেখা যাইতে পারে, সিদ্দিকা কবিরের “খাদ্য, রান্না, পুষ্টি” বইয়ের ফুটনোট হিসাবে।
#########
জীবনানন্দ দাশের ‘কবিতার কথা’ বইয়ের একটা লেখাতে বা এই লেখাতেই মনেহয় একটা লাইন বা প্যারাগ্রাফ আছে এইরকমের (এখন আর খুঁজতে ইচ্ছা করতেছে না 🙁 ) যে, কবিতা লেখালেখি নিয়া তো অনেক কথা হইলো, এরপরে কবি কি করবেন? এইরকম… তো, উনি বলতেছিলেন, কবি অন্ধ, পাগল, খঞ্জদের (এইরকম ভারী ভারী শব্দ দিয়া শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে পাওয়ারলেস লোকজনদেরকে) নিয়া সমাজের ভিতর হারায়া যাবেন বা তার জার্নিটা শুরু করবেন।
স্কুল-কলেজে থাকতেই পড়ছিলাম; বেশ কাব্যিক জিনিস ছিল, কিন্তু অস্বস্তি লাগতেছিল এইরকম ক্ষমতাহীন মানুশদেরকে কেন লগে নিবেন? দুইটা জিনিস মনে হইতেছিল, এক, পাওয়ারে থাকা মানুশ-জন তো কবি’রে পাত্তা-টাত্তা দিবে না, কবি’র কথা শুনবেও না! 🙂 যে কোন রকমের ক্ষমতাই আমাদেরকে কিছুদূর পর্যন্ত কানা কইরা দেয় বা না-দেখার স্পেইসটারে ক্রিয়েট করে আসলে। তো, অই জায়গা থিকা কবি বা কবিতা সবসময় ক্ষমতা বা পাওয়ার-স্ট্রাকচারের লগে একটা বিপরীত রিলেশনের মধ্যে থাকার কথা; কারণ, কবিতার (অবশ্যই এইখানে ঝামেলা আছে, কোনটা কবিতা আসলে? 🙂 ) একটা কাজ হইতেছে কোনকিছুরে ভিজিবল করা, সেইখানে না-দেখার জায়গাটার লগে একটা ফাইট তার থাকারই কথা।
সেকেন্ড জিনিসটা হইলো, ও, ক্ষমতার লোকজন তারে নিবে না বইলা ক্ষমতাহীন লোকজনের কাছে যাইতে হবে? সেইটা না; বরং যখন আপনি একটা ভারনারেবল পজিশনে থাকেন, মেইনস্ট্রিমে থাকতে পারেন না, তখন সার্টেন জিনিস দেখা যায় সহজে; অই জায়গাগুলাতে সমাজের যেই বাদাইম্মা (আউটকাস্ট কইলে সুন্দর লাগতে পারে একটু) ক্লাসের লোকজন, তাদের লগে কবি’র দেখবেন একটা খাতির হয়া যায়। মানে, মিনিমাম একটা কবি-ভাব নিতে পারলেও অরা আপনারে অদের দলের লোক মনে করবে। এইরকম।
তো, জীবনানন্দ দাশ তো আসলে হিস্ট্রি, পলিটিক্স এইসব জিনিসরেও কবিতার ভিতর দিয়াই দেখতে চাইছেন, সেইখানে এইরকম ডাইরেক্ট কো-রিলেশনগুলা নিয়া কোন আলাপ নাই। যেমন, ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হইলো, ১৯৫২ সালের ঢাকার ভাষা-আন্দোলন নিয়া উনার কোন কমেন্ট মেবি নাই। (?) এইটা ঠিক উনার রাজনীতি না-থাকা না, বরং কবিতার বাইরে রাজনীতি’র কোন জায়গাতে যাইতে পারার মতো সামাজিক সাকসেস না-থাকার ঘটনাও হইতে পারে। মানে, আমি তো আমার ইমাজিনেশন দিয়াই আমি রিলেট করতেছি, একভাবে।
তখন অই প্যারাগ্রাফটার কথা মনে হইলো। (কোন সময় খুঁজতে ইচ্ছা করলে, খুঁইজা পাইলে, ভ্যারিফাই করা যাবে, ব্যাপারটারে।)
#########
‘ধর্মীয় কুসংস্কারের’ বিপরীতে অনেকগুলা সিউডো-সাইন্সের ‘নিয়ম’ আমাদেরকে শিখানো হয়, যেইগুলা খালি সত্য থিকা অনেক দূরেই না, বরং অনেকসময় একরকমের মিথের বাইরে তেমন কিছু না। এইটা মনে হইতেছিল, ভাষা ও শব্দের জায়গাতে। ছোটবেলায় স্কুলের গ্রামার বইয়ে যে শিখানো হইছে (এবং এখনো শিখানো হয় মনেহয়), বাংলা-শব্দ এইভাবে চেইঞ্জ হইছে: সংস্কৃত > প্রাকৃত > বাংলা; হস্ত > হত্থ > হাত… এইরকম।
এইখানে আমার কোশ্চেন আসলে দুইটা। এক হইলো, ভাষার শব্দ এমনে ডাইরেক্টলি চেইঞ্জ হয় নাকি? আমি তো দেখি যে, মজুর থিকা ছরমিক হইতে গিয়া শেষে হইছে লেবার। মজুর > ছরমিক > লেবার। মানে, একটা শব্দের লগে শুনতে মিল রাইখা শব্দ যে চেইঞ্জ হয় না – তা না, বরং শব্দ চেইঞ্জ হয় ভাষার ভিতরে কেমনে কইতেছেন, সেই রিলেশনের উপ্রে বেইজ কইরা। একই ধরণের শব্দ একটা মইরা গিয়া আরেকটা বাঁইচা উঠে।
আর এইটা হয় একটা ভাষার চিন্তা যখন আরেকটা ভাষার লগে মিলতে-ঝুলতে থাকে। বাংলা-ভাষার, বিফোর কলোনিয়াল পিরিয়ড, খাতির বেশি ছিল ফার্সির লগে, অন্য রিজিওনাল ল্যাঙ্গুয়েজগুলার লগে। অইগুলার শব্দ হুবহু না থাকলেও দেখবেন, ধারে-কাছেই আছে। বিচার ও আইনের ভাষা ইংলিশ হওয়ার পরে ফার্সির লগে বিচ্ছেদ হইছে একভাবে। অইটারে রিপ্লেইস করছে ইংলিশ। কেদারা থিকা হইছে চেয়ার। আর খালি শব্দই পাল্টায় নাই, বস্তুও পাল্টাইছে কিছুটা, এর ইউজ এবং মাজেজাও কিছুটা। এইগুলা হইতেছে কন্সিডার করার জায়গা। তো, এইটা একটা সন্দেহ আমার। যেমনে, ডাইরেক্ট চেইঞ্জ দেখানো হয়, সেইটা হুবহু তো না-ই, এইরকম লিনিয়ার কোন ঘটনাও না।
সেকেন্ড জিনিসটা আরেকটু বেশি ভয়াবহ। রক মনু’র লগে কথা কইতে গিয়া অইটা রেজিস্টার হইছে আমার মাথায়। উনি এই কোশ্চেনটা করতেছিলেন – সংস্কৃত’তে আসলে কি কেউ কথা কইতো? ফার্সি, ইংলিশ সরকারি-ভাষা হইলেও এইগুলা কথা-বলার ভাষাও; কিন্তু সংস্কৃত’তে লোকজন কথা কইতেছে – এইরকম নজির কি আছে কোথাও? যেহেতু রমিলা থাপারের “আর্লি ইন্ডিয়া” একটা স্ট্রং রেফারেন্স, সেইখানে এক জায়গায় উনি বলতেছিলেন, সংস্কৃত রাজ-দরবারের ভাষা হইলেও, মহিলারা এবং রাজ-দরবারের বাইরের লোকজন প্রাকৃত’তেই কথা কইতো। রাজ-দরবারে কি সংস্কৃত’তে কথা কওয়া লাগতো? বা এর বাইরে কেউ কি কইতো? যদি না কয়, তাইলে এই “সংস্কৃত > প্রাকৃত” – এই জেনোলজি তো ভুয়া একটা জিনিস হওয়ার কথা! (এমনকি মিথ কওয়ার ট্রাই করলেও মাইর দেয়া দরকার।)
আমি এইখানে কোন উত্তর দিতেছি না। কোশ্চেন দুইটাই রাখতেছি।
#########
এইরকম কথা তো আছে যে, একজন মানুশরে তার চারপাশের লোকজন বা বন্ধু-বান্ধব দিয়া চেনা যায়, বা তার সম্পর্কে ধারণা করা যায়। তো, আমার ধারণা, এইভাবে বুঝার জায়গাটা বেশ ওয়াইড। বরং পলিটিক্যালি বা আইডিওলজি’র জায়গা থিকা এইটা বেটার বুঝা সম্ভব, শত্রু বা দুশমন দেইখা।
মানে, একজন মানুশ পলিটিক্যালি বা আইডিওলজিক্যালি কোন জায়গাটার বিরোধিতা করতেছেন, কারে তার দুশমন হিসাবে আইডেন্টিফাই করতেছেন, সেইটা দেইখা তার নিজের পলিটিক্যাল পজিশনরে বেটার বুঝতে পারবেন।
তো, বাংলাদেশে, আজকের দিনে যারা নয়া বাকশালরে তাদের দুশমন বইলা ভাবতে পারতেছেন না, তারা মানুশ হিসাবে যত ভালো-ই হোক, উনাদের আইডিওলজি যতই সুন্দর ও কারেক্ট হোক, তাদেরকে পলিটিক্যালি বিশ্বাস কইরেন না। করা’টা ঠিক হবে না।
নভেম্বর ২৮, ২০২১
কথা আর কাজ
ঘটনা’টা যে কই পড়ছিলাম, মনে নাই এখন। (আর্লি Dementia লক্ষণ না হয়তো এইটা, অইভাবে ফ্যাক্ট বা রেফারেন্সরে ইম্পর্টেন্ট না ভাবার কারণেও হইতে পারে। আহমদ ছফা’র কোন লেখায় কি?) কিন্তু পড়ছিলাম। ঘটনা’টা এইরকম যে, ১৯৭১’র পরে বাংলাদেশ যখন আলাদা দেশ হইছে, তখন ইউনিভার্সিটির একদল স্টুডেন্ট নাটক বানাইতেছে যে, কেমনে দেশ গড়তে হবে! তো, এক বিদেশি দেইখা বেশ অবাক হইছে, কইতেছে তোমরা তো প্রাকটিক্যালি ‘দেশ গড়ার’ কাজটাই করতে পারো, নাটক কেন বানাইতেছো?
কবি ডব্লিউ এইচ অডেন একটা ইন্টারভিউ’তে কইতেছিলেন, রাজনীতি নিয়া আসলে কবিতা লেখার তেমন কিছু নাই; মানে, রাজনীতি তো কাজ করার জিনিস মেইনলি, কবিতা লেখা যাবে না – তা না, কিন্তু এর সিগনিফিকেন্স কমই, পলিটিক্সের জায়গাতে। (আমি উনার শর্ট-টাম ভিউ’টারে মানতে রাজি আছি। আইডিওলজিক্যাল পলিটিক্সের কথা উনি মিন করতেছিলেন না অই কথায়, কন্টেম্পরারি পলিটিক্যাল ইস্যু’র কনটেক্সটে বলতেছিলেন।)
তো, আমি বলতে চাইতেছি, দেখবেন, ফেসবুকে কথা কইতে কইতে টায়ার্ড লাগে অনেক সময়; অনেকে এইরকমও বলেন যে, ফেসবুকে ‘বিপ্লবী পোস্ট’ দিয়া কোন লাভ নাই! কিন্তু আমার এইটা মনেহয় না। কথা বইলা লাভ নাই না, বরং কথা-বলা’টা কখনোই এক্ট করা বা কাজ-করার জায়গাটারে রিপ্লেস করতে পারে না, কোনভাবেই। তাই বইলা কথা-বলা’টা অদরকারি জিনিস হয়া উঠে না, একটা লেভেল পর্যন্ত জরুরি অনেকসময়। মানে, কথা-বলতে পারাটা, বলতে-থাকা’টা দরকারি জিনিস।
কিন্তু কথা বলতে বলতে কি করতে পারেন আপনি? আরো কথা-ই বলতে পারেন, আরো হার্শ হইতে পারেন, আরো স্যাটায়ার করতে পারেন, কিন্তু কথা-বলার যেই ইমপ্যাক্ট সেই বাউন্ডারি’র মধ্যেই থাকবেন। একটা এক্ট করার যেই স্পেইস সেইটারে বড়জোর ইন্সপায়ার করতে পারেন। কিন্তু অইটা (কাজ-করাটা) আলাদা ঘটনাই।
কাজ-করা ব্যাপারটাও একইরকমের। অইখানেও আটকায়া যাওয়ার ব্যাপারটা আছে। কথা-বলার মতো কাজ-করারও একটা অভ্যাস আছে। কথা-বলা যেমন একটা কাজ-করা’রে ইন্সপায়ার করতে পারে; একইরকমভাবে কাজ করতে করতে নতুন কোন চিন্তার দেখা আপনি পাইতে পারেন।
[অনেক কষ্ট কইরা নিজেরে একটা ছবি বা গ্রাফ আঁকা থিকা নিজেরে বাঁচাইছি 🙂 ]
ব্যাপারটা এইরকম না যে, কথা একটা লাইনে চলতেছে, আর কাজ আরেকটা লাইনে চলতেছে। সেইটা তো আছেই। কিন্তু একই সাথে, একটা কথা আরেকটা কথা ও কাজ’রে যেমন এফেক্ট করতেছে, একটা কাজও একটা কাজ ও কথারে রিলিভেন্ট কইরা তুলতেছে।
[ (একটু শ্যালো-ই হয়তো উপমা’টা, তারপরেও বলি), হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন মিইলাই পানি জিনিসটারে তৈরি করতেছে, কিন্তু এই দুইটা যে কেমনে মিলতেছে, সেইটা ল্যাবরেটরি’র ঘটনা না। ]
মানে, কথা দিয়া কাজ কইরা ফেলার ড্রিম যেমন দেখা যাবে না, কাজ দিয়া কথারে বাতিল করার বাহাদুরিও রাখা যাবে না। দুইটারই আলাদা আলাদা ফাংশন আছে। আর কোনটা কথা দিয়া মোকাবেলা করতে হবে আর কোনটা কাজের ভিতর দিয়া করতে হবে – এই আলাদা আলাদা আন্দাজ থাকাটা দরকারি একটা পলিটিক্যাল কাজ, সবসময়।
#########
এইরকম একটা কোশ্চেন তো অনেক মানুশের মনেই আছে যে, দেশের মানুশ-জন এই অবৈধ সরকারের উপ্রে এতো খেপা, তারপরেও (এফেক্টিভ) কিছু করতেছে না কেনো?
(এইখানে ‘উন্নয়ন-চোদনা’দের আমি বাদ রাখতেছি; মিডিয়া-রিয়ালিটির আফিম খান যারা, এরা আছেন কিছু। নাই – এই কথা কইলে ভুল হবে। ১৯৯১’র ইলেকশনে এরশাদের জাতীয় পার্টিও ৩৫টা সিট পাইছিল। কিছু লোক এরশাদ’রে ভালোবাসতো না, বরং ক্ষমতার দালালি কইরা তখনো টাকা-পয়সা পাওয়া যাইতো, যেইটা এখন আর নাই। কোন জিনিস বাতিল হইতেও টাইম লাগে একটু।… আরো কিছু আলাপ আছে এইখানে।)
আমার ধারণা, তিনটা জিনিসের কথা-ই বলেন বা ভাবেন মানুশ-জন।
এক হইলো, ডরের কারণে। কথা-কওয়াই তো রিস্কি, আর কিছু করতে গেলে তো গুম কইরা দিবে! এই ডর সরকারি-মিডিয়া খুব ভালোভাবে ঢুকায়া দিতে পারছে আমাদের ভিতরে। এইটা যে সত্যি না – তা না, গুম তো করা হইছে লোকজনরে। কিন্তু আপনি যখন একটা অর্গানাইজড পলিটিক্যাল গ্রুপের লোক হবেন, সেইটা এতোটা সহজ না আসলে। নানান ধরণের চিল্লাচিল্লির বাইরেও কতো লোক’রে নজরে রাখবে, একটা লিমিটের বাইরে তো পসিবল না এইটা। মানে, এই ডর’টা ভ্যালিড না – এইটা আমার কথা না; বরং অর্গানাইজড না হইতে পারার ব্যাকগ্রাউন্ডটা থিকা এই ডর’টা আরো বেশি ভয়াবহ হয়া উঠতে থাকার কথা।
দুই হইলো, কিছু যে করবে মানুশ, এইরকম জায়গা কই? কোন পলিটিক্যাল ফোর্স তো নাই। বিএনপি’র লোকজনের নামে মামলা দিয়া, মিডিয়া ব্ল্যাক-আউট কইরা দিয়া, নেতাদের গুম কইরা, জেলে ঢুকায়া পার্টির মাজা ভাইঙ্গা দেয়া হইছে। ফাঁসি দিয়া, খুন কইরা, জামাত বইলা কোন দল তো রাখা হয় নাই। জাতীয় পার্টি, সিপিবি, এইগুলা তো বি-টিমই। হেফাজতরে যেইভাবে জঙ্গি-ব্রান্ডিং করা হইছে লোকজনের ডর ভাঙ্গবে কিনা সন্দেহ (ভ্যালিড গ্রাউন্ড আছে, কি নাই – এর বাইরেই)। নতুন দল হিসাবে নুরদের দাঁড়াইতে টাইম লাগবে। পারবে কিনা এই ভরসাও করা যাইতেছে না, কারণ পুলিশ-আমলা-মিলিটারি-আদালত-মিডিয়া সব জায়গায় কম-মেধার এবং পালা-কুত্তার মতো লোকজন দিয়া ভরা, যারা অবৈধ সরকারের পারপাসই সার্ভ করবে, সবসময়। নিয়ম-কানুন বইলা তো কিছু নাই-ই দেশে, অন্যায় করার পরে মানুশের লজ্জা-শরমও নাই এখন।… যার ফলে যেই লোকজন (শহরের মিডল-ক্লাস, শিক্ষিত-সমাজ, বিবেকবান 🙂 ) এর এগেনেস্টে একটা পলিটিক্যাল ফোর্স হিসাবে দাঁড়াইতে পারে, তারাও ক্ষমতার ‘উচ্ছিষ্টভোগী’ হয়া থাকাটারেই বেটার মনে করে।…
কিন্তু এই ডর এবং জেল-জুলুম-নির্যাতনের পরেও আরেকটা বড় কারণ এইখানে আছে বইলা আমি মনে করি। লোকজন ডরের কারণে বা পলিটিক্যাল কোন ফোর্স না থাকার জায়গা থিকা চুপ কইরা তো আছেই; কিন্তু একইসাথে যেই ইভিল-স্ট্রাকচার’টা এই জুলুমের শাসনটারে নিয়া আসছে এবং টিকায়া রাখছে, সেইটার এগেনেস্টে, কি হইতে পারে – এর কোন দিশা বা ভিশন আমাদের সামনে নাই।
মানে ধরেন, ফ্রি-ফেয়ার একটা ইলেকশন কেমনে হইতে পারে? কেয়ার-টেকার গর্ভমেন্ট আবার? – এইটারে যে মেনিপুলেট করা যায়, সেইটা তো দেখছি আমরা। জাতিসংঘের আন্ডারে ইলেকশন? – একই সমস্যাই কি হবে না সেইটা, ইন্টারনাল অবিশ্বাসের সমাধান কি এক্সাটার্নাল ফোর্স দিয়া পসিবল? কনক্রিট কোন প্রপোজাল/পরস্তাব কি দেখছেন কারো, যেইটা করা সম্ভব? (নাই।)
আচ্ছা, তারপরও ধরেন, হইলো একটা ফেয়ার ইলেকশন। নতুন গর্ভমেন্টের ফর্মেশন কি হবে? কোন জায়গাটাতে ডিফরেন্ট হবে, যেইখানে আরেকটা বাকশাল-ই আমরা পাবো না? কিছু খারাপ-লোক সরায়া ভালো-লোক বসাইলেই কি টিইকা থাকবে? ক্ষমতার স্ট্রাকচারটাতে যদি খারাপ-লোক হওয়ার চান্স থাকে, ভালো-লোকরা কি টিকতে পারবে তখন? মানে, এমন কোন সরকার-ব্যবস্থার প্রপোজাল/পরস্তাব কি আছে, যেইটা বাংলাদেশের মানুশের এটলিস্ট বেসিক হক’গুলার গ্যারান্টি দিতে পারবে? (নাই।)
এখন এইগুলা নিয়া কিছু জিনিস ঠিক করতে পারলেই মানুশ-জন ঝাঁপায়া পইড়া এই সরকার’রে ক্ষমতা থিকা নামায়া দিবে, বা দিতে পারতো – এইটা কইলে তো ভুল-কথাই হবে। বরং আমি বলতেছি, সামনে একটা মঞ্জিল বা ডেস্টিনেশন থাকলে, মানুশ পথ চলতে শুরু করার ভরসা পাইতে পারে। যত স্পেসিফিক হওয়া যাবে, তত মানুশের ভরসা বাড়তে থাকবে। এখন পর্যন্ত যা আলাপ আছে আমাদের সামনে, সেইগুলা ১৯৯১ সালের কনটেক্সটেই আটকায়া আছে। ১৯৯১ সালের আলাপ দিয়া ২০২১ সালের ইস্যুগুলার সমাধান হবে না। যারা এই জুলুমের সময়ে পলিটিক্যালি এক্টিভ আছেন, থাকতেছেন, আমার কথা হইতেছে তাদেরকে এই থার্ড পয়েন্টটাতে আরো স্পেসিফিক হইতে হবে আসলে, মানুশের ভরসা পাইতে হইলে, একটা গণ-আন্দোলন বা ম্যাস-মুভমেন্টের জায়গা তৈরি করতে হইলে।
নভেম্বর ২৯, ২০২১
আধ্যাত্মিকতা বা মারফতি জিনিসটা নিয়া ক্রিটিকের বাইরেও কিছু ডর আমার আছে। স্পেসিফিক্যালি দুইটা ডর।
এক হইলো, জেনারেল পারসেপশনে এই জিনিসটা তো সবকিছুরে তকদিরে বা একটা নিয়তির উপ্রে ছাইড়া দেয়। সেইটা প্রাকটিক্যাল লাইফে কি ঘটতেছে – সেইটারে বাতিল করে না অবশ্যই, কিন্তু একটা ‘গ্রেটার কজ’-এর লগে মিলায়া যা ঘটতেছে, তারে কিছুটা হইলেও আন-ইম্পর্টেন্ট বা অ-দরকারি বানায়া ফেলে। তো, একভাবে যে কোন পলিটিক্যাল জুলুমরে ‘সহনশীল’ বানাইতে গিয়া ‘একস্টেবল’ বানায়া ফেলতে পারে। যে কোন আইডিওলজি’রই এই রিস্কটা আছে। তবে খেয়াল রাখাটা দরকার আর কি!
সেকেন্ড হইলো, একটা কো-রিলেশন মেবি আছে জুলুম বা প্রেশার আর ‘বৈরাগী’ হওয়ার। আগের দিনে, মাঝ-বয়সে অনেক লোকজন ‘সমাজ-সংসার’ ছাইড়া দিয়া চইলা যাইতো, মানে, এইরকম ঘটনার কথা শুনছি আমরা, আশে-পাশে দেখছিও। (কিছুদিন আগেও লোকজন ‘তাবলিগে’ চইলা যাইতো তো!) পরে এইগুলা ‘দুর্বল-মনের’ পরিচয় হয়া যাওয়ার পরে বা ‘গায়েব হয়া যাওয়ার অপশন কইমা যাওয়ার পরে একভাবে কইমা গেছে।…
কিন্তু এখনকার বাংলাদেশে যে এক রকমের ‘সুফি-প্রেম’ জাইগা উঠতেছে সেইটা পলিটিক্যাল জুলুমের বাই-প্রডাক্ট হিসাবে হইতেছে – এই কথা বললে বেশিই বলা হবে, কিন্তু একইভাবে এর লগে কোন রিলেশন নাই – সেইটারে বাতিল কইরা দেয়াটাও কোন কাজের জিনিস হবে না মনেহয়।
আমি বলতে চাইতেছি, কোন একটা ফিলোসফিক্যল চিন্তার ধারা যখন সমাজে ছড়াইতে থাকে, একসেপ্টেড হইতে থাকে, তখন এর কোর অফারিংসের বাইরেও সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থাগুলার লগে কেমনে রিলেট করতেছে, সেই জিনিসগুলারে আমলে নেয়া দরকার।
#########
মাস্ক
লিফটের সামনে দাঁড়ায়া আমি আর আরেকজন কথা বলতেছিলাম। কথা বলতে বলতে লিফট চইলা আসলো। লিফটে উঠার পরে কথা তেমন নাই আমাদের। লিফটে আগেই কয়েকজন ছিলেন। দুয়েকটা ফ্লোর নামার পরে আরো কিছু মানুশ-জন উঠলেন। এর মধ্যে দুয়েকজন দেখি আমার দিকে তাকায়া আছে। আমি যার সাথে কথা বলতেছিলাম, তার দিকে তাকায়া দেখলাম, উনি গলায় ঝুলানো মাস্ক’টা তুইলা নাক ঢাকলেন। তখন বুঝলাম, ও, এই ঘটনা! দুইজন যখন ছিলাম তখন আমরা মাস্ক দিয়া নাক ঢাকি নাই। কিন্তু এখন যখন আরো অনেক মানুশ আছে, আর সবাই মাস্ক পইরা আছেন, আমাদেরও তো নাক ঢাকা দরকার। তো, আমরা মাস্ক পইরা নিলাম।
#########
আমরা তো ধরেন গত কয়েক মাস ধইরাই বলতেছি, বলছি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার পলিটিক্যাল সিগনিফিকেন্সটা কোন জায়গাটাতে। এখন আরো অনেকেই বলতেছেন, ইমোশনাল, পপুলিস্ট কথা-বার্তাও হইতেছে অনেক। এইসব আলাপ কোন শরম বা কালচারাল-ইনফিরিয়রিটি ছাড়া করতে পারাটা বেটার।
তো, এইসব দেইখা; আর স্টুডেন্টদের ডরের চোটে ‘মাদার অফ হিউমেনিটি’র নাম না নিতে পাইরা ‘রাষ্ট্র-ব্যবস্থা’ ভাঙ্গতে হবে টাইপের সিউডো-এর্নাকিস্ট আবেগ দেইখা মনে হইতেছিল* বাংলাদেশে কোন লিডার আছেন যিনি শেখ হাসিনারে নাম ধইরা, একিউজ কইরা কথা বলতে পারবেন? (গালি-গালাজ অনেকেই করেন, কিছু লোক ক্রিটিকও করতে পারেন, কিন্তু) অথরিটি হিসাবে তারে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন?
জাফরউল্লাহ, কামাল হোসেন বা কারোরই অই পলিটিক্যাল লিগাসি নাই, সাহসটা থাকার কথা না, নাইও। তো, আজকে যারা খালেদা জিয়ারে নিয়া চিন্তিত আছেন, উনার রাজনীতির পক্ষে কথা বলতেছেন, উনার লিগাসি’রে ফলো করতে চাইতেছেন, তাদের ভাবতে পারা দরকার, ‘খালেদা জিয়া কি করতেন’ – এইরকম জায়গা থিকা কথা-বলার ট্রাই করা দরকার। মানে, উনি ‘রাষ্ট্র-যন্ত্র’ বদলাইতে হবে টাইপের ফানি কথা এটলিস্ট বলতেন না। বা উনার পলিটিক্যাল পজিশনটা মাথায় রাখতে পারলে, এইরকম বলা’টা যে খুবই ফানি জিনিস, এইটা আরো সাফ সাফ বুঝতে পারতাম মনেহয় আমরা।…
………
*এইগুলা তো এক্সপেক্টেডই আসলে যে, মিডিয়াগুলা এখন বাস-মালিক ভার্সেস স্টুডেন্ট ‘বির্তক’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, যেন এই এই নিয়ম করলে সমাধান হয়া যাবে! শেয়াল আর মুর্গি খাবে না! 🙂 আর কয়েকটা বাচ্চা পোলাপাইনরে টিসি দেয়া হবে, বাপ-মা’রে থানায় নিয়া ধমক দিবে, যেইগুলা আমরা জানতে পারবো না…
#########
নতুন পেরমে পড়লে দেখবেন খালি নাম ধইরা ডাকতে ইচ্ছা করে (মানে, করতেই হবে – এইটা জরুরি না, কিন্তু অনেক সময় হয় এইরকম, নাম তো একটা লাগেই); তো, আন্দোলন-সংগ্রামেও এইরকম, আগে নাম ধইরা বলতে হবে; যেমন ধরেন, আইয়ুবশাহী, এরশাদ হারামজাদা, এইরকম নাম ধইরা বলা লাগছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত নাম না ধইরা ডাকতে পারতেছেন, ততক্ষণ আপনার পেরেম (পড়েন, আন্দোলন) হইতেছে না বস! হইতে পারবে না কোনসময়! 🙂
নভেম্বর ৩০, ২০২১
– ফিল-গুড এক্টিভিজম (২) –
ভালো-মানুশের শত্রু যেমন খারাপ-মানুশ না, বরং বেশিরভাগ সময় এভারেজ মানুশ-জন। নতুন চিন্তার শত্রু যেমন পুরান-চিন্তা বা ঐতিহ্য না, বরং status quo বা যা-আছে-তাই ধইরা রাখতে চাওয়া। কবিতার শত্রু যেমন অ-কবিতা বা কবিতা-পছন্দ-করেন-না এমন লোকজন না, বরং ট্রাডিশনাল সিউডো-কবিতা। এইরকম যে কোন আন্দোলনের দুশমন হইতেছে ফিল-গুড এক্টিভিজম।
কিছুদিন আগে কইছিলাম যে, ফিল-গুড এক্টিভিজম খারাপ না, বিপ্লবী-হওয়া বা ফেমিনিস্ট-হওয়া ফ্যাশনেবল বইলাও যদি কেউ পাবলিকলি এইগুলা হইতে চান, সেইটা মিন করে যে, এর সোশ্যাল ভ্যালু আছে; একটা করাপ্ট সিস্টেমরে মাইনা নেয়ার চাইতে বা মিসোজনিস্ট হওয়ার চাইতে লোক-দেখানি বিপ্লবী হওয়া বা ফেমিনিস্ট হওয়া বেটার। কিন্তু এইটা প্রাইমারি স্টেইজের ঘটনা।
যদি কোন মুভমেন্টরে একটা ম্যাচিউর লেভেলে নিয়া যাইতে চান, তাইলে এই ফিল-গুড এক্টিভিজমের জায়গা থিকা বাইর হইতে হবে। “আমরা কলেজে, ভার্সিটিতে পড়ার সময় এই করছিলাম, সেই করছিলাম…” বলার জন্য রাস্তায় নামা যাবে-না না, বরং অইটা ফিল-গুড এক্টিভিজমের একটা ঘটনা, যে কোন আন্দোলন দাবি-আদায়ের আন্দোলন সেইটা হইতে পারবে না, যতক্ষণ না এইটা ফিল-গুড এক্টিভিজমের খপ্পর থিকা বাইর না হইতে পারবে।
[মানে, যৌবন থাকতে দুয়েক্টা পেরেম সবাই করে; খুশিতে-ঠেলায়-ঘুরতে। ‘যাই একটা পেরেম কইরা আসি’র মতো ‘যাই একটা আন্দোলন কইরা আসি’ করা যাবে-না না, কিন্তু এইটা বুঝতে পারাটা ভালো যে, অনেক সময় এইভাবে শুরু হইলেও এইগুলা পেরেম না (পড়েন, আন্দোলন না) কোন।]
#########
একজন ইন্টেলেকচুয়ালের কাজ ক্ষমতার দালালি করা থিকা দূরে থাকা-ই না খালি, পপুলিস্ট হওয়ার হাত থিকা নিজের চিন্তারে বাঁচায়া রাখাটাও তার কাজ।
অনেকরেই দেখবেন হাতে মাইক্রোফোন ধরায়া দিলে উল্টা-পাল্টা কথা কইতে শুরু করে। নিজেরে সামলাইতে পারে না। অইটা অনেক সময় পপুলিজমের একটা ঘটনা; যে, আমার তো এমন কিছু কইতে হবে, যাতে লোকজন খুশি হয়!
এখন আপনার কথা শুনলে লোকজন খুশি হইতে পারবে না, বা আপনি পপুলার হইতে পারবেন না – ঘটনা এইটা না; কিন্তু কোন-একটা-কিছুরে সত্যি মনে কইরা বলা (সেইটা ভুল হইলেও) আর কাউরে খুশি করার জন্য বলা (সেইটা ঠিক হইলেও) – দুইটা যে একই জিনিস না, এই বুঝ-থাকাটা তো মিনিমাম একটা জিনিসই আসলে।…
Leave a Reply