মার্চ ১১, ২০২২
এলাকার একটা ফেসবুক গ্রুপে আমি মেম্বার হিসাবে আছি। ফেসবুক আমার ধারণা লোকেশন জিনিসটারে বেইজ কইরাই নিউজফিডে বেশি পোস্ট সাপ্লাই দেয়, যেই কারণে অই গ্রুপের পোস্ট নিয়মিতই দেখতে পাই আমি। ভালো জিনিসই অইটা।
অইখানে কয়দিন পরে পরেই ‘জনসচেতনতা-মূলক’ পোস্ট দেন অনেকে। মানে, ফান করতে করতে একটু টায়ার্ড লাগে তো মাঝে-মধ্যে আমাদের, একটু ‘সিরিয়াস’ হইতেও ইচ্ছা করে।
তো, এর মধ্যে একটা কমন ‘সাবধানতা-মূলক’ পোস্ট হইতেছে, রিকশাঅলারা মিছা কথা কইয়া টাকা নিতেছে। নানান কাহিনি কয় এরা, নিজের অসুখ, ফ্যামিলির সমস্যা, মেয়ের বিয়া, ছেলের পরীক্ষা, ছোট বাচ্চা… এইরকম। আর একই রিকশাঅলা একেকবার একেক কাহিনি বইলা জালিয়াতি কইরা টাকা নিতেছে। মানে, এইরকম কোন সমস্যা উনাদের নাই! ভুয়া কাহিনি এইগুলা!
অনেক সময় রিকশাঅলাদের চেহারার বর্ণনাও দিয়া রাখেন, যাতে লোকেট করতে পারেন অন্যরা।
কাহিনিগুলা যে সত্যি না – তা তো না, এইরকম আমার লগেও হইছে। একই রিকশাঅলা কিনা খেয়াল করি নাই। কারণ উনারা যখন এইরকম কথাগুলা বলার মতো ভারানারেবল হয়া উঠেন, তখন উনাদের চেহারার দিকে তাকানোর সাহস আমি করতে পারি না।
লোকটা মিছা-কথা বলুক আর সত্যি-কথা, তারে যে এইরকম বলা লাগতেছে, এইটা বিচার করতে পারার লাইগা যেইরকমের ডাম্ব না, বরং শিমার হইতে হয়, সেইটা অনেক কঠিন কাজ তো!
কিন্তু ‘নরমাল’ হিসাবেই নিতে পারতেছি আমরা ঘটনাগুলারে যে, চোর ধরতেছি! আমার ধারণা, মিডিয়ার ‘জনসচেতনতা’ নামের জিনিসগুলা হেল্প করতেছে আমাদেরকে। সত্যি-মিথ্যার নামে একটা সিউডো-মোরালিটি দিয়া মানুশের দুরাবস্থারে ইগনোর করার রাস্তা ওপেন কইরা দিয়া। ভালোই মনেহয় এইটা। ভালো না?
#########
ল্যাঙ্গুয়েজ আর লিটারেচার
এইগুলা নিয়া তো অনেক কথাই আমি কইছি, পরেও আরো বলবো হয়তো। মানে, এইখানে তো অনেক কথাই বলার আছে আমার। তো, এখন একটা জিনিস নিয়া বলি।
এইখানে খুবই ভুল একটা জিনিস চালু আছে যে, কবি-সাহিত্যিকদের লেখা বা ভাষা যেন কোন ভাষারে বাঁচায়া রাখে বা রাখতেছে। কিন্তু ঘটনা বেশিরভাগ সময় উল্টাটাই ঘটে। একটা ভাষার ট্রাডিশন বরং কিছু কবি-সাহিত্যকদেরকে বাঁচায়া রাখে। দুনিয়াতে কোন ভাষায় লোকজন কথা কয় বা ইউজ করে বইলাই অই ভাষার সাহিত্য আমরা পাই। ল্যাটিন, সংস্কৃত বা আরো অনেক ভাষায় কেউ লেখে না, কারণ অই ভাষাগুলা ডেড। পড়ার বা শোনার কোন লোক তো নাই! তো, একটা ভাষার লোকজনই অই ভাষার রাইটারদেরকে বাঁচায়া রাখেন, উল্টাটা খুব কমই হয়।
কম রাইটারই ভাষার বেরিয়ারটারে পার হয়া গিয়া বা এর ভিতর দিয়া একটা ইউনিভার্সালিটিতে পৌঁছাইতে পারেন। ইভেন এইটা করতে হইলেও ভাষার জায়গাটাতে ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ হয়া এইটা হয় না, বরং উনাদের ‘স্বতঃস্ফূর্তা’টা কোন না কোন কালচারাল পলিটিক্সের লগে এলাইন হইতে হয়। মানে, ঘটনাটা এতোটা ‘নিয়ত-নির্ভর’ জিনিস না, বা কিছু দূর পর্যন্ত লোকেট তো করতে পারি আমরা।
বাংলা-ভাষার ব্যাপারেই দেখেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আধুনিক বাংলা-ভাষা’ তৈরি করেন নাই, বরং কলোনিয়াল আমলে কলকাতার বাবু-সমাজের ভাষাটারে উনি লেখায় নিয়া আসছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র হিস্ট্রিক্যাল কারণেই সেইটা পারেন নাই। বঙ্কিমের লেখাপত্রে এইরকম জিনিস পাইবেন যে, যেই বাংলা-ভাষার ওকালতি উনি করতেছেন, সেই বাংলা’টা উনি লেখতে পারতেছেন না। কারণ লিখিত বাংলা-ভাষার শুরুই হইছে একটা ডিকশনারি-বেইজড জায়গা থিকা, উনি অই ‘শুদ্দ ভাষার’ কারিগর। সাহিত্য মানে হইতেছে শিক্ষিত-সমাজের একটা জিনিস – এই ধারণার বাইরে যাইতে পারাটা সহজ ছিল না উনার টাইমে। যার ফলে বঙ্কিমের বাংলা শাস্ত্র-সম্মত একটা জিনিসই হইতে চাইছে। রবীন্দ্রনাথ এইখানে কলকাতার বাবু-সমাজের এন্ট্রি দিছেন। এই কারণে কলকাতার কলোনিয়াল টাইমের রেফারেন্স ছাড়া এই বাংলা-ভাষা অচল।
ভাষা সবসময় একটা কালচারের রেফারেন্স। অই কালচারগুলা যখন সমাজ থিকা নাই হয়া যায়, ভাষাতেও বাতিল হইতে থাকে। লেখাগুলা ‘পুরান’ হইতে থাকে, রাইটার’রাও মারা যান। রবীন্দ্রনাথ যেই কালচারের চৌকিদার ছিলেন, অইটা এখন ‘আধুনিক’ তো না-ই, বরং বাংলা-ভাষার সবচে বড় বেরিয়ার, দুশমন। নয়া ব্রাহ্মণবাদের শেষ অজুহাত হইতেছেন রবীন্দ্রনাথ। উনার গল্প-কবিতা-গান ভালো কি খারাপ, এর চাইতে জরুরি আলাপ হইতেছে বাংলা-ভাষার বেইজ হিসাবে কলকাতার বাবু-সমাজের কালচাররে, এলিটপণারে টিকায়া রাখার রেফারেন্স পয়েন্ট হইতেছে উনার লিটারেচার।
পরমিত-বাংলায় লেখা যাবে-না না, অই কালচারাল বেইজটারে মাইনা নেয়া যাবে না। তাইলে নিজেদের কথা কইতে পারবো না আমরা। বারবার আটকায়া যাবো।
তো, এই কলোনিয়াল বাংলারে বানানো হইতেছে ‘নরমাল’। এর বাইরে গিয়া আপনে কবিতা লেখতে পারবেন, কারণ অইটা হইতেছে ‘কাব্য-ভাষা’ [মাই ফুট!]। বা নাটকের সংলাপে ‘আঞ্চলিক-ভাষা’ [আরেকটা বলদামি এইটা] ইউজ করতে পারবেন। কিন্তু সিরিয়াস-লেখা আপনারে কলকাতার বাবুদের মুখের বুলি’র মতো ‘বাংলা-ভাষায়’ লেখতে হবে!
Continue reading →