ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
– বাংলাদেশের বইয়ের বাজার –
যে কোন আলাপে প্রিমাইজটা ইম্পর্টেন্ট, যে কোন বেইজগুলার উপরে দাঁড়ায়া আপনি কথাগুলা বলতেছেন। অই প্রিমাইজগুলা বদলাইলে আলাপের ধরণও বদলায়া যাবে। প্রিমাইজগুলা স্ট্যাটিক না, বদলাইতেই পারে, কিন্তু অইগুলা ঠিক না কইরা নিলে কোন আলাপ করাটাও মুশকিল। তো, মোটাদাগে, আমার আলাপের প্রিমাইজগুলা হইতেছে এই ৫টা:
১. বাংলাদেশে বই পড়ে স্টুডেন্টরাই। এই গ্রুপটাই সবচে বড় কাস্টমার। বইয়ের বাজারের একটা বড় অংশও হইতেছে টেক্সট বুক। ভার্সিটির না, বরং স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার বই।
২. বাংলাদেশে এই টেক্সট-বইয়ের বিজনেসটা করে গর্ভমেন্ট। এখন যে কোন বিজনেস যদি গর্ভমেন্ট করে, সেইটা খারাপ-বিজনেস হইতে বাধ্য। খালি প্রফিটেবিলিটির জায়গা থিকাই না, প্রডাক্টিভিটি, বিজনেস অপারেশনসের জায়গা থিকাও এইটা বাজে এবং দুর্নীতিরও বড় একটা ঘটনা। আর এইটা পলিটকাল কন্ট্রোলের টুল তো অবশ্যই। এই টেক্সট-বুক বিজনেসের ভিতর দিয়াই গর্ভমেন্ট বাংলাদেশের বইয়ের মার্কেটরে কন্ট্রোলের মধ্যে রাখে।
৩. এর বাইরে গল্প-কবিতা-উপন্যাস-ননফিকশনের বই চলে না – ব্যাপারটা এইরকম না। কিন্তু এই ধরণের বইগুলা দরকারি-জিনিস হয়া উঠতে পারে নাই। এমনকি ফ্যাশন হিসাবেও বাংলা-কবিতা বা ফিকশন পড়াটা স্মার্ট কোন ঘটনা না। ইংলিশ-বই ব্যাপারটাই স্মার্ট এবং কম-বেশি দরকারি ঘটনাও। মানে, এমন কোন বাংলাদেশি রাইটারের বই নাই, যেইটা না পড়লে অনেককিছু আপনি মিস কইরা যাবেন। বা কোন বাংলাদেশি রাইটারের বই নাই যেইটা বাংল-ভাষার কমিউনিটির বাইরে ইন্টারন্যাশনাল কোন ইন্টারেস্টের ঘটনা হয়া উঠতে পারতেছে। বাংলাদেশে গল্প-উপন্যাস-কবিতার যেই নিশ-মার্কেটটা আছে, অইখানেও ইন্ডিয়ান-বইই ডমিনেন্ট। নন-ফিকশন ক্যাটাগরিতেও ইন্ডিয়ান-বাংলা বই যেহেতু প্রাচ্যবিদ্যা বা ইন্ডিয়ান-কালচারের লগে কানেক্টেড, প্রডাক্ট ক্যাটাগরি এবং রিচনেসের জায়গা থিকা বাংলাদেশের বাংলা-বই খালি কমই না, মোটামুটি নাই-ই আসলে।
৪. আর এইটা খালি সাহিত্য-ধারণার এবং কনটেন্টের রিচনেসের ঘটনাই না, ভাষার প্রাকটিসের লগে রিলেটেড একটা ফেনোমেনা-ই। বাংলা-ভাষা লিখিত হওয়া শুরু করছে কলোনিয়াল পিরিয়ড থিকা, অই সময়ে কলকাতায় যেই সাহিত্য-ভাষা তৈরি হইছে অইটাই এখনো পর্যন্ত “বাংলা-ভাষা”। অইটা কম-বেশি চেইঞ্জ হইলেও এর বাইরে গিয়া নতুন সাহিত্য-ভাষা তৈরি হইতে পারে নাই এখনো। অই প্রাকটিস ও ধারণাটা খালি একটা অভ্যাসের জিনিস না, কনশাস বোঝা-পড়ারও ঘটনা, যেইটা সরতে টাইম লাগার কথা। মানে, বাংলা-ভাষা এবং বাংলাদেশের রিডার – এই জায়গাটাতে একটা ডিসকানেকশন আছে। যেইটার কারণে কনটেন্টের জায়গাটাও সাফার করার কথা।
৫. আরেকটা ঘটনা হইতেছে বাংলা-বইয়ের বাজার বাংলাদেশের বাইরে নাই-না, অইটা প্রডাক্ট হিসাবে অই লেভেলে এক্সিলারেটেড হইতে পারে না, যেইখানে ইন্টারন্যাশনাল কোলাবরেশন পসিবল হইতে পারে। কনটেন্টের বাইরেও ফিনান্সিয়াল লেনদেনের প্রবলেম এইখানে আছে, যার জন্য ই-বুক এবং অডিও-বুক বিজনেস মিনিমাম কোন জায়গাতে রিচ করতে পারে নাই।
যদিও এই প্রিমাইজগুলা আরো ব্যাখ্যা করা যায় এবং নতুন কিছু অ্যাড করা যায়, কিন্তু আপাতত, এইটুক রিলিভেন্ট পয়েন্ট হিসাবে থাকতে পারে। আর চিন্তার জায়গাতে চাইলে এন্ডলেসলি যেমন সামনের দিকে যাইতে পারি আমরা, পিছনের দিকেও যাইতে পারি তো। এই কারণে মিনিমাম এই কয়েকটা পয়েন্টরে ধরে নিতেছি।
এই প্রিমাইজগুলার লগে কয়েকটা প্রেজেন্ট কন্ডিশন বা অবজারভেশনও অ্যাড করতে চাই আমি। যেই অবজারভেশনের বেসিসে কয়েকটা ডিসিশানের কথা আমি বলতে চাই। বাংলাদেশের বইয়ের বাজার নিয়া আমার অবজারভেশন মোটাদাগে ছয়টা –
১. বুক পাবলিকেশন এবং বই-ছাপায়া দেয়ার বিজনেস যে একই ঘটনা না – এই আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা এখনো ক্লিয়ার না। এখনো পর্যন্ত বই ছাপানোটারেই “পুস্তক প্রকাশনা” বিজনেস বইলা ধইরা নেয়া হয়। কেউ একজন একটা বই লিখলো আপনি সেইটা ছাপায়া দিলেন – এইটাই হইতেছে পাবলিশারের কাজ। এইটা সরকারি-বই ছাপানো জায়গা থিকা আসছে বইলাই আমার ধারণা। বাংলাদেশে “সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশনা” অইটারই একটা বাই-প্রডাক্ট, যার ভিতর দিয়া পাবলিশার হিসাবে নিজেদেরকে ক্লেইম করা যায়, সরকারি অফিসে বই সাপ্লাই দেয়া যায় এবং সরকারি-ছাপার কাজ পাইতে সুবিধা হয়। এমনকি বই ডিস্ট্রিবিউশন করাও পাবলিশারের কাজ না!
২. বাংলাদেশে বুক ডিস্ট্রিবিউশন কোন সিস্টেম নাই। হাইস্কুল, মাদরাসা এবং কলেজ লেভেলের নোটবই এবং বিসিএস পরীক্ষার জন্য কারেন্ট এফেয়ারস বই-ই মোটামুটি জেলা-উপজেলা শহরগুলাতে পাওয়া যায়। এর বাইরে বই বেচাকেনার মেইন জায়গা হইতেছে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় বাংলা একাডেমির বইমেলা। তা নাইলে ঢাকায় দুই-চাইরটা বইয়ের দোকান এবং অনলাইনে রকমারি-তে বই বেচা।
৩. বাংলাদেশে নানান পদের বইয়ের কোন ডিমান্ড নাই বা রিডার নাই, নাকি বই-ই নাই – এই নিয়া কিছু তর্ক থাকলেও, এইটা ‘ডিম আগে না মুর্গি আগে’র ঘটনা না এতোটা। বরং বই জিনিসটারে বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিডের লগে রিলিভেন্ট কইরা তোলা যায় নাই।
৪. আর এরজন্য রাইটারদের রয়ালিটির বেবস্তা করলেই সমস্যার সমাধান হয়া যাবে না আর কি! 🙂 বা রাইটারদেরকে বাজারি-বই লেইখা “স্বাবলম্বী” হইতে হবে – এইরকমও না। একজন রাইটার একইসাথে ভালো-রাইটার এবং পপুলার-রাইটার হইতে পারেন, কিন্তু ক্যাটাগরি হিসাবে দুইটা আলাদা ঘটনাই। একজন ভালো-রাইটার বা ভালো-বই অবশ্যই একটা ঘটনা। সৈয়দ মুজতবা আলী বা বিষাদ-সিন্ধু এখনো বাংলাদেশের বেশি-বেচা বইগুলার লিস্টে থাকার কথা।
৫. কিন্তু এইটা একজন সেলিব্রেটি রাইটার আবিষ্কার করতে না-পারার রেজাল্ট না, বরং একটা একো-সিস্টেম তৈরি না-করতে পারার ফেইলওর। খালি ইকনোমিকালি না, পলিটিকাল জায়গা থিকাও। যেইটা বাংলাদেশে তৈরি করার কোন ইনিশিয়েটিভও নেয়া হয় নাই। এবং অই জায়গাগুলাতেও কথা-বলার ও নজর দেয়ার নজিরও নাই তেমন। Continue reading