কবিতা: নভেম্বর, ২০২২

নওগাঁ শহর

যাওয়ার পথে,
দয়ালের মোড় পার হওয়ার
একটু পরেই রুবীর মোড়
তার আরো পরে মুক্তির মোড়

ফিরার পথে,
মুক্তির মোড় থিকা আরো কিছুদূর গেলে
রুবীর মোড়, আর তার একটু পরেই
দয়ালের মোড়

নওগাঁ শহর অবশ্য তার পরেও আছে, আর আগেও


উকিল পাড়ায়

উকিল পাড়া ঘুমায়।
রাত এগারোটায়।
কয়েকটা শিয়াল ঘুরতেছে রাস্তায়। দুনিয়াটা অদের এখন।


হেমন্তে আমি তোমার গান গাই ৩

বললো শে,
“আমারে তুমি ধইরা রাখো,
শীতের বাতাসে
গাছের শেষ পাতাটার মতো”

আলোগুলা নিবে যাইতেছিল
কুয়াশার ভিতর, বলতেছিল
“আই উইল লেট ইউ গো!”


ছাগলের বাচ্চা

সন্ধ্যাবেলায়
একটা ছাগল
পথ হারায়া
খেতের আলে দাঁড়ায়া
তার মা’রে খুঁজতেছে
ডাকতেছে, মেএএএ, মেএএএ, মেএএএ…

পাশের বাড়ি’র মেয়েটা
হাসতেছে তারে দেইখা
বলতেছে, ছাগলের বাচ্চা একটা!

Continue reading

কবিতা: অক্টোবর, ২০২২

বাকেরগঞ্জে সকাল

পূজামন্ডপের লাইটে
জ্বলজ্বল করতেছে পাশের মসজিদটাও
একজন বুড়া-মানুশ তার নাতিরে নিয়া খেলতেছে,
উনারা কি মুসলমান নাকি হিন্দু? – বুঝা যাইতেছে না,
হাসি, আলো, বাতাস, শান্ত আর নরোম…

রাস্তার মাঝখানে দুইটা বাচ্চা-ছাগল
সামনের দুই ঠ্যাং তুইলা শিং-য়ের লড়াই লড়তেছে
যদিও তাদের শিং পুরাপুরি গজায় নাই এখনো

ক্যাথলিক চার্চের গার্লস হোস্টেল থিকা গল্প করতে করতে বাইর হইতেছে দুইজন নান

বৃষ্টির পরে সকাল

রাস্তার দুই পাশে সবুজ অনেক জীবনানন্দ,
কিছু কিছু কামিনী রায়ও আছে হয়তো
যেহেতু বরিশাল, যেহেতু বাকেরগঞ্জ

আঁকা বাঁকা পথ
কালিগঞ্জ থিকা যাইতেছে সুবিদখালি বাজারে

ধীরে, কোন নতুন গান জাইগা উঠার মতো, ধীরে
রইদ উঠতেছে
ভোরের বিস্টির পরে

তিনটা শালিখ পাখি টিনের চালের উপরে
মেগ’রে বলতেছে, তুমি কি তাইলে হিন্দু-বাড়ির মেয়ের মতো
পূজার দিনে, দুইদিনের নাইওর আইছো?

আশ্বিনের শাদা বাতাসে হেমন্তের দুক্খগুলা জমতেছে
ব্যাটারি-রিকশাগুলা বিজি, খেয়ালই করতেছে না,
বলতেছে, “সাইডে, সাইডে…”

কলাগাছগুলা বেকুব হয়া ভাবতেছে, ওকে, ঠিকাছে
এ-ও এক বাংলা-ভাষা তবু পৃথিবীর বুকে ভাসিতেছে
ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে…


সমারূঢ় ৩

যেহেতু আমি তোমারে নিয়া ফান-ই করতে পারি,
তোমারে আমি আর ফলো করবো কেমনে!


দুইটা চাঁদ

“এই বক্রতা কঠিন”
বলতেছিল বাঁকা চাঁদ,
বাঁকা গাঙের পানি

বাঁকা চোখ,
বাঁকা দুই নয়ন
বাঁকা হাসি

বাঁকা কথাগুলা
বাঁকা মিনিংয়ে বলতেছিল,
“এই বক্রতা আলো আর ছায়া
কড়ই গাছের ডালের, সন্ধ্যাবেলা…”

একটা চাঁদ
ঘুরে বেড়াইতেছিল
মেঘে মেঘে

একটা চাঁদ
হাঁটতেছিল একলা
গলিতে গলিতে

দুইটা চাঁদ আকাশে
একটা দেখা যায়
আরেকটা দেখা যায় না Continue reading

নোটস: মার্চ, ২০২২ [পার্ট ১]

মার্চ ১, ২০২২

(একটা জিনিস আমি ভাবছি, ভুলও হইতে পারে) ঢাকা শহরের মুদির দোকানগুলাতে কিছুদিন পরে পলিথিনের প্যাকেটে, ১০০ মিলি/২৫০ মিলি/৫০০ মিলির সয়াবিন তেল বেচা শুরু হবে। মানে, এখনো কিছু কিছু হয়। কিন্তু অইরকমভাবে চোখে পড়ে না। মেবি অইটা একটা ইন্ডিকেটর হবে (দুর্ভিক্ষ অফিসিয়ালি শুরু হইছে, বা), আমাদের পারচেজিং পাওয়ার যে বাড়তেছে! 🙂

#########

অফিসের ওয়েটিং রুমে সবসময় টিভি চলে। টিভি মানেই তো নিউজ। কাঁচের দেয়ালের কারণে বাইরে থিকা কি কইতেছে কাবজাব, কিছুই শোনা যায় না। দেখা যায় খালি। তো, লিফটের সামনে দাঁড়ায়া থাকতে থাকতে অনেক সময় টিভিতে নিউজ-প্রেজেন্টারদের মুখের হাব-ভাব দেখি। কি বলতে চান উনারা? উনাদের ভাব-ভঙ্গি দিয়া?

অন্য অনেক কিছুর বাইরে, ভাব’টা হইতেছে, অনেক সিরিয়াস কথা বলতেছি আমরা! 🙂 যদিও দেইখা দেইখা আজাইরা কথাই কইতেছে, যেইটা আসলে অদের নিজেদের কথাও না। অলমোস্ট তোতাপাখিই তো অরা! কিন্তু ভাব দেখলে সেইটা বুঝা যাবে না। সিরিয়াস-ভাব নিতে নিতে অরা মেবি নিজেরাও সিরিয়াস হয়া যাইতে থাকে। জ্বরের ভাব করতে করতে যেইরকম কিছুটা টেম্পারেচার বাড়ায়া ফেলা যায় অনেক সময় শরীরের, অইরকমের।…

মানে, মাঝে-মধ্যে মিউট কইরা দেইখেন, বাংলাদেশের চ্যানেলগুলাতে নিউজ-প্রেজেন্টারদের ভাব-ভঙ্গিমাগুলা। এতো সিরিয়াস যে দেখলে মজার চাইতে খারাপ-ই লাগে, কিছুটা। সুন্দর সুন্দর চেহারা নিয়া একই ধরণের কি বাজে অভিনয় করতেছে অরা! 🙁

########

ফটোকপি রাইটার

আমাদের দিকে একটা কথা আছে (অন্য অঞ্চলেও থাকার কথা) যে, নিজের পুটকিত নয় মণ গু, অন্যরে কয় পুটকি ধু! [একটু ‘অশ্লীল’ হইলো, কিন্তু কি আর করা…]

তো, কিছু “লেখক” আছেন, কলোনিয়াল-বাংলার বাইরে একটা লাইন লেখতে পারেন না। [‘আঞ্চলিক’ লেখেন, নাইলে ‘পরমিত’।] কিন্তু অন্যরা যারা-ই এর বাইরে লেখার ট্রাই করতে যায়, দৌড়ায়া আইসা ট্যাগ লাগায়া দিতে থাকে, “ও, আপনি এর মতো লেখতেছেন, ওর মতো লেখতেছেন!” যেন বিরাট একটা “সমালোচনা” কইরা ফেলছে। নিজেরা যে হইতেছে কলোনিয়াল কলকাতা-বাংলার ফটোকপি, অই খেয়াল নাই।

এই ফটোকপি রাইটার’রা জীবনে কোনদিন নিজের লেখা লেইখা দেখে নাই, লেখার সাহস করতে পারে নাই। এই কারণে এর বাইরে কিছু দেখলেই ডরায়। নিজেরা কপি-করা বাংলা থিকা বাইর হইতে পারে না, আর অন্যরে কয়, আপনি আরেকজনের কপি করতেছেন, না!
Continue reading

নোটস: ফেব্রুয়ারি, ২০২২ [ পার্ট ৩]

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২

নীলখেত

বাংলাবাজার না, বাংলাদেশের বইয়ের আসল জায়গা হইতেছে নীলক্ষেত। বাজারে একটা টার্মও চালু হইছে গত ৪/৫ বছর ধইরা – “নীলক্ষেত প্রিন্ট” নামে। মানে, কপিরাইট ছাড়া, শস্তায় বই ছাপানো, ফটোকপি কইরা বেচার ব্যবস্থা। পাবলিশার’রা বই না ছাপাইলে, অই বই মার্কেট-আউট হয়া যায় না এখন। নীলক্ষেতে একটা পিডিএফ দিয়া আসলেই বই এভেইলেবল হয়া যায় সারা বাংলাদেশে। জিনিসটা জাস্ট অইরকম ছড়াইতে পারে নাই।

কিন্তু ছড়াইতেছিল। দেরিতে হইলেও এই “নীলক্ষেত প্রেস”র ঘটনা’টা বইয়ের বিজনেসের একটা কোর ঘটনা হয়া উঠতে পারার পসিবিলিটর মধ্যে আছে এখনো। জাস্ট দুই-তিনটা স্টেপ দূরে, আরো কয়েকটা জিনিসরে ইন্ট্রিগ্রেট করা লাগবে।…

তো, ঢাকা শহরে আগুন-লাগা’র ঘটনারে আমার কাছে খুব স্পেসিফিক ফ্যাক্ট না থাকলে কখনোই “একসিডেন্ট” বইলা মনেহয় না। বস্তিতে আগুন (লাগে না) লাগানো হয় বস্তি খালি করার লাইগা। গেরামে, গরিবের বাড়িতে আগুন লাগানো হইতো ভিটা-মাটি দখল করার লাইগা। ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগানো হয় কিছু ছরমিক মাইরা ইন্স্যুরেন্সের টাকা নিয়া লে-অফ ঘোষণা করার লাইগা।

আগুন যে লাগে না – তা না, কিন্তু আগুন লাগানোর ঘটনা তার চাইতে কম না।

গুলশান-১ এর ডিসিসি মার্কেটে আগুন লাগার পরে অই মার্কেট আর মেবি দাঁড়াইতে পারে নাই, কিন্তু বিদেশি প্রডাক্টগুলার বেচা কমে নাই, বরং ছড়ায়া পড়ছে আরো, ইম্পোর্টার আরো বাড়ার কথা। একইভাবে, আগুন লাগার পরে নীলক্ষেতের বইয়ের মার্কেট শেষ হয়া যাবে না, এটলিস্ট ঢাকা ভার্সিটি, বুয়েট, মেডিকেল যদ্দিন আছে।

কিন্তু যেইটা বলতেছিলাম, নীলক্ষেত-প্রিন্ট আরো কিছু চেইঞ্জের ভিতর দিয়া একটা মেইনস্ট্রিম হয়া উঠতে থাকবে মেবি। আর সেইটা খালি নীলক্ষেতে আটকায়া থাকবে না।

আগুন লাগুক, আর আগুন লাগানো হোক, নীলক্ষেতের বই পুড়ায়া শেষ করা যাবে না। Continue reading

নোটস: ফেব্রুয়ারি, ২০২২ [পার্ট ২]

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২

– ক্যাটাগরি হিসাবে রেসপেক্ট ও ডিস-রেসপেক্টের জায়গাটা অন্য যে কোন ক্যাটাগরি’র চাইতে ক্রুশিয়াল ঘটনা –

যে কোন রিলেশনশীপেরই বেইজ আসলে লাভ বা হেইট্রেট না। এমনকি দোস্তি বা দুশমনিও না। যারে আপনি পছন্দ করেন, তার দেখবেন একটা-দুইটা জিনিস পছন্দও হয় না তেমন। যে আপনার দোস্ত, তার লগে দুয়েক্টা জিনিস নিয়া দুশমনিও থাকে। মানে, যে কোন অপজিট ফিলিংসও থাকে লগে একটু। এইটা পার্ট অফ দ্য ডিল। প্লেজারের লগে পেইন নিতে হবে একটু, পেইনেও প্লেজার থাকে যেমন একটু। এইসব আর কি!

কিন্তু একটা কোর ক্যাটাগরি হইতেছে রেসপেক্ট আর ডিজ-রেসপেক্টের ঘটনা। যারে আপনি সম্মান করেন, তারে আপনি একই লগে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারবেন না, এই দুইটা একলগে করা’টা কঠিন। রেয়ার।

যারে আপনি ভালোবাসেন, সময় সময় তারে ঘৃণা করতে পারেন। উল্টাটাও। দোস্ত-দুশমনের ব্যাপারেও এরিয়াগুলা সবসময় ডিফাইনড না এতো। সবার লগে জাত-শত্রুতা থাকে না। কিন্তু যারে আপনি অসম্মান করেন, ‘ছোট’ মনে করেন, তারে ‘বড়’ মনে করাটা কঠিন। উল্টাটাও।
এই কারণে সমাজে যারা রেসপেক্টেড মানুশ আছেন তাদেরকে ‘ছোট’ করাটা একটা পলিটিক্যাল ঘটনা। হেইট করা বা দুশমনির বাইরে ডিস-রেসপেক্ট করাটা অনেক বেশি ইমপ্যাক্টফুল; যে কোন বিরোধিতার চাইতে।

যেমন ধরেন, খালেদা জিয়া তো ভ্রু আঁকেন, বেশি মেকাপ করেন! এইটা খারাপ ঘটনা 🙂 মানে, এটলিস্ট তারে রেসপেক্ট না করার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড অইটা।

উল্টাটাও হয়, কাউরে রেসপেক্টের জায়গায় বসাইতে চাইলে তার খারাপ-ঘটনাগুলারে গোপন করার ঘটনা ঘটে, যেমন শেখ হাসিনা তার ছেলের বার্থডে’তে বিরিয়ানি রান্ধতেছেন বইলা ছবি শেয়ার দেয়া।…

এইগুলা খালি সোশ্যাল ও পলিটিক্যাল ঘটনা না, পারসোনাল জায়গাতেও কম-বেশি এইরকমেরই। কাউরে ডিস-রেসপেক্ট করতে পারলে হেইট করা, দুশমনি করাটা সহজ হয়।

তো, পারসোনাল জায়গাতে টেকনিক হিসাবে আমি মনে করি, যারে রেসপেক্ট করতে পারেন না, তারে এভয়েড করাটা বেটার।

তাই বইলা সবাইরে রেসপেক্ট করা-ই লাগবে বা কাউরে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না – ব্যাপারটা এইরকম না। সময় সময় তো জরুরি, স্পেশালি যখন কোন জুলুম ঘাড়ের উপর আইসা পড়তেছে। কিন্তু এইটারে সবচে ক্রুশিয়াল ডিসিশান হিসাবে মানতে পারাটা দরকার আমাদের। আপনি কারে বা কোন জিনিসটারে রেসপেক্ট করতেছেন আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেছেন, সেই জায়গাগুলা/বাছাইগুলা আসলে একভাবে আপনারেই তৈরি করতেছে।

Continue reading