নোটস: জানুয়ারি, ২০২২ [পার্ট ২]

জানুয়ারি ১১, ২০২২

১.
১৪ শতকের আগে এই অঞ্চলে ‘মুসলমান’ বা ‘হিন্দু’ বইলা কোন আইডেন্টিটি ছিল না। (এরপরেও এতোটা ঘটনা ছিল না। এইটা ১৮ শতকের শেষের দিকের ঘটনাই।)

২.
এই কথা আমি আগেও ভাবছি, পুরান যত কাহিনি আছে রামায়ণ, মহাভারত, জাতক, কোন জায়গাতেই ধর্ম হিসাবে ‘হিন্দু’ – এই ঘটনা পাইবেন না, দুনিয়ার সবাই-ই হিন্দু, জাত-টাত জাস্ট আলাদা। যাদের জাত নাই, তারা ম্লেচ্ছ, বা এইরকম কিছু। হিন্দুই! মানে, ধর্ম বা রিলিজিয়ন হিসাবে কোনকিছু ফর্ম করে নাই।

একই ভাবে, ‘মুসলমানরা’ ‘ইন্ডিয়া’ দখল করে নাই। দিল্লী দখল করছিল, ‘ইন্ডিয়া’ বইলা আলাদা কোন দেশই তো ছিল না! আর তাদের আইডেন্টিটিও ছিল আরব, আফগান, তার্কিশ, এইরকম; ‘মুসলমান’ কখনোই না। মোগল’রাও ‘মুসলমান’ ছিল না, ছিল শিয়া ও সুন্নী। (এইখানে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হইতেছে পারস্যের লগে এই অঞ্চলের সবসময়ই খাতির ছিল, যার ফলে কালচারাল এক্সচেইঞ্জ দেখবেন অনেক বেশি হইতে পারছে।)

তো, এই মিস-কনসেপশন বা ভুল-ধারণা খুবই বাজেভাবে আছে, আমাদের আলাপ-আলোচনা’তে। এই বেইজ থিকা সরতে পারাটা সবচে জরুরি।

৩.
এইটা এখন আমি খুব জোর দিয়া এখন বলতে পারতেছি রমিলা থাপারের দুইটা কথার কারণে। ১০ম শতকের দিকে মোহাম্মদ ঘুরী’র দিল্লী দখলের সময়ের কথা বলতে গিয়া উনি বলতেছিলেন, “Today we speak of them as a collective entity, labelling them ‘the Muslims’, and label the hosts also collectively ‘the Hindus’. But these labels are historically inaccurate… Neither of these two communities had a homogenous culture and religion… People more frequently identified by caste, occupation, language, region and religious sect, than by the religious labels we use today.” (p. 438, The Early India)

“Hindus did not use this name for themselves until about fourteenth century, and then only sparingly.” (p. 440, The Early India)

হাউএভার, এই জায়গাগুলা ডিটেইল করার দরকার তো আছেই। ইন ফিউচার, করার ইচ্ছা আছে আমার।

৪.
আরেকটা জিনিস হইতেছে, এই সাব-কন্টিনেন্ট যে দিল্লী-বেইজড গোলামির জিঞ্জিরে বান্ধা পড়লো, সেইটা হিস্ট্রিতে একটা “মুসলিম” অবদান হিসাবে আইডেন্টিফাই করার ঘটনা হিসাবেই দেখতে পারা দরকার। যেই কারণে এখনকার “ইন্ডিয়ান কালচার” দেখবেন ‘মুসলিম আইডেন্টিটির’ বাইরে যাইতে পারে না। গেলে, বেইজটারে আর ধইরা রাখতে পারে না।

৫.
রামমোহন রায়, কেশবচন্দ্র সেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়’রা আসলে হিন্দু-ধর্মের ‘পুনর্জাগরণ’ ঘটান নাই, এক অর্থে, হিন্দু-ধর্মরে আসলে আবিষ্কার করছেন উনারা। কলম্বাসের মতোই। কিন্তু উনারা মারা যাওয়ার পরেও এই জিনিসটারে লোকেট করতে হেসিটেট করতেছি আমরা।

##########

নয়া বাকশালের আমলের (২০০৮ – অন গোয়িং) সবচে বাজে ঘটনা হইতেছে, বাংলাদেশের ‘বাংলা-মিডিয়াম’ এডুকেশন বা সরকারি-পড়াশোনার সিস্টেমটারে ধ্বংস করা।

দেশের ‘বড়লোকের’ ছেলে-মেয়েরা তো আগে থিকাই ইংলিশ-মিডিয়ামে পড়তো। পরে মিডল-ক্লাসও এই ট্রেন্ডে সামিল হইছেন, ইংলিশ-ভার্সনও গত ১৫-২০ বছর আগের একটা ঘটনাই। মাদরাসা লাইনেও ইন্টারেস্ট বাড়ছে, মিডল-ক্লাসের। কোন ডেটা তো নাই, কিন্তু ১৯৯৮-২০০৮ এবং ২০০৯-২০১৯ পিরিয়ডের তুলনা করলে, সলভেন্ট মিডল-ক্লাসের ছেলেমেয়েদের মাদরাসায় দাখিল হওয়ার নাম্বারটা ডাবলের কম হওয়ার কথা না, পারসেইন্টেজ টার্মে। কওমী, দাখিল আর আলিম মাদরাসাই না, আধুনিক, ক্যাডেট মাদরাসাও তৈরি হইছে এখন।

তো, এইগুলা যতোটা না ‘পাশ্চাত্য-শিক্ষা’ বা ‘ইসলামিকরণ’র আলামত, তার চাইতে অনেক বেশি হইতেছে বাংলা-মিডিয়ামের বাতিল হওয়ার ঘটনা।

বাংলাদেশে প্রাইভেট ভার্সিটি যখন শুরু হয়, তখনো ‘বড়লোকি’ ব্যাপার হিসাবে আইডেন্টিফাই করা হইছিল, এখনো কম-বেশি আছে সেইটা। প্রাইভেট ভার্সিটিগুলাও ‘বড়লোকি’ ব্যাপারটা হাইলাইট করতে চায়। কিন্তু যাদের টাকা আছে, তারা তো ছেলেমেয়েদেরকে ‘বিদেশে’-ই (এটলিস্ট ইন্ডিয়াতে) পড়াইতে পারে। সেশন-জটের কারণে, চাকরির বাজারের লগে ডিসকানেকশনের কারণে মিডল-ক্লাসের গড়পরতা পাবলিক কলেজ-ভার্সিটির পড়াশোনায় ইন্টারেস্টেড হওয়াটা টাফ, ইকোনমিক কারণেই। মানে, ব্যাপারটা খালি এইরকম না যে, ‘বড়লোকি’ দেখানোর লাইগা মিডল-ক্লাসের ছেলেমেয়েরা প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ে, বরং পাবলিক কলেজ-ভার্সিটিতে পড়াশোনা করার যেই ভ্যালু সেইটা দিনে দিনে কমতেছে। আর অপশনও খুববেশি নাই। যার ফলে, কিছু অল্টারনেটিভ বানাইতে হইতেছে।

এইটা মানতে পারাটা বা খেয়াল করতে পারাটা দরকার।

২.
তো, কেমনে বাজে হইলো জিনিস’টা? আর নয়া বাকশালের কন্ট্রিবিউশন কি এইখানে?

স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির টিচার’রা বেটার বলতে পারবেন এইটা। আমি কয়টা জায়গা হাইলাইট করতেছি, আমার দেখাদেখির জায়গা থিকা।
নয়া বাকশাল যেহেতু দেশের মানুশের ভোটে ইলেক্টেড হয় নাই, তাদের সবসময় একটা উদ্দেশ্য হইতেছে, পপুলিস্ট কাজকাম করা। এইটা কোর একটা ফিচার। যখনই দেশে মিলিটারি-শাসন ছিল, দেখবেন তারা দেশের মানুশের ভালো করতে চাইছেন। দুধের দাম কমাইতে চাইতেছেন, এইরকম। 🙂 [আকবর আলী খানের একটা কাহিনি আছে এই নিয়া, কমেন্টে দিতেছি।] তো, এই নন-ইলেক্টেড বাকশালি সরকারও পাবলিকরে খুশি রাখতে চায়, পপুলার কাজকাম করতে চায়। এই জায়গা থিকা পাশের হার কখনোই কমাইতে দিবে না! অটো-পাশও দিয়া দিবে। মানে, এইগুলা কোন খারাপ-কাজ না, বরং কোন পড়াশোনা ছাড়া, যাচাই-বাছাই ছাড়া এইগুলা করাটা হইতেছে বাজে জিনিস। এই যে, পাশের হার ৯০%+ দেখাইতে হবে – এইটা এজেন্ডা হিসাবে আছে; অন্য আর যে কোনকিছুই হইতেছে সেকেন্ডারি ঘটনা। এইটা হইতেছে বাকশালের কন্ট্রিবিউশন।

ভুয়া ইতিহাস শিখানো, কারিকুলাম আপডেট না করা, নতুন কোন দিশা না দিতে পারা – এইসব জিনিস তো আছেই, কিন্তু এই জিনিসগুলারে আমি ‘কারণ’ না বরং ‘এফেক্ট’ হিসাবেই দেখতে পাই। গাছের গোড়া যদি পইচা যায়, সেইখানে ডাল শুকায়া যাবেই, ফুল ফলও ধরবে না। বাংলা-মিডিয়াম শিক্ষা-ব্যবস্থার অবস্থা হইছে অইরকম।

আর করোনার নাম দিয়া স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি বন্ধ কইরা রাখার ঘটনা তো আছেই। অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য খোলা রাখলে সমস্যা নাই, কারণ বাংলাদেশে যারা ৪০+ লোকজন আছেন উনারা মাইনা নিছেন যে, উনাদের কোন ফিউচার নাই! ২০/২৫ বছর বয়সের যেই লোকজন আছে তাদেরকে ডিপ্রেশনে ঠেইলা দিয়া অই রিয়ালিটিতে অভ্যস্থ করানোর চেষ্টাই হইতেছে এই স্কুল-কলেজ বন্ধ করার ঘটনা। করোনা চইলা গেলেও, কোন না কোন ইস্যু এই ডর চালু রাখা হবে যে, সরকার চাইলে যে কোন সময় এইগুলা বন্ধ কইরা দেয়া হইতে পারে! এইটা গোলামি’তে অভ্যস্থ করানোর ঘটনা।

মানে, সরকারি শিক্ষা-ব্যবস্থা দান-খয়রাতের একটা জিনিসে পরিণত হইছে। এইখানে কোনকিছু শিখানোর চাইতে বরং লিখতে-পড়তে পারে এইরকম একটা ‘অবিডিয়েন্ট’ প্রাণী তৈরি করার ঘটনাই ঘটতেছে। কলোনিয়াল শিক্ষা-ব্যবস্থা কম-বেশি এইরকমই ছিল। কিন্তু এইটা আর লুকানো যাইতেছে না এখন।

৩.
তাই বইলা ‘বাংলা-মিডিয়ামের’ ‘হারানো গৌরব’ ফিরায়া আনতে হবে না। ১৯৬০ – ১৯৯০ পর্যন্ত যা ছিল, সেইটারে রি-বিল্ড করতে গেলে, আরেকটা ঝামেলাই হবে সেইটা। একটা জিনিসরে সাকসেসফুললি বাতিল হইতে দেখতেছি আমরা। আর অই জায়গাটাতে নতুন কিছু তৈরি হইতেছে না। এইটুকই বলতে চাইতেছি আমি।

#########

১৯৭৫’র পরে কয়েকটা মিলিটারি ক্যু পার হয়া বাকশালি-শাসন থিকা বাইর হইতে পারছিলাম আমরা, খুব অল্পদিনের জন্য হইলেও। তারপরে ১৯৯১ সালে একটা মিনিমাম ডেমোক্রেসির যেই শাসন আমরা পাইছিলাম, সেইটার শেষ হইছিলো ২০০৭ সালের ১/১১’র মিলিটারি ক্যু’র ভিতর দিয়া।

নয়া বাকশালেরও শুরু অইখানেই। যেইটা ২০০৮ সালের ইলেকশনের ভিতর দিয়া লিগালাইজ করা হইছিল।

আধুনিক রাষ্ট্রে, রাষ্ট্রের “স্বাধীনতা রক্ষা” করার জন্যে কোন মিলিটারি এগজিস্ট করে না, বরং একটা দেশের রাষ্ট্র-ক্ষমতা ধইরা রাখার একটা পিলার হইতেছে, মিলিটারি। এটলিস্ট আমাদের মতো নন-ডেমোক্রেটিক কান্ট্রিগুলাতে। আর বাংলাদেশে, দেশের মানুশের ম্যান্ডেট এড়ানোর সবচে ভালো-উপায় হইতেছে মিলিটারি’র কাছে ‘গ্রহণযোগ্য’ হয়া উঠা। বাকশাল শুরুতে যেই ‘ভুল’ করছিল, পরে একই ‘ভুল’ করতে রাজি হয় নাই!

১/১১’র গর্ভমেন্টরে exit দেয়ার ভিতর দিয়া মিলিটারি-শাসন থিকা বাইর হওয়া হয় নাই, বরং রাষ্ট্র-ক্ষমতার ভিতরে ইন্টারনালাইজ করা হইছে। পুলিশ, রেব, মিডিয়া, মিলিটারি, সরকারি আমলা আর লোকাল-গুন্ডাদের একটা ‘দল’ বানানো হইছে, যারা এখন দেশ চালায়। সার্কেলটা জাস্ট একটু ছড়ানো হইছে।

১/১১’র মিলিটারি-ব্যাকড কেয়ারটেকার গর্ভমেন্টের পারমানেন্ট অবস্থাই হইতেছে আজকের দিনের বিনা-ভোটের বাকশালি সরকার। এইটা আমাদের মনে রাখা দরকার।

 

জানুয়ারি ১২, ২০২২

নারী-অধিকার কি খারাপ? অবশ্যই না। তারপরও মাসুদা ভাট্টিরা যখন বাকশালের কোলে বইসা ব্যারিষ্টার মঈনুল হোসেন’রে জেলে পাঠাইছিল, (মঈনুল হোসেন খারাপ-কাজ করলেও) উনাদের সেই কাজটারে ভালো-কাজ বইলা মনেহয় নাই। কারণ, উনারা যতোটা না নারী-অধিকার তার চাইতে জুলুমের সার্পোটার হিসাবে কাজ করছিলেন।

একইভাবে, কাওয়ালি গান কি খারাপ? এই ঘরানা বরং অনেক সেলিব্রেটেড বাংলাদেশে, অনেক দিন থিকাই। ঢাবি’র টিএসসি’তে কাওয়ালি গানের আসর বসানো কোন খারাপ কাজ না, কিন্তু বাংলাদেশের কালচারের সেন্টার হিসাব শাহবাগরে রি-এস্টাবলিশ করার একটা চেষ্টা হিসাবে দেখতে পারার কথা। মানে, এইটা ‘বৈচিত্র’রে জায়গা দেয়ার ঘটনা না, বরং ‘কালচার’ করতে হইলে যে আপনারে শাহবাগে-টিএসসি’তেই যাইতে হবে – সেইটা রি-কনফার্ম করার ঘটনাই একটা।

ছায়ানটী’দের আরেকটা উইংস হিসাবে কাওয়ালিরে পরিচয় করায়া দেয়াটাই হইতেছে এই প্রোগ্রামের কালচারাল ও পলিটিক্যাল সিগনিফিকেন্স।
হাউএভার, গান তো বাজে-জিনিস না, ঢাবি’র টিএসসিও খারাপ-জায়গা না। আশা করি, প্রোগ্রাম এনজয়েবল হইতে পারবে, এর নেগেটিভ সিগনিফেন্সসহ।

#########

২০০৭-৮ সালের দিকে যখন বইয়ের রিভিউ-টিভিউ, ক্রিটিক লেখা শুরু করছিলাম তখন এই জিনিসটা খেয়াল করছিলাম। সলিমুল্লাহ খানের বই নিয়া কইছিলাম, আরে উনি তো জাতীয়তাবাদী আলাপ করতেছেন! বা গৌতম ভদ্র তো ‘বাঙালি’ জায়গাটা থিকা বাইর হইতে পারতেছেন না! আমার কথাগুলা খুব স্পষ্ট না হইলেও ভুল ছিল না (এইটা এখন খেয়াল করতে পারি আমি); কিন্তু মুশকিল হইলো, আমি যাদের ইন্টেলেকচুয়াল ও পলিটিক্যাল পজিশন পছন্দ করি না, খেয়াল কইরা দেখলাম, উনারা এই আলাপগুলাতে খুব খুশি হইতেছেন! মানে, আমি যতোটা ইন্টেলেকচুয়াল আলাপ নিয়া কনসার্ন ছিলাম, পলিটিক্যাল জায়গাটা নিয়া সজাগ হইতে পারি নাই। যেহেতু আমার পলিটিক্যাল পজিশন ক্লিয়ার ছিল না, ইন্টেলেকচুয়াল আলাপের জায়গাগুলাও স্পষ্ট হইতে পারে নাই।

আপনার কোন ইন্টেলেকচুয়াল বা কালচারাল পজিশন যদি জুলুমের পক্ষে থাকা লোকজনের পছন্দের জিনিস হয়, তাইলে খুশি হওয়ার চাইতে চিন্তা করাটা দরকার, কি ভুল আপনি করতেছেন। আপনার আলাপ ইনসিগনিফেক্ট হইতে পারে, কোন ইমপ্যাক্টও তৈরি করতে না পারে, কিন্তু যদি জুলুমের পক্ষের লোকজনের পছন্দের জিনিস হয়া উঠে, তাইলে তো খুশি হওয়ার চাইতে ডরানোরই কথা।

বিপ্লবী হওয়াটা নেসেসারি না, কিন্তু যদি জালিমের পছন্দের লোক হয়া উঠেন, তাইলে নিজের পজিশনটারে তো রিভিউ করতে পারাটা দরকার! কারণ অইটা মেবি আপনার পছন্দের জায়গা হওয়ার কথা না। আর যদি তা হয়, তাইলে তো বলার কিছু নাই! সরি! 🙂

#########

বিএনপি করে বা করতো, এইরকম কোন কবি পাইছেন বাংলাদেশে?* কোন আর্টিস্ট? আল মাহমুদরে ‘জামাতে ইসলাম’ কইরা সারভাইব করতে হইছিল। বিএনপি করলে ‘হাইস্যকর’ হয়া যাইতেন আসলে। ‘ইসলামিস্ট ইন্টেলেকচুয়াল’ বইলা যেই বেইজটা আছে, সেইটা থাকতো না তখন। 🙂 [এইটারও এক ধরণের বাকশালি-করণ হইতেছে এখন।] মানে, বিএনপি’রে সার্পোট কইরা কবি-সাহিত্যিক-আর্টিস্ট আপনি হইতে পারবেন না বাংলাদেশে।

এর কারণ হইতেছে, বাংলাদেশের সাহিত্য-সমাজ হইতেছে বাকশালি বাম-বাটপারদের একটা দলা। কমিউনিস্ট-কমিউনিস্ট একটা ভেইগ ধইরা থাকতে হয়, ‘প্রগতিশীল’ সাজতে হয়। এর লাইগা সিপিবি করেন, এনার্কিস্ট হন, গোপন বিপ্লবী দল করেন, এমনকি ছাত্রলীগ করেন, সমস্যা নাই। কিন্তু বিএনপি করারও দরকার নাই, বিএনপি’র ফেভারে কথা কইলেই হইছে; কবি, আর্টিস্ট হিসাবে দেখবেন হাওয়া, এগজিস্টই করেন না আপনি! গান গাওয়াও বন্ধ কইরা দেয়া হবে আপনার! (গায়িকা ন্যান্সির কথা মনে কইরা বলতেছি।)

তো, ‘কবি-সাহিত্যিক’ হইতে হইলে বাম-বাকশালি আইডিওলজি’র গোলাম হইতে হবে – এই শর্তটারে যত দিন না পর্যন্ত বাতিল করা যাইতেছে, বাংলাদেশে আর্টের জায়গাগুলা ‘পরাধীন’ হয়াই থাকবে আসলে। কলোনিয়াল ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর প্রটো-টাইপগুলার রিপ্রডাকশনগুলারেই আর্ট মনে হইতে থাকবে আমাদের কাছে। এর লাইগা বিএনপি করতে হবে না, কিন্তু অই ‘পরিচয়’-এর বাইরে গেলেই যে আর্টিস্ট পরিচয় বাতিল হয়া যায়, সেই ‘ইভিল স্ট্রাকচার’টারে খেয়াল না কইরা এই বন্দিত্বের জায়গাটারে উতরাইতে পারবো না আমরা আসলে।…

এই লেখাটা পইড়াই জিনিসগুলা মনে হইলো আবার।


*আবদুল হাই শিকদারের কথা মনে হইলো। উনি ভালো-কবি কি খারাপ-কবি তার চাইতে ইম্পর্টেন্ট ঘটনা হইতেছে উনার নাম শুনবেন না কোথাও, বিএনপি করার কারণেই। 🙂

#########

ইকনোমিকসের আলাপে কিছু জিনিস আছে, যেইগুলারে আমি কইতে চাই, নাম্বার-ফেটিশিজম। যে, ইকনোমিক-লাভ বুঝাইতে গিয়া বুঝানো হয়, রাস্তার জ্যামে বইসা ডেইলি ৪/৫ কর্ম-ঘন্টা নষ্ট হইতেছে মানুশের। ট্রু এইটা। কিন্তু এই ৪/৫ ঘন্টা কি খালি প্রডাকশনেই কাজে লাগাইতাম আমরা? নাকি লাইফ’টা মোর পিসফুল হইতো, একটু শান্তি পাইতে পারতাম আমরা? মানে, সবকিছুরে টাকা-পয়সার টার্মে ট্রান্সলেট কেন করা লাগবে রে ভাই!

এই জায়গা থিকা দেখবেন, যারা হাউজ-ওয়াইফ, হোম-মেকার তাঁদের ঘরের কাজকামগুলারেও ইকনোমিক টার্মে কনভার্ট করা যায় না বইলা আন-ইম্পর্টেন্ট মনে করা হয়। বা দাম দিতে হইলেও টাকা-পয়সার হিসাব করা হয়।

তো, ইকনোমিকসের আলাপে এই ধরণের নাম্বার-ফেটিশিজম থিকা সরতে পারাটা দরকার। কোনকিছু নাম্বারে কনভার্ট করা যাইতেছে বইলাই সেইটাই বেটার এপ্রোচ না কোন, বরং কোন না কোন হিউম্যান-কস্টের জায়গারে ইগনোর করার জায়গা থিকাও এইটা ঘটতে থাকতে পারে।

 

জানুয়ারি ১৩, ২০২২

“ছায়ানট ফেইজ ২”: রবীন্দ্র-সঙ্গীত ও কাওয়ালি-গান

(আমার কথা শুনলে হয়তো অনেকের মন-খারাপ হইতে পারে, কিন্তু এইটা খেয়াল করতে পারাটা মনেহয় দরকার যে) ১৯৬০’র দশকের ‘রবীন্দ্র সঙ্গীত’-এর রিপ্লেইসমেন্টই হইতেছে ২০২০’র এই ‘কাওয়ালি গান’।

এইটা হইতেছে ‘ছায়ানট: ফেইজ ২’। ক্লাসের বিচারে দুইটাই হইতেছে এক ধরণের আরবান মিডল-ক্লাস ফেনোমেনা। (যতোটা না ইসলামি ঘটনা, তার চাইতে অনেকবেশি বলিউড, দিল্লী-বেইজড ইন্ডিয়ান কালচারের পার্টও এইটা। যা-ই হোক, অন্য আলাপ সেইটা…)

আইয়ুবের আমলে বাঙালি হওয়ার শর্ত হিসাবে যেইরকম রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালোবাসা লাগতো, তা নাইলে আপনার ‘বাঙালি-পরিচয়’ খারিজ হয়া যাইতো; ‘কাওয়ালি গান’রে কালচারাল উইপেন হিসাবে হাজির করাটা একইরকমের বাজে-কাজ। মানে, কাওয়ালি-গান গাইলেই যেন আপনি বাকশাল-বিরোধী হয়া গেলেন! বরং পলিটিক্যাল ইস্যুরে কালচারালি মোকাবেলা করার গর্তেই পাড়া দিলেন আসলে।

রবীন্দ্র-সঙ্গীত না শুইনা, এমনকি না-জাইনাও যেমন আপনি আইয়ুব-বিরোধী হইতে পারতেন, কাওয়ালি-গান না শুইনাও বাকশাল-বিরোধী থাকতে পারবেন আপনি। এইরকম কালচারাল নোটেশনগুলা মুক্তির হাতিয়ার না, বরং রিলিজিয়াস রিচুয়ালের মতো জাতীয়তাবাদী রিচুয়াল, একটা সময় পরে গিয়া হয়া উঠে ক্লাস-অপ্রেশনের টুল, গোলামির জিঞ্জির!

আমারে ভুল বুইঝেন না, কাওয়ালি-গান আপনারা আরো বেশি কইরা শুনেন! সারাদেশে মজলিশ বসান! কোন সমস্যা নাই। সমস্যা হইতেছে, তারে ‘মুক্তির নিশান’ বানায়া ফেলাটা, বাকশাল-বিরোধিতা বইলা ভাবতে চাওয়া। (কারণ এইটা তা না।) এইগুলা ফ্রিডমের ধারণারে, মুক্তির পথগুলারে ন্যারো-ই কইরা তুলবে আরো।

 

জানুয়ারি ১৪, ২০২২

১৮০০ সালে আইসা কতিপয় ইংরেজ কইলো, তোমাদিগের বাংলা-ভাষা তো হয় না! তোমগোরে আমরা বাংলা-ভাষা শিখাইবাম। অবশ্য, তোমরা তো জীবনে কোনদিন বাংলা-ভাষায় কথা কহিতে শিখো নাই! এর আগে তো আরবি-ফার্সিই পড়তা, তারো আগে সংস্কৃত! তো, তোমাদিগকে আমরা ‘শিক্খিত বাঙালি’ বানাইবো।

তো, এই হইতেছে, বাংলা-ভাষা। কিছু কওয়ার আগেই দেখবেন উমাচরণ কর্মকারের দাড়িপাল্লা নিয়া হাজির হয় অই ‘শিক্খিত’ বান্দরগুলা (ইভেন আমাদের মগজের ভিতরে, চিন্তা করার সময়েই, যে)। বানান হয় নাই! বাক্য-গঠন ঠিক নাই! ব্যাকরণে সিদ্ধ হয় নাই! ‘ভুল-ধরা’ হইতেছে এদের বিজনেস। একটা ‘বাংলা-ভাষা’ সাইজা বইসা থাকা।

‘শিক্খিত বাঙালি’র বাংলা-ভাষা এইটুকই, বেশিরভাগ সময়। একটা ভঙ্গি নিয়া থাকা, যে ‘হয় নাই!’ এই না-হওয়া দিয়া শুরু করতে হবে আসলে বাংলা-ভাষার।

#########

একটা জিনিস খেয়াল কইরা দেখবেন, আমাদের সমাজে যারা চিন্তাবিদ আছেন, উনারা মানুশ হিসাবেও ভালো অনেক। আর যারা যাদের চিন্তা বাজে, অরা খালি ভুল-চিন্তাই করে নাই, মানুশ হিসাবেও খারাপ! মানে, একজন খারাপ-মানুশ, কিন্তু ইম্পর্টেন্ট কথা কইছেন – এইরকম ঘটনা পাইবেন না, বা রেয়ার। যারা ইম্পর্টেন্ট কথা-বার্তা বলছেন, চিন্তা করছেন উনারা খালি ভালো-মানুশই না, সার্টেন ইকনোমিক ক্লাসের [এটলিস্ট মিডল-ক্লাস, আপার-মিডলক্লাসের] লোকজন।

মানে, উনারা ভালো-মানুশ বা এফ্লুয়েন্ট ক্লাসের লোকজন বইলা ‘সঠিক চিন্তা’ করতে পারবেন না – তা না, বরং আমাদের খেয়াল করা দরকার, এইটা একটা শর্ত হিসাবে হাজির থাকতেছে কিনা।

আমার ধারণা, ‘উনি ভালো-মানুশ’ এইটা একটা ইন্টেকচুয়াল-পজিশন হিসাবে এস্টাবলিশড আছে আমাদের সমাজে। মানে, একজন ভালো চিন্তা করতে পারা লোক সমাজের ভালো-মানুশ হিসাবেও পরিচিত হইতে পারতেছেন – এইটা অবশ্যই ভালো জিনিস; কিন্তু কেউ ভালো-মানুশ বইলাই ইম্পর্টেন্ট চিন্তা করতেছেন – এইটা বেশ ভয়ংকর জিনিস হওয়ার কথা। এইটা একটা, দুইটা কেইসে না খালি, বরং অনেকের ব্যাপারেই খেয়াল করছি যে, ইম্পর্টেন্ট চিন্তাবিদ হিসাবে পরিচয় করায়া দেয়া হইতেছে সমাজে, যিনি নেহায়েতই একজন ভালো-মানুশ! [নাম তো অনেকেরই নেয়া যায়, কিন্তু কাউরে পারসোনালি স্কেইপ-গোট বানাইতে চাইতেছি না। আপনারা একটু ভাবলে, নিজেদের বিচারেই দুয়েক্টা নাম পাইতে পারবেন মনেহয়।]

তো, এইটা ভয়ংকর, কারণ হইতেছে কাউরে আপনি খারাপ-মানুশ বানায়া দিতে পারলেই হয়, তার চিন্তা-ভাবনারে তখন আর খেয়াল করা লাগে না; যে, খারাপ-মানুশ তো! একইরকম ভাবে, আপনি ভালো-মানুশ হইতে পারলেই হইছে, এইটাই তো এনাফ, যেন সব চিন্তা ঠিকঠাক আছে আপনার! আর আমার ধারণা, বাংলাদেশে চিন্তার ক্ষেত্রে, রাজনীতির ক্ষেত্রে এই জিনিসটা অনেক বেশি করা হইছে, এবং হইতেছে।
আমার কথা এইটা না যে, ভালো-মানুশ হইবেন না, বা একজন মানুশের পাবলিক ও পারসোনাল জায়গাগুলারে খেয়াল করবেন না; কিন্তু এইটারে একটা ‘ইন্টেলেকচুয়াল পজিশন’ হিসাবে হাজির করার রাজনীতি’টারে সবসময় সন্দেহ করাটা দরকারি।

#########

tick, tick… Boom সিনেমাতে সিন’টা দেইখা মনে হইলো, ব্যাপারটা। সিন’টা হইতেছে, মেইন ক্যারেক্টার’টা যখন তার মিউজিক্যাল’টা একটা সিলেক্টেড অডিয়েন্সের সামনে পারফর্ম করে আর্টিস্টদের সাথে নিয়া, এরপরে দুইজন ক্রিটিক এইটা নিয়া কথা বলতে আসে, সামনে। দুইজনই বুড়া। পয়লাজন কয়, কিছুই হয় নাই এইটা, কোন গান-ই হয় না, সুর মিলে নাই, এই সেই। সেকেন্ডজন কয়, দুই নাম্বারের সিনের ফার্স্ট গান’টা ভালো হইছে। আরেকটা সিনে ফিমেইল কারেক্টারের একটা গান হইলে ভালো হইতো। তখন, আগেরজন কয়, আরে, আমি তো অইটাই কইতেছিলাম, অন্য একটু ওয়ে’তে আর কি! (মানে, একটু বেশি ফানি কইরাই দেখাইতে চাইছে, সিনেমাতে।)

মানে, ক্রিটিক হইতেছে স্পেসিফিক একটা জিনিস। যতো স্পেসিফিক হইতে পারে, তত বেটার ক্রিটিক। সেইটা ঠিক হোক বা ভুল হোক। ক্রিটিকের কাজ প্রশংসা করা বা বাতিল কর না, বরং একটা আর্টের জায়গাটারে স্পষ্ট করতে পারা, বা একটা আইডিয়ার বেসিসে তারে যাচাই করার স্কোপ তৈরি করা।

ওভারঅল কমেন্ট তো করা-ই যায়, নিন্দা বা প্রশংসা দিয়া একটা হাইপ তৈরি করা যায়, কিন্তু অই তো, অইটা ক্রিটিক-করা’র কোন ঘটনা না আর কি!

 

জানুয়ারি ১৫, ২০২২

এইরকম একটা ব্যাপার আছে যে, “আমি বলছিলাম না, এইটা হবে! এখন দেখেন, এইটাই হইতেছে!” তো, এইরকম “ভবিষ্যদ্বাণী” করতে পারাটা জ্যোতিষীর কাজ হইতে পারে, ভালো অবজারভারের কাজও হইতে পারে, কিন্তু ইন্টেলেকচুয়াল ঘটনা না আর কি এতোটা!

একজন ইন্টেলেকচুয়ালের কাজ বরং ফিউচার’রে কন্সট্রাক্ট করতে পারা; যেই বাজে-জিনিস ঘটতে পারে (ঘটবেই, এই রকম না) সেইটা নিয়া সাবধান করা, এর কোন অল্টারনেটিভ প্রপোজ করা। একটু হইলেও আটকায়া দিতে পারা (বাজে-কাজের ব্যাপারে); বা হেল্প করা (ভালো-কাজের ব্যাপারে)।

মানে, এই দুইটা জিনিসরে আলাদা কইরা মার্ক করতে পারাটাও দরকারি।

##########

এই ব্যাপারটা কিছুটা বাজে-ই যে, ভোটের দিন সবকিছু বন্ধ কইরা দেয়া হয়; ইন্টারনেট কানেকশন, মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ কইরা দেয়া হইছে, কয়েকবার। এইগুলা সেইফটি বা নিরাপত্তার ঘটনা না, বরং ডর দেখানোর ঘটনা আসলে! যে, ভোট দিতে যাইয়েন না, মারামারি হবে! মানে, মারামারি হোক বা না-হোক, মারামারি’র ডর দেখায়া কিছু লোকরে ভোট দিতে যাইতে দেয়া যাবে না। এইটা হইতেছে টেকনিকটা।

অথচ দরকার হইতেছে সবগুলা ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো। আর সেইগুলা লাইভ দেখানো ফেসবুকে, ইউটিউবে, টিভিতে। কেউ ‘মারামারি’ করতে গেলেও তখন লাইভ ধরা পড়বে! ক্যামেরায় মুখ দেখায়া ডাকাতি কেউ করতে চাইবে না সহজে।

সরকারি অফিসগুলাতেও দেখবেন সিসি ক্যামেরা লাগাইলে চুরি-ডাকাতি কমবে কিছু। মানে, বন্ধ হয়া যাবে না অবশ্যই, কারণ এইটা টোটাল সিস্টেমেরই একটা পার্ট। কিন্তু সিস্টেমরে মনিটর করতে রাজি হইতে হবে তো আগে!

যারা ইলেকশনের রাজনীতি করেন, তাদের দাবি তোলা দরকার, ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর। কে ঢুকতেছে, কে বাইর হইতেছে, কয়টা ব্যালট-পেপার নিতেছে। কয়টা বাক্সে ফেলতেছে। খালি সিল-মারার জায়গাটাতে পিঠ দিয়া দাঁড়াইতে হবে, সিসি ক্যামেরার দিকে। ভোট-বাক্স খোলা আর গোণাও লাইভ ক্যামেরার সামনে হইতে হবে। ভোটকেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার নেয়া থিকা রেজাল্ট ঘোষণা পর্যন্ত পুরা প্রসেসটা পাবলিকের চোখের সামনে রাখতে হবে। তাইলে জালিয়াতির পসিবিলিটি কমবে।

মানে, ভোটের সিস্টেমটারে মোর একাউন্টেবল করতে চাইলে, ট্রান্সপারেন্ট করতে চাইলে, এই জায়গাগুলাতেই নজর দিতে হবে। দাবিগুলা স্পেসিফিক হইতে হবে। পাবলিক ইভেন্টগুলারে পাবলিকের নজরের আওতায় আনতে হবে।

 

জানুয়ারি ১৬, ২০২২

ইয়ার্কি-বলদ

ব্যাপার’টা এইটা না যে, আপনি হিউমার করতে পারবেন না, বা পাওয়ারফুল অথরিটিরে নিয়া আপনি পোতিবাদ হিসাবে সবসময় হিউমার করতেছেন; বরং অন্য যে কোন টুলের মতোই হিউমার’রে অনেকভাবে ইউজ করতে পারেন আপনি। কোন জায়গাতে, কিভাবে ইউজ করতেছন – সেইটা হইতেছে ঘটনা।

বাংলাদেশে হিউমার করার সবচে ‘বহুল ব্যবহৃত’ জায়গা হইতেছে কাউরে ছোট-করা বা হাসি-ঠাট্টার লাইগা ইউজ করা; যে হিউমার-ই তো করা যায়, এই নিয়া আর কথা কি বলবো!

তো, এইটা একদিনে শুরু হয় নাই। এই নাক-উঁচা জিনিসটা কলকাতার কলোনিয়াল সাহিত্য থিকা ইনহেরিয়েট করছেন ‘৬০-এর দশকের ‘কমিউনিস্টরা’, পরে বি.সা.ক., উদীচী, ছাত্র ইউনিয়ন, এমনকি বাংলা-একাডেমি ও ভার্সিটি এডুকেশনের ভিতর দিয়া ইন্সিটিটিউশনালাইজ হওয়ার পরে পরথম আলো, বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এবং ই-আরকি টাইপ পেইজগুলার মাধ্যমে একটা ক্লাস-কারেক্টারেস্টিকস (এবং এক রকমের সাহিত্য-করা) হিসাবে ছড়ায়া পড়ছে এবং পোতিষ্ঠা পাইছে এখন। বাংলাদেশে কমিউনিস্ট, বিপ্লবী, ইন্টেলেকচুয়াল, পেরমিক হওয়ার জন্য এইরকম হিউমার স্কিল থাকাটা মাস্ট। মানে, কাউরে ছোটলোক বানায়া হিউমার করতে না পারলে ‘মানুশ’-ই হইতে পারবেন না আপনি!

ডোন্ট গেট মি রং, হিউমার করা কোন খারাপ কাজ না, ভালোবাসা বা ঘৃণার মতোই বেসিক হিউম্যান জিনিস; কিন্তু বাংলাদেশে এখন হিউমার করা বলতে যে ‘সিরিয়াস-আলাপ’ এড়ানো, ‘জাতে-উঠার’ টুল হিসাবে ইউজ করা হয়, সেইটা ওভারলুক কইরা থাকা তো মুশকিলই আসলে।

তো, এই ধরণের ট্রেন্ডটার নাম দিতেছি, ইয়ার্কি-বলদ। এরা হিউমার-প্রাণী। যে কোন উপায়ে হাসতে পারাটাই এদেন লাইফের মঞ্জিলে মাকসুদ। (হাউএভার, হিউমার জিনিসটা এইটুকুই না আর কি!)

 

জানুয়ারি ১৭, ২০২২

বাংলাদেশে হিন্দু-ব্রাহ্মণ্যবাদ হইতেছে কালচারাল ব্রাহ্মণ্যবাদের একটা পার্ট। মানে, এইটাই একমাত্র ঘটনা না। ব্রাহ্মণ্যবাদ বা জাতে-উঠা, ‘শিক্ষিত’ ও ‘কালচারাল’ হওয়ারই একটা ঘটনা। (রিলিজিয়াস টার্মে এখনো অনেকটা ‘হিন্দু’-ঘেঁষা আর কি।)

‘জাত’ জিনিসটা ‘ধর্ম’-এর ভিতরই আটকানো না, বরং আমাদের হায়ার্কি-বেইজড সোসাইটির কোর একটা জিনিস।

হিন্দু-ধর্মের ‘ব্রাহ্মণ’ হইতেছে ইসলাম-ধর্মে ‘আশরাফ’, আর সেক্যুলার-ধর্মে অনেক সময় ‘ভার্সিটি-পাশ’। এইরকম।

#########

রং দে বাসন্তী’র এই সিন’টার কথা আমি আগেও দুয়েকবার কইছি। স্টুডেন্টরা যখন ডিফেন্স মিনিস্টার’রে খুন করলো (মিগ-বিমান জালিয়াতির কারণে অদের ফ্রেন্ড মারা যাওয়ার কারণে), খুন করার পরে দেখে, আরে কি ঘটনা! মিডিয়া তো তারে উল্টা হিরো বানায়া দিতেছে!

তখন অরা গিয়া সরকারি রেডিও-স্টেশন দখল করে। যেইখানে অদের এক ফ্রেন্ড চাকরি করে, ডিজে হিসাবে। ফ্লপ বইলা তারে ভোরবেলার সেশনে রাখে। তো, অর শো’তে ঢুইকা স্টুডেন্টরা যখন এনাউন্স করে, আমরা ডিফেন্স মিনিস্টার’রে খুন করছি, তখন তো পুরা ইন্ডিয়া থিকা কল আসতে শুরু করে। অই ফ্লপ ডিজে ফ্রেন্ড তো খুশি হয়া যায়; যে, আরে ইয়ার, তোমরা তো ফেমাস হয়া গেছ!

কিন্তু একটু পরেই কমান্ডো বাহিনি আইসা রেডিও-স্টেশন ঘিইরা ফেলে, গুলি করতে থাকে! তখন অই ফ্রেন্ডটা অবাক হয়া যায়, আরে, গুলি কেনো করতেছে! এইটা তো আন-রিয়েল!

তো, আজকে সিলেটে সাস্টের সামনে পুলিশের গাড়ি দেইখাও অবাক হইতেছেন অনেকে। আন-রিয়েল, সার-রিয়েল ভাবতেছেন! উনাদের ইনোসেন্স আসলে একটা ক্রুয়েলিটির ঘটনা।

সিনেমা’তে এর পরের ঘটনা আরো বাজে। যারা ডিফেন্স মিনিস্টার’রে খুন করছিল, অরা হাসি-ঠাট্টা করতে থাকে, জেলখানায় কি করবে। কিন্ত কমান্ডোদেরকে বইলা দেয়া হয় অদেরকে লাশ না বানায়া যেন বিল্ডিং থিকা বাইর না করা হয়।

আমরা আশা করতে পারি পুলিশ-রেব-বিজিবি সাস্টের কোন স্টুডেন্টরে গুম কইরা ফেলবে না। খুন করবে না। রাতের অন্ধকারে লাইট অফ কইরা দিয়া তান্ডব চালাবে না, মতিঝিলের মতো। সিনেমা’তে আন-রিয়েল হইলেও দেখতে পাইছি আমরা জিনিসগুলা। আমাদের বাকশালি-মিডিয়া অই জিনিস আমাদেরকে জানতেও দিবে না।

সাস্টের স্টুডেন্টদের সাথে এইরকম যে হইতে পারে, সেই সম্ভাবনা নিয়া আমাদের সজাগ থাকা দরকার।

 

জানুয়ারি ১৮, ২০২২

নয়া বাকশাল এবং বাম-মিডিয়া-বুদ্ধিজীবী গং যে একই ঘটনা এইটা ক্লিয়ারলি টের পাইবেন নারায়নগঞ্জে আইভি’র ঘটনা’টাতে। কে জানি বলতেছিল, নারায়ণগঞ্জে পরথম আলো’র ক্যান্ডিডেট আইভী জিতছেন!

তো, আইভি হইতেছেন একজন ভালো-বাকশালি’র নমুনা। যতদূর জানি উনি মানুশ হিসাবে খারাপ না, ভালো। কিন্তু এইটারে ভুল বুইঝেন না, ভালো হওয়াটা উনার যোগ্যতা না, উনার যোগ্যতা হইতেছে, বাকশালি হইতে পারাটা।

খেয়াল কইরা দেখবেন, বাকশালের বাইরে বাংলাদেশে কোন ‘ভালো-লোক’ তেমন নাই! এইটা হইতেছে বাম-বাটপার, মিডিয়া-বুদ্ধিজীবীদের কারবার, কালচারাল বিজনেস।

এর বাইরে যে বাংলাদেশে ভালো-মানুশ নাই – তা না, বরং ‘বাকশাল’ হওয়ার ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল না কইরা বাংলাদেশে আপনি ‘ভালো-মানুশ’ হইতে পারবেন না (পাবলিকলি, পলিটিক্যালি)।

হুজুর-মওলানা’রা তো আছেনই, পটেনশিয়াল টেররিস্ট, রেপিস্ট, এবং সেক্সিস্ট; বিএনপি’র লোক তো বাঙালি-কালচারই বুঝে না! তারপরে নুরা, নুরুল হক বা নুর বলা যাবে না প্রাইভেট কনভারসেশনে! মানে, এরা তো ‘ভালো-মানুশ’ না! তাই না? 🙂

#########

আলম খানের ১৯৭৫ সালের এই গানটা বাংলাদেশি সিনেমার শুরুর দিকের ‘আধুনিক গান’ একটা। কিন্তু এইটা উনার অরিজিনাল সুর না। এইটা একটা হিন্দি-গানের সুর। আর.ডি.বর্মনের, ১৯৭৩ সালের। তখনকার সময়ের অনেক হিট একটা গান। হিন্দি গানটা লেখছিলেন কবি সাহির লুধিয়ানভি। (উনারে চিনবেন কেউ কেউ পাঞ্জাবি রাইটার অমৃতা প্রিতমের প্রেমিক হিসাবে।)

তো, বাংলা-সিনেমা যে কলকাতারে কেবলা না মাইনা হিন্দি-সিনেমারে কেবলা মানতে শুরু করলো, সেইটার ম্যানিফেস্টশন হইতেছে এই গানটা। মানে, এর আগে-পরে তো অনেক ঘটনা আছেই। কিন্তু পাকিস্তান আমলে ‘বাঙালি’ প্রমাণ করার লাইগা যেইরকম হারমোনিয়াম বাজানো লাগতো, বাংলাদেশ হওয়ার পরে যেহেতু রাষ্ট্রীয় পরিচয়েই ‘বাঙালি’ হওয়া গেছে, এই কারণে আলাদা কইরা হারমোনিয়াম বাজানোর দরকার’টা কইমা আসার কথা। (অবশ্য ১৯৭০ সালেই দীপ নিভে নাই সিনেমাতে রাজ্জাক গিটার হাতে নিয়া গান গাইতেছিলেন, সত্য সাহা’র মিউজিকে: ঐ দূর, দূর দূরান্তে…। বাংলা-গান মানে হারমোনিয়াম – এই জায়গা থিকা বাইর হয়া আসার ঘটনা একটা জায়গা থিকা শুরু হয় নাই আর কি!)

কিন্তু এই জায়গা থিকা, বাংলাদেশে কলোনিয়াল-কমিউনিস্টদের হিন্দি-ঘৃণা, ইংরেজি-ঘৃণা ১৯৯০ পর্যন্ত খুবই স্ট্রংগলি চালু ছিল। মানে, অইটারে খালি ইন্ডিয়ান-পশ্চিমা ‘সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ’ হিসাবে রিড করলে ভুল হবে। অইটা ছিল কলোনিয়াল-বাঙালি হয়া থাকার একটা চাপ তৈরি করার জায়গা। যেই কারণে খেয়াল কইরা দেখবেন, ১৯৯০’র আগে আজম খান কোন গায়ক-ই হইতে পারেন নাই, একটা ‘অপসংস্কৃতির’ ধারক-বাহক হয়া ছিলেন অনেকদিন। ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফিরোজ সাঁই’রা ফোক-টোক গাইয়া কিছুটা ‘গায়ক’ হইতে পারলেও।

মানে, আর.ডি.বর্মনও কিন্তু অনেক ইংরেজি গানের হিন্দি-টিউন বানাইছেন, দুইটাই ইক্যুয়ালি সুন্দর হইছে। অনেক পরে, কেয়ামত সে কেয়ামত তক যেইরকম পপুলার হইতে পারছে, এই গানটাও অই ট্রাডিশন’টার শুরুর দিকের ঘটনা। তখন কাভার-সং, রিমেক-মুভি এইসব ধারণা এতোটা চালু ছিল না বইলাই ‘নকল’ না আর কি এতোটা! হইলেও, সেইটা যে কলকাতার নকল না, এইটারে এটলিস্ট রিকগনাইজ করা দরকার।

গানের নাম: ওগো তুমি যে আমার কতো প্রিয়
সিঙ্গার: ফেরদৌস ওয়াহিদ
লিরিকস: মুকুল চৌধুরী
মিউজিক: আলম খান
সিনেমার নাম: লাভ ইন সিমলা
ডিরেক্টর:আবুল বাসার
রিলিজ: ১৯৭৫

 

জানুয়ারি ১৯, ২০২২

যেই অফিসে আমি চাকরি করি, সেই অফিস-বিল্ডিংয়ে আমাদের ফ্লোর থিকা উঠা-নাম করার লাইগা দুইটা লিফটের একসেস আছে। একটা একটু ছোট, কিন্তু বেশি কাস্টোমাইজড, মানে কম ফ্লোরে থামে। আরেকটা সাইজে একটু বড়, একটু কম কাস্টোমাইজড, মানে বেশি ফ্লোরে থামে।

তো, আমি খেয়াল কইরা দেখছি, সময় খুববেশি এইদিক-সেইদিক হয় না, বরং বড়’টাতে উঠলে মানুশ কম থাকে, গাদাগাদি কম হয়। যেইটা সামনে থাকে, সেইটাতেই উঠি। কিন্তু মুশকিল হইলো, বড় লিফট’টার সামনে দাঁড়াইলে পরিচিত লোকজন ডাকাডাকি করতে থাকে, এইটাতে চইলা আসেন, সময় কম লাগবে! মানে, লিফটের পারপাস’টা কি? তাড়াতাড়িই তো নামতে চাইতেছেন। তো, যেইটা তাড়াতাড়ি যাওয়া-আসা করে, সেইটা দিয়া নামবেন না আপনি!

আমি শিওর, যারা এইরকম ভাবেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফেইসবুকে জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইনও শেয়ার দিয়া থাকতে পারেন: “আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না” 🙂

##########

বাংলাদেশে এমন হাজার-হাজার ইন্টেলেকচুয়াল পাইবেন, যারা দাবি করেন যে উনারা আওয়ামী-লীগ/বাকশাল করেন না, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানরে পছন্দ করেন।

কিন্তু এমন একজন ইন্টেলেকচুয়াল পাওয়া মুশকিল, যিনি বিএনপি করেন না, কিন্তু জিয়াউর রহমান’রে পছন্দ করেন।

এইটা খালি রেয়ার-ই না, আমাদের পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের যেই বেইজ, সেইখানে এইরকম একটা পজিশন মোটামুটি ইম্পসিবল একটা ঘটনা।

##########

এই জিনিসটা খুব স্ট্রংগলি আছে আমাদের চিন্তা-ভাবনায় যে, পলিটিক্স নিয়া তো কথা বলবে পলিটিশিয়ানরা বা পাবলিক হেলথ নিয়া কথা বলবে ডাক্তার’রা, সাহিত্য তো করবে সাংবাদিক আর ভার্সিটি-কলেজের টিচার’রা (প্রাইমারি বা হাইস্কুলের টিচার হইলেও হবে না)! মানে, সেক্টর আলাদা আলাদা কইরা ভাগ করা। যে কোন বিষয়ে বা ইস্যুতে কথা কইতে গেলে, অই বিষয়ে এক্সপার্ট হইতে হবে!

তো, এইখানে আমার বলার পয়েন্ট তিনটা।

এই আলাপে ধইরাই নেয়া হয় যে, সবাই এক্সপার্ট অপনিয়ন দিতেছে, কেউ ফিলিং এক্সপ্রেস করতেছে না। চোখের সামনে একটা জিনিস দেখলে, সেইটা নিয়া কথা বলতে পারেন তো আপনি! কথা-বলা মানেই এক্সপার্ট-অপিনিয়ন দেয়া না। আবার, কথার কথাও না।

আপনি যেইভাবে কানেক্ট করতেছেন ইস্যুটার লগে, যেইভাবে দেখতেছেন, সেইটা ইউনিক পারসপেক্টিভও হইতে পারে। যারা জানা-শোনা লোক আছেন, যাদের ‘কাজ’-ই হইতেছে অই সেক্টর নিয়া, উনারা জিনিসগুলা হয়তো ধরতে পারবেন। মানে, অডিয়েন্স হিসাবে আমরা আসলে ‘এক্সপার্ট’ বা ‘প্রফেশনাল’ না বরং।

এই কারণে আমরা ‘এক্সপার্ট-অপনিয়ন’ শুনতে চাই। আমাদের মতো ‘সাধারণ’ কেউ এইগুলা নিয়া কথা কইতেছে, সেইটারে ‘অফেন্সিভ’ লাগে। আমারই মতো ডাইল-ভাত খায়, হাগে-মুতে, ইম্পর্টেন্ট কথা কেমনে কয়!

তো, এক্সপার্ট-অপনিয়ন বইলা একটা ঘটনা অবশ্যই আছে, কিন্তু এর বাইরেও কথা-বলার জায়গাগুলা থাকাটা বাজে-জিনিস না, সবসময়। এমনকি ‘আজাইরা হাউকাউ’ করার পাশাপাশি ‘কথা বলতে না দেয়া’র একটা অজুহাত’ হিসাবেও ইউজড হইতে পারে। দুইটাই আছে, বা থাকতে পারে।

সেকেন্ড পয়েন্ট, প্রফেশনালিজম হইতেছে ওভার-রেটেড একটা জিনিস এবং বেশিরভাগ সময়ই মিস-লিডিং একটা ঘটনা। কিছু রিচুয়াল এবং ভাব-ভঙ্গিমারেই আমরা ‘প্রফেশনালিজম’ হিসাবে মার্ক করতেছি কিনা, খেয়াল করা দরকার।

বেশিরভাগ কেইসেই ‘নলেজ’ জিনিসটা হয়া উঠতেছে সার্টেন টার্ম ও ভোকাবুলারি’র ভিতর দিয়া কথা কইতে পারাটা। যেইখানে একটা একাডেমিক জানা-বোঝা ও প্রফেশনাল এক্সপেরিয়েন্সটা দরকার। এইটা অ-দরকারি না, কিন্তু অইটা একটা বেরিয়ার হয়া উঠতেছে কিনা, সেইটাও খেয়াল করতে পারাটা দরকারি। মানে, পজিশন, পাওয়ার এবং অথিরিটি’রে নলেজ-সিস্টেম থিকা আলাদা করতে পারা তো কঠিন কাজই। কিন্তু এটলিস্ট কনশাস থাকা যাইতে পারে।

লাস্ট পয়েন্ট হইলো, এই জিনিসগুলা ধীরে ধীরে এচিভ করার ঘটনাই বেশিরভাগ সময়। কেউ জন্ম নিয়াই কোন বিষয়ে এক্সপার্ট হয়া উঠে না, তার আগ্রহ, এনকোয়ারি, জানতে-থাকা এবং প্রাকটিস করার ভিতর দিয়া এক্সপার্ট হয়া উঠতে থাকেন কেউ কেউ। মানে, এক্সপার্ট-অপিনিয়ন দেয়া এবং জরুরি-আলাপ করা জিনিসটা খালি যিনি বলতেছেন, তার ঘটনাই না; অডিয়েন্স হিসাবে আমাদের বুঝতে পারা বা কানেক্ট করতে পারার ঘটনাও, সবসময়।

 

জানুয়ারি ২০, ২০২২

ভাষাও তো আসলে রিফ্লেক্টিভ একটা জিনিস।

এইটা মনে হইতেছিল, এই ডায়ালগ’টা কথা মনে কইরা যে, “ইভেন গড ইজ অ্যা মনার্কিস্ট!” অথচ ঘটনা হইতেছে কোনরকম “খোদার আদেশ” বা দোহাই ছাড়া “রাজতন্ত্র” কায়েম করাটা মুশকিলেরই ঘটনা ছিল। এইটা হিন্দু-রাজা, খ্রিস্টান-রাজা, বা এমনকি মুসলিম-রাজাও হোক, এক ধরণের রিলিজিয়াস-অথরিটির ভিতর দিয়াই ফাংশন করতো। মানে, গড রাজতন্ত্রের সার্পোটার না, বরং এক ধরণের গডের ধারণার বাইরে রাজতন্ত্র নিজেরে টিকায়া রাখতে পারার কথা না। পরে, সেক্যুলার-ধর্মের লোকজন যে নিজেদেরকে ডেমোক্রেটিক বইলা আইডেন্টিফাই করতে পারে, সেইখানে এই গড-বিরোধিতার একটা পলিটিক্যাল ঘটনা থাকতে পারে।

মানে, জিনিসটা স্ট্রেইট মিনিংয়ের বিপরীতে স্ট্রেইট অপজিট না, কিন্তু রিফ্লেটিভ হওয়ার কথা।

#########

কলোনিয়াল-বাংলা’র হ্যাং-ওভার নিয়া পইড়া থাকা লোকজন ছাড়াও কিছু মানুশজন আছেন, যারা অনেক সময় অভিমান (এবং অনেক সময় আহাজারিও) করেন যে, ইন্ডিয়ান-বাংলার মিডিয়া কেন বাংলাদেশ নিয়া পাবলিসিটি করে না! কেন অরা বাংলাদেশের রাইটার, সেলিব্রেটিদেরকে খেয়াল করে না!

এইটা নিয়া তো অনেক সোশিও-পলিটিক্যাল আলাপ-টালাপ হইতেই পারে, কিন্তু অইগুলার বাইরে বা অইগুলাসহই, দুই/তিনটা জিনিস খেয়াল করা দরকার।

ইন্ডিয়ার একটা প্রদেশ হিসাবে পশ্চিম-বাংলার মিডিয়া তো টিইকাই আছে, বাংলাদেশি অডিয়েন্সের কারণে! ইউটিউব, টিকটক এন্টারটেইনমেন্ট স্পেইসটা দখল শুরু করার আগে জি-বাংলা, স্টার-জলসা ছিল বাংলাদেশের এক নাম্বার চ্যানেল (এখনো সেইটাই থাকার কথা) এবং রোজার সময় অই চ্যানেলগুলাতে যেইরকম “মাহে রমজান” দেখছি, বাংলাদেশি চ্যানেলগুলাতেও অইরকম ছিল না। আমার ধারণা, এইবার নজরুলের হামদ-নাতও বাজানো হবে।…

মানে, এই কালচারাল ইন্ড্রাষ্ট্রির কাজ তো পশ্চিম-বাংলার লোকজনরে “বাংলাদেশি কালচার” শিখানো না, বরং বাংলাদেশের অডিয়েন্সের কাছে ইন্ডিয়ান-বাংলার কালচার বেচার ব্যবস্থা করা!

আজকে যদি পশ্চিম-বাংলার বই, সিনেমা, টিভি-চ্যানেল বাংলাদেশে বন্ধ কইরা দেয়া হয়, অই কালচারাল ইন্ড্রাষ্ট্রিটা কয়েক বছরের মধ্যেই মারা যাবে। আমার ধারণা (একটু খোঁজ খবর নিলে শিওর হওয়া যাবে) ইন্ডিয়ার অন্য কোন প্রদেশে অদের কালচারাল প্রডাক্টগুলার কোন কনজিউমার বা ভিউয়ারশিপ নাই। মানে, বাংলাদেশে আমরা যেমন তামিল, মালয়ালম সিনেমা দেখি, পাঞ্জাবি গান শুনি, কলকাতার/ইন্ডিয়ান-বাংলার এইরকম কোন ইন্সফ্লুয়েন্স বা বাজার কোনটাই মেবি নাই। নিজেদের এরিয়াতেও কিছু বেচার মতো অবস্থা আছে কিনা, আমি শিওর না।

ইন্ডিয়ান-বাংলা তো ইন্ডিয়াতে নাই, আছে বাংলাদেশেই! যার ফলে, বাংলাদেশি লোকজনের কাছে ইন্ডিয়ান-বাংলা বেচতেছে। অইখানে এই বেইজটা নাই, বা হারায়া ফেলছে। এইটা বুঝতে রাজি হইলে অভিমান, আহাজারি’র জায়গায় করুণা বা দয়া-মায়া তৈরি হইতে পারে বরং।

সেকেন্ড কথা হইলো, এখন বাংলাদেশি জিনিস-পত্রই বাংলাদেশিদের কাছে বেচতে পারো তো! সেইটাও করতেছে কিছু কিছু। মিউজিক ট্যালেন্ট হান্টে বাংলাদেশি লোকজন নিতেছে তো! বাংলাদেশি নায়ক-নায়িকারাও যাইতেছেন, কবি-সাহিত্যিকরা যান তো মনেহয় সার্টিফিকেট আনতে! মানে, বাংলাদেশের জিনিস ভায়া কলকাতা হয়া আসলে ‘দাম’ বাড়ে এক রকমের কলোনিয়াল-বাংলার লোকজনের কাছে। কিন্তু বিজনেস হিসাবে তো টিকতে পারবে না আসলে। তারপরও এই জিনিসগুলা আরো বাড়বে। মানে, ইন্ডিয়ান-বাংলা মিডিয়ায় বাংলাদেশি জিনিসগুলা আরো স্পেইস দখল কইরা নিতে থাকবে, সেইটা মার্কেট ফোর্সের কারণেই হওয়ার কথা।

মানে, ইন্ডিয়ান-বাংলার মানুশজন বাংলাদেশি কালচারাল জিনিসগুলা জানে না – ব্যাপারটা এইরকম না, বরং ইন্ডিয়ান-বাংলা মিডিয়া কলোনিয়াল-বাংলার জিনিসগুলারে বাংলাদেশি অডিয়েন্সের সামনে ‘বাঙালি-সংস্কৃতি’ বইলা হাজির করতে চায়।

এইভাবে বাজার-দখলের পলিসি উনাদের কালচারাল ইন্ড্রাস্ট্রির জন্যও নেগেটিভ ঘটনাই হওয়ার কথা।

 

Leave a Reply