‘ছোটদের’ জিয়াউর রহমান

[ছোটদের বলতে ঠিক বাচ্চাদের না আসলে; বরং যারা সার্টেন-ভঙ্গিমার বাইরে, ট্রেডিশনের বাইরে চিন্তা করতে শিখে নাই, অইরকম ‘ছোটদের’ জন্য লেখা। পুরান বামপন্থীদের কিছু বই-টই আছে না – ‘ছোটদের রাজনীতি’ ‘ছোটদের অর্থনীতি’ অইটার রিভার্স-ভার্সন টাইপের। আরেকটু এডিট-টেডিট করা লাগবে হয়তো পরে, কিন্তু এই ছোট বইটা পড়তে পারেন, ইনিশিয়াল আইডিয়া হিসাবে।]

১.
বাংলাদেশে এমন হাজার-হাজার ইন্টেলেকচুয়াল পাইবেন, যারা দাবি করেন যে উনারা আওয়ামী-লীগ/বাকশাল করেন না, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানরে পছন্দ করেন।

কিন্তু এমন একজন ইন্টেলেকচুয়াল পাওয়া মুশকিল, যিনি বিএনপি করেন না, কিন্তু জিয়াউর রহমান’রে পছন্দ করেন।

এইটা খালি রেয়ার-ই না, আমাদের পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের যেই বেইজ, সেইখানে এইরকম একটা পজিশন মোটামুটি ইম্পসিবল একটা ঘটনা।

২.
– জিয়াউর রহমানের শাসন-আমল (১৯৭৯ – ১৯৮১) হইতেছে বাংলাদেশে ডেমোক্রেটিক শাসনের শুরুয়াত –

বাংলাদেশে ফার্স্ট ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন হইছিল ১৯৭৯ সালে। অই ইলেকশনে দেশের মানুশের ভোটে বাংলাদেশের ফার্স্ট ইলেক্টেড রাষ্ট্রপ্রধান হইছিলেন জিয়াউর রহমান। [ সেকেন্ড হইতেছেন বেগম খালেদা জিয়া, ১৯৯১ সালে। ]

সো-কল্ড বামপন্থীরা দেখবেন জিয়াউর রহমানরে “সামরিক-শাসক” কইতে কইতে মুখে ফেনা তুইলা ফেলে। অথচ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে কোন ইলেকশনের ব্যবস্থা করা হয় নাই, দেশের গর্ভমেন্ট ফর্ম করার জন্য দেশের মানুশের ম্যান্ডেট নেয়া হয় নাই। ১৫ মাস পরে, ১৯৭৩-এর মার্চ মাসের ইলেকশনে বাংলাদেশের মানুশরে ভোট দিতে দেয়া হয় নাই। ১৯৭৫-এ সব বিরোধীদল নাই কইরা দেয়া হইছিল। বাংলাদেশের মানুশের ভোট দেয়ার, রাজনীতি করার কোন অধিকার ছিল না।

এই নন-ডেমোক্রেটিক শাসন নিয়া কোন কথা শুনবেন না এই বাটপারদের মুখে। কারণ সো-কল্ড কমিউনিস্টরা ছিল অই জুলুমের শাসনের ইন্ট্রিগ্রাল পার্ট। এরা বিপ্লবী না, এরা নন-ডেমোক্রেটিক, এন্টি-পিপল ফোর্স, বাংলাদেশের রাজনীতিতে।

জিয়াউর রহমানের ইকনোমিক ইনিশিয়েটিভগুলা উনার পলিটিক্যাল আইডিওলজিরই কন্সিকোয়েন্স। উনি ডেমোক্রেটিক ছিলেন। এইটারে ‘পাকিস্তানি করণ’ বইলা প্রমাণ করতে চায় নন-ডেমোক্রেটিক বাম-বাকশালিরা। Continue reading

নোটস: এপ্রিল, ২০২৩ [পার্ট ২]

এপ্রিল ১৬, ২০২৩

এসি-বিপ্লবীরা

গত বছর যখন ইলেকট্রিসিটির ক্রাইসিস’টা ফার্স্ট শুরু হইলো তখন পাখি সব কিছু রব শুরু করছিল যে, “বিদ্যুত ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে” (যারা এইরকম বাংলা কয়, তাদের পাছায় না জানি কতো কারেন্ট!)। এমনো সাজেশনও আসছিল যে, অনেক সুইচবোর্ডে লালবাত্তি জ্বলে, অইগুলাও তো “নিষিদ্ধ” করা দরকার এখন!

মানে, কারেন্টের নামে যে হাজার হাজার কোটি লুটপাট হয়া গেছে, এখনো হইতেছে সেইটা নিয়া আলাপ নাই-না, অই আলাপগুলা নাই কইরা দেয়ার লাইগা এই লেভেলের বোকচোদামিগুলা করা হইছিল আসলে।

তো, এখন আসছেন এসি-বিপ্লবীরা। বাংলাদেশের কতো পারসেন্ট হাউজহোল্ড এসি এফোর্ড করতে পারে? ২%? ৫%?

বরং ঢাকার বাইরে কারেন্টই থাকে না! লোডশেডিংয়ের কি অবস্থা? গড়ে কয় ঘন্টা কারেন্ট থাকে, ঢাকার বাইরে জেলা-উপজেলা-গ্রামগুলাতে? সিলিং ফ্যান কি চালানো যায় ২৪ ঘন্টা? আইপিএস আছে কয়টা বাড়িতে? কতোক্ষণ ব্যাক-আপ দিতে পারে? রিচার্জেবল টেবিল ফ্যানের মার্কেটের কি অবস্থা?

[যারা বাসায় ও অফিসে এসি চালাইতে পারেন, তারা জেনারেটরে গ্যালন গ্যালন ডিজেলও ঢালতে পারেন। এইরকমের গরিব-মার্কা আলাপ করার দরকারও পড়ে না আসলে।]

এই আলাপগুলাই নাই! কারণ তাইলে রিয়ালিটি বাইর হয়া আসবে, রাজনীতি নিয়া কথা কইতে হবে। আর আমরা তো পলিটিক্স নিয়া কথা কইতে পারি না! তাই না? 🙂

যারা রুটি খাইতে পায় না, তাদের কেক খাওয়া উচিত কি উচিত না – এই নিয়া “বির্তক অনুষ্ঠান” আয়োজন করতে পারি বরং আমরা!

বিদ্যানন্দের বিরুদ্ধে এই যে rage, ভার্চুয়াল গণপিটুনি চলতেছে সেইটা এই কারণে না যে এরা দুই নাম্বারি করতেছে! (সেইটা তো কিছুটা করছে বা করতেছে।) বরং এরা বাংলাদেশে সরকারি-জুলুমের সহযোগি-প্রতিষ্ঠানে পরিণত হইছে, তাদের সোশাল এক্টিভিটির ভিতর দিয়া। অবৈধ-সরকারের চিহ্নিত দালালদেরকে তারা তাদের ব্যান্ড-এম্বেসেডার বানাইছে। আর সেইটা না-বুইঝা করছে – এইটা ভাবার কোন উপায়ও নাই আসলে।

সমাজে দান-খয়রাত একটা বড় বিজনেস। বড় বড় ইন্সিটিটিউশনাল ফান্ডিংগুলা ধরতে হইলে সরকারের লগে ভালো খাতির আছে বা ম্যানেজ করতে পারবে, সেইটাও মেবি দেখানো লাগে। কিন্তু সরকারি-দালাল হয়া উঠলে সেইটা পসিবল না, বরং ব্যাক-ফায়ার করার কথা।

আমার ধারণা, বিদ্যানন্দের কাজকাম এমনিতেই অগোছালো ছিল। অর্গনাইজেশনাল গোল, স্টেটমেন্ট বা অপারেশনাল প্রসেসের পাবলিক কোন ডকুমেন্ট দেখি নাই। এন্টি-পিপল একটা রেজিমের পক্ষে থাইকা আপনি পিপলের ফর-এ কাজ করতেছেন – এইটা বিশ্বাস করানোটা এখন কঠিন-ই হওয়ার কথা আরো, ডোনারদেরকে এবং দেশের মানুশদেরকেও।

Continue reading

নোটস: এপ্রিল, ২০২৩ [পার্ট ১]

এপ্রিল ১, ২০২৩

এইটা মনে হইতেছিল John Wick 4 দেখতে গিয়াই যে, আসল ভিলেনের লগে মারামারি কিন্তু খুব অল্পই হয় নায়কের। যে কোন একশন-মুভিতে ভিলেনের চেলা-চামুন্ডা, ছোট ছোট ভিলেনরে সামলাইতেই আসলে টাইম লাগে বেশি।

আগে তো ভাবতাম যে, সিনেমারে লম্বা করার লাইগা এইগুলা করে। এখন অইটা তো আছেই, কিন্তু তারপরও ভিলেন নরমালি দলবল নিয়া থাকে, একলা থাকে না। অই দলবল সামলাইতেই টাইম বেশি লাগে আসলে। অই ছোট-মাস্তানগুলারে সাইজ কইরা ফেললে পরে দেখা যায়, ভিলেন এতো “প্রবল পরাক্রমশালী” কিছু না! মানে, একটা লাস্ট ফাইট তো হয়-ই। কিন্তু ভিলেনের সাঙ্গাতগুলারে সাইজ করা লাগে আগে।

মানে, বাংলাদেশের পলিটিকাল অবস্থার লগেও এই জায়গাটারে একটু মিলায়া দেখতে পারেন।

এপ্রিল ২, ২০২৩

– নুন-ভাত হোক, ফেন-ভাত হোক বা মাছ-মাংস-চাইল
গরিবের চাওয়া দালালদের কাছে সবসময় ‘ফানি’ ঘটনাই –

বাকশালি বাটপারগুলা ঘটনাটারে এইভাবে দেখাইতে চায় যে, ১৯৪৩’র সময়ে মানুশ নুন-ভাত চাইতো, ১৯৭৪’র সময়ে চাইতো ফেন-ভাত, আর এখন চাইতেছে মাছ-মাংস-চাইল! তো, এইটা হইতেছে উন্নয়ন!

মানে দেখেন, এরা কিন্তু একসেপ্ট কইরা নিতেছে আজকে বাংলাদেশের অবস্থা ১৯৪৩ বা ১৯৭৪’র মতোই। যে, মানুশ নিজে আর যোগাড় করতে পারতেছে না, কিনতে পারতেছে না! চাইতেছে, হাত পাততেছে! এই পয়েন্টটারে মিস কইরা যাওয়াটা ঠিক হবে না।

সেকেন্ড হইতেছে, ফুড হ্যাবিটের ব্যাপারটারেও কন্সিডার করেন। ঢাকার কোন হোটেলে কি সবজি-ডাল দিয়া খাইয়া আসতে পারবেন, মাছ বা মাংসের কোন আইটেম ছাড়া! মানে, তাইলে তো হোটেল-বিজনেসই বন্ধ হয়া যাবে! আগের দিনে তো পোল্ট্রি ছিল না, ফার্মিং ছিল না; মানুশ নুন-ভাত, ফেন-ভাতই খাইছে। এখন ফকিন্নির বাচ্চাগুলা কেন মাছ-মাংস খাইতে চায়! চেত’টা আসলে এইখানেও! (নুন-ভাত বা ফেন-ভাত খাইতে চাইলে যেন খাইতে দিত, বা তখন দিছে!)

দুইদিন আগেও ভিখারিরা ২টাকা ভিক্ষা চাইতো, এখন ১০ টাকা ভিক্ষা চায়। (পরে পলিসি বদলাইছে, কয় খাওয়ার টাকা দেন। একটা রুটি খাইতেও তো ১০ টাকা লাগে।) এতে কইরা ভিখারিদের ‘উন্নয়ন’ হয় নাই, লিভিং স্যান্ডার্ড বাড়ে নাই, খরচ বাড়ছে, টাকার দাম কমছে। নুন-ভাত, ফেন-ভাত এবং মাছ-মাংস-চাইলের ঘটনাটা এইরকমেরই।

থার্ড বা মেইন ঘটনা হইতেছে, ব্যাপারটা এইরকম না যে, এরা ‘ভুল-কথা’ বলতেছে, এরা জাইনা-শুইনা এই হাউকাউ করতেছে, যাতে কইরা মানুশের দুরাবস্থার কথা কেউ না বলে। এইটা কোন লজিকাল কথা বা পজিটিভ-প্রপাগান্ডাও না, এই স্রেফ একটা থ্রেট!

একটা আগলি ফান! যে, এইগুলা নিয়া কথা বলা যাইবো না! বললে তোমাদেরকে নিয়া সুশীল-হাসি হাসবো, ফান করবো আমরা! তোমাদেরকে আমাদের দলে নিবো না।

মানে, এইটা লজিকাল কোন আর্গুমেন্টই না, বরং এক ধরণের ক্লাস মেনিফেস্ট করা যে, তোমাদের হায়-হুতাশ নিয়াও আমরা হাসি-ঠাট্টাই করি! যার ফলে এই দালালদের কথার কোন জবাব হয় না, এর যে বড় “ফান” কইরাই এর জবাব দেয়া লাগে। আর হইতেছেও সেইটাই।

Continue reading

নোটস: মার্চ, ২০২৩ [পার্ট ২]

মার্চ ১৬, ২০২৩

১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ-রে যে এখনো ভয়াবহ বইলা ভাবতে পারি আমরা, এর একটা কারণ হইতেছে জয়নুল আবেদীনের স্কেচগুলা। এই ছবি বাদ দিলে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের “অশনি সংকেত” নভেলে কিছুটা আছে। এর বাইরে এই ঘটনার তেমন কোন ডকুমেন্টশন নাই সাহিত্যে, আর্টে।

আব্বাসউদ্দিন আহমদ উনার অটোবায়োগ্রাফিতে বলতেছেন কলকাতা ধীরে ধীরে কালো হয়া যাইতেছিল, গেরামের ময়লা-রংয়ের মানুশ দিয়া ভইরা যাইতেছিল। কিছুদিন ছিল। তারপরে পুলিশ একদিন তাদেরকে ধইরা নিয়া শহরের বাইরে ফেলে দিয়া আসলো। মানে, এই অবস্থাটা বেশিদিন ছিল না। (আর যাদের কথা-ই পাইবেন, দেখবেন যে, একটু দূর থিকাই উনারা দেখতেছেন। মানে, উনারা, মধ্যবিত্ত শিল্পী-সাহিত্যিকরা অই ক্লাসের লোকজন ছিলেন না, যাদেরকে দুর্ভিক্ষের কারণে না-খায়া থাকতে হইছিল।…) জয়নুল আবেদীন মেবি তখনই ছবিগুলা আঁকছিলেন।

সেই তুলনায় ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা যে আমরা মনে করতে পারি না, এর একটা কারণ হইতেছে, এইটা নিয়া তেমন একটা আর্ট বা লিটারেচার নাই। এক আছে আজম খানের “বাংলাদেশ” গানটা। উনি বলতেছিলেন, কমলাপুর রেলস্টেশন থিকা নটরডেম কলেজ পর্যন্ত কালা কালা কাদা হয়া গেছিল। তবে দুর্ভিক্ষের কিছু নিউজ এখনো খুঁজলে পাওয়া যাবে, বিবিসি-র একটা নিউজ ছিল মেবি, ডিটেইল। যার ফলে, দুর্ভিক্ষ হয় নাই – এই ক্লেইম করাটা মুশকিলের হয়। স্বীকার করা লাগে।

এখন গত এক বছর ধইরা বাংলাদেশে যে “নিরব” দুর্ভিক্ষ চলতেছে, সেইটা দুর্ভিক্ষ মনে হয় না, এরও একটা বড় কারণ হইতেছে আর্ট-কালচারে ব্যাপারটা তো নাই-ই, নিউজও নাই তেমন। “আমি না খায়া আছি” – এই কথা মানুশ-জন তো পত্রিকা-অফিসে গিয়া, সাংবাদিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়া বইলা আসবে না। কিন্তু আশেপাশের “লো-ক্লাসের” 🙁 লোকজনের দিকে তাকাইলে কিছুটা হইলেও খেয়াল করতে পারার কথা আমাদের।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আর্ট-কালচার দিয়া, নিউজ-টিউজ বেইজ কইরা “সমাজের সত্য” আবিষ্কার করতে চাওয়ার যেই রেফারেন্স-সিস্টেমটা সেইটা ভুয়া না হইলেও এইটারে রিয়ালিটি কনজামশনের একমাত্র রাস্তা হিসাবে ধইরা নিলে অনেক কিছু দেখতে পাবো না আসলে আমরা।

কোন কিছু জানতে হইলে, শুরুতেই রেফারেন্স সিস্টেমটা নিয়া ক্রিটিকাল হওয়া দরকার আমাদের।

যেমন ধরেন, বাংলাদেশের এখনকার বেসরকারি বিটিভিগুলার নিউজগুলারে রেফারেন্স হিসাবে যদি অথেনটিক ধইরা নেন, তাইলে জিনিসগুলা ফেইক না রিয়েল – এই সিউডো-তর্কে না গিয়াও, মানে ১০০% অথেনটিক নিউজ নিলেও, ভুল এবং ভয়াবহ একটা রিয়ালিটিতে গিয়া ল্যান্ড করবেন আপনি, যার লগে আমাদের দেশের, চারপাশের তেমন কোন রিলিভেন্সই নাই।

একইভাবে আপনি গুগুল-সার্চে বা অনলাইনে যদি বাংলাদেশি কোন মেটেরিয়াল – ছবি, সিনেমা, গান খুঁজেন, তেমন একটা পাইবেন না। আপনারে যাইতে হবে মিডল-ইস্টের “প্রবাসীদের” জায়গাগুলাতেও, অইগুলাতে কিছু জিনিস পাইতে পারেন। তা নাইলে ইন্ডিয়ান-বাংলার লগে খালি মিক্স-আপ করা-ই না, বরং অইগুলাই বেশি, অইগুলারেই মনে হবে “অরিজিনাল বাংলা”!

তার কারণ হইতেছে, এই যে অনলাইনের দুনিয়া – এইটা আসছে বইয়ের ভিতর থিকা। বই ছাপানো শুরু হইছে কলিকাতারে সেন্টার কইরা। বাংলা-ভাষার বইগুলা ছাপা হইছে অইখানের প্রেসগুলাতে। কলেজ, পত্রিকা, সরকারি-অফিসগুলাও ছিল অইখানে। কিন্তু প্রেসে বই ছাপা-হওয়ার আগে দুনিয়াতে কি কোন জ্ঞান-বিজ্ঞান, আর্ট-কালচার ছিল না? 🙂 ছিল, কিন্তু সেইটার ফর্মটা, ফরম্যাট’টা ছিল আলাদা।

যেই কারণে হিস্ট্রিতে বইয়ের আগের ফেইজটাতে যদি যান (পুঁথি, পালাগান, গীতি-কবিতা…) দেখবেন বাংলা-ভাষাটা অন্যরকম। এমনকি অইসব জায়গায় কলিকাতা বইলা কোন জিনিসও পাইবেন না, কারণ ব্যাপারটা শুরু হইছে কলোনিয়াল আমল থিকাই।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, কোন রেফারেন্সরে ফলো করবেন না – তা না, রেফারেন্সের ব্যাপারে ক্রিটিকাল থাকতে হবে আমাদেরকে। তা নাইলে ব্যাপারটা নেরো একটা পাইপের ভিতর দিয়া দেখার ঘটনাই হবে। আমাদের আই-সাইটের অবশ্যই একটা লিমিটেশন আছে, কোন না কোন রেফারেন্স-সিস্টেমের ভিতর দিয়াই আমাদেরকে দেখতে হবে, কিন্তু একইসাথে কোন জায়গাটার ভিতর দিয়া আমরা দেখতেছি, অই জায়গাটা নিয়াও ক্রিটিকাল থাকতে পারাটা জরুরি।

যারা বইয়ের বাংলা পড়েন, তারা দেখবেন এই কারণে ‘ফেইসবুকের বাংলা’ 🙂 নিতে পারেন না। ইউটিউবে মিডল-ক্লাস ক্রাউডে জমা হওয়া গান শুইনা মনে করেন, বাংলাদেশে তো গানের কোন ‘ঐহিত্য’ নাই! তো, এইগুলা যতটা না একটা সত্য বা মিথ্যা কথা, তার চাইতে একটা এগজিস্টিং রেফারেন্স সিস্টেমের বাইরে না যাইতে চাওয়ার ঘটনাই, মোস্টলি।
Continue reading

নোটস: মার্চ, ২০২৩ [পার্ট ১]

মার্চ ২, ২০২৩

এইরকম আলাপ তো মাঝে-মধ্যে দেখি ফেইসবুকে যে, আপনার পড়া ফার্স্ট বই কোনটা? বা আপনার পড়া ফার্স্ট রিমার্কেবল বই কোনটা? বা কোন বইটার কথা আছে? বা কোন বইটা দিয়া “গল্পের বই” পড়া হইছে আপনার? এইরকম।

তো, এইগুলাতে খুব বেশি এনগেইজড হওয়া হয় না। কিন্তু মনে হইতেছিল, আমাদের জেনারেশনে সবারই কম-বেশি “বই পড়া” শুরু হইছে আসলে সেবা-প্রকাশনী’র বইগুলা দিয়া। (হুমায়ূন আহমেদ তখনো সেলিব্রেটি হন নাই, তার কিছুদিন পরেই হইছেন।) কারো হয়তো তিন গোয়েন্দা, কারো হয়তো ওয়েস্টার্ন, কারো হয়তো মাসুদ রানা দিয়া। মানে, “সেবা প্রকাশনী”র বই বইলা একটা কেটাগরি এগজিস্ট করে এখনো বাংলাদেশের বইয়ের মার্কেটে।

তো, বইগুলা কেমন ছিল? 🙂 হার্ডকাভার তো অবশ্যই না, অত বেশি মোটা-কাগজেরও না; ছিল নিউজপ্রিন্ট কাগজে ছাপানো। ছাপানো খারাপ না, তবে এভারেজই। ফন্ট-টন্টও ছোটই। কাভার তো বিদেশি ছবি মাইরা দিয়া বসানো। মানে, কোয়ালিটি সেন্সে যদি বলেন, আদর কইরা “এভারেজ”-ই বলা যাবে, এর বেশি বললে সেইটা সত্যি-কথা বলা হবে না।

মানে, বই বলতে যেই সফিশটিকেশন আমরা বুঝি, কোয়ালিটি আমরা বুঝি, সেই পেরামিটারগুলাতে টেকনিকাল সেন্সে “ভালো বই” না। সাহিত্য হিসাবেও “বাজে বই” কেটাগরিতেই ফেলা হইতো। কিন্তু আমাদের টিনএইজ বয়সে অইগুলাই ছিল আমাদের বই।

আমি বলতে চাইতেছি, টেকনিকাল এফেশিয়েন্সি কোন খারাপ জিনিস না, কিন্তু একটা বই দেখতে সুন্দর বইলাই সেই বই আমরা পড়ি না। এমনকি এগজিসটিং সাহিত্য-ধারণার লগে মিলে বইলাই সেইটা ভালো-বই না।

বরং আমি যেইটা মনে করতে পারি, সেবা প্রকাশনীর বই যে পড়তে ভালো-লাগতো, এর একটা মেজর কারণ ছিল বইগুলাতে সাহিত্যিক-বর্ণনার চাইতে ঘটনার বর্ণনা বেশি থাকতো। ঘটনা তরতর কইরা আগায়া যাইতো। পড়তে কোন সমস্যা হইতো না। এমন একটা শব্দও ছিল না, যেইটা আমরা বুঝতাম না। স্মুথ একটা রিডিং এক্সপেরিয়েন্স দিতো। যেইটা সাহিত্য-পড়া লোকজন খুব একটা পছন্দ করতো না বইলা “খারাপ-বই” বলতো।

এখন অই সিউডো-তর্কে আমি যাইতেছি না। আমি বলতে চাইতেছি, যে কোন জায়গাতেই টেকনিকাল এফিশিয়েন্সটাই ঘটনা না। মিনিমাম একটা টেকনিকাল কোয়ালিটি থাকাটা বা সেন্স থাকাটা ভালো অবশ্যই, কিন্তু এইগুলা দিয়া কোন জিনিসরে বিচার করতে যাওয়াটা হাইট দেইখা বা কালার দেইখা মানুশের ভালো-মন্দ যাচাই করতে যাওয়ার মতোই আজাইরা ঘটনা অনেকটা।
Continue reading