বুক রিভিউ: দ্যা নর্থ এন্ড

ভার্সিটিতে পড়ার সময় রিফাত ভাইয়ের (কবি রিফাত চৌধুরী) লগে কয়েকদিন নীলক্ষেতের বাবুপাড়া বস্তিতে উনার ঘরে আড্ডা হওয়ার পরে, উনি আরেকজনের সাহিত্যিক’রে আমার পরিচয় দিলেন, ও হচ্ছে ইমরুল, অনেক বিদেশি সাহিত্য পড়েছে, অনেক ক্ল্যাসিক পড়া ছেলে… (রিফাত ভাই খুব শুদ্ধ-ভাষায় কথা বলতেন) আমি মোটামুটি পাজলড উনি কি আমার প্রশংসা করলেন নাকি বাঁশ দিলেন? (কারণ তখন আমি ইংলিশই পড়তে পারি না ঠিকমতো, বিদেশি লেখকের নাম-টাম বলতে পারি, এইরকম… ) এই অভ্যাস উনার ছিল, বলতেন যে, রাস্তায় কম-পরিচিত কেউ জিগাইলে বলবো যে, বেকারিতেই আছি! মানে লোকটা তো জানে না, ভাববে, কোন বেকারিতে কাজ করতাম, সেইটাই করতেছি, বেকার হয়তো ভাববে না, কি বলেন! বইলা নিজেই হাসতেন, শব্দের (নাকি নিজের) ডুয়ালিটি নিয়া…

তো, বর্ণালী সাহার বই নিয়া লিখতে গিয়া এই ‘ধান ভানতে শীবের গীতের’ কথা মনে হইলো, কারণ আমি খেয়াল কইরা দেখছি, এখনকার বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের গল্প-উপন্যাস আমি খুব কমই পড়ছি, আর খুব ইনটেনশনালিই; মেবি দুইটা কারণে। এক হইলো, যে কোন কিছু পড়লেই তো আমার হাত চুলকায়, জিব নড়তে থাকে কিছু কওয়ার লাইগা, আর বলাটা যতোই ট্রাই করি ‘হয়তো’ ‘মনেহয়’ দিয়া কইতে, খুব রুড জিনিসই হয়। মানে, ব্যাপারটা এইরকম না যে, আমি খুব ‘সত্যি’ কথা বলি, বরং আমি খুব গোড়া থিকা বাতিল কইরা দেয়ার জায়গা থিকা মেবি বলি 🙁 যার ফলে, একটা মিস-কমিউনিকেশন তৈরি হইতে পারে বেশিরভাগ সময়, অনেকে পড়ার পরে বলবেন, বইটা তো এইরকম না! উনি বই পইড়া এইরকম কথা কইলেন কেনো!… আরেকটা হইলো, অবভিয়াসলি, কি দরকার পড়ার! খুববেশি ইম্পর্টেন্ট হইলে তো পড়া-ই লাগবে কোন না কোন সময়…

এখনকার বাংলাদেশি গল্প-উপন্যাসের কথা আসতেছে কারণ উনার বইটা বাংলা-ভাষায় লেখা একটা সাহিত্যের বই, ফলে একটা এবসুলেট সাহিত্য-ধারণা থিকা দেখার বাইরেও একটা কম্পারেটিভ অবস্থার বেসিস দেখার একটা ঘটনা তো থাকা দরকার। তো, সেইটা এক রকমের এবসেন্টই থাকবে আসলে।…
দ্যা নর্থ এন্ড পড়তে গিয়া ওরহান পামুকের একটা কথা মনে হইতেছিল, কোন একটা লেখা বা ইন্টারভিউতে উনি বলতেছিলেন, একটা গ্লোবাল এফ্লুয়েন্ট মিডল-ক্লাস এমার্জ করতেছে সারা দুনিয়াতে, চীন, হংকং, ইন্ডিয়া, ব্রাজিল, তুরস্ক, ঘানা, সাউথ-আফ্রিকা সব জায়গার মিডল-ক্লাসের কিছু মিলের জায়গা বা কমন গ্লোবাল কালচার তৈরি হয়া উঠতেছে। আমার ধারণা, এই নভেলটা অই ক্লাসের মেজাজটারে আপহোল্ড করে। বাংলা-ভাষায় লেখা একটা ইন্টারন্যাশনাল নভেল হওয়ার মেজাজ নিয়া আছে।

এইটা মনে হওয়ার তো কিছু কারণ অবশ্যই আছে। ‘জোকার’ সিনেমা যেমন একটা রেফারেন্স। ডেনমার্কের কোন শহর, লন্ডন, ঢাকা, নিউ জার্সি’তে থাইকাও একলগে সবাই ‘জোকার’ সিনেমাটা দেখতেছে, আলাপ করতে পারতেছে, আর এইটা খুব দূরে দূরে ঘটতেছে – তা না, একই সাথে, একই দুনিয়ার ঘটনা এইগুলা, কানেক্টেডও, এই নভেলে।…

তাহমিমা আনামদের ইংলিশ নভেল যেইখানে ‘বাংলাদেশি উপন্যাস’ হইতে চায়, সেইটার রিভার্স একটা ঘটনার মতন। ‘বাংলাদেশি ইংলিশ নভেলে’ যেইখানে ‘প্রকৃত বাংলাদেশ’রে তুইলা ধইরার একটা ইনটেনশন কাজ করে বা ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেট’রে ইংরেজি ভাষায় হাজির রাখতে চায় (এইটার শুরু কি অমিতাভ ঘোষরে দিয়া নাকি?), সেইটার পারসপেক্টিভে এই বইটা বরং বাংলাদেশি একটা নভেল, যেইটা গ্লোবাল মিডল-ক্লাসের ক্রাইসিসগুলারে ডিল করতেছে। মানে, এইটা চাপানো কোন জিনিস না ‘বাংলা-সাহিত্যে’, বরং নতুন একটা ঘটনা হিসাবে দেখা যাইতে পারে।… এই জিনিসটার মেবি আরেকটু খেয়াল করা যাইতে পারে মিরা নায়ারের সিনেমার পারসপেক্টিভে; উনার সিনেমাতে ইন্ডিয়ান লোকজন বিদেশে থাকেন – এইরকম না খালি, বরং অলওয়েজ একটা কালচারাল ডিস-এনগেইজমেন্টের মধ্যে থাকেন, এইরকম। মানে, বাংলাদেশের সমাজ, বাংলাদেশের সাহিত্য বইলা যে ফিক্সড/টিপিক্যাল কিছু জিনিস আছে… এর বাইরেও মানুশ-জন আছে আর কি
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’রা যখন ১৯৬০’র দশকে বিদেশি-সাহিত্য লিখতেছিলেন বাংলা-ভাষায়, তখনো উনারা বাংলা-ভাষায় এইসব জায়গারে হাইলাইট কইরা বাংলা-সাহিত্যরে ‘দুষিত’ করার কথা মনেহয় ভাবতে পারেন নাই।…

২.
দ্য নর্থ এন্ড গোছানো একটা নভেল, স্ট্রাকচারটা ভালো। মানে, কবিতা যে ছন্দ লেখা হইলে ‘ভালো কবিতা’ বা ছন্দ-ছাড়া লিখলে ‘ভালো না’ – এইরকম যেমন না; মানে ‘ছন্দ’ যেমন ‘ভালো কবিতার’ কোন ক্রাইটেরিয়া না, একইরকম ভাবে, কাহিনি খুব গোছায়া লেখা বইলা ভালো – তা না, বরং গোছানো জিনিসটা ভালো হইছে, ফ্রি-রাইটিংয়ের নামে অগোছালো বা অযত্নের লেখার চাইতে। মনে হইছে, সুর-তাল-রয় ঠিকঠাক রাখার ব্যাপারে একটা নজর আছে; বেসুরা না হওয়ার দিকে নজর আছে। ফিনিশিং’টাতে একটু তাড়াহুড়া হইছে বইলা মনে হইতে পারে এই রিদমের কারণে, কিন্তু আন-রিয়েল লাগে নাই। Continue reading

আমার কবিতার/বইয়ের রিভিউ

ব্যাপার’টা খালি এইরকম না যে, ‘ভালো’ কবিতা-গল্প-নভেল খুব কম লেখা হয়; আমার ধারণা ‘ভালো’ রিভিউও খুব কম-ই লেখা হইছে বাংলা-ভাষায়। একটা ‘প্রশংসা’ করার জায়গার বিপরীতে ‘কাইট্টা-ছিইল্লা লবণ’ লাগায়া দেয়াটারেই মেবি ‘রিভিউ’ হিসাবে ভাবতে পারি আমরা এখনো। কিন্তু রিভিউ বলতে একটা কিছু’রে সমর্থন করা বা বাতিল করার চাইতে (এইগুলা করা যাবে না – তা না), কিছু ‘রিভিল’ করতে পারা বা কোন একটা জায়গা থিকা দেখতে পারাটারে ‘ভালো’ বইলা মনে করতে চাই আমি। তো, এই জিনিসটাও মাথায় রাখা ভালো যে, রিভিউ’টা বা দেখার জায়গাটাই বই’টা বা লেখাটা না।…

তো, রিভিউ নিয়া ভাবতে গিয়া মনে হইতেছিল, যেহেতু অনেক দিন ধইরাই লিখি, অনেকেই ফর্মালি, ইনফর্মালি, সামনাসামনি বা গোপনে, ভালো-মন্দ বলছেন, আমার কবিতা নিয়া। তার মধ্যে থিকা এই ৩টা রিভিউ’র কথা আমার মনে আছে। (এইখানে অবশ্য উনাদের বলা ‘ভালো, ভালো…’ কথাগুলাই রাখতেছি। )

রিফাত ভাই তো অনেক প্রশংসা করছিলেন; উনি কিছুদিন সমকালের সাপ্তাহিক সাহিত্য-পাতা কালের খেয়া’তে বুক রিভিউ লিখছিলেন। এর আগেও ‘ছাঁট কাগজের মলাট’ বা কোথাও রিভিউ লিখলে উনি জুঁইফুল চৌধুরী নামেই লিখছেন, দেখছি। তো, উনারে কারো কবিতা নিয়া কখনোই খারাপ কথা লিখতে দেখি নাই যে, এইটা হয় নাই, অইটা হয় নাই, এইরকম… এইটারে ‘ভদ্রলোকী’ বইলা আমরা হাসি-ঠাট্টা করতে পারি এখন; কিন্তু উনার এই ‘ভদ্রলোকী’র কিছুটা ভক্ত আমি। আমি যে রিভিউ করতে গিয়া বাজে কথা বলি নাই – তা না, কিন্তু কম-ই বলতে চাই; বরং কোন রিভিউ লেখার কারণ লেখাটা বা বইটারে ইর্ম্পটেন্ট মনে করি বইলাই। এইরকম।…

জাহেদ আহমদ খুবই দী র র র ঘ একটা লেখা লেখছিলেন, লাল জীপের ডায়েরী’তে। আমি মোটামুটি শরমই পাইছিলাম, এতো কথা যে লেখা যাইতে পারে আমার কবিতা নিয়া। আমার মনে হইছিল, কবিতা ও চিন্তা – এই জায়গাটাতে উনি খুবই কাছাকাছি থিকা আমার কবিতারে দেখতে পারছিলেন। আমার ধারণা, এইটা একজন রাইটারের লাইফে খুব কমই ঘটে; কোন রাইটার হয়তো খুব পপুলার হইতে পারেন, বা খুবই রিজেক্টেড হন; কিন্তু উনার লেখালেখিরে উনি যেই জায়গা থিকা লিখতেছেন তার কাছাকাছি জায়গা থিকা দেখতেছে, এইটা খুব রেয়ার ঘটনাই।… আর গত দুই-তিন বছরে যা হইছে, আমার কবিতা নিয়া কথা বলতে গেলে ‘ভাষা’ জিনিসটা খুব ডিস্টার্ব করে; এমনটাই যে, কি লিখছি – সেইটা আর এতোটা আলাপের ব্যাপার হইতেই পারে না! আমার ধারণা, এইটা নিয়া কিছু একটা হইতেছে আর কি! তারপরেও দেখেন, ‘ফেসবুকের ভাষা’তেই তো লিখি, ‘টিকটক’ পর্যন্ত তো যাইতেই পারি নাই। তো, এইগুলা কিছুদূর মোকাবিলা কইরা রাদ আহমেদ আমার লাস্ট কবিতার বই ‘লাস্ট ক্যাকটাস’ নিয়া লিখছিলেন। খুবই ডিটেইল একটা জিনিস ছিলো। রাদের গদ্যও সুন্দর।…

তো, যারা আমার কবিতা পড়ছেন, তারা এই রিভিউগুলাও দেখতে পারেন। উনারা আমার লেখার দোস্ত। দুশমনও। Continue reading

“মুসলিম স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম ইন বেঙ্গল” এর একটা কথা নিয়া

মুঈন উদ-দীন আহমদ খান উনার “মুসলিম স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম ইন বেঙ্গল” বইয়ে ১৮৫৭ সালের যুদ্ধ নিয়া বেশ ইন্টারেস্টিং একটা ইনফরমেশন দিছেন।
 
“…তারা শাহ নিয়ামত উল্লাহ… রচিত এক ভবিষ্যৎবাণীকে সামনে নিয়ে আসে, যেটার আলোকে প্রচার করা হয়… মুসলিমরা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসবে।… অনেক মুসলিম তার ভবিষ্যৎবাণীকে ধর্মীয় মর্যাদায় দেখতো… ১৮৫৭ সালের বসন্তে… এক প্রচারপত্র ছড়িয়ে দেয়া হয়… নাসারারা… একশত বছর ধরে ভারতবর্ষ শাসন করবে এবং তারপরে বিতাড়িত হবে। শাহ নিয়ামত উল্লাহর সেসব ভবিষ্যৎবাণী সুন্দর ফার্সী কবিতার আকারে বাংলার বনেদী পরিবারগুলোর কাছে পাওয়া যায়, যা পরবর্তীতে সারা বাংলায় বাংলা ও উর্দুতে ছড়িয়ে দেয়া হয়।” (পেইজ ৩১)
 
পইড়া মনে হইতেছে না যে, আরে, লোকজন গুজবে বিশ্বাস করতো! কিন্তু ব্যাপারটা যে এতোটা প্লেইন অ্যান্ড সিম্পল না, সেইটাও মেবি টের পাওয়ার কথা। মানে, একটা ‘ভবিষ্যতবাণী’, এইটার একটা পাওয়ার আছে, এই জিনিসটা ফুয়েল দিছে, মোটিভেট করছে ১৮৫৭ সালের যুদ্ধটারে; একটা হিস্ট্রিক্যাল ফ্যাক্ট হিসাবে এই জিনিসটার উল্লেখ আগে কোথাও দেখি নাই; কিন্তু ইর্ম্পটেন্ট একটা ইনফরমেশন তো! মানে, ভবিষ্যতবাণী হিসাবে ভ্যালিড না বইলা এর যে কোন ইমপ্যাক্ট ছিল না, তা তো না! উমবের্তো একো বলতেছিলেন এইরকমের কথা যে, ‘সত্যি’ জিনিস দিয়া হিস্ট্রি যতো না চেইঞ্জ হইছে, ‘অ-সত্যি’ জিনিসগুলার এফেক্ট বরং তার চাইতে অনেক বেশি। মানে, উনি না কইলেও, এই জিনিসগুলারে কন্সিডার করতে পারাটা দরকার আমাদের, হিস্ট্রির আলাপগুলাতে।… Continue reading

আহমদ ছফা’র ইতিহাস বর্ণনা

আহমদ ছফা ১৯৬৭ সালে বিএ পাশ করার পরে দুই বছর সময় নিয়া ইতিহাসের একটা বই লিখছিলেন “সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস” নামে, যেইটা ১৯৭৯ সালে পয়লাবার ছাপা হয়। পরে ১৯৮৭ সালে বইটার সেকেন্ড এডিশন এবং ১৯৯৬ সালে প্রতিপক্ষ প্রকাশনা থিকা বইটার থার্ড এডিশন ছাপা হয়। তো, এই বইটার নাম খুব একটা শোনা যায় না, কারণ বই হিসাবে এইটার তেমন কোন সিগনিফেন্স নাই; মানে, বইটাতে আহমদ ছফা’র নিজের তেমন কোন বিচার-বিবেচনা নাই; যেইসব রেফারেন্স বই উনি ইউজ করছেন, সেইগুলার ন্যারেটিভটারেই উনি নিছেন। 
ফার্স্ট এডিশনের ফার্স্ট লাইনেই উনি বলছিলেন, “আমার যৌবন ধর্মের অপরাধের প্রমাণ এই গ্রন্থ।” তো, উনার এই লাইনরে ভুলভাবে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি, যেন উনি বইটারে বাতিল কইরা দিতে চাইতেছেন। কিন্তু আসলে, তা না; বরং দুইটা কারণে এই বইটা নিয়া উনি রিস্ক ফিল করতেছিলেন। পয়লা কারণ’টা বেশ ইন্টারেস্টিং, “এ রকম জমকালো বিষয়ে গম্ভীর একখানি কেতাবের লেখক জানলে লোকে আমার লেখা গল্প, উপন্যাস, কবিতা অন্যান্য রচনা পড়বে না। আমাদের দেশের পন্ডিতদের লেখার প্রতি সাধারণ মার্জিত রুচির পাঠকদের একটা ভীতি এবং একটা অনীহার কথা আমি জানতাম।” সাউন্ডস ফিমিলিয়ার? 🙂
মানে, আপনি ‘পন্ডিত’ বা ‘ইন্টেলেকচুয়াল’ হইলে ‘কবি-সাহিত্যিক’ হইতে পারবেন না। দুইটা দুই জিনিস। 🙂 এই ডরে উনি বইটা ছাপাইতে চাইতেছিলেন না। তো, দেখেন, এইটা কিন্তু আছেই; আহমদ ছফা যতোটা ইন্টেলেকচুয়াল হইতে পারছেন, ‘কবি-সাহিত্যিক’ কিন্তু হইতে পারেন নাই এতোটা! এই বইয়ের কারণে না, বরং আমরা আইডেন্টিটি হিসাবে “দুইটা দুই রকম” ভাবতে পারতেছি বইলাই। এই পারসেপশনের জায়গাটাতে আহমদ ছফা নিজেও সাবস্ক্রাইবই করতেন।… (বইলা রাখা ভালো, দুইটা একইরকম – এইটা আমার প্রপোজিশন না, বরং পারসেপশনগুলা কেমনে কাজ করে, সেইটার কথাই বলা।)
দুসরা জিনিস হইলো, থার্ড এডিশনের ভূমিকাতে, ১৯৯৬ সালে উনি বলতেছেন, এখন যদি বইটা লিখতেন তাইলে এইরকম ঘটনা-ওয়াইজ না লেইখা পারসন-ওয়াইজ লিখতেন। মানে, আরো টেরিবল ব্যাপার হইতো একটা! 🙁 উনি ইতিহাসরে দেখতেছেন ব্যক্তি’র ভুল আর সাহসের জায়গা থিকা, “সিপাহী যুদ্ধের আনুপূর্বিক ঘটনা বর্ণনা করার বদলে সিপাহী যুদ্ধের কতিপয় কুশীলবকে নিয়ে একটি ভিন্ন রকমের গ্রন্থ রচনা করতে চেষ্টা করতাম।…আজিমুল্লা, তাঁতিয়া টোপী, ঝাঁসির লক্ষীবাঈ, মাওলানা আহমদউল্লাহ… সামন্তবাদের জগদ্দল ঠেলে এ অসাধারণ মানুষ মানুষীরা যদি যথার্থ ভূমিকায় অভিনয় করতে পারতেন তাহলে এই যুদ্ধের ইতিহাস ভিন্নভাবে লিখিত হতো।” হয়তো সেইটা একটা ডকু-ফিকশন হইতো তখন। উনার ‘সাহিত্য করার’ জায়গা থিকা সেইটা ভালোও হইতো হয়তো। কিন্তু ইতিহাস হিসাবে আরো ট্রাশ একটা ব্যাপারই হওয়ার কথা; কারণ ব্যক্তির যে কোন ভূমিকা নাই – তা না, ইতিহাসের ঘটনাগুলা ব্যক্তির অ্যাক্ট দিয়া, চিন্তা দিয়া ইনফ্লুয়েন্সড হইছে বইলাই ব্যক্তির জীবনীই তো ইতিহাস না! বরং ইতিহাসরে কোন ধারণা’র জায়গা থিকা আমরা দেখতেছি, সেইটা জরুরি একটা জিনিস। আহমদ ছফা’র কাছে এই এক্সপেক্টশন করাটাও আসলে ঠিক না। কিন্তু উনার টেনডেন্সিটারে মার্ক কইরা রাখাটা দরকার, যাতে উনার ভুলগুলারে ‘সাহস’ বইলা রিপিট না করতে থাকি আমরা।

Continue reading

মোহাম্মদ আজমের ‘বাংলা ও প্রমিত বাংলা সমাচার’ বই নিয়া আলাপ

(২০১৯ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর এই আলাপটা করা হইছিল।)

মোহাম্মদ আজমের বইটা আমি কিনছিলাম ফেব্রুয়ারি মাসে যখন পাবলিশড হয়। তারপরে বইটা আসলে খুব বেশি দূর পড়া হয় নাই। ভূমিকাটা আমি একটা নাড়াচাড়া করছিলাম। তো, একটা বইয়ের ভূমিকার জায়গা দেখলে তো আসলে বুঝা যায় কোন জায়গা থিকা উনি কথাগুলা বলতেছেন। তো, ভূমিকাটা পইড়া আমি আসলে খুব বেশি আগ্রহী হই নাই বইটার ব্যাপারে। এখন এইটা নিয়া যেহেতু কথা বলতে হবে তখন মনে হইছে বইটা একটু পড়া দরকার। তখন বইটা একটু ব্রাউজ করছি। ব্রাউজ করতে গিয়া যেই কয়টা জিনিস মনে হইছে, সেইগুলা নিয়াই বলি।

মোহাম্মদ আজম তো বেটার বলতে পারবেন উনি কি বলতে চাইছেন, কোন জায়গা থিকা বলতে চাইছেন। কিন্তু আমি আমার রিডিংটাই বলতে চাইতেছি। আমার মনে হইছে, উনি ব্যাকরণের কথা বলছেন যে, বাংলা ভাষার একটা নিজস্ব ব্যাকরণ দরকার। এখন যে ব্যাকরণ আছে সেইটা আসলে অনেকটাই সংস্কৃত বেইজড। আর এই কথাগুলা যে উনি নতুন বলতেছেন – তা না, শ্যামাচরণ গাঙ্গুলি বলছেন, রবীন্দ্রনাথ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীরাও বলছেন। ব্যাকরণটা কেন দরকার? কারণ স্কুল-কলেজে পড়াইতে হয়, রাষ্ট্র চালাইতে হয়, আইন-আদালত চালাইতে হয়। তো, এইগুলা করতে গেলে একটা মান-ভাষা দরকার। এইগুলা হইতেছে উনার কথা। তো, মানভাষাটা কেমনে হবে? মানভাষাটা হবে এক ধরণের গণতন্ত্রায়ণের মধ্যে দিয়া। বেশিরভাগ মানুশ যেই ভাষা ইউজ করে, যেইভাবে ইউজ করে – সেইটার বেসিসে হইতে হবে।…

তো, এইসব জায়গা নিয়া বিতর্কের স্পেইসটা অনেক কম। বিতর্কের স্পেইসটা হইতেছে আসলে কে কোন জায়গা থিকা দেখতেছি। যেমন ধরেন, একজন বলতেছিলেন গণতন্ত্র মানে হইতেছে বেশিরভাগ মানুশ যেইভাবে কথা বলে। তো, আমার কাছে মনেহয় যে, পারসপেক্টিভগুলা হইতেছে ঝামেলার, যে, কোন জায়গা থিকা দেখতেছি। তো, গণতন্ত্র মানে এইটা না যে বেশিরভাগ মানুশের জিনিস। যেমন এইখানে আমরা একশজনের মতো লোক আছি, এখন একশজনের মধ্যে সত্তুর জনই যদি সিগ্রেট খাইতে পছন্দ করেন, তার মানে এই না যে সিগ্রেট খাওয়াটা এইখানে গণতন্ত্র। গণতন্ত্র বরং হইতেছে, এইখানে যদি পাঁচজন লোকের শ্বাসকষ্ট থাকে, আর আমরা যদি একজন লোকও সিগ্রেট ধরাই তাইলে এই পাঁচজন লোকের সমস্যা হইতে পারে, এইটা মানতে পারাটা হইতেছে আমার কাছে গণতন্ত্র। তো, এইরকমের ঝামেলাগুলা আছে।

ধরেন, এই মান-ভাষাটার কথাই। মান-ভাষাটার দরকার হইতেছে রাষ্ট্রের কাজে, কিন্তু আমি মান-ভাষাটারে এইভাবে দেখি না। বা যেইটা প্রমিত ভাষা। প্রমিত ভাষা মানেই হইতেছে একটা ট্রাপ। ট্রাপ হইতেছে কি রকম, যেমন ধরেন, বাংলা একাডেমি প্রমিত ভাষার একটা ব্যাকরণ বাইর করলো, ডিকশনারি বাইর করলো। বাইর কইরা বললো যে, না, এইটা হইতেছে একটা ভালো জিনিস, এইটা ফলো করেন, করতেই হবে – এইরকম কোন কথা নাই। কিন্তু যখনই আপনি এইটার বাইরে যাবেন, তখন আপনারে আইসা ধরবে। মান-ভাষা মানে একটা স্ট্যান্ডার্ডাটাইজেশন না, স্ট্যান্ডার্ড বানানোর মানেই হইতেছে এক ধরণের ট্রাপ ক্রিয়েট করা। তো, সেইম জিনিসটা হইতেছে ভাষার ব্যাপারেও, ব্যাকরণের দরকার আছে কি নাই সেইটা পরের কথা, কিন্তু ভাষার আলাপ মানেই ব্যাকরণের আলাপ না। বরং ভাষার কথা যদি আমরা বলতে চাই, ভাষা ইন ইটস কোর তার ব্যাকরণরে কোন না কোনভাবে এড়াইতে না পারে, এইটারে ক্রস কইরা না যাইতে পারে, সেই ভাষার লাইভ থাকতে পারার কথা না।

তো, মুশকিল হইতেছে এই জায়গাগুলা। হিস্ট্রিগুলা কমবেশি আমাদের জানা, ফোর্ট উইলিয়ামের পরে বাংলার মানুশ হঠাৎ কইরা সংস্কৃত বেইজড ভাষায় কথা বলতে শুরু করে নাই। যেমনে বলতো অমনেই বলতেছে। আমরা যেইভাবে বলি, এইভাবেই বলতেছি। কিন্তু আমাদের ফোকাসটা চইলা গেছে ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে। যে, ভাষা এইভাবে লিখতে হবে!

এখন তাইলে আমার প্রস্তাবটা কি? একটা অ্যানার্কি ক্রিয়েট হবে? না। বরং আমার তিনটা পয়েন্ট আছে। Continue reading