ডিসেম্বর ২১, ২০২১
ভালো-মানুশের মিথ
দুনিয়ার সব সমাজেই এই জিনিসটা আছে, কিন্তু আমাদের সমাজে এইটার একস্ট্রা আরো কিছু ভ্যালু আছে, বা বেশ স্ট্রংলি আছে বইলা ফিল করি আমি যে, ভালো-মানুশ হওয়াটা হইতেছে একটা ‘যুক্তি’ বা ‘লজিক’। এর অনেকগুলা সাইড-এফেক্টও আছে, এটলিস্ট তিনটা জিনিসের কথা মনে হইছে এখন।
এক হইতেছে, ‘ভালো-মানুশ’ (একটা স্ট্যান্ডার্ড সেন্সেই) না হয়া আপনি ‘ভালো’ কিছু করতে পারবেন না। মানে, কেউ ভালো-গান গাইতেছে, কিন্তু লোকটা তো ভালো না! তার মানে, তার গান-গাওয়া হইতেছে না আসলে।
এইটা খালি গান না, এনিথিং অ্যান্ড এভরিভ্রিং দিয়া রিপ্লেইস কইরা নিতে পারেন। এর উল্টাও হয় যে, কেউ একজন ভালো-জোকস বলতেছে, তাইলে লোকটা মনেহয় ভালোই। 🙂 একজন মানুশ ‘ভালো’ – এইটার কল্পনা ছাড়া তার কোন কাজরে ‘ভালো’ আমরা মনে করতে পারি না। মানে, কেউ ‘মানুশ হিসাবে ভালো-না’ কিন্তু ‘ভালো-কথা’ বলতেছেন বা ‘ভালো-কাজ’ করতেছেন – এই সিচুয়েশনটা আমাদের পক্ষে চিন্তা করাটা ইজি বা নরমাল কোন ঘটনা না।
আর অন্যদিক দিয়া একজন মানুশ যেহেতু মানুশ হিসাবে ভালো, উনার ভুল-কথা বা ভুল-কাজ এতোটা বাজে-জিনিস না, কারণ উনি তো ভালো-মানুশ!
এখন জিনিসগুলা যে আলাদা – এই দাবি আমার নাই। কিন্তু রিলিভেন্সগুলা স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড না। এইভাবে মিলায়া দেখার অভ্যাসটারে আমাদের বরং খেয়াল করাটা দরকার। মোরালিটি এবং ইন্টেলেকচুয়ালিটি অপজিট কোন জিনিস না, কিন্তু কেমনে কাজ করতেছে – সেইটা নিয়া ভাবতে রাজি না-হওয়াটা জায়গাটারে একটা ‘মিথ’ বানায়া ফেলছে এখন, আমাদের সমাজে।
সেকেন্ড ঘটনা হইতেছে, যিনি অ্যাক্ট করতেছেন, তার জায়গা থিকাও এই ঘটনা’টা ঘটতেছে যে, “আমি তো সৎ আছি, আমি ভুল চিন্তা কেমনে করবো!” মানে, ভালো-মানুশ হওয়াটা একটা এডভান্স বা সুপিরিয়র ঘটনা হয়া আছে আমাদের সমাজে, যেইটা হইতেছে আরো বাজে জিনিস। মানে, আপনি ভালো-মানুশ, অন্য কারো ক্ষতি করতেছেন না, এই-সেই, এইটা তো বেসিক! এডভান্স লেভেলের কোন ঘটনা না। আর এইটা খালি সমাজে আপনার রেসপন্সিবিলিটি না, একটা পারসোনাল ঘটনাও যে, মানুশ-হওয়া মানেই হইতেছে ভালো-মানুশ হওয়া, আদারওয়াইজ অইটা তো মানুশ-হওয়া হইতে পারে না! কিন্তু ভালো-মানুশ জিনিসটা একটা সুপিরিয়র বিইং হয়া আছে, আমাদের সমাজে।
যার ফলে দেখবেন, একজন মানুশরে ভালো-না প্রমাণ করাটাই এনাফ, তার কাজ-কামের চিন্তা-ভাবনার এনকাউন্টার করা লাগে না তখন। এমনকি কোন ‘সাধারণ’ (খুবই বাজে টার্ম এইটা) মানুশ যদি ‘ভালো’ হন, তারেও দেখবেন ‘মহান’ বানানির একটা তোড়জোর শুরু হয়। মানে, ভালো-হওয়াটা যেন একসেপশনাল ঘটনা!
থার্ড জিনিসটা আরো বাজে, যখন আপনি ‘ভালো’, আপনি তো আসলে কম্পারেটিভলি ভালো; সমাজে কিছু খারাপ-মানুশ থাকা লাগে তখন। মানে, যখন অনেক অনেক খারাপ-মানুশ আছে সমাজে, তখন ভালো-হওয়াটা আরো বেশি মিনিংফুল হইতে পারে তো! আর ভালো-মানুশ যেহেতু রেয়ার (বাংলায় ব্রাহ্মণদের মতো), তারা কেন টেম্পু’তে, রিকশায় চড়বেন, উনাদের হেলিকপ্টার না থাকুক, দামি-গাড়ি তো থাকা দরকার! (অবশ্য গরিব না হইলে ভালো-মানুশ হওয়াও তো টাফ! 🙁 )
আমি বলতে চাইতেছি, এইখানে ক্রুশিয়াল একটা আলাপ আছে। ভালো-মানুশ জিনিস’টা জাস্ট ইনোসেন্ট কোন ঘটনা না, একটা ব্রাহ্মণবাদের ব্রাঞ্চ বরং অনেকটা। যেইটা সোসাইটির বেসিক একটা জিনিস হওয়ার কথা।…
Continue reading →