মার্চ ১৬, ২০২৩
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ-রে যে এখনো ভয়াবহ বইলা ভাবতে পারি আমরা, এর একটা কারণ হইতেছে জয়নুল আবেদীনের স্কেচগুলা। এই ছবি বাদ দিলে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের “অশনি সংকেত” নভেলে কিছুটা আছে। এর বাইরে এই ঘটনার তেমন কোন ডকুমেন্টশন নাই সাহিত্যে, আর্টে।
আব্বাসউদ্দিন আহমদ উনার অটোবায়োগ্রাফিতে বলতেছেন কলকাতা ধীরে ধীরে কালো হয়া যাইতেছিল, গেরামের ময়লা-রংয়ের মানুশ দিয়া ভইরা যাইতেছিল। কিছুদিন ছিল। তারপরে পুলিশ একদিন তাদেরকে ধইরা নিয়া শহরের বাইরে ফেলে দিয়া আসলো। মানে, এই অবস্থাটা বেশিদিন ছিল না। (আর যাদের কথা-ই পাইবেন, দেখবেন যে, একটু দূর থিকাই উনারা দেখতেছেন। মানে, উনারা, মধ্যবিত্ত শিল্পী-সাহিত্যিকরা অই ক্লাসের লোকজন ছিলেন না, যাদেরকে দুর্ভিক্ষের কারণে না-খায়া থাকতে হইছিল।…) জয়নুল আবেদীন মেবি তখনই ছবিগুলা আঁকছিলেন।
সেই তুলনায় ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা যে আমরা মনে করতে পারি না, এর একটা কারণ হইতেছে, এইটা নিয়া তেমন একটা আর্ট বা লিটারেচার নাই। এক আছে আজম খানের “বাংলাদেশ” গানটা। উনি বলতেছিলেন, কমলাপুর রেলস্টেশন থিকা নটরডেম কলেজ পর্যন্ত কালা কালা কাদা হয়া গেছিল। তবে দুর্ভিক্ষের কিছু নিউজ এখনো খুঁজলে পাওয়া যাবে, বিবিসি-র একটা নিউজ ছিল মেবি, ডিটেইল। যার ফলে, দুর্ভিক্ষ হয় নাই – এই ক্লেইম করাটা মুশকিলের হয়। স্বীকার করা লাগে।
এখন গত এক বছর ধইরা বাংলাদেশে যে “নিরব” দুর্ভিক্ষ চলতেছে, সেইটা দুর্ভিক্ষ মনে হয় না, এরও একটা বড় কারণ হইতেছে আর্ট-কালচারে ব্যাপারটা তো নাই-ই, নিউজও নাই তেমন। “আমি না খায়া আছি” – এই কথা মানুশ-জন তো পত্রিকা-অফিসে গিয়া, সাংবাদিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়া বইলা আসবে না। কিন্তু আশেপাশের “লো-ক্লাসের” 🙁 লোকজনের দিকে তাকাইলে কিছুটা হইলেও খেয়াল করতে পারার কথা আমাদের।
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আর্ট-কালচার দিয়া, নিউজ-টিউজ বেইজ কইরা “সমাজের সত্য” আবিষ্কার করতে চাওয়ার যেই রেফারেন্স-সিস্টেমটা সেইটা ভুয়া না হইলেও এইটারে রিয়ালিটি কনজামশনের একমাত্র রাস্তা হিসাবে ধইরা নিলে অনেক কিছু দেখতে পাবো না আসলে আমরা।
…
কোন কিছু জানতে হইলে, শুরুতেই রেফারেন্স সিস্টেমটা নিয়া ক্রিটিকাল হওয়া দরকার আমাদের।
যেমন ধরেন, বাংলাদেশের এখনকার বেসরকারি বিটিভিগুলার নিউজগুলারে রেফারেন্স হিসাবে যদি অথেনটিক ধইরা নেন, তাইলে জিনিসগুলা ফেইক না রিয়েল – এই সিউডো-তর্কে না গিয়াও, মানে ১০০% অথেনটিক নিউজ নিলেও, ভুল এবং ভয়াবহ একটা রিয়ালিটিতে গিয়া ল্যান্ড করবেন আপনি, যার লগে আমাদের দেশের, চারপাশের তেমন কোন রিলিভেন্সই নাই।
একইভাবে আপনি গুগুল-সার্চে বা অনলাইনে যদি বাংলাদেশি কোন মেটেরিয়াল – ছবি, সিনেমা, গান খুঁজেন, তেমন একটা পাইবেন না। আপনারে যাইতে হবে মিডল-ইস্টের “প্রবাসীদের” জায়গাগুলাতেও, অইগুলাতে কিছু জিনিস পাইতে পারেন। তা নাইলে ইন্ডিয়ান-বাংলার লগে খালি মিক্স-আপ করা-ই না, বরং অইগুলাই বেশি, অইগুলারেই মনে হবে “অরিজিনাল বাংলা”!
তার কারণ হইতেছে, এই যে অনলাইনের দুনিয়া – এইটা আসছে বইয়ের ভিতর থিকা। বই ছাপানো শুরু হইছে কলিকাতারে সেন্টার কইরা। বাংলা-ভাষার বইগুলা ছাপা হইছে অইখানের প্রেসগুলাতে। কলেজ, পত্রিকা, সরকারি-অফিসগুলাও ছিল অইখানে। কিন্তু প্রেসে বই ছাপা-হওয়ার আগে দুনিয়াতে কি কোন জ্ঞান-বিজ্ঞান, আর্ট-কালচার ছিল না? 🙂 ছিল, কিন্তু সেইটার ফর্মটা, ফরম্যাট’টা ছিল আলাদা।
যেই কারণে হিস্ট্রিতে বইয়ের আগের ফেইজটাতে যদি যান (পুঁথি, পালাগান, গীতি-কবিতা…) দেখবেন বাংলা-ভাষাটা অন্যরকম। এমনকি অইসব জায়গায় কলিকাতা বইলা কোন জিনিসও পাইবেন না, কারণ ব্যাপারটা শুরু হইছে কলোনিয়াল আমল থিকাই।
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, কোন রেফারেন্সরে ফলো করবেন না – তা না, রেফারেন্সের ব্যাপারে ক্রিটিকাল থাকতে হবে আমাদেরকে। তা নাইলে ব্যাপারটা নেরো একটা পাইপের ভিতর দিয়া দেখার ঘটনাই হবে। আমাদের আই-সাইটের অবশ্যই একটা লিমিটেশন আছে, কোন না কোন রেফারেন্স-সিস্টেমের ভিতর দিয়াই আমাদেরকে দেখতে হবে, কিন্তু একইসাথে কোন জায়গাটার ভিতর দিয়া আমরা দেখতেছি, অই জায়গাটা নিয়াও ক্রিটিকাল থাকতে পারাটা জরুরি।
যারা বইয়ের বাংলা পড়েন, তারা দেখবেন এই কারণে ‘ফেইসবুকের বাংলা’ 🙂 নিতে পারেন না। ইউটিউবে মিডল-ক্লাস ক্রাউডে জমা হওয়া গান শুইনা মনে করেন, বাংলাদেশে তো গানের কোন ‘ঐহিত্য’ নাই! তো, এইগুলা যতটা না একটা সত্য বা মিথ্যা কথা, তার চাইতে একটা এগজিস্টিং রেফারেন্স সিস্টেমের বাইরে না যাইতে চাওয়ার ঘটনাই, মোস্টলি।
Continue reading