অবিচুয়ারি: সিরাজুল আলম খান
আমাদের চোখের সামনে আমরা যা যা কিছু দেখি তা তো সত্যি না পুরাপুরি; বরং আমাদের দেখাদেখির ঘটনাটাই অনেক বেশি বায়াসড হয়া থাকে; কিন্তু তাই বইলা যা কিছু আমরা দেখি না, বা যা কিছু গোপনে ঘটে, সেইসব কিছু গোপন বইলাই সেইগুলা বেশি সত্যি না আর কি!
মানে, ফ্রন্টলাইনে, নিউজপেপারের হেডলাইনে যা ঘটছে এবং এর বাইরে ‘ব্যাক সাইডে’ যারা আছেন বা ছিলেন – এই গ্রুপ মিইলাই হিস্ট্রির ঘটনাগুলা ঘটান নাই; হিস্ট্রিরে একটা লিনিয়ার লাইন হিসাবে দেখতে গেলেই বরং এই ধরণের ইলুশন/বিভ্রমের তৈরি হয়। যেন কতগুলা মানুশ গোপনে শলা-পরামর্শ কইরা হিস্ট্রি তৈরি কইরা ফেলতেছেন! বা মানুশের করার কিছু নাই, ইতিহাস তার ‘নিজের গতিপথে’ চলতেছে! দুইটাই এইরকম লিনিয়ারিটির কথা।
আমরা যে কোন সময়েই একটা হিস্ট্রিকাল রিয়ালিটির ভিতরে আছি, আর এর ভিতরেই ইন্টারএক্ট করতেছি। হিস্ট্রিরে আমরা কিভাবে দেখতেছি, সেইটাই আবার হিস্ট্রিতে আমরা কি কন্ট্রিবিউট করতে পারতেছি, সেইটারে পসিবল কইরা তুলে। হিস্ট্রিকাল রিয়ালিটিরে বদলানোর জন্য হিস্ট্রির আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা জরুরি একটা জিনিস।
সিরাজুল আলম খান ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওমিলিগের স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন ছাত্রলিগের সাধারণ সম্পাদক (১৯৬৩-৬৪ এবং ১৯৬৪-৬৫), দুই বছর। কিন্তু অই দুই বছরই ডাকসু ইলেকশনে ছাত্রলিগ জিততে পারে নাই, ছাত্র ইউনিয়নই মেবি জিতছিল। মানে, ছাত্রলিগ বড় স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন না হইলেও এক ধরণের ‘সাংগঠনিক বিস্তার’ হইতেছিল; যার ক্রেডিট সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সিরাজুল আলম খান পাইছেন, উনার কন্ট্রিবিউশনও মেবি ছিল কিছু। তখনকার দিনে তো ‘বিপ্লব’ অনেকবেশি বেচা হইতো; তো, ছাত্রলিগ কইরাও আপনি ‘বিপ্লবী’ হইতে পারেন – এইটাই ছিল সিরাজুল আলম খানের সবচে বড় পলিটাকাল কন্ট্রিবিউশন। পরেও এইরকমের ‘বিপ্লবী-জোশ’ যারা ধইরা রাখতে চাইছেন, তারা তাদের সামনে আইকন হিসাবে সিরাজুল আলম খানরে দেখতে পাইছেন।
কিন্তু ছাত্রলিগ শুরু থিকাই ছিল আওমিলিগের স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন। ছাত্র ইউনিয়ন সৌললি সিপিবি’র জিনিস ছিল না, কিছুটা ইন্ডিপিন্ডেডই ছিল শুরুতে, যেইটারে নানান ধরণের ‘ভাঙন’ বলা হয়, সেইটা আসলে সিপিবি’র কব্জাতে যাওয়ার একটা ঘটনাই।
[তারপরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সিরাজুল আলম খান কি করছেন – এই নিয়া তেমন কোন আলাপ কোথাও দেখা যায় না। যদিও শোনা যায়, উনি ইন্ডিয়ান এম্বেসি’র লগে যোগাযোগ রাখতেন। থিওরেটিকালি আমার আন্দাজ হইতেছে, ইন্ডিয়ান আর্মি নামানোর কাজকামের লগে উনার যোগাযোগ থাকতে পারে, এক রকমের। মুজিব-বাহিনি’র লগে উনি এসোসিয়েটেড ছিলেন, কিন্তু পারসোনাল কোন খোঁজ-খবর আলাপে মিসিংই অনেকটা।]
তো, আওমিলিগ কইরা আপনি তো ‘বিপ্লব’ করতে পারবেন না! যার ফলে, সিরাজুল আলম খানের পক্ষে আওমিলিগ করা পসিবল হয় নাই। উনার ভিজিবল পলিটিকাল ক্যারিয়ার ছাত্রলিগেই শুরু, ছাত্রলিগেই শেষ। জাসদ বানানোর পরেও এর স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের নাম দিছিলেন – ছাত্রলিগ (জাসদ)।
সিরাজুল আলম খান যেই বিপ্লব করতে চাইছেন, মজলুমের একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে চাইছেন, সেইটা ততদিনে একটা জুলুমবাজ একটা আইডিওলজিই হয়া উঠছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড। নিজেরাও নিজেদের গদি বাঁচাইতেই হিমশিম খাইতেছিল। যার ফলে, ইন্টারন্যাশনাল হেল্প উনি পান নাই। ইন্ডিয়ার ব্যাক-আপ নিয়াই ‘জাসদ-বিপ্লব’ করতে চাইছেন। অই ব্যর্থ-ক্যু’র পরে উনার পলিটিকাল কোন ইনলভবমেন্ট বা এচিভমেন্টের কথা জানা যায় না। তবে গুরু হিসাবে উনারে নিয়া উনার শিষ্যদের উচ্ছ্বাস এখনো জারি আছে। কিছুটা প্রকাশ্যে, কিন্তু অনেক বেশি গোপনেই। Continue reading